15%

73. অস্থায়ী বিবাহ্ :

আমরা বিশ্বাস করি : অস্থায়ী বা সাময়িক বিবাহ্ একটি শারীয়াত সম্মত বিষয় ; যা ইসলামী ফিকাহ শাস্ত্রে মুতআহ্ নামে প্রসিদ্ধ। এ হিসাবে বিবাহ্ দু 'প্রকারের : এক প্রকারের বিয়ে হচ্ছে স্থায়ী যার সময়সীমা নির্দিষ্ট নয়। দ্বিতীয় প্রকারের বিয়ে হচ্ছে সাময়িক বা অস্থায়ী যার সময় সীমা দু 'পক্ষের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।

এ অস্থায়ী বিবাহ্ অনেক ক্ষেত্রেই স্থায়ী বিয়ের অনুরূপ , যেমন : মোহরানার বিষয় , স্ত্রী সব ধরণের বাধামুক্ত হতে হবে। এ বিয়ের মাধ্যমে যে সমস্ত সন্তানাদি জন্ম নিবে তাদের হুকুম- আহ্কামে স্থায়ী বিয়ের সন্তানাদিদের সাথে কোন তফাৎ নেই , সম্পর্ক ছিন্নের পর ইদ্দত সংরক্ষণ করতে হবে। আমাদের দৃষ্টিতে এ সব বিষয়গুলো স্বতঃসিদ্ধ বিষয়। অন্য কথায় অস্থায়ী বা মুতআহ্ এক প্রকারের বিয়ে বন্ধন যার মধ্যে বিয়ের সমস্ত বৈশিষ্ট্যাবলী বিদ্যমান।

অবশ্য স্থায়ী বিয়ে ও সাময়িক বিয়ের মাঝে কিছু তফাৎও রয়েছে। যেমন অস্থায়ী বিয়েতে স্ত্রীর ভরণ-পোষণের দায়িত্ব স্বামীর জন্যে ফরজ নয়। স্বামী-স্ত্রী কেউ করো সম্পদের ওয়ারিছ হবে না। কিন্তু তাদের সন্তানরা পিতা-মাতা উভয়ের সম্পদের উওরাধিকারী হবে এবং ভাই-বোন পরস্পরের সম্পদের ওয়ারিছ হবে। যা হোক , আমরা মুতআহ্ বিয়ের বিধানকে আল-কোরআন থেকে গ্রহণ করেছি। কোরআনে আল্লাহ্ বলেন :

অতঃপর যে স্ত্রীর সাথে মুতাহ্ করেছো তাদেরকে তাদের ধার্যকৃত মোহরানা প্রদান করো (সূরা : আন-নিসা আয়াত নং 24)।

বড় বড় মোফাস্সিরে কোরআন ও মোহাদ্দিসগণ অনেকেই ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে ,কোরআনের এ আয়াত মুতাহ্ তথা অস্থায়ী বিয়ে সম্পর্কিত।

তাফসীরে তাবারীতে এ আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসংগে বহু সংখ্যক হাদীস উল্লেখ করেছেন। যা প্রমাণ করছে যে , এ আয়াত অস্থায়ী বা সাময়িক বিয়ে সম্পর্কিত এবং রাসূলের বিরাট সংখ্যক একদল সাহাবী এ পর্যায়ে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন (তাফসীরে তাবাররী 5ম খঃ পৃঃ নং 9)।

তাফসীরে দুররে মানছুর ও সুনানে বায়হাকীতেও এ পর্যায়ে প্রচুর হাদীস উল্লেখ করেছেন। (আদদুরারিল মানছুর 2য় খঃ , 140) , (সুনানে বায়হাকী 7ম খঃ পৃঃ নং 206)। ছহীহ্ রোখারী , ছহীহ্ মুসলিম , মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল আরো অনেক গ্রন্থাবলীতেও রাসূলে আকরাম (সাঃ) এর যামানায় অস্থায়ী বিয়ের প্রচলন ছিল বলে প্রচুর হাদীস বর্ণিত রয়েছে। যদিও এর বিরোধী হাদীসও উল্লেখ রয়েছে। (মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বাল 4র্থ খঃ পৃঃ নং 436 , ছহীহ্ বোখারী শরীফ 7ম খঃ , পৃঃ নং 16 ,ছহীহ্ মুসলিম শরীফ 2য় খঃ , পৃঃ নং 1022 ,শিরোনাম : বাবে নিকাহিল মুতআহ্ দেখুন)। আহলে সুন্নতের একদল ফকীহ্ বিশ্বাস করেন যে , মুতআহ্ বিবাহ্ রাসূলের যামানায় প্রচালিত ছিল। পরবর্তীতে এ বিধান রহিত করা হয়েছে। অথচ আরেক দল ফকীহ্ বলেন : এ বিধান রাসূলে আকরাম (সাঃ) এর জীবনের শেষ পর্যন্ত বর্তমান ছিল। পরবর্তীতে দ্বিতীয় খলিফা জনাব ওমর এ বিধান বাতিল করেছেন। জনাব ওমর নিজে বলেন :

রাসূলে আকরাম (সাঃ) এর যামানায় দু 'প্রকারের মুতআহ্ বিয়ের প্রচলন ছিল। শুধুমাত্র এ দু টোকে আমি হারাম ঘোষণা করেছি এবং এর উপর শাস্তির বিধান করেছি। একটি হলো মুতআতুন্নিসা (সাধারণ প্রচলিত লোকের সাথে মুতআহ্)। দ্বিতীয়টি হলো মুতআতুল হাজ্ব (বিশেষ এক ধরনের হজ্জ)

এ হাদীসটি ঠিক একই পরিভাষায় অথবা বিষয়বস্তুর দিক থেকে অনুরূপ অন্য ভাষায় সুনানে বায়হাকীতে রয়েছে (7ম খঃ 206পৃঃ)। এ ছাড়া আরো বহু গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। আল- গাদীরের রচয়িতা 25টি হাদীস , ছীহাহ্ হাদীসগ্রন্থ ও মুসনাদ গ্রন্থাবলী থেকে উদ্ধৃতি উল্লেখ করে লিখেছেন : মুতআহ্ বিয়ে ইসলামী শারীয়াতে রাসূলের যামানায় , প্রথম খলিফার যামানায় ও খলিফা ওমরের সময়ের একটা অংশ পর্যন্ত হালাল , সাধারণ রীতিসিদ্ধ ও প্রচলিত ছিল। অতঃপর জনাব ওমর নিজের জীবনের শেষের দিকে এসে এ বিধানকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন (দেখুন আল-গাদীর 3য় খঃ , পৃঃ নং 332)।

কোনই সন্দেহ নেই যে , ইসলামের এ বিধানটির ব্যাপারে আহলে সুন্নতের হাদীস ও বর্ণনাসমূহে অন্যান্য আরো অনেক বিষয়ের ন্যায় দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা রয়েছে। তাদের কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে , রাসূলের যামানাতেই তা রহিত হয়ে গেছে। আরেক দলের বিশ্বাস হচ্ছে দ্বিতীয় খলিফার যামানায় এসে নিষিদ্ধ হয়েছে। একদল তা সম্পূর্ণই অস্বীকার করছে। তাদের ফীকাহ্গত মাসয়ালা-মাসায়েলের ক্ষেত্রে এ জাতীয় বহু বিরোধ বর্তমান রয়েছে। কিন্তু আমাদের শিয়া ফকীহ্গণ মুতআহ্ একটি শারীয়াত সিদ্ধ বিধান বলে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন। তাঁরা বলেন : রাসূলের যামানায় এ বিধান বাতিল হয়নি। আর রসূলের পর বাতিল হওয়া অসম্ভব ব্যাপার। (কেননা রাসূলের পরে ইসলামী শারীয়াতে কোন কিছু কমানো বাড়ানোর অধিকার ও ক্ষমতা কাউকেই দেয়া হয়নি।)

যাহোক , আমরা বিশ্বাস করি : অস্থায়ী বিয়ে যদি অন্যায় সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের অবস্থা সৃষ্টি না করে তাহলে আমাদের সমাজের সে সমস্ত যুবকদের প্রয়োজনের একটা অংশ মিটাতে সক্ষম যারা স্থায়ী বিয়ে করতে অক্ষম। অথবা যে সমস্ত মুসাফির লোকেদের ব্যবসা-বানিজ্য ও অর্থ উপার্জনের জন্যে অথবা শিক্ষাজর্নের প্রয়োজনে কিংবা অন্য কোন প্রয়োজনের তাগিদে একটা দীর্ঘ সময়-কাল নিজেদের পরিবার থেকে দূরে অবস্থান করতে হয়। এ ছাড়া আরো বহু কারণে অস্থায়ী বিয়ের প্রচলন , সমাজে থাকা দরকার। যেমন : অস্থায়ী বিয়ের সুযোগ না থাকলে ঐ সমস্ত লোকদের মাঝে অশ্লীল কর্ম ছড়িয়ে পড়ার দরজা খুলে যাবে। বিশেষতঃ আজকের আমাদের এ যুগে যেভাবে বিভিন্ন কারণে যুব সমাজের স্থায়ী বিয়ের বয়স সীমা বেড়ে গেছে অপর দিকে কামভাব ও উত্তেজনা শক্তিকে আন্দোলিত করার জন্যে প্রচুর ব্যবস্থা অহরহ আশে পাশে রয়েছে ; সেখানে যদি সাময়িক বিয়ের এ সুন্দর বিধান বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে সমাজ ধবংশকারীর জন্য অশ্লীল ও অবৈধ কর্মকান্ডের পথ নিঃসন্দেহে প্রশস্ত হয়ে যাবে।

আবারও বলছি : আমরা ইসলামের এ বিধান দ্বারা যে কোন প্রকারের অন্যায় সুযোগ সুবিধা গ্রহণ , এটাকে কামুকদের হাতের খেলনা বানানো ও নারীদেরকে কলুষতার দিকে টেনে আনার কঠোর বিরোধী। কিন্তু কোন কোন কামুকদের অন্যায় সুযোগ গ্রহণ করার কারণে মূল আইনের বিরুদ্ধে বাধা হয়ে দাঁড়ানো উচিৎ হবে না বরং অন্যায় সুযোগ গ্রহণের পথ রোধ করতে হবে।