কুফায় উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদের প্রাসাদে নবী পরিবারের বন্দীরা
‘ শারহে হামাযিয়া ’ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে , সে [উবায়দুল্লাহ] আদেশ দিলো যেন [ইমাম হোসেইন আ.-এর] মাথাটি তার ডান পাশে রাখা একটি বর্মের ওপর রাখা হয়। আর তার কাছেই দুই সারিতে লোকজন দাঁড়িয়ে ছিলো।
আযদি বলেন যে , সুলাইমান বিন রাশীদ বর্ণনা করেছে হামীদ বিন মুসলিম থেকে যে , আমি দেখলাম ইমাম হোসেইন (আ.)-এর মাথা তার কাছেই রাখা আছে। আর সে তার দাঁতগুলোতে তার হাতের বেত দিয়ে এক ঘন্টা ধরে আঘাত করছে। যখন যাইদ বিন আরক্বাম দেখলেন যে সে তার হাতকে নিবৃত্ত করছে না , তিনি উচ্চকণ্ঠে বললেন ,“ তোমার বেত সরিয়ে নাও এ দাঁতগুলো থেকে , কারণ আল্লাহর শপথ , যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই , আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দুটো ঠোঁটকেই দেখেছি সেগুলোর ওপর চুমু দিতে।” এ কথা বলার পর বৃদ্ধের দুঃখ বিস্ফোরিত হলো এবং তিনি কাঁদতে লাগলেন। ইবনে যিয়াদ বললো , তোমার রব তোমাকে কাঁদাক। আল্লাহর শপথ , যদি তুমি বৃদ্ধ না হতে অথবা নির্বোধে পরিণত না হতে এবং তোমার বুদ্ধি চলে না যেতো , আমি তোমার মাথা উড়িয়ে দিতাম। এরপর সে উঠে দাঁড়ালো ও চলে গেলো। আমি যখন রাজপ্রাসাদ থেকে বেরিয়ে এলাম , দেখলাম লোকজন পরস্পরকে বলছে , আল্লাহর শপথ , যাইদ বিন আরক্বাম এমন কথা উচ্চারণ করেছে যে যদি যিয়াদের সন্তান তা শুনতো , সে তাকে হত্যা করে ফেলতো। আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম সে কী বলেছে। তারা বললো , সে বলেছে: একজন দাস একজন দাস লাভ করেছে এবং সে মনে করছে সব মানুষ তার দাসের সন্তান [আরবী প্রবাদ] । হে আরবরা , আজ থেকে তোমরা দাসে পরিণত হয়েছো। তোমরা ফাতেমা (আ.)-এর সন্তানকে হত্যা করেছো এবং মারজানাহর সন্তানকে তোমাদের অধিনায়ক বানিয়েছো। সে তোমাদের মাঝে ধার্মিকদের হত্যা করে। আর জেনে রাখো , সে তোমাদেরকে তার দাস বানিয়েছে। তোমরা নিজেদেরকে অপমানের ভেতরে প্রবেশ করিয়েছো এবং মৃত্যু হোক তাদের যারা নিজেদের অপমানের ভেতর প্রবেশ করিয়েছে।
শেইখ সাদূক্ব তার‘ আমালি ’ গ্রন্থে এবং ফাত্তাল নিশাপুরি তার‘ রাওযাতুল ওয়ায়েযীন ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন উবায়দুল্লাহর এক খাদেমের কাছ থেকে যে , সে বলেছে , যখন ইমাম হোসেইন (আ.)-এর মাথাটি উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের কাছে আনা হলো সে এটিকে একটি সোনালী ট্রে-তে রাখতে আদেশ দিলো। এরপর সে তার বেত দিয়ে এর সামনের দাঁতগুলোতে আঘাত করতে লাগলো এবং বললো , হে আবা আবদিল্লাহ , তুমি খুব তাড়াতাড়িই বৃদ্ধ হয়ে গেছো। উপস্থিতদের মধ্যে একজন বললো , আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে দেখেছি সেখানে চুমু দিতে যেখানে তুমি তোমার বেত দিয়ে আঘাত করছো। সে বললো , এ দিনটি হলো বদরের দিনের বদলা। এরপর সে আদেশ দিলো আলী বিন হোসেইন (আ.)-কে শেকলে বাঁধতে এবং তার পরিবারের নারী ও অন্যান্য বন্দীদের সাথে কারাগারে পাঠাতে। আমি তাদের সাথে ছিলাম এবং দেখলাম সবগুলো রাস্তা পুরুষ ও নারীতে পূর্ণ ছিলো এবং তারা নিজেদের চেহারায় আঘাত করছিল এবং কাঁদছিলো। তারা তাদেরকে কারাগারে ঢুকালো এবং দরজায় তালা মেরে দিলো। এরপরে সে আলী বিন হোসেইন (আ.) এবং নারীদের সাথে ইমাম হোসেইন (আ.)-এর মাথা আনতে বললো , তাদের সাথে সাইয়েদা যায়নাব (আ.)ও ছিলেন। ইবনে যিয়াদ বললো ,“ সব প্রশংসা আল্লাহর যে তিনি তোমাদেরকে অপমান করেছেন এবং হত্যা করেছেন।” এরপর উবায়দুল্লাহ তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ করলো এবং সব জায়গায় ইমাম হোসেইন (আ.)-এর মৃত্যুর সংবাদ পাঠালো ও ইমাম হোসেইন (আ.)-এর মাথাসহ বন্দীদেরকে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে পাঠালো।
শেইখ তুসী বর্ণনা করেছেন যে , যখন ইমাম হোসেইন (আ.) এর শাহাদাতের সংবাদ মদীনায় পৌঁছলো , আক্বীল বিন আবি তালিবের কন্যা আসমা একদল নারীর সাথে বেরিয়ে এলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কবরের দিকে গেলেন ও চিৎকার করে কাঁদতে লাগলেন। এরপর তিনি মুহাজির ও আনসারদের দিকে তাকিয়ে বললেন , আপনারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে কী উত্তর দেবেন যখন রাসূলুল্লাহ (সা.) আপনাদের জিজ্ঞেস করবেন কিয়ামত ও হিসাব দেওয়ার দিনে ― যেদিন সত্য টিকে থাকবে ― যে তোমরা আমার বংশধরকে পরিত্যাগ করেছিলে ও অনুপস্থিত ছিলে এবং তাদেরকে জুলুমকারিদের হাতে ছেড়ে দিয়েছিলে ; এখন কেউ নেই যে তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে শাফায়াত করবে ; যখন কারবালার মরুভূমিতে মৃত্যু তার দিকে এসেছিল , তার কোন সাহায্যকারী ছিলো না , না ছিলো কোন সাথী যারা বলবে , আমরা তার প্রতিরক্ষা করবো-অন্যের হাতে নিহত হওয়া থেকে। ’ বর্ণনাকারী বলেছে যে , আমরা এর আগে নারী-পুরুষদের এভাবে কাদঁতে দেখি নি।