আল হাসানাইন (আ.)

সূরা নাহল;(৩য় পর্ব)

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

সূরা নাহল; আয়াত ১২-১৬

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা নাহলের ১২ ও ১৩ নম্বর আয়াতে বলেছেন,

وَسَخَّرَ لَكُمُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومُ مُسَخَّرَاتٌ بِأَمْرِهِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَاتٍ لِقَوْمٍ يَعْقِلُونَ (12) وَمَا ذَرَأَ لَكُمْ فِي الْأَرْضِ مُخْتَلِفًا أَلْوَانُهُ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَةً لِقَوْمٍ يَذَّكَّرُونَ

“তিনিই তোমাদের অধীন করেছেন রজনী, দিবস, সূর্য এবং চন্দ্রকে, নক্ষত্ররাজিও অধীন হয়েছে তাঁরই বিধানে। নিশ্চয়ই এতে বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন” (১৬:১২)

“এবং তোমাদের জন্য পৃথিবীতে যেসব রং বেরংয়ের বস্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন সেগুলোতে রয়েছে নিদর্শন, সেই সম্প্রদায়ের জন্য যারা উপদেশ গ্রহণ করে। "(১৬:১২)

এর আগের কয়েকটি আয়াতে সৃষ্টিজগতে মানুষের সেবায় ছড়িয়ে থাকা আল্লাহর অগণিত নেয়ামতের হাতেগোনা কয়েকটির বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এই দুই আয়াতে চন্দ্র ও সূর্যের অস্তিত্ব এবং রাত ও দিন সৃষ্টির পেছনে এই দুয়ের ভূমিকা সম্পর্কে ইঙ্গিত করে বলা হয়েছে, পৃথিবী এবং পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা নানা বস্তু যেমন মানুষের সেবার জন্য নিয়োজিত তেমনি চন্দ্র ও সূর্যও মানুষের সেবা ও কল্যাণের জন্য সৃষ্টি হয়েছে। নক্ষত্রমণ্ডলী এমনকি মহাবিশ্বে যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে তার সবই আল্লাহ তায়ালা এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যাতে করে মানুষ তা থেকে উপকৃত হতে পারে। কাজেই বিজ্ঞানী ও পণ্ডিত ব্যক্তিরা যতই এসবের দিকে মনোনিবেশ করবে ততই সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর প্রজ্ঞা ও কুদরত সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের সন্ধান লাভ করতে পারবে।

১৩ নম্বর আয়াতে একটি চমৎকার বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, এতে সৃষ্টিজগতে রঙের বৈচিত্র সম্পর্কে বলা হয়েছে। প্রকৃতিতে বিদ্যমান এই যে রঙের বৈচিত্র,তাতেই বুঝা যায় কত সূক্ষ্ম ও সুনিপুণভাবে এবং সৌন্দর্যমণ্ডিত করে আল্লাহতায়ালা এই বিশ্বজগতকে সৃষ্টি করেছেন।

সত্যিই রঙের বৈচিত্র প্রকৃতিকে এতোটাই আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে,যার ফলে চিন্তাশীল লোকদের জন্য আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ অনেক সহজ হয়ে গেছে। যে কেউ একটু চিন্তা করলেই এটা বুঝতে পারবে এই সুন্দর সুশৃংখল প্রকৃতি এমনিতেই সৃষ্টি হয়নি বরং তা মানুষের প্রতি মহান স্রষ্টার বিশেষ অনুগ্রহ।

এই সূরার ১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَهُوَ الَّذِي سَخَّرَ الْبَحْرَ لِتَأْكُلُوا مِنْهُ لَحْمًا طَرِيًّا وَتَسْتَخْرِجُوا مِنْهُ حِلْيَةً تَلْبَسُونَهَا وَتَرَى الْفُلْكَ مَوَاخِرَ فِيهِ وَلِتَبْتَغُوا مِنْ فَضْلِهِ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

“তিনিই সমুদ্রকে অধীন করেছেন যাতে তোমরা তা হতে তাজা গোশত আহার করতে পার এবং যাতে তা থেকে রত্নাবলী আহরণ করতে পার যা দিয়ে তোমরা অলঙ্কৃত হও এবং তোমরা দেখতে পাও সমুদ্রের বুক চিরে জলযান চলাচল করে এবং এ জন্য তোমরা যেন তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং তোমরা যেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার।” (১৬:১৪)

এই আয়াতে সমুদ্রে মানুষের জন্য যে কল্যাণ রয়েছে তার কিছুটা বর্ণনা দেয়া হয়েছে। স্থলভূমিতে পশুপালনের জন্য মানুষকে অনেক কষ্ট করতে হয়। কিন্তু সমূদ্রে আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন জাতের মাছের ব্যবস্থা করেছেন যা খাদ্য হিসেবে যেমন উৎকৃষ্ট তেমনি সহজলভ্য। সমুদ্র বক্ষেই পাওয়া যায় অত্যন্ত মূল্যবান অলংকার সামগ্রী। এছাড়া জলপথ যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের জন্য সর্বকালেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এ সবই আল্লাহ তায়ালা মানুষের সেবায় নিয়োজিত করেছেন। কাজেই আল্লাহ তায়ালা চান মানুষ এসবের সঠিক মূল্যায়ন করবে, সঠিকভাবে এসব ব্যবহার করবে এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা ও গুণকীর্তন করবে।

মানুষের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ গুণে শেষ করা যাবে না। সমূদ্রের কথাই যদি ধরা যায়, তাহলে দেখা যাবে নদ-নদী বা সমূদ্রে মানুষের জন্য যেমন খাদ্য সামগ্রী রয়েছে তেমনি রয়েছে অলংকরণের সামগ্রী ও বিনোদনের ব্যবস্থা।

এ সূরার ১৫ ও ১৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَأَلْقَى فِي الْأَرْضِ رَوَاسِيَ أَنْ تَمِيدَ بِكُمْ وَأَنْهَارًا وَسُبُلًا لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ (15) وَعَلَامَاتٍ وَبِالنَّجْمِ هُمْ يَهْتَدُونَ

“তিনি পৃথিবীতে সুদৃঢ় পর্বত স্থাপন করেছেন যাতে পৃথিবী তোমাদেরকে নিয়ে এদিক ওদিক ঢলে না যায় এবং তিনি স্থাপন করেছেন নদ-নদী ও পথ যাতে তোমরা তোমাদের গন্তব্য স্থলে পৌঁছাতে পার।”(১৬:১৫)

“এবং তিনি সৃষ্টি করেছেন দিক নির্ণায়ক চিহ্নসমূহ এবং তারা নক্ষত্রের সাহায্যেও পথের নির্দেশ পায়।" (১৬:১৬)

এই আয়াতে পৃথিবীতে পাহাড়-পর্বতের ভূমিকা এবং আকাশে নক্ষত্র বা তারকারাজির ভূমিকা সম্পর্কে বর্ণনা দেয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনের অন্যত্রও বলা হয়েছে পর্বতসমূহ ভূপৃষ্ঠের স্থিতি ও ভারসাম্য রক্ষা করে। এছাড়া, দিক নির্ণয়ের জন্য অতীতে একমাত্র নক্ষত্রই ছিল একমাত্র অবলম্বন। এখনো দিক নির্ণয়ের জন্য নক্ষত্র বা তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)