5%

19

ইমাম গাযযালী ও ডাকাত দল

ইসলামী জ্ঞান রাজ্যের প্রখ্যাত পন্ডিত ব্যক্তি ইমাম গাযযালী ইরানের তুস নগরীর অধিবাসী ছিলেন। পবিত্র মাশহাদের নিকটতম একটি এলাকার নাম তুস। সেকালে নিশাপুর ছিল ইসলামী শিক্ষা-দীক্ষার প্রাণকেন্দ্র।

পঞ্চম হিজরী শতাব্দীর কথা। নিশাপুর শহরটি তখন ইসলামী জ্ঞানের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত হতো। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা অর্জনের জন্য এখানে আসতো। তাই গাযযালীও জ্ঞান অর্জনের জন্য এখানে আসলেন। দীর্ঘদিন পর্যন্ত সুযোগ্য ওস্তাদ ও ওলামাগণের তত্ত্বাবধানে বিশেষ মনোযোগ ও আগ্রহের সাথে জ্ঞান শিক্ষা করতে থাকেন। তার নিয়ম ছিল এই যে , অভিজ্ঞ আলেম ও পন্ডিত ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে বসে যে সব জ্ঞান অর্জন করতেন তা তিনি খাতায় লিপিবদ্ধ করতেন যাতে ওস্তাদের সে শিক্ষা ভুলে না যান এবং প্রয়োজনের সময় তা দ্বারা আরো বেশী উপকার লাভ করতে পারেন। এভাবে ছাত্র জীবনে জনাব গাযযালী বিভিন্ন বিষয়ের উপর এক মূল্যবান জ্ঞান- ভাণ্ডার জমা করলেন যা তার নিকট নিজের জীবনের চাইতেও অধিক মূল্যবান ও প্রিয় ছিল।

কয়েক বছর পর্যন্ত নিশাপুরে ছাত্র জীবন অতিবাহিত করার পর যখন গাযযালী নিজের দেশে ফিরে যাবার মনস্থ করলেন তখন নিজের জমাকৃত সমস্ত জ্ঞান-ভাণ্ডার একত্র করে একটি পুটুলি বাঁধলেন এবং তা সাথে নিয়ে দেশের দিকে যাত্রা করলেন।

পথে একদল ডাকাত তাদের কাফেলার উপর আক্রমণ করলো। ডাকাতরা কাফেলাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে লোকদের জিনিসপত্র মালামাল ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়ে এক জায়গায় জমা করতে লাগলো।

এভাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাকাত দল ইমাম গাযযালীর মালামালের নিকট এসে গেল। ডাকাতরা ইমাম গাযযালীর নিকট এসে তার পুটুলি ছিনিয়ে নিতে চাইল। এমন সময় তিনি ডাকাতদের সামনে দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন এবং ডাকাতদের বললেন , দেখো এ পুটুলি ব্যতীত তোমরা আর যা কিছু নিতে চাও সব নিয়ে যাও। কিন্তু আমার নিবেদন হচ্ছে এটি তোমরা আমার কাছেই রেখে দাও।

গাযযালীর কথা শুনে ডাকাতরা ভাবলো মনে হয় পুটুলিতে অনেক টাকা রয়েছে। এ জন্যই লোকটি এটি হাতছাড়া করতে চায় না। তাই তারা এটা কেড়ে নিল। যখন তারা সেটা খুললো তখন দেখলো যে , এর মধ্যে কাগজের জমাকৃত স্তুপ ব্যতীত আর কিছুই নেই। তারপর ডাকাতরা ইমাম গাযযালীকে জিজ্ঞাসা করলো , এ পুটুলিতে কি এমন বিরাট সম্পদ ছিল যা রক্ষা করার জন্য তুমি এভাবে হাউমাউ করে কাঁদছিলে ? আমাদের চিন্তায় আসে না যে , এসব কাগজপত্র দিয়ে তুমি কি উপকর লাভ করবে ? এ কাগজগুলো তোমার কি কাজে আসবে ?

ইমাম গাযযালী বললেন , এ পুটুলিতে যা আছে নিঃসন্দেহে তা তোমাদের কোন কাজে আসবে না। কিন্তু আমার জন্য তা অনেক উপকারী ও মূল্যবান সম্পদ।

: কিন্তু এ কথাও তো বলবে যে , এগুলো তোমার কোন কাজের জন্য ?

:এ কাগজগুলো আমার এ পর্যন্তকার ছাত্র জীবনের মূল্যবান সম্পদ যা আমি আমার উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ওস্তাদগণের সাহায্যে জমা করেছি। তোমরা যদি আমার এ জ্ঞান-ভাণ্ডার ছিনিয়ে নাও তাহলে আমার সমস্ত জ্ঞান-ভাণ্ডার ধ্বংস হয়ে যাবে। আর আমার এতো বছরের মেহনত হবে বৃথা। : এটাই কি সত্য কথা যে , তোমার সারা জীবনের সমস্ত জ্ঞান-ভাণ্ডার এ পুটুলিতে রয়েছে ?

: জ্বী হ্যাঁ!

: যে জ্ঞান কোন পুটুলি কিংবা সিন্ধুকের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখা যায় বা চোর-ডাকাত ছিনিয়ে নিয়ে যেতে পারে প্রকৃতপক্ষে তা জ্ঞানই নয়। যাও এবং নিজের অজ্ঞতা ও বোকামির উপর চিন্তা-ভাবনা করো। আমাদের ভেবে পাই না , সেটা কি ধরনের ও জ্ঞান যা চোর-ডাকাতরা চুরি করে নিয়ে যেতে পারে ?

ডাকাতদের এ সহজ-সরল ও সাধারণ কথায় গাযযালীর মতো যোগ্য ও পরিশ্রমী ছাত্রের অন্তরে দাগ কাটলো। যে গাযযালী এতদিন ওস্তাদের কাছ থেকে শোনা প্রতিটি কথাই খাতায় লিখে রাখতেন এখন তিনিই এ চেষ্টায় লিপ্ত হলেন যে , চিন্তা-ভাবনা দ্বারা নিজের জ্ঞান-বুদ্ধির লালন করবেন। আর অনুসন্ধান ও যাচাই-বাছাই করে নিজের স্মৃতির খাতায় লিখে রাখবেন।

ইমাম গাযযালী নিজেই বলেছেন , ডাকাতদের মুখ থেকে নিঃসৃত কথা আমার জন্য ছিল উত্তম উপদেশ এ উপদেশই আমার জীবনে চিন্তা-গবেষণার দিকনির্দেশনা দান করেছে।28