28%

অন্তঃকরণের ইন্দ্রিয়নিচয়:

এ প্রসঙ্গে আরো উল্লেখ করা প্রয়োজন যে , মানুষের মধ্যে অন্তঃকরণ (قلب ) নামে যে অবস্তুগত জ্ঞানমাধ্যম রয়েছে বা এ কালের পরিভাষায় , বিচারবুদ্ধি ও অন্তঃকরণ নামে যে শক্তি রয়েছে বস্তুদেহের ইন্দ্রিয়নিচয়ের মতো তারও (অবস্তুগত) ইন্দ্র্রিয়নিচয় রয়েছে। বস্তুদেহের ইন্দ্রিয়নিচয়ের সাহায্য ছাড়াই মানুষের বিচারবুদ্ধি ও অন্তঃকরণ তার এ সব নিজস্ব ইন্দ্রিয়াদির দ্বারা জ্ঞান আহরণ করতে পারে। অর্থাৎ অন্তঃকরণের শ্রবণ , দর্শন , স্পর্শকরণ , আঘ্রাণ ও স্বাদ গ্রহণের ক্ষমতা আছে। কল্পনার চোখে অনেক দৃশ্য দর্শন করার অভিজ্ঞতা কমবেশী সকলেরই রয়েছে। এমনকি শুধু কল্পনাশক্তির সাহায্যে বস্তুদেহের ইন্দ্রিয়নিচয়ের দ্বারা শ্রবণ , স্পর্শকরণ , আঘ্রাণ ও স্বাদ গ্রহণের অভিজ্ঞতার হুবহু অনুরূপ কিছু কিছু অভিজ্ঞতাও অনেকের থাকতে পারে।

মানুষের বস্তুদেহের ইন্দ্রিয়নিচয়ের বাইরে অন্তঃকরণের ইন্দ্রিয়নিচয় থাকার কথা কোরআন মজীদ থেকেও প্রমাণিত হয়। যেমন , এরশাদ হয়েছে:

) أَفَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَهَهُ هَوَاهُ وَأَضَلَّهُ اللَّهُ عَلَى عِلْمٍ وَخَتَمَ عَلَى سَمْعِهِ وَقَلْبِهِ وَجَعَلَ عَلَى بَصَرِهِ غِشَاوَةً( .

(হে রাসূল!) আপনি কি তাকে দেখেছেন যে তার প্রবৃত্তিকে স্বীয় ইলাহ্ রূপে গ্রহণ করেছে এবং আল্লাহ্ তাকে জ্ঞানের ওপরে গোমরাহ্ করেছেন , আর তার শ্রবণের ও তার অন্তঃকরণের ওপর মোহর করে দিয়েছেন এবং তার দর্শনক্ষমতার ওপর আবরণ তৈরী করে দিয়েছেন ? (সূরাহ্ আল্-জাছিয়াহ্: 23)

নিঃসন্দেহে এখানে বস্তুদেহের কান ও চোখের কথা বলা হয় নি।

অন্যত্র অধিকতর সুস্পষ্ট ভাষায় এদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এরশাদ হয়েছে:

) وَمِنْهُمْ مَنْ يَسْتَمِعُونَ إِلَيْكَ أَفَأَنْتَ تُسْمِعُ الصُّمَّ وَلَوْ كَانُوا لَا يَعْقِلُونَ وَمِنْهُمْ مَنْ يَنْظُرُ إِلَيْكَ أَفَأَنْتَ تَهْدِي الْعُمْيَ وَلَوْ كَانُوا لَا يُبْصِرُونَ(

আর তাদের মধ্যে কতক লোক আছে যারা (হে রাসূল!) আপনার কথা (বস্তুদেহের কান দ্বারা) শোনে ; আপনি কি বধিরকে (আপনার কথা) শুনাতে চান যদিও তারা বিচারবুদ্ধি কাজে লাগায় না ? আর তাদের মধ্যে কতক লোক আছে যারা আপনার দিকে (বস্তুদেহের চক্ষু দ্বারা) মনোযোগ সহকারেই দৃষ্টিপাত করে ; আপনি কি অন্ধকে পথ দেখাতে পারবেন যদিও তারা (অন্তঃকরণের চোখ দ্বারা) দেখতে পায় না ? (সূরাহ্ ইউনুস: 42-43)

এখানে সুস্পষ্ট যে , যাদেরকে বধির ও অন্ধ বলা হয়েছে তাদের বস্তুদেহের কান ও চোখ অকেজো নয়।

এ ধরনের আয়াত কোরআন মজীদে আরো আছে।