জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারীর সাথে ইমাম (আ.) এর কথোপকথন
সাইয়েদ বাহরানি‘ মাদিনাতুল মা’ জিয ’ -এ‘ সাক্বিবুল‘ মানাক্বিব ’ থেকে ও অন্যরা‘ মানাক্বিবুস সুয়াদা ’ থেকে বর্ণনা করেন যে জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারি বলেন , যখন ইমাম হোসেইন (আ.) ইরাকের দিকে যেতে চাইলেন আমি তার কাছে এলাম এবং বললাম ,“ আপনি রাসূলুল্লাহর সন্তান এবং তার প্রিয় দুই নাতির একজন। আমি আর কোন মতামত দিচ্ছি না শুধু এছাড়া যে আপনিও (ইয়াযীদের সাথে) একটি শান্তিচুক্তি করেন যেভাবে আপনার ভাই মুয়াবিয়ার সাথে করেছিলো এবং নিশ্চয়ই তিনি (ইমাম হাসান) ছিলেন বিশ্বস্তও সঠিক পথপ্রাপ্ত। ” ইমাম হোসেইন (আ.) উত্তরে বললেন ,
“ হে জাবির , আমার ভাই যা করেছিলেন তা ছিলো আল্লাহর ও রাসূলের আদেশ এবং আমি যা করবো তা-ও হবে আল্লাহ ও তার রাসূলের আদেশ। আপনি কি চান আমি এ মহূর্তে রাসূলুল্লাহ , ইমাম আলী এবং আমার ভাইকে আমন্ত্রণ জানাই আমার কাজ সম্পর্কে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য ?”
এরপর ইমাম আকাশের দিকে তাকালেন , হঠাৎ আমি দেখলাম আকাশের দরজাগুলো খুলে গেলো এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) , ইমাম আলী (আ.) , ইমাম হাসান (আ.) , হযরত ফাতিমা (আ.) , হযরত জাফর তাইয়ার (আ.) এবং (আমার চাচা) যাইদ আকাশ থেকে পৃথিবীতে নেমে এলেন। এ দেখে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন ,
“ হে জাবির , আমি কি হোসেইনের আগে হাসানের সময়ে তোমাকে জানাই নি যে তুমি বিশ্বাসী হবে না যদি না তুমি ইমামদের কাছে আত্মসমর্পণ করো এবং তাদের কাজে প্রতিবাদ না করো ? তুমি কি সেই জায়গা দেখতে চাও যেখানে মুয়াবিয়া বাস করবে এবং আমার সন্তান হোসেইনের জায়গা এবং তার হত্যাকারী ইয়াযীদের বাসস্থান ?”
আমি বললাম ,“ জ্বী।” তখন নবী তার পা দিয়ে মাটিতে আঘাত করলেন এবং তা দু’ ভাগ হয়ে গেলো এবং এর নিচে আরেকটি ভূমি উপস্থিত হলো। তখন আমি দেখলাম একটি নদী প্রবাহিত হচ্ছে , সেটিও দুভাগ হয়ে গেলো , এর নিচে ছিলো আরেকটি ভূমি। এভাবে মাটি ও নদীর সাতটি স্তর (একটির নিচে আরেকটি) ফাঁক হয়ে গেলো যতক্ষণ পর্যন্তনা জাহান্নাম দৃষ্টিগোচর হলো। আমি দেখলাম ওয়ালিদ বিন মুগিরা , আবু জাহল , মুয়াবিয়া ও ইয়াযীদ একসাথে শিকলে বাঁধা অন্যান্য বিদ্রোহী শয়তানদের সাথে এবং তাদের শাস্তি ছিলো জাহান্নামের অন্যান্য লোকদের চাইতে কঠিন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে মাথা তুলতে আদেশ করলেন। আমি দেখলাম আকাশের দরজাগুলো খুলে গেছে এবং বেহেশত দেখা যাচ্ছে। তখন যে বরকতময় লোকেরা অবতরণ করেছিলেন তারা সবাই ফেরত চলে গেলেন। যখন তারা বাতাসে ছিলেন তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ইমাম হোসেইনকে (আ.) ডাক দিয়ে বললেন ,“ আসো এবং আমার সাথে মেলামেশা করো , হে আমার প্রিয় হোসেইন। ”
আমি দেখলাম যে হোসেইনও তাদের সাথে জান্নাতের উচ্চ মর্যাদায় যোগ দিয়েছেন। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) হোসেইনের হাত ধরে আমাকে বললেন ,
“ হে জাবির , আমার এই সন্তান এখানে আমার সাথে আছে , তার কাছে আত্মসমর্পণ করো এবং সন্দেহে পড়ো না , যেন বিশ্বাসী হতে পারো। ”
জাবির বলেন যে ,“ আমার দুটো চোখই অন্ধ হয়ে যাক যদি আমি যা দেখেছি এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে যা বর্ণনা করেছি তা যদি মিথ্যা হয়ে থাকে। ”