আল হাসানাইন (আ.)

সূরা নাহল;(২য় পর্ব)

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

সূরা নাহল; আয়াত ৭-১১

সূরা নাহলের ৭ ও ৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন,

وَتَحْمِلُ أَثْقَالَكُمْ إِلَى بَلَدٍ لَمْ تَكُونُوا بَالِغِيهِ إِلَّا بِشِقِّ الْأَنْفُسِ إِنَّ رَبَّكُمْ لَرَءُوفٌ رَحِيمٌ (7) وَالْخَيْلَ وَالْبِغَالَ وَالْحَمِيرَ لِتَرْكَبُوهَا وَزِينَةً وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُونَ

“এ সব পশু তোমাদের ভার বহন করে নিয়ে যায় দূর দেশে, যেখানে প্রাণান্ত ক্লেশ ব্যতীত তোমরা পৌঁছুতে পারতে না। নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু।” (১৬:৭)

“তোমাদের আরোহনের জন্য ও শোভার জন্য তিনি সৃষ্টি করেছেন অশ্ব, অশ্বতর ও গর্দভ। এবং তিনি সৃষ্টি করেন এমন অনেক কিছু যা তোমরা অবগত নও।" (১৬:৮)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রথমে আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী ও মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন। এরপর জীব-জন্তুর সৃষ্টি এবং এসব কিভাবে মানুষের কল্যাণে আসে তারও বর্ণনা দিয়েছেন। এ আয়াতে গৃহপালিত পশুর আরো কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা দেয়া হয়েছে।

এটা সকলেরই জানা যে, অনেক দিন আগে যখন গাড়ী আবিস্কার হয়নি তখন যাত্রী এবং মালামাল পরিবহনের জন্য ঘোড়া বা গাধার মত পশু ব্যবহৃত হতো। এ আধুনিক যুগে যখন সড়ক বা আকাশ পথে যোগাযোগ অত্যন্ত সহজ হয়ে গেছে, তারপরও অনেক গ্রামে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাত্রী বা পণ্য পরিহনের জন্য পশুর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। দূর্গম এবং পার্বত্য অঞ্চলে এখনো ঘোড়া বা গাধা প্রধান বাহন হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। এছাড়া, ঘোড়া বা গাধায় চড়া এ যুগেও আনন্দ বা বিনোদন হিসেবে বিবেচিত হয়। সাত ও আট নম্বর আয়াতে এই বিষয়ের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

এই আয়াতে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, পশু বা জীবজন্তু মানুষের চেয়ে শক্তিশালী হলেও এসবই মানুষের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে।

এরপর এই সূরার নয় নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَعَلَى اللَّهِ قَصْدُ السَّبِيلِ وَمِنْهَا جَائِرٌ وَلَوْ شَاءَ لَهَدَاكُمْ أَجْمَعِينَ

"সরল পথ নির্দেশ করা আল্লাহর দায়িত্ব। কিন্তু পথগুলোর মধ্যে বক্র পথও আছে। তিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের সকলকেই সৎপথে পরিচালিত করতে পারতেন।" (১৬:৯)

মানুষের জন্য প্রকৃতিতে দেয়া আল্লাহর অফুরন্ত নেয়ামতের কথা উল্লেখ করার পর এই আয়াতে পুনরায় স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে যে, সৎপথ পাওয়াটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় নেয়ামত। এখানে বলা হয়েছে, মানুষের সামনে দুটো পথ আছে। একটি পথের প্রদর্শক হচ্ছে স্বয়ং আল্লাহ, এই পথ অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ এবং তা মানুষকে সোজা পৌঁছে দেয় তাঁর গন্তব্যে। অপর পথটি হচ্ছে বিভ্রান্তি ও বিচ্যুতির পথ, যে পথে চললে মানুষ আদর্শগত বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে, ফলে তার পক্ষে আর গন্তব্যে পৌঁছা সম্ভব হয় না। মানুষ এ দুই পথের যে কোন একটি গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বাধীন। আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে কাউকে বাধ্য করেন না। তিনি পথ নির্বাচনের ক্ষেত্রে মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছেন।

এই আয়াত থেকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে পথের দিশা দান করেন, তবে তা গ্রহণ করা বা না করার এখতিয়ার মানুষের। কাজেই জোর করে ধর্মান্তর করাকে ইসলাম সমর্থন করে না।

এই সূরার ১০ ও ১১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً لَكُمْ مِنْهُ شَرَابٌ وَمِنْهُ شَجَرٌ فِيهِ تُسِيمُونَ (10) يُنْبِتُ لَكُمْ بِهِ الزَّرْعَ وَالزَّيْتُونَ وَالنَّخِيلَ وَالْأَعْنَابَ وَمِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَةً لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

"তিনিই আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন, এতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা হতে জন্মায় উদ্ভিদ যাতে তোমরা পশুচারণ করে থাক।” (১৬:১০)

“তিনি তোমাদের জন্য এর দ্বারা শস্য জন্মান, যয়তুন, খেজুর বৃক্ষ, আঙুর এবং সর্ব প্রকার ফল। অবশ্যই এতে রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন।" (১৬:১১)

মানুষের জীবন ধারনের জন্য পানি অপরিহার্য। তাই পানির অপর নাম জীবন। আল্লাহ তায়ালা এ সম্পর্কে বলছেন, আল্লাহ তায়ালাই আকাশ থেকে বৃষ্টির ব্যবস্থা করেন,যা থেকে মানুষ জীবন ধারনের জন্য পানি সংগ্রহ করে,এছাড়া বৃষ্টির পানিই জমিনে গাছপালা ও উদ্ভিদ জন্মায়। এ সব গাছপালা থেকে প্রাপ্ত ফল-মূল, শাক-সব্জী খেয়েই মানুষ বেঁচে থাকে। এই আয়াতে খেজুর, যয়তুন এবং আঙুরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। গবেষণায় দেখা যায় যে, পুষ্টিমানের দিক থেকে এই তিনটি ফলই অত্যন্ত উৎকৃষ্ট মানের।

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)