8%

পরিচ্ছেদ-16

পবিত্রতা অর্জন

যদি তুমি পবিত্র হতে চাও এবং অযু করতে চাও , তাহলে পানির কাছে সেভাবে যাও যেভাবে তুমি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার রহমতের কাছে যেতে চাইতে , কারণ তিনি পানিকে তাঁর সাথে নিবিড় কথোপকথনের জন্য তাঁর কাছে যাবার চাবি বানিয়েছেন এবং একে করেছেন তাঁর দাসত্বের রাজ্যে প্রবেশ করার পথপ্রদর্শক হিসাবে। ঠিক যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার রহমত তাঁর বান্দাহদের অন্যায় কাজগুলোকে ধুয়ে মুছে দেয় , ঠিক সেভাবেই বাইরের অপবিত্রতাগুলো পরিষ্কার হয় একমাত্র পানি দিয়ে। যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) و َهُوَ الَّذِي أَرْسَلَ الرِّيَاحَ بُشْرًا بَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهِ وَأَنزَلْنَا مِنَ السَّمَاءِ مَاءً طَهُورًا(

‘‘ তিনি বাতাসকে পাঠান সুসংবাদ হিসাবে তাঁর রহমতের আগে এবং আমরা আকাশ থেকে পবিত্র পানি বর্ষণ করি।’’ (সূরা ফুরকানঃ 48)

অন্য জায়গায় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) و َجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ(

‘‘ আমরা প্রত্যেক জীবিত প্রাণীকে সৃষ্টি করেছি পানি থেকে। তাহলেও কি তারা বিশ্বাস করবে না ?’’ (সূরা আম্বিয়াঃ 30)

যেভাবে তিনি জীবন দেন প্রত্যেক নেয়ামতকে পানি থেকে , সেভাবেই তাঁর রহমত এবং উপচে পড়া দানের মাধ্যমে তিনি জীবন দেন অন্তরকে এবং আনুগত্যের কর্মকান্ডকে এবং এ চিন্তাভাবনাকে যে , পানির পবিত্রতা , এর পেলবতা , এর পরিচ্ছন্নতা , এর উপকারিতা এবং কীভাবে তা সব কিছুর সাথে নিরবে মিশে যায় ; পানির মাধ্যমে তিনি অন্তরকে জীবন দেন যখন তুমি তোমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে পবিত্র কর যেগুলোকে পবিত্র করার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তোমাকে আদেশ করেছেন এবং যেগুলোকে তুমি ব্যবহার কর ফরজ ও সুন্নাত নামাযের সময়।

প্রত্যেক অঙ্গ থেকে আসে অনেক উপকারিতা। যখন তুমি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে শ্রদ্ধার চোখে দেখবে তখন তাদের উপকারিতা তোমার জন্য শীঘ্র উথলে উঠবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সৃষ্টির সাথে আচরণ কর পানির মত যা সব জিনিসের সাথে মিশে যায় এবং যা প্রাপ্য তার সব দিয়ে দেয় অথচ তার মূল সত্তায় কোন পরিবর্তন ঘটে না। এ জিনিসটি প্রকাশ পেয়েছে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কথায়ঃ‘‘ আন্তরিকভাবে বিশ্বাসী ব্যক্তি হলো পানির মত।’’ তোমার সব আনুগত্যে আল্লাহর সাথে তোমার পবিত্রতাকে সেই পানির পবিত্রতার মত করে নাও যা তিনি আকাশ থেকে বর্ষণ করেছেন এবং একে পবিত্র আখ্যা দিয়েছেন। তোমার অন্তরকে পবিত্র করো সতর্কতা ও ইয়াক্বীন দিয়ে যখন তুমি তোমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে পবিত্র কর পানি দিয়ে।

মসজিদে প্রবেশ করা

যখন তুমি মসজিদের দরজায় পৌঁছাও জেনো যে তুমি এক মহা শক্তিধর বাদশাহর দরজায় এসেছো। শুধু পরিশুদ্ধরাই তার গালিচায় পা রাখে এবং শুধু সত্যিকার বিশ্বাসীরাই তাঁর সাথে বসার অনুমতি পায়। তাই এ মহা ক্ষমতাবান বাদশাহর দরবারে এগিয়ে যাওয়ার সময় সাবধান হও। কারণ তুমি বিরাট বিপদে পড়বে যদি তুমি উদাসীন হও। জেনে রাখো যে তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন ন্যায়বিচারে এবং উপচে পড়া নেয়ামতে তোমাকে নিয়ে এবং তোমাকে দিয়ে। যদি তিনি তাঁর করুণা ও উপচে পড়া নেয়ামত নিয়ে তোমার দিকে ঝোঁকেন তাহলে তিনি তোমার আনুগত্যের সামান্য অংশকে গ্রহণ করেছেন এবং এর জন্য তোমাকে দিয়েছেন বিরাট পুরষ্কার। যদি তিনি তাঁর প্রতি সত্যবাদিতায় এবং আন্তরিকতায় তাঁর প্রাপ্য দাবী করেন তোমার প্রতি তাঁর ন্যায় বিচারের মাধ্যমে , তাহলে তিনি তোমাকে পর্দায় ঢেকে দিয়েছেন এবং তোমার আনুগত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছেন যদিও তোমার আনুগত্য ছিলো অনেক। তিনি করেন যা তাঁর ইচ্ছা। তাঁর সামনে তোমার অক্ষমতা , স্বল্পতা , দূর্বলতা এবং দরিদ্রতা স্বীকার করো , কারণ তুমি তাঁর দিকে ফিরেছো তাঁর ইবাদাত করার জন্য এবং তাঁর কাছে যাওয়ার জন্য। তাঁর দিকে ফিরো এবং জেনে রাখো যে , কোন প্রাণীর গোপন অথবা প্রকাশ্য বিষয়ের কোন কিছুই তাঁর কাছ থেকে লুকায়িত নয়। তাঁর সামনে তাঁর বান্দাহদের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র বান্দাহর মত হও ; তোমার অন্তরকে সব চিন্তা থেকে মুক্ত করো যা তোমাকে তোমার রবের কাছ থেকে ঢেকে ফেলতে পারে। কারণ তিনি শুধু তাদেরকে গ্রহণ করেন যারা দরিদ্রতম ও সবচেয়ে আন্তরিক। দেখার চেষ্টা করো কোন খাতায় তোমার নাম লিখা হবে।

যদি তুমি তাঁর একান্ত আলাপচারিতার মিষ্টতার স্বাদ এবং তোমাকে তাঁর সম্বোধনের আনন্দ পাও এবং তাঁর রহমতের পেয়ালা থেকে পান কর এবং যে নেয়ামত তিনি তোমাকে দান করেছেন এবং তোমার যে অনুরোধগুলো তিনি গ্রহণ করেছেন , তাহলে তুমি তাঁর দাসত্ব যথাযথভাবে করেছো এবং তুমি হয়তো তাঁর অনুমতি ও নিরাপত্তা বলয়ে প্রবেশ করবে। যদি তা না হয় তাহলে তার মত দাঁড়াও যার শক্তি ও ক্ষমতা কেটে ফেলা হয়েছে এবং যার নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে এসেছে। যদি সর্বশক্তিমান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা জানতে পারেন যে তোমার অন্তরে তুমি আন্তরিকভাবে তাঁর কাছে আশ্রয় চাচ্ছো তাহলে তিনি তোমাকে স্নেহ , করুণা ও দয়ার সাথে বিবেচনা করবেন। তিনি তোমাকে সে বিষয়ে সফলতা দিবেন যা তিনি ভালোবাসেন এবং যা তাঁর জন্য প্রীতিকর , কারণ তিনি উদার। তিনি ভালোবাসেন অতি উদারতা এবং তাদের ইবাদাত যারা তাঁর প্রয়োজন বোধ করে এবং যারা তাঁর দরজায় পুড়ছে তাঁর সন্তষ্টির ভিক্ষা চেয়ে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ

) أ َمَّن يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكْشِفُ السُّوءَ(

‘‘ কে দুর্দশাগ্রস্থকে সাড়া দেন যখন সে তাঁকে ডাকে এবং দূর করে দেন খারাপকে ?’’ (সূরা নামলঃ 62)

দোয়া

দোয়া-র সৌজন্য পালন করো। ভেবে দেখো কাকে তুমি ডাকছো , কীভাবে তাকে ডাকছো এবং কেন তাকে ডাকছো ; পূর্ণব্যক্ত করো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার বিশালতা ও পরম মর্যাদাকে। তোমার অন্তর দিয়ে দেখো কীভাবে তিনি জানেন তোমার বিবেকের ভিতর কী আছে , কীভাবে তিনি দেখেন তোমার গোপন সত্তাকে এবং দেখেন এতে যা ঘটে গেছে এবং যা ঘটবে সত্য ও মিথ্যা দু টোই। তোমার নাজাত ও তোমার ধ্বংসের পথকে জেনে নাও যেন তুমি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে এমন কিছুর জন্য না ডাকো যার ভেতরে নিহিত আছে তোমার ধ্বংস অথচ তুমি মনে করছো সেখানে তোমার নাজাত রয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ

) و َيَدْعُ الْإِنسَانُ بِالشَّرِّ دُعَاءَهُ بِالْخَيْرِ وَكَانَ الْإِنسَانُ عَجُولًا(

‘‘ মানুষ খারাপ-এর জন্য দোয়া করে যেভাবে তার উচিত ভালোর জন্য দোয়া করা এবং মানুষ খুব তাড়াহুড়া প্রবন।’’ (সূরা বনী ইসরাইলঃ 11 )

কী তুমি চাইছো এবং কেন তা চাইছো তা নিয়ে ভাবো ; দোয়া হওয়া উচিত সত্যের প্রতি তোমার পক্ষ থেকে পূর্ণ সাড়া এবং অন্তর গলে যাওয়া তোমার রবের কথা ভেবে। তার উচিত সব পছন্দ পরিত্যাগ করা এবং সব বিষয়কে আল্লাহর প্রতি সমর্পণ করা প্রকাশ্য ও গোপন উভয়কেই। যদি দোয়ার পূর্বশর্তগুলো পালন করা না হয় তাহলে তা ক্ববুল হওয়ার কথা ভেবো না , কারণ তিনি জানেন কী গোপন ও কী লুকায়িত আছে ; তুমি হয়তো তাঁর কাছে কিছু চাইছো যখন তিনি জানেন তুমি ঠিক এর উল্টোটি গোপন করছো।

সাহাবীদের একজন অন্যদের বললোঃ‘‘ তোমরা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছো আর আমি অপেক্ষা করছি পাথরের (বৃষ্টি) জন্য।’’ জেনে রাখো যদি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে আদেশ না করতেন তাকে ডাকার জন্য তিনি কখনোই আমাদের নামাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে দোয়া ক্ববুল করতেন না। তাহলে তার দান কত বড় যে তিনি সাড়া দেয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছেন যদি কেউ দোয়ার পূর্বশর্তগুলো পূরণ করে।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সবচেয়ে শক্তিশালী নাম কী ? তিনি বললেনঃ‘‘ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রত্যেকটি নামই সবচেয়ে শক্তিশালী।’’

তোমার অন্তরকে তিনি ছাড়া আর সবকিছু থেকে মুক্ত করো এবং তাঁকে ডাকো সে নামে যা তোমার পছন্দ। বাস্তবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার একটিই নাম তা নয় : তিনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা , এক ও সর্ব শক্তিমান।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কোন ভ্রুক্ষেপহীন অন্তরের দোয়াতে সাড়া দেন না।’’ যখন তোমাদের মধ্যে কেউ চায় তার রব তাকে তা দিক যা সে তাঁর কাছ থেকে চেয়েছে তাহলে তার উচিত সব মানুষকে পরিত্যাগ করা একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি আশা স্থাপন করা। যখন আল্লাহ তার অন্তরে সেটি দেখেন তখন তিনি তাই দিবেন যা সে চায়।

যখন তুমি দোয়ার পূর্বশর্তগুলো প্রতিষ্ঠা করেছো যা আমি উল্লেখ করেছি এবং তোমার গভীরতম সত্তার ভেতরে তাঁর জন্য আন্তরিক হয়েছো , তাহলো সুবংবাদে আনন্দ করো যে তিনটি জিনিসের যে কোন একটি ঘটবেঃ হয় তিনি দ্রুত দিবেন যা তুমি চেয়েছো অথবা তিনি তোমার জন্য তার চেয়ে ভালো কিছু জমা রাখবেন অথবা তিনি তোমার কাছ থেকে একটি দুর্দশা হটিয়ে দিবেন যা তিনি পাঠালে তোমাকে ধ্বংস করে দিতো। রাসূল (সা.) বলেছেন যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেছেনঃ‘‘ যদি কোন ব্যক্তি আমার কাছে চাওয়ার সময় আমাকেই স্মরণ করার কারণে তা ভুলে যায় তাহলে আমি তাকে তার চাইতে ভালো কিছু দিবো যা আমি তাদেরকে দেই যারা চায়।’’

আমি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে একবার ডাকলাম এবং তিনি সাড়া দিলেন। আমি আমার প্রয়োজন ভুলে গেলাম কারণ যখন তিনি কোন দোয়ার উত্তর দেন তাঁর দান হয় আরো বড় এবং আরো উচ্চ মূল্যের তার চাইতে যা বান্দাহরা তাঁর কাছে চায় , যদি তা জান্নাত ও তার চিরস্থায়ী নেয়ামতও হয়। এটি শুধু সেই প্রেমিকরা যারা কাজ করে , আধ্যাত্মিক ব্যক্তিরা , উচ্চস্থানীয়রা এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নির্বাচিত ব্যক্তিরা বুঝতে পারে ।