তৃতীয় অধ্যায়
আয়াতুল্লাহ হাজ্ব আখুন্দ তুরবাতির ইন্তেকাল
আরেকজন আল্লাহর বন্ধুর মৃত্যুর ঘটনাটি আগ্রহের সৃষ্টি করে এবং তা শিক্ষণীয় , তিনি হচ্ছেন মরহুম হাজ্ব আখুন্দ তুরবাতি। তিনি বিখ্যাত ধর্মপ্রচারক মরহুম হুসেইন আলী রাশেদ (রঃ)-এর পিতা। মরহুম হুসেইন আলী রাশেদ (রঃ) তার বাবার মৃত্যুর ঘটনাটি তার লেখা বই‘ বিস্মৃত নৈতিক গুণাবলী’ যা তার বাবার জীবনী , তাতে এভাবে লিখেছেন :
ইন্তেকালের এক সপ্তাহ আগে
যেসব জিনিস আমরা (তার পরিবারের সদস্যরা) তার সম্পর্কে মনে করতে পারি এবং যা এখনও আমাদের কাছে আশ্চর্যজনক তা হলো আমার বাবা ইন্তেকাল করেন 16ই অক্টোবর 1943 সনে (17 শাওয়াল 1362 হি.) সূর্যোদয়ের দু’ ঘন্টা পরে , সকালের নামায শেষে তার বিছানায়। তার পা কিবলার দিকে লম্বা করা। তিনি তার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সচেতন ছিলেন এবং ফিসফিস করে কিছু কথা বলছিলেন যেন তিনি বুঝতে পারছিলেন যে তিনি মারা যাচ্ছেন। শেষ যে কথা তিনি উচ্চারণ করেছিলেন তার রুহ চলে যাবার আগে তা হলো‘ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’
‘ রাসূলের (সাঃ) প্রতি সালাম’
তার ইন্তেকালের ঠিক এক সপ্তাহ আগে রোববার তার সকালের নামাযের পরে তিনি কিবলার দিকে ফিরে শুয়েছিলেন তার চাদর দিয়ে তার চেহারা ঢেকে। হঠাৎ তার পুরো শরীর আলোকিত হয়ে উঠলো সূর্যের রশ্মির মত। তার চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো যা এর আগে অসুস্থতার কারণে ছিলো হলদে ফ্যাকাশে ; তা এমন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিলো যে তা চাদরের উপর দিয়েই বোঝা যাচ্ছিলো যা তার শরীর ঢেকেছিলো। তিনি একটু নড়াচড়া করলেন এবং বললেন :
“ সালামুন আলাইকুম ইয়া রাসূলাল্লাহ , আপনি এসেছেন আপনার অযোগ্য এক দাসকে দেখতে ?!”
তারপর , যেন সত্যিই কিছু লোক তাকে দেখতে এসেছে এমন ভাবে তিনি সালাম দিলেন ,‘ আমিরুল মুমিনিন আলী (আঃ)-কে , এবং সব ইমাম (আঃ)-কে বারোজন ইমাম (আঃ) পর্যন্ত। একের পর এক এবং তাদেরকে ধন্যবাদ দেন তাকে দেখতে আসার জন্য। এরপর তিনি হযরত ফাতেমা (আঃ)-কে সালাম ও সম্মান জানালেন। অবশেষে তিনি হযরত যয়নাব (আঃ)-কে সালাম দিলেন এবং এ সময় অনেক কাঁদলেন , এই বলে :
“ বিবি! আমি আপনার জন্য অনেক কেঁদেছি।”
“ শান্তিতে থাকেন , হে মা!”
এরপর তিনি নিজের মাকে সালাম দিলেন এই বলে :
‘ আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ মা , আপনি আমাকে পবিত্র দুধ দিয়েছেন।’
এ অবস্থা চললো সূর্যোদয়ের দু’ ঘন্টা পর পর্যন্ত। এরপর যে আলো তার শরীরকে আলোকিত করে রেখেছিলো তা চলে গেলো এবং তার চেহারা আগের মত ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। ঠিক এক সপ্তাহ পর আরেক রোববার সেই দু’ ঘন্টা সময় তিনি মৃত্যুর কষ্ট অনুভব করলেন এবং হালকাভাবে তার দেহ ছেড়ে চলে গেলেন।
‘ আমাকে বিরক্ত করো না’
এই দুই রোববারের মাঝামাঝি আমি তাকে বললাম :
“ আমরা কিছু শুনি আমাদের নবীদের কাছ থেকে ও মর্যাদাপূর্ণ লোকদের কাছ থেকে এবং আমরা আফসোস করি যদি আমরা তাদের সময় থাকতাম এবং তাদের কাছ থেকে সরাসরি শুনতাম ; এখন আপনি হচ্ছেন আমার সবচাইতে নিকটাত্মীয় যার এ অভিজ্ঞতা হয়েছে। হায় আমি যদি জানতাম কী ঘটেছিলো। তিনি চুপ থাকলেন এবং কিছুই বললেন না। আমি আমার অনুরোধে বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করে দু’ তিন বার বললাম কিন্তু তিনি চুপ রইলেন। আমি চতুর্থ অথবা পঞ্চম বার অনুরোধ করতে তিনি উত্তর দিলেন :
‘ আমাকে বিরক্ত করো না হোসেইন আলী!’
আমি বললাম :‘ আমি কিছু বুঝতে চেয়েছি।’
তিনি বললেন :
‘ আমি তোমাকে বোঝাতে পারবো না ; তুমি যাও এবং নিজে তা বোঝ।’
এ অবস্থা একটা ধাঁধাঁ হয়ে রইলো আমার জন্য এবং আমার মা , ভাই , বোন এবং ফুপুর জন্য এখন পর্যন্ত , যখন আমি এ ঘটনাটি লিখছি সকাল 9:30 , মঙ্গলবার , 15 জুলাই , 1975 (পাঁচ রজব 1395 হিঃ)। আমি এর বিস্তারিত কিছুই জানিনা শুধু এতটুকু বলতে পারি তা সত্যিই ঘটেছে ।180