12%

খ: যে সব আয়াত শাফাআতের স্বীকৃতি প্রদান করে।

1। সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তারা যা করে থাকে আল্লাহ তালা সবই জানেন।24 কোন ব্যক্তিই শাফাআত করতে পারবেনা আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত , আর তারা সর্বদাই আল্লাহর ভয়ে ভীত- সন্তস্ত্র ।

যদিও এই আয়াতে পথেমে সকলের জন্য শাফাআতকে অস্বীকার করা হয় কিন্তু আয়াতের ধারাবাহিকতায় বলা হয় কিন্তু তারা ব্যতীত যাদেরকে আল্লাহ অনুমতি দেবেন। আরবী শব্দالا কে আরবীতে হাসর حصر হিসিবে গণ্য করা হয় আর যেহেতু এ শব্দটি না বোধক (নেগেটিভ) শব্দের পরে এসেছে তাই আরবী নিয়ম অনুযায়ী নেগেটিভকে অস্বীকার করে মূল বিষয়ের সত্যতা প্রমাণ করে । অতএব উল্লেখিত আয়াত শাফাআতের ইঙ্গিত প্রদান করে ।

وَكَم مِّن مَّلَكٍ فِي السَّمَاوَاتِ لَا تُغْنِي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلَّا مِن بَعْدِ أَن يَأْذَنَ اللَّـهُ لِمَن يَشَاءُ وَيَرْضَىٰ

আকাশে কতইনা ফেরেশতা রয়েছে যাদের কোন শাফাআত ফলপ্রসু হয় না যতক্ষণ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা ও যার উপর সন্তুষ্ট থাকেন।25

এই আয়াতে ও পূর্ববর্তী আয়াতের মতالا নেগেটিভের পরে ব্যবহৃত হয়েছে তাই অনুরূপ অর্থের নির্দেশনা দেয়।

) ي َوْمَئِذٍ لَّا تَنفَعُ الشَّفَاعَةُ إِلَّا مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَـٰنُ وَرَضِيَ لَهُ قَوْلًا(

সেদিন কোন ব্যক্তির শাফাআতই ফলপ্রসু হবে না। যতক্ষণ না আল্লাহ রহমান কাউকে শাফাআতের অনুমতি দেন এবং তার কথায় সন্তুষ্ট হন ।26

এই আয়াতেও পথেমে নেগেটিভ বাক্য ও পরে আরেকটি নেগেটিভ বাক্য ব্যবহৃত হয়েছে ফলে মূলতঃ শাফাআতের সত্যতাই প্রকাশ করে । তবে শর্ত হল , আল্লাহর অনুমতি ও সন্তুষ্টষ্টি ।

তবে উল্লেখিত আয়াতেরالشفاعة শব্দটির কারাআত দুই রকমের হতে পারেرفعنصب আমরা উপরে যে অর্থ করেছি তাرفع এর অর্থ । আল্লামা তাবারসী তার নিজস্ব তাফসীর গ্রন্থে বলেছেন , উভয় প্রকার কারাআতই বৈধ ।27 যদিرفع রাফ পড়া হয় তাহরে অর্থ হবে শাফাআতকে অস্বীকার করেনা তবে শর্ত হল আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন । অন্যদিকে যদি মানসুব পড়া হয় তাহলে অর্থ এরূপ হবে , যে প্রসঙ্গে আয়াতুল্লাহ জাফর সুবহানী বলেন আল্লাহর এ বাণীতেالا শব্দ যে উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়েছে তা শাফাআতের গুরুত্ব বহন করে ।28

আমাদের মতামতই ঠিক । তবে শাফাআতের প্রাস্থির জন্য কোন প্রকার অনুমতির প্রয়োজন নেই তবে যে ব্যক্তি শাফাআত করবে তাকে অবশ্যই আল্লাহর অনুমতি ও সন্তুষ্টষ্টি হাসিল করতে হবে ।

মূলতঃ (যদি ধরে নেয়া হয় উভয়ের জন্যই আল্লাহর অনুমতি নিতে হবে তবুও) তা শাফাআতের সত্যতাই প্রমাণ করে ।

) و َلَا تَنفَعُ الشَّفَاعَةُ عِندَهُ إِلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ(

আল্লাহ পাক যাকে অনুমতি দেন তার কাচে অন্য কারো শাফাআতই ফলপ্রসু হবে না ।29

এই আয়াতেও পথেমে শাফাআতের ফলাফলকে অস্বীকার করা হয়েছে কিন্তু পরক্ষণেই বলা হয়েছেإِلَّا لِمَنْ أَذِنَ لَهُ কিন্তু যাদেরকে আল্লাহ পাক অনুমতি দিবেন তারা ব্যতীত। কারণ আরবী শব্দإِلَّا যদি নেগেটিভ কোন বাক্যের পরে ব্যবহৃত হয় তাহলে তা থেকে পজেটিভ ধারনা প্রমাণিত হয়। তাই এখানে সম্ভবতإِلَّا দ্বারা শাফাআত কারীদের বুঝানো হয়েছে যে , একমাত্র তখনই শাফাআত কারীদের সুপারিশ গ্রহন যোগ্য হবে যখন আল্লাহ পাক তাদেরকে অনুমতি দিবেন।

ঠিক একইভাবে এমনও হতে পারে যে , উক্ত আয়াতেإِلَّا দ্বারা শাফাআতকারীকে বুঝানো হয়েছে আর তখন আয়াতের অর্থ হবে ; সেই ব্যক্তির জন্য শাফাআত ফলপ্রসু হবে যার সম্পর্কে শাফাআত করতে আল্লাহ পাক অনুমতি দিবেন। মহান আলেম ও মোফাসসের আল্লামা জামাখশারী দ্বিতীয় মতকে প্রধান্য দিয়েছেন কিন্তু আল্লামা তাবাতাবাঈ প্রথম মতকে গ্রহন করে বলেন ,

সকল ফেরেশতারাই শাফাআতের যোগ্যতা রাখে তবে যে কোন বিষয় অথবা যে কোন ব্যক্তির জন্যই তা প্রযোজ্য হবে না শুধুমাত্র যে বিষয়ে আল্লাহ তালা অনুমতি দিবেন , অথবা শুধুমাত্র যে ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তালা শাফাআত করার অনুমতি দিবেন। অতএব আল্লাহ পাক ফেরেশতাদের শাফাআতকে অস্বীকার করেছেন কিন্তু যাদেরকে অনুমতি দিবেন তাদের জন্য তা প্রযোজ্য হবে না।

আমাদের মতেও উক্ত আয়াত শাফাআত প্রার্থীদের জন্য প্রযোজ্য কারণ উল্লেখিত আয়াতের দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে , সে ব্যক্তি শাফাআত পাওয়ার যোগ্য নয় যদি না আল্লাহ তালা তার উপর সন্তুষ্ট থাকে।

) و َنَسُوقُ الْمُجْرِمِينَ إِلَىٰ جَهَنَّمَ وِرْدًا لَّا يَمْلِكُونَ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَنِ اتَّخَذَ عِندَ الرَّحْمَـٰنِ عَهْدًا(

এই আয়াতেلَّا يَمْلِكُونَ শব্দের সর্বনামمُجْرِمِينَ এর প্রতি ফিরে যায় ।30 অর্থাৎ শাফাআত প্রার্থীদের জন্য কোন শাফাআতই ফলপ্রসু হবে না যদিনা তারা আল্লাহর কাছ থেকে কোন শাফাআতের প্রতিশ্রুতি নিয়েছে । এই আয়াতেإِلَّا مَنِ اتَّخَذَ عِندَ الرَّحْمَـٰنِ عَهْدًا হাসর শব্দটি শাফাআত প্রার্থীদের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে । অর্থাৎ যারা আল্লাহর কাছ থেকে সুপারিশের প্রতিশ্রুতি নিয়েচে তারা শাফাআতের ফলাফল ভোগ করবে । তবে আরবী শব্দعَهْدًا এর অর্থ হল , আল্লাহর প্রতি ইমান ও শেষ নবীর রেসালাতের উপর দৃঢ় বিশ্বাস । আমাদের মতেও এই আয়াতের উদ্দেশ্য শাফাআত প্রার্থীদের জন্য। করাণإِلَّا নেগেটিভের পরে ব্যবহৃত হয়েছে ।

) و َلَا يَمْلِكُ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِهِ الشَّفَاعَةَ إِلَّا مَن شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ(

যারা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো পুজা করে তারা শাফাআতের অধিকারী হবে না।31 কিন্তু যারা স্বীকার করতো ও বিশ্বাস করতো তাদের ক্ষেত্রে শাফাআত প্রযোজ্য হবে (ঈসা , উজাইর ও ফেরেশতাগন)।

পূর্ববতী আয়াতের যুক্তির ভিত্তিতে এই আয়াতও শাফাআতের অস্তিত্ব প্রমান করে।