5%

কোরআন মজীদ : কাছে থেকে জানা

কোরআন মজীদের স্বরূপের সাথে পরিচিত হতে হলে তাকে কাছে থেকে জানতে হবে। কাছে থেকে জানা মানে কোরআন মজীদের গভীরে অবগাহন করতে হবে। কোরআন মজীদ হচ্ছে সীমাহীন জ্ঞানের অতল মহাসমুদ্র। কোরআন মজীদ নিজেকেتبيانا لکل شيء (সকল কিছুর বর্ণনা/ জ্ঞান) অর্থাৎ সমস্ত জ্ঞানের আধার বলে দাবী করেছে। মানবজাতির জন্যে প্রয়োজনীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের কোনো শাখা-প্রশাখাই এ থেকে বাদ পড়ে নি। এ সংক্ষিপ্ত গ্রন্থে কেবল ভাষা ও বর্ণনাকৌশলের মাধ্যমে অতীত , বর্তমান ও ভবিষ্যত মানবপ্রজন্মসমূহের জন্যে সকল জ্ঞানবিজ্ঞান সন্নিবেশিত করা হয়েছে। জীবন ও জগতের গূঢ় রহস্য , সৃষ্টিতত্ত্ব , বস্তুগত ও অবস্তুগতজগতের রহস্যাবলী , কারণ ও ফলশ্রুতি বিধি , পদার্থবিজ্ঞান , রসায়ন , জোতির্বিজ্ঞান , ইতিহাস , ভূগোল , নৃতত্ত্ব , প্রাণিবিজ্ঞান , মনোবিজ্ঞান , যুক্তিবিজ্ঞান , দর্শন , রাজনীতি , সমাজবিজ্ঞান , সমাজতত্ত্ব , চিকিৎসাবিজ্ঞান , উদ্ভিদবিদ্যা , অর্থনীতি , রাষ্ট্রশাসন , বিচারব্যবস্থা , আইন , দণ্ডবিধি , আন্তর্জাতিক সম্পর্ক , যুদ্ধ , সন্ধি , কূটনীতি , প্রচার ও জনসংযোগ , প্রশাসন , শিক্ষা , পারিবারিক জীবন , ভবিষ্যদ্বাণী , আধ্যাত্মিকতা , অধিলোক , স্বপ্নলোক , সদৃশ জগত , পরলোক ইত্যাদি জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখা-প্রশাখাই এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

জ্ঞান-বিজ্ঞানের এতো সব শাখা-প্রশাখা সম্পর্কে ব্যক্তিগত সাধনা ও অন্যদের সহায়তায় কোনো ব্যক্তিমানুষের পক্ষেই নিখুঁত ও নির্ভুল জ্ঞানের অধিকারী হওয়া সম্ভব নয়। অথচ হযরত মুহম্মদ (ছ্বাঃ)-এর ন্যায় একজন নিরক্ষর ব্যক্তি এ গ্রন্থ উপস্থাপন করেছেন যার পক্ষে এ ধরনের রচনা কোনোভাবেই সম্ভব হতে পারে না। এটাই প্রমাণ করে যে , এ গ্রন্থ মহাজ্ঞানময় আল্লাহ্ তা আলার পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে।

কোরআন মজীদের উপর্যুপরি অধ্যয়ন থেকে নিত্য নতুন জ্ঞানভাণ্ডার বেরিয়ে আসে। অন্যদিকে , ইতিপূর্বে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে , এ কিতাবের ভাষা ও রচনাশৈলী বিস্ময়কর যা তৎকালীন আরবের শ্রেষ্ঠ ভাষাবিদ ও বাগ্মীদেরকেও হতবাক করে দিয়েছিলো। তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলো যে , এ কোরআন মানুষের রচিত কথা নয়। এ কোরআনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যর্থ হয়ে তারা একে জাদু বলে অভিহিত করে মানুষকে এ থেকে ফিরাবার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলো।

কোরআন মজীদের এ জ্ঞানসমুদ্র এবং সাহিত্যিক মান ও ভাষাশৈলীর সাথে পরিচিত না হওয়া পর্যন্ত কোরআনের সাথে সত্যিকার অর্থে পরিচিত হওয়া সম্ভব নয়। কোনো ব্যক্তি যদি এমন এক পরিবেশে বড় হয় যে , সে কোনোদিন আগুন কাছে থেকে দেখে নি তাকে আগুন সম্বন্ধে যতোই বর্ণনা দেয়া হোক এবং সূর্যের তাপের সাথে যতোই তুলনা করা হোক , তার আগুন সম্বন্ধে যথার্থ ধারণা হবে না। তেমনি যে একটি অতি সুমিষ্ট ফল কখনো দেখে নি ও খায় নি , তার নিকট ঐ ফলের ও তার স্বাদের যে বর্ণনাই দেয়া হোক না কেন , ঐ ফল সম্পর্কে তার যথার্থ ধারণা হবে না। ঠিক একইভাবে কোরআন মজীদকে জানতে হলে অনুবাদের মাধ্যমে নয় , মূল ভাষায় তার স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। মূল ভাষায় জানা মানে কোনাভাবে আরবী পড়তে পারা বা বর্তমান যুগের আধুনিক আরবী ভাষা বুঝতে পারার যোগ্যতা নিয়ে কোরআন অধ্যয়ন নয় , বরং কোরআন মজীদ নাযিলের সময়কার ভাষাশৈলী ও শব্দাবলীর ব্যবহারিক তাৎপর্যের সাথে পরিচিত হয়ে কোরআন অধ্যয়ন করতে হবে। কেবল তাহলেই কোরআনের স্বরূপের সাথে পরিচিত হওয়া যাবে। আর তখনই কোরআন পাঠক বুঝতে পারবেন যে , কেন কোরআন-বিরোধীরা একে জাদু বলে আখ্যায়িত করেছিলো। এরূপ অবস্থায় কোরআন-পাঠকের জীবন হয়ে উঠবে কোরআন কেন্দ্রিক এবং কোরআন তাঁকে এমনভাবে দুর্বার আকর্ষণে আকৃষ্ট করবে যে , তাঁর পক্ষে কোনোদিনই তা কাটানো সম্ভব হবে না , কাটিয়ে ওঠার ইচ্ছাও জাগ্রত হবে না। তখন তিনি কোরআন নিয়েই বাঁচতে চাইবেন , কোরআন নিয়েই মরতে চাইবেন। এটাই কোরআনের অবিনশ্বর মু জিযাহ্।

প্রতিটি মুসলমানের জন্যে , বিশেষ করে আল্লাহর দ্বীনের প্রচার-প্রসার ও প্রতিষ্ঠাকে যারা জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করে নিয়েছেন তাঁদের জন্যে কোরআন মজীদের সঠিক পরিচিতি অর্জন অপরিহার্য।

কোরআন মজীদের সঠিক পরিচয় জানলে একদিকে যেমন কোরআনের ওপর ঈমান শক্তিশালী (محکم ) হবে , অন্যদিকে যথাযথভাবে আল্লাহর পথে আহবানের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হবে। আল্লাহ্ তা আলা এরশাদ করেন :

) اد ْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ(

ডাক তোমার রবের পথের দিকে অকাট্য পরমজ্ঞানের ও উত্তম সদুপদেশের সাহায্যে। (সূরাহ্ আন্-নাহ্ল্ : 125)

আল্লাহ্ তা আলা আমাদেরকে এরূপ অভ্রান্ত ও অকাট্য পরমজ্ঞান অর্জন করা ও উপরোক্ত আয়াত অনুযায়ী আমলের তাওফীক্ব্ দিন। আমীন।