10%

কোরআনের ঐতিহাসিক অলৌকিকতা

কোরআনে হামান শব্দ

প্রাচীন মিসর সম্পর্কে কোরআনের কিছু তথ্য বহু ঐতিহাসিক বিষয় উন্মোচিত করে যেগুলো কিনা সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত অনুদঘাটিত ছিল। এই বিষয়গুলো আমাদের আরো নির্দেশ করছে যে এ কোরআন এক নিশ্চিৎ মহাবিজ্ঞের পক্ষ থেকে নাযিল হয়েছে।

কোরআনে ফেরাউনের পাশাপাশি হামান নামক একটি চরিত্রের উল্লেখ রয়েছে। ফেরাউনের একজন কাছের মানুষ হিসেবে এ নামটি কোরআন শরীফের ছয়টি ভিন্ন অংশে উল্লেখ করা হয়েছে।

আশ্চর্যের বিষয় যে , তৌরাতের যে অংশে মূসার জীবনী রয়েছে , তাতে এ নামটি কখনো উল্লেখ করা হয়নি। তবে ওল্ড টেষ্টামেন্টের সর্বশেষ অধ্যায়ে ব্যাবিলনের এক রাজার সাহায্যকারী হিসেবে এ নামটি পাওয়া যায় , যে রাজা কিনা মূসার সময়ের ১১০০ বছর পরে ইসরাঈলীদের উপর নিষ্ঠুর অত্যাচার চালিয়েছিল।

কিছু অমুসলিম , যারা দাবী করে যে , রাসুলুল্লাহ (দঃ) তৌরাত এবং বাইবেল থেকে নকল করে কোরআন শরীফ সাজিয়েছেন , তারা জোর গলায় বলে যে , এ প্রক্রিয়ার সময় নবী (দঃ) কিছু কিছু বিষয়ে ত্রুটি সহকারে কোরআনে এনেছেন।

কিন্তু ২০০ বছর আগে যখন মিসরীয় প্রাচীন সংকেত লিপি হাইআরোগ্লিফিক (hieroglyphic ) উদঘাটন করে বুঝা গেল আর প্রাচীন লিপিগুলোয় হামান শব্দটির উল্লেখ রয়েছে জানা গেল-তখন এই দাবির অসারতা প্রমাণিত হলো।

এই আবিস্কারের আগে প্রাচীন মিসরীয় লিখা আর অভিলিখন (শিলার গায়ে লিখা) বুঝা যেতো না। হাইআরোগ্লিফিক বা সংকেত লিখনে লিখা প্রাচীন মিসরীয় ভাষা যুগ যুগ টিকে ছিল। তবে , দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শতাব্দিতে খৃষ্টান ধর্ম প্রচার আর অন্যান্য সংস্কৃতির প্রসারের ফলে মিসরীয়রা প্রাচীন বিশ্বাস আর হাইআরোগ্লিফিক বা সংকেত লিপি ভুলে যায়। সংকেত লিখনের সর্বশেষ জানা উদাহরণটি ৩৯৪ সনের একটি অভিলিখন ছিল। এরপর এ ভাষাটি স্মৃতি থেকে মুছে গিয়েছিল , আর কেউ তা লিখতে বা বুঝতে পারতো না। ২০০ বছর আগে পর্যন্ত এ অবস্থাটি বিদ্যমান ছিল ...।

১৭৯৯ সনে “Rosetta Stone” নামের একটি ট্যাবলেট বা লিপিফলক আবিষ্কারের ফলে প্রাচীন মিসরীয় সংকেতলিপি বা হাইআরোগ্লিফিক এর রহস্যের সন্ধান পাওয়া গেল ; ফলকটি ছিল খ্রীষ্টের জন্মের ১৯৬ বছর আগের। এই অভিলিখন খানির গুরুত্ব এমনি ছিল যে , এটি তিনটি ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে লিখা ছিল ; উপায়গুলো ছিল হাইআরোগ্লিফিক , ডেমোটিক ( প্রাচীন মিসরীয় হাইআরেটিক লিখনের সহজরূপ ) আর গ্রীক । গ্রীক লিখনটির সাহায্য নিয়ে প্রাচীন মিসরীয় সংকেত লিখনগুলোর অর্থ বের করা হলো ।

Jean-Francoise Chamollion নামের একজন ফরাসী লোকের সহায়তায় লিপিখানির অনুবাদ সম্পূর্ণ করা হয়েছিল। এভাবে এই ভুলে যাওয়া ভাষা এবং এর সঙ্গে জড়িত কিছু ঘটনার প্রকাশ ঘটল। এমন করে প্রাচীন মিসরের সভ্যতা , ধর্ম আর সমাজ জীবনের বিশাল এক জ্ঞানের খোঁজ পাওয়া গেল।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে মিসরের ভাষা হাইআরোগ্লিফিক অনুবাদ করে উদঘাটন করার আগে পর্যন্ত হামান নামটি-জানা ছিল না। হাইআরোগ্লিফিক অনুবাদ করে বুঝা গেল যে হামান ফেরাউনের একজন নিকট সহযোগী ছিল এবং সে ছিল পাথর চূর্ণকারীদের প্রধান। ( উপরে প্রাচীন মিসরীয় নির্মাণ শ্রমিকদের দেখা যাচ্ছে ) এখানে সত্যিকারের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টটি হলো যে কোরআনে হামান ফেরাউনের আদেশে নির্মাণকার্য পরিচালনা করতো বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে এটিই দাঁড়ায় যে এই যে তথ্যটি যা সম্পর্কে কারো পক্ষে কিছু জানা সম্ভব ছিল না , তাই কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছিল।

হাইআরোগ্লিফিক এর সংকেতগুলোর গূঢ়ার্থ বুঝতোরায় গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানের সন্ধান পাওয়া গেল : বাস্তবিকই হামান শব্দটি মিসরীয় সংকেতলিপিতে লিখা ছিল। ভিয়েনার Hof Museum এ নামটির উল্লেখ রয়েছে। ২২

সমগ্র অভিলিখনগুলোর সংগ্রহের উপর নিভর্র করে তৈ রী অভিধানPeople in the New Kingdom এ হামানকে পাথর চূর্ণকারীদের নেতা হিসেবে পরিচয় দেয়া হয়েছে। ২৩

শিলালিপিটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সত্যের উন্মোচন করে দিল। কোরআন বিরোধীদের মিথ্যা দাবীর বিপরীতে দেখা গেল এই সেই ব্যক্তি হামান , যে কিনা মূসার (আঃ) সময়কালে ফেরাউনের একজন অতি কাছের মানুষ হিসেবে মিসরে বসবাস করে আসছিল। কোরআনে যেমন বলা হয়েছে ঠিক তেমনি , হামান নির্মাণ কাজে নিয়োজিত ছিল।

অধিকন্তু কোরআনের একটি আয়াতে একটি ঘটনায় যেমন উল্লেখ আছে যে ফেরাউন হামানকে একটি টাওয়ার নির্মাণের কথা বলছে , সেটি প্রত্নতত্ত্ববিদদের প্রাপ্ত তথ্যাবলীগুলোর সঙ্গে একদম মিলে যায় :

ফেরাউন বলল : হে সভাসদবৃন্দ ! আমি ছাড়া তোমাদের অন্য কোন উপাস্য আছে বলে আমি মনে করি না। হে হামান! তুমি আমার জন্য ইট পোড়াও , তারপর আমার জন্য একটি সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ কর , যাতে আমি মূসার মা বুদের প্রতি উঁকি মেরে দেখতে পারি। তবে আমারতো ধারণা যে , সে অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (কোরআন , ২৮ : ৩৮)

পরিশেষে , হামানের অস্তিত্ত্বের বিষয়টি কোরআন বিরোধীদের বানোয়াট জাল দাবিকেই শুধু গুরুত্বহীন বলে প্রমাণ করেনি , বরং আবারো একবার প্রমাণ করে দিল যে , কোরআন এসেছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর তরফ থেকে। একরকম অলৌকিকভাবেই কোরআন সেই সমস্ত ঐতিহাসিক ঘটনাসমূহ সম্পর্কে আমাদের জানিয়েছে যা নবীর ( দঃ ) সময়ে ঘটেনি কিংবা জানা ছিল না।