48
বন্ধুত্বের চির অবসান
কেউ কোনদিন চিন্তাও করতে পারেনি যে , এ বন্ধুত্বের বিচ্ছেদ ঘটবে। তারা দু’ জন এমন বন্ধু ছিলেন যে , পরস্পর একে অপরের ছায়াসঙ্গী ছিলেন। তারাই আজ একে অপর থেকে আলাদা হয়ে গেছেন। কখনও তারা একে অপরকে ছেড়ে থাকতে পারতেন না। অবস্থা এমন ছিল যে , লোকেরা তাদের আসল নাম না জেনে বরং তার বন্ধু বলে জানতো। লোকেরা যখন তাদের কথা বলতো তখন প্রায়ই তাদের আসল নামের পরিবর্তে বলতো , রফিক অর্থাৎ বন্ধু।
জ্বী হ্যাঁ! লোকটি হযরত ইমাম জা’ ফর সাদিক (আঃ)-এর বন্ধু হিসাবে খ্যাত ও পরিচিত ছিল। কিন্তু সেদিনও তারা অন্যান্য দিনের মতো একে-অপরের সাথেই ছিলেন। তারা উভয়ে এক সাথে একটি জুতা তৈরির দোকানে গেলেন। কেউ কি একথা বিশ্বাস করতে পারে যে ,এমন গভীর বন্ধুত্বঘন সমপর্কের লোকেরা বাজার থেকে বের হবার পর পরস্পর থেকে চিরদিনের জন্য বিচ্ছেদ হয়ে যাবেন ?
সেদিনও সে বরাবরের ন্যায় ইমাম সাদিক (অঃ)-এর সাথে ছিল। তারা উভয়ে বাজারে প্রবেশ করলেন। তার সাথে তার কৃষাঙ্গ গোলামও ছিল। গোলাম তার মালিকের পিছে পিছে চলছিল । কিছু দূর চলার পর পেছনে ফিরে সে তাকিয়ে দেখে তার গোলাম নেই। আরও একটু সামনে চলার পর পিছনে ফিরে দেখলো গোলামকে দেখা যায় না। কিছুক্ষণ পর আবার মুখ ঘুরিয়ে দেখলো কিন্তু গোলামের হদীস নেই। মনে হচ্ছিল সে বাজারের খেল-তামাশা দেখার মধ্যে লিপ্ত হয়ে গেছে। আর তার মালিক ও মালিকের সাথীগণ অনেক আগে চলে গেছে। চতুর্থবার পিছনে ফিরে দেখে যে তার গোলাম হাজির। গোলামকে দেখেই সে ক্রোধে আক্রোশে বলে উঠলো :
‘ হারামযাদা! এতক্ষণ কোথায় চলে গিয়েছিলি’ ?
বন্ধুর মুখ থেকে এমন অশ্রাব্য কথাটি শুনে ইমাম জা’ ফর সাদিক (আঃ) আশ্চর্যান্বিত হয়ে গেলেন। ইমাম নিজের ললাটে হাত মেরে বললেন , সুবহানালাহ! তুমি তার মাকে গালি দিলে ? তুমি তার মাকে অবৈধ কর্মের সাথে সম্পৃক্ত করলে ? আমি তো এতদিন ভেবেছিলাম যে , তুমি একজন মোত্তাকী- পরহেযগার লোক। কিন্তু আজ তোমার প্রকৃত রূপ সামনে এসে গেছে। দেখা যাচ্ছে তোমার মধ্যে তাকওয়া পরহেযগারীর নাম-নিশানাও নেই।
বন্ধু বললো , হে রাসূলের (সাঃ) সন্তান! এ গোলামটি আসলে সিন্ধী। তার মাতাও সিন্ধী। আপনি তো জানেন যে , তারা মুসলমান নয়। আর গোলামের মা কোন মুসলমান নারী নয় যে , আমি তার উপর অবৈধ কাজের অপবাদ লাগিয়ে দিয়েছি।
ইমাম (আঃ) বললেন , তার মাতা কাফের ছিল একশ বার থাকুক। প্রত্যেক জাতির মধ্যেই বিয়ে শাদীর একটা নিয়ম-কানুন ও বিশেষ প্রথা বর্তমান থাকে। যদি কোন জাতির লোক তার জাতীয় নিয়ম-নীত ও পন্থা অনুসরণ করে বিয়ে-শাদী করে , তাহলে তাদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কোনদিন অবৈধ সম্পর্ক হবে না। আর তাদের সন্তানদেরকে হারামযাদা বা অবৈধ সন্তান হিসাবে গণ্য করা যাবে না।
ইমাম (আঃ) তাকে আরো বললেন , তুমি এ মুহূর্তে আমার কাছ থেকে দূরে চলে যাও। আর কোনদিন আমার কাছেও আসবে না।
সেদিন থেকে কেউ হযরত ইমাম জা’ ফর সাদিক (আঃ)-কে আর কোনদিন ঐ লোকটির সাথে চলতে দেখেনি। আজীবন তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘরে গেল।59