মহানবী (সা.) এর নবুওয়াতের অভিষেক দিবস
মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ফেরেশতা সৌভাগ্য ও হেদায়েতের গ্রন্থের (আল কোরআন) প্রারম্ভক ও শুভ সূচনা হিসাবে কিছু আয়াত মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে পাঠ করেন। আর এ কয়েকটি আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার মধ্য দিয়ে হযরত মুহাম্মদ (সা.) নবুওয়াতের মর্যাদাপূর্ণ স্থানে অধিষ্ঠিত হলেন (এ ঘটনার মধ্য দিয়ে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুওয়াত আনুষ্ঠানিকভাবে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়)। ঐ ফেরেশতা ছিলেন হযরত জিবরাইল (আ.)। আর ঐ দিনটি ছিল মহানবী (সা.)-এর নবুওয়াতের অভিষেক (মাবআ’স) দিবস। আজকের এই পবিত্র দিনে সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিন্দন ।
নিঃসন্দেহে ফেরেশতার মুখোমুখি হওয়ার জন্য এক বিশেষ ধরনের প্রস্তুতি আবশ্যক। যতক্ষণ পর্যন্ত কোন ব্যক্তির আত্মা মহান ও আধ্যাত্মিকভাবে শক্তিশালী না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত নবুওয়াতের ভারী বোঝা বহন এবং ফেরেশতার সাথে সাক্ষাৎ করার ক্ষমতা তার হবে না। মহানবী মুহাম্মদ (সা.) দীর্ঘ ইবাদাত-বন্দেগী,চিন্তা ও ধ্যান এবং মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ও আনুকূল্যের দ্বারা এ বিশেষ যোগ্যতা ও প্রস্তুতি অর্জন করেছিলেন। অধিকাংশ সীরাত রচয়িতার উদ্ধৃতি অনুযায়ী মাবআ’স দিবসের আগে তিনি এমন সব স্বপ্ন দেখতেন যা ছিল আলোকোজ্জ্বল দিনের মতো বাস্তব।১
মহানবী (সা.)-এর নবুওয়াত দিবস তাঁর জন্ম ও ওফাত দিবসের মতোই ঐতিহাসিকদের দৃষ্টিতে নিশ্চিত ও চূড়ান্ত নয়। শিয়া আলেমগণ প্রায় ঐকমত্য পোষণ করেন যে,মহানবী (সা.) ২৭ রজব নবুওয়াতের পদ লাভ করেন। ঐ দিন থেকেই তাঁর নবুওয়াত শুরু হয়েছিল। কিন্তু সুন্নী আলেমদের প্রসিদ্ধ অভিমত হচ্ছে এই যে,মহানবী (সা.) পবিত্র রামযান মাসে এ সুমহান মর্যাদা লাভ করেছিলেন এবং পবিত্র বরকতময় এ মাসেই তিনি নিখিল বিশ্বের স্রষ্টা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে জনগণকে পথ প্রদর্শন করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত এবং রিসালাত ও নবুওয়াতের পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন।
যেহেতু শিয়ারা নিজেদেরকে মহানবীর ইতরাত ও আহলে বাইতের অনুসারী বলে বিবেচনা করে এবং হাদীসে সাকালাইন অনুসারে তাদের ইমামদের বক্তব্য ও বাণীকে সব দিক থেকে অকাট্য ও শুদ্ধ বলে বিশ্বাস করে এ কারণেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুওয়াতপ্রাপ্তির দিবস নির্ধারণ করার ব্যাপারে ঐ অভিমতের অনুসারী-যা মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইত থেকে নির্ভুলভাবে বর্ণিত হয়েছে। তাঁর সন্তানগণ (আহলে বাইত) বলেছেন,“আমাদের বংশের প্রধান ব্যক্তিটি (মহানবী) ২৭ রজব নবুওয়াতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।” এ সব পূর্ব প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ ও ভূমিকার ওপর ভিত্তি করে উপরিউক্ত বক্তব্য ও অভিমতের সত্যতা ও নির্ভুল হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের বিন্দুমাত্র সন্দেহ ও সংশয় পোষণ করা অনুচিত।
যে বিষয়টি (মহানবীর নবুওয়াতপ্রাপ্তির দিবস নির্ধারণ করার ব্যাপারে প্রচলিত) অপর একটি অভিমতের দলিল হিসাবে বিবেচিত তা হচ্ছে পবিত্র কোরআনের ঐ সকল আয়াত যেগুলোতে উল্লিখিত হয়েছে যে,এ গ্রন্থ (পবিত্র কোরআন) পবিত্র রামযান মাসে অবতীর্ণ হয়েছিল। যেহেতু নবুওয়াত দিবস ওহীর সূচনা এবং পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার দিবস ছিল অতএব,অবশ্যই বলা উচিত যে,নবুওয়াত দিবস যে মাসে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছিল সে মাসেই হতে হবে। আর ঐ মাসটি হচ্ছে পবিত্র রামযান মাস। এখন যে সব আয়াতে পবিত্র রামযান মাসে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার বিষয়টি স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর অনুবাদসহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
شهر رمضان الّذي أنزل فيه القرآن
রামযান মাসেই পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছিল। (সূরা বাকারাহ্ : ১৮৫)
حم و الكتاب المبين إنّا أنزلناه في ليلة مباركة
হা মীম স্পষ্ট বর্ণনাকারী গ্রন্থের (পবিত্র কোরআন) শপথ,নিশ্চয়ই আমরা এ গ্রন্থকে একটি বরকতময় রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি। (সূরা দুখান : ২ ও ৩)
إنّا أنزلناه في ليلة القدر
আর উক্ত বরকতময় রজনী হচ্ছে ঐ শবে কদর (মহিমাময় রাত্রি) যা সূরা কদরে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে : “আমরা পবিত্র কোরআনকে কদরের রাতে অবতীর্ণ করেছি।”(সূরা কদর : ১)
শিয়া আলেমদের জবাব
শিয়া মুহাদ্দিস ও মুফাসসিরগণ বিভিন্ন উপায়ে উপরিউক্ত যুক্তি ও দলিল-প্রমাণ খণ্ডন করেছেন। আমরা তন্মধ্যে কেবল কয়েকটি এখানে উল্লেখ করব :
প্রথম উত্তর : উপরিউক্ত আয়াতসমূহ থেকে প্রতীয়মান হয় যে,পবিত্র কোরআন রমযান মাসের একটি বরকতময় রাতে অবতীর্ণ হয়েছিল। আর উক্ত রজনী পবিত্র কোরআনে ‘শবে কদর’ অর্থাৎ ভাগ্য রজনী নামে পরিচিত হয়েছে। আর এ সব আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় না যে,ঐ রাতেই পবিত্র কোরআন মহানবী (সা.)-এর পবিত্র হৃদয়ের ওপর অবতীর্ণ হয়েছিল,বরং পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন ধরনের নুযূল থাকার সম্ভাবনাই বেশি। এ সব নুযূলের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে মহানবীর ওপর পবিত্র কোরআনের ধারাবাহিক ও পর্যায়ক্রমিক নুযূল। আরেক ধরনের নুযূল হচ্ছে একত্রে একবারে সম্পূর্ণ কোরআনের নুযূল। লওহে মাহফূয (সংরক্ষিত ফলক) থেকে বাইতুল মামূরে সম্পূর্ণ কোরআন একত্রে একবারে অবতীর্ণ (নাযিল) হয়েছিল।২ সুতরাং ২৭ রজব যদি মহানবী (সা.)-এর ওপর সূরা আলাকের কয়েকটি আয়াত এবং পবিত্র রমযান মাসে যদি (পবিত্র কোরআনের ভাষায়) লওহে মাহফূয নামক একটি স্থান থেকে অন্য এক স্থান যা রেওয়ায়েতসমূহে বাইতুল মামূর নামে অভিহিত (হয়েছে) সেখানে সম্পূর্ণ কোরআন একত্রে একবারে অবতীর্ণ হয়,তাহলে কি এতে কোন অসুবিধা ও আপত্তি থাকতে পারে?
এ বক্তব্য ও অভিমতের পক্ষে প্রমাণ হচ্ছে সূরা দুখানের ৩ নং আয়াতটি যাতে এরশাদ হচ্ছে:
আমরা পবিত্র কিতাবটি (কোরআন) একটি বরকতময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি। [যে সর্বনামটি ‘কিতাব’ (গ্রন্থ)-এর দিকে প্রত্যাগমন করে সেই সর্বনামটি প্রমাণস্বরূপ উপস্থাপন করলে] এ আয়াতটির স্পষ্ট প্রকাশিত অর্থ হচ্ছে এই যে,সম্পূর্ণ কিতাবটি পবিত্র রমযানের একটি বরকতময় রজনীতে অবতীর্ণ হয়েছে। অবশ্যই এ নুযূলটি ঐ নুযূল থেকে ভিন্ন ও স্বতন্ত্র যা মহানবীর নবুওয়াতের মাকামে অভিষেকের দিবসে বাস্তবায়িত হয়েছিল। কারণ নবুওয়াতের মাকামে অভিষেক দিবসে গুটিকতক আয়াতই (সূরা আলাকের প্রথম ৫ আয়াত) অবতীর্ণ হয়েছিল।
সার সংক্ষেপ
যে সব আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে,পবিত্র কোরআন রামযান মাসের কদরের পুণ্যময় রাতে অবতীর্ণ হয়েছিল সেগুলো থেকে প্রমাণিত হয় না যে,যে দিবসে মহানবী (সা.) নবুওয়াতের পদে অভিষিক্ত হয়েছিলেন এবং সর্বপ্রথম কয়েকটি আয়াতও অবতীর্ণ হয়েছিল সে দিবসটি ছিল পবিত্র রামযান মাসে। কারণ উপরিউক্ত আয়াতসমূহ থেকে প্রতীয়মান হয় যে,সম্পূর্ণ ঐশী গ্রন্থটি ঐ মাসে (রামযান মাসে) অবতীর্ণ হয়েছিল,অথচ মহানবীর নবুওয়াতের অভিষেক দিবসে কেবল গুটিকতক আয়াতই অবতীর্ণ হয়েছিল। এমতাবস্থায় পবিত্র কোরআনের সম্পূর্ণ অবতীর্ণ হওয়াটাই ঐ মাসে (রামযান মাসে) লওহে মাহফূয থেকে বাইতুল মামূরে সমগ্র পবিত্র কোরআনের অবতীর্ণ হওয়াকেই সম্ভবত বুঝিয়ে থাকবে। শিয়া ও সুন্নী আলেমগণ এতদ্প্রসঙ্গে বেশ কিছু হাদীসও বর্ণনা করেছেন। বিশেষ করে আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল আযীম আয-যারকানী ‘মানাহিলুল ইরফান ফী উলূমুল কোরআন’ নামক গ্রন্থে ঐ সব রেওয়ায়েত বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।৩
দ্বিতীয় উত্তর
সবচেয়ে শক্তিশালী ও দৃঢ় উত্তর যা এখন পর্যন্ত আলেমদের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে এই দ্বিতীয় উত্তর। আল্লামা তাবাতাবাঈ তাঁর মূল্যবান তাফসীর গ্রন্থ ‘আল মীযান’-এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছেন।৪ এ উত্তরটির সার সংক্ষেপ নিচে উল্লেখ করা হলো :
‘আমরা এ গ্রন্থকে রামযান মাসে অবতীর্ণ করেছিলাম’-পবিত্র কোরআনের এ আয়াতটির প্রকৃত অর্থ কি? এ আয়াতটির প্রকৃত ও যথার্থ অর্থ হচ্ছে সম্পূর্ণ কোরআনের প্রকৃত স্বরূপ ও হাকীকত রামযান মাসে মহানবী (সা.)-এর পবিত্র অন্তঃকরণের ওপর অবতীর্ণ হয়েছিল। কারণ পর্যায়ক্রমিক (ধারাবাহিক) অস্তিত্ব ছাড়াও পবিত্র কোরআনের এমন এক প্রকৃত বাস্তব স্বরূপ আছে যার সাথে মহান আল্লাহ্ তাঁর প্রিয় রাসূলকে রামযান মাসের কোন একটি নির্দিষ্ট রজনীতে পরিচিত করিয়ে দিয়েছিলেন।
যেহেতু মহানবী সম্পূর্ণ পবিত্র কোরআন সম্পর্কে অবগত ছিলেন তাই যতক্ষণ পর্যন্ত পবিত্র কোরআনের ধারাবাহিক নুযূলের বিধান বাস্তবে জারী করা না হয়েছে ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁর প্রতি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পবিত্র কোরআনের ব্যাপারে ত্বরা না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।৫
এ উত্তরটির সার সংক্ষেপ
পবিত্র কোরাআনের যেমন একটি সার্বিক তাত্ত্বিক ও প্রকৃত বাস্তব অস্তিত্ব আছে যা একযোগে একত্রে (একবারেই) পবিত্র রামযান মাসে অবতীর্ণ হয়েছিল ঠিক তেমনি এ গ্রন্থের আরেকটি অস্তিত্ব আছে যা পর্যায়ক্রমিক (ধারাবাহিক)-যার সূচনা মহানবী (সা.)-এর নবুওয়াতে অভিষেক দিবসে কয়েকটি আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হয়েছে এবং মহানবীর জীবন সায়াহ্ন পর্যন্ত বলবৎ ছিল (অর্থাৎ পবিত্র কোরআনের ধারাবাহিক অবতরণ মহানবীর নবুওয়াতে অভিষেক দিবসে শুরু হয়ে তাঁর ওফাত পর্যন্ত বলবৎ ছিল।)
তৃতীয় উত্তর
পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার সাথে মহানবী (সা.)-এর নবুওয়াতের দায়িত্বে অভিষিক্ত হওয়ার বিষয়টি যুগপৎ ছিল না।
ওহীরও বেশ কিছু পর্যায় আছে। ওহীর প্রথম পর্যায় : সত্য স্বপ্নদর্শন (এ পর্যায়ে নবী কেবল সত্য স্বপ্ন দর্শন করেন।) ওহীর দ্বিতীয় পর্যায় : নবী কর্তৃক গায়েবী ও ঐশী আহবান শুনতে পাওয়া (অর্থাৎ এ পর্যায়ে নবী অদৃশ্য ঐশী আহবান শুনতে পান),তবে এ ক্ষেত্রে তিনি কোন ফেরেশতাকে প্রত্যক্ষ করেন না;ওহীর চূড়ান্ত ও সর্বশেষ পর্যায় হচ্ছে নবী ফেরেশতার কাছ থেকে মহান আল্লাহর বাণী শোনেন যাঁকে তিনি দেখেন এবং যাঁর মাধ্যমে তিনি অন্যান্য জগতের প্রকৃত অবস্থা ও বাস্তবতাসমূহের সাথেও পরিচিত হন।
যেহেতু মানবাত্মার একেবারে প্রাথমিক পর্যায় ওহীর বিভিন্ন পর্যায় ধারণ করতে অক্ষম সেহেতু অবশ্যই ওহী ধারণ করার বিষয়টি পর্যায়ক্রমিকভাবে বাস্তবায়িত হতে হবে। সুতরাং নির্দ্বিধায় বলা উচিত মহানবীর নবুওয়াতে অভিষেক দিবসে (২৭ রজব) এবং এর পরেও আরো বেশ কিছুদিন পর্যন্ত তিনি স্বর্গীয় ঐশী আহবানই শুনতে পেতেন। তিনি শুনতে পেতেন যে,তিনি মহান আল্লাহর রাসূল। নবুওয়াত দিবসে তাঁর ওপর কোন আয়াতই অবতীর্ণ হয় নি। অতঃপর বেশ কিছুদিন পর পবিত্র রামযান মাসে পবিত্র কোরআনের ধারাবাহিক নুযূল শুরু হয়।
সুতরাং সংক্ষেপে বলা যায় যে,রজব মাসে মহানবীর নবুওয়াতে অভিষিক্ত হওয়ার বিষয়টি ঐ মাসেই পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার সাথে মোটেও সংশ্লিষ্ট নয়। এ বক্তব্যের ভিত্তিতে মহানবীর যদি রজব মাসে নবুওয়াতে অভিষিক্ত এবং পবিত্র কোরআন যদি একই বছরের রমযান মাসে অবতীর্ণ হয় তাহলে কি কোন অসুবিধা আছে?
উপরিউক্ত উত্তরটি যদিও অনেক ঐতিহাসিক বর্ণনা ও বিবরণের সাথে খাপ খায় না (কারণ ঐতিহাসিকগণ স্পষ্ট বলেছেন যে,সূরা আলাকের কতিপয় আয়াত নবুওয়াতে অভিষিক্ত হওয়ার দিবসেই অবতীর্ণ হয়েছিল।) কিন্তু এতদ্সত্ত্বেও এমন কিছু রেওয়ায়েত আছে যেগুলোতে মহানবীর নবুওয়াতে অভিষিক্ত হওয়ার দিবসের ঘটনাটি বলতে কেবল গায়েবী অর্থাৎ অদৃশ্য (ঐশী) আহবানের কথাই উল্লিখিত হয়েছে এবং পবিত্র কোরআন অথবা কতিপয় আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার বিষয়টি বর্ণিত হয় নি;বরং নবুওয়াত দিবসের ঘটনা ঠিক এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে,ঐ দিন মহানবী একজন ফেরেশতাকে দেখতে পেয়েছিলেন যিনি তাঁকে সম্বোধন করে বলেছিলেন,
يا محمّد أنّك لرسول الله “হে মুহাম্মদ! নিশ্চয়ই আপনি মহান আল্লাহর রাসূল।” আবার কিছু সংখ্যক বর্ণনায় কেবল গায়েবী আহবান ও সম্বোধনধ্বনি শোনার কথাই বর্ণিত হয়েছে এবং কোন ফেরেশতাকে দেখার বিষয় উল্লিখিত হয় নি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে বিহারুল আনওয়ার অধ্যয়ন করুন।৬
অবশ্য তৃতীয় এ উত্তরটি চতুর্থ উত্তর থেকে ভিন্ন ও স্বতন্ত্র। চতুর্থ উত্তরে বলা হয়েছে যে,মহানবীর বেসাত (নবুওয়াতে অভিষিক্ত হওয়া) রজব মাসেই হয়েছিল এবং গোপনে দাওয়াত অর্থাৎ গোপনে ইসলাম প্রচারের পর্যায় যা বেসাতের পর থেকে দীর্ঘ তিন বছর স্থায়ী হয়েছিল তা অতিবাহিত হওয়ার পরই পবিত্র কোরআনের অবতরণ (নুযূল) শুরু হয়। (অর্থাৎ বে’সাতের পর দীর্ঘ তিন বছর গোপনে ইসলাম প্রচারের পর্যায় অতিবাহিত হওয়ার পরপরই পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হতে থাকে।)
তথ্যসূত্র :
১.২০৬. সহীহ বুখারী,১ম খণ্ড,ইলম (জ্ঞান) অধ্যায় পৃ. ৩;বিহারুল আনওয়ার,১৮তম খণ্ড,পৃ. ১৯৪।
২. লওহে মাহফূয ও বাইতুল মামূর সংক্রান্ত ব্যাখ্যা জানার জন্য আগ্রহী পাঠকবর্গকে তাফসীরের গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
৩. মানাহিলুল ইরফান ফী উলূমুল কোরআন,১ম খণ্ড,পৃ. ৩৭।
৪. আল মীযান,২য় খণ্ড,পৃ. ১৪-১৬।
৫. (لا تعجل بالقرآن من قبل أن يُقضى إليك وحيه) “আপনার প্রতি ওহী (অবতীর্ণ) করার আগেই পবিত্র কোরআনের ব্যাপারে ত্বরা করবেন না”-সূরা ত্বাহা : ১১৪।
৬. বিহারুল আনওয়ার,১৮তম খণ্ড,পৃ. ১৮৪-১৯০,১৯৩,২৫৩;আল কাফী,২য় খণ্ড,পৃ. ৪৬০;তাফসীর-ই আইয়াশী,১ম খণ্ড,পৃ. ৮০;এ উত্তরটি সহীহ আল বুখারীতে যা বর্ণিত হয়েছে অর্থাৎ সূরা আলাকের নুযূল এবং মহানবীর বেসাত একই সাথে সংঘটিত হওয়ার সেই বর্ণনার সাথে মোটেও সংগতিশীল নয়।
(আয়াতুল্লাহ জাফর সুবহানী কর্তৃক রচিত এবং মো:মুনীর হোসাইন খান কৃর্তৃক অনূদীত চিরভাস্বর মহানবী (সা.), ১ম খণ্ড, থেকে সংকলিত)