আল হাসানাইন (আ.)

নবী রাসূল প্রেরণের প্রয়োজনীয়তা

13 বিভিন্ন মতামত 03.7 / 5

মহান আল্লাহ্ প্রতিটি অস্তিত্ববান সত্তার বিকাশ,উন্নতি ও পূর্ণতার সকল উপায়-উপকরণ ঐ সত্তার মাঝেই দিয়েছেন। আর পূর্ণতার বিভিন্ন পথ পরিক্রমণ করার উদ্দেশ্যে প্রতিটি অস্তিত্ববান সত্তাকে তিনি বিভিন্ন ধরনের উপায়-উপকরণ দ্বারা সজ্জিত করেছেন। একটি ক্ষুদ্র উদ্ভিদকে বিবেচনা করুন। বেশ কিছু নিয়ামক এ উদ্ভিদের বিকাশ ও পূর্ণতা বিধানের ক্ষেত্রে ক্রিয়াশীল রয়েছে। চারাটির মূল ঐ চারার খাদ্য সরবরাহ ও পুষ্টি বিধানের লক্ষ্যে সর্বোচ্চ মাত্রায় তৎপর হয়ে থাকে এবং চারাটির পুষ্টিজনিত সকল চাহিদা পূরণ করে। বিভিন্ন মূল,শিকড় ও চ্যানেলসমূহ অত্যন্ত ভারসাম্যতার সাথে মাটি থেকে আহরিত রস (গাছের) চারার সকল শাখা-প্রশাখা ও পত্রপল্লবে পৌঁছে দেয়।

(একটি) ফুলের গঠন নিয়ে চিন্তা করুন। উদ্ভিদের অন্য সকল অংশের গঠন থেকে এর গঠন স্বতন্ত্র ও বিস্ময়কর।

পুষ্পবৃতির কাজ হচ্ছে মুকুল বা কুঁড়ির তল ও উপরিভাগকে ঢেকে রাখা এবং ফুলের পাপড়ি ও অভ্যন্তরীণ অংশের সংরক্ষণ। এভাবে ফুলের বিভিন্নাংশ যা একটি জীবিত অস্তিত্ববান সত্তার (উদ্ভিদ) বিকাশের জন্য প্রস্তুত ও তৈরি করা হয়েছে তা খুব ভালোভাবে নিজ দায়িত্ব সম্পন্ন করে। যদি আমরা আরো একটু এগিয়ে যাই এবং জীবজগতের আশ্চর্যজনক ব্যবস্থার দিকে দৃকপাত করি তাহলে আমরা উপলব্ধি করতে পারব যে,জীবজগৎ (উদ্ভিদ ও প্রাণী) এমন কতিপয় নিয়ামক দ্বারা সজ্জিত যা এ জীবজগতকে পূর্ণতার দিকে পৌঁছে দিচ্ছে।

যখনই আমরা এ বিষয়টিকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপন করব তখন আমাদেরকে অবশ্যই বলতে হবে যে,হেদায়েতে তাকভীনী যা আসলে অস্তিত্বজগতে মহান স্রষ্টার সর্বজনীন নেয়ামত ও অনুগ্রহ তা আসলে উদ্ভিদ,প্রাণী ও মানুষ নির্বিশেষে এ নিখিল-বিশ্বের সকল মাখলুক অর্থাৎ সৃষ্ট অস্তিত্ববান সত্তাসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করে।

الّذي أعطى كلّ شيء خلقه ثمّ هدى

‘যিনি (মহান আল্লাহ্) সকল বস্তু ও পদার্থকে সৃষ্টি করে (জীবনযাপন করার) পথ প্রদর্শন করেছেন’-পবিত্র কোরআনের এ আয়াতটি থেকে প্রতীয়মান হয় যে,ক্ষুদ্র পরমাণু থেকে শুরু করে নীহারিকাপুঞ্জ পর্যন্ত বিশ্বের সকল অস্তিত্ববান সত্তা মহান আল্লাহর এ সর্বজনীন অনুগ্রহ থেকে প্রতিনিয়ত উপকৃত ও ধন্য হচ্ছে। মহান আল্লাহ্-সৃষ্ট অস্তিত্ববান সত্তার সঠিক সূক্ষ্ম পরিমাপ ও প্রয়োজনীয় সব কিছু নির্ধারণ করার পর পূর্ণতাপ্রাপ্তি,সুষ্ঠু বিকাশ,প্রতিপালন ও প্রশিক্ষণের পথ দেখিয়েছেন এবং প্রত্যেকের সুষ্ঠ প্রতিপালন এবং বিকাশের জন্য বিভিন্ন ধরনের নিয়ামক ব্যবহার করেছেন। এটিই সর্বজনীন সৃষ্টিগত হেদায়েত যা ব্যতিক্রম ছাড়াই সমগ্র সৃষ্টিজগতে ক্রিয়াশীল রয়েছে।

তবে এ সৃষ্টিজগৎ ও স্বভাবগত পথ প্রদর্শন কি সকল সৃষ্টির সেরা মানুষের মতো অস্তিত্ববান সত্তার জন্য যথেষ্ট? নিশ্চিতভাবে বলা যায়,‘না’। কারণ পার্থিব জীবন ছাড়াও মানুষের আরো একটি জীবন আছে যা তার প্রকৃত জীবন। উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের মতো মানুষের যদি কেবল একটি পার্থিব ও শুষ্ক জীবনই থাকত তাহলে তার পূর্ণতার জন্য বস্তুগত নিয়ামকসমূহই যথেষ্ট ছিল,অথচ মানুষ দু’ ধরনের জীবনের অধিকারী। এতদুভয়ের পূর্ণতা বিধানই তার সৌভাগ্য ও উন্নতির প্রতীক।

যেহেতু সহজ-সরল আদি গুহাবাসী এবং নির্মল স্বভাব ও প্রকৃতির অধিকারী মানুষের সত্তায় ক্ষুদ্রতম বিচ্যুতিরও উদ্ভব হয় নি সেহেতু সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাসকারী মানুষের মতো তার (আদি গুহাবাসী) শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন ছিল না। তবে মানুষ যখন আরো এগিয়ে গেল (উন্নত হতে লাগল),সংঘবদ্ধ জীবনযাপন শুরু করল এবং তার মধ্যে সহযোগিতা ও সমবায়ধর্মী চিন্তাধারার বিকাশ ঘটল ঠিক তখন থেকেই সামাজিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও ঘাত-প্রতিঘাতের অনিবার্য পরিণতিস্বরূপ তার আত্মার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বিচ্যুতিও শুরু হয়ে গেল। মন্দ চরিত্র ও স্বভাব এবং ভুল চিন্তাধারা তার স্বভাবগত চিন্তাধারাকে পরিবর্তিত করে দেয় এবং সমাজকে সাম্যাবস্থা থেকে বের করে আনে। এ সব বিচ্যুতির কারণে নিখিল বিশ্বের স্রষ্টা মানব সমাজের কর্মসূচী সুশৃঙ্খল ও সুবিন্যস্তকরণ এবং মানুষের সামাজিক হওয়ার প্রত্যক্ষ ফলস্বরূপ যে সব দুর্নীতি ও বিচ্যুতির উদ্ভব হয়েছে তা হ্রাস করার জন্য প্রশিক্ষকদের প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত নেন। যাতে করে তাঁরা ওহীর প্রজ্বলিত প্রদীপের দ্বারা সমাজকে সঠিক পথ অর্থাৎ যে পথ তাদের সার্বিক সৌভাগ্য বিধান করবে সে পথে পরিচালিত করতে সক্ষম হন।

এ ক্ষেত্রে কোন কথার অবকাশ নেই যে,উপকারী হওয়া সত্ত্বেও সামাজিক জীবনের আরো কিছু ক্ষতিকর দিক আছে এবং তা ব্যাপক বিচ্যুতি বয়ে আনে। এ কারণেই মহান আল্লাহ্ যুগে যুগে এমন সব শিক্ষক-প্রশিক্ষককে প্রেরণ করেছেন যাঁরা যতটা সম্ভব বিচ্যুতি ও বিকৃতি অপসারণ এবং স্পষ্ট ঐশী বিধি-বিধান প্রবর্তন করার মাধ্যমে মানব সমাজকে সঠিক পথ ও ধারায় পরিচালিত করেছেন।

সাধারণত মনে করা হয় যে,নবীরা হচ্ছেন ঐশী শিক্ষক যাঁরা মানব জাতিকে শিক্ষা দেয়ার জন্য প্রেরিত হয়েছেন। যেমনিভাবে একটি শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয়,মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক বিদ্যালয়,কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা অর্জন করার সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়,মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক স্কুলশিক্ষক,প্রভাষক ও অধ্যাপকদের কাছে বিভিন্ন বিষয় শিক্ষা লাভ ও জ্ঞানার্জন করে ঠিক তেমনি মানব জাতি নবীদের আদর্শিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করে এবং মহান নবীদের শিক্ষামালার সমান্তরালে তাদের নৈতিক চরিত্র এবং সামাজিক আচরণাদিও পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়ে থাকে।

কিন্তু আমরা মনে করি যে,নবিগণ মানব জাতির প্রশিক্ষক। তাঁদের মৌলিক কাজ ও দায়িত্ব হচ্ছে মানব জাতিকে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা,তবে তা মানব জাতিকে শিক্ষা ও জ্ঞান দান নয়। তাঁদের প্রবর্তিত শরীয়তের মূল ভিত কোন নতুন কথা ও কোন নতুন অবদান নয়। মানবপ্রকৃতি বিচ্যুতির শিকার হলেই এবং অজ্ঞতার অশুভ কালো মেঘ তাদের ওপর ছায়া বিস্তার করলেই ঐশী ধর্ম ও বিধি-বিধানের মূল নির্যাস মানব জাতির কাছে স্পষ্ট করে দেয়া হতো।

তবে এ ধরনের কথা ও অভিমতের ভিত হচ্ছে ইসলাম ধর্মের সুমহান ইমামদের বক্তব্য ও বাণী। আমীরুল মুমিনীন ইমাম আলী (আ.) নাহজুল বালাগায় নবীদের প্রেরণের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন :

أخذ على الوحي ميثاقهم و على تبليغ الرّسالة أمانتهم... ليستأدوهم ميثاق فطرته، و يذكّروهم منسيّ نعمته، و يحتجّوا عليهم بالتّبليغ و يثيروا لهم دفائن العقول

“মহান আল্লাহ্ মানব জাতির মধ্য থেকে মহান নবীদের মনোনীত করেছেন এবং তাঁদের কাছ থেকে ওহী এবং মহান আল্লাহর রিসালাত (জনগণের কাছে) পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছেন যাতে করে তাঁরা মানব জাতির কাছ থেকে তাদের ফিতরাত অর্থাৎ মানবপ্রকৃতি ও স্বভাবভিত্তিক প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের পুনঃদাবি করেন,আল্লাহ্প্রদত্ত যে সব নেয়ামত (মানব জাতি) ভুলে গেছে সেগুলো তাদের পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেন,তাদের কাছে দীন প্রচার করার মাধ্যমে তাদের ওপর মহান আল্লাহর দলিল-প্রমাণ পূর্ণ করেন এবং তাদের বিবেক-বুদ্ধি যা চাপা পড়ে গিয়েছিল তা বের করে আনেন।”

একটি জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্ত

আমরা যদি বলি যে,একটি চারার পরিচর্যার ক্ষেত্রে একজন মালীর যে ভূমিকা আছে,মানুষের অন্তরাত্মার প্রশিক্ষণ ও সংশোধনের ক্ষেত্রে মহান নবীদেরও ঐ একই ভূমিকা ও দায়িত্ব রয়েছে অথবা মানব জাতির প্রকৃতিগত অনুভূতিসমূহের সুষ্ঠ পরিচালনার ক্ষেত্রে মহান নবীদের উপমা হচ্ছে একজন প্রকৌশলীর ভূমিকার ন্যায় যিনি পাহাড়-পর্বতের অভ্যন্তর থেকে মহামূল্যবান খনিজ পদার্থ উত্তোলন করেন,তাহলে আমাদের এ বক্তব্য বৃথা বলে গণ্য হবে না।

এ বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করতে চাই। একটি ক্ষুদ্র চারা গাছ দানা বা বীজের গঠনের সময় থেকে বিকশিত হয়ে পূর্ণাঙ্গ গাছে রূপান্তরিত হওয়ার সমুদয় সামর্থ্য ও সম্ভাবনার অধিকারী। যখন এ চারাটি শক্তিশালী শিকড় এবং বিভিন্ন ধরনের তন্ত্রসমেত উন্মুক্ত বাতাস এবং পর্যাপ্ত আলোয় ক্রিয়াশীল হয় অর্থাৎ জৈবিক কর্মতৎপরতা শুরু করে ঠিক তখন ঐ চারাটির সমগ্র অস্তিত্বের মাঝে এক অভিনব গতি ও আন্দোলনের সঞ্চার হয়। এ সময় মালীর দু’ টি কাজ আছে :

প্রথম কাজ : সুপ্ত সম্ভাবনাময় শক্তি যেন বিকশিত হয় সেজন্য চারা গাছটির মূল বা শিকড় দৃঢ় ও শক্তিশালী করার সমুদয় শর্ত ও পরিবেশ পূরণ করা।

দ্বিতীয় কাজ : যখন চারা গাছটির অন্তর্নিহিত শক্তিসমূহ উক্ত চারা গাছটির সুষ্ঠু বিকাশ ও প্রবৃদ্ধির বিপরীতে ভূমিকা রাখবে ঠিক তখনই সব ধরনের বিচ্যুতি প্রতিহত করা। এ কারণেই একজন মালীর কাজ উদ্ভিদের অঙ্কুরোদগম ঘটানো নয়,বরং উদ্ভিদ যাতে করে গুপ্ত ও সুপ্ত পূর্ণতা লাভ করতে পারে সেজন্য সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং যাবতীয় প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করা।

নিখিল বিশ্বের মহান স্রষ্টা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তার প্রকৃতির মাঝে বিভিন্ন ধরনের শক্তি এবং প্রচুর ঝোঁক ও প্রবণতা আমানত হিসাবে স্থাপন ও সৃষ্টি করেছেন;মানবসত্তা ও ব্যক্তিত্বের মূল নির্যাসকে স্রষ্টান্বেষণ,স্রষ্টা পরিচিতি ও দর্শন,সত্যকামিতা ও সত্যান্বেষী অনুভূতি,ন্যায়পরায়ণ হওয়ার অনুভূতি,ন্যায়বিচার ও পৌরুষের অনুভূতি এবং কর্মচাঞ্চল্য ও কর্মতৎপরতার ঝোঁক ও প্রবণতার সাথে সংমিশ্রিত করেছেন। এ সব পবিত্র বীজ মানব হৃদয়ের মধ্যে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হতে থাকে,তবে সামাজিক জীবন মানুষের অস্তিত্বের মধ্যে কিছু কিছু বিচ্যুতি এনে দেয়। যেমন মানুষের মধ্যকার কর্মতৎপরতা ও পরিশ্রম করার ঝোঁক ও প্রবণতা লোভ-লালসাকারে,সৌভাগ্যবান ও চিরস্থায়ী হওয়ার ভালোবাসা একগুঁয়েমিপূর্ণ মনোবৃত্তি ও পদলিপ্সায় এবং তাওহীদ ও ইবাদাত-বন্দেগী মূর্তিপূজার আদলে আবির্ভূত হয়।

এ সময়েই ঐশী প্রশিক্ষকগণ ওহীর নূর এবং সঠিক পরিকল্পনা ও কর্মসূচীর মাধ্যমে বিকাশের যাবতীয় শর্ত ও পূর্বপ্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপের আয়োজন করেন এবং প্রকৃতিগত ঝোঁক ও প্রবণতাসমূহের সমুদয় বিচ্যুতি ও সীমা লঙ্ঘনকে প্রতিহত করে সেগুলোকে ভারসাম্যপূর্ণ করেছেন।

আমীরুল মুমিনীন ইমাম আলী (আ.) বলেছেন,“স্রষ্টা সৃষ্টির প্রাক্কালে (মানুষের কাছ থেকে)‘ সৃষ্টিগত প্রতিজ্ঞা’ (অর্থাৎ ফিতরাত বা স্বভাব-প্রকৃতিভিত্তিক প্রতিজ্ঞা) নামে একটি প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন। এই প্রতিজ্ঞা ও প্রতিশ্রুতির প্রকৃত উদ্দেশ্যই বা কি? এর প্রকৃত তাৎপর্য হচ্ছে যে,মহান আল্লাহ্ অগণিত উত্তম চারিত্রিক গুণের সাথে মানুষের স্বভাব ও প্রকৃতি সংমিশ্রিত করে তার (মানুষের) উপকারী ঝোঁক ও প্রবণতাসমূহ সৃষ্টি করে তার থেকে ফিতরাতভিত্তিক প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছেন যেন সে ভালো ও উপকারী ঝোঁক ও প্রবণতা এবং চারিত্রিক গুণাবলীর অনুসরণ করে।”

চক্ষু (দৃষ্টিশক্তি) প্রদান করা যদি মানুষের কাছ থেকে এক ধরনের প্রতিশ্রুতি গ্রহণ হয়ে থাকে (অর্থাৎ এ প্রতিশ্রুতি হচ্ছে মানুষের গর্ত বা কুয়ার মধ্যে পতিত না হওয়া) তাহলে একইভাবে স্রষ্টার পরিচিতি অর্জন এবং ন্যায়পরায়ণ হবার অনুভূতি ইত্যাদি প্রদানের অর্থ হবে মানুষের কাছ থেকে মহান আল্লাহর প্রতিশ্রুতি গ্রহণ অর্থাৎ এ সব অনুভূতি প্রদান করে মানুষের কাছ থেকে আল্লাহ্ প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছেন যেন সে মহান স্রষ্টা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও পরিচিতি লাভ করে এবং ন্যায়পরায়ণ হয়। মহান নবীদের দায়িত্ব হচ্ছে মানব জাতিকে তাদের সৃষ্টিপ্রকৃতিভিত্তিক প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার অনুযায়ী কাজ ও আচরণ করতে উদ্বুদ্ধ করা এবং যে সব অন্তরায় মানবপ্রকৃতির ওপর অশুভ কালো ছায়া বিস্তার করেছে তা অপসারণ ও বিদীর্ণ করা। এ কারণেই বলা হয় যে,সকল আসমানী ধর্ম ও শরীয়তের মূল ভিতই হচ্ছে মানবপ্রকৃতি এবং এতৎসংক্রান্ত বিষয়াদি।

মানুষের সম্পূর্ণ অস্তিত্ব যেন ঐ পাহাড়তুল্য যার অভ্যন্তরে মূল্যবান পাথর এবং স্বর্ণের আকরিক লুক্কায়িত আছে। ঠিক তদ্রূপ মানবপ্রকৃতির অভ্যন্তরে উত্তম ও মহৎ গুণাবলী,জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং প্রগাঢ় তত্ত্বজ্ঞান বিভিন্ন রূপ ও অবয়বে লুক্কায়িত আছে।

নবিগণ ছিলেন মানব জাতির মনস্তাত্ত্বিক প্রশিক্ষক। তাঁরা আমাদের আত্মা ও মন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করার সময় ভালোভাবে অবগত আছেন যে,আমাদের আত্মা ও মন কতগুলো উচ্চতর বৈশিষ্ট্য,পবিত্র আবেগ ও অনুভূতি এবং মানসিক শক্তির সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। তাঁরা তাঁদের শিক্ষা-দীক্ষা,কর্মসূচী ও পরিকল্পনার দ্বারা এই মানব আত্মা ও মনকে সহজাত মানবপ্রকৃতির কাঙ্ক্ষিত ও বাঞ্ছিত অবস্থার দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। তাঁরা বিবেক ও সহজাত মানবপ্রকৃতির বিধানসমূহ বর্ণনা করেন এবং মানুষকে তার নিজ সত্তার মধ্যে তার যে ব্যক্তিত্ব এবং যে সব বৈশিষ্ট্য নিহিত রয়েছে সে সব সম্পর্কে অবগত করান।#আল-হাসানাইন

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)