উক্তি নং - ১
وَ قَالَعليهالسلام : كُنْ فِي الْفِتْنَةِ كَابْنِ اللَّبُونِ، لاَ ظَهْرٌ فَيُرْكَبَ، وَ لاَ ضَرْعٌ فَيُحْلَبَ (فیحتلب).
দ্বন্দ্ব - সংঘাতের (বিশৃঙ্খলার) সময় দু ’ বছরের উষ্ট্র শাবকের মত হও ,যার পৃষ্ঠ এমন নয় যাতে আরোহণ করা যায় এবং স্তনও এমন নয় যা দোহন করা যায়।১
____________________
(১) এর অর্থ হলো গৃহযুদ্ধ বা অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সময় মানুষকে এমনভাবে আচরণ করতে হয় যাতে করে তার কোন গুরুত্ব আছে বলে মনে না হয়। তখন সকলে তাকে উপেক্ষা করে যাবে। কোন পক্ষে তার যোগদান করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হবে না। কারণ ফেতনার সময় এরূপ নির্লিপ্ততা উৎপীড়ন থেকে রক্ষা করতে পারে। কিন্তু ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে যখন দ্বন্দ্ব বাধে তখন নির্লিপ্ত থাকা অন্যায়। অবশ্য ন্যায় আর অন্যায়ের দ্বন্দ্বকে গৃহ কোন্দল বলা যায় না। এ অবস্থায় ন্যায়ের সমর্থনে রুখে দাঁড়ানো এবং অন্যায় অবনমিত করা অবশ্য কর্তব্য। উদাহরণ স্বরূপ - জামাল ও সিফফিননের যুদ্ধে ন্যায়কে সমর্থন করে অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ফরজ ছিলো।
উক্তি নং - ২
وَ قَالَعليهالسلام : أَزْرَى بِنَفْسِهِ مَنِ اسْتَشْعَرَ الطَّمَعَ، وَ رَضِيَ بِالذُّلِّ مَنْ كَشَفَ عَنْ ضُرِّهِ، وَ هَانَتْ عَلَيْهِ نَفْسُهُ مَنْ أَمَّرَ عَلَيْهَا لِسَانَهُ.
যে লোভে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে সে নিজকে অবমূল্যায়ন করে ;যে নিজের অভাব অনটনের কথা প্রকাশ করে সে নিজকে অপমানিত করে ;আর যার জিবহা আত্মাকে পরাভূত করে তার আত্মা দুষিত হয়ে পড়ে।
উক্তি নং - ৩
وَ قَالَعليهالسلام : الْبُخْلُ عَارٌ، وَ الْجُبْنُ مَنْقَصَةٌ، وَ الْفَقْرُ يُخْرِسُ الْفَطِنَ عَنْ حُجَّتِهِ، وَ الْمُقِلُّ غَرِيبٌ فِي بَلْدَتِه.
কৃপণতা লজ্জা ,কাপুরুষতা ত্রুটি ;দারিদ্র একজন বুদ্ধিমান লোককেও তার নিজের বেলায় যুক্তি প্রদর্শন করতে ব্যর্থ করে এবং দুঃস্থ ব্যক্তি তার নিজের শহরেও আগন্তুকের মত।
উক্তি নং - ৪
قَالَعليهالسلام : الْعَجْزُ آفَةٌ وَ الصَّبْرُ شَجَاعَةٌ وَ الزُّهْدُ ثَرْوَةٌ وَ الْوَرَعُ جُنَّةٌ نِعْمَ الْقَرِينُ الرِّضَى.
অক্ষমতা ,বিপদ - আপদ ,ধৈর্য ,সাহসিকতা ,মিতাচার ধন - সম্পদ ,আত্মপ্রত্যয় বর্ম এবং সর্বোত্তম সাথী হলো আল্লাহর ইচ্ছায় সম্পর্কিত হওয়া।
উক্তি নং - ৫
وَ قَالَعليهالسلام : وَ الْعِلْمُ وِرَاثَةٌ كَرِيمَةٌ، وَ الْآدَابُ حُلَلٌ مُجَدَّدَةٌ، وَ الْفِكْرُ مِرْآةٌ صَافِيَةٌ.
জ্ঞান শ্রদ্ধার্হ সম্পত্তি ,সদাচরণ নতুন পোষাক এবং চিন্তা স্বচ্ছ আয়না।
উক্তি নং - ৬
وَ قَالَعليهالسلام : صَدْرُ الْعَاقِلِ صُنْدُوقُ سِرِّهِ، وَ الْبَشَاشَةُ حِبَالَةُ الْمَوَدَّةِ، وَ الاِحْتِمَالُ قَبْرُ الْعُيُوبِ. وَ رُوِيَ أَنَّهُ قَالَ فِي الْعِبَارَةِ عَنْ هَذَا الْمَعْنَى أَيْضا: الْمَسْأَلَةُ خَبْءُ الْعُيُوبِ، مَنْ رَضِيَ عَنْ نَفْسِهِ كَثُرَ السَّاخِطُ عَلَيْهِ.
জ্ঞানীদের বক্ষ তার গুপ্ত বিষয়ের সিন্দুক ;প্রফুল্লতা বন্ধুত্বের বন্ধন ;কার্যকর ধৈর্য সকল দোষক্রটির কবর।
উক্তি নং - ৭
وَ قَالَعليهالسلام : وَ الصَّدَقَةُ دَوَأٌ مُنْجِحٌ، وَ أَعْمَالُ الْعِبَادِ فِي عَاجِلِهِمْ، نُصْبُ أَعْيُنِهِمْ فِي آجَالِهِمْ.
বদান্যতা কার্যকর চিকিৎসা ;এ জীবনের আমল পরকালে চোখের সামনে দেখতে পাবে।
উক্তি নং - ৮
وَ قَالَعليهالسلام : أعْجَبُوا لِهَذَا الْإِنْسَانِ؛ يَنْظُرُ بِشَحْمٍ، وَ يَتَكَلَّمُ بِلَحْمٍ، وَ يَسْمَعُ بِعَظْمٍ وَ يَتَنَفَّسُ مِنْ خَرْمٍ!
মানুষ কী আশ্চর্যজনক যে ,সে চর্বি আর এক টুকরা মাংস দ্বারা কথা বলে ,একটা হাড় দ্বারা শুনে এবং একটা ছিদ্র দ্বারা শ্বাস - প্রশ্বাস নেয়।
উক্তি নং - ৯
وَ قَالَعليهالسلام : إِذَا أَقْبَلَتِ الدُّنْيَا عَلَى قَوْمٍ أَعَارَتْهُمْ مَحَاسِنَ غَيْرِهِ، وَ إِذَا أَدْبَرَتْ عَنْهُمْ سَلَبَتْهُ مَحَاسِنَ نَفسِهِ (اَنْفُسِهِمْ).
কারো ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে পৃথিবী যখন অনুকূলে আসে তখন অন্যের ভালো কাজের সুকীর্তি তার নামে হয় ;আর পৃথিবী প্রতিকূলে গেলে নিজের ভালো কাজের সুনাম থেকে সে বঞ্চিত হয়।
উক্তি নং - ১০
وَ قَالَعليهالسلام : خَالِطُوا النَّاسَ مُخَالَطَةً إِنْ مِتُّمْ مَعَهَا بَكَوْا عَلَيْكُمْ، وَ إِنْ عِشْتُمْ (غبتم) حَنُّوا إِلَيْكُمْ.
মানুষের সঙ্গে এমনভাবে আচরণ কর যেন (সেই অবস্থায়) তোমার মৃত্যুতে তারা ক্রন্দন করে এবং যদি জীবিত থাক তারা তোমার সাথে থাকতে ও মিশতে তীব্র আগ্রহ ব্যক্ত করে (তোমার সার্বক্ষণিক সঙ্গী হতে চায়) ।
উক্তি নং - ১১
وَ قَالَعليهالسلام : إِذَا قَدَرْتَ عَلَى عَدُوِّكَ فَاجْعَلِ الْعَفْوَ عَنْهُ شُكْرا لِلْقُدْرَةِ عَلَيْهِ.
প্রতিপক্ষের ওপর জয়ী হলে তাকে ক্ষমা করো।
উক্তি নং - ১২
وَ قَالَعليهالسلام : أَعْجَزُ النَّاسِ مَنْ عَجَزَ عَنِ اكْتِسَابِ الْإِخْوَانِ، وَ أَعْجَزُ مِنْهُ مَنْ ضَيَّعَ مَنْ ظَفِرَ بِهِ مِنْهُمْ.
সব চাইতে অসহায় সেই ব্যক্তি যার কিছু ভ্রাতৃ - প্রতিম বন্ধু নেই ;কিন্তু আরো অসহায় সেই ব্যক্তি যে এহেন বন্ধুত্ব হারায়।
উক্তি নং - ১৩
وَ قَالَعليهالسلام : إِذَا وَصَلَتْ إِلَيْكُمْ أَطْرَافُ النِّعَمِ فَلاَ تُنَفِّرُوا أَقْصَاهَا بِقِلَّةِ الشُّكْرِ.
যখন তুমি (আল্লাহর) নিয়ামত ও অনুগ্রহ লাভ করা শুরু কর তখন কম শোকর আদায় (কৃতজ্ঞতার ক্ষেত্রে কার্পণ্যের মাধ্যমে) করে তা অব্যাহত থাকাকে দূরে সরিয়ে দিও না ।
উক্তি নং - ১৪
وَ قَالَعليهالسلام : مَنْ ضَيَّعَهُ الْأَقْرَبُ أُتِيحَ لَهُ الْأَبْعَدُ.
আপনজন যাকে পরিত্যাগ করে দূরবর্তীগণের সে প্রিয় হয়।
উক্তি নং - ১৫
وَ قَالَعليهالسلام : مَا كُلُّ مَفْتُونٍ يُعَاتَبُ.
যে কেউ বালা মুসিবত বা পরীক্ষায় পড়লে তাকে তিরস্কার করা ঠিক নয় ।
উক্তি নং - ১৬
وَ قَالَعليهالسلام : تَذِلُّ الْأُمُورُ لِلْمَقَادِيرِ، حَتَّى يَكُونَ الْحَتْفُ فِي التَّدْبِيرِ.
সকল বিষয় অদৃষ্টের এতটা নিয়ন্ত্রণাধীন যে ,কখনো কখনো চেষ্টার ফলে মৃত্যু হয়।
উক্তি নং - ১৭
وَ سُئِلَعليهالسلام عَنْ قَوْلِ الرَّسُولِصلىاللهعليهوآلهوسلم : «غَيِّرُوا الشَّيْبَ وَ لاَ تَشَبَّهُوا بِالْيَهُودِ» فَقَالَعليهالسلام : إِنَّمَا قَالَصلىاللهعليهوآلهوسلم ذَلِكَ وَ الدِّينُ قُلُّ، فَأَمَّا الْآنَ وَ قَدِ اتَّسَعَ نِطَاقُهُ وَ ضَرَبَ بِجِرَانِهِ، فَامْرُؤٌ وَ مَا اخْتَارَ.
“ বৃদ্ধ বয়স ঢেকে ফেলে এবং ইহুদীদের অনুকরণ করো না ” রাসূলের (সা.) এ উক্তির বিষয়ে কেউ একজন জিজ্ঞেস করলে আমিরুল মোমেনিন বলেন ,রাসূল (সা.) যখন একথা বলেছিলেন তখন মুষ্টিমেয় কজন দ্বীনের অনুসারী ছিল ,এখন এর বিস্তৃতি বেড়েছে এবং প্রত্যেকে তার ইচ্ছামত স্বাধীনভাবে চলতে পারে।
উক্তি নং - ১৮
وَ قَالَعليهالسلام فی الَّذِینَ اعتَزَلُوا القِتالَ مَعَهُ: خَذَلُوا الْحَقَّ، وَ لَمْ يَنْصُرُوا الْباطِلَ
আমিরুল মোমেনিনের (আ.) সাথে যুদ্ধ করতে যারা অসমর্থন জানিয়ে ছিল তাদের সম্পর্কে তিনি বলেছিলেনঃ ন্যায়কে ত্যাগ করলেও অন্যায়ের সমর্থন করো না ।
উক্তি নং - ১৯
وَ قَالَعليهالسلام : مَنْ جَرَى فِي عِنَان أَمَلِهِ عَثَرَ بِأَجَلِهِ.
যে ব্যক্তি লাগাম কষে ধরে ঘোড়া দৌড়ায় সে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়।
উক্তি নং - ২০
وَ قَالَعليهالسلام : أَقِيلُوا ذَوِي الْمُرُوءَاتِ عَثَرَاتِهِمْ، فَمَا يَعْثُرُ مِنْهُمْ عَاثِرٌ إِلا وَ يَدُ اللَّهِ بِيَدِهِ يَرْفَعُهُ.
বিবেচক লোকের দোষ - ত্রুটি ক্ষমা করো ,কারণ তারা ভ্রমে নিপতিত হলে আল্লাহ তাদের তুলে আনেন।
উক্তি নং - ২১
وَ قَالَعليهالسلام : قُرِنَتِ الْهَيْبَةُ بِالْخَيْبَةِ، وَالْحَيَأُ بِالْحِرْمَانِ، وَالْفُرْصَةُ تَمُرُّ مَرَّ السَّحَابِ، فَانْتَهِزُوا فُرَصَ الْخَيْرِ.
ভয়ের ফলাফল হলো হতাশা এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা হলো নৈরাশ্য। সুযোগ মেঘের মতো বয়ে যায়। কাজেই উত্তম সুযোগের সদ্ব্যবহার করো।
উক্তি নং - ২২
وَ قَالَعليهالسلام : لَنَا حَقُّ، فَإِنْ أُعْطِينَاهُ، وَ إِلا رَكِبْنَا أَعْجَازَ الْإِبِلِ، وَ إِنْ طَالَ السُّرَى.
আমাদের অধিকার আছে যদি তা দেয়া হয় ,তবে গ্রহণ করব - অন্যথায় আমরা উষ্ট্রসমূহের পিছনে আরোহণ করব যদিও রাতের ভ্রমণ দীর্ঘ হোক।
উক্তি নং - ২৩
وَ قَالَعليهالسلام : مَنْ أَبْطَأَ بِهِ عَمَلُهُ لَمْ يُسْرِعْ بِهِ نَسَبُهُ (حَسْبَهُ)
যার কর্ম তৎপরতা নিম্নমানের তার বংশ মর্যাদার জন্য তাকে উচ্চ মর্যাদা দেয়া যায় না।
উক্তি নং - ২৪
وَ قَالَعليهالسلام : مِنْ كَفَّاراتِ الذُّنُوبِ الْعِظامِ إِغاثَةُ الْمَلْهُوفِ، وَالتَّنْفِيسُ عَنِ الْمَكْرُوبِ.
শোকাহতের শোক উপশম করা ও দুঃখ - দুর্দশা বিমোচন করা মানেই পাপ স্খলন।
উক্তি নং - ২৫
وَ قَالَعليهالسلام : يَا ابْنَ آدَمَ، إِذا رَأَيْتَ رَبَّكَ سُبْحانَهُ يُتابِعُ عَلَيْكَ نِعَمَهُ وَ أَنْتَ تَعْصِيهِ فَاحْذَرْهُ.
হে আদম সন্তান! যখন দেখবে তোমার মহাপবিত্র প্রতিপালক ,তাঁর অনুগ্রহ ও নিয়ামতকে অবিরতভাবে তোমাকে দিচ্ছেন অথচ তুমি তার নির্দেশকে অমান্য করছ (গুনাহে লিপ্ত রয়েছো) তখন তাঁকে ভয় কর।
উক্তি নং - ২৬
وَ قَالَعليهالسلام : مَا أَضْمَرَ أَحَدٌ شَيْئا إِلا ظَهَرَ فِي فَلَتَاتِ (لفنات) لِسانِهِ، وَ صَفَحاتِ وَجْهِهِ.
যখন কোন লোক হৃদয়ে কোন কিছু গোপন করে ,এটা তার অনিচ্ছাকৃত কথা ও মুখমণ্ডলের ভাষায় প্রকাশ হয়ে পড়ে।
উক্তি নং - ২৭
وَ قَالَعليهالسلام : امْشِ بِدائِكَ ما مَشَى بِكَ.
অসুস্থতার সময় যতটুকু পার হাটা - চলা করো।
উক্তি নং - ২৮
وَ قَالَعليهالسلام : أَفْضَلُ الزُّهْدِ إِخْفأُ الزُّهْدِ.
সব চাইতে সংযমী সে যে এটা (সংযম) গাপন রাখে।
উক্তি নং - ২৯
وَ قَالَعليهالسلام : إِذا كُنْتَ فِي إِدْبارٍ، وَالْمَوْتُ فِي إِقْبالٍ، فَما أَسْرَعَ الْمُلْتَقَى!
যখন তুমি পৃথিবী থেকে চলে যাবে এবং মৃত্যু উপস্থিত হবে তখন এটা মোকাবেলা করার বিলম্বের কোন প্রশ্ন উঠে না।
উক্তি নং - ৩০
وَ قَالَعليهالسلام : الْحَذَرَ الْحَذَرَ! فَوَاللَّهِ لَقَدْ سَتَرَ، حَتّى كَأَنَّهُ قَدْ غَفَرَ.
আল্লাহকে ভয় করা!! আল্লাহকে ভয় করা!! আল্লাহর কসম ,তিনি তোমাদের পাপ ততটুকু গোপন করবেন যতটুকু ক্ষমা করেছেন।
উক্তি নং - ৩১
وَ سُئِلَعليهالسلام عَنِ الْإِيمَانِ فَقَالَ: الْإِيمَانُ عَلى أَرْبَعِ دَعائِمَ (شعب): عَلَى الصَّبْرِ، وَالْيَقِينِ وَالْعَدْلِ، وَالْجِهادِ. فَالصَّبْرُ مِنْها عَلى أَرْبَعِ شُعَبٍ: عَلَى الشَّوْقِ، وَالشَّفَقِ، وَالزُّهْدِ، وَالتَّرَقُّبِ: فَمَنِ اشْتاقَ إِلَى الْجَنَّةِ سَلا عَنِ الشَّهَواتِ؛ وَ مَنْ أَشْفَقَ مِنَ النَّارِ اجْتَنَبَ الْمُحَرَّماتِ؛ وَ مَنْ زَهِدَ فِي الدُّنْيَا اسْتَهانَ بِالْمُصِيباتِ؛ وَ مَنِ ارْتَقَبَ الْمَوْتَ سارَعَ فِى الْخَيْراتِ. وَالْيَقِينُ مِنْهَا عَلَى أَرْبَعِ شُعَبٍ: عَلَى تَبْصِرَةِ الْفِطْنَةِ، وَ تَأَوُّلِ الْحِكْمَةِ، وَ مَوْعِظَةِ الْعِبْرَةِ، وَ سُنَّةِ الْأَوَّلِينَ. فَمَنْ تَبَصَّرَ فِي الْفِطْنَةِ تَبَيَّنَتْ لَهُ الْحِكْمَةُ؛ وَ مَنْ تَبَيَّنَتْ لَهُ الْحِكْمَةُ عَرَفَ الْعِبْرَةَ؛ وَ مَنْ عَرَفَ الْعِبْرَةَ فَكَأَنَّمَا كَانَ فِى الْأَوَّلِينَ. وَالْعَدْلُ مِنْهَا عَلَى أَرْبَعِ شُعَبٍ: عَلَى غَائِصِ الْفَهْمِ، وَ غَوْرِ الْعِلْمِ؛ وَ زُهْرَةِ الْحُكْمِ، وَ رَسَاخَةِ الْحِلْمِ، فَمَنْ فَهِمَ عَلِمَ غَوْرَ الْعِلْمِ وَ مَنْ عَلِمَ غَوْرَ الْعِلْمِ صَدَرَ عَنْ شَرَائِعِ الْحُكْمِ؛ وَ مَنْ حَلُمَ لَمْ يُفَرِّطْ فِي أَمْرِهِ وَ عَاشَ فِي النَّاسِ حَمِيدا. وَالْجِهَادُ مِنْهَا عَلَى أَرْبَعِ شُعَبٍ: عَلَى الْأَمْرِ بِالْمَعْرُوفِ، وَالنَّهْيِ عَنِ الْمُنْكَرِ، وَالصِّدْقِ فِي الْمَوَاطِنِ وَ شَنَآنِ الْفَاسِقِينَ، فَمَنْ أَمَرَ بِالْمَعْرُوفِ شَدَّ ظُهُورَ الْمُؤْمِنِينَ، وَ مَنْ نَهَى عَنِ الْمُنْكَرِ أَرْغَمَ أُنُوفَ الْمُنافِقِينَ، وَ مَنْ صَدَقَ فِي الْمَوَاطِنِ قَضَى مَا عَلَيْهِ، وَ مَنْ شَنِئَ الْفَاسِقِينَ وَ غَضِبَ لِلَّهِ، غَضِبَ اللَّهُ لَهُ وَ أَرْضَاهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ. وَالْكُفْرُ عَلَى أَرْبَعِ دَعَائِمَ: عَلَى التَّعَمُّقِ، وَالتَّنَازُعِ، وَالزَّيْغِ، وَالشِّقَاقِ: فَمَنْ تَعَمَّقَ لَمْ يُنِبْ إِلَى الْحَقِّ؛ وَ مَنْ كَثُرَ نِزَاعُهُ بِالْجَهْلِ دَامَ عَمَاهُ عَنِ الْحَقِّ؛ وَ مَنْ زَاغَ سَاءَتْ عِنْدَهُ الْحَسَنَةُ، وَ حَسُنَتْ عِنْدَهُ السَّيِّئَةُ، وَ سَكِرَ سُكْرَ الضَّلاَلَةِ، وَ مَنْ شَاقَّ وَعُرَتْ عَلَيْهِ طُرُقُهُ، وَ أَعْضَلَ عَلَيْهِ أَمْرُهُ، وَ ضَاقَ عَلَيْهِ مَخْرَجُهُ. وَالشَّكُّ عَلَى أَرْبَعِ شُعَبٍ: عَلَى التَّمَارِي، وَالْهَوْلِ، وَالتَّرَدُّدِ، وَالاِسْتِسْلاَمِ: فَمَنْ جَعَلَ الْمِرَأَ دَيْدَناً (دیناً) لَمْ يُصْبِحْ لَيْلُهُ؛ وَ مَنْ هَالَهُ مَا بَيْنَ يَدَيْهِ نَكَصَ عَلَى عَقِبَيْهِ؛ وَ مَنْ تَرَدَّدَ فِي الرَّيْبِ وَطِئَتْهُ سَنَابِكُ الشَّيَاطِينِ؛ وَ مَنِ اسْتَسْلَمَ لِهَلَكَةِ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ هَلَكَ فِيهِمَا.
হযরত আলী (আ.) কে ইমান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ ইমান চারটি খুটির ওপর স্থাপিত । এটা হলো ,ধৈর্য ,দৃঢ় - প্রত্যয় ,ন্যায় বিচার ও জিহাদ । ধৈর্যের আবার চারটি দিক আছেঃ একাগ্রতা ,ভীতি ,দুনিয়া বর্জন ও বাসনা পরিত্যাগ ;যে দোযখের আগুনকে ভয় করে সে অবৈধ কাজ থেকে বিরত থাকে ;যে দুনিয়াকে বর্জন করে সে দুঃখ - দুর্দশাকে তুচ্ছ মনে করে এবং যে মৃত্যুর কথা চিন্তা করে সে সৎ আমলের দিকে দ্রুত এগিয়ে যায় ।
দৃঢ় - প্রত্যয়েরও চারটি দিক আছেঃ বিচক্ষণ উপলব্ধি ,বুদ্ধিমত্তা ও বোধগম্যতা ,আদর্শ কিছু থেকে শিক্ষা গ্রহণ এবং অতীতের নজির অনুসরণ। সুতরাং যে বিচক্ষণতার সাথে উপলব্ধি করে প্রজ্ঞাপূর্ণ জ্ঞান তার কাছে পরিস্ফুট হয়ে উঠে। যার কাছে প্রজ্ঞাপূর্ণ জ্ঞান পরিস্ফুট হয় সে ইন্দ্রিয় গোচর সকল বস্তু থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। শিক্ষাপূর্ণ বস্তু যার ইন্দ্রিয় গোচর হয়। সে অতীতকালের লোকদের মতো ।
ন্যায় বিচারেরও চারটি দিক আছেঃ তীক্ষ্ম বোধ ,গভীর জ্ঞান ,সিদ্ধান্ত নেয়ার উত্তম ক্ষমতা এবং দৃঢ় - ধৈর্য ;সুতরাং যে বুঝতে পারে সে গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারে ;যার সারগর্ভ জ্ঞান থাকে সে বিচার করতে পারে এবং যে ধৈর্যের অভ্যাস করে সে অসৎ আমল করে না এবং জনগণের মধ্যে প্রশংসনীয় জীবন যাপন করে।
জিহাদেরও চারটি দিক আছেঃ ভালো কাজ করার জন্য অন্যকে বলা ,পাপ কাজ থেকে অন্যকে বিরত রাখা ,আল্লাহর পথে সর্বান্তিকরণে যুদ্ধ করা ও পাপীদের ঘৃণা করা। সুতরাং যে অন্যকে ভালো কাজ করার কথা বলে সে ইমানদারদের শক্তি জোগায় ;যে অন্যদের পাপ কাজে বাধা দেয় সে অবিশ্বাসীকে অবনমিত করে ;যে সর্বান্তিকরণে যুদ্ধ করে সে তার সকল দায়িত্ব পালন করে এবং যে পাপপূর্ণ কাজকে ঘৃণা করে ও তাতে রাগান্বিত হয় আল্লাহ তার ওপর সন্তুষ্ট থাকেন এবং শেষ বিচারে তাকে আনন্দিত করবেন।
ইমানহীনতাও চারটি খুটির ওপর স্থাপিতঃ খেয়ালের বশবর্তী হওয়া ,পারস্পরিক বিবাদ ,সত্য পথ থেকে ভ্রষ্ট হওয়া ,মতদ্বৈধতা ও বিরোধ। সুতরাং যে খামখেয়ালিভাবে চলে সে ন্যায়ের প্রতি ঝুকতে পারে না ;অজ্ঞতার কারণে যে বিবাদে লিপ্ত হয় সে ন্যায় হতে স্থায়ীভাবে অন্ধ হয়ে থাকে ;যে সত্য থেকে সরে যায় তার কাছে ভালো মন্দ হয়ে যায় এবং মন্দ ভালো হয়ে যায়। এতে সে বিপথগামিতায় নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে এবং যে আল্লাহ ও রাসূলের সাথে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে তার পথ বিপদসঙ্কুল হয়ে পড়ে ,তার কর্মকাণ্ড জটিল হয়ে পড়ে এবং তার উদ্ধার পাবার পথ ক্ষীণ হয়ে পড়ে।
সংশয়েরও চারটি দিক আছেঃ অযৌক্তিকতা ,ভয় ,অস্থিরতা ও সবকিছুতে অযাচিত সমর্পণ। সুতরাং যে অযৌক্তিকতার পথ বেছে নেয়। তার রাত্রি কখনো প্রভাত হয় না ,যে কোন কিছু আপতিত হবার ভয়ে ভীত সে দৌড়ে পালায় ,যে অস্থির স্বভাব সম্পন্ন সে শয়তানের পায়ে দলিত হয় এবং যে ধ্বংসের প্রতি আত্মসমর্পণ করে সে তাতে নিমজ্জিত হয়।
উক্তি নং - ৩২
وَ قَالَعليهالسلام : فَاعِلُ الْخَيْرِ خَيْرٌ مِنْهُ، وَ فَاعِلُ الشَّرِّ شَرُّ مِنْهُ.
কল্যাণকর কাজ যে করে সে কল্যাণ থেকে অধিকতর ভালো এবং পাপী পাপ থেকে নিকৃষ্ট।
উক্তি নং - ৩৩
وَ قَالَعليهالسلام : كُنْ سَمْحاً وَ لاَ تَكُنْ مُبَذِّراً، وَ كُنْ مُقَدِّراً وَ لاَ تَكُنْ مُقَتِّراً.
উদার হয়ো কিন্তু অপচয়কারী হয়ো না ;মিতব্যয়ী হয়ো কিন্তু কৃপণ হয়ো না।
উক্তি নং - ৩৪
وَ قَالَعليهالسلام : أَشْرَفُ الْغِنَى تَرْكُ الْمُنَى.
আকাঙ্খা পরিত্যাগ করাই সর্বোৎকৃষ্ট সম্পদ।
উক্তি নং - ৩৫
وَ قَالَعليهالسلام : مَنْ أَسْرَعَ إِلَى النَّاسِ بِمَا يَكْرَهُونَ، قَالُوا فِيهِ مَا لاَ يَعْلَمُونَ.
মানুষ যা পছন্দ করে না কেউ তা বলতে তাড়াহুড়া করলে মানুষ সে ব্যক্তি সম্পর্কে এমন কিছু রটিয়ে দেয় যা তারা জানে না ।
উক্তি নং - ৩৬
وَ قَالَعليهالسلام : مَنْ أَطَالَ الْأَمَلَ أَسَاءَ الْعَمَلَ.
যে আকাঙ্খাকে প্রসারিত করে সে নিজের আমল ধ্বংস করে ।
উক্তি নং - ৩৭
وَ قَالَعليهالسلام : وَ قَدْ لَقِيَهُ عِنْدَ مَسِيرِهِ إِلَى الشَّامِ دَهَاقِينُ الْأَنْبَارِ فَتَرَجَّلُوا لَهُ وَ اشْتَدُّوا بَيْنَ يَدَيْهِ، فقال: مَا هَذَا الَّذِي صَنَعْتُمُوهُ؟ فَقَالُوا: خُلُقٌ مِنَّا نُعَظِّمُ بِهِ أُمَرَأَنَا، فَقَالَ: وَاللَّهِ مَا يَنْتَفِعُ بِهَذَا أُمَرَاؤُكُمْ! وَ إِنَّكُمْ لَتَشُقُّونَ عَلَى أَنْفُسِكُمْ فِي دُنْيَاكُمْ وَ تَشْقَوْنَ بِهِ فِي آخِرَتِكُمْ. وَ مَا أَخْسَرَ الْمَشَقَّةَ وَرَأَهَا الْعِقَابُ، وَ أَرْبَحَ الدَّعَةَ مَعَهَا الْأَمَانُ مِنَ النَّارِ!.
একদা আমিরুল মোমেনিন সিরিয়া যাবার সময় আল - আনবার এলাকার অধিবাসীরা তার সাক্ষাত পেল। তাকে দেখেই তারা পায়ে হেটে চলতে শুরু করলো এবং কিছুক্ষণ পর তারা তার আগে আগে দৌড়াতে শুরু করলো। তিনি এরূপ করার কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বললো যে ,এভাবে তারা তাদের প্রধানদের সন্মান প্রদর্শন করে থাকেন। এতে আমিরুল মোমেনিন বললেন ,আল্লাহর কসম ,এতে তোমাদের নেতার কোন উপকার হবে না। এতে তোমরা নিজেদেরকে কষ্ট দিচ্ছ এবং পরকালের জন্য কৃপণতা অর্জন করছো। যার পিছে পিছে শাস্তি ঘুরছে তার জন্য এ শ্রম কতই না ক্ষতিকর। দোযখের আগুন থেকে মুক্তি পাবার যে পথ তা কতই না লাভজনক।
উক্তি নং - ৩৮
وَ قَالَعليهالسلام: لاِبْنِهِ الْحَسَنِ: يَا بُنَيَّ، احْفَظْ عَنِّي أَرْبَعاً وَ أَرْبَعاً، لاَ يَضُرُّكَ مَا عَمِلْتَ مَعَهُنَّ: إِنَّ أَغْنَى الْغِنَى الْعَقْلُ، وَ أَكْبَرَ الْفَقْرِ الْحُمْقُ، وَ أَوْحَشَ الْوَحْشَةِ الْعُجْبُ، وَ أَكْرَمَ الْحَسَبِ حُسْنُ الْخُلُقِ.
يَا بُنَيَّ، إِيَّاكَ وَ مُصَادَقَةَ الْأَحْمَقِ، فَإِنَّهُ يُرِيدُ أَنْ يَنْفَعَكَ فَيَضُرَّكَ؛ وَ إِيَّاكَ وَ مُصَادَقَةَ الْبَخِيلِ، فَإِنَّهُ يَقْعُدُ عَنْكَ أَحْوَجَ مَا تَكُونُ إِلَيْهِ؛ وَ إِيَّاكَ وَ مُصَادَقَةَ الْفَاجِرِ، فَإِنَّهُ يَبِيعُكَ بِالتَّافِهِ؛ وَ إِيَّاكَ وَ مُصَادَقَةَ الْكَذَّابِ، فَإِنَّهُ كَالسَّرَابِ: يُقَرِّبُ عَلَيْكَ الْبَعِيدَ، وَ يُبَعِّدُ عَلَيْكَ الْقَرِيبَ.
ইমাম আলী (আ.) তাঁর পুত্র হাসান (আ.) - কে বলেন :‘ হে আমার পুত্র ,(প্রথমে) চারটি এবং (পরে) চারটি বিষয় আমার কাছ থেকে সংরক্ষণ কর (সব সময় স্মরণ রাখ) । এতে তুমি তার সঙ্গে যা কিছুই কর কখনই তোমার ক্ষতি হবে না। বিষয়গুলো হলো : নিশ্চয় সবচেয়ে বড় অমুখাপেক্ষিতা (মূলধন) হলো বুদ্ধিমত্তা ; সবচেয়ে বড় নিঃস্বতা হলো মূর্খতা ,সবচেয়ে বড় ভয় ও একাকিত্ব হলো আত্মঅহমিকা এবং সবচেয়ে সম্মানজনক পরিচয় হলো সুন্দর চরিত্র ও ব্যবহার।
হে আমার পুত্র , মূর্খ লোকের বন্ধুত্ব থেকে দূরে থাক। কারণ , সে তোমার উপকার করতে গিয়ে অপকার করে ফেলবে। কৃপণ ব্যক্তির সঙ্গেও বন্ধুত্ব করো না। কারণ , যখন তোমার তার সাহায্যের তীব্র প্রয়োজন পড়বে সে তোমাকে সাহায্য করা থেকে বিরত থাকবে। পাপী (লম্পট ও প্রতারক) ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব (সম্পর্ক) করো না। কারণ , সে তোমাকে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে দেবে। মিথ্যাবাদীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করো না। কারণ , সে মরীচিকার মত। তাই দূরের জিনিসকে সে তোমার জন্য কাছের (ও সহজলভ্য) এবং কাছের জিনিসকে দূরের (ও দুর্লভ্য) হিসেবে তুলে ধরবে।
উক্তি নং - ৩৯
وَ قَالَعليهالسلام : لاَ قُرْبَةَ بِالنَّوَافِلِ إِذَا أَضَرَّتْ بِالْفَرَائِضِ.
নফল ইবাদত করতে গিয়ে যদি ফরয ইবাদতের ব্যাঘাত ঘটে তবে তার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য পাওয়া যায় না।
উক্তি নং - ৪০
وَ قَالَعليهالسلام : لِسَانُ الْعَاقِلِ وَرَأَ قَلْبِهِ، وَ قَلْبُ الْأَحْمَقِ وَرَأَ لِسَانِهِ.
জ্ঞানী লোকের জিহ্বা হৃদয়ের পিছনে ,আর মুর্খ লোকের হৃদয় জিহবার পিছনে।
উক্তি নং - ৪১
وَ قَدْ رُوِىَّ عَنْهُعليهالسلام : قَلْبُ الْأَحْمَقِ فِي فِيهِ، وَ لِسَانُ الْعَاقِلِ فِي قَلْبِهِ.
হযরত আলী (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে , মূর্খের হৃদয় মুখে আর জ্ঞানীর জিহ্বা হৃদয়ে।
উক্তি নং - ৪২
وَ قالَ لِبَعضِ أصحابِهِ فی عِلَّةٍ اعتَلَّها: جَعَلَ اللَّهُ مَا كَانَ مِنْ شَكْوَاكَ حَطّا لِسَيِّئَاتِكَ، فَإِنَّ الْمَرَضَ لاَ أَجْرَ فِيهِ، وَ لَكِنَّهُ يَحُطُّ السَّيِّئاتِ وَ يَحُتُّها حَتَّ الْأَوْراقِ، وَ إِنَّمَا الْأَجْرُ فِي الْقَوْلِ بِاللِّسانِ، وَالْعَمَلِ بِالْأَيْدِي وَالْأَقْدامِ، وَ إِنَّ اللَّهَ سُبْحانَهُ يُدْخِلُ بِصِدْقِ النِّيَّةِ وَالسَّرِيرَةِ الصّالِحَةِ مَنْ يَشأُ مِنْ عِبادِهِ الْجَنَّةَ.
হযরত আলী (আ.) তাঁর এক সহচরের অসুস্থতার সময় বলেন :‘ আল্লাহ্ তোমার রোগকে পাপ খণ্ডনের উপায় করে দিন। কারণ ,অসুস্থতার কোন পুরস্কার নেই। কিন্তু তা তোমার পাপকে মোচন করে এবং তা শুকনো পাতার মতো ঝরিয়ে দেয়। পুরস্কার শুধু মুখের কথা এবং হাত ও পায়ের (অঙ্গ - প্রত্যঙ্গের) দ্বারা সম্পাদিত কর্মে। মহান আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে হৃদয়ের নিয়তের সততা এবং আত্মিক পবিত্রতার অধিকারীদের যাকে ইচ্ছা বেহেশতে প্রবেশ করাবেন ।
উক্তি নং - ৪৩
وَ قَالَعليهالسلام : فِي ذِكْرِ خَبّابِ بْنِ الْأَرَتِّ: يَرْحَمُ اللَّهُ خَبَّابا فَلَقَدْ أَسْلَمَ راغِباً، وَ هاجَرَ طائِعاً، وَ قَنِعَ بِالْكَفافِ، وَ رَضِيَ عَنِ اللَّهِ وَ عاشَ مُجاهِداً.
খাব্বার ইবনে আল - আরাতের১ প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক ,যেহেতু সে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছে ,অনুগতভাবে মক্কা থেকে হিজরত করেছে ,যা আছে তাতেই তৃপ্ত ,আল্লাহতে সন্তুষ্ট এবং একজন মুহাজিরের জীবন যাপন করেছে।
____________________
(১) খাবার ইবনে আরাত একজন বিশিষ্ট সাহাবি ছিলেন এবং তিনি প্রথম সারির একজন মুহাজির। তিনি কুরাইশদের হাতে নানাভাবে নিগৃহীত হয়েছিলেন। তাকে খর রৌদ্রে দাঁড় করিয়ে রাখা হতো এবং আগুনের উত্তাপে শুইয়ে রাখা হতো। কিন্তু কিছুতেই তিনি রাসূলের (সা.) পক্ষ ত্যাগ করেননি। তিনি বদর ও অন্যান্য যুদ্ধে রাসূলের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন। সিফফিন ও নাহরাওয়ানের যুদ্ধে তিনি আমিরুল মোমেনিনের পক্ষে ছিলেন। তিনি মদিনা ছেড়ে কুফায় বসতি স্থাপন করেছিলেন। ৩৯ হিজরি সনে ৭৩ বৎসর বয়সে তিনি কুফায় ইন্তেকাল করেন। কুফায় তাকে দাফন করা হয়। আমিরুল মোমেনিন তার জানাজা পরিচালনা করেন এবং তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে এ কথাগুলো বলেছিলেন।
উক্তি নং - ৪৪
وَ قَالَعليهالسلام : طُوبى لِمَنْ ذَكَرَ الْمَعادَ، وَ عَمِلَ لِلْحِسابِ، وَ قَنِعَ بِالْكَفافِ، وَ رَضِيَ عَنِ اللَّهِ.
যে ব্যক্তি পরকালের কথা মনে রেখে ও জবাবদিহি করতে হবে মনে রেখে কাজ করে এবং যা আছে তাতে তৃপ্ত থেকে আল্লাহতে সন্তুষ্ট থাকে সেই ব্যক্তি সব চাইতে আশীবার্দপুষ্ট।
উক্তি নং - ৪৫
وَ قَالَعليهالسلام : لَوْ ضَرَبْتُ خَيْشُومَ الْمُؤْمِنِ بِسَيْفِي هَذا عَلى أَنْ يُبْغِضَنِي ما أَبْغَضَنِي؛ وَ لَوْ صَبَبْتُ الدُّنْيا بِجَمَّاتِها عَلَى الْمُنافِقِ عَلى أَنْ يُحِبَّنِي ما أَحَبَّنِي. وَ ذلِكَ أَنَّهُ قُضِيَ فَانْقَضى عَلى لِسانِ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّصلىاللهعليهوآلهوسلم ؛ أَنَّهُ قالَ: يا عَلِيُّ لا يُبْغِضُكَ مُؤْمِنٌ، وَ لا يُحِبُّكَ مُنافِقٌ.
আমার এ তরবারি দ্বারা কোন ইমানদারের নাকে যদি আমি আঘাতও করি তবু সে আমাকে ঘৃণা করবে না। আবার আমাকে ভালোবাসার জন্য যদি আমি মোনাফেকের সামনে দুনিয়ার সকল সম্পদ স্তুপীকৃত করে দেই। তবুও সে আমাকে ভালোবাসবে না। এর কারণ হলো পরম প্রিয় রাসূল (সা.) তাঁর নিজ মুখে বলেছেন ,“ হে আলী ,ইমানাদারগণ কখনো তোমাকে ঘৃণা করবেন না এবং মোনাফেকগণ কখনো তোমাকে ভালোবাসবে না” ।১
___________________
(১) এ হাদিসটি সহী বলে সর্বসমক্ষে গৃহীত এবং এতে কেউ কোন দিন কোন সংশয় প্রকাশ করেনি। এ হাদিসটি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ,ইমরান ইবনে হুসাইন ,উম্মোল মোমেনিন উম্মে সালমা ও অন্যান্য অনেক থেকে বর্ণিত হয়েছে। আমিরুল মোমেনিন নিজেই বর্ণনা করেছেনঃ
যিনি বীজ থেকে চারা গজান ও আত্মা সৃষ্টি করেন ,সেই আল্লাহর কসম ,নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল (সা.) আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে ,প্রকৃত মোমিন ছাড়া আমাকে কেউ ভালোবাসবে না এবং মোনাফেক ছাড়া কেউ আমার প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করবে না । (নিশাবুরী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ৬০. তিরমিজী ,৫ম খণ্ড ,পৃঃ ৬৩৫ ,৬৪৩ মাজাহ ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ৫৫ নাসাঈ ,৮ম খণ্ড ,পৃঃ ১১৫ - ১১৭ ;হাম্বল ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ৮৪ ,৯৫ ,১২৮ ,৬ষ্ঠ খণ্ড ,পৃঃ ২৯২) ;হাতিম ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৪০০ ;ইসফাহানী ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ১৮৫: আছীর ,৯ম খণ্ড ,পৃঃ ৪৭.৩ শাফী ,৯ম ,খণ্ড ,পৃঃ ১৩৩ ,শাফী ,পৃঃ ১৯০ - ১৯৫ ;বারি ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১১০০ আছীর ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ২৬ বাগদাদী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ২৫৫ ,৮ম খণ্ড ,পৃঃ ৪১৭ ,১৪শ খণ্ড ,পৃঃ ৪২৬ কাছীর ,৭ম খণ্ড ,পৃঃ ৩৫৪) । রাসূলের (সা.) সাহাবাগণ আমিরুল মোমেনিনের প্রতি ভালোবাসা অথবা ঘৃণা দ্বারা কোন লোকের ইমান ও নিফাক পরখ করতেন। আবু জর গিফারী ,আবু সাঈদ খুদরী ,আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ ও জাবীর ইবনে আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত আছে যে - আমরা সাহাবাগণ আলী ইবেন আবি তালিবের প্রতি ঘৃণা দ্বারা মোনাফেকদের খুঁজে বের করতাম (তিরমিজী ৫ম খণ্ড ,পৃঃ ৬৩৫ ;নিশাবুরী ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১২৯ ;ইসফাহানী ,৬ষ্ঠ খণ্ড ,পৃঃ ২৯৪ ,শাফী ,৯ম খণ্ড ,পৃঃ ১৩২ - ১৩৩. আন্থীরা ,৯ম খণ্ড ,পৃঃ ৪৭৩ শাফকী ,৬ষ্ঠ খণ্ড ,পৃঃ ৬৬ - ৬৭ ,বাগদাদী ,১৩শ খণ্ড ,পৃঃ ১৫৩ ,শাফী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ২১৪ - ২১৫ ;বারি ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১১১০ ;আছীর ,৪র্থ খণ্ড ,পৃঃ ২৯ - ৩০)
উক্তি নং - ৪৬
وَ قَالَعليهالسلام : سَيِّئَةٌ تَسُوءُكَ خَيْرٌ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ حَسَنَةٍ تُعْجِبُكَ.
যে মন্দ কাজ (তুমি তা করার পর) তোমাকে দুঃখিত করে তা আল্লাহর নিকট তোমার ঐ সৎকর্ম থেকে উত্তম যা তোমাকে গর্বিত করে ।
উক্তি নং - ৪৭
وَ قَالَعليهالسلام : قَدْرُ الرَّجُلِ عَلى قَدْرِ هِمَّتِهِ، وَ صِدْقُهُ عَلى قَدْرِ مُرُوْءَتِهِ، وَ شَجاعَتُهُ عَلى قَدْرِ أَنَفَتِهِ، وَ عِفَّتُهُ عَلَى قَدْرِ غَيْرَتِهِ.
সাহস অনুসারে মানুষের মূল্যায়ন হয় ,মেজাজের ভারসাম্য অনুসারে সত্যবাদিতা মূল্যায়ন হয় ,আত্মসম্মানবোধ অনুসারে শৌর্য এবং লজ্জাবোধ অনুসারে সততার মূল্যায়ন হয়।
উক্তি নং - ৪৮
وَ قَالَعليهالسلام : الظَّفَرُ بِالْحَزْمِ، وَالْحَزْمُ بِإِجالَةِ الرَّأْيِ، وَالرَّأْيُ بِتَحْصِينِ الْأَسْرَارِ.
সংকল্পের ফলে বিজয় ,বিচারবুদ্ধির ফলে সংকল্প এবং গোপনীয়তা রক্ষায় বিচারবুদ্ধি গড়ে ওঠে।
উক্তি নং - ৪৯
وَ قَالَعليهالسلام : احْذَرُوا صَوْلَةَ الْكَرِيمِ إِذا جاعَ، وَاللَّئِيمِ إِذا شَبِعَ.
সম্মানী লোক যখন ক্ষুধার্ত হয় এবং হীন লোকের যখন উদর পূর্ণ থাকে (তখন) তাদের আক্রমণকে ভয় কর।
উক্তি নং - ৫০
وَ قَالَعليهالسلام : قُلُوبُ الرِّجالِ وَحْشِيَّةٌ، فَمَنْ تَأَلَّفَها أَقْبَلَتْ عَلَيْهِ.
মানুষের হৃদয় বন্য পশুর মতো ;যে তাদের পোষে তার ওপর তারা ঝাপিয়ে পড়ে।
উক্তি নং - ৫১
وَ قَالَعليهالسلام : عَيْبُكَ مَسْتُورٌ ما أَسْعَدَكَ جَدُّكَ.
যে পর্যন্ত তোমার পদমর্যাদা উচ্চ থাকবে সে পর্যন্ত তোমার ত্রুটি - বিচূতি ঢাকা থাকবে।
উক্তি নং - ৫২
وَ قَالَعليهالسلام : أَوْلَى النَّاسِ بِالْعَفْوِ أَقْدَرُهُمْ عَلَى الْعُقُوبَةِ.
যে শাস্তি প্রদানে ক্ষমতাবান সেই ক্ষমা করতে সমর্থ।
উক্তি নং - ৫৩
وَ قَالَعليهالسلام : السَّخأُ ما كانَ ابْتِداءً، فَأَمّا ما كانَ عَنْ مَسْأَلَةٍ فَحَيأٌ وَ تَذَمُّمٌ.
আপনা থেকে প্রদান করাকেই উদারতা বলে ,কারণ যাচনা করলে প্রদান করা মানে হলো হয় আত্ম - সম্মান বৃদ্ধি ,না হয় বদনাম ঘুচানো।
উক্তি নং - ৫৪
وَ قَالَعليهالسلام : لا غِنى كَالْعَقْلِ، وَ لا فَقْرَ كَالْجَهْلِ؛ وَ لا مِيراثَ كَالْأَدَبِ؛ وَ لا ظَهِيرَ كَالْمُشَاوَرَةِ.
প্রজ্ঞার মতো সম্পদ নেই ,অজ্ঞতার মতো দুরাবস্থা নেই ,বিশোধনের মতো উত্তরাধিকারত্ব নেই এবং আলোচনার মতো খুটি নেই।
উক্তি নং - ৫৫
وَ قَالَعليهالسلام : الصَّبْرُ صَبْرانِ: صَبْرٌ عَلى ما تَكْرَهُ، وَ صَبْرٌ عَمّا تُحِبُّ.
ধৈর্য দু ’ ধরনের। যা তুমি অপছন্দ কর সে বিষয়ে ধৈর্য এবং যা তুমি পছন্দ কর সে বিষয়ে ধৈর্য।
উক্তি নং - ৫৬
وَ قَالَعليهالسلام : الْغِنى فِي الْغُرْبَةِ وَطَنٌ، وَالْفَقْرُ فِي الْوَطَنِ غُرْبَةٌ.
সম্পদ থাকলে বিদেশও স্বদেশ বলে মনে হয় আর দুর্দশাগ্রস্থ হলে স্বদেশও বিদেশ বলে মনে হয়।
উক্তি নং - ৫৭
وَ قَالَعليهالسلام : الْقَناعَةُ مالٌ لا يَنْفَدُ.
তৃপ্তি এমন সম্পদ যা কখনো কমে না।
উক্তি নং - ৫৮
وَ قَالَعليهالسلام : الْمَالُ مَادَّةُ الشَّهَواتِ
সম্পদ কামনা - বাসনার ঝর্ণাধারা।
উক্তি নং - ৫৯
وَ قَالَعليهالسلام : مَنْ حَذَّرَكَ كَمَنْ بَشَّرَكَ.
যে তোমাকে সতর্ক করে সে ওই ব্যক্তির মতো যে তোমাকে সুসংবাদ দেয়।
উক্তি নং - ৬০
وَ قَالَعليهالسلام : اللِّسانُ سَبُعٌ إِنْ خُلِّيَ عَنْهُ عَقَرَ.
জিহবা হিংস্র পশুর ন্যায়। যদি তাকে ছেড়ে দাও দংশন করবে।
উক্তি নং - ৬১
وَ قَالَعليهالسلام : الْمَرْأَةُ عَقْرَبٌ حُلْوَةُ اللَّسْبَةِ.
নারী কাকড়ার মতো যার আঁকড়ে ধরা মধুর।
উক্তি নং - ৬২
وَ قَالَعليهالسلام : إِذا حُيِّيتَ بِتَحِيَّةٍ فَحَيِّ بِأَحْسَنَ مِنْها، وَ إِذا أُسْدِيَتْ إِلَيْكَ يَدٌ فَكافِئْها بِما يُرْبِي عَلَيْها، وَ الْفَضْلُ مَعَ ذلِكَ لِلْبادِئ.
যদি তুমি অভিবাদন পাও তবে বিনিময়ে আরো বেশী অভিবাদন দিয়ো । যদি তোমার দিকে সাহায্যের হাত বাড়ায় তবে বিনিময়ে আরো ভালো আনুকূল্য দিয়ো , যদিও যে প্রথম সম্ভাষণ করবে কৃতিত্ব তারই থাকবে ।
উক্তি নং - ৬৩
وَ قَالَعليهالسلام : الشَّفِيعُ جَناحُ الطّالِبِ.
মধ্যস্থতাকারী অনুসন্ধানীর পাখা।
উক্তি নং - ৬৪
وَ قَالَعليهالسلام : أَهْلُ الدُّنْيا كَرَكْبٍ يُسارُ بِهِمْ وَ هُمْ نِيامٌ.
পৃথিবীর বাসিন্দা সেসব ভ্রমনকারীদের মতো যাদের ঘুমন্ত অবস্থায় বহন করা হয়।
উক্তি নং - ৬৫
وَ قَالَعليهالسلام : فَقْدُ الْأَحِبَّةِ غُرْبَةٌ.
যার বন্ধুর অভাব তাকে আগন্তুক মনে হয়।
উক্তি নং - ৬৬
وَ قَالَعليهالسلام: فَوْتُ الْحاجَةِ أَهْوَنُ مِنْ طَلَبِها إِلى غَيْرِ أَهْلِها.
অপাত্রে কোন কিছু চাওয়া অপক্ষো প্রয়োজন পূরণ না হওয়া সহজতর (উত্তম) ।
উক্তি নং - ৬৭
وَ قَالَعليهالسلام : لا تَسْتَحِ مِنْ إِعْطأِ الْقَلِيلِ، فَإِنَّ الْحِرْمانَ أَقَلُّ مِنْهُ.
সামান্য হলেও দান করতে লজ্জাবোধ করো না। কারণ ,আদৌ কিছু না দেয়া তার থেকেও স্বল্প।
উক্তি নং - ৬৮
وَ قَالَعليهالسلام : الْعَفافُ زِينَةُ الْفَقْرِ، وَ الشُّكْرُ زِينَةُ الْغِنَى.
দান দুস্থতার অলঙ্কার আর কৃতজ্ঞতা (আল্লাহর কাছে) সম্পদের অলঙ্কার।
উক্তি নং - ৬৯
وَ قَالَعليهالسلام : إِذا لَمْ يَكُنْ ما تُرِيدُ فَلا تُبَلْ كَيْفَ كُنْتَ.
যা সংঘটিত হবার কথা ভেবেছে তা না ঘটলে উদ্বীগ্ন হয়ে না।
উক্তি নং - ৭০
وَ قَالَعليهالسلام : لا تَرَى الْجاهِلُ إِلا مُفْرِطاً أَوْ مُفَرِّطاً.
চরমভাবে অবজ্ঞা ,অথবা অতিরঞ্জিত করা ছাড়া কোন অজ্ঞ লোক দেখবে না।
উক্তি নং - ৭১
وَ قَالَعليهالسلام : إِذا تَمَّ الْعَقْلُ نَقَصَ الْكَلامُ.
জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা যত বাড়বে কথাও তত কমবে।
উক্তি নং - ৭২
وَ قَالَعليهالسلام: الدَّهْرُ يُخْلِقُ الْأَبْدانَ، وَ يُجَدِّدُ الْآمالَ (الأعمال)، وَ يُقَرِّبُ الْمَنِيَّةَ، وَ يُباعِدُ الْأُمْنِيَّةَ، مَنْ ظَفِرَ بِهِ نَصِبَ، وَ مَنْ فاتَهُ تَعِبَ.
সময় আমাদের দেহ পরিধান করে ,আকাঙ্খাকে নবায়ন করে ,মৃত্যুকে নিকটবর্তী করে এবং সকল ব্যাকুল বাসনা কেড়ে নিয়ে যায়। এতে যে কৃতকার্য হয় সে শোকের মোকাবেলা করে এবং যে এর আনুকূল্য হারায় সে দুর্দশাগ্রস্থ হয়।
উক্তি নং - ৭৩
وَ قَالَعليهالسلام : مَنْ نَصَبَ نَفْسَهُ لِلنَّاسِ إِمَامَاً فَعَلَيْهِ أَنْ يَبْدَأَ بِتَعْلِيمِ نَفْسِهِ قَبْلَ تَعْلِيمِ غَيْرِهِ، وَ لْيَكُنْ تَأْدِيبُهُ بِسِيرَتِهِ قَبْلَ تَأْدِيبِهِ بِلِسانِهِ؛ وَ مُعَلِّمُ نَفْسِهِ وَ مُؤَدِّبُها أَحَقُّ بِالْإِجْلالِ مِنْ مُعَلِّمِ النّاسِ وَ مُؤَدِّبِهِمْ.
যে নিজকে মানুষের নেতা বলে দাবী করে তার উচিত অপরকে শিক্ষা দেয়ার পূর্বে নিজে শিক্ষা গ্রহণ করা এবং মুখের বদলে সে যেন নিজের আচরণ দিয়ে অন্যকে শিক্ষা দেয়। যে ব্যক্তি নিজকে শিক্ষা দেয় সে অন্যকে শিক্ষাদানকারী অপেক্ষা অধিক সুনামের দাবীদার।
উক্তি নং - ৭৪
وَ قَالَعليهالسلام : نَفَسُ الْمَرْءِ خُطاهُ إِلى أَجَلِهِ.
মানুষের প্রতিটি নিশ্বাস মৃত্যুর দিকে পদক্ষেপ মাত্র।
উক্তি নং - ৭৫
وَ قَالَعليهالسلام : كُلُّ مَعْدُودٍ مُنْقَضٍ (منقص)، وَ كُلُّ مُتَوَقَّعٍ آتٍ.
প্রত্যেক হিসাবযোগ্য বস্তুকে চলে যেতে হবে এবং প্রত্যেক প্রত্যাশিত বিষয় ঘটবে।
উক্তি নং - ৭৬
وَ قَالَعليهالسلام : إِنَّ الْأُمُورَ إِذَا اشْتَبَهَتِ اعْتُبِرَ آخِرُها بِأَوَّلِها.
যদি কোন ব্যাপার মিশ্রিত হয়ে পড়ে তবে পূর্ববর্তীগুলো অনুসারে শেষটির প্রশংসা করতে হবে।
উক্তি নং - ৭৭
ومن خبر ضرار بن حمزة الضبائی عند دخوله علی معاویة وَ قالَ: فَأَشْهَدُ لَقَدْ رَأَيْتُهُ فِي بَعْضِ مَواقِفِهِ وَ قَدْ أَرْخَى اللَّيْلُ سُدُولَهُ وَ هُوَ قائِمٌ فِي مِحْرابِهِ، قابِضٌ عَلى لِحْيَتِهِ، يَتَمَلْمَلُ تَمَلْمُلَ السَّلِيمِ، وَ يَبْكِي بُكأَ الْحَزِينِ، وَ يَقُولُ:
يا دُنْيا يا دُنْيا، إِلَيْكِ عَنِّي، أَبِي تَعَرَّضْتِ؟ أَمْ إِلَيَّ تَشَوَّقْتِ؟ لا حانَ حِينُكِ، هَيْهاتَ! غُرِّي غَيْرِي، لا حاجَةَ لِي فِيكِ، قَدْ طَلَّقْتُكِ ثَلاثا لا رَجْعَةَ فِيها! فَعَيْشُكِ قَصِيرٌ، وَ خَطَرُكِ يَسِيرٌ، وَ أَمَلُكِ حَقِيرٌ. آهِ مِنْ قِلَّةِ الزّادِ، وَ طُولِ الطَّرِيقِ، وَ بُعْدِ السَّفَرِ، وَ عَظِيمِ الْمَوْرِدِ!
জীরার ইবনে হামজাহ আদ - দিবাবী১ মুয়াবিয়ার কাছে বলেছিলেন ,“ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে ,আলী ইবনে আবি তালিবকে আমি বহুবার দেখেছি গভীর রাতে তিনি মসজিদের মধ্যে নিজের দাড়ি ধরে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে এমনভাবে আর্তনাদ করতেন যেন সাপে কামড়ানো মানুষ এবং তিনি শোকাহত লোকের মতো রোদন করে বলতেনঃ
হে দুনিয়া ,ওহে দুনিয়া! আমার কাছ থেকে দূর হও। কেন তুমি নিজকে আমার কাছে ব্যদন করছো ? তুমি কি আমাকে পাবার জন্য লালায়িত ? আমাকে অভিভূত করার মতো সুযোগ তুমি পাবে না। অন্য কাউকে প্রতারিত করার চেষ্টা করো। তোমার সাথে আমার কোন কাজ নেই। আমি তোমাকে তিন তালাক দিয়েছি ;কাজেই আর কোন সম্পর্ক হবার জো নেই। তোমার স্থায়ীত্ব অতি অল্প ,তোমার গুরুত্ব নগণ্য এবং তোমার পছন্দ অতি হীন। আহা! রসদ অতি অল্প ,পথ খুবই দীর্ঘ - ভ্রমন দীর্ঘ সময়ের - লক্ষ্যস্থলে পৌছা কষ্টসাধ্য।
____________________
(১) জীরার ইবনে হামজাহ আমিরুল মোমেনিনের একজন অনুচর ছিলেন। আমিরুল মোমেনিনের ইনতিকালের পর তিনি সিরিয়া গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি মুয়াবিয়ার সাথে দেখা করেছিলেন। মুয়াবিয়া তাকে বললো“ আমার কাছে আলীর বর্ণনা দাও। ” জীরার বললো ,“ আপনি অভয় দিলে আমি জবাব দিতে পারবো। ” মুয়াবিয়া বললে ,“ তুমি নির্ভয় বলো ” তারপর জীরার বলতে লাগলেনঃ
যদি আপনি আমার কথা বিশ্বাস করেন। তবে জেনে রাখুন ,আলীর ব্যক্তিত্ব ছিল সীমাহীন ,তিনি তাঁর জ্ঞান ছিল ,তাঁর প্রতিটি আচরণে প্রজ্ঞা প্রকাশিত হতো । তিনি মোটা খাদ্য পছন্দ করতেন এবং অল্প দামের পোষাক পছন্দ করতেন । আল্লাহর কসম ,তিনি আমাদের একজন হিসাবে আমাদের মাঝে ছিলেন । তিনি আমাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দিতেন এবং আমাদের সকল অনুরোধ রক্ষা করতেন । আল্লাহর কসম ,যদিও তিনি আমাদেরকে তাঁর কাছে যেতে দিতেন প্রকৃতপক্ষে তিনি আমাদের কাছেই ছিলেন । তাঁর প্রতি আমাদের সশ্রদ্ধ অনুভূতি থাকা সত্ত্বেও তাকে সম্বোধন করে। কিছু বলতে আমরা ভয় পেতাম না । আমাদের হৃদয়ে তার মহত্ত্ব অনুভূত থাকা সত্ত্বেও আমরা প্রথম কথা বলতে ভয় পেতাম না । তাঁর হাসিতে মুক্ত ছড়িয়ে পড়তো । তিনি ধার্মিকদের খুব সম্মান করতেন । অভাবগ্রস্তের প্রতি খুবই দয়ালু ছিলেন । তিনি এতিম ,নিকট আত্নীয় ও অন্নহীনকে খাওয়াতেন । তিনি বস্ত্রহীনে বস্ত্র দিতেন ও অক্ষম ব্যক্তিকে সাহায্য করতেন । তিনি দুনিয়া ও এর চাকচিক্যকে ঘৃণা করতেন। (তারপর ওপরের ৭৭ নং এ বর্ণিত কথাগুলো বললেন)
জীরারের মুখ থেকে এসব কথা শুনে মুয়াবিয়ার চোখে পানি এসেছিল এবং সে বললো ,“ আবুল হাসানের ওপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। তিনি প্রকৃতপক্ষে এরূপ ছিলেন। ” তারপর জীরারের দিকে ফিরে বললো ,তার অনুপস্থিতি তুমি কেমন অনুভব কর ,হে জীরার। ” জীরার বললো ,“ আমি সেই মহিলার মতো শোকাহত যার সন্তানকে তার কোলে রেখে কেটে ফেলা হয়েছে ” (বার ,৩য় খণ্ড ,পৃঃ ১১০৭ - ১১০৮ ;ইসফাহানী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৮৪ ;হাম্বলী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ১২১ ;কালী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ১৪৭ ,হুসরী ,১ম খণ্ড ,পৃঃ ৪০ - ৪১ ;মাসুদী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ৪২১ ;শাফী ,২য় খণ্ড ,পৃঃ ২১২ ;হাদীদ ,১৮শ খণ্ড ,পৃঃ ২২৫ - ২২৬)
উক্তি নং - ৭৮
وَ مِنْ كَلاَمٍ لَهُعليهالسلام لِلسَّائِلِ الشّامِيِّ لَمّا سَأَلَهُ: أَكانَ مَسِيرُنا إِلَى الشّامِ بِقَضأٍ مِنَ اللَّهِ وَقَدَرٍ؟ بَعْدَ كَلامٍ طَوِيلٍ هَذا مُخْتارُهُ:
وَيْحَكَ! لَعَلَّكَ ظَنَنْتَ قَضأً لازِماً، وَ قَدَراً حاتِماً! لَوْ كانَ ذلِكَ كَذلِكَ لَبَطَلَ الثَّوابُ وَ الْعِقابُ، وَ سَقَطَ الْوَعْدُ وَ الْوَعِيدُ. إِنَّ اللَّهَ سُبْحانَهُ أَمَرَ عِبادَهُ تَخْيِيراً، وَ نَهاهُمْ تَحْذِيراً، وَ كَلَّفَ يَسِيراً، وَ لَمْ يُكَلِّفْ عَسِيراً، وَ أَعْطَى عَلَى الْقَلِيلِ كَثِيراً، وَ لَمْ يُعْصَ مَغْلُوباً، وَ لَمْ يُطَعْ مُكْرِهاً، وَ لَمْ يُرْسِلِ الْأَنْبِيأَ لَعِباً، وَ لَمْ يُنْزِلِ الْكُتُبَ لِلْعِبادِ عَبَثاً، وَ لا خَلَقَ السَّماواتِ وَ الْأَرْضَ وَ مَا بَيْنَهُما بَاطِلاً:( ذلِكَ ظَنُّ الَّذِينَ كَفَرُوا، فَوَيْلٌ لِلَّذِينَ كَفَرُوا مِنَ النّارِ ) .
এক ব্যক্তি আমিরুল মোমেনিনকে জিজ্ঞেস করেছিল ,"সিরিয়ানদের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ কি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ছিল ? তিনি বললেনঃ
তোমার ওপর লানত। তুমি এটাকে চূড়ান্ত ও অপরিহার্য ভাগ্য বলে মনে কর (যা আমল করতে আমরা বাধ্য) । যদি বিষয়টা সে রকম হয় তবে পুরস্কার অথবা শাস্তির প্রশ্ন উঠে না এবং আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ও সতকাদেশ অর্থবহ হয় না । অপরপক্ষে ,মহিমান্বিত আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে স্বাধীন ইচ্ছায় আমল করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং পাপ সম্পর্কে সতর্ক করে। বিরত থাকতে বলেছেন । তিনি তাদের ওপর সহজ সাধ্য দায়িত্ব অপর্ণ করেছেন এবং কোন ভারী দায়িত্ব অপর্ণ করেননি । তিনি তাদেরকে ক্ষুদ্র আমলের জন্য অধিক পুরস্কার দিয়ে থাকেন । তাকে পরাভূত করার কারণে কেউ অমান্য করে না । তাকে মান্য করতে কাউকে বল প্রয়োগ করা হয় না । শুধুমাত্র কৌতুক করার জন্য তিনি নবী প্রেরণ করেননি । কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই তিনি মানুষের জন্য। কুরআন নাজেল করেননি । তিনি আকাশমণ্ডলী ,পৃথিবী ও এ দুয়ের মধ্যবর্তী সব কিছু বৃথা সৃষ্টি করেননি ।“ যারা অবিশ্বাস করে তারা এরূপই কল্পনা করে ,তারপর যারা অবিশ্বাস করে তাদের ওপর লানত - আগুনের কারণে (কুরআন ৩৮ ;২৭)
উক্তি নং - ৭৯
وَ قَالَعليهالسلام : خُذِ الْحِكْمَةَ أَنّى كانَتْ، فَإِنَّ الْحِكْمَةَ تَكُونُ فِي صَدْرِ الْمُنافِقِ فَتَلَجْلَجُ فِي صَدْرِهِ حَتَّى تَخْرُجَ فَتَسْكُنَ إِلَى صَواحِبِها فِي صَدْرِ الْمُؤْمِنِ.
তারা যা বলে তা থেকে প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় গ্রহণ করো ,কারণ জ্ঞানগর্ভ কোন কিছু যদি মোনাফেকদের বক্ষে থাকে। তবে তা বেরিয়ে এসে মোমেনের বক্ষে আশ্রয় নেয়ার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে।
উক্তি নং - ৮০
وَ قَالَعليهالسلام : الْحِكْمَةُ ضالَّةُ الْمُؤْمِنِ، فَخُذِ الْحِكْمَةَ وَ لَوْ مِنْ أَهْلِ النِّفاقِ.
জ্ঞানগর্ভ বাণী মোমেনের কাছে হারানো বস্তুর মতো । কাজেই মোনাফেকের কাছ থেকে হলেও জ্ঞানগর্ভমূলক বাণী গ্রহণ করো।