মোনাফিক্বদের বর্ণনা
মোনাফিক্ব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার রহমত থেকে বহু দূরে থাকার কারণে সন্তুষ্ট থাকে , কারণ তার বাইরের কর্মকান্ড ইসলামী আইন অনুযায়ী থাকে , কিন্তু এর পরেও সে ভ্রুক্ষেপহীন এবং নিষ্ফল টিটকারী করে এবং তার অন্তরে এর সত্যতার সীমালংঘন করে ।
মোনাফেক্বীর চিহ্ন হচ্ছে মিথ্যাকে কিছু মনে না করা , প্রতারণা , ঔদ্ধত্য , মিথ্যা দাবী , আন্তরিকতাহীনতা , নির্বুদ্ধিতা , ভুল এবং বিনয়ের অভাব , অবাধ্যতাকে হালকা করে দেখানো , বিশ্বাসীরা যেন বিশ্বাস হারায় তা চাওয়া , এবং বিশ্বাসে দুর্দশাকে হালকা করে দেখানো , অহংকার , প্রশংসা , প্রেমের প্রশংসা , প্রশংসাকে ভালোবাসা , ঈর্ষা , আখেরাতের চাইতে পৃথিবীকে এবং খারাপকে ভালোর চাইতে পছন্দ করা , অপবাদ দেয়াতে উস্কানী দেয়া , আনন্দ-ফুর্তিকে ভালোবাসা , কথায় যারা শঠ তাদের সাথে লেনদেন করা , উদ্ধত লোকদের ভালো কাজ এড়িয়ে যাওয়াতে সাহায্য করা , যারা ভালো কাজ করে তাদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা , মোনাফিক্ব যে খারাপ কাজ করে তাকে ভালো মনে করা এবং অন্যলোক যা ভালো করে তাকে ঘৃণ্য মনে করা এবং এরকম আরো অনেক জিনিস।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মোনাফিক্বদের বেশ কয়েক জায়গায় বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ
) و َمِنَ النَّاسِ مَن يَعْبُدُ اللَّـهَ عَلَىٰ حَرْفٍ فَإِنْ أَصَابَهُ خَيْرٌ اطْمَأَنَّ بِهِ وَإِنْ أَصَابَتْهُ فِتْنَةٌ انقَلَبَ عَلَىٰ وَجْهِهِ خَسِرَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةَ ذَٰلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِينُ(
‘‘ এবং মানুষের মাঝে সে আছে যে আল্লাহর দাসত্ব করে কিনারে দাঁড়িয়ে। এতে যদি তার কোন কল্যাণ হয় সে এতে সন্তুষ্ট থাকে , কিন্তু কোন পরীক্ষা তাকে কষ্ট দিলে সে উল্টো দিকে ফিরে যায় ; সে হারায় এ দুনিয়া ও আখেরাত ; আর এটিতো স্পষ্ট ক্ষতি।’’ (সূরা হাজ্জঃ 11)
তাদের বর্ণনা করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ
) و َمِنَ النَّاسِ مَن يَقُولُ آمَنَّا بِاللَّـهِ وَبِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَمَا هُم بِمُؤْمِنِينَ ﴿٨﴾ يُخَادِعُونَ اللَّـهَ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَمَا يَخْدَعُونَ إِلَّا أَنفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ ﴿٩﴾ فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ فَزَادَهُمُ اللَّـهُ مَرَضًا وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ بِمَا كَانُوا يَكْذِبُونَ(
‘‘ কিছু মানুষ আছে যারা বলেঃ‘ আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহতে এবং আখেরাতে।’ কিন্তু তারা মোটেও বিশ্বাসী নয়। তারা চায় আল্লাহ ও বিশ্বাসীদের ধোঁকা দিতে , কিন্তু তারা শুধু নিজেদের ধোঁকা দেয় অথচ তারা তা বোঝে না। তাদের অন্তরগুলোতে একটি রোগ আছে , তাই আল্লাহ তাদের রোগ বৃদ্ধি করে দিয়েছেন।’’ (সূরা বাকারাঃ 8-10)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ‘‘ মোনাফিক্ব সে , যে প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরে তা ভাঙ্গে ; যখন সে কোন কাজ করে সে খারাপ কাজ করে ; যখন সে কথা বলে , সে মিথ্যা বলে ; যখন তাকে বিশ্বাস করা হয় সে বিশ্বাসঘাতকতা করে ; যখন তাকে রিয্ক দেয়া হয় , সে হয় লাগামহীন ; যখন তা স্থগিত রাখা হয় তখন সে তার জীবন নিয়ে অনেক বড় কথা বলে।’’
তিনি আরো বলেছেনঃ‘‘ যে ব্যক্তির গভীরতম সত্তা তার প্রকাশ্য চেহারার বিরোধিতা করে সে মোনাফিক্ব– সে যেই হোক , যেখানেই সে থাকুক , যে যুগেই সে বাস করুক এবং যে পদমর্যাদাই তার থাকুক।’’
সঠিক সামাজিক লেনদেন
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার অবাধ্য না হয়ে তাঁর সৃষ্টির সাথে সঠিক আচরণ আসে তাঁর বান্দাহদের উপর তাঁরই নেয়ামতের বৃদ্ধি থেকে। যে ব্যক্তি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার প্রতি অন্তরে বিনয়ী সে প্রকাশ্যে ভালো আচরণ করে।
লোকজনের সাথে ভালো আচরণ করো আললাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কারণে , এ পৃথিবী থেকে কোন অংশ পাওয়ার জন্য নয় অথবা সম্মানের খোঁজে নয় অথবা লোক দেখানোর জন্য অথবা তোমার খ্যাতি বৃদ্ধির জন্য নয়।
আইনের সীমা লংঘন করো না মর্যাদা ও সুখ্যাতি চেয়ে ; এগুলো তোমাকে কোন লাভ এনে দেবে না এবং তুমি আখেরাত হারাবে কোন লাভ ছাড়াই।
দেয়া ও নেয়া
যে ব্যক্তি দেয়ার চাইতে নেয়াকে বেশী পছন্দ করে সে প্রতারিত হয়েছে , কারণ তার ভ্রুক্ষেপহীন স্বভাবের কারণে সে মনে করে যে ,‘ যা এখন তা পরে যা আসবে তার চাইতে উত্তম’ । বিশ্বাসীর জন্য এটিই শোভা পায় যে যখন সে কিছু নিবে তা সে বৈধভাবে নিবে। যদি সে দেয় তাহলে তা হওয়া উচিত যথার্থ কারণে , বৈধভাবে এবং তার বৈধ সম্পদ থেকে। কত গ্রহণকারীই না তার ঈমানকে ত্যাগ করে , অথচ সে সম্পর্কে খবর রাখে না! যারা দেয় তাদের কত জনই না নিজের উপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার গযব ডেকে আনে!
বিষয়টি শুধু দেয়া ও নেয়ার প্রশ্ন নয় বরং সে ব্যক্তি রক্ষা পেলো যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালাকে দেয়া ও নেয়ার সময় ভয় করলো এবং যে সৎকর্মশীলতার রশিকে শক্ত করে ধরে রাখে।
এ বিষয়ে মানুষ দুই শ্রেণীরঃ উচ্চ শ্রেণী ও সাধারন। উচ্চ শ্রেণীর লোকেরা কষ্টকর সতর্কতার সাথে বিবেচনা করে এবং নেয় না যতক্ষণ না সে নিশ্চিত হয় যে তা অনুমোদিত। যদি তা তার কাছে স্পষ্ট না হয় তাহলে সে শুধু তখনই নিবে যখন তা অত্যন্ত জরুরী। সাধারণ ব্যক্তি শুধু বাইরের দিকটি বিবেচনা করে ; সে তা নেয় যা সে দেখে চুরি করা নয় অথবা জবরদস্তির সাথে নেয়া হয় নি এবং বলে ,‘ এতে কোন ক্ষতি নেই ; এটি আমার জন্য অনুমোদিত।’ এখানে বিষয়টি পরিষ্কার যে সে তা নেয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার রায় থাকার কারণে এবং খরচ করে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের জন্য।