আল হাসানাইন (আ.)

পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে সাময়িক বিবাহ

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা সাময়িক বিবাহকে মু’তা হিসেবে অভিহিত করেছেন। সূরা নিসার ২৪নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে,

 "যে সব নারীদের সাথে তোমরা মু’তা (সাময়িক বিবাহ) করবে, আবশ্যিকভাবে তাদের প্রাপ্য অর্থ (দেন মোহর) প্রদান করবে।”

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে মু’তা সম্পর্কে যে সব হাদীস বর্ণিত হয়েছে। (আগামীতে আমরা এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রেওয়ায়েতসমূহের কিছু সম্মানিত পাঠকদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরব।)

এছাড়া মুসলিম ফিকাহবিদগণ (শিয়া ও সুন্নী উভয় সম্প্রদায়ের অন্তর্ভূক্ত) নিজেদের ফিকাহ শাস্ত্রের গ্রন্থাবলীতে সাময়িক বিবাহকে ‘মু’তা’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। আর এটা অস্বীকার করা ফিকাহ শাস্ত্রের অকাট্য বিষয়াবলী অস্বীকারের শামিল। (এ সম্পর্কে বিশিষ্ট ফিকাহবিদগণের বক্তব্যের কিয়দাংশ আমরা পরবর্তীতে বিজ্ঞ পাঠকদের জ্ঞাতার্থে উল্লেখ করব।)

এতদসত্ত্ব্ওে কেউ কেউ উক্ত আয়াতে বর্ণিত মু’তা শব্দটিকে ভোগ ও নারী সম্ভোগ অর্থে ব্যবহার করেছেন। তারা মন্তব্য করেছেন যে, উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা হচ্ছে- যখন নারী সম্ভোগ করবে, তখন তাদের প্রাপ্য অর্থ (দেন মোহর) প্রদান করবে।

কিন্তু তাদের এহেন মন্তব্যে দু’টি বড় ধরনের ত্রুটি রয়েছে, যথা :

প্রথমতঃ শরিয়তের দৃষ্টিতে বিবাহের আকদ্ পাঠের সাথে সাথে স্ত্রীকে দেন মোহর প্রদান স্বামীর উপর ফরজ হয়ে যায়। অর্থাৎ আকদ্ সম্পন্ন হবার পর স্ত্রী স্বীয় দেন মোহরের দাবী করতে পারে। এক্ষেত্রে সহবাস বা সম্ভোগের কোন শর্ত নেই। (অবশ্য সহবাসের পূর্বে যদি তালাক হয়ে যায় তবে সেক্ষেত্রে দেন মোহর হবে অর্ধেক।) (অনুধাবনযোগ্য)

দ্বিতীয়তঃ পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, মু’তা শব্দটি শরিয়তের পরিভাষা, শিয়া ও সুন্নী উভয় মাযহাবের ফিকাহবিদগণের বক্তব্য এবং রেওয়ায়েতের ভাষাতে সাময়িক বিবাহ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এ সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ শিঘ্রই উল্লেখ করা হবে।

বিশিষ্ট মুফাসসের তাবাররাসী স্বীয় তাফসীর গ্রন্থ ‘মাজমাউল বায়ান’-এ উক্ত আয়াতের (সূরা নিসার ২৪নং আয়াত) তাফসীরে উল্লেখ করেছেন : এ আয়াত সম্পর্কে দু’টি মত বিদ্যমান রয়েছে। তন্মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে এ আয়াতে বর্ণিত মু’তা (استماع) শব্দটি নারী সম্ভোগ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আর তারা এ মতের পক্ষে কিছু সংখ্যক সাহাবী ও তাবেয়ীর আমলকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেছে।

দ্বিতীয় মতটি হলো- এ আয়াতের মু’তা শব্দটি সাময়িক বিবাহ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। আর ইসলামের প্রথম সারির মুফাসসের বিশিষ্ট সাহাবী ইবনে আব্বাস, ইবনে মাসউদ এবং খ্যাতনামা কিছু তাবেয়ী এ মতের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন। অতঃপর তিনি আরও উল্লেখ করেছেন : এক্ষেত্রে দ্বিতীয় মতটি বাস্তবতার সাথে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ। কেননা শরিয়তের পরিভাষায় মু’তা ও ইসতিমতা শব্দ দু’টি সাময়িক বিবাহের প্রতি ইঙ্গিত করে। এছাড়া সম্ভোগ বা সহবাসের কারণেই দেন মোহর ওয়াজিব হয় না, বরং বিবাহের ক্ষেত্রে বিবাহের আকদ্ সম্পন্ন হবার পরপরই স্বামীর উপর স্ত্রীকে দেন মোহর দান ফরজ হয়ে যায়।

কুরতুবী স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন : সর্বসম্মত মতানুযায়ী এ আয়াতের অর্থ হচ্ছে সাময়িক বিবাহ যা ইসলামের প্রাথমিক যুগে প্রচলন ছিল। 

সুয়ুতী তাফসীরে দূররুল মানসুরে এবং আবু হাইয়ান, ইবনে কাসীর ও সা’লাবী স্ব স্ব তাফসীর গ্রন্থে অনুরূপ অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।

শিয়া ও সুন্নী উভয় মাযহাবের শীর্ষস্থানীয় আলেমবৃন্দ ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিশ্বাস করেন যে, রাসূলুল্লাহর (সা.) যুগে সাময়িক বিবাহের প্রচলন ছিল। কিন্তু সুন্নী মাযহাবের অধিকাংশ ফিকাহবিদগণ মন্তব্য করেছেন যে, এ বিবাহের বিধানটি পরবর্তিতে রহিত করা হযেছে। অবশ্য তা কখন রহিত হয়েছে সেটা নিয়ে প্রচুর মতভিন্নতা রয়েছে। বিশিষ্ট মনীষী নাভাবী শারহে সহীহ মুসলিম গ্রন্থে এগুলোর মধ্যে কয়েকটি মত উল্লেখ করেছেন :

(১)    কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন যে, খায়বার যুদ্ধের প্রথম দিকে সাময়িক বিবাহ হালাল ছিল। পরবর্তীতে তা হারাম করা হয়েছে।

(২)     শুধুমাত্র উমরাতুল কাযাতে তা হালাল ছিল।

(৩)     মক্কা বিজয়ের প্রথম দিকে বৈধ ছিল।

(৪)     তাবুকের যুদ্ধে (৯ম হিজরীতে) তা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।

(৫)    এ বিবাহ শুধুমাত্র আওতাস যুদ্ধে (৮ম হিজরীতে) বৈধ ছিল।

(৬)     বিদায় হজ্বের সময় (১০ম হিজরীতে) হালাল ঘোষণা করা হয়েছে।

মজার ব্যপার হচ্ছে এ সম্পর্কে বর্ণিত রেওয়ায়েতসমূহের মধ্যে প্রচুর তারতম্য ও পারস্পরিক বৈপরিত্য পরিলক্ষিত হয়েছে। বিশেষতঃ খায়বারের যুদ্ধের সময় তা হারাম হওয়া এবং বিদায় হজ্বের সময় (১০ম হিজরীতে) হারাম হওয়া সম্পর্কিত রেওয়ায়েতসমূহের মাঝে সম্পৃক্ততা খুঁজে বের করতে সুন্নী মাযহাবের ফিকাহবিদরা গলদঘর্ম হয়েছেন। এমনকি শেষাবধি তারা সুষ্ঠু কোন সমাধান খুজে বের করতে ব্যর্থ হয়েছেন। 

সবচেয়ে আশ্চর্যকর উক্তিটি সুন্নী মাযহাবের বিশিষ্ট মনীষী ইমাম শাফেয়ী করেছেন। তিনি বলেছেন:

لا أعلم شیئاً أحل الله ثمّ حرّمه ثمّ أحله ثمّ حرمه إلّا المتعة

"আমি এমন কোন বিষয়কে জানি না সেটাকে আল্লাহ একবার হালাল করেছেন, আবার হারাম করেছেন। অতঃপর সেটাকে হালাল ঘোষণা করেছেন এবং আবার হারাম করেছেন; এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেবল মু’তা বিবাহ।” 

অথচ ইবনে হাজার সুহাইলীর উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন যে, খায়বারের যুদ্ধে মু’তা বিবাহ হারাম হওয়া প্রসঙ্গে প্রথম সারির কোন ইতিহাসবেত্তা এবং হাদীসবেত্তা কিছুই বর্ণনা করেন নি।

(৭)     মু’তা বিবাহ রাসূলের (সা.) যুগে হালাল ছিল এবং হযরত উমরের খেলাফতকালে সেটাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে- এ সম্পর্কে বর্ণিত আরও একটি দলিল উপস্থাপন যথোপযুক্ত মনে করছি। যা সুন্নী মায়হাবের অন্যতম প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য হাদীসগ্রন্থ সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে : ইবনে আবি নাযরাহ বর্ণনা করেছেন : আমি জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারীর নিকটে বসে ছিলাম। তাকে বললাম : ইবনে আব্বাস ও ইবনে জুবাইর মু’তাতুন্নেসা (মু’তা বিবাহ) এবং হাজ্জুত্তামাত্তু (তামাত্তু হজ্ব; যা ওমরাহ ও ওয়াজিব হজ্বের মধ্যবর্তী সময়ে সম্পন্ন করা হয়) সম্পর্কে মতভেদ পোষণ করেন। এ ক্ষেত্রে আপনার মত কি? জবাবে সে বলল : রাসূলের (সা.) যুগে আমরা এ দু’টি বিধানই পালন করেছি ( দু’টি বিধানেরই প্রচলন ছিল )। কিন্তু উমরের খেলাফতকালে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ কারণে আমরা তা এড়িযে চলি।”

মুসলিম শরীফের ন্যায় প্রসিদ্ধতম হাদীসগ্রন্থে বর্ণিত এ সুস্পষ্ট হাদীসটি সত্ত্ব্ওে কি এটা বলা সম্ভব যে, রাসূলের (সা.) যুগে সাময়িক বিবাহ রহিত হয়েছে?

সর্বোত্তম সমাধান

এ ধরনের মতভিন্নতা ও বর্ণিত রেওয়ায়েতসমূহের মধ্যে পারস্পরিক বৈপরিত্য যে কোন বিচক্ষণ ব্যক্তিকে এ বিষয়ে গভীর অনুসন্ধানে বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করে। এ ক্ষেত্রে এমন কী ঘটনার অবতারণা ঘটেছে, যে কারণে এ বিষয়ে [সাময়িক বিবাহ রাসূলের (সা.) যুগে রহিত হওয়া প্রসঙ্গে] এত অধিক পরিমাণে পারস্পরিক বৈপরিত্যপূর্ণ রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে এবং প্রত্যেক হাদীস বিশারদ ও ফিকাহবিদ ভিন্ন ভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন?

এ ধরনের পারস্পরিক বৈপরিত্যপূর্ণ রেওয়ায়েতসমূহকে কী আদৌ সমন্বিত করা সম্ভব?

মূলত: এমন পারস্পরিক বৈপরিত্যপূর্ণ রেওয়ায়েতসমূহ এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত দেয় যে, এখানে একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করছে; যে কারণে একশ্রেণীর হাদীস জালকারীরা নিজেদের  মনগড়া রেওয়ায়েত জাল করে সেগুলোকে অসদুপয়ে অবলম্বনের মাধ্যমে সাহাবীদের নামে প্রচার করছে।

আর সে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যটি হচ্ছে এটাই যে, দ্বিতীয় খলিফার একটি অপরিণামদর্শী মন্তব্যের নেতিবাচক প্রভাবকে ধামাচাপা দেওয়া। তিনি বলেছেন: রাসূলুল্লাহর (সা.) যুগে দু’টি বিষয় হালাল ছিল। কিন্তু আমি তা হারাম ঘোষণা করছি। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে মু’তা বিবাহ।

তার এহেন মন্তব্য মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে; তা হল যদি কেউ ইসলামের একটি বিশেষ বিধানকে প্রকাশ্যে পরিবর্তনের ঘোষণা দিতে পারেন, তাহলে এ বিষয়টি শুধুমাত্র দ্বিতীয় খলিফার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে না, বরং অন্য যে কেউ এভাবে প্রকাশ্যে রাসূল (সা.) কর্তৃক ঘোষিত কোন বিধানের ক্ষেত্রে ইজতেহাদের ধৃষ্টতা দেখাতে পারে। ফলে এমতাবস্থায় ইসলামের চিরন্তন বিধানাবলী একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী ব্যক্তির ক্রীড়ানকে পরিণত হবে। আর সময়ের আবর্তে উক্ত বিধানাবলীর অক্ষুন্নতা ও অকাট্যতা হুমকির শিকার হবে।

অতএব উক্ত মন্তব্যের নেতিবাচক প্রভাবকে ধামাচাপা দিবার উদ্দেশ্য একশ্রেণীর ব্যক্তি সক্রিয় হয়ে পড়ে। তারা প্রচার করতে থাকে যে, এ বিধান দু’টি রাসূলের (সা.) যুগে রহিত হয়েছে। আর তাদের এহেন প্রচারের সপক্ষে মনগড়া রেওয়ায়েত জাল করার পর সেগুলো রাসূলের (সা.) কিছু সাহাবীর নাম ব্যবহার করে বর্ণনা করা হয়েছে। যেহেতু সেগুলোর কোনটিও সত্য ও বাস্তব ছিল না, সেহেতু তাতে অহরহ পারস্পরিক বৈপরিত্য ফুটে উঠেছে।

নতুবা এমনটি কিভাবে সম্ভব যে, একটি মাত্র বিষয়ে এত অধিক পারস্পরিক বৈপরিত্যপূর্ণ রেওয়ায়েত বর্ণিত হবে। এমনকি এগুলোর সমন্বিতকরণের প্রয়াসে একশ্রেণীর  ফিকাহবিদ এমন মন্তব্য করবেন যে, মু’তা বিবাহ এক সময় বৈধ ছিল পরে তা হারাম করা হয়েছে। আবার তা হালাল করা হয়েছে এবং পুনরায় হারাম ঘোষিত হয়েছে। তাহলে কী আল্লাহ প্রদত্ত বিধানাবলী খেলনাতুল্য?

সর্বোপরি রাসূলুল্লাহর (সা.) যুগে অনিবার্য প্রয়োজনের তাগিদেই সাময়িক বিবাহের বিধানকে জায়েয করা হয়েছিল। আর এ প্রয়োজনটি অন্যান্য যুগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরবাসে জীবনযাপনকারীদের জন্য তীব্রতরভাবে অনুভূত হচ্ছে। তবে কেন তা বৈধ হবে না?

তৎকালীন সময়ে এত অধিক পরিমাণে যৌন উদ্দীপক সরঞ্জামাদির সমাহার যেমন: নারী দেহের নগ্নতা প্রদর্শন, যৌন উত্তেজক ফিল্ম ও সিনেমা, টিভি, ভিসিপি, ইন্টারনেট, শত শত স্যাটেলাইট চ্যানেল এবং চরিত্র বিধ্বংসী প্রচার মাধ্যমসমূহের (যা বর্তমান যুবসমাজকে অক্টোপাসের মত গ্রাস করছে) কোন লেশমাত্র ছিল না।

মু’তা বিবাহ একটি অনিবার্য  প্রয়োজন মিটানোর মাধ্যম হিসেবে কোন বিশেষ যুগে সীমিত সময়ের জন্য বৈধ ঘোষিত হয়েছিল এবং অতঃপর তা চিরদিনের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছে। এমন দাবী কি আদৌ প্রহণযোগ্য?

এতদসত্ত্বেও আমরা যদি মনে করি যে, মুসলিম উম্মাহর অধিকাংশ ফিকাহবিদ মু’তা বিবাহকে হারাম গণ্য করেছেন। কিন্তু পাশাপাশি ফিকাহবিদদের একটি অংশ এ বিবাহকে জায়েয মনে করেন এবং এ বিষয়ে তাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। সুতরাং এমতাবস্থায় এ বিবাহকে যারা বৈধ মনে করেন তারা তাদের বিরোধিদেরকে ইসলামের বিধান অমান্যকারী হিসেবে অভিহিত করবেন, কিংবা যারা অবৈধ মনে করেন তারা তাদের বিরোধিদের উপর ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ করবে; এমনটি তো মোটেও সমীচীন নয়। যদি এমন মনগড়া অপবাদের ধারা অব্যাহত থাকে তাহলে তারা কিয়ামতের দিন আল্লাহর সম্মুখে কিভাবে জবাবদিহি করবে? কাজেই বলা যেতে পারে যে, ইজতিহাদগত দিক থেকে এ বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে।

প্রখ্যাত সুন্নী মুফাসসির ফাকরুদ্দীন রাজী (যিনি এ জাতীয় বিষয়ে প্রবল গোড়া মানসিকতা রাখেন) স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে মু’তা বিবাহের বিধান প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন:

ذهب السواد الأعظم من الأمّة إلی أنّها صارت منسوخة و قال السواد منهم أنّها بقیت کما کانت.

"অধিকাংশ মুসলমানরা বিশ্বাস পোষণ করেন যে, এ বিধানটি রহিত হয়েছে। কিন্তু মুসলমানদের মধ্যে একটি অংশ আকিদা পোষণ করেন যে, এ বিধানটির বৈধতা অক্ষুন্ন রয়েছে।”

কারণ অথচ পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে,

"আর রাসূল যা তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছে তা গ্রহণ কর এবং যা কিছু নিষেধ করে তা হতে বিরত থাক।”

রাসূলুল্লাহ (সা.) ব্যতিত আল্লাহর বিধানে বিন্দুমাত্র হস্তক্ষেপের কোন অধিকার অন্য কারও আছে কি?

রাসূলুল্লাহ (সা.) এমন করেছেন আর আমি এরূপ করছি- এহেন উক্তি করার অধিকার আদৌ কারও রয়েছে কি?

মহানবী (সা.) প্রকাশ্য ঘোষণার (যা পবিত্র কোরআনের আলোকে উৎসারিত) মোকাবেলায় কোনরূপ ইজতেহাদ করা কি জায়েয?

দ্বিতীয় খলিফা রাসূলুল্লাহর (সা.) প্রকাশ্য ঘোষণার বিপরীতে স্বতপ্রণোদিত হয়ে স্বীয় ইচ্ছানুযায়ী আইন প্রবর্তন করেছেন। প্রকৃতপক্ষে রাসূলুল্লাহর (সা.) প্রকাশ্য আদেশকে এমনভাবে উপেক্ষার ঘটনাটি সত্যিই বিস্ময়কর ও ন্যাক্কারজনক।

উপরন্তু প্রকাশ্য দলিল ও ঘোষণার মোকাবেলায় যদি কেউ এমন মনগড়া ইজতেহাদ করে, তাহলে অন্যরাও যে এরূপ পদক্ষেপ নিবে না তার কোন নিশ্চয়তা আছে কি? এক্ষেত্রে ইজতেহাদ কী শুধুমাত্র একজন বিশেষ ব্যক্তির মাঝে সীমাবদ্ধ ছিল? অন্যরা কী ইজদেহাদের অধিকারী ছিলেন না? এ বিষয়টি অতীব গুরুত্ব সম্পন্ন। কেননা প্রকাশ্য ঘোষণা ও দলিলের মোকাবেলায় যদি ইজতিহাদের দ্বার এভাবে অনিয়ন্ত্রিতভাবে উন্মোচিত হয় তাহলে আল্লাহর বিধানাবলী সুরক্ষিত থাকবে না। ইসলামের চিরন্তন বিধানাবলী তখন এক ভয়ানক বিশৃংখলা ও স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হবে। এক কথায় বলা যায় যে, ইসলামের বিধানাবলী তখন এক চরম বিপদসংকুল অবস্থায় উপনীত হবে।

এ পর্যায়ে আমরা সাময়িক বিবাহের অধ্যায়ের আলোচনার উপসংহারে সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই যে, কোনরূপ যাচাই-বাছাই ব্যতিরেকে কোন বিশেষ মাযহাবের অনুসারীদের প্রতি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অপবাদ আরোপ হতে সর্বোতভাবে বিরত থাকবেন। অনুগ্রহপূর্বক, নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে এ বিষয়টি আরও একবার পবিত্র কোরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে বিশ্লেষণ করুন। নিঃসন্দেহে আপনারা নিশ্চিত হতে পারবেন যে, এ বিবাহটি বিশেষ শর্তসাপেক্ষে মহান আল্লাহ প্রদত্ত শাশ্বত বিধান হিসেবে বহাল রয়েছে এবং তা অনেক সামাজিক সমস্যার সর্বোত্তম সমাধান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।# অনুবাদ: মোহাম্মাদ মিজানুর রহমান

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)