পাশ্চাত্যে নারীর অধিকার লংঘন
বিশ্বে যা কিছু মহান, সৃষ্টি চীর-কল্যাণকর,
“অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর”।
কিন্তু তা সত্ত্বেও নারী ইতিহাসে তার যথাযোগ্য স্থান বা মর্যাদা অধিকাংশ সময়ই পায় নি। আধুনিক যুগে নারী অধিকারের প্রতি সমর্থনসূচক অনেক শ্লোগান দেয়া হলেও বাস্তবে তাদের অধিকার অধিকাংশ দেশেই উপেক্ষিত হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরুষকে দেখা হয় অধিকতর যোগ্য, বুদ্ধিমান হিসেবে। অন্যদিকে নারীকে দেখা হয় আবেগ-প্রবণ, অবলা-অসহায়, লজ্জিত এবং ভোগ্য-পণ্য বা যৌন লালসা পূরণের মাধ্যম হিসেবে।
নারীর প্রতি বৈষম্য প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতিসংঘের কনভেনশান পাশ হয়েছিল ১৯৮১ সালে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এই কনভেনশান মেনে নিয়েছে। কিন্তু মার্কিন সরকারসহ পশ্চিমা সরকারগুলো মুখে নারী অধিকারের প্রতি সমর্থনসূচক অনেক শ্লোগান দিতে অভ্যস্ত হলেও বাস্তবে ঐসব দেশেও নারীর অধিকার ব্যাপক মাত্রায় লংঘিত হচ্ছে।
পাশ্চাত্যে শিল্প বিপ্লবের পর বড় বড় কোম্পানীগুলো সস্তায় শ্রমিক খাটানোর জন্য নারী-অধিকার ও নারীর স্বাধীনতার শ্লোগান তুলে নারীকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ দেয়। ফলে মহিলারা বিভিন্ন কল-কারখানায় কম বেতনে চাকরীর সূযোগ পায়। সাধারণত নারী শ্রমিকের বেতন ছিল পুরুষ শ্রমিকের বেতনের অর্ধেক। পশ্চিমা নারীরা নিজেরা উপার্জন করতে শুরু করার পর স্বামীর ওপর তাদের নির্ভরতা কমে যায়। বাহ্যিকভাবে মনে হল যে নারীর উন্নতি ঘটেছে। কিন্তু বাস্তবে তাকে সংসারে বা ঘরে যতটা পরিশ্রম করতে হত এখন তার চেয়ে বেশি পরিশ্রম ও বেশি কষ্টকর কাজ করতে হচ্ছে। অন্য কথায় নারীর স্বনির্ভরতা বা স্বাধীনতার নামে পাশ্চাত্যের নারীর ওপর বৈষম্য বাড়লো এবং পরিবারের আঙ্গিনা থেকে বাইরে পা-দেওয়া পশ্চিমা নারী কর্মক্ষেত্রে যাওয়ায় পরিবারে অনেক সমস্যার কারণ হলো।
১৯৬০ সালে সমপরিমাণ কাজের জন্য সমপরিমাণ বেতন বা মুজুরী সংক্রান্ত আইনের ভিত্তিতে পশ্চিমা নারীরা বাহ্যিক দিক থেকে কিছুটা লাভবনা হয়। কিন্তু পাশ্চাত্যে এই আইন পাশ হবার কয়েক দশক পর এখনও মহিলারা তাদের ন্যায্য বা স্বাভাবিক মুজুরী থেকে বঞ্চিত। পাশ্চাত্যে মহিলা কর্মজীবীরা এখনও দশ দিন কাজ করে পুরুষের ৬ দিনের বেতনের সমপরিমাণ মুজুরী লাভ করেন। এ ছাড়াও তাদের চাকরী পুরুষদের চাকরীর মত স্থায়ী বা নিরাপদ নয় এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর পদোন্নোতিও পুরুষের চেয়ে কম ঘটে থাকে। পাশ্চাত্যে মহিলা কর্মজীবীদের অধিকাংশই নার্স বা সমাজ্যকল্যাণ-কর্মী, কিংবা প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা বা হাসপাতালের টেকনিশিয়ান। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা এবং আইন ও বিজ্ঞান-গবেষণার মত উচ্চতর পেশায় পশ্চিমা নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ এখনও খুবই কম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখনও অধিকাংশ পুরুষ তাদের পরিবারের ব্যয়-নির্বাহের কঠিন বোঝা নারী বা স্ত্রীর ওপর চাপিয়ে থাকেন। দেশটির প্রতি ৩ জন পুরুষের মধ্যে ২ জনই চান তাদের ভবিষ্যৎ স্ত্রী যেন পরিবারের ব্যয়-বহনে সমান মাত্রায় অংশ নেন। পুরুষ তার অর্জিত অর্থ ইচ্ছেমত ব্যয় করলেও নারী তার উপার্জনের অর্থ পরিবার ও সন্তান-সন্ততির জন্য খরচ করতে বাধ্য হন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ও পাশ্চাত্যের অধিকাংশ মায়েরা যে কেবল সন্তানের দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেন তা নয়, তারা সন্তানের খাবার-দাবার, শিক্ষা ও প্রতিপালনের খরচও বহন করেন। ফলে পাশ্চাত্যের মহিলারা ঘরে ও বাইরেও বাড়তি চাপ সহ্য করেন। নিদ্রাহীনতার কারণে এসব মায়ের চোখের নীচে কালো রেখা পড়ে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তালাকের ফলে স্বামীর চেয়ে স্ত্রীরাই বেশি কষ্ট ও ক্ষতির শিকার হন। তালাকের পর স্বামীরা নিঃসঙ্গ থাকেন এমনটা খুব কমই দেখা যায়, কিন্তু তালাকের ফলে মার্কিন নারীরা হয় নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন অথবা একটি সন্তান নিয়েই জীবন কাটাতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রে নারী ও শিশুদের অধিকার সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত হয়। তারা ব্যাপক মাত্রায় যৌন ও শারীরিক নিপীড়নের শিকার হয়ে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৩ সালে প্রায় ৯৪ হাজার নারী সম্ভ্রমহানির শিকার হয়েছেন। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৮ থেকে ১৯ বছর বয়স্ক ২১০ নারীর সম্ভ্রমহানির দায়ে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। উল্লেখ্য মার্কিন সরকার এখনও নারী ও শিশুর অধিকার সংক্রান্ত জাতিসংঘের কনভেনশানে স্বাক্ষর করে নি ।
বৃটেনেও মহিলারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। ২০০৮ সালে প্রকাশিত জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বৃটেনে নারী ও কণ্যারা যৌন ও শারীরিক নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন । বৃটেনে নারী ও কণ্যা পাচারের ঘটনা ঘটছে এবং এই অপরাধ দমনে সরকারের ব্যবস্থাকে দূর্বল বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ। বৃটেনের রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে প্রশাসনিক ও নীতি-নির্ধারণী ক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতি খুবই কম। এই দেশটিতে নারী ও পুরুষের বেতনের মধ্যেও সমতা নেই। বৃটিশ মহিলারা পুরো কর্মদিবস কাজ করেও পুরুষের পুরো কর্মদিবসের মুজুরির শতকরা প্রায় ৮৩ ভাগের সমপরিমাণ বেতন পান। বৃটেনের গণমাধ্যমগুলো মহিলাদেরকে ভোগের সামগ্রীর মত ব্যবহার করে থাকে। অনাকাঙ্খিত গর্ভ-ধারণ ও গর্ভপাত এই দেশটিতে নারী অধিকার লংঘনের অন্যতম দৃষ্টান্ত। নারীর প্রতি বৈষম্য থাকায় ইউরোপের এই দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারী ও অভিবাসী নারীদের মধ্যে হতাশা, মানসিক রোগ এবং আত্মহত্যার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। জার্মান গণমাধ্যমেও নারীকে যৌন-সামগ্রী হিসেবে দেখা হয়। এই দেশে নারীর মধ্যে বেকারত্ব দীর্ঘকাল ধরে বাড়ছে। যারা চাকরী করেন তাদের বেতন-ভাতা বা সুযোগ-সুবিধাও কম। জাতিসংঘ পতিতাবৃত্তিতে জার্মান মহিলাদের অপব্যবহারের মাত্রায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী ফ্রান্সেও মহিলারা চাকুরী ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার এবং সেখান নারী ও কণ্যারা যৌন ও শারীরিক নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। ফ্রান্সে মহিলারা সাধারণত হোটেল-রেস্তোঁরার আয়া বা সেবিকা চাকরী পান। দেশটিতে সরকারী চাকুরীসহ আন্তর্জাতিক ও শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানের চাকুরী মহিলাদের জন্য খুবই সিমীত। ফ্রান্সে মহিলারা সাধারণত পুরুষের চেয়ে ১৯ শতাংশ কম বেতন পান। ফ্রান্সে নারীর বিরুদ্ধে পারিবারিক সহিংসতায় জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রতি বছর এই দেশটির বহু নারী স্বামীর মাধ্যমে নির্যাতিত ও নিহত হচ্ছেন। ফ্রান্সে এক তৃতীয়াংশ গর্ভধারণের ঘটনাই অনাকাঙ্খিত বা অবৈধ। এসব ক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় গর্ভপাতের হার শতকরা ৫০। তাই জাতিসংঘ ফরাসী নারীর মধ্যে অবৈধ বা অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ রোধের জন্য সেখানকার নারী-পুরুষ এবং তরুণ ও তরুণীদের মধ্যে যৌনশিক্ষার প্রসারের ওপর জোর দিতে ফরাসী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
পাশ্চাত্যে নারীর অধিকার লংঘনের ব্যাপারে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, জার্মানী ও ফ্রান্সের যে চিত্র তুলে ধরেছি সেখানকার অন্যান্য দেশেও নারী অধিকারের অবস্থা প্রায় একই রকম। পাশ্চাত্যে নারীর অধিকার লংঘনের ফলে সেখানকার নারী সমাজ অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার মত গঠনমূলক কাজে অবদান রাখতে পারছে না। এ ছাড়াও আরো অনেক্ষ ক্ষতি তো আছেই। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং বৈষম্য রোধের জন্য কেবল কনভেনশান বা আইনই যথেষ্ট নয়। এ জন্যে বিশ্বব্যাপী মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কর্মসূচী নেয়াও জরুরী। তাই মানুষ হিসেবে নারী ও পুরুষ যে সমান এবং নারীকে তার ন্যায্য অধিকার দেয়া উচিত, সে বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। (রেডিও তেহরান)
“অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর”।
কিন্তু তা সত্ত্বেও নারী ইতিহাসে তার যথাযোগ্য স্থান বা মর্যাদা অধিকাংশ সময়ই পায় নি। আধুনিক যুগে নারী অধিকারের প্রতি সমর্থনসূচক অনেক শ্লোগান দেয়া হলেও বাস্তবে তাদের অধিকার অধিকাংশ দেশেই উপেক্ষিত হচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরুষকে দেখা হয় অধিকতর যোগ্য, বুদ্ধিমান হিসেবে। অন্যদিকে নারীকে দেখা হয় আবেগ-প্রবণ, অবলা-অসহায়, লজ্জিত এবং ভোগ্য-পণ্য বা যৌন লালসা পূরণের মাধ্যম হিসেবে।
নারীর প্রতি বৈষম্য প্রতিরোধ সংক্রান্ত জাতিসংঘের কনভেনশান পাশ হয়েছিল ১৯৮১ সালে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এই কনভেনশান মেনে নিয়েছে। কিন্তু মার্কিন সরকারসহ পশ্চিমা সরকারগুলো মুখে নারী অধিকারের প্রতি সমর্থনসূচক অনেক শ্লোগান দিতে অভ্যস্ত হলেও বাস্তবে ঐসব দেশেও নারীর অধিকার ব্যাপক মাত্রায় লংঘিত হচ্ছে।
পাশ্চাত্যে শিল্প বিপ্লবের পর বড় বড় কোম্পানীগুলো সস্তায় শ্রমিক খাটানোর জন্য নারী-অধিকার ও নারীর স্বাধীনতার শ্লোগান তুলে নারীকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ দেয়। ফলে মহিলারা বিভিন্ন কল-কারখানায় কম বেতনে চাকরীর সূযোগ পায়। সাধারণত নারী শ্রমিকের বেতন ছিল পুরুষ শ্রমিকের বেতনের অর্ধেক। পশ্চিমা নারীরা নিজেরা উপার্জন করতে শুরু করার পর স্বামীর ওপর তাদের নির্ভরতা কমে যায়। বাহ্যিকভাবে মনে হল যে নারীর উন্নতি ঘটেছে। কিন্তু বাস্তবে তাকে সংসারে বা ঘরে যতটা পরিশ্রম করতে হত এখন তার চেয়ে বেশি পরিশ্রম ও বেশি কষ্টকর কাজ করতে হচ্ছে। অন্য কথায় নারীর স্বনির্ভরতা বা স্বাধীনতার নামে পাশ্চাত্যের নারীর ওপর বৈষম্য বাড়লো এবং পরিবারের আঙ্গিনা থেকে বাইরে পা-দেওয়া পশ্চিমা নারী কর্মক্ষেত্রে যাওয়ায় পরিবারে অনেক সমস্যার কারণ হলো।
১৯৬০ সালে সমপরিমাণ কাজের জন্য সমপরিমাণ বেতন বা মুজুরী সংক্রান্ত আইনের ভিত্তিতে পশ্চিমা নারীরা বাহ্যিক দিক থেকে কিছুটা লাভবনা হয়। কিন্তু পাশ্চাত্যে এই আইন পাশ হবার কয়েক দশক পর এখনও মহিলারা তাদের ন্যায্য বা স্বাভাবিক মুজুরী থেকে বঞ্চিত। পাশ্চাত্যে মহিলা কর্মজীবীরা এখনও দশ দিন কাজ করে পুরুষের ৬ দিনের বেতনের সমপরিমাণ মুজুরী লাভ করেন। এ ছাড়াও তাদের চাকরী পুরুষদের চাকরীর মত স্থায়ী বা নিরাপদ নয় এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর পদোন্নোতিও পুরুষের চেয়ে কম ঘটে থাকে। পাশ্চাত্যে মহিলা কর্মজীবীদের অধিকাংশই নার্স বা সমাজ্যকল্যাণ-কর্মী, কিংবা প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা বা হাসপাতালের টেকনিশিয়ান। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা এবং আইন ও বিজ্ঞান-গবেষণার মত উচ্চতর পেশায় পশ্চিমা নারীর অংশগ্রহণের সুযোগ এখনও খুবই কম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখনও অধিকাংশ পুরুষ তাদের পরিবারের ব্যয়-নির্বাহের কঠিন বোঝা নারী বা স্ত্রীর ওপর চাপিয়ে থাকেন। দেশটির প্রতি ৩ জন পুরুষের মধ্যে ২ জনই চান তাদের ভবিষ্যৎ স্ত্রী যেন পরিবারের ব্যয়-বহনে সমান মাত্রায় অংশ নেন। পুরুষ তার অর্জিত অর্থ ইচ্ছেমত ব্যয় করলেও নারী তার উপার্জনের অর্থ পরিবার ও সন্তান-সন্ততির জন্য খরচ করতে বাধ্য হন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ও পাশ্চাত্যের অধিকাংশ মায়েরা যে কেবল সন্তানের দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেন তা নয়, তারা সন্তানের খাবার-দাবার, শিক্ষা ও প্রতিপালনের খরচও বহন করেন। ফলে পাশ্চাত্যের মহিলারা ঘরে ও বাইরেও বাড়তি চাপ সহ্য করেন। নিদ্রাহীনতার কারণে এসব মায়ের চোখের নীচে কালো রেখা পড়ে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তালাকের ফলে স্বামীর চেয়ে স্ত্রীরাই বেশি কষ্ট ও ক্ষতির শিকার হন। তালাকের পর স্বামীরা নিঃসঙ্গ থাকেন এমনটা খুব কমই দেখা যায়, কিন্তু তালাকের ফলে মার্কিন নারীরা হয় নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন অথবা একটি সন্তান নিয়েই জীবন কাটাতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রে নারী ও শিশুদের অধিকার সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত হয়। তারা ব্যাপক মাত্রায় যৌন ও শারীরিক নিপীড়নের শিকার হয়ে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৩ সালে প্রায় ৯৪ হাজার নারী সম্ভ্রমহানির শিকার হয়েছেন। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৮ থেকে ১৯ বছর বয়স্ক ২১০ নারীর সম্ভ্রমহানির দায়ে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। উল্লেখ্য মার্কিন সরকার এখনও নারী ও শিশুর অধিকার সংক্রান্ত জাতিসংঘের কনভেনশানে স্বাক্ষর করে নি ।
বৃটেনেও মহিলারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। ২০০৮ সালে প্রকাশিত জাতিসংঘের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বৃটেনে নারী ও কণ্যারা যৌন ও শারীরিক নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন । বৃটেনে নারী ও কণ্যা পাচারের ঘটনা ঘটছে এবং এই অপরাধ দমনে সরকারের ব্যবস্থাকে দূর্বল বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ। বৃটেনের রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে প্রশাসনিক ও নীতি-নির্ধারণী ক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতি খুবই কম। এই দেশটিতে নারী ও পুরুষের বেতনের মধ্যেও সমতা নেই। বৃটিশ মহিলারা পুরো কর্মদিবস কাজ করেও পুরুষের পুরো কর্মদিবসের মুজুরির শতকরা প্রায় ৮৩ ভাগের সমপরিমাণ বেতন পান। বৃটেনের গণমাধ্যমগুলো মহিলাদেরকে ভোগের সামগ্রীর মত ব্যবহার করে থাকে। অনাকাঙ্খিত গর্ভ-ধারণ ও গর্ভপাত এই দেশটিতে নারী অধিকার লংঘনের অন্যতম দৃষ্টান্ত। নারীর প্রতি বৈষম্য থাকায় ইউরোপের এই দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারী ও অভিবাসী নারীদের মধ্যে হতাশা, মানসিক রোগ এবং আত্মহত্যার সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। জার্মান গণমাধ্যমেও নারীকে যৌন-সামগ্রী হিসেবে দেখা হয়। এই দেশে নারীর মধ্যে বেকারত্ব দীর্ঘকাল ধরে বাড়ছে। যারা চাকরী করেন তাদের বেতন-ভাতা বা সুযোগ-সুবিধাও কম। জাতিসংঘ পতিতাবৃত্তিতে জার্মান মহিলাদের অপব্যবহারের মাত্রায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুযায়ী ফ্রান্সেও মহিলারা চাকুরী ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার এবং সেখান নারী ও কণ্যারা যৌন ও শারীরিক নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। ফ্রান্সে মহিলারা সাধারণত হোটেল-রেস্তোঁরার আয়া বা সেবিকা চাকরী পান। দেশটিতে সরকারী চাকুরীসহ আন্তর্জাতিক ও শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানের চাকুরী মহিলাদের জন্য খুবই সিমীত। ফ্রান্সে মহিলারা সাধারণত পুরুষের চেয়ে ১৯ শতাংশ কম বেতন পান। ফ্রান্সে নারীর বিরুদ্ধে পারিবারিক সহিংসতায় জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রতি বছর এই দেশটির বহু নারী স্বামীর মাধ্যমে নির্যাতিত ও নিহত হচ্ছেন। ফ্রান্সে এক তৃতীয়াংশ গর্ভধারণের ঘটনাই অনাকাঙ্খিত বা অবৈধ। এসব ক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় গর্ভপাতের হার শতকরা ৫০। তাই জাতিসংঘ ফরাসী নারীর মধ্যে অবৈধ বা অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ রোধের জন্য সেখানকার নারী-পুরুষ এবং তরুণ ও তরুণীদের মধ্যে যৌনশিক্ষার প্রসারের ওপর জোর দিতে ফরাসী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
পাশ্চাত্যে নারীর অধিকার লংঘনের ব্যাপারে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, জার্মানী ও ফ্রান্সের যে চিত্র তুলে ধরেছি সেখানকার অন্যান্য দেশেও নারী অধিকারের অবস্থা প্রায় একই রকম। পাশ্চাত্যে নারীর অধিকার লংঘনের ফলে সেখানকার নারী সমাজ অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার মত গঠনমূলক কাজে অবদান রাখতে পারছে না। এ ছাড়াও আরো অনেক্ষ ক্ষতি তো আছেই। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং বৈষম্য রোধের জন্য কেবল কনভেনশান বা আইনই যথেষ্ট নয়। এ জন্যে বিশ্বব্যাপী মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কর্মসূচী নেয়াও জরুরী। তাই মানুষ হিসেবে নারী ও পুরুষ যে সমান এবং নারীকে তার ন্যায্য অধিকার দেয়া উচিত, সে বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। (রেডিও তেহরান)