5%

ঋতুস্রাবের গোসল

যখন ঋতুস্রাবের রক্তপাত শেষ হয়ে যাবে , তখন নারীকে নামায এবং অনান্য যে কাজগুলির জন্য পবিত্র থাকা আবশ্যক সেগুলির জন্য গোসল করতে হবে ।235

ঋতুস্রাবের রক্তের লক্ষণসমূহ :

এ রক্ত বালেগ হওয়ার আগে দেখা যায় না , আর যদি কোন মেয়ে বালেগ হওয়ার আগে দেখতে পায় তবে তা ঋতুস্রাবের রক্ত বলে গণ্য হবে না । (হতে পারে কোন মেয়ে বালেগ হয়েছে কিন্তু ঋতুস্রাবের রক্তপাত হয় নি কারণ এর উপর বংশগত , আবহাওয়া ও খাওয়া দাওয়ার বিশেষ প্রভাব রয়েছে । যেমন বর্তমানে সাধারণত 12-13 বছরে মেয়েদের প্রথম রক্তপাত হয় । )

ক) - যে সব নারীরা সৈয়দ বংশের তাঁরা 60 বছর পর্যন্তও যারা সৈয়দ নয় তারা 50 বছর পর্যন্তএ রক্ত দেখতে পায় , আর যদি এরপরও কোন রক্ত দেখে তবে তা ঋতুস্রাবের রক্ত বলে গণ্য হবে না ।

খ) - রক্তপাত 3 দিনের কম হবে না , অতএব যদি তিন দিনের আগে শেষ হয়ে যায় , তবে তা ঋতুস্রাবের রক্ত নয় । (তবে যদি প্রথমে তিন দিন অথবা তার বেশি রক্তপাত হয়ে বন্ধ হয়ে যায় , অতঃপর পুনরায় কয়েকদিন রক্তপাত হয় ও প্রথম ও দ্বিতীয় রক্তপাত মাঝে বন্ধ থাকা দিনগুলি সহ দশ দিনের বেশী না হয় তাহলে ঋতুস্রাব বলে গণ্য হবে না । )

গ) - রক্তপাত দশ দিনের বেশী থাকবে না , অতএব যদি দশ দিনের বেশী থাকে তাহলে দশ দিন পর থেকে ঋতুস্রাবের রক্ত নয় বরং তা এসতেহাযার রক্ত বলে পরিগণিত হবে ।

ঘ) - রক্তপাত প্রথম তিন দিন একাধারে অব্যাহত থাকবে -যদিও ভিতরে রক্ত থাকে ও বেরিয়ে না আসে- সুতরাং যদি দুই দিন রক্তপাতের পর এক দিনের জন্য রক্ত বন্ধ হয়ে যায় এবং অন্য আরেকদিন রক্তপাত হয় , তাহলে প্রথম থেকেই তা ঋতুস্রাবের রক্ত বলে গণ্য হবে না ।

ঙ) - দুই মাসের ঋতুস্রাবের মধ্যে অবশ্যই দশ দিন ব্যবধান থাকতে হবে । অতএব ঋতুস্রাব শেষ হয়ে যাবার পর যদি দশ দিন ব্যবধানের আগেই রক্তপাত হয় তবে দ্বিতীয় রক্তপাতটি ঋতুস্রাবের রক্ত নয় ।

চ) - ঋতুস্রাবের রক্ত সাধারণত ঘন , গাঢ় ও গরম হয়ে থাকে এবং অল্প জ্বালাপোড়া ও চাপের সাথে বেরিয়ে আসে ।236

ঋতুস্রাবের বিধি-বিধান :

ঋতুস্রাব অবস্থায় এই কাজগুলি নারীদের জন্যে হারাম

(ক) নামাজ পড়া ও কাবাঘরের তাওয়াফ করাসহ যেসব ইবাদতের জন্যে ওযু , গোসল অথবা তায়াম্মুম করতে হয় ।

(খ) যে সমস্ত কাজগুলি জুনুব ব্যক্তির (যে ব্যক্তি সহবাসের পর শরীয়ত নির্ধারিত গোসল করে পবিত্র হয় নি) জন্যে হারাম যেমন মসজিদে অবস্থান করা ।

(গ) সহবাস যা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই হারাম ।237

এ অবস্থায় নামাজ ও রোযা নারীর জন্য ওয়াজিব নয় এবং এ সময় না পড়া নামাজগুলির কাযা করতে হবে না , তবে অবশ্যই রমযান মাসে ঋতুস্রাব অবস্থায় যে রোযাগুলি রাখে নি পরে তা কাজা করতে হবে ।238

ইসতিফতায়াত (ধর্মীয় মাসয়ালার জবাব) :

প্রশ্ন : হজ্জের সময় কিংবা অন্যান্য কোন সময়ে যে মহিলারা চায় না ঋতুস্রাব হোক , তা বন্ধ রাখার জন্য ঔষধ খাওয়াতে কি অসুবিধা আছে ?

উত্তর : ক্ষতিকর না হলে অসুবিধা নেই ।239

ঋতুস্রাবের শুরুতে নারীর কর্তব্য240 :

রক্তপ্রবাহের বৈশিষ্ট্যসমূহ এবং সে অবস্থায় থাকা নারীদের জন্য ব্যবহৃত ইসলামী পরিভাষা ও তাদের করণীয় বিষয়সমূহ

(1) এতদিন পর্যন্ত ঋতুস্রাব ছিল না , এমন কোন মেয়ের প্রথমবার ঋতুস্রাব হলে তাকে মুবতাদি ” বলা হয় ।

(2) প্রথম ঋতুস্রাব নয় , তবে এখনও পর্যন্ত কোন নির্দিষ্ট অভ্যাস হয়ে ওঠে নি এমন নারীকে মুযতারেব ” বলা হয় ।

(3) ঋতুস্রাব নিয়মিত দিনগুলিতে হয় , যেমন সর্বদা পাঁচ দিন রক্তপাতের পর বন্ধ হয়ে যায় , কিন্তু ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার সময়টি নিয়মিত নয় এমন নারীকে আদাদিয়া ” বলা হয় ।

(উল্লেখিত তিন ধরনের নারীর করণীয় : এ তিন ক্ষেত্রে রক্তপাতের প্রথম থেকেই যদি ঋতুস্রাবের রক্তের লক্ষণগুলি থাকে অথবা বিশ্বাস হাসিল হয় যে , এ রক্তপাত তিন দিন ধরে অব্যাহত তাহলে তা ঋতুস্রাবের রক্ত হিসেবে ধরা হবে এবং ঋতুস্রাবের আহ্কাম অনুসরণ করতে হবে । )

(4) ঋতুস্রাবের দিনগুলি নিয়মিত নয় যেমন কখনও পাঁচ দিন পর বন্ধ হয়ে যায় , আবার কখনও ছয় দিন পর , কিন্তু ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার দিনটি নিয়মিত যেমন সর্বদা পঁচিশ দিন বন্ধ ও পবিত্র থাকার পর পুনরায় ঋতুস্রাব শুরু হয় তাকে ওয়াক্তিয়া ” বলা হয় ।

(5) ঋতুস্রাবের দিনগুলি এবং রক্তপাত শুরুর সময় (তারিখ) নিয়মিত যেমন সর্বদা বিশ তারিখে রক্তপাত শুরু হয় এবং পাঁচ দিন পর বন্ধ হয়ে যায় তাকে ওয়াক্তিয়া ও আদাদিয়া ” বলা হয় ।

(উল্লিখিত দুই ধরনের নারীর করণীয় : এ দুই ক্ষেত্রে , যেহেতু রক্তপাত শুরু হওয়ার সময় নির্দিষ্ট আছে সেহেতু প্রথম থেকেই ঋতুস্রাবের রক্ত হিসেবে ধরা হবে এবং ঋতুস্রাবের আহ্কাম অনুসরণ করতে হবে । )

(6) ঋতুস্রাবের নিয়মিত রীতি অনুযায়ী ছিল কিন্তু এখন ভুলে গিয়েছে তাকে না ’ সিয়া ” বলা হয় ।

(উল্লিখিত ক্ষেত্রে করণীয় : যদি রক্তপাতে ঋতুস্রাবের লক্ষণগুলি দেখা যায় এবং নিশ্চিত থাকে যে এ রক্তপাত তিন দিন ধরে অব্যাহত থাকবে তাহলে সেটিকে ঋতুস্রাব বলে হিসেব করা হবে এবং ঐ আহ্কামের অনুসরণ করতে হবে । )

রক্তপাত শেষে নারীর করণীয় :

1- ঋতুস্রাব শেষে যখন রক্তপাত বন্ধ হয়ে যাবে , তখন নারীকে অবশ্যই ঋতুস্রাবের গোসল করতে হবে এবং নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতগুলো শুরু করতে হবে ।241

2- ঋতুস্রাবের ও জানাবাতের গোসলের মধ্যে শুধুমাত্র নিয়ত ছাড়া অন্য কোন তফাৎ নেই ।242 3- শুধুমাত্র ঋতুস্রাবের গোসল করে নামাজ পড়া যাবে না বরং গোসলসহ ওযু করতে হবে । আর যদি গোসলের আগে ওযু করে তবে তা বেশী ভাল 243