আল হাসানাইন (আ.)

রক্তাক্ত ফিলিস্তিন -১ম পর্ব

2 বিভিন্ন মতামত 05.0 / 5
ইসলামের আগমন পর্যন্ত ফিলিস্তিনের প্রাচীন ইতিহাস

প্রচীনকালে কেনান নামে পরিচিত ফিলিস্তিন ভূ-খন্ডের আয়তন ২৫০০ বর্গ কিলোমিটার। দেশটি ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকুল এবং মিশর, জর্দান, সিরিয়া ও লেবাননের পাশে অবসি'ত। ফিলিস্তিন একটি উর্বর ও ভারসাম্যপূর্ণ আবহাওয়ার অধিকারী দেশ। এলাকাটি হযরত মূসা (আঃ) ও ঈসা (আঃ)-এর মত মহান নবীদের আর্বিভাবের এবং হযরত ইবরাহীমের (আঃ) চলাচল ও বসবাসের স্থান ছিল। ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিতেও এর অবস্থান হচ্ছে অত্যন্ত কৌশলগত ও নাজুক।
জেরুজালেম বা বায়তুল মুকাদ্দাস শহরটি এমন এক পাহাড়ী এলাকায় অবসি'ত যার মুরিয়া পাহাড়ের চূড়ায় ইয়াহবা বা জেহুভা মন্দির রয়েছে। বায়তুল মুকাদ্দাস ফিলিস্তিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। শহরটি পূর্বদিক থেকে যায়ন নামক পাহাড় ও পশ্চিম দিক থেকে যয়তুন নামক পাহাড় দিয়ে ঘেরা। যায়ন তথা রৌদ্রোজ্জ্বল পাহাড়ের নাম তৌরাত ও ইঞ্জিলেও বর্ণিত হয়েছে।
ফিলিস্তিনের ঘটনাবহুল ইতিহাস অতীতকালের নবীগণের কাহিনী দিয়ে শুরু হয়। হযরত ইয়াকুবের (আঃ) নাম ছিল ইসরাইল। বনি ইসরাইল হযরত ইয়াকুবেরই বংশধর। খৃস্টপূর্ব তের শতাব্দী যাবত তারা সেখানে ক্ষমতাধর ছিলেন। মিশরে ফেরাউনের রাজত্বকালে এবং হযরত মূসার (আঃ) আগমনের পূর্বে ইসরাইলীদের জনসংখ্যা খবই বৃদ্ধি পায়। মিশরে হযরত ইয়াকুবের (আঃ) আগমনের প্রায় চারশ’ তিরিশ (৪৩০) বছর পর হযরত মূসা (আঃ) বনি ইসরাইলকে মিশর থেকে প্রতিশ্রুতি ভূ-খন্ডে স্থানান্তরের জন্য পরিচালনা শুরু করেন। এ পরিক্রমা ঘটনাবহুল চল্লিশ বছর যাবত অব্যাহত থাকে। এ সময়ই হযরত মূসা (আঃ) যখন চল্লিশ দিনের জন্য তাঁর গোত্র ছেড়ে দশ অধ্যায়বিশিষ্ট খোদায়ী নির্দেশনামা আনতে অদৃশ্য হয়ে যান তখন বনি ইসরাইল পুনরায় মূর্তি পূজায় আত্মনিয়োগ করে। আর এই নাফরমানীর কারণেই চল্লিশ বছর ধরে এ সমপ্রদায় মরুভূমিতে লক্ষ্যহীনভাবে পথ হারিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
হযরত মূসা (আঃ) এই দীর্ঘ সময় ধরেও স্বীয় বিভ্রান্ত সমপ্রদায়কে হেদায়েত দান থেকে বিরত হননি। কিন্তু বনী ইসরাইল বার বার বিদ্রোহ ও সীমালংঘন করা অব্যাহত রাখে। হযরত মূসা (আঃ)- এর ওফাতের পর ইউশা বনী ইসরাইলীকে জর্দান থেকে দেখিয়ে নেয়ার ব্যাপারে হযরত মুসার স'লাভিষিক্ত হন। তখন থেকে এ সমপ্রদায় যে কোন নতুন শহরে উপনীত হতো সেখানেই লুটতরাজ ও গণহত্যা চালাতো। ফলে জেরুজালেমের বাদশাহ আরো পাঁচটি শহরের বাদশাহর সাথে মৈত্রী স্থাপন করে একযোগে ইউশা ও বনী ইসরাইলের সাথে যুদ্ধে নামে। কিন্তু এরা সবাই পরাজিত হলে বনী ইসরাইল এদের ফাঁসীকাষ্ঠে ঝোলায়। তবে ফিলিস্তিনী জাতি আগ্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ অব্যাহত রাখে এবং শেষ পর্যন্ত বনি ইসরাইলকে পরাজিত করে। এরপরও দুই সমপ্রদায়ের মাঝে আরো বেশ ক’টি যুদ্ধ বাঁধে। অবশেষে বনি ইসরাইলের শক্তি বেড়ে যায় এবং বিভিন্ন শহরের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়। হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মের প্রায় এক হাজার বছর আগে হযরত দাউদ (আঃ) ফিলিস্তিনীদের হাত থেকে জেরুজালেমকে মুক্ত করতে সক্ষম হন এবং সেখানে বায়তুল মুকাদ্দাস তথা আল্লাহর ঘর নির্মাণ করেন। হযরত দাউদ (আঃ)-এর পুত্র হযরত সুলায়মান (আঃ) বায়তুল মুকাদ্দাসের নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ করেন। মক্কা শরীফে হযরত ইবরাহীম (আঃ) কর্তৃক কা’বা শরীফ নির্মাণের প্রায় এগারো শ’ (১১০০) বছর পর এবং হযরত ঈসা (আঃ)-এর জন্মের নয়শ’ সত্তর (৯৭০) বছর আগে বায়তুল মুকাদ্দাস নির্মিত হয়। কা’বা ঘরের নির্মাতা হযরত ইবরাহিমের চৌদ্দতম অধঃস-ন পুরুষ হচ্ছেন হযরত দাউদ (আঃ) । অন্যদিকে মেথিউর বাইবেল অনুসারে হযরত ঈসার (আঃ) -এর সাথে হযরত দাউদের সম্পর্কে আটাশ পুরুষের। আর এভাবেই তৌহিদপন্থীদের প্রথম হারাম শরীফ হয়ে দাঁড়ায় মক্কা (কা’বা) এবং মসজিদুল আকসা (আল কুদস) পরিণত হয় দ্বিতীয় হারামে।
হযরত মুসা (আঃ)-এর ভেলাটি হচ্ছে মুসলমানদের রেওয়ায়েত অনুসারে সেই ছোট গোলাকার ভেলা যাতে হযরত মুসার মা নবজাত মুসাকে রেখে নীলনদে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে হযরত মুসা (আঃ) এই ভেলার ভেতর তাঁর নির্দেশাবলী ও ওহীর লিপিকা বোর্ডগুলো, বর্ম ও নব্যুয়তের নিদর্শনাদি রাখেন। এতে হাত দেয়ার অনুমতি কারো ছিল না। হযরত দাউদের সময় এ ভেলাটির বাইরের দিক ও ভেতরের দিকটিকে সোনার প্রলেপ দিয়ে অলঙ্ককৃত করা হয় এবং একে যায়ন পাহাড়ে নিয়ে আসেন। এরপর একে কেন্দ্র করে একটি কোরআন গাহ তৈরী করা হয়। এ ভেলাটি কিছুকাল বিজয়ী ফিলিস্তিনদের হাতে আসে। অতঃপর পুনরায় তা বনি ইসরাইলের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। হযরত সুলায়মানের (আঃ)-এর সময় পর্যন্ত এটি যায়ন পাহাড়েই ছিল। কিন্তু বায়তুল মুকাদ্দাস নির্মাণের পর ভেলাটিকে কুদস শরীফে স্থানান্তর করা হয়। হযরত সুলায়মান (আঃ) চল্লিশ বছর বাদশাহী করেন এবং বায়তুল মুকাদ্দাসে শান্তি প্রতিষ্ঠিত করেন। কিন্তু তাঁর ইনে-কালের পর বনি ইসরাইল আবারো জুলুম-অত্যাচার ও লুটতরাজ শুরু করে। খৃষ্টপূর্ব ৭৩০ সালে শালমুনসায় বনি ইসরাইলের উপর আক্রমণ চালায় এবং এদের অনেককে বন্দী করে নেয়। এছাড়া সে জেরুজালেমে বনি ইসরাইলের বদলে ব্যাবিলনীদের অভিভাসন দান করে। খৃষ্টপূর্ব ৫৮৬ সালেও বখনাছেরের সময় ইয়াহুদী ভূখন্ডটি আশুরী সমপ্রদায়ের হামলার শিকার হলে বনি ইসরাইলের পতন ঘটে এবং এরা বন্দী হয়। এতে ইয়াহুদীদের রাজত্ব ও বাদশাহী ভেঙ্গে পড়ে এবং ইসরাইলের জনতা ছত্রভঙ্গ কিংবা ব্যাবিলনীদের হাতে বন্দী হয়। আগ্রাসীরা সুলায়মানের (আঃ)-ইবাদতখানাটি ধ্বংস করে ফেলে।
আল কুদস নির্মাণের ৪৮০ বছর পূর্বে (খৃষ্টপূর্ব প্রায় তেরশো বছর আগে)ইউশা বিন নুনের নেতৃত্বে বনি ইসরাইল ও ইয়াহুদী সমপ্রদায়ের ফিলিস্তিন ভূ-খন্ডে আগমনের পর থেকে এ দেশটি আনন্দের মুখ দেখেনি। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তিনহাজার তিনশো বছর ধরে ফিলিস্তিন ভূ-খন্ডে অশান্তির আগুনে জ্বলছে।
ইয়াহুদী সমপ্রদায়ের পরবর্তী নবীগণ, যেমন হযরত আরমিয়া আশইয়া ও দানিয়েল (আঃ)-এর (ইরানের শুশ শহরে তাঁর মাজার) মত নবীরা জেরুজালেমের ধ্বংস ও বনি ইসরাইলের দুঃখ-কষ্ট ও বন্দীত্ব প্রত্যক্ষ করেছেন এবং এদের সান্ত্বনা ও প্রবোধ দিয়েছেন। তাঁরা সব সময়ই ইয়াহুদীদের মুক্তির ও মহান মুক্তিদাতার আগমনের সুসংবাদ দান করতেন। তাঁদের বাণী, কবিতা ও শ্লোক তৌরাতে উল্লেখ রয়েছে। এ সময়ই পারস্যে বাদশাহ সাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। তিনি একের পর এক রাজ্য বিজয় শুরু করেন। এ বিষয়টি ইয়াহুদী সমপ্রদায় ও এদের নেতাদের উল্লসিত করে তুলে। শেষ পর্যন্ত সাইরাস ব্যাবিলনকেও দখল করে নিয়ে ইয়াহুদী সমপ্রদায় ও বনি ইসরাইলকে মুক্ত করে দেন এবং এদের ফিলিস্তিন ও জেরুজালেমে প্রত্যাবর্তন করান । সাইরাস সকল ধর্ম ও সমপ্রদায়ের সাথে সদাচারণ করতেন এবং তারই নির্দেশে আল্লাহর ঘর (আল্‌ কুদস) পুনরায় নির্মিত হয়। জেরুজালেমের শান্তিপূর্ণ অবস্থা তৃতীয় দারিউস বাদশার সময় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। খৃষ্টপূর্ব ৩২৩ সালে আলেকজান্ডার মিশর, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, ফানিকিয়া ও ইরানের উপর আগ্রাসন শুরু করেন। এতে পুনরায় এসব দেশে দেদার ধংসযজ্ঞ , গণহত্যা ও লুটতরাজ নেমে আসে। ইরান তথা পারস্যের সকল ধনভান্ডার লুট হয়ে যায়। ইরানের খুশাইয়ারবাদশা কর্তৃক এথেন্স ধ্বংস হওয়ার প্রতিশোধ হিসাবে আলেকজান্ডার তখতে জামাশদ তথা পারসেপোলিসকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করেন এবং স্বীয় অধিনায়কদের বিজিত শহর ও দেশগুলোর শাসক হিসাবে নিয়োগ করেন।
আলেকজান্ডারের পর তার উত্তরসূরিরা ফিলিস্তিনের উপর আধিপত্য বিস্তার করে। খৃষ্টপূর্ব ৬৩ সন থেকে সেখানে রোমকদের আধিপত্য শুরু হয় ওরা আর্মেনিয়া ,এশিয়ার কিছু অংশ ও আফ্রিকায় আগ্রাসন চালানোর পর সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের উপর চড়াও হয়। এদের হাতে বারো হাজার ইয়াহুদী নিহত ও বহু শহর ধ্বংস হয়।
এরকম পরিসি'তিতে হযরত ঈসা (আ.)-এর আগমন ছিলো ওই অঞ্চলের জনগণের জন্য আশা-ভরসা ও কামনা-বাসনার উৎস যাতে তারা মুক্তি পেতে পারে। হযরত ঈসা (আঃ) যখন জালিল প্রদেশস' নাছেরায় তাঁর ও তাঁর পরিবারবর্গের জন্মস্থান ছেড়ে সাহাবীদের (হাওয়ারী) নিয়ে জেরুজালেমের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তখন তিনি প্রচুর মুজেজা ও কেরামতি প্রদর্শন করেন। বাইবেলে (ইঞ্জিলে) এসবের পূর্ণ বিবরণ রয়েছে। হযরত ঈসা (আঃ) জেরুজালেমে (বায়তুল মুকাদ্দাসে) অবসি'ত ইবাদতগাহে সব সময় যাতায়াত করতেন এবং প্রতিদিন জনগণকে শিক্ষা-দানে মশগুল থাকতেন। এ বিষয়টি ইয়হুদী মোল্লাদের হিংসা-বিদ্বেষকে প্রজ্বলিত করে। এরা আল্লাহর নবীকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।
শেষ পর্যন্ত ইয়াহুদী পরিষদের ফতোয়ায় ও চক্রানে- ইয়াহুদী ভূ-খন্ডের রোমীয় শাসক হযরত ঈসাকে (আঃ) ফাঁসীকাষ্ঠে ও ক্রুশে বিদ্ধ করে হত্যা করে। (অবশ্য এ শাসক হযরত ঈসার একজন ভক্ত অনুরাগী ছিল।) তবে কুরআন মজিদ হযরত ঈসার ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার কথা অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, ‘‘আল্লাহ তাঁকে নিজের দিকে উপরে উঠিয়ে নেন। মসিহকে ওরা হত্যাও করতে পারেনি এবং ফাঁসিতেও ঝুলাতে সক্ষম হয়নি। বরং ওদের কাছে ওই রকমই প্রতিভাত হয়েছিল।’’ যাহোক হযরত ঈসা মসিহ চিরন্তন হয়ে গেলেন এবং প্রচুর অনুসারী জন্ম নিলো। হযরত ঈসার বিশেষ অনুরাগী রোমক শাসক এ ঘটনার পর থেকে ইয়াহুদীদের প্রতি কঠোর আচরণ শুরু করে। ফলে একের পর এক ইয়াহুদী বিদ্রোহ মাথা চাড়া দিয়ে উঠে আর রোমকরাও এদের ওপর ব্যাপক হত্যাকান্ড চালায়।
সত্তর খৃস্টাব্দে রোম সম্রাটের পুত্র টাইটাস আশি হাজার সৈন্য নিয়ে জেরুজালেম অবরোধ করে। ইয়াহুদীদের কয়েক মাস প্রতিরোধ সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তারা রোমকদের হাতে ভেঙ্গে পড়ে। রোমকরা বিজয় অর্জন করলে ইয়াহুদীরা পুনরায় আশ্রয়হীন ও শরণার্থীতে পরিণত হয়। হযরত ঈসা মসিহের অন্তর্ধানের প্রায় তিন’শ বছর পর রোম সম্রাট কনস্টান্টিন (৩০৬-৩৩৭ খৃস্টাব্দ) খৃস্টান ধর্ম গ্রহণ করেন এবং এ ধর্মকে সরকারী ধর্ম হিসাব ঘোষণা দেন। ফলে জেরুজালেম আবারো বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে। যেহেতু বেথেলহামকে (বায়তুল লাহাম) হযরত ঈসার জন্মস্থান এবং তাঁর কথিত মাজারের কেন্দ্র বলে ধরা হয় সেহেতু এরপর থেকে জেরুজালেম খৃস্টানদের কেন্দ্রীয় শহর বলে গণ্য হতে থাকে। সেখানে বহু গীর্জা নির্মিত হয়। ১৩৫ খৃস্টাব্দ থেকে পাঁচশো বছর সময় পর্যন্ত বায়তুল মুকাদ্দাসে আঙ্গুলে গোনা কতিপয় ইয়াহুদী মাত্র বসবাস করতো।
পারস্যের সাসানী বাদশাহ দ্বিতীয় খসরুর রাজত্বকালে ইরান ও রোম সম্রাটের মাঝে ৬০৪ খৃস্টাব্দ থেকে ৬৩০ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত লড়াই চলে। এতে ইরানী সৈন্যরা রোমকদের পরাজিত করে। ইরানীদের সহায়ক ইয়াহুদী গোষ্ঠীর পথ নির্দেশ মুতাবেক ইরান জেরুজালেম (ফিলিস্তিন) দখল করে নেয়। কিন্তু সম্রাট খসরু পারভিজের মৃত্যুর পর খৃস্টানরা পুনরায় ফিলিস্তিন দখল করে নেয়। চলবে..................
 

আপনার মতামত

মন্তব্য নেই
*
*

আল হাসানাইন (আ.)