আল হাসানাইন (আ.)

পবিত্র কুরআনের দৃষ্টিতে মানুষ-(৪র্থ পর্ব)

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

আধ্যাত্মিকতা ও আল্লাহরপ্রতি প্রেম

কুরআনের আলোয় আলোকিত মানুষ পবিত্র কুরআন ও মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইতের শিক্ষার অনুবর্তী হয়ে সঠিক ধারায় আধ্যাত্মিকতার অধিকারী হয় যাতে সত্যপ্রেম ও পুণ্যকর্মের সমন্বয় ঘটেছে। এ আধ্যাত্মিকতায় মানুষ তার জীবনের পরিক্রমায় ক্রমান্বয়ে আল্লাহ্ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান লাভ করে। এ জ্ঞান অর্জন কখনও থেমে থাকে না; বরং ধারণাগতভাবে যেমন এ জ্ঞান গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে, তেমনি আত্মনির্ভর জ্ঞানের (علم حضوری) মাধ্যমেও স্রষ্টার অস্তিত্বকে বাস্তবরূপে নিজের মধ্যে ও সৃষ্টিজগতে প্রত্যক্ষ করে। এভাবে স্রষ্টা পরিচিতির পরিধি বৃদ্ধির সাথে সাথে স্রষ্টার প্রতি ভালবাসার গভীরতা ও ব্যাপকতাও বৃদ্ধি পায়।

আল্লাহ্-পরিচিতি ও তাঁর প্রতি ভালবাসার কোন সীমা-পরিসীমা নেই। তাই এ দু’ক্ষেত্রে সকল সময় ও অবস্থায় গতিশীলতা, উন্নতি, আধিক্য ও ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত হয়। এ কারণেই মহান আল্লাহ্ বলেছেন :

 والذين آمنوا اشدّوا حبا لله

‘যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহকে ভালবাসার ক্ষেত্রে প্রকটতম।’ যেহেতু আল্লাহর প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস তাঁর (সম্পর্কে জ্ঞান) পরিচিতি ও ভালবাসা থেকে উৎসারিত, বিকশিত ও ফলবান হয় সেহেতু এ আয়াতে আধিক্যের কথা বলা হয়নি; বরং প্রকটতার কথা বলা হয়েছে এবং তার সঙ্গে ঈমান ও বিশ্বাসের সম্পর্কের বিষয় উল্লিখিত হয়েছে। এ আয়াত যদি সূরা মূল্ক-এর এ আয়াতের পাশে রাখা হয়,

 الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا  

‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবনকে যেন তিনি তোমাদের পরীক্ষা করেন তোমাদের মধ্যে কে কর্মে উত্তম’, তবে দেখা যাবে এখানেও কর্মের আধিক্যের কথা বলা হয়নি, কর্মের অধিকতর উত্তম হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে অর্থাৎ আমল ও কর্মের গুণগত মানের কথা বলা হয়েছে। অন্যভাবে বলা যায়, এ আয়াত দু’টি থেকে বোঝা যায়, একদিকে ঈমানের ক্ষেত্রে বিশ্বাসীদের মধ্যে মর্যাদা ও পর্যায়গত পার্থক্য রয়েছে, অন্যদিকে বিশ্বাস ও কর্মের সঙ্গে বিশ্বাসী ব্যক্তির সত্তা ও অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে এ অর্থে যে, ঈমানের তীব্রতা ও গভীরতা বৃদ্ধির সাথে সাথে বিশ্বাসী ব্যক্তির অস্তিত্বগত উৎকর্ষের বৃদ্ধি ঘটে। ফলে একই কর্ম উচ্চতর পর্যায়ের ঈমানের ব্যক্তি দ্বারা সংঘটিত হওয়া তার থেকে নিম্ন পর্যায়ের ঈমানের ব্যক্তি দ্বারা সংঘটিত হওয়া অপেক্ষা গুণগতভাবে অধিক মর্যাদার অধিকারী। তাই পবিত্র কুরআনে এ দু’পর্যায়ের মধ্যে পার্থক্য সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। নিম্নতর পর্যায়ের বিশ্বাসীদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে-

 لَّهُمْ دَرَجَاتٌ عِندَ رَبِّهِمْ  অর্থাৎ তাদের প্রতিপালকের নিকট তাদের জন্য মর্যাদাসমূহ রয়েছে, অথচ উচ্চতর পর্যায়ের বিশ্বাসীদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে-

 هُمْ دَرَجَاتٌ عِندَ اللَّـهِ ‘তারা স্বয়ং আল্লাহরনিকট মর্যাদাবান।‘ প্রথম ক্ষেত্রে মর্যাদার বিষয়টি তাদের অস্তিত্বের অংশে পরিণত হয়নি, কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে মর্যাদার বিষয়টি তাদের সত্তাগত বৈশিষ্ট্যে পরিণত হয়েছে অর্থাৎ তারা নিজেরাই মর্যাদাবান অস্তিত্ব।

সুতরাং আমরা এ বিষয় থেকে বুঝতে পারি যে, সঠিক ধারার আধ্যাত্মিকতা আল্লাহ্- পরিচিতির ক্ষেত্রে গভীরতা দান ও এর গতিকে ত্বরান্বিত করা, ঈমানের পূর্ণতার, আল্লাহর প্রতি ভালবাসাকে দৃঢ়তা দান এবং সৎ কর্মের ক্ষেত্রে নিষ্ঠা সৃষ্টিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে! প্রকৃত আধ্যাত্মিকতা ঐশী পথের পথিককে পূর্ণতা অর্জনে চরম উদ্দীপনা দান করে এবং তাকে আল্লাহর দিকে যাত্রা ও অস্তিত্বগতভাবে তার নৈকট্য লাভের ক্ষেত্রে পথনির্দেশনা দান করে। এমনকি ব্যবহারিকভাবেও তাকে আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের উপযুক্ত করে গড়ে তোলে। এক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল ও তাঁর মনোনীত স্থলাভিষিক্ত নিষ্পাপ ইমামগণের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মানুষ আল্লাহর রাসূল ও তাঁর মনোনীত স্থলাভিষিক্ত নিষ্পাপ ইমামগণের পরিচিতি লাভ, তাঁদের প্রতি ভালবাসা ও তাঁদের নির্দেশিত পথে চলার মাধ্যমে ঐশী মানবীয় প্রকৃতির (ফিতরাতের) বিকাশ ঘটায় এবং ঐশী প্রতিনিধিত্বের মর্যাদা লাভ করে। আল্লাহর ভালবাসার পাত্রে পরিণত হতে পবিত্র কুরআন এ ধারাকেই গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছে। কুরআনের ভাষায় :

قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّـهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّـهُ وَيَغْفِرْ‌ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ

‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার (আল্লাহর নবী) অনুসরণ কর, আল্লাহ্ও তোমাদের ভালবাসবেন এবং তিনি তোমাদের সকল গুনাহ (অপরাধ ও ত্রুটি) ক্ষমা করবেন...।’

তাই আল্লাহর নবীকে অনুসরণের মাধ্যমেই দ্বিপাক্ষিক এ ভালবাসা বাস্তবরূপ লাভ করে। মহানবী (সা.)-এর ওফাতের মাধ্যমে আল্লাহ্ ও তাঁর বান্দাদের মধ্যে ভালবাসার সম্পর্কটি বিচ্ছিন্ন হয় না; বরং মহানবী (সা.)-এর স্থলাভিষিক্ত হিসাবে যে সকল পূর্ণ মানব ও নিষ্পাপ ব্যক্তি মনোনীত হন তাঁদের সচেতন ও উদ্দীপ্ত অনুসরণ ও ভালবাসার মাধ্যমে তা অব্যাহত থাকে। আল্লাহরসান্নিধ্য ও সাক্ষাৎ লাভের একমাত্র পথ যে এটিই তা আল্লাহ্ এ আয়াতে বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর (এই) রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য হতে নির্দেশের অধিকর্তাদের (উলিল আমরের)।’ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের পাশাপাশি এ নির্দেশের অধিকর্তাদের আনুগত্যের অপরিহার্যতা থেকে (তাঁদের নিষ্পাপত্বের বিষয়টি প্রমাণিত হয় এবং) বোঝা যায়, এটিই একমাত্র সিরাতে মুস্তাকিম অর্থাৎ সঠিক সরল পথ।

অন্যদিকে কুরআনের শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ আল্লাহ্, রাসূল ও তাঁর স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধিদের বন্ধু ও অনুসারীদের প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন এবং তাঁদের শত্রুদের সঙ্গে সম্পর্কহীন ও তাদের বিরুদ্ধে কঠোর যা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি সোপান। মহান আল্লাহ্ রাসূল (সা.)-এর সাথীদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলেছেন : ‘তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের অধিকারী’ এবং মুমিনদের সম্পর্কে বলেছেন : ‘তুমি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী কোন দল পাবে না যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচারীদের ভালবাসবে যদিও তারা তাদের পিতৃপুরুষ অথবা সন্তান-সন্ততি অথবা তাদের ভ্রাতৃবৃন্দ অথবা তাদের গোত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়। এরাই সে সকল লোক, তিনি (আল্লাহ্) যাদের অন্তরে ঈমান অঙ্কিত করে দিয়েছেন।’

সুতরাং কুরআনের কাঙ্ক্ষিত মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তার অধিকারী, তার পদক্ষেপসমূহ যৌক্তিক, তার উদ্দীপনার নিয়ামক হল ভালবাসা এবং তার প্রতিক্রিয়াসমূহ সুপরিকল্পিত রীতিবদ্ধ। সে তার জীবনে যে মৌলনীতির অনুসরণ করে তা বস্তুগত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় না অর্থাৎ তার জীবনের মূল লক্ষ্য জৈবিক ও প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ নয়; বরং সে তার সত্তা ও কর্মে পূর্ণতা সাধনের উদ্দেশ্যে নিজেকে মহান আল্লাহ্, তাঁর রাসূল ও মনোনীত ব্যক্তিদের অভিভাবকত্বে সোপর্দ করে। সে সর্বাবস্থায় তার চিন্তা, কর্ম এবং বিশ্ব ও সমাজের কর্মকাণ্ডের মোকাবিলায় স্রষ্টার নিকট জবাবদিহিতার বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। ফলে সকল ক্ষেত্রে নিজের চিন্তা ও পদক্ষেপের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখে যাতে কখনই তার মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত না হয়ে পড়ে। একদিকে সে স্রষ্টার উপাসনার দায়িত্ব পরম ভালবাসা দিয়ে পালন করে, অন্যদিকে স্রষ্টার ভালবাসার দাবিতে সৃষ্টির প্রতিও ভালবাসা পোষণ করে। তাই সে সৃষ্টির সেবায় নিজেকে রত করে, সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালনকে নিজ ব্রত হিসাবে গ্রহণ করে, বিশেষত মুসলমানদের সার্বিক উন্নতির কর্মকাণ্ডে উদ্দীপ্ত ভূমিকা পালন করে। এভাবে সে কুরআনী দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রবণতার আলোকে মানুষকে সত্যের দিকে পরিচালিত করার মাধ্যমে আদর্শ ঐশী সমাজ গঠনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়। এমনকি এক্ষেত্রে সে সম্পদ, জীবন ও সম্মানকে আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করে। কুরআনের আলোয় আলোকিত মানুষ এ শিক্ষা লাভ করেছে যে, আল্লাহর প্রতি ভালবাসার অন্যতম প্রকাশ হল তাঁর সৃষ্টির প্রতি ভালবাসা। এ ভালবাসার দাবি হল সমাজের বস্তুগত ও নৈতিক কল্যাণ ও উন্নতির জন্য সে নিজেকে কষ্টে ফেলবে। যেহেতু সকল সমাজেই এমন একদল লোক রয়েছে যারা ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধির উদ্দেশ্যে অন্যদেরকে নিজেদের সেবাদাসে পরিণত করে এবং তাদের স্বাধীনতা ও অধিকার হরণ করে তাদের বৈষয়িক ও নৈতিক উন্নতির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সেহেতু কুরআনের শিক্ষায় প্রশিক্ষিত মানুষ স্বাধীনতা, পূর্ণতা, ন্যায়পরায়ণতা ও সৌভাগ্যের শত্রু এ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে রত হয় এবং সকল অবস্থায় এ পথে দৃঢ় থাকে। এমন ব্যক্তির পুরস্কার সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ বলেন : ‘নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক হলেন আল্লাহ্, অতঃপর তারা দৃঢ়তার সাথে অবিচল থাকে,  তাদের ওপর ফেরেশতারা অবতীর্ণ হয় (এবং বলে), তোমরা ভয় কর না এবং দুঃখিত হয়ো না এবং সেই বেহেশতের সুসংবাদ গ্রহণ কর যার প্রতিশ্রুতি তোমাদের দেওয়া হচ্ছে।

জ্ঞানপিপাসা ও জ্ঞানের বৃদ্ধি

কুরআনের আদর্শ মানুষ এমনভাবে প্রশিক্ষিত হয়েছে যে, সে জ্ঞানের ক্ষেত্রে পূর্ণতার দিকে যাত্রাশীল। সে তার শৈশব থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জ্ঞানার্জন ও জ্ঞান বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় রত। এক্ষেত্রে তার উন্নতি ও সাফল্য তাকে অন্যদের ঈর্ষার পাত্র করে। তাদের প্রতিটি দিন পূর্বের দিন হতে উত্তম এবং সর্বদা সে সামনের দিকে অগ্রসরমান। কোন কিছুই তাকে পশ্চাদমুখী ও স্থবির করে না। ফলে সে কখনই ক্ষতিগ্রস্ত সত্তা নয়; বরং গতিশীল ও অর্জনকারী এক সত্তা। যে মানুষ কুরআনের আলোয় আলোকিত হতে চায় তার পক্ষে সমীচীন নয় যে, সে অজ্ঞতার অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকবে এবং জ্ঞানের কাফেলা থেকে পিছিয়ে পড়বে; বরং এমন মানুষ জ্ঞানকে মূর্খতার ওপর, অমুখাপেক্ষিতাকে মুখাপেক্ষিতার ওপর এবং অর্জনকে বঞ্চনার ওপর প্রাধান্য দেবে এবং জ্ঞানের ক্ষেত্রে পূর্ণতাকে নিজের লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করবে। সে জানে জ্ঞানের কোন্ শীর্ষ চূড়াগুলো অবিজিত এবং কোন্ শাখাগুলো অজানা রয়েছে। সে আরও জানে, জ্ঞানের কোন্ দিকগুলো অধিক বিস্ময়কর এবং সৃষ্টিজগতের কোন্ অস্তিত্বের মধ্যে অসীম পর্যন্ত জ্ঞানের ধারা অব্যাহত রয়েছে- যার ধাপগুলো একের পর এক উত্তরণের মাধ্যমে সেসবের রহস্যগুলো উন্মোচন করতে হবে। সে এ রহস্যের দ্বারসমূহ উন্মোচনের মাধ্যমে সৃষ্টির বিশালতা ও স্রষ্টার অসীমতার গভীরতর ধারণায় পৌঁছায়। কুরআনে বর্ণিত আদর্শ মানুষ এ বিষয়টি উপলব্ধি করেছে যে, জ্ঞানই স্রষ্টা ও সৃষ্টির নিকট মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড। তবে সেই জ্ঞানই সঠিক ও মানুষকে মর্যাদা দান করে যে জ্ঞান কল্যাণকর এবং মানুষকে সৎকর্মে উদ্দীপ্ত ও প্রবৃত্ত করে। মহান আল্লাহ্ বলেন : ‘যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ্ তাদের মর্যাদায় উন্নীত করেছেন।’

কুরআনের দৃষ্টিতে প্রকৃত মানুষ উত্তমরূপে জানে যে, বুদ্ধিবৃত্তি ও ইন্দ্রিয় জ্ঞান অর্জনের একমাত্র মাধ্যম নয়; বরং পরিশুদ্ধ অন্তঃকরণও জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম। তাই সে এ  দুইয়ের মাধ্যমে তার প্রত্যক্ষ ও অর্জিত- উভয় জ্ঞানের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে। এরূপ মানুষ চিন্তাশক্তি ও বুদ্ধিবৃত্তির ব্যবহারের মাধ্যমে যেমন আনুষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অর্জনযোগ্য জ্ঞান রপ্ত করে, তেমনি আত্মসংযম ও আত্মিক পরিশুদ্ধতা অর্জনের মাধ্যমে দিব্য ও প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভ করে। শব্দ ও বাক্য থেকে চিন্তা ও বুদ্ধিবৃত্তির দ্বারা যেমন এর অন্তর্নিহিত অর্থে পৌঁছায়, তেমনি আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে সকল বস্তু ও অস্তিত্বের বাস্তব রূপ অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা দর্শন করে। একদিকে সে বাহ্যিক ধারণার জ্ঞানকে অবধারণ (شهود) করে, অপরদিকে সকল কিছুর অভ্যন্তরীণ প্রকৃত অবস্থা তার দিব্যদৃষ্টিতে ধরা দেয়। অর্থাৎ স্বয়ং আল্লাহ্ প্রত্যক্ষভাবে তাকে শিক্ষা দান করেন এবং সে সত্য ও অসত্যকে চেনা ও বোঝার ক্ষমতা লাভ করে। মহান আল্লাহ্ বলেন : ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আল্লাহ্ তোমাদের শিক্ষা দেবেন।’ তিনি অন্যত্র বলেছেন : ‘...যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে তিনি তোমাদের (সত্য-মিথ্যার) প্রভেদকারী উপকরণ দান করবেন...।’১০

এমন ব্যক্তি স্রষ্টার প্রতি নিবেদিত এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় রত। সে যেমন তার জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি সৎকর্মকে তার মুক্তি ও পূর্ণতার পাথেয় করেছে। মহান আল্লাহ্ বলেছেন : ‘তবে যে ব্যক্তি রাত্রির বিভিন্ন প্রহরে সিজদা করে ও দণ্ডায়মান হয়ে পরম আনুগত্য প্রকাশ করে এবং পরকালকে ভয় করে এ অবস্থায় যে, সে তার প্রতিপালকের রহমতের আশা করে, সে কি তার ন্যায় (যে তার প্রতিপালকের অবাধ্য)? তুমি বল : যারা জানে এবং যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে? বস্তুত কেবল বোধসম্পন্ন লোকেরাই উপদেশ (ও শিক্ষা) গ্রহণ করে।’১১

আলোচ্য আয়াতের প্রথম ও শেষ অংশ আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক ও বাতেনী জ্ঞান অর্জন ও উৎকর্ষ লাভের প্রতি ইঙ্গিত করছে এবং মধ্যবর্তী অংশ সার্বিকভাবে সকল প্রকার (কল্যাণমুখী) জ্ঞান যে মানুষের জন্য মর্যাদা বয়ে আনে, তার প্রতি ইশারা করছে। এ জ্ঞানের মধ্যে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে বিদ্যমান সকল কিছুর জ্ঞান অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কুরআনের আয়াতসমূহে এ সকল প্রকার জ্ঞানের প্রতিই ইশারা করা হয়েছে। মহাকাশ, প্রকৃতিবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, ইতিহাস, পদার্থবিদ্যা, অর্থনীতি, বাণিজ্যনীতিসহ বস্তুগত ও পার্থিব কল্যাণের সহায়ক সকল জ্ঞানকে যেমন শামিল করে, তেমনি আধ্যাত্মিক এবং বস্তুর ঊর্ধ্বে বিশ্বজগতের পরিচালনা ব্যবস্থা সম্পর্কিত জ্ঞানকেও অন্তর্ভুক্ত করে। কুরআনের শিক্ষায় প্রশিক্ষিত মানুষ ইসলামী সমাজকে দৃঢ় ও শক্তিশালী করার জন্য সমাজের প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী জ্ঞান অন্বেষণে রত হয় এবং এ সমাজের জন্য সম্মানজনক ও মর্যাদাকর অবস্থান তৈরির ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালনের চেষ্টা করে। সে সবসময় সতর্ক থাকে যাতে সমাজের বস্তুগত উন্নয়ন এর অধিবাসীদের ভোগবাদিতার দিকে পরিচালিত না করে। একই সাথে সে শত্রুর বিবিধ আগ্রাসন (সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামরিক) থেকে এ সমাজকে রক্ষার চেষ্টায় ব্রত থাকে। সুতরাং কুরআনভিত্তিক সমাজ জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-প্রযুক্তি, সংস্কৃতি কোন ক্ষেত্রেই পশ্চাদপদ ও পরনির্ভর থাকতে পারে না। কখনই তা সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তির সামনে নতজানু হয় না এবং তাদের তিরস্কারকে গ্রাহ্য করে না।

কুরআনের আলোয় আলোকিত মানুষ জ্ঞানের প্রসার ও উন্নয়নের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়। জ্ঞানগত বিষয় ও আলোচনাই তার জীবনের লক্ষণীয় বিষয়। এটি সেই জ্ঞান যা অর্জন করাকে মহানবী (সা.) সকল মুসলিম নর ও নারীর জন্য ফরয (আবশ্যক) বলেছেন। তিনি জ্ঞানের ক্ষেত্রে সাধনাকারীদের আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত, এ পথে প্রচেষ্টারত থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণকারীকে শহীদ, পরিশুদ্ধ জ্ঞানী ব্যক্তিদের আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর নিকট সুপারিশকারী এবং তাঁদের কলমের কালিকে শহীদের রক্তের চেয়েও পবিত্র বলেছেন। এরূপ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চিন্তাগত ভিত্তির ওপর বেড়ে ওঠা মানুষ মুহূর্তের জন্যও জ্ঞান অন্বেষণ থেকে বিরত থাকতে পারে না।

সুতরাং কুরআনের আদর্শ মানুষ জ্ঞানকে আল্লাহর ইবাদাত, ঈমান ও ধার্মিকতার সঙ্গী এবং পরিপূরক হিসেবে দেখে; তার জ্ঞান তাকে বিশ্বাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে না। তাই তার মধ্যে জ্ঞান ও আত্মসংযম, চিন্তা ও আত্মিক পরিশুদ্ধি, ঐশী নির্দেশের প্রতি আত্মসমর্পণ ও বুদ্ধিবৃত্তিকে পূর্ণরূপে ব্যবহার- এ সবের সমন্বয় ঘটেছে। কুরআনই একদিকে তাকে জ্ঞানের দিকে ধাবিত করেছে এবং কুসংস্কার, গোঁড়ামি, অন্ধবিশ্বাস, অজ্ঞতা ও চিন্তাগত বিচ্যুতি থেকে মুক্তি লাভের পথ দেখিয়েছে, অন্যদিকে তাকে ধর্মবিরোধিতা থেকে মুক্তি দানের মাধ্যমে নৈতিক অধঃপতন, বিচ্যুতি, অমানবিক আচরণ, হিংস্রতা, সহিংসতা, শোষণ, অন্যায়-অবিচার, স্বার্থপরতা, সংকীর্ণতা ও বিদ্বেষ থেকে দূরে রেখেছে। কুরআনের আলোয় আলোকিত মানুষ কখনই উগ্র, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও জ্ঞানশূন্য হতে পারে না। কারণ, কুরআন জ্ঞান, আধ্যাত্মিকতা, ধার্মিকতা, খোদাপ্রেম, মানবপ্রেম, খোদা উপাসনা, চিন্তা ও সার্বিক উন্নয়ন, স্বাধীনতা (প্রবৃত্তির কামনা ও বহিঃশক্তির আগ্রাসন থেকে মুক্তি), বুদ্ধিবৃত্তি, সত্যমুখিতা, ন্যায়পরায়ণতা, আত্মিক পরিশুদ্ধিসহ মানুষের সৌভাগ্য ও পূর্ণতার জন্য প্রয়োজনীয় সকল বিষয়কে সমন্বিত করেছে। তাই কুরআনের শিক্ষায় প্রশিক্ষিত মানুষ পঞ্চ ইন্দ্রিয় ও অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান ছাড়াও বুদ্ধিবৃত্তিক ও যৌক্তিক জ্ঞান এবং আধ্যাত্মিক ও অন্তর্দৃষ্টিলব্ধ দিব্যজ্ঞানকে নিজের মধ্যে একত্র করেছে। সে শুধু পথের সন্ধানই পায়নি; বরং গন্তব্যের দিকে যথার্থভাবে এগিয়ে চলেছে। আর এ কাজ তার জন্য তখনই সম্ভবপর হয়েছে যখন সে ঐশী পথ প্রদর্শকদের নির্দেশনা অনুযায়ী নিজেকে পরিচালিত করেছে এবং নিজেকে আল্লাহর অনুগত বান্দা হিসেবে সমর্পণ করেছে। এরূপ মানুষের অস্তিত্বের সকল দিক পরস্পর সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং তার ঐশী সহজাত প্রবৃত্তির সাথে সংগতিশীল। যেহেতু কুরআনের ‘মানব-পরিচিতি’ সার্বিক ও পূর্ণ হিসেবে অনুপম ও অদ্বিতীয় এবং যুক্তির ভিত্তিতে সুদৃঢ়, সেহেতু কুরআনের আলোয় আলোকিত মানুষও আত্মগঠন, পূর্ণতা ও সার্বিকতার বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। সে তার বিশ্বদৃষ্টি, জীবনাদর্শ ও নীতিমালার মানবিক ও বিশ্বজনীনতার বৈশিষ্ট্যটি বিশ্বজগতের স্রষ্টার নিকট থেকে লাভ করেছে। তাই তার প্রবণতা সর্বদা খোদামুখী। এটি সেই সত্তার নিকট থেকে গৃহীত যিনি সকল সৌন্দর্যের ধারক। তাই এ পথের পথিকের সমগ্র জীবন আনন্দ ও সৌভাগ্য এবং প্রশান্তি ও স্রষ্টার সান্নিধ্যের পবিত্র অনুভূতিতে পূর্ণ।

সুতরাং কুরআনে বর্ণিত আদর্শ মানুষ জ্ঞান, আধ্যাত্মিকতা, ধর্মীয় বিধি-বিধান- সকল দিকে স্রষ্টার ঐশী নিদর্শনের নমুনা। সে একই সাথে বুদ্ধিমান, বোধশক্তিসম্পন্ন, জ্ঞানী, ধৈর্যশীল, দানশীল, মর্যাদাবান, সৃষ্টিশীল, শৈল্পিক, পবিত্র, নীতিবান, খোদাপ্রেমিক, দৃঢ়তার অধিকারী, সচেতন, গতিশীল, উদার, কৃতজ্ঞ, দায়িত্ব সচেতন, কর্তব্যপরায়ণ, আল্লাহ্ ও তাঁর সৃষ্টির প্রতি নিবেদিত ও পূর্ণ। আল্লাহরইবাদাত ও দাসত্বই তার পূর্ণতার সোপান। তার ব্যক্তিত্বের নিদর্শন হল তার জ্ঞান ও কর্ম- সকল কিছু খোদায়ী কর্তৃত্বের ছায়ায় বিকশিত। তার চিন্তা ও স্মরণ, বুদ্ধিবৃত্তি ও অন্তঃকরণ আল্লাহ্মুখিতায় একীভূত হয়েছে। তাই তার সকল প্রবণতা নিষ্পাপ, তার সকল চিন্তা পবিত্র ও আলোকিত, তার উপস্থিতি অন্যায়কে করে বিদূরিত, সত্যকে করে উদ্ভাসিত, বিবেকসমূহকে করে জাগ্রত, আর তার হৃদয় প্রশান্ত। এ কারণে তার সংস্পর্শ অন্যকে আলোকিত করে, তার প্রচেষ্টা সমাজকে পরিশুদ্ধ ও পূর্ণতার দিকে ধাবিত করে, তার নির্দেশনা জাতিকে পথ দেখায়। পবিত্র কুরআন এমন আদর্শ মানুষই গঠন করতে চায়।

উপসংহার

কুরআনের এ মানব-পরিচিতি থেকে আমরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছাই যে, মানুষ দৈহিক ও আত্মিক- উভয় দিক থেকে সৃষ্টির সেরা ও অনুপম বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। মানুষের এ বিশেষত্বের মূলে রয়েছে তার ঐশী নির্বস্তুক সত্তা অর্থাৎ তার আত্মা। এ আত্মাই তার খোদামুখী প্রবণতাকে (ফিতরাতাল্লাহ্) ধারণ করেছে। আর তাই অস্তিত্বগতভাবে কুরআনী চিন্তাধারায় মানুষকে খোদাকা চিন্তাশীল প্রাণী বলে সংজ্ঞায়িত করা যায়- যার সত্তা আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভের আশায় প্রচেষ্টায় রত। তার অস্তিত্বের শুরু আল্লাহর নিকট থেকে আত্মা লাভের মাধ্যমে এবং সে সত্তাগতভাবে তাঁর দিকেই যাত্রাশীল। সুতরাং মানুষের উচিত তার খোদামুখী প্রবণতার আহবানে সাড়া দিয়ে নিজেকে খোদায়ী গুণে গুণান্বিত করা। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাকে স্বীয় পরিচয় ও মর্যাদার বৈশিষ্ট্য হস্তগত করতে হবে। সে তার নিজের প্রকৃত পরিচয় লাভের মাধ্যমে তার স্রষ্টার পরিচয়ও লাভ করবে। এ পরিচয় লাভ ওহী ও কুরআনের সাহায্য ব্যতীত কখনই সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআন মানুষের সামনে তার পরিচয় তুলে ধরা ছাড়াও তার উদ্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার পথও তাকে দেখিয়ে দিয়েছে। কুরআনের আলোয় আলোকিত মানুষের মধ্যে যে বৈশিষ্ট্যগুলো রয়েছে তা হল ধর্মীয় বুদ্ধিবৃত্তি, জ্ঞান ও আত্মশুদ্ধি, পবিত্র জীবন, আধ্যাত্মিকতা ও খোদাপ্রেম, জীবনের সকল দিক ও বিভাগের মধ্যে সংগতি ও ভারসাম্য, কর্তব্যজ্ঞান ও কর্তব্যপরায়ণতা, ইবাদাত ও দাসত্ব, সার্বক্ষণিক ও সর্বজনীন পবিত্রতা, চিন্তার সকল দিকে সঠিক দিক নির্দেশনা, আবেগ ও সহানুভূতি, মানবপ্রেম ও মানবসেবা, জ্ঞানমুখিতা ও জ্ঞানপিপাসা, দৈহিক ও আত্মিক উভয় চাহিদার প্রতি প্রয়োজনীয় সাড়া দান, ব্যক্তিগত ও সামাজিক উভয় দিকের প্রতি যথাযথ দৃষ্টি রাখা ইত্যাদি। কুরআনী মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে স্থান ও কালকে নিজের বশীভূত করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারে। সে তার ঈমান ও সৎকর্মের ছায়ায় ঊর্ধ্বমুখে যাত্রা করে দৃশ্য ও অদৃশ্য, বস্তুগত ও অবস্তুগত উভয় জগতের ওপর নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে। এ অনন্য বৈশিষ্ট্য মহান আল্লাহ্ কেবল মানুষকেই দান করেছেন। এ কারণে আল্লাহ্ তাঁর সমগ্র সৃষ্টিকে মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং মানুষকে নিজের জন্য সৃষ্টি করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন। এ কারণে কুরআনের আলোয় আলোকিত মানুষ আল্লাহর প্রেরিত পূর্ণ মানবদের নিজের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছে যাতে তাদের আনুগত্য ও নির্দেশনা অনুসরণের মাধ্যমে নিজের পরম আকাঙ্ক্ষিত সত্তার সাক্ষাৎ ও সান্নিধ্য লাভ করতে সক্ষম হয়। মানুষ তার সত্তাগত বৈশিষ্ট্যের বিকাশের মাধ্যমেই কেবল স্রষ্টার সৌন্দর্য ও শক্তিমত্তার সকল বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এবং তাঁর সুন্দরতম নামসমূহের প্রকাশস্থল হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। স্রষ্টার মানুষ সৃষ্টির সার্থকতা এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে। (সমাপ্ত) # 

অনুবাদ : এ.কে.এম. আনোয়ারুল কবীর

তথ্যসূত্র

১. সূরা আনফাল : ৪

২. সূরা আলে ইমরান : ১৬৩

৩. আল্লাহর নৈকট্যের বিষয়টি বস্তুগত নৈকট্যের মত কোন বিষয় নয়, এমনকি এটি মর্যাদা লাভের ফলে শুধুই পুরস্কার প্রাপ্তির মত কোন বিষয়ও নয়; বরং এটি অস্তিত্বের যে অবিচ্ছিন্ন অসীম ধারা স্রষ্টা থেকে নগণ্যতম সৃষ্টি পর্যন্ত বিদ্যমান সে ধারারই পূর্ণতাজনিত ঊর্ধ্ব যাত্রা যাতে মানুষ অস্তিত্বগতভাবে (ফেরেশতাদের হতেও) উচ্চতর অস্তিত্বে পরিণত হয়।

৪. সূরা আলে ইমরান : ৩১

৫. সূরা ফাত্হ : ২৯

৬. সূরা মুজাদালাহ : ২২

৭. হামীম সিজদা : ৩০

৮. সূরা মুজাদালাহ : ১১

৯. সূরা বাকারা : ২৮২

১০. সূরা আনফাল : ২৯

১১. সূরা যুমার : ৯

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)