আল হাসানাইন (আ.)

আশুরার ঘটনাবলীঃ আলী আকবর (আ.)-এর বীরত্ব

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

ইমাম হোসাইন (আ.)এর সঙ্গীরা ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত অবস্থায় একে একে ভূমিতে লুটিয়ে পড়েন। আহলে বাইত ছাড়া আর কেউ বেচে নেই।

এ সময় সবচেয়ে সুন্দর অবয়ব, সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী আলী বিন হোসাইন (আ.) তার পিতার কাছে এসে যুদ্ধের অনুমতি প্রার্থনা করেন। ইমাম হোসাইন (আ.) তৎক্ষণাৎ অনুমতি দেন। এরপর তার দিকে উদ্বেগের দৃষ্টি ফেলেন আর ইমামের দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। অশ্রুসিক্ত অবস্থায় বললেনঃ

أللّهُمّ اشْهدْ، فقدْ برز إليْهمْ غُلامٌ أشْبهُ النّاس خلْقا وخُلُقا ومنْطقا برسُولك صلّى اللّه عليه و آله ، وكُنّا إذا اشْتقْنا إلى نبيّك نظرْنا إليْه

হে খোদা,তুমি সাক্ষী থাক! তাদের দিকে এমন এক যুবক অগ্রসর হয়েছে যে শরীরের গঠন, সৌন্দর্য চরিত্র ও বাক্যালাপে তোমার রাসূল (সা.) এর সাদৃশ্যপূর্ণ। আমরা যখন তোমার নবী (সা.) এর দিকে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষা করতাম এ যুবকের দিকেই তাকাতাম। এরপর ওমর বিন সা’দের প্রতি লক্ষ্য করে সুউচ্চকন্ঠে বললেনঃ

يابْن سعْدٍ قطع اللّهُ رحمك كما قطعْت رحمى

হে সা’দের ছেলে আল্লাহ তোমার বংশধরকে বিচ্ছিন্ন করুন যেভাবে তুমি আমার বংশধরকে বিচ্ছিন্ন করেছ।

আলী বিন হোসাইন দুশমনের মোকাবিলায় প্রচণ্ড লড়াই শুরু করেন। বহুসংখ্যক শত্রুসৈন্য হত্যা করে ক্লান্ত-শ্রান্ত-তৃষ্ণার্ত অবস্থায় পিতা ইমাম হোসাইনের (আ.) কাছে এসে বললেনঃ

يا أبت، ألْعطشُ قدْ قتلنى ، وثقْلُ الْحديد قدْ أجْهدنى ، فهلْ إلى شرْبةٍ منْ الْم أ سبيلٌ؟

হে মহান পিতা, পিপাসায় আমার জীবন ওষ্ঠাগত, যুদ্ধের প্রচণ্ডতায় আমি ক্লান্ত, আমাকে একটু পানি দিয়ে জীবন বাচাতে দাও। ইমাম হোসাইন (আ.) কান্নাবিজড়িত কন্ঠে বললেন- اغوْثاهُ হায় কে সাহায্য করবে। প্রিয় ছেলে ফিরে যাও, যুদ্ধ চালাও সময় ঘনিয়ে এসেছে। একটু পরেই আমার নানা মুহাম্মদ (সা.)-এর সাক্ষাৎ করবে। তার হাতের পেয়ালা এমনভাবে পান করবে-এরপর আর কখনও পিপাসিত হবে না। আলী ময়দানে ফিরে যান, জীবনের মায়া ত্যাগ করে শাহাদতের জন্য প্রস্তুতি নেন।

প্রচণ্ড হামলা শুরু করেন। হটাৎ মুনকিজ বিন মুররা আবদী (আল্লাহর লানত তার উপর বর্ষিত হোক) আলী বিন হোসাইন (আ.) এর দিকে তীর নিক্ষেপ করেন। এ তীরের আঘাতে তিনি ধরাশায়ী হয়ে পড়েন। চিৎকার দিয়ে বলেনঃ

يا أبتاهُ عليْك منّى السّلامُ، هذا جدّى يقْرؤُك السّلامُ ويقُولُ لك: عجّل الْقُدُوم عليْنا

বাবা! খোদা হাফেজ, আপনার প্রতি সালাম। আামর সামনেই নানা মুহাম্মদ (সা.) আপনাকে সালাম জানাচ্ছেন আর বলছেন-“হে হোসাইন তাড়াতাড়ি আমাদের সাথে মিলিত হও।” এরপরই একটি চিৎকার দিয়ে শাহাদাতের শরবত পান করেন।

হোসাইন (আ.) নিহত সন্তানের মাথার কাছে দাড়ালেন। তার গালে গাল লাগিয়ে চুমু খেলেন আর বললেনঃ

قتل اللّهُ قوْما قتلُوك

হে বৎস! আল্লাহ সে সম্প্রদায়কে হত্যা করবে যে তোমাকে হত্যা করেছে। এরা আল্লাহর কাছে কতই না অপরাধ করেছে, আল্লাহর রাসূলের সম্মানে কতই না আঘাত হেনেছে।

বর্ণিত হয়েছে যয়নব (আ.) তাবু থেকে বের হয়ে ময়দানের দিকে ছুটে চললেন এবং ভয়ানক চিৎকার দিয়ে বললেন-

হে আদরের ধন, হে ভাতিজা, আপন ভাতিজার লাশের কাছে এসে গড়িয়ে গড়িয়ে কেদেছিলেন। ইমাম হোসাইন (আ.) এসে তাকে নারীদের তাবুতে ফিরিয়ে নেন। এরপরই আহলে বাইতের যুবকরা একে একে ময়দানে অবতীর্ণ হলেন এবং ফরিয়াদ করে বললেন-হে আমার চাচাতো ভাইয়েরা, হে আমার বংশধরগণ ধৈর্য ধারণ করো। আল্লাহর শপথ, আজকের দিনের পর কোনদিন অপমানিত লাঞ্ছিত হবে না।

কবি বলেনঃ

এসেছে নিশি, পূর্ণশশী তুমি তো আসনি

জীবন ওষ্ঠাগত, আমার জীবন হে আলী আসনি

খাচার পাখী মরুর দিকে উড়ে গেল

কিন্তু হে হোমা পাখী তার কাছেও আসনি

আমার সম শরৎ অন্তর তোমার দিদারে হতো বসন্ত

হে গোলাপ পুষ্প কেন তুমি আসনি

ছাড়লাম অশ্রু, গেলাম সবার আগে তোমার গমন পথে

তোমার প্রতীক্ষায় হলাম পেরেশান-তুমি তো আসনি

অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষায় ছিলাম তুমি যদি আস

তোমার পায়ে জান করব কোরবান, তুমি তো আসনি।

(কারবালা ও হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ) এর শাহাদাত গ্রন্থ থেকে সংকলিত)#আল হাসানাইন

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)