আল হাসানাইন (আ.)

আশুরার ঘটনাবলীঃ যুদ্ধের ময়দানে শহীদগণের নেতা ইমাম হোসাইন (আ.)

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

ইমাম হোসাইন (আ.) ময়দানে এসে শত্রুপক্ষকে মল্লযুদ্ধের আহ্বান জানালেন। দুশমনের খ্যাতনামা বীর একে একে ইমাম (আ.) এর আঘাতে ধরাশায়ী হচ্ছে। তাদের বহুসংখ্যক নিহত হওয়ার পর ইমাম (আ.) হটাৎ বলে উঠলেন-

লজ্জার বাধনে থাকার চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়

জাহান্নামে যাওয়ার চেয়ে লজ্জাই শ্রেয়

একজন বর্ণনাকারী লিখেছেনঃ আল্লাহর শপথ! দুশমন বেষ্টিত সন্তান, পরিবার ও সাথীদের লাশ চোখের সামনে। এ অবস্থায় হোসাইন (আ.) এর চেয়ে অধিক দৃঢ়চিত্ত বীর আর কেউ হতে পারে না। যখনই শত্রুবাহিনী সম্মিলিত হামলা চালাতো তিনি তাদের দিকে তরবারী হানতেন পুরো বাহিনী চতুর্দিকে নেকড়ের মত ছিটকে পড়তো। এক হাজারের অধিক সৈন্য এক সাথে তার উপর হামলা চালায়। ইমাম (আ.) এর সামনে এসে পঙ্গপালের মতো পালাতে থাকে। একটু দূরে গিয়েই বলতে থাকে-

لا حوْل و لا قُوّة إلاّ بااللّه

লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।

প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে-দুশমন প্রায় তাবুর কাছে পৌছে গেছে । এমন সময় হোসাইন (আ.) ফরিয়াদ করে বললেন-

ويْحكُمْ يا شيعزة آل أبى سُفْيان، إنْ لمْ يكُنْ لكُمْ دينُ وكْنُتْم لا تخافُون الْمعاد فكُونُوا أحْرارا فى دُنْياكُمْ

হে আবু সুফিয়ানের বংশের দল, যদি তোমাদের দীন না থেকে, পরকালেকে ভয় না-ও করো অন্ততপক্ষে দুনিয়ায় স্বাধীন থাকো। তোমাদের বংশ, বুনিয়াদের দিকে তাকাও যদি আরব হয়ে থাক, তোমরা তাই দাবী করছ।

শিমার বলল-হে ফাতেমার সন্তান কি বলছ? ইমাম (আ.) বললেনঃ

أُقاتلُكُمْ و تُقاتلُوننى و النّسأُ ليْس عليْهنّ جُناحُ

আমি তোমাদের সাথে যুদ্ধ করব আর তোমরা আমার সাথে যুদ্ধ করবে। নারীরা তো কোন অপরাধ করেনি। আমি যতক্ষণ জীবিত আছি এসব অকৃতজ্ঞ, মূর্খ ও জালেমদেরকে আমার তাবুতে ঢুকতে দেব না। শিমার বলল তোমার এ প্রস্তাব গ্রহণ করলাম। এরপরই শিমারের নেতৃত্বে ইমাম হোসাইন (আ.) কে হত্যার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়। তারা ইমাম হোসাইন (আ.) এর উপর হামলা করে। ইমাম (আ.) ও পাল্টা হামলা চালান। এ সময় ইমাম পিপাসায় কাতর হয়ে পড়েন। শত্রুদের কাছে একটু পানি চান কিন্তু তারা এক ফোটা পানিও দেয়নি। এ সময়ের মধ্যে ইমামের পবিত্র বদন ৭২টি আঘাতে জর্জরিত হয়ে যায়।

তিনি থমকে দাড়িয়ে গেলেন। দুর্বলতার কারণে কিছু সময় যুদ্ধ করতে সক্ষম হননি। দাড়িয়ে আছেন এমন সময় একটি পাথর এসে তার পেশানীতে আঘাত হানল। রক্তধারা গড়িয়ে পড়ে জামা ভিজতে শুরু করে। তিনি নিজের জামা দিয়ে রক্তস্রোত বন্ধ করতে চেষ্টা করেন এমন সময় একটি বিষাক্ত ত্রিশূল এসে ইমামের বুকে বিদ্ধ হয় ।

এরপর আকাশের পানে মুখ করে ইমাম বলতে লাগলেন-

“হে খোদা, তুমি জানো এ বাহিনী যাকে হত্যা করছে নবী নন্দিনীর ছেলেদের মধ্যে সে ছাড়া আর কেউ নেই।” এরপর নিজেই ত্রিশূলটি টেনে বের করেন আর রক্ত বন্যার মতো গড়িয়ে পড়তে থাকে। এর ফলে তিনি যুদ্ধ করার শক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি নীরব নিথর অবস্থায় দাড়িয়ে আছেন কিন্তু যেই তাকে হত্যার জন্য এগিয়ে আসে সেই আল্লাহর নিকট হোসাইনের হন্তা হিসেবে চিহ্নিত হবার ভয়ে আবার পিছু হটে। এরপর কান্দা গোত্রের মালেক বিন ইয়াসার ইমাম হোসাইনের (আ.) সামনে দাড়িয়ে তাকে অত্যন্ত খারাপ গালি দিয়ে ইমামের মাথায় তরবারী চালিয়ে দেয় । তাতে তার পাগড়ী ভেদ করে মাথায় ঢুকে পড়ে। ইমামের গোটা পাগড়ী রক্তে রঞ্জিত হয়। ইমাম একখানা রুমাল দিয়ে মাথা বাধলেন ও মাথায় দেয়ার জন্য একটি টুপি চাইলেন। এরপর পাগড়ী দিয়ে মাথা ভালভাবে বাধলেন। ইবনে যিয়াদের বাহিনী একটু বিরতি দিয়েই চতুর্দিক থেকে তাকে ঘিরে ফেলে।

আব্দুল্লাহ বিন হাসান (আ.)-এর শাহাদত

আব্দুল্লাহ বিন হাসান বিন আলী (আ.) ছিলেন নাবালেগ (অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর)। নারীদের তাবু থেকে বের হয়ে ইমাম হোসাইন (আ.) এর সামনে দাড়ালেন। যয়নব (আ.) দৌড়ে এসে তাকে তাবুতে ফিরিয়ে নিতে চাইলেন। কিন্তু এ কিশোর রাজী না হয়ে বলল-খোদার শপথ! আমার চাচার কাছ থেকে দূরে যাব না। এ সময় আবহুর বিন কাব অন্য বর্ণনামতে, হারমালা বিন কাহেল (লানাতুল্লাহে আলাইহিমা) ইমাম হোসাইন (আ.) এর গায়ে তরবারী চালানোর জন্য উদ্যত হয়। কিশোর আব্দুল্লাহ চিৎকার দিয়ে বলে) হে জারজ আবহুর! তোর ধ্বংস হোক। আমার চাচাকে হত্যা করতে চাও? এ চিৎকার শোনার পরও এ নাপাক ইমামের গায়ে তরবারীর আঘাত হানতে গেলেই কিশোর নিজের হাত দিয়ে তা ফিরাতে চেষ্টা করে। তরবারীর আঘাত তার হাতে লাগলে সে চিৎকার দিয়ে ওঠে। হে চাচা! ইমাম হোসাইন (আ.) তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন এবং বললেন- ভাতিজা এ মুছিবতে তুমি ধৈর্য ধারণ কর, আল্লাহর দরবারে কল্যাণ কামনা কর। কেননা মহান আল্লাহ তোমাকে নেককার বান্দাদের কাতারে শামিল করবেন। হটাৎ হারমালা বিন কাহেল দূর থেকে আব্দুল্লাহকে লক্ষ্য করে তীর ছুড়ে। ফলে ইমাম হোসাইনের (আ.) কোলেই আব্দুল্লাহ শহীদ হন। তারপরই শিমার বিন জিলজওশন তাবুতে হামলা চালায়, নিজের বর্শার আঘাতে তাবু দ্বিখণ্ডিত করে চিৎকার দিয়ে বলে আগুন নিয়ে এসো, তাবুতে যারা আছে তাদেরসহ আগুন লাগিয়ে দাও। হোসাইন (আ.) বললেন, হে শিমার! তুমি আমার আহলে বাইতকে পুড়িয়ে মারার জন্য আগুন চাচ্ছ! আল্লাহ তোমাকেও আগুনে জ্বালাবেন। ‘শাবছ’ এসে শিমারের এ কাজের তিরস্কার করে। শিমার লজ্জিত হযে তাবুতে আগুন দেয়া বন্ধ রাখে। হোসাইন (আ.) বললেন, আমার জন্য এমন একটি পুরানো জামা নিয়ে এসো যাতে কেউ ঐ জামার প্রতি আসক্ত না হয়। আর আমার পোশাকের নিচে আমি এজন্য পরিধান করব যেন আমার শরীর পোশাকবিহীন না থাকে। ইমামের জন্য ইয়েমেন থেকে পাওয়া একটি জামা আনা হল। তিনি জামার একাংশ ছিড়ে মূল জামার নীচে পরিধান করলেন। কিন্তু ইমামের শাহাদাতের পর আবহুর বিন কাব তার শরীর থেকে সব জামা খুলে ইমামের পবিত্র বদনকে উলঙ্গ অবস্থায় ফেলে রাখে। এ কাজের ফলে তার দু’হাত গ্রীষ্মকালের শুকনো কাঠ, শীতকালের বরফের মত ঠাণ্ডা হয়ে রক্ত ঝরতে থাকে। মৃত্যু পর্যন্ত তাকে এ শাস্তি ভোগ করতে হয়।

রাবী বলেছেনঃ ইমাম হোসাইন (আ.) যখমের কারণে দুর্বল হয়ে পড়েন। দুশমনের অসংখ্য তীর তার বদনে কাটার মতো বিদ্ধ ছিল। সালেহ বিন ওহাব মুযনী তার পাজরে একটি বর্শা নিক্ষেপ করলে ইমাম অশ্ব থেকে যমিনে লুটিয়ে পড়লেন। তার মাথা মাটির সাথে লাগিয়ে বলছিলেন-

بسْم اللّه و باللّه و على ملّة رسُول اللّه

একটু পরেই যমীন থেকে মাথা তুললেন। এ সময় হযরত যয়নব (আ.) তাবু থেকে বেরিয়ে এসে সুউচ্চ কন্ঠে ফরিয়াদ করলেন-

وا أخاهُ، وا سيّداهُ، وا أهْل بيْتاه

“হে ভাই আমার, হে আমাদের নেতা, হায় আহলে বাইত।”

তারপর বললেন-

ليْت السّم أ اُطْبقتْ على الارْض، و ليْت الجبال تدكْدكتْ على السّهْل

“হায় আসমান যদি যমিনে ভেঙ্গে পড়তো, হায়! পাহাড় যদি ছিন্নভিন্ন হয়ে যমীনে পড়তো।” এ সময় শিমার চিৎকার দিয়ে তার সৈন্যদের বলল, কিসের অপেক্ষা করছ, হোসাইনকে শেষ করে দিচ্ছ না কেন?” সেনাবাহিনী চতুর্দিক থেকে তাকে ঘিরে ফেলে সম্মিলিতভাবে ইমামের শরীরে হামলা চালায়। যুরআ বিন শুরাইক ইমাম হোসাইন (আ.)-এর বাম কাধে তরবারীর আঘাত হানে। তিনি পল্টা হামলা করলে সে নিহত হয়। আরেক ব্যক্তি তার অপর কাধে আঘাত হানে। তাতে তিনি নুয়ে পড়েন। বিভীষিকা ও ক্লান্তিতে চেহারা মলিন হয়ে পড়ে। বার বার উঠতে চেষ্টা করেন, কিন্তু দুর্বলতা ও ক্লান্তিতে বসে পড়েন। সেনান বিন আনাস নাখয়ী ইমাম হোসাইন (আ.) এর গলায় বর্শার আঘাত হেনে তা টেনে বের করে। এরপর বুকে নিক্ষেপ করে তা বুকের হাড়ে বিদ্ধ হয়ে যায়, এরপর একটি তীর তার গলায় বিদ্ধ করে। এতে করে ইমাম হোসাইন (আ.) ধরাশায়ী হয়ে পড়েন । তারপরও ইমাম উঠে দাড়ান এবং নিজের গলা থেকে তীর বের করে ফেলেন। দু’হাতে রক্ত চেপে ধরে যখন হাত ভরে যায় সে রক্ত দিয়ে নিজের চেহারা মোবারক রঞ্জিত করেন। আর বলেন-এ অবস্থায় আল্লাহর সাক্ষাৎ করব। রক্ত ছাড়াই খেজাব লাগিয়েছি। এরা আমার অধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে।

ওমর বিন সা’দ তার ডানপাশে দাড়ানো এক ব্যক্তিকে বলল, যাও হোসাইনের কাজ সাঙ্গ করে এস। খুলী বিন ইয়াজিদ আসবাহী হোসাইন (আ.) এর বদন থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করার জন্য উদ্যোগ নেয়, কিন্তু তার শরীরে কাপন সৃষ্টি হয়, সে ফিরে যায়। সেনান বিন আনাস অশ্ব থেকে নেমে পড়ে। ইমাম হোসাইন (আ.) এর ঘাড়ে তরবারী বসিয়ে দেয় । আর বলে-খোদার শপথ, তোমর মাথা বিচ্ছেদ করেই ছাড়বো। আমি জানি তুমি মহানবীর আওলাদ, মাতা-পিতার দিক থেকে সর্বোত্তম মানুষ । এরপর এ মহান বদন থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এ প্রসঙ্গে কবি বলেছেন-

ইমাম হোসাইন (আ.) এর মুসিবতের সাথে কোন মুসিবতের তুলনা করবে। সেদিনের বিপদ কতই না জঘন্য যেদিন অপবিত্র ও অপরাধী সেনান বিন আনাসের হাত তাকে হত্যা করেছে এবং শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করেছে।

মরহুম মুহাদ্দেস কোমীর বর্ণনামতে ইমাম হোসাইন (আ.)-এর হন্তা ছিল শিমার । এরপর বর্তমান গ্রন্থের হুবহু বর্ণনা দেন। নাসেখুত তাওয়ারিখ গ্রন্থে হোসাইন (আ.) এর হন্তা সম্পর্কে বিভিন্ন মানুষের মতামত উল্লেখ করে লিখেছেন, অধিকাংশের মতে শিমার জিল জওশন ছিল ইমামের হন্তা। এটাই অধিক সমর্থনযোগ্য। তবে হতে পারে খুলী এবং সেনান তাকে সহযোগিতা করেছে।

আবু তাহের মুহাম্মদ বিন হাসান তরসী তার মায়ালেমুদ্দিন গ্রন্থে বর্ণনা করেন যে, ইমাম সাদেক (আ.) বলেছেন-হোসাইন (আ.) যখন শহীদ হলেন ফেরেশতাগণ দলে দলে তার শিয়রে আসে। তারা বলতে থাকে, ‘হে খোদা তোমার মনোনীত এবং নবী নন্দিনীর সন্তানকে এরা এভাবে হত্যা করল। মহান আল্লাহ হযরত ইমামে যামানের (মাহদী) ছবি তাদের সামনে প্রদর্শন করে বললেন-এ ব্যক্তির মাধ্যমে ইমাম হোসাইন (আ.) এর দুশমনদের প্রতিশোধ নেব। বর্ণিত হয়েছে, সেই সেনান বিন আনাসকে মোখতার পাকড়াও করে এবং তার আংগুলগুলোর প্রতিটি গিট বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এরপর তার হাত-পা কেটে দেয়। বাকী অংশে জয়তুনের তেল ঢেলে তাকে সেখানে নিক্ষেপ করে চরম শান্তি দিয়ে হত্যা করে। রাবী বলেছেন, ফেরেশতাদের আগমনের পরই কালো ও অন্ধকারময় প্রচণ্ড ধূলাবালি আকাশকে ছেয়ে ফেলে। এ অন্ধকারে কোন কিছুই দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল না। ইবনে সা’দের বাহিনী মনে করল তাদের উপর বুঝি আযাব নাযিল হয়েছে। কিছুক্ষণ পর এ অন্ধকার দূরীভূত হয়।

ইমাম হোসাইন (আ.)-এর অন্তিম মুহূর্ত

হেলাল বিন নাফে বর্ণনা করেন যে, আমি ওমর বিন সা’দের সেনাবাহিনীর সাথে দাড়িয়েছিলাম। এমন সময় একজন হটাৎ চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে, হে আমীর আপনাকে শুভ সংবাদ। শিমার ইমাম হোসাইন (আ.) কে হত্যা করেছে। আমি সৈন্যদের সারি থেকে বের হয়ে হোসাইন (আ.) এর সামনে দাড়িয়ে দেখছিলাম তিনি জীবনের শেষ মুহূর্ত অতিক্রম করছেন।

খোদার কসম রক্তাক্ত অবস্থায় নিহত মানুষের মধ্যে এরূপ উত্তম ও আকর্ষণীয় চেহারা আর কখনও দেখিনি। ইমাম হোসাইন (আ.) এর চেহারায় উদ্ভাসিত হয়েছিল নূর। তার এ নূর ও ব্যক্তিত্বের সৌন্দর্যে তাকে শহীদ করার চিন্তা আমি পরিত্যাগ করলাম।

এ সময় ইমাম হোসাইন (আ.) পানি চাইলেন।

আমি শুনলাম এক ব্যক্তি বলছে খোদার শপথ আমাদের বশ্যতা স্বীকার না করলে পানি দেব না যতক্ষণ না তা হবে জালাতনের গরম পানি। আমি শুনলাম ইমাম (আ.) বলছেন আমি তোমাদের কাছে নত হব না আমি আমার নানা রাসূলের (সা.) সান্নিধ্যে পৌছব এবং বেহেশতে তার সাথে এক সাথে থাকব আর তথাকার সুমিষ্ট পানি পান করবো এবং তোমাদের জুলুমসমূহের বিচার চাইব।

হেলাল বলল ইমাম (আ.) এর একথাগুলো শুনে সেনাবাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে এমন আচরণ করে মনে হয় আল্লাহ তাদের কারো অন্তরে বিন্দুমাত্র দয়া রাখেননি। ইমাম (আ.) তার কথা বলা শেষ না করতেই তার শরীর থেকে মাথা মোবারক বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। আমি তাদের এ নির্দয় আচরণ দেখে হতবাক হয়ে গেলাম। আমি বললাম আল্লাহর কসম কোন অবস্থাতেই তোমাদের সাথে থাকব না। এরপর ইবনে সাদের বাহিনী হোসাইন (আ.) কে উলঙ্গ করে ফেলে। তার জামা পরিধান করে ইসহাক বিন হাবিয়া হাজরামী। এতে তার শরীরে শ্বেত রোগের সৃষ্টি হয় এবং শরীরের সকল পশম ঝরে পড়ে। বর্ণিত হয়েছে, তার জামায় প্রায় একশ’ নব্বইটি তরবারী, তীর ও বর্শার আঘাতের চিহ্ন ছিল। হযরত ইমাম সাদেক (আ.) বললেন, হোসাইন (আ.) এর বদনে ৩৩টি বর্শা এবং ৪৩টি তরবারীর আঘাত ছিল। হোসাইন (আ.) এর পাজামা নিয়ে যায় আবহোর বিন কাব। বর্ণিত হয়েছে, এ পাজামা পরিধান করার পর সে অবশ হয়ে যায়।

হোসাইন (আ.) এর পাগড়ী নিয়ে যায় আখনাস বিন মারসাদ বিন আলকামা। অন্য বর্ণনামতে জাবের বিন ইয়াজিদ আওদী পাগড়ী নিয়ে যায়। এ পাগড়ী মাথায় পরিধান করার সাথে সাথে তার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটে। তার জুতা মোবারক নিয়ে যায় আসওয়াদ বিন খালেদ, আংটি নিয়ে যায় বোজদিল বিন সালিন কালবী। এ আংটি নেয়ার অপরাধে পরবর্তীতে তার আংগুল কর্তন করা হয়। এই বোজদিল বিন সালিনকে মোখতার সাকাফী বন্দী করে তার হাত-পা কেটে ছেড়ে দেয়। এ অবস্থায় রক্ত ঝরতে থাকে অবশেষে এ রক্তক্ষরণে সে মারা যায়। ইমাম হোসাইন (আ.) এর চামড়ার রুমালটি নিয়ে যায় কায়েস বিন আশসাস। বাতারা নামক বর্মটি নিয়ে যায় ওমর বিন সা’দ। ওমর বিন সা’দ নিহত হলে মোখতার সে বর্মটি ওমর সাদের হত্যাকারীকে দান করেন।

ইমাম (আ.) এর তরবারী জামী বিন খালফ আওদী অন্য বর্ণনামতে, বনি তামিম গোত্রের আসওয়াদ বিন হানজালা নামক এক ব্যক্তি হস্তগত করে। ইবনে আবি আস আদের বর্ণনামতে, ইমাম (আ.) এর তরবারী ফালাফেস নাহশালী নিয়ে যায়। মুহাম্মদ বিন যাকারিয়া একথা বর্ণনার পর লিখেন, এ তরবারী পরবর্তীতে হাবিব বিন বুদালের কন্যার হাতে পৌছে। এখানে উল্লেখ্য, যে তরবারী তারা লুন্ঠন করেছে তা জুলফিকার ছিল না। কেননা জুলফিকার রাসূলে পাক (সা.) ও ইমামদের অন্যান্য স্মৃতিবহুল সম্পদের সাথে সংরক্ষিত রয়েছে। এ কথাটি বিভিন্ন রাবী সত্যায়ন করেছেন এবং হুবহু বর্ণনাও করেছেন।

(কারবালা ও হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ) এর শাহাদাত গ্রন্থ থেকে সংকলিত)#আল হাসানাইন

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)