সূরা নাহল;(১৫তম পর্ব)
সূরা নাহল; আয়াত ৬৬-৬৯
সূরা নাহলের ৬৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
وَإِنَّ لَكُمْ فِي الْأَنْعَامِ لَعِبْرَةً نُسْقِيكُمْ مِمَّا فِي بُطُونِهِ مِنْ بَيْنِ فَرْثٍ وَدَمٍ لَبَنًا خَالِصًا سَائِغًا لِلشَّارِبِينَ
“অবশ্যই পশুর মধ্যে তোমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। তাদের উদরস্থিত জিনিস হতে গোবর এবং রক্ত হতে নিঃসৃত পরিচ্ছন্ন দুগ্ধ আমি তোমাদেরকে পান করাই; যা পানকারীদের জন্য বিশুদ্ধ ও সুস্বাদু।” (১৬:৬৬)
বৃষ্টির পানি যে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বড় নেয়ামত তা এর আগে বলা হয়েছে। এ আয়াতে মানুষের প্রতি আল্লাহ তায়ালার আরেকটি বড় নেয়ামত অর্থাৎ দুধের কথা বলা হয়েছে।
পানির অপর নাম হচ্ছে জীবন। আল্লাহ তায়ালা মেঘমালা থেকে বৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের জন্য পানির ব্যবস্থা করেছেন,তেমনি পশুর হজম হওয়া খাবার ও রক্ত থেকে মানুষের জন্য উৎকৃষ্ট খাদ্য দুধের ব্যবস্থা করেছেন। আল্লাহর কি কুদরত! এই দুধে পশু খাদ্য বা পশুর রক্তের কোন রঙ বা গন্ধ পর্যন্ত নেই। গৃহপালিত পশু প্রকৃতিতে ছড়িয়ে থাকা সবুজ ঘাস ও তরুলতা খাবার হিসেবে গ্রহণ করে মানুষকে সাদা ও বিশুদ্ধ দুধ সরবরাহ করছে। এতে অবশ্যই মানুষের চিন্তার খোরাক রয়েছে।
দুধের উদাহরণ উপস্থাপনের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর কুদরত ও অসীম ক্ষমতার ছোট্ট একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরার পর ৬৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
وَمِنْ ثَمَرَاتِ النَّخِيلِ وَالْأَعْنَابِ تَتَّخِذُونَ مِنْهُ سَكَرًا وَرِزْقًا حَسَنًا إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَةً لِقَوْمٍ يَعْقِلُونَ
“খেজুর বৃক্ষ ও আঙ্গুর হতে তোমরা উত্তেজক পানীয় এবং উত্তম খাদ্য লাভ করে থাক। এতে অবশ্যই বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে।” (১৬:৬৭)
দুধ এবং পানির মত নেয়ামতের বর্ণনা দেয়ার পর এই আয়াতে ফল-মূল থেকে নিঃসরিত পানীয় সম্পর্কে বলা হয়েছে। খেজুর গাছের রস এবং আঙুরের জুস অত্যন্ত উৎকৃষ্ট পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অবশ্য কেউ কেউ এ থেকে মদ বা নেশা জাতীয় পানিয় তৈরি করে থাকে। এ থেকেও মানুষের অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে। যেমন আল্লাহ তায়ালা ফল-মূল থেকে যা দিচ্ছেন তা মানুষের জন্য উপকারী কিন্তু মানুষ তা থেকে গর্হিত উপায়ে মদ বা নেশা জাতীয় উপাদান তৈরি করছে।
এ সূরার ৬৮ ও ৬৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
وَأَوْحَى رَبُّكَ إِلَى النَّحْلِ أَنِ اتَّخِذِي مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا وَمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُونَ (68) ثُمَّ كُلِي مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِي سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلًا يَخْرُجُ مِنْ بُطُونِهَا شَرَابٌ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاءٌ لِلنَّاسِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآَيَةً لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
“তোমার প্রতিপালক মৌমাছিকে তার অন্তরে ইঙ্গিত দ্বারা নির্দেশ দিলেন পাহাড়ে, বৃক্ষে ও মানুষের ঘরের চালে গৃহ নির্মাণ কর।” (১৬:৬৮)
“এরপর প্রত্যেক ফল থেকে কিছু কিছু আহার কর, অতঃপর তোমার প্রতিপালক তোমার জন্য যে পদ্ধতি সহজ করেছেন তা অনুসরণ কর, তার উদর থেকে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয়। এতে মানুষের জন্য রয়েছে রোগের প্রতিকার। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল মানুষের জন্য রয়েছে নিদর্শন।” (১৬:৬৯)
এ দুই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মধু সম্পর্কে বর্ণনা দিয়েছেন। বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা মৌমাছিকে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে তা চাকে জমা করার অনুভুতি এবং সামর্থ দিয়েছেন। মধু মানুষের অনেক উপকারে আসে এবং অনেক রোগের ওষুধ হিসেবেও মধু অত্যন্ত কার্যকরী। আল্লাহ তায়ালা একটি ছোট্ট পতঙ্গের মধ্যে এত বড় শক্তি দিয়েছেন, এতে অবশ্যই মানুষের ভাববার অনেক কিছু আছে।