কলুষতা
বাইরের সত্তায় কলুষতা আসে ভেতরের কলুষতা থেকে। যদি তুমি তোমার গভীরতম সত্তাকে ঠিক কর তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তোমার বাইরের সত্তাকে ঠিক করে দিবেন ; যদি তুমি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে ভেতরে ভয় কর তাহলে তিনি জনগণের সামনে তোমার চাদর ছিঁড়বেন না। কিন্তু যে ভিতরে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাকে বাইরে প্রকাশ করে দেবেন।
সবচেয়ে বেশী কলুষতার জন্ম হয় দীর্ঘ আশা , লোভ এবং গর্ব থেকে যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে ক্বারুনের ঘটনা বলেছেনঃ
) و َلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ إِنَّ اللَّـهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ(
‘‘ পৃথিবীতে ফাসাদ (কলুষতা) সৃষ্টির সুযোগ খুঁজো না ; নিশ্চয়ই আল্লাহ ফাসাদ (কলুষতা) সৃষ্টিকারীদের ভালোবাসেন না’’ (সূরা কাসাসঃ 77)
অন্য জায়গায় তিনি বলেছেনঃ
) ت ِلْكَ الدَّارُ الْآخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِينَ لَا يُرِيدُونَ عُلُوًّا فِي الْأَرْضِ وَلَا فَسَادًا وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ(
‘‘ আখেরাতের বাসস্থান ,আমরা তা তাদেরকেই শুধু দেই যাদের ইচ্ছা নেই এ পৃথিবীতে গর্ব করার এবং ফাসাদ (কলুষতা সৃষ্টি) করার এবং সমাপ্তি ভালো তাদের যারা মুত্তাক্বী (সতর্কতা অবলম্বনকারী)। ’’ (সূরা কাসাসঃ 83)
এ ত্রুটিগুলো আসে তা থেকে যা ক্বারুন করতো ও বিশ্বাস করতো। কলুষতার মূল নিহিত আছে এ পৃথিবীর ভালোবাসায় , এর সম্পদ জমা করায় , নিজের নফসকে অনুসরণ করায় , এর ক্ষুধাকে বৃদ্ধি করায় , প্রশংসা পছন্দ করায় , শয়তানের সাথে একমত হওয়ায় এবং তার পদাঙ্ক অনুসরণ করায় ; এ সবগুলো দোষ যুক্ত হয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি কোন মনোযোগ না দেয়া পছন্দ করায় এবং তাঁর দানসমূহ ভুলে যাওয়ার সাথে।
অতএব , তোমার উচিত মানুষজনের কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়া , এ পৃথিবীকে প্রত্যাখ্যান করা , তোমার বিশ্রামের মাঝে বাধা দেয়া , তোমার সাধারণ স্বভাবগুলোর সাথে সম্পর্ক ছেদ করা , আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে সর্বক্ষণ স্মরণ করার মাধ্যমে দুনিয়ার ক্ষুধাগুলোর উৎসকে গোড়া থেকে কেটে ফেলা এবং তাঁর আনুগত্যকে আঁকড়ে থাকা এবং লোকজনের , ও তোমার কোন সাথীর অতিরিক্ত নির্ভরতা এবং তোমার পরিবার ও আত্মীয়দের শত্রুতা সহ্য করা। যদি তুমি তা কর তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দয়ার দরজা তোমার জন্য খোলা হবে , যেহেতু তোমার প্রতি তাঁর আছে ভালো মনোভাব , ক্ষমা এবং রহমত। এতে তুমি কথা অগ্রাহ্যকারীদের দল পরিত্যাগ করবে এবং শয়তানের হাতে বন্দী থাকা তোমার অন্তরকে মুক্ত করবে। তুমি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার দরজায় উপস্থিত হবে তাদের সাথে যারা তাঁর কাছে আসে এবং তুমি এমন এক পথে ভ্রমণ করবে যার উপরে তুমি আশা করতে পারো পরম মর্যাদাবান , পরম সম্মানিত , পরম উদার ও পরম করুণাময়ের কাছে আসার জন্য অনুমতি।
সুস্থতা
যেখানেই তুমি থাকো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে সুস্থতা চাও প্রত্যেক অবস্থায় , তোমার বিশ্বাসের জন্য , তোমার অন্তরের জন্য এবং তোমার সর্বশেষ পরিণতির জন্য। যে তা চায় সে সবসময় তা পায় না।
তাহলে কীভাবে কিছু লোক পারে নিজেদেরকে দুঃখ কষ্টের মুখোমুখি করতে , সুস্থতার উল্টো পথে চলতে এবং এর নীতিগুলোর বিরোধিতা করতে- নিরাপত্তাকে ধ্বংস ও ধ্বংসকে নিরাপত্তা ভেবে ?
প্রত্যেক যুগেই সুস্থতাকে মানুষের কাছ থেকে তুলে নেয়া হয়েছে , বিশেষ করে এই যুগে , তবুও তা আবার খুঁজে পাওয়া যাবে অন্য মানুষের অপছন্দ এবং এমনকি আঘাত সহ্য করার মাধ্যমে , দুর্যোগের মুখে ধৈর্য্য ধরার মাধ্যমে , মৃত্যুকে হালকা ভাবে নিয়ে , যা কিছু ঘৃণ্য তা থেকে পালিয়ে গিয়ে এবং সামান্য বস্তুগত সম্পদ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার মাধ্যমে। যদি তুমি সেরকম না হও তাহলে তোমাকে অবশ্যই নিজেকে গুটিয়ে নিতে হবে। যদি তুমি তা না করতে পারো তাহলে নিরব থাকো , যদিও নিরবতা নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার মত নয়। যদি তুমি নিরব না হতে পারো তাহলে তা বলো যা তোমাকে সাহায্য করবে এবং তোমার ক্ষতি করবে না। কিন্তু তা নিরবতার মত নয় , যদি তুমি তা করার জন্য কোন উপায় না দেখ তাহলে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে বেড়াও , নিজের নফসকে নিয়ে যাও আগে যাও নি এমন এলাকায় , বিশুদ্ধ উদ্দেশ্য , বিনীত অন্তর ও দৃঢ় দেহ নিয়ে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ
) إ ِنَّ الَّذِينَ تَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ ظَالِمِي أَنفُسِهِمْ قَالُوا فِيمَ كُنتُمْ قَالُوا كُنَّا مُسْتَضْعَفِينَ فِي الْأَرْضِ قَالُوا أَلَمْ تَكُنْ أَرْضُ اللَّـهِ وَاسِعَةً فَتُهَاجِرُوا فِيهَا(
‘‘ নিশ্চয়ই যারা নিজেদের উপর যুলুমকারী , তাদের প্রাণ হরণের সময় ফেরেশতারা বলেঃ‘ তোমরা কী অবস্থায় ছিলে ?’ তারা বলেঃ‘ আমরা (আমাদের) দেশে দূর্বল ছিলাম’ তারা বলবেঃ‘ আল্লাহর পৃথিবী কি প্রশস্ত ছিলো না যে তোমরা সেখানে হিযরত করতে পারতে… .?’’ (সূরা নিসাঃ 97 )
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সৎকর্মশীল বান্দাহদের সে চরিত্র গ্রহণ কর।
অস্পষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে সংগ্রাম করো না , এবং পরস্পরবিরোধী বিষয় নিয়েও সন্তুষ্ট থেকো না। যদি কেউ তোমাকে বলে ,‘ আমি’ , বলো‘ তুমি’ । কোন বিষয়ে জ্ঞানের দাবী করো না , যদি সে বিষয়ে তুমি বিশেষজ্ঞও হও। তোমার গোপন বিষয় শুধু তার কাছেই উম্মুক্ত করো যে তোমার চেয়ে বিশ্বাসে উন্নত। এভাবে তুমি সম্মান পাবে। যদি তুমি এটি কর তাহলে তুমি সুস্থতা পাবে এবং তুমি থাকবে মহান আল্লাহর সাথে অন্য কিছুর সাথে সংযুক্ত না থেকে।