সূরা নাহল;(১১তম পর্ব)
সূরা নাহল; আয়াত ৪৮-৫২
সূরা নাহলের ৪৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন,
أَوَلَمْ يَرَوْا إِلَى مَا خَلَقَ اللَّهُ مِنْ شَيْءٍ يَتَفَيَّأُ ظِلَالُهُ عَنِ الْيَمِينِ وَالشَّمَائِلِ سُجَّدًا لِلَّهِ وَهُمْ دَاخِرُونَ
"তারা কি আল্লাহর সৃজিত বস্তু দেখে না, যার ছায়া আল্লাহর প্রতি বিনীতভাবে সিজদাবনত থেকে ডান ও বাম দিকে প্রসারিত হয়।" (১৬:৪৮)
এ পবিত্র আয়াতে মাটিতে ছড়িয়ে পড়া কোন বস্তুর ছায়া বা প্রতিবিম্বকে সিজদার সাথে তুলনা করা হয়েছে, এর মাধ্যমে বুঝানো হয়েছে যে, সকল বস্তু এমনকি কোন বস্তুর ছায়াও মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কুদরতের সামনে প্রণত। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ প্রকৃতিতে যে নিয়ম সাব্যস্ত করেছেন সব কিছুই সেই নিয়মের অধীনেই চলছে, এই নিয়ম ভঙ্গ করার শক্তি বা সামর্থ কারো নেই। কাজেই কোন বস্তুর ছায়া বা প্রতিবিম্বও প্রকৃতির নিয়মের অনুবর্তী।
প্রকৃতিতে বিদ্যমান সকল কিছুই আল্লাহর প্রতি প্রণত এবং সিজদাবনত, কাজেই সৃষ্টির সেরা মানুষ এই নিয়মের ব্যতিক্রমী হতে পারে না। বিচার-বুদ্ধির অধিকারী মানুষ যদি এই নিয়মের ব্যতিক্রমী হওয়ার চেষ্টা করে তাহলে তার ওপর নেমে আসে বিপর্যয়।
এই সূরার ৪৯ ও ৫০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
وَلِلَّهِ يَسْجُدُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ مِنْ دَابَّةٍ وَالْمَلَائِكَةُ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُونَ (49) يَخَافُونَ رَبَّهُمْ مِنْ فَوْقِهِمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
"আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে এবং প্রাণীকূল ও ফেরেশতাগণ সকলেই আল্লাহকে সিজদা করে, তারা অহংকার করে না।” (১৬:৪৯)
“তারা তাদের ওপর পরাক্রমশালী পালনকর্তাকে ভয় করে এবং তারা যা আদেশ পায়, তা পালন করে। " (১৬:৫০)
এই আয়াতে বলা হচ্ছে, শুধু যে পৃথিবীতে বিদ্যমান প্রাণীকূলই আল্লাহ তায়ালার অনুগত তা নয়,ফেরেশতার মত সৃষ্টিও আল্লাহর পূর্ণ অনুগত এবং তাঁর এবাদতে মশগুল। তারা কখনো অহংকার করে না এবং অবাধ্য হয় না। সকল সৃষ্টিই আল্লাহর সামনে সিজদাবনত, এই কথার ব্যাখ্যায় একদল মুফাসসির বলেছেন, সিজদাবনত হয়ে থাকার অর্থ প্রকৃতির নিয়মের অধীন হওয়া। আরেকদল মুফাসসির বলেছেন,সিজদার মর্মার্থ উপলদ্ধি করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনের অন্যস্থানে অবশ্য বলা হয়েছে, সিজদা এবং তাসবিহ'র মর্মার্থ উপলব্ধি করা তোমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
সূরা নাহলের ৫১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
وَقَالَ اللَّهُ لَا تَتَّخِذُوا إِلَهَيْنِ اثْنَيْنِ إِنَّمَا هُوَ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَإِيَّايَ فَارْهَبُونِ
"আল্লাহ বললেনঃ তোমরা দুই উপাস্য গ্রহণ কর না উপাস্য তো মাত্র একজনই। অতএব আমাকেই ভয় কর।" (১৬:৫১)
সৃষ্টি জগতের সব কিছু আল্লাহর নিয়মের অধীন, এ কথা বলার পর এই আয়াতে মানব জাতিকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে. তোমরা কেন আল্লাহর সাথে শরীক বা সাদৃশ্য সাব্যস্ত কর, তারই সৃষ্টিকে তার সমতুল্য নির্ধারণ কর? অথচ মহান আল্লাহই একমাত্র স্রষ্টা,তাঁর কোন অংশীদার নেই। সৃষ্টি জগতের কোন কিছুই উপাসনা পাওয়ার যোগ্য নয়।
এই আয়াত আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপন করাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এছাড়া এ আয়াতে এই শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে আল্লাহ ছাড়া কারো ভয় করাও শিরক। ঈমানদাররা কখনো আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করতে পারে না।
এই সূরার ৫২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
وَلَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَهُ الدِّينُ وَاصِبًا أَفَغَيْرَ اللَّهِ تَتَّقُونَ
“আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁরই এবং তাঁর আনুগত্য শাশ্বত কর্তব্য। তোমরা কি আল্লাহ ব্যতীত অপরকে ভয় করবে?"(১৬:৫২)
প্রকৃতিতে বিদ্যমান নিয়ম এবং মানুষের জীবনবিধান মহান আল্লাহরই প্রণীত। তার বেঁধে দেয়া নিয়মে প্রকৃতি চলছে আর তার দেয়া ঐশী বিধানই মানুষের একমাত্র জীবন বিধান। কাজেই মানুষের উচিত সত্যকে আঁকড়ে ধরা এবং মিথ্যাকে পরিত্যাগ করা।