সূরা নাহল;(১৭তম পর্ব)
সূরা নাহল; আয়াত ৭৩-৭৭
এই সূরার ৭৩ ও ৭৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَمْلِكُ لَهُمْ رِزْقًا مِنَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ شَيْئًا وَلَا يَسْتَطِيعُونَ (73) فَلَا تَضْرِبُوا لِلَّهِ الْأَمْثَالَ إِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
"তারা আল্লাহ ব্যতীত এমন বস্তুর ইবাদত করে, যাদের কোন শক্তিই নেই তাদের জন্যে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী থেকে সামান্য জীবনোপকরণ সরববাহ করার এবং তারা কিছুই করতে সক্ষম নয়।” (১৬:৭৩)
“অতএব, আল্লাহর সঙ্গে কোন সদৃশ সাব্যস্ত কর না, নিশ্চয় আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।" (১৬:৭৪)
মানুষের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত নেয়ামতের কিছু উদাহরণ এর আগে বর্ণনা করা হয়েছে, বহু মানুষ আল্লাহর দেয়া এই নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে জানে না, বরং এসব নেয়ামতের বিষয়ে তাদের আচরণ ও মানসিকতা অনেক সময়ই ঔদ্ধত্যপূর্ণ। এরই প্রেক্ষাপটে এ দুই আয়াতে বলা হয়েছে, অনেক মানুষ দুনিয়াতে ঐশ্বর্য্য লাভের আশায় মুর্তি পুজায় লিপ্ত হয়। তাদের ধারণা মুর্তি তাদের জীবনের সমস্যাগুলো সমাধান করে দেবে। অথচ এসব মুর্তির কিছুই করার ক্ষমতা নেই। মানুষের জীবন ধারণের জন্য খাদ্যের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। কিন্তু প্রতিমা বা মুর্তির পক্ষে যে মানুষের খাদ্য কিংবা রুটি-রুজির সমাধান করা সম্ভব নয়- এই বাস্তব বিষয়টিই অনেক মানুষের বোধগম্য হয় না। ফলে এসব মানুষ মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে শিরক বা অংশীস্থাপন করে এবং প্রতিমার মত নির্জীব নিথর জড়বস্তুকে সৃষ্টিকর্তার সমকক্ষ মনে করে। তারা মনে করে সৃষ্টিকর্তা হলেন রাজার মত আর দেব-দেবী হলো সৃষ্টিকর্তার মন্ত্রীদের মতো। এ দুই আয়াতে এ ধরনের বিশ্বাস বা মানসিকতাকে চরম মুর্খতা বলে অভিহিত করা হয়েছে।
কিছু মানুষ আছে যারা গোঁয়াতুর্মির বশবর্তী হয়ে আল্লাহকে স্বীকার করে না। আবার অনেকেই অজ্ঞতা ও মুর্খতার কারণে সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর আনুগত্য করতে অস্বীকার করে। তবে সে যাই হোক আল্লাহর সত্ত্বার সাথে কোন কিছুই তুলনীয় নয়, তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও স্বয়ম্ভু সত্ত্বা।
এই সূরার ৭৫ ও ৭৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا عَبْدًا مَمْلُوكًا لَا يَقْدِرُ عَلَى شَيْءٍ وَمَنْ رَزَقْنَاهُ مِنَّا رِزْقًا حَسَنًا فَهُوَ يُنْفِقُ مِنْهُ سِرًّا وَجَهْرًا هَلْ يَسْتَوُونَ الْحَمْدُ لِلَّهِ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ (75) وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا رَجُلَيْنِ أَحَدُهُمَا أَبْكَمُ لَا يَقْدِرُ عَلَى شَيْءٍ لَا يَقْدِرُ عَلَى شَيْءٍ وَهُوَ كَلٌّ عَلَى مَوْلَاهُ أَيْنَمَا يُوَجِّهْهُ لَا يَأْتِ بِخَيْرٍ هَلْ يَسْتَوِي هُوَ وَمَنْ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَهُوَ عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ
“আল্লাহ একটি উপমা বর্ণনা করেছেন, অপরের অধিকারভুক্ত এক দাসের, যে কোন কিছুর ওপর শক্তি রাখে না এবং এমন ব্যক্তির যাকে আমি নিজের পক্ষ থেকে চমৎকার জীবনোপকরণ দিয়েছি। অতএব,সে তা থেকে ব্যয় করে গোপনে ও প্রকাশ্যে, তারা উভয়ে কি সমান হয়? সব প্রশংসা আল্লাহর প্রাপ্য,কিন্তু অনেক মানুষ জানে না।” (১৬:৭৫)
“আল্লাহ আরেকটি উপমা দিচ্ছেন দুই ব্যক্তির, তাদের একজন মূক বা বোবা, কোন কিছু করার শক্তি তার নেই। সে তার প্রভুর ভারস্বরূপ, তাকে যেখানেই পাঠানো হোক না কেন সে ভালো কিছু করে আসতে পারে না, সে কি সমান হবে ঐ ব্যক্তির যে ন্যায়ের নির্দেশ দেয় এবং যে সরল পথে রয়েছে?” (১৬:৭৬)
আগের আয়াতে প্রতিমা পুজার বিষয়ে বলার পর এ আয়াতে বলা হচ্ছে,আল্লাহ দুই ধরনের মানুষ অর্থাৎ দাস ও মুনিবের উপমা তুলে ধরেছেন,একজন হচ্ছে স্বাধীন আর আরেকজন পরাধীন। মুনিব স্বাধীনভাবে তার সম্পদ ভোগ করতে পারে,নিজের অধিকারভুক্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে কিন্তু যে দাস তার সম্পদ তো দূরের কথা নিজেই পরাধীন। মুনিবের ইচ্ছা ছাড়া অন্যের কোন ভালো মন্দ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়।
এখানে বোবা মানুষকে আরেকটি উপমা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে, যার পক্ষে অন্যের কথা ও সমস্যা বুঝা যেমন সম্ভব নয়, কারো সমস্যা সমাধান করাও সম্ভব নয়। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ স্বাধীন ও সার্বভৌম সত্ত্বা তিনি সব কিছুই জানেন ও শোনেন। জানেন না শোনেন না এসব শব্দই আল্লাহর জন্য অকল্পনীয়। তিনি ন্যায্যতার সাথে সৃষ্টিজগতের সব কিছু পরিচালনা করছেন। তার কাজে ও সিদ্ধান্তে কোন খুঁত নেই। নেই কোন দুর্বলতা।
এই সূরার ৭৭তম আয়াতে আল্লাহ পাক বলেছেন,
وَلِلَّهِ غَيْبُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا أَمْرُ السَّاعَةِ إِلَّا كَلَمْحِ الْبَصَرِ أَوْ هُوَ أَقْرَبُ إِنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
“আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহরই জানা, কিয়ামতের ব্যাপার তো চোখের পলকের মত, বরং তার চেয়েও নিকটবর্তী। আল্লাহ অবশ্যই সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান।" (১৬:৭৭)
এ আয়াতে বলা হয়েছে, তোমরা আকাশ ও পৃথিবীর খুব কম বিষয়েই জ্ঞান রাখো। আকাশ ও পৃথিবীতে এমন অনেক বিষয় রয়েছে যা তোমাদের দৃষ্টি ও জ্ঞানের বাইরে রয়েছে। একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই সেসব বিষয়ে অবগত আছেন। মৃত্যুর পর প্রতিদান দেয়ার বিষয়টি একমাত্র আল্লাহর হাতে। তিনি এক পলকের মধ্যে তোমাদেরকে পুনরায় জীবিত করে ন্যায় বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন।
আল্লাহ যে শুধু অদৃশ্য জগতের সবই জানেন তা নয় বরং অদৃশ্য জগত তো তাঁরই সৃষ্টি। আকাশ ও পৃথিবী এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য যা কিছু আছে সবই তার কাছে সুস্পষ্ট।