আল হাসানাইন (আ.)

আল মুরাজায়াতঃ দশম পত্র

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

আরো কয়েকটি হাদীস

যদি আমার পত্রটি আগ্রহ নিয়ে পড়ে থাকেন তাহলে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে এ জন্য প্রস্তুত করেছেন। আপনার পত্র দিনে দিনে আমার আকাঙ্ক্ষাকে লক্ষ্যে নিয়ে পৌঁছাচ্ছে এবং আমার কর্মকাণ্ডকে সফলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। যে ব্যক্তি পবিত্র নিয়ত ও অন্তর,সুন্দর চরিত্র,বিনয়,সৌজন্যবোধ ও উচ্চাকাঙ্ক্ষার অধিকারী,জ্ঞানের মুকুট তার মাথায়ই শোভা পাওয়া স্বাভাবিক। যে সহনশীলতার মাল্য পরিধান করেছে তার কথা ও লেখনীতেই সত্য প্রতিমূর্ত হয় এবং সত্যপরায়ণতা ও সুবিচার তার মুখেই প্রতিভাত হয়।

আমাকে আরো অধিক জানাতে বলে আপনার নির্দেশ পালনে ও কৃতজ্ঞতাবোধে আবদ্ধ হতে বাধ্য করেছেন। ইতোপূর্বে এর চেয়ে অধিক অনুগ্রহ ও সৌজন্যের সন্ধান আমি পাই নি। আল্লাহর শপথ,অবশ্য অবশ্যই আপনার দৃষ্টিকে সমুজ্জ্বল করবো। তবে শুনুন।

১। তাবরানী তাঁর কাবীর গ্রন্থে এবং রাফেয়ী তাঁর মুসনাদে অবিচ্ছিন্ন সনদে ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন,“রাসূল (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি এজন্য আনন্দিত যে,সে চায় আমার মত জীবন যাপন করতে,আমার মত মৃত্যুবরণ করতে ও আমার প্রতিপালকের চিরস্থায়ী বেহেশতে বাস করতে সে যেন আলীকে ভালবাসে এবং আলীকেই তার অভিভাবক বলে জানে,সে যেন আলীর বন্ধুকেও বন্ধু বলে জানে ও আমার পর আমার আহলে বাইতের অনুসরণ করে। কারণ তারা আমার সর্বাধিক আপন এবং তারা আমার অস্তিত্ব হতে অস্তিত্ব লাভ করেছে,আমার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা থেকেই তারা জ্ঞান ও প্রজ্ঞা লাভ করেছে। ধ্বংস আমার সেই উম্মতের জন্য যারা তাদের (আহলে বাইতের) শ্রেষ্ঠত্বকে মিথ্যা মনে করে এবং আমার ও তাদের মধ্যকার সম্পর্ককে কর্তন করে। আল্লাহ্ আমার শাফায়াতকে তাদের জন্য হারাম করুন।”(কানযুল উম্মাল,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃষ্ঠা ২১৭,হাদীস নং ৩৭১৯; মুসনাদে আহমাদের ৫ম খণ্ডের ৯৪ পৃষ্ঠায়ও এ হাদীস শুধু একটি শব্দের পার্থক্যসহ এসেছে। হাফিয আবু নাঈমও হাদীসটি তাঁর ‘হুলইয়া’গ্রন্থের ৪৪৯ পৃষ্ঠায় মুসনাদে আহমাদ থেকে নকল করেছেন।)

২। মুতির,বাওয়ারদী,ইবনে জারির,ইবনে শাহীন এবং ইবনে মানদুহ ইসহাকের মাধ্যমে যিয়াদ ইবনে মুতরিফ হতে বর্ণনা করেছেন,“রাসূলকে বলতে শুনেছি : যে কেউ পছন্দ করে আমার মত জীবন যাপন ও মৃত্যুবরণ করতে ও আমাকে যে চিরস্থায়ী জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে সেখানে প্রবেশ করতে,সে যেন আলী ও তার বংশধরদের ভালবাসে কারণ তারা কখনোই তোমাদের সত্য ও হেদায়েতের পথ হতে বিপথে পরিচালনা করবে না এবং তোমাদের গোমরাহীতেও নিক্ষেপ করবে না।”(কানযুল উম্মাল,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃষ্ঠা ১৫৫,হাদীস নং ২৫৭৮ এবং মুনতাখাবুল কানযুল উম্মালের ৫ম খণ্ডের ফুটনোটে মুসনাদে আহমাদ হতে এ হাদীসটি এসেছে। এ হাদীসটির সনদে ইয়াহিয়া ইবনে ইয়ালা মুহারেবীর কারণে ইবনে হাজার হাদীসটিকে যাঈফ বললেও ইয়াহিয়া ইবনে ইয়ালা সকল রিজালশাস্ত্রবিদের মতে নির্ভরযোগ্য এবং বুখারী,মুসলিম ও যাহাবী তাঁর থেকে নকলকৃত হাদীসকে সহীহ বলেছেন।)

৩। এরূপ আরেকটি হাদীস হলো যায়িদ ইবনে আরকাম হতে বর্ণিত হাদীস যেখানে রাসূল (সা.) বলেছেন,“যে কেউ আমার মত জীবন যাপন ও মৃত্যুবরণ করতে চায়,আমার প্রভুর প্রতিশ্রুত চিরস্থায়ী বেহেশতে প্রবেশ করতে চায়,সে যেন অবশ্যই আলীকে ভালবাসে,কেননা আলী কখনোই তাকে হেদায়েত থেকে বিচ্যুত করবে না এবং গোমরাহও করবে না।”(হাকিম নিশাবুরী তাঁর মুসতাদরাকের ৩য় খণ্ডের ১২৮ পৃষ্ঠায় এ হাদীসটি এনেছেন এবং বলেছেন এ হাদীসটি সহীহ,অথচ বুখারী ও মুসলিম হাদীসটি বর্ণনা করেন নি। তাবরানী তাঁর কাবীর গ্রন্থে এবং আবু নাঈম তাঁর ফাজায়েলুস্ সাহাবায় হাদীসটি এনেছেন। কানযুল উম্মাল,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃঃ ১৫৫,হাদীস নং ২৫৭৭ এবং মুসনাদে আহমাদ,৫ম খণ্ড,পৃঃ ৩২।)

৪। তেমনি হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির রাসূল (সা.) থেকে বলেছেন,“যে কেউ আমার প্রতি ঈমান এনেছে ও আমাকে সত্যায়ন করেছে তাদেরকে আমি আলী ইবনে আবি তালিবের বেলায়েতকে মেনে নেয়ার সুপারিশ করছি (নির্দেশ দিচ্ছি),যে ব্যক্তি আলীকে নিজের আভিভাবক মেনেছে,সে যেন আমাকেই তার আভিভাবক জেনেছে এবং যে আমাকে অভিভাবক জেনেছে সে আল্লাহকে নিজের অভিভাবক মনোনীত করেছে। যে ব্যক্তি আলীকে ভালবাসে সে আমাকেই ভালবেসেছে,আর যে আমাকে ভালবেসেছে সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকেই ভালবেসেছে। যে কেউ আলীর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে সে আমার প্রতিই বিদ্বেষ পোষণ করে। আর যে আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে সে অবশ্যই তার অন্তরে আল্লাহর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করছে।”(তাবরানী তাঁর কাবীর গ্রন্থে এবং ইবনে আসাকির তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে এ হাদীসটি এনেছেন। কানযুল উম্মালের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ১৫৪ পৃষ্ঠার ২৫৭১ নং হাদীস।)

৫। অন্যত্র হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির রাসূল থেকে বর্ণনা করেছেন,“হে প্রতিপালক! তুমি সাক্ষী থাকো,এ উম্মতকে আমি জানিয়েছি যে ব্যক্তি আমার প্রতি ঈমান এনেছে ও আমাকে সত্য প্রতিপন্ন করেছে সে যেন আলী ইবনে আবি তালিবের বেলায়েত হতে হাত সঙ্কুচিত না করে,কারণ আলীর বেলায়েত আমারই বেলায়েত আর আমার বেলায়েত আল্লাহরই বেলায়েত।”(তাবরানী তাঁর কাবীর গ্রন্থে মুহাম্মদ ইবনে আবি আবদুহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আম্মার ইবনে ইয়াসির তাঁর পিতা হতে এবং তিনি তাঁর পিতামহ হযরত আম্মার হতে এটি বর্ণনা করেছেন। কানযুল উম্মালের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ১৫৫ পৃষ্ঠার ২৫৭৬ নং হাদীস।)

৬। রাসূল (সা.) তাঁর এক খুতবায় বলেন,“হে লোকসকল! মর্যাদা,সম্মান ও অভিভাবকত্বের পদমর্যাদা রাসূল (সা.) ও তার বংশধরদের জন্য। সুতরাং অন্যদের অন্যায় দাবী ও বক্তব্য যেন তোমাদের বিভ্রান্ত না করে।”(ইবনে হাজার ((وَ قُفُوْهُمْ إِنَّهُمْ مَسْئُوْلُوْنَআয়াতটির তাফসীরে (আস-সাওয়ায়েক গ্রন্থের ৯০ পৃষ্ঠায়) এ হাদীসটি এনেছেন ও মোল্লা তাঁর আস-সিরাহ্ গ্রন্থে এ হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন।)

৭। অন্যত্র রাসূল বলেছেন,“আমার উম্মতের প্রতিটি প্রজন্মের সময়ই আমার বংশধর হতে কোন না কোন সুবিচারক ও ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি থাকবে। তারা বিভ্রান্ত ব্যক্তিদের সৃষ্ট বিকৃত চিন্তা ও দীন ধ্বংসকারী কর্মকাণ্ডের অপনোদন করবে এবং দীন হতে অজ্ঞ ব্যক্তিদের ভ্রান্ত ব্যাখ্যাসমূহকে দূরীভূত করবে। জেনে রাখো,তোমাদের ইমাম ও নেতৃবর্গ তোমাদের প্রতিপালকের নিকট আদর্শ ব্যক্তি,তাই কাকে নিজের ইমাম ও নেতা মনোনীত করে আল্লাহর নিকট উপস্থিত হবে সে বিষয়ে চিন্তা করো।”(ইবনে হাজার তাঁর ‘সাওয়ায়েক’গ্রন্থের চতুর্থ মাকসাদের ১০৫ পৃষ্ঠায় সূরা শুরার ২৩ নং আয়াতের তাফসীরে এ হাদীসটি এনেছেন।)

৮। রাসূল (সা.) বলেছেন,“আমার আহলে বাইতের ইমামগণ হতে পেছনে পড়ো না,তাদের বিষয়ে গাফেল ও অসচেতন হয়ো না তাহলে তোমরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। তাদেরকে কোন বিষয়ে শিক্ষাদান করতে যেও না,তারা এ বিষয়ে তোমাদের হতে অধিকতর জ্ঞাত।”(তাবরানী হাদীসে সাকালাইনের সঙ্গে এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন এবং ইবনে হাজার তাঁর আস-সাওয়ায়েক গ্রন্থের ১১ অধ্যায়ের ৮৯ পৃষ্ঠায় (وَ قُفُوْهُمْ إِنَّهُمْ مَسْئُوْلُوْنَ) আয়াতটির তাফসীরে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)

৯। অন্যত্র রাসূল বলেছেন,“আমার আহলে বাইতকে দেহের মধ্যে মস্তকের ন্যায় ও মস্তকের মধ্যে চোখের ন্যায় মনে কর। জেনে রেখো,চক্ষু ব্যতীত মস্তক হেদায়েতপ্রাপ্ত হতে পারে না।”(অনেক হাদীস লেখক হযরত আবু যার হতে এ হাদীসটি মারফু সূত্রে বর্ণনা করেছেন। যেমন ইমাম আস-সাব্বান,শেখ ইউসুফ নাবাহানী,আশশারাফুল মুয়াইয়াদ,পৃষ্ঠা ৩১।)

১০। রাসূল (সা.) আরো বলেছেন,“আমার আহলে বাইতের ভালবাসার প্রতি অনুগত ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হও। কারণ যে ব্যক্তি এমন অবস্থায় আল্লাহর সঙ্গে মিলিত হবে যে,সে আমাদের ভালবাসে তাহলে সে আমাদের শাফায়াতের মাধ্যমে বেহেশতে প্রবেশ করবে। যাঁর হাতের মুঠোয় আমার জীবন আবদ্ধ সেই প্রভুর শপথ,আমাদের অধিকারের প্রতি সচেতনতা ও সম্মান প্রদর্শন ব্যতীত কোন সৎ কর্মই ফলদান করবে না।”(তাবরানী তাঁর ‘আওসাতে’সুয়ূতী তাঁর ‘ইহ্ইয়াউল মাইয়্যেত’নাবাহানী তাঁর ‘আরবাইনাল আরবাইনে’এবং ইবনে হাজার তাঁর ‘আস-সাওয়ায়েক’গ্রন্থে এ হাদীসটি এনেছেন। ‘কারো কর্মই আমাদের অধিকারের প্রতি সচেতনতা ও সম্মান প্রদর্শন ব্যতীত ফলদান করবে না’কথাটির প্রতি চিন্তা করুন।)

১১। রাসূল (সা.) বলেছেন,“আমার আহলে বাইতের প্রকৃত পরিচয় জানা জাহান্নামের অগ্নি হতে মুক্তির উপায়। আমার বংশধরদের প্রতি প্রেম ও ভালবাসা পুলসিরাত অতিক্রমের অনুমতিপত্র ও রক্ষাকবচ এবং তাদের বেলায়েত আল্লাহর আজাব হতে নিরাপত্তা দানকারী।”(কাজী আয়াজ ‘আশ-শিফা’গ্রন্থের ৪০ পৃষ্ঠায় ‘আহলে বাইতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন প্রকৃতপক্ষে নবীরই প্রতি সম্মান প্রদর্শন’এ যুক্তির সপক্ষে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এখানে নবীর আহলে বাইতের পরিচিতি লাভ শুধু তাঁদের নাম জানা নয়,বরং রাসূলের পর তাঁরাই যে উলিল আমর (দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ) এ বিষয়ে বিশ্বাস রাখা ও তদনুযায়ী আমল করা। কারণ রাসূল (সা.) নিজেই বলেছেন,“যে কেউ এমন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলো সে জানে না তার ইমামকে,তাহলে সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল।”)

১২। রাসূল (সা.) বলেছেন,“কিয়ামতের দিন মানুষকে চারটি প্রশ্নের জবাব দানের পূর্বে কোথাও যেতে দেয়া হবে না (১) তার জীবনকে কোন্ পথে ব্যয় করেছে (২) তার দেহকে কোন্ কাজে নিয়োজিত রেখেছে (৩) অর্থকে কোন্ পথে ব্যয় করেছে অর্থাৎ কোথা হতে আয় করেছে ও কোথায় ব্যয় করেছে (৪) আমার আহলে বাইতের প্রতি কিরূপ ভালবাসা পোষণ করেছে?”(যদি তাঁরা আল্লাহর পক্ষ হতে নির্বাচিত না হতেন তবে তাঁদের ভালবাসা ও অনুসরণের বিষয়ে এরূপ প্রশ্ন করা হত না। এ হাদীসটি ইবনে আব্বাস হতে নির্ভরযোগ্য সূত্রে তাবরানী,সুয়ূতী ও নাবাহানী বর্ণনা করেছেন।)

১৩। অন্যত্র রাসূল (সা.) বলেছেন,“যদি কেউ তার সমগ্র জীবন মাকামে ইবরাহীমে দাঁড়িয়ে নামায পড়ে ও রোযা রাখে কিন্তু আমার আহলে বাইতের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে তবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।”

১৪। রাসূল (সা.) বলেছেন,“যে ব্যক্তি রাসূলের বংশধরদের প্রতি ভালবাসা নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে সে শহীদের মৃত্যুবরণ করেছে। জেনে রাখো,রাসূলের আহলে বাইতের ভালবাসা নিয়ে মৃত্যুবরণকারী ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়েছে,রাসূলের আহলে বাইতের ভালবাসা নিয়ে মৃত্যুবরণকারী তওবাকারী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। জেনে রাখো,যারা রাসূলের আহলে বাইতের ভালবাসা নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে,ঈমান নিয়ে অর্থাৎ মুমিন হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে এবং মৃত্যুর ফেরেশতা তাকে বেহেশতের সুসংবাদ দান করেছে এবং কবরেও মুনকার-নাকীর তাকে এ সুসংবাদ দান করবে। যে কেউ আমার আহলে বাইতকে ভালবেসে দুনিয়া থেকে চলে গেছে,সে নববধূ যেরূপ স্বামীর ঘরে জাঁকজমকপূর্ণভাবে ও সসম্মানে প্রবেশ করে সেরূপ বেহেশতে প্রবেশ করবে। আমার আহলে বাইতের ভালবাসা নিয়ে মৃত্যুবরণকারীর জন্য কবর হতে দু’টি দরজা বেহেশতের দিকে উন্মুক্ত করা হবে এবং আল্লাহ্ তার কবরকে ফেরেশতাদের জন্য যিয়ারতের স্থানে পরিণত করবেন। জেনে রাখো,আমার আহলে বাইতের ভালবাসাসহ প্রাণদানকারী ব্যক্তি রাসূলের দীনের পথে ও সুন্নাহর ওপর মৃত্যুবরণ করেছে এবং এও জেনে রাখো,যে ব্যক্তি আমার আহলে বাইতের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে তার কপালে কিয়ামতের দিন লিখা থাকবে ‘আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত’।”(সালাবী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে সূরা শুরার ২৩ নং আয়াতের তাফসীরে জারীর ইবনে আবদুল্লাহ্ বাজালী হতে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তদ্রুপ যামাখশারীও তাঁর তাফসীরে এ বিষয়টিকে সমর্থন করেছেন।)

এ বক্তব্যগুলোর মাধ্যমে এক মহাসত্যকে প্রকাশ করে রাসূল (সা.) চেয়েছিলেন প্রবৃত্তি ও বাসনার কুপ্রভাবকে এদিকে (সত্যের দিকে) ফিরিয়ে আনতে। এ সকল হাদীস বর্ণনাসূত্রে মুতাওয়াতির ও বহুল বর্ণিত বিশেষত আহলে বাইতের পক্ষ থেকে তা নির্ভরযোগ্য ও সহীহ। সুতরাং প্রমাণিত হয় যে,তাঁরা যদি আল্লাহর স্পষ্ট নিদর্শন না হতেন তাহলে এই মর্যাদা ও সম্মান লাভ করতেন না। অবশ্যই যদি তাঁরা সত্যের মহাউৎস,ঐশী আদেশ-নিষেধের ক্ষেত্রে রাসূলের স্থলাভিষিক্ত ও হেদায়েতের প্রতিকৃতি না হতেন তাহলে কখনোই এরূপ মর্যাদায় ভূষিত হতেন না। তাই তাঁদের অনুসারী ও প্রেমিকরা আল্লাহ্ ও রাসূলের প্রেমিক এবং তাঁদের বিরুদ্ধাচারণকারী ও বিদ্বেষীরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচারণকারী ও বিদ্বেষী বলে পরিগণিত। এ কারণে রাসূল (সা.) বলেছেন,“পরহেজগার ও মুমিন ব্যতীত কেউ আমাদের বন্ধু হতে পারে না এবং মুনাফিক ও পাষাণহৃদয় ব্যক্তি ব্যতীত কেউ আমাদের শত্রু হতে পারে না।”(মোল্লা তাঁর মাকাসাদের ‘আস-সাওয়ায়েক’অধ্যায়ে ১৪ নং আয়াতের তাফসীরে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)

প্রসিদ্ধ কবি ফারাযদাক আহলে বাইত সম্পর্কে বলেছেন,

مِنْ مَعْشَرٍ حُبُّهُمْ دِيْنٌ وَ بُغْضُهُمْ كُفْرٌ وَ قُرْبُهُمْ مُنْجِي وَ مُعْتَصِمٌ

“তাঁরা এমন ব্যক্তিবর্গ যাঁদের ভালবাসাই ধর্ম এবং তাঁদের প্রতি শত্রুতাই কুফর। তাঁদের নৈকট্যই মুক্তি ও নিরাপত্তা লাভের উপায়।”

إِنْ عُدَّ أَهْل التُقى كانُوا ائِمَّتَهُمْ أَوْ قِيْلَ مَنْ خَيْرُ أَهْلِ الأَرْضِ قِيْلَ هُمْ

“যদি পরহেজগার ব্যক্তিদের গণনা করা হয়,তবে তাঁরা তাদের নেতা। যদি বলা হয় পৃথিবীর ওপর শ্রেষ্ঠতম মানুষ কারা,তবে বলা হবে তাঁরা।”

আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) সব সময় বলতেন,“আমি,আমার পিতৃপুরুষ ও বংশধরগণ সবচেয়ে বুদ্ধিমান,শৈশবে মানুষের মধ্যে সর্বাধিক সহনশীল এবং বৃদ্ধাবস্থায় তাদের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী। আমাদের মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ মিথ্যাকে ভূলুণ্ঠিত করেন,নেকড়ের দাঁতগুলোকে উপড়ে ফেলেন,দুনিয়াপ্রেমিকদের লাঞ্ছিত করেন,তোমাদের বন্দীত্ব ও অপমানের অবসান ঘটান এবং তোমাদের স্কন্ধ হতে জিঞ্জির ও শিকলকে অপসারিত করেন। আমাদের মাধ্যমেই তিনি শুরু করেন এবং আমাদের হতেই শেষ করেন।”(এ হাদীসটি আবদুল গণী ইবনে সা’দ তাঁর ‘ইজাহুল ইশকাল’গ্রন্থে এনেছেন। কানযুল উম্মালের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৩৯৬ পৃষ্ঠায় ৬০৫০ নং হাদীস হিসেবে এটি এসেছে।)

তাঁদের অনুসরণের পক্ষে যুক্তি হিসেবে আমাদের জন্য এটিই যথেষ্ট যে,আল্লাহ্পাক তাঁদেরকে অন্যদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং তাঁদের ওপর দরূদ পড়াকে ফরয নামাযের অংশ হিসেবে তাঁর প্রতিটি বান্দার ওপর অপরিহার্য করেছেন অর্থাৎ তাঁদের ওপর দরূদ না পড়লে কারো নামাযই আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না তিনি যে কেউ হোন না কেন- সিদ্দীক (মহাসত্যবাদী),ফারুক (সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী),যুন্নূর (আলোর অধিকারী),যুন্নূরাইন (দুই দ্যুতির অধিকারী),যু আনওয়ার (দ্যুতিসমূহের অধিকারী)- সকল বান্দার জন্যই নামাযের মধ্যে যেমনভাবে শাহাদাতাইন বলা ইবাদত তেমনি তাঁদের ওপর দরূদ পাঠানোও ইবাদত। তাঁদের এ মর্যাদার প্রতি চার মাজহাবের ইমামগণসহ সকল প্রসিদ্ধ ব্যক্তি অনুগত ও বিনীত।

ইমাম শাফেয়ী এ বিষয়ে বলেছেন,

يَا أَهْلَ بَيْتِ رَسُوْلِ اللهِ حُبُّكُمْ   فَرْضٌ مِنَ اللهِ فِيْ الْقرْآن أَنْزَلَهُ

“হে রাসূলের আহলে বাইত! তোমাদের ভালবাসা সবার জন্য ফরয করা হয়েছে যা কোরআনে অবতীর্ণ হয়েছে।”

كَفَاكُمْ مِنْ عَظِيْمِ الْفَضْلِ إِنَّكُمْ مَنْ لَمْ يُصَلِّ عَلَيْكُمْ لا صَلَوة لَهُ

“তোমাদের শ্রেষ্ঠত্বের জন্য এটিই যথেষ্ট যে,যদি কেউ নামাযে তোমাদের ওপর দরূদ না পড়ে,তার নামায কবুল হবে না।”(এ দু’টি কবিতার পঙ্ক্তি শাফেয়ী নবী পরিবারের প্রশংসায় বলেছেন যা ইবনে হাজার তাঁর ‘আস-সাওয়ায়েক’গ্রন্থের ৮৮ পৃষ্ঠায় সূরা আহযাবের ৫৬ নং আয়াতের তাফসীরে এনেছেন। নাবাহানী তাঁর ‘আশ-শারাফুল মুওয়াইয়াদ’গ্রন্থের ৯৯ পৃষ্ঠায় এটি বর্ণনা করেছেন।)

রাসূল (সা.)-এর পবিত্র সুন্নাহ্ হতে তাঁর আহলে বাইতকে অনুসরণ করার অপরিহার্যতার সপক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন এখানেই শেষ করছি। আল্লাহর কিতাবেও (কোরআনে) এ বিষয়ে স্পষ্ট আয়াত রয়েছে,যেহেতু আপনি ঐ সকল ব্যক্তিবর্গের অন্তর্ভুক্ত যাঁরা ইশারা হতেই অনেক কিছু বুঝেন তাই এ বিষয়ে বিচার বিশ্লেষণের দায়িত্ব আপনার তীক্ষ্ণ বুদ্ধিবৃত্তির ওপর ছেড়ে দিলাম।

আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন

(আবুল কাসেম অনূদীত আল মুরাজায়াত গ্রন্থ থেকে সংকলিত)#আল হাসানাইন

 

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)