আল হাসানাইন (আ.)

মানবাধিকার ও ইসলামী আইন-১ম অংশ

0 বিভিন্ন মতামত 00.0 / 5

মানবাধিকারের বিষয়টি বর্তমান পৃথিবীতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানবাধিকার আইনের ইতিহাস সুদীর্ঘ হলেও বিশ্বে মানবাধিকার তার সঠিক স্থান লাভ করে নি। কারণ মানব জাতি শতাব্দীকাল হতে শব্দটির পবিত্রতার সুযোগ নিয়ে এর অপব্যবহার করেছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদও সঠিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত না হওয়া এবং বাস্তবায়ন ও প্রয়োগগত নিশ্চয়তার অভাবে অক্ষম হয়ে পড়েছে। এর বিপরীতে ইসলামী আইন এক উচ্চতর লক্ষ্যে মর্যাদাশীল ও শক্তিশালী এক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং এ আইন কার্যকর ও প্রয়োগযোগ্য নিশ্চয়তার অধিকারী হওয়ায় বিশ্বে মানবাধিকারের এ অসংগত অবস্থার পরিবর্তনে সক্ষম। ইসলামী আইনে মানবাধিকার সম্পর্কিত আইনসমূহ,যেমন রাষ্ট্র ও নাগরিক অধিকার আইন,রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক আইন,দেওয়ানী ও ফৌজদারী আইনসহ সকল আইনই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ সকল আইন মানব জাতির বস্তুগত ও আত্মিক প্রশান্তি,সামাজিক নিরাপত্তা,ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা,বিশ্বে শান্তি ও সহনশীলতা সৃষ্টি,সর্বোপরি মানব জাতিকে পূর্ণতায় পৌঁছানোর মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের লক্ষ্যে প্রণীত হয়েছে। তাই আলোচনার বিষয় হিসেবে এটি ব্যাপক একটি ক্ষেত্র।

আমরা এ নিবন্ধে ইসলামে মানবাধিকার আইন ও এর মৌলনীতির সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের একটি সংক্ষিপ্ত ও তুলনামূলক আলোচনা রাখব। সেই সাথে ইসলামের মানবাধিকার আইনের কিছু সমালোচনার জবাব দিতে চেষ্টা করব।

প্রথমে আইনের সংজ্ঞায় বলা যায়,একটি সমাজের প্রত্যেক সদস্যকে করণীয় ও বর্জনীয় যে সামগ্রিক বিধানের আওতায় চলতে হয় তাই আইন অর্থাৎ সামাজিক মানুষের আচার-আচরণ নির্দেশক ব্যবস্থাকে আইন বলে।

অধিকারকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় : স্রষ্টা,প্রকৃতি ও সমাজ কর্তৃক একের জন্য অপরের ওপর বা কোন বস্তুর জন্য সকলের ওপর নির্ধারিত বিষয়। এ সংজ্ঞায় বোঝা যায় অধিকারের উপাদান তিনটি : (ক) যার জন্য অধিকার (খ) যার ওপর অধিকার (গ) যে বিষয়ের অধিকার।

‘যার জন্য অধিকার’ কখনও এক ব্যক্তি,যেমন স্বামীর ওপর স্ত্রীর অধিকার,কখনও দুই,তিন বা সমাজের সকল ব্যক্তি,যেমন সরকারী রাস্তা,কখনও বা অধিকারপ্রাপ্ত পক্ষটি কোন ব্যক্তি নয়,বরং আইনসম্মত কোন কর্তৃপক্ষ,যেমন সরকার,কখনও বা কোন বস্তু বা স্থান আইনগত অধিকার লাভ করে থাকে,যেমন মসজিদ ও অন্যান্য পবিত্র স্থান।

মানবাধিকার বলতে আমরা কি বুঝি?

মানবাধিকার হলো প্রকৃতিগতভাবে মানব জাতি যে অধিকারসমূহ লাভ করেছে,যেমন জীবন ধারণের অধিকার,বাক-স্বাধীনতা প্রভৃতি।

ইসলামী আইন : ইসলাম সমাজের জন্য যে আইন প্রণয়ন করেছে ও সমাজকে তা পালনের জন্য নির্দেশ দিয়েছে।

ইসলামী আইনের লক্ষ্য : ইসলামের দৃষ্টিতে আইন ব্যক্তি ও সমাজের নৈতিক পূর্ণতার মাধ্যম। নৈতিক পূর্ণতার অর্থ আত্মিক উন্নয়নের মাধ্যমে স্রষ্টার নৈকট্য লাভ। তাই ইসলামী আইন ও বিধি-বিধানের পূর্ণ অনুশীলন মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে শৃঙ্খলা আনয়ন ছাড়াও তাকে তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছায়। ইসলামী আইনের লক্ষ্যকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায় :

১. ব্যক্তিগত পর্যায় : ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইসলামী আইনের লক্ষ্য আত্মিক পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধতা অর্জন। যেমন আল্লাহ্পাক বলেছেন,

هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ

“তিনি নিরক্ষরদের মধ্য হতে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন,যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন,তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও প্রজ্ঞা শিক্ষা দেন।”-(সূরা জুমআ : ২)

২. সামাজিক পর্যায় : ইসলামী আইনের লক্ষ্য সামাজিক পর্যায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। কোরআন নিম্নোক্ত আয়াতে বলেছে,

لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ

“আমি আমার রাসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত করে।”-(সূরা হাদীদ : ২৫)

৩. সৃষ্টির সর্বোচ্চ পর্যায় : সকল পর্যায়ের ঊর্ধ্বে এ পর্যায়ে ইসলামী আইনের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জিত হয়। আর তা হলো আল্লাহ্পাকের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য। যেমন পবিত্র কোরআন বলা হয়েছে,

إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَنَهَرٍ فِي مَقْعَدِ صِدْقٍ عِنْدَ مَلِيكٍ مُقْتَدِرٍ

“নিশ্চয়ই খোদাভীরুরা থাকবে জান্নাতে ও নির্ঝরিণীতে। যোগ্য আসনে,সর্বাধিপতি সম্রাটের সান্নিধ্যে।”-(সূরা কামার : ৫৪-৫৫)

وَمَا لِأَحَدٍ عِنْدَهُ مِنْ نِعْمَةٍ تُجْزَى إِلَّا ابْتِغَاءَ وَجْهِ رَبِّهِ الْأَعْلَى وَلَسَوْفَ يَرْضَى

“এবং তার ওপর কারো কোন প্রতিদানযোগ্য অনুগ্রহ থাকে না তার মহান পালনকর্তার সন্তুষ্টি অন্বেষণ ব্যতীত। যে সত্বরই সন্তুষ্টি লাভ করবে।”-(সূরা লাইল : ১৯-২১)

আর তাই রাসূল প্রেরণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেছেন,

يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيرًا

“হে নবী,আমি আপনাকে সাক্ষী,সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহ্বায়করূপে ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।” (সূরা আহযাব : ৪৫-৪৬)

সুতরাং বোঝ যায়,সৃষ্টির সর্বোচ্চ লক্ষ্য হলো আল্লাহ্পাকের নৈকট্য লাভ এবং তা অর্জনের জন্য প্রথম দু’টি লক্ষ্য প্রাথমিক ভিত্তি যা সেই মহান লক্ষ্যে পৌঁছার পথকে সুগম করে। এ ক্ষেত্রে ইসলাম অন্যান্য আইন হতে এক উচ্চতর লক্ষ্য মানুষের জন্য নির্ধারণ করেছে আর তা হলো স্রষ্টার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য। যেখানে মানবরচিত আইনসমূহ বৈষয়িক জীবনের সাফল্য ও সৌভাগ্য ব্যতীত অন্য কোন লক্ষ্য নিয়ে চিন্তা করে না।

ইসলামী আইনের সর্বজনীনতা

পবিত্র কোরআনের দৃষ্টিতে বিশ্ব পরিবার তিন শ্রেণীতে বিভক্ত। এ পরিবারের তিন সদস্য হলো মুসলমান,আস্তিক অমুসলমান ও নাস্তিক। ইসলামের মৌল নির্দেশ হলো বিশ্ব পরিবারের সদস্যদের সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা। মুসলমানগণ শুধু তাদের থেকেই যেন মুখ ফিরিয়ে নেয় যারা তাদের ওপর নিপীড়ন চালায়। রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও মুসলমানদের শিক্ষা দেয়া হয়েছে অন্য পক্ষ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ না করলে যেন তারা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে এবং প্রতিশ্রুতি ও চুক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। যেমন পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,فَمَا اسْتَقَامُوا لَكُمْ فَاسْتَقِيمُوا لَهُمْ “যতক্ষণ তারা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে তোমরাও প্রতিশ্রুতি রক্ষা কর।”-(সূরা তাওবা : ৭)

তেমনি কোরআন আমাদের নির্দেশ দিয়েছে সকল মানুষের প্রতি সৌজন্য ও উত্তম আচরণ প্রদর্শন করার। قولوا للناس حسنا “মানুষের সঙ্গে উত্তম কথা বল।”-(সূরা বাকারা : ৮৩)

সুস্পষ্ট এ আয়াতে শুধু মুসলমানদের সঙ্গে নয়,বরং বিশ্ব পরিবারের সকল মানুষের প্রতি এরূপ আচরণ করতে বলা হয়েছে। অন্য যে আয়াতটিতে বিশ্ব পরিবারের সকল সদস্যের প্রতি দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে তা নিম্নরূপ : لَا تَبْخَسُوا النَّاسَ أَشْيَاءَهُمْ “মানুষের দ্রব্যাদি হতে কিছু কম করো না।”-(সূরা আরাফ : ৮৫,হুদ : ৮৫,শুআরা : ১৮৩)

এ আয়াতটি তিনজন নবীর কণ্ঠ হতে এসেছে। তাই এ কথাটি সকল ঐশী ধর্মের অন্যতম মৌল কথা। আয়াতটি অনুধাবনে এর সর্বজনীনতার বিষয়টি লক্ষ্য রাখা বাঞ্ছনীয়। এ আয়াত মানব জীবনের সকল দিকের সঙ্গে সম্পর্কিত,যেমন ওজনে ও পরিমাণে কম দেয়া,পাঠ দান,লেখা ও গবেষণায় অলসতা করা ও যথার্থ লক্ষ্য না রাখা,সামাজিক ও সেবামূলক কাজে অসতর্কতা ও দায়িত্বহীনতার পরিচয় দান,বিচারের ক্ষেত্রে ইনসাফ না করা এরূপ সকল বিষয় বা দ্রব্যাদি হতে কম করার শামিল। তাই এ কর্মের নিষিদ্ধতা এসবের ওপর প্রযোজ্য। এ কারণেই একজন মুসলমান ও অমুসলমান বিচারকের সামনে উপস্থিত হলে তার উচিত ইনসাফের সঙ্গে বিচার করা। যদি তা না করেন তবে ‘দ্রব্যাদি হতে কম করেছেন’। কোরআন বলছে,

وَإِذَا حَكَمْتُمْ بَيْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ

“আর যখন তোমরা মানুষের মাঝে বিচার কর তা ন্যায়ের ভিত্তিতে কর।”-(সূরা নিসা : ৫৮)

সুতরাং সুস্পষ্ট হলো,ইসলামী আইন সর্বজনীন এবং বিশ্ব পরিবারের সকল সদস্য এর অন্তর্ভুক্ত।

অন্যান্য আইন থেকে ইসলামী আইনের বিশেষত্ব

অন্যান্য আইন থেকে ইসলামী আইনের কিছু বিশেষত্ব রয়েছে। এরূপ কয়েকটি বিশেষত্ব আমরা এখানে উল্লেখ করছি :

১. যুক্তিনির্ভরতা : ইসলামী আইনের একটি বিশেষত্ব হলো এর যুক্তিনির্ভরতা অর্থাৎ এর বিধি-বিধানের বৈধতা-অবৈধতার বিষয়ে যুক্তি উপস্থাপন করা যায়। যেহেতু অন্যান্য আইনের বাস্তব কোন ভিত্তি নেই,বরং মানুষ এর বৈধতা ও অবৈধতা দানকারী ও প্রণেতার ভূমিকা পালন করে সেহেতু এর পশ্চাতে যুক্তি প্রদর্শন করা যায় না। কখনও কখনও জনগণের ইচ্ছা এরূপ বৈধতা বা অবৈধতা দান করে,যেমন গর্ভপাত ও সমকামিতার মত বিষয়। এর বিপরীতে ইসলামী আইন কল্যাণ ও অকল্যাণের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় প্রতিটি বিধির পেছনেই যুক্তি রয়েছে।

২. প্রয়োগযোগ্যতা ও বাস্তবায়ন নিশ্চয়তা : ইসলামী আইনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও লক্ষণীয় বিশেষত্ব হলো এ আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চয়তার বিধিসমূহ এর সঙ্গেই উল্লিখিত হয়েছে। এর প্রয়োগ নিশ্চয়তা দানকারী বিষয়সমূহ নিম্নরূপ :

(ক) ঈমান : ইসলামী আইনের প্রয়োগ নিশ্চয়তা দানকারী প্রধান বিষয় হলো প্রত্যেক মুসলমানের ঈমান ও খোদাভীতি। ইসলাম মানুষকে এমনভাবে প্রশিক্ষিত করে যে,সে শুধু অন্যের অধিকারের বিষয়েই সচেতন হয় না,বরং সেই সাথে কখনও কখনও সে নিজ অধিকারও ত্যাগ করে যাতে করে সামাজিক আইনের প্রয়োগ বিন্দুমাত্রও বাধাগ্রস্ত না হয়।

(খ) নৈতিকতা (আখলাক) : পবিত্র কোরআন নৈতিক নির্দেশনাকে ঐশী বিধানের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ নিশ্চয়তা দানকারী বিষয় বলে মনে করে। কোরআন যেখানেই নৈতিক বিষয়ের উল্লেখ করেছে তার উদ্দেশ্য বর্ণনা করে বলেছে,لعلکم تذکرون অর্থাৎ যাতে তোমরা স্মরণ কর (সচেতন হও)।-(সূরা আনআম : ১৫২,আরাফ : ৫৭,নাহল : ৯০) অথবা لعلکم تفلحون অর্থাৎ যাতে তোমরা সফল হও।-(সূরা বাকারা : ১৭৯,আলে ইমরান : ১৩০,মায়েদাহ্ : ৩৫ ও অন্যান্য আয়াতসমূহ)

আইন ও নৈতিকতার বন্ধনের সফল প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানুষকে অন্যের অধিকার হতে দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখা ও অন্যের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করানো সম্ভব। মুসলমানগণ কোরআনী নির্দেশের প্রতি আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে ইসলামী আইনকে অনুসরণ ও বাস্ত বায়নে উদ্বুদ্ধ হয়। ইসলামের ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনা রয়েছে যে,নৈতিক প্রশিক্ষণের কারণে মুসলমানগণ অসংখ্য অপরাধ হতে দূরে থেকেছে এবং কখনও কোন অপরাধ করে থাকলে স্বেচ্ছায় অপরাধ স্বীকার করে আইনের বিধানকে মাথা পেতে নিয়েছে।

(গ) সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ : ইসলাম মানব জাতির মঙ্গলকে সামাজিক এ দায়িত্ব পালনের মধ্যে নিহিত মনে করে এবং এ কর্ম হতে বিরত হওয়াকে আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চনার কারণ বলে বিশ্বাস করে। যেমন-

মহান আল্লাহ বলেছেন,

لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ عَلَى لِسَانِ دَاوُودَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ذَلِكَ بِمَا عَصَوْا وَكَانُوا يَعْتَدُونَ كَانُوا لَا يَتَنَاهَوْنَ عَنْ مُنْكَرٍ فَعَلُوهُ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ

“বনী ইসরাঈলের মধ্যে যারা কুফরী করেছে তাদের ওপর দাউদ ও মরিয়ম তনয় ঈসার মুখে অভিসম্পাত করা হয়েছে এ কারণে যে,তারা অবাধ্যতা করত এবং সীমা লঙ্ঘন করত। তারা পরস্পরকে মন্দ কাজে নিষেধ করত না,তারা তাই করত। তারা যা করত তা অবশ্যই মন্দ ছিল।”-(সূরা মায়েদাহ্ : ৭৮-৭৯)

(ঘ) ইসলামী দণ্ডবিধি : দণ্ড ও শাস্তির ভয় ইসলামী আইনের অন্যতম রক্ষা কবচ।

৩. সংগতিশীলতা : ইসলামী আইনের অন্যতম বিশেষত্ব হলো এর সংগতিশীলতা। যেহেতু ইসলামী আইনের মূল ও প্রধান উৎস হলো কোরআন সেহেতু ইসলামী আইনও কোরআনের ন্যায় সুবিন্যাসিত ও পরস্পর সংগতিশীল।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ

জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রের ৬৮ নং ধারা অনুযায়ী এর সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিষদ একটি মানবাধিকার সনদ প্রণয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়। এ লক্ষ্যে ১৯৪৬ সালে মানবাধিকার কমিশন গঠিত হয়। জাতিসমূহের ইচ্ছার প্রতিফলন হিসেবে তারা মানবাধিকার সনদ প্রণয়নের কাজ শুরু করে। বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও রাষ্ট্রবিদগণের পরামর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গি সমন্বিত করে এ সনদ প্রণীত হয়।

১৯৪৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর এ মানবাধিকার ঘোষণা সাধারণ পরিষদে কোন বিরোধিতা ছাড়াই পাশ হয়।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণায় মানবাধিকারের ভিত্তি

বিশ্ব মানবাধিকার ঘোষণা দু’টি দর্শনের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (ক) মানবতাবাদ ও (খ) মানব স্বাধীনতা। যেহেতু পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে খোদার অস্তিত্ব নেই সেহেতু মানুষকে সে আসনে বসানো হয়েছে। এই সংস্কৃতিতে সকল মূল্যবোধের কেন্দ্র হলো মানুষ,মানুষের চেয়ে উচ্চতর কোন অস্তিত্ব নেই। তাই মানুষ ব্যতীত অন্য কেউ মূল্যবোধ সৃষ্টি ও আইন তৈরির অধিকার রাখে না। খোদা নয়,মানুষই আইন তৈরি করে। মানবতাবাদের মূল কথা হলো এই। পাশ্চাত্য সংস্কৃতিতে মানবতাবাদভিত্তিক চিন্তার ফলশ্রুতিতে দু’টি নতুন প্রবণতার জন্ম হয়েছে। তার একটি হলো ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ এবং অপরটি হলো উদারতাবাদ।

এটি স্বাভাবিক যে,যখন খোদা মানুষের জীবন হতে অন্তরালে চলে যাবেন তখন জীবনের কোন স্থানেই ধর্মের অস্তিত্ব থাকবে না এবং সমাজ,রাজনীতি,আইন সব স্থান হতে ধর্ম নির্বাসিত হবে। এ চিন্তার ভিত্তিতে যদি কেউ ধর্ম নামে কোন মূল্যবোধের কথা বলে তা একান্ত তার ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হবে,সামাজিক বা রাজনৈতিক জীবনের সঙ্গে নয়। এ থেকেই রাজনীতি ও ধর্মের পৃথকীকরণের চিন্তা আবির্ভূত হয় যা ধর্মনিরপেক্ষতা নামে অভিহিত।

পাশ্চাত্য সভ্যতার অপর সৃষ্টি হলো উদারতারবাদ। এ সংস্কৃতিতে মানুষ সকল মূল্যবোধের কেন্দ্র,সে নিজেই নিজের ভাগ্যনিয়ন্ত্রক ও অধিপতি। তাই মানুষের সকল কিছু করার অধিকার রয়েছে,সে সম্পূর্ণ স্বাধীন,এটিই উদারতাবাদের মূল কথা। যখন কোন মানুষ নিজ জীবনে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করতে চায় তৎক্ষণাৎ স্বাভাবিকভাবেই সামাজিক জীবনে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে এবং আইনের কোন স্থান থাকবে না ।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণা মানুষের সত্তাগত ব্যক্তিত্ব ও সম্মানের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ ঘোষণায় মানুষের এমন কিছু সৃষ্টিগত অধিকার ও স্বাধীনতায় বিশ্বাস করা হয়েছে যা কখনও পরিবর্তন ও বিলুপ্ত করা সম্ভব নয়। যেহেতু এ মানবাধিকার ঘোষণা পাশ্চাত্য দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত ও মানুষকে সকল কিছুর কেন্দ্র মনে করে সেহেতু মানবাধিকারের অন্য সকল ভিত্তি,যেমন ন্যায়নীতি,সামাজিক নিরাপত্তা,জনকল্যাণ,সভ্যতা ও সংস্কৃতির উন্নয়ন প্রভৃতি এ দু’টিকে (মানবতাবাদ ও মানব স্বাধীনতা) কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণার ক্ষেত্রসমূহ

(ক) নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারসমূহ

১. দৈহিক স্বাধীনতা ও জীবনের অধিকার।

২. ব্যক্তিস্বাধীনতা ও নিরাপত্তা।

৩. মানবিক আচরণগত অধিকার।

৪. বাসস্থানের অধিকার।

৫. আইনের ক্ষেত্রে সাম্য।

৬. বিচারের অধিকার।

৭. চিন্তা,বিবেক ও ধর্মের স্বাধীনতা।

৮. বিবাহ ও পরিবার গঠনের অধিকার।

৯. শিশুর পারিবারিক পৃষ্ঠপোষকতার অধিকার।

১০. সংখ্যালঘুদের অধিকার।

১১. কোন বৈষম্য ছাড়া আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার।

১২. রাজনৈতিক ও সরকারী কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণের অধিকার।

১৩. অন্যান্য।

(খ) সামাজিক,অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারসমূহ

১. শ্রমের অধিকার।

২. মালিকানার অধিকার।

৩. ব্যবসায়ের অধিকার।

৪. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অধিকার।

৫. শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা ও বিকাশের উপযোগী সমাজের অধিকার।

৬. জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ গঠনের অধিকার।

৭. সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অধিকার।

৮. সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান গঠনের অধিকার

৯. নব আবিষ্কার ও উদ্ভাবন সম্পর্কে জানার অধিকার।

১০. সকল বস্তুগত ও নৈতিক সাহায্য লাভের অধিকার।

১১. অন্যান্য।

ইসলামের দৃষ্টিতে মানব

১. মানুষ এক সম্মানিত সৃষ্টি : আল্লাহ্ বলেছেন,لقد کرمنا بنی آدم“অর্থাৎ নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি।”-(সূরা আল ইসরা : ৭০)

মানুষ মহান আল্লাহর মর্যাদার প্রকাশস্থল। মানুষের এ মর্যাদা তাকে প্রকৃত অর্থেই এক বিশেষত্ব দান করেছে এবং সমগ্র সৃষ্টির মাঝে সে উচ্চতর অবস্থান লাভ করেছে। এ সম্মান ও মর্যাদার কারণেই মানুষের জন্য প্রণীত যে কোন আইন ও নৈতিক শিক্ষা এর সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল হতে হবে। তার এ মূল্যের কারণেই তার সকল অধিকার,যেমন স্বাধীনতা,নিরাপত্তা,বেঁচে থাকার অধিকার,শিক্ষার অধিকার সব কিছুই তার সত্তার সঙ্গে সংগতিশীল করে ব্যাখ্যা দান করতে হবে।

২. মানুষ স্রষ্টার প্রত্যাশী : মানুষ সত্তাগতভাবে আল্লাহকে চায়। সে ঐ খোদাকে চায় যাকে সে চেনে এবং ভালবাসে। বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে প্রমাণিত যে,মানুষ স্বাধীন ও বিচ্ছিন্ন কোন অস্তিত্ব নয়,বরং তার সমগ্র অস্তিত্ব ‘সম্পর্কিত ও নির্ভরশীল’ এক অস্তিত্ব। তার এ অস্তিত্ব এক স্বাধীন অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত আর তা হলো আল্লাহ্পাক। এ সম্পর্ক স্রষ্টার ওপর তার নিরঙ্কুশ ও সত্তাগত নির্ভরশীলতামূলক এক সম্পর্ক।

আল্লাহ্ বলেছেন,يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَنْتُمُ الْفُقَرَاءُ إِلَى اللَّهِ “হে মানব জাতি! তোমরা (সম্পূর্ণরূপে) আল্লাহর মুখাপেক্ষী।”-(সূরা ফাতির : ১৫)

এ আয়াতে দু’টি মহাসত্য বর্ণিত হয়েছে। প্রথমত মানুষ স্বাধীন কোন অস্তিত্ব নয়,দ্বিতীয়ত তার সম্পর্ক ও নির্ভরশীলতা শুধু আল্লাহর ওপর,অন্য অস্তিত্বের সঙ্গে তার এরূপ সম্পর্ক নেই। তাই মানুষের জন্য প্রণীত আইন তার খোদামুখিতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হওয়া আবশ্যক। যে আইনী শিক্ষা মানুষকে স্বাধীন ও স্রষ্টা হতে বিচ্ছিন্ন মনে করে তা সত্যনির্ভর হতে পারে না।

৩. মানুষ চিরন্তন সত্তার অধিকারী : ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ কখনও চিরতরে ধ্বংস হবে না। কারণ মৃত্যুর পর রয়েছে অনন্ত জীবন। তাই ইসলামী আইন এমনভাবে প্রণীত যে তা ইহ ও পারলৌকিক উভয় জীবনকে ধারণ করে।

৪. সমগ্র বিশ্বজগতের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক রয়েছে : এ চিরন্তন সত্তা মানুষ,তার স্রষ্টার নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভ করবে। তার সঙ্গে সমগ্র বিশ্বজগতের সম্পর্ক রয়েছে। তাই মানুষের কোন কর্মই তার আত্মার ওপর প্রভাব না রেখে পারে না। তার কথা,লেখা,আচরণ সব কিছুই বিশ্বের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই কোন আইনই তার নৈতিকতা,মানসিক অবস্থা ও লক্ষ্যের সঙ্গে সংগতিহীন হতে পারে না।

৫. ব্যক্তিগত ও সামাজিক দিক : মানুষের ব্যক্তিগত ও সমাজিক দু’টি দিক রয়েছে। ব্যক্তি অধিকারের সঙ্গে সামাজিক অধিকারের দ্বন্দ্ব দেখা দিলে সামাজিক অধিকারকে প্রাধান্য দিতে হবে।

ইসলামে মানবিধাকারের ভিত্তিসমূহ ও পাশ্চাত্য মানবাধিকারের সঙ্গে এর পার্থক্য

মানুষের অভ্যন্তরে কিছু গুণাবলী সম্ভাবনা ও যোগ্যতা আকারে বিদ্যমান রয়েছে যা বাস্তব রূপ লাভ করার পরও তার সত্তায় সংরক্ষিত থাকে। কেন সকল মানুষ স্বাধীনতা ও ন্যায়পরায়ণতাকে পছন্দ করে? কেন সে বৈষম্য ও অবিচারকে অপছন্দ করে? সুতরাং,বোঝা যায় সকল মানুষের মধ্যে একটি সাধারণ সত্তা রয়েছে যার ওপর ভিত্তি করেই মানবাধিকারের একক সনদ প্রণয়ন সম্ভব হয়েছে। এই সাধারণ সত্তাই মানবাধিকারের মূল ভিত্তি যাকে ইসলামী পরিভাষায় ‘ফিতরাত’ বলে অভিহিত করা হয়। যেমন কোরআনে উল্লিখিত হয়েছে,

فَأَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا فِطْرَتَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ

“তুমি একনিষ্ঠভাবে নিজেকে ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। এটিই আল্লাহর প্রকৃতি (ফিতরাত),যে প্রকৃতির ওপর তিনি মানবকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটিই সরল ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না।”-(সূরা রুম : ৩০)

ইসলাম মানুষকে সর্বোত্তম সৃষ্টি ও আল্লাহর খলীফা বা প্রতিনিধি বলে উল্লেখ করেছে। তাই ইসলামে মানবাধিকার এমন কিছু মৌলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত যা তার মর্যাদার সঙ্গে সংগতিশীল। মোটামুটিভাবে বলা যায় ইসলামে মানবাধিকার পাঁচটি মৌলনীতির ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত :

১. উপযুক্ত জীবন (তার মর্যাদার সঙ্গে সংগতিশীল জীবন)

২. মানুষের সত্তাগত মর্যাদা ও মূল্য

৩. উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ

৪. দায়িত্বপূর্ণ স্বাধীনতা

৫. ন্যায়বিচার ও আইনের ক্ষেত্রে সাম্য

এই মৌলনীতিসমূহ সকল মানুষের জন্যই সমভাবে প্রযোজ্য।

এই মৌলনীতিসমূহের সঙ্গে পাশ্চাত্য মানবাধিকার ধারণার মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। যদিও এই মৌলনীতিসমূহকে পাশ্চাত্যের আইনবিদগণও গ্রহণ করেন,তবে উল্লিখিত শর্ত ব্যতিরেকেই তা উপস্থাপন করে থাকেন। যেমন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদে জীবনের অধিকার অন্যতম মূলনীতি হিসেবে স্বীকৃত,কিন্তু উপযুক্ততার বিষয়টি সেখানে উল্লিখিত হয় নি। তেমনি মানুষের মর্যাদা ও সত্তাগত মূল্যের বিষয়টিকে তারা মৌলনীতি হিসেবে গ্রহণ করলেও মানুষের প্রকৃষ্টতা ও শ্রেষ্ঠত্বের জন্য আত্মিক উন্নয়নের লক্ষ্যে তাকওয়া ও ধর্মীয় প্রশিক্ষণের বিষয়টি উত্থাপিত হয় নি। কারণ প্রকৃতপক্ষে এই মৌলনীতিটির উৎস ঐশী বিশ্বদৃষ্টির মধ্যে নিহিত,বস্তুবাদের মধ্যে নয়। অনুরূপ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণায় স্বাধীনতার বিষয়টি শর্তহীনভাবে উল্লিখিত হয়েছে যা অন্য মূলনীতির (মানুষের সত্তাগত মর্যাদার) সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল নয়। এরূপ দ্বিমুখিতার কারণ পাশ্চাত্য বিশ্বদৃষ্টি।

এর বিপরীতে যেহেতু ইসলামে মানবাধিকারের বিষয়টি ঐশী বিশ্বদৃষ্টির ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত এবং ইসলাম মনে করে মানুষ এক উচ্চতর লক্ষ্যে সৃষ্ট হয়েছে সেহেতু ইসলামী মানবাধিকারের মৌলনীতিও এর সঙ্গে সংগতিশীল হওয়া বাঞ্ছনীয়।

চলবে..

সূত্র:জ্যোতি, বর্ষ ১ সংখ্যা ৩।

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)