মুবাহালার সময়কাল

ইসলামের ইতিহাসে মুবাহালার ঘটনা একটি প্রসিদ্ধ ও মুতাওয়াতির ঘটনা। বিভিন্ন উপলক্ষে তাফসীর, ইতিহাস ও হাদীসের গ্রন্থসমূহে এর বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এ ঘটনার সারসংক্ষেপ নিচে বর্ণিত হলো :

মহানবী (সা.) বিশ্বের নেতৃবর্গের কাছে পত্র লেখার পাশাপাশি নাজরান অঞ্চলের প্রধান খ্রিষ্ট ধর্মযাজক আবু হারিসার কাছে একটি পত্র লিখেন এবং এ পত্রে তিনি নাজরানবাসীকে ইসলাম ধর্মের দিকে আহবান জানান। মহানবীর পত্র আবু হারিসার হাতে পৌঁছলে তিনি কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তির সাথে পরামর্শ করেন। অবশেষে পরামর্শসভায় মহানবীর সাথে সরাসরি সাক্ষাতের জন্য মদীনা নগরীতে একটি প্রতিনিধি দল প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

নাজরানের প্রতিনিধি দল মদীনা নগরীতে উপস্থিত হয় এবং অনেক আলোচনার পর মহানবী (সা.) মহান আল্লাহর নির্দেশে তাদেরকে মুবাহালার প্রস্তাব দেন। অর্থাৎ সবাই মরু-প্রান্তরে গিয়ে মহান আল্লাহর কাছে দুআয় রত হবেন এবং উভয় পক্ষ তাদের প্রতিপক্ষের ওপর লানত দেবেন ও ধ্বংস কামনা করবেন। প্রতিনিধি দল মহানবীর প্রস্তাব মেনে নেন। তবে মুবাহালার দিবসে নাজরানের নেতারা মহানবীকে বিশেষ আধ্যাত্মিক অবস্থায় তাঁর আপনজনদের মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় চারজনকে সাথে নিয়ে মুবাহালার ময়দানের দিকে আসতে দেখে মুবাহালা থেকে বিরত হয় এবং সন্ধিচুক্তি সম্পাদিত হয় যে, নাজরানের খ্রিষ্টানরা সামান্য কিছু জিযিয়া কর প্রদান করে ইসলামের পতাকাতলে নিজেদের ধর্মমতের ওপর বহাল থাকবে।

আর এটাই হচ্ছে নাজরানের ঘটনা বা মুবাহালার ঘটনার সার-সংক্ষেপ, যা কোন মুফাসসির ও ঐতিহাসিক অস্বীকার করেন নি।

প্রসিদ্ধ মত অনুসারে মুবাহালার সাল

এ প্রসঙ্গে ‘মহানবী (সা.)-এর পত্রাবলী’ গ্রন্থের রচয়িতা বলেন : “মহানবী (সা.) নাজরানবাসীর সাথে যে শান্তিচুক্তি সম্পাদন করেছিলেন, তা যে হিজরতের দশম বর্ষে হয়েছিল এ ব্যাপারে ঐতিহাসিকদের মধ্যে কোন মতপার্থক্য নেই। আর স্বাভাবিকভাবে মুবাহালার সালও হিজরতের দশম বর্ষেই হবে। কারণ নাজরানের প্রতিনিধি দলের মুবাহালা থেকে বিরত হওয়ার পরপরই ঐ শান্তিচুক্তিটি লেখা হয়েছিল।”

শান্তিচুক্তি বা সন্ধিপত্রের মূল পাঠ বিভিন্ন গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।

মুবাহালার মাস ও দিন

পণ্ডিতদের মধ্যে প্রচলিত ও প্রসিদ্ধ অভিমত হলো যে, ২৫ যিলহজ্ব হচ্ছে মুবাহালা দিবস। আর মরহুম শেখ তূসীর মতে মুবাহালা দিবস ২৪ যিলহজ্ব এবং তিনি এ ব্যাপারে একটি দুআও বর্ণনা করেছেন।

মরহুম সাইয়্যেদ ইবনে তাউস ‘মুবাহালা দিবস’ প্রসঙ্গে তিনটি অভিমতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে, এ প্রসঙ্গে বর্ণিত রেওয়ায়েতসমূহের মধ্যে সবচেয়ে সহীহ রেওয়ায়েত হচ্ছে এটাই যে, ২৪ যিলহজ্বই মুবাহালা দিবস। আর কেউ কেউ ২১ যিলহজ্বকে এবং অপর কিছুসংখ্যক ব্যক্তি ২৭ যিলহজ্বকে মুবাহালা দিবস বলে বিশ্বাস করেন।

তিনি তাঁর গ্রন্থের শেষে এতটা বিস্তারিতভাবে মুবাহালার ঘটনা রেওয়ায়েত করেছেন যে অন্য কোন গ্রন্থে এ ঘটনা এত বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয় নি এবং তিনি উল্লেখ করেছেন যে, এ অধ্যায়ের বিষয়বস্তু নিম্নোক্ত দু’টি গ্রন্থ থেকে গ্রহণ করেছেন। গ্রন্থদ্বয় হলো :

১. আবুল ফযল মুহাম্মদ ইবনে আবদুল মুত্তালিব শাইবানী প্রণীত ‘কিতাব আল মুবাহালা’(মুবাহালার গ্রন্থ)

২. হাসান ইবনে ইসমাঈল ইবনে আশনাস প্রণীত ‘আমালি ফিল হিজ্জাহ্’ (যিলহজ্ব মাসের আমলের গ্রন্থ)

এ পর্যন্ত স্পষ্ট হয়েছে যে, প্রসিদ্ধ অভিমত অনুযায়ী মুবাহালা দিবস হচ্ছে ২১, ২৪, ২৫ অথবা ২৭ যিলহজ্ব।

আমার (গ্রন্থকার) মতে মুবাহালার সাল ও দিবস সংক্রান্ত এসব অভিমত ঐ সব ঐতিহাসিক বর্ণনা যেসব বেশ নির্ভরযোগ্য এবং যেসবের কিছু অংশ অকাট্যভাবে প্রতিষ্ঠিত, সেসবের সাথে নিম্নোক্ত কারণসমূহের জন্য খাপ খায় না। কারণগুলো হলো :

১. নাজরানের প্রধান খ্রিষ্ট ধর্মযাজকের কাছে মহানবী (সা.)-এর নির্দেশে লিখিত সন্ধিপত্রের শেষে বর্ণিত হয়েছে : و إن أبيتم فالجزية “আর যদি আপনারা (ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহবান) প্রত্যাখ্যান করেন, তা হলে আপনাদের অবশ্যই জিযিয়া প্রদান করতে হবে।”

পবিত্র কুরআনের সূরা তাওবায় ‘জিযিয়া’ শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে। বাহ্যত এটাই মনে হয় যে, মহানবী (সা.) সূরা তাওবার অনুসরণে এ বাক্য তাঁর সন্ধিপত্রে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আর সূরা তাওবা তাবুক যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছু আগে অবতীর্ণ হয়েছিল এবং এ যুদ্ধ নবম হিজরীর রজব মাসের পর সংঘটিত হয়েছিল। সুতরাং এটাও সম্ভব হতে পারে, মহানবী (সা.) নাজরানবাসীর উদ্দেশে যে পত্র পাঠিয়েছিলেন, তারা মদীনায় একটি প্রতিনিধি দল প্রেরণ করে সেই পত্রের জবাব প্রদান করে থাকবে। এ ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে বোঝা যায়, মুবাহালার ঘটনা হিজরতের দশম বর্ষে সংঘটিত হয়েছিল।

২. জীবন চরিত রচয়িতাগণ ঐকমত্য পোষণ করে বলেছেন : মহানবী (সা.) হযরত আলী (আ.)-কে বিচারকাজ পরিচালনা এবং ইসলাম ধর্মের বিধি-বিধান শিক্ষা দেবার জন্য ইয়েমেনে প্রেরণ করেছিলেন। হযরত আলীও সেখানে বেশ কিছুকাল দায়িত্ব পালন করার জন্য অবস্থান করেছিলেন। মহানবী (সা.) হজ্ব পালন করার জন্য পবিত্র মক্কার উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন জানতে পেরে তিনিও একটি কাফেলাকে সাথে নিয়ে পবিত্র মক্কার উদ্দেশে রওয়ানা হয়ে যান এবং পবিত্র মক্কায় মহানবী (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে নাজরানবাসী থেকে যে এক হাজার বস্ত্র ‘জিযিয়া’ কর হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন, তা মহানবী (সা.)-এর হাতে অর্পণ করেন।

এ ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয়, মুবাহালা এবং শান্তিচুক্তি সম্পাদনের ঘটনাটা সুনিশ্চিতভাবে হিজরতের দশম বর্ষের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়।

কারণ নাজরানবাসী এ শান্তিচুক্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল, প্রতি বছর তারা দু’হাজার পোশাক মহানবী (সা.)-এর কাছে হস্তান্তর করবে এবং এগুলোর অর্ধেক রজব মাসে এবং বাকী অংশ সফর মাসে প্রদান করবে।

এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, শান্তিচুক্তি যদি যিলহজ্ব মাসে সম্পাদিত হয়ে থাকে, তা হলে অবশ্যই বলতে হয় এর অর্থ হচ্ছে তা হিজরী দশম বর্ষের পূর্ববর্তী বছরগুলোর কোন এক যিলহজ্ব মাস হবে।

কারণ এটা কিভাবে বলা সম্ভব হবে যে, এ শান্তিচুক্তি হিজরতের দশম বর্ষে সম্পাদিত হয়েছিল এবং হযরত আলীও তা ঐ বছরই কার্যকর করেছিলেন?

আমরা যদি শান্তিচুক্তি সম্পাদনের মাস ও দিবস সংক্রান্ত প্রসিদ্ধ অভিমতটি মেনেও নিই, তা হলে হিজরতের দশম বর্ষে এ শান্তিচুক্তি হবার সম্ভাবনা থাকে। তবে শান্তিচুক্তি সম্পাদনের তারিখ অবশ্যই রজব মাসের আগে হতে হবে। কারণ ধারণা হচ্ছে হযরত আলী (আ.) জিযিয়ার প্রথম অংশ হিজরী দশম সালের রজব মাসে গ্রহণ করেছিলেন।

সংক্ষেপে, আলী (আ.) যে রজব মাসে নাজরানবাসীর কাছ থেকে জিযিয়ার একটি অংশ গ্রহণ করে তা মক্কায় যিলহজ্ব মাসে মহানবী (সা.)-এর কাছে হস্তান্তর করেছিলেন- ইতিহাসের এ ঘটনার দিকে তাকিয়ে আমাদেরকে অবশ্যই নিম্নোক্ত দু’টি অভিমতের একটি গ্রহণ করতে হবে।

. আমরা যদি নিশ্চিতভাবে ধরে নিই, এ শান্তিচুক্তি যিলহজ্ব মাসেই সম্পাদিত হয়েছিল, তা হলে অবশ্যই বলতে হবে, এ যিলহজ্ব মাস বলতে অবশ্যই আমাদেরকে হিজরতের দশম বর্ষের পূর্ববর্তী যিলহজ্ব মাসগুলোকেই বুঝতে হবে (অর্থাৎ তা হতে পারে নবম হিজরীর যিলহজ্ব বা অষ্টম হিজরীর যিলহজ্ব মাস)।

. আর আমরা এ শান্তিচুক্তি সম্পাদনের বছরের ব্যাপারে যেমন নিশ্চিত হতে পারি নি, তদ্রূপ এ শান্তিচুক্তি সম্পাদনের দিন ও মাসের ব্যাপারেও যদি নিশ্চিত হতে না পারি, তা হলে এ অবস্থায় এ কথা বলা কি সম্ভব যে, এ শান্তিচুক্তি সম্পাদনের দিবস হিজরতের দশম বর্ষের রজব মাসের পূর্ববর্তী মাসগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট?

এ পর্যন্ত স্পষ্ট হয়ে গেছে, মুবাহালার বছর নিশ্চিতভাবে হিজরতের দশম বর্ষ হতে পারে না। তবে আমরা যদি শান্তিচুক্তি সম্পাদনের মাস ও দিনের ব্যাপারে আমাদের মত পরিবর্তন করি, সে ক্ষেত্রে হয় তো হিজরতের দশম বর্ষকে মুবাহালার বছর বলা সম্ভব হবে।

অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনার দিকে দৃষ্টিপাত করে এখন মুবাহালার মাস ও দিন নির্ধারণ করার সময় এসেছে। আমরা ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছি, আলেমগণের মধ্যে প্রসিদ্ধ অভিমত হচ্ছে, মুবাহালার মাস যিলহজ্ব এবং এর দিবস যিলহজ্বের ২৪ বা ২৫ তারিখ এবং আরেক অভিমত অনুসারে এ মাসের ২১ বা ২৭ তারিখ।

এখন আমরা দেখব, এ অভিমত ইতিহাসের অপরাপর অকাট্যভাবে প্রতিষ্ঠিত ঘটনার সাথে খাপ খায় কি না। আমাদের পরবর্তী পর্যালোচনা থেকে প্রমাণিত হয়, মুবাহালার ঘটনা কখনোই হিজরতের দশম বর্ষের যিলহজ্বে সংঘটিত হতে পারে না। কারণ মহানবী (সা.) হজ্বের বিধি-বিধান ও আচার-অনুষ্ঠান শিক্ষা দেবার জন্য হিজরতের দশম বর্ষে পবিত্র মক্কায় গমন করেছিলেন এবং ১৮ যিলহজ্ব জুহফা১০ থেকে দু’ মাইল১১ দূরত্বে অবস্থিত গাদীরে খুম এলাকায় হযরত আলী (আ.)-কে তাঁর পরে ইমামত ও খিলাফতের পদে অধিষ্ঠিত করেন।

গাদীরে খুমের মহা ঘটনা ঐ ধরনের ঘটনা ছিল না, যার প্রভাব একদিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে এবং মহানবীও যার পর তাৎক্ষণিকভাবে মদীনা অভিমুখে যাত্রা অব্যাহত রাখবেন। কারণ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, হযরত আলী (আ.)-কে খিলাফতে অধিষ্ঠিত করার পর মহানবী আলী (আ.)-কে তাঁবুতে অবস্থানের আদেশ দেন, যাতে গাদীরে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ তিন জন করে তাঁর কাছে গমন করে তাঁকে অভিনন্দন জানান। আর অভিনন্দন পর্বটি ১৯ যিলহজ্বের রাত পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। অভিবাদন জ্ঞাপন অনুষ্ঠানের শেষের দিকে উম্মুল মুমিনীনগণ (মহানবীর স্ত্রীগণ) হযরত আলীকে মুবারকবাদ জানিয়েছিলেন।১২

এ কারণে বলা সম্ভব নয়, মহানবী (সা.) ১৯ যিলহজ্ব মদীনার উদ্দেশে গাদীরে খুম অঞ্চল,- বিশেষ করে উপরে উল্লিখিত স্থান, যা হচ্ছে মদীনা, মিশর ও ইরাকগামী কাফেলাগুলোর পরস্পর পৃথক হওয়ার স্থান,- ত্যাগ করেছিলেন। আর স্বভাবতই মিশর ও ইরাকগামী কাফেলাগুলো অবশ্যই মহানবী (সা.)-এর কাছ থেকে বিদায় নিয়েই যাত্রা শুরু করেছিল। তাই এ অবস্থা নিঃসন্দেহে গাদীরে খুম এলাকায় মহানবীর অবস্থান দীর্ঘায়িত হবার কারণ হবে।

ধরুন, মহানবী (সা.) ১৯ যিলহজ্বই মদীনা অভিমুখে যাত্রা করেছিলেন। এ পরিমাণ দূরত্ব অতিক্রম করার ব্যাপারে ইতিহাস থেকে আমরা যে সব হিসাব পেয়েছি, সে সবের ভিত্তিতে কি বলা সম্ভব হবে যে, মহানবী ২৪ বা ২৫ যিলহজ্ব মদীনায় পৌঁছে মুবাহালার পূর্ব পদক্ষেপসমূহ আঞ্জাম দিয়েছেন এবং এর পরপরই তিনি শান্তিচুক্তি সম্পাদন করেছেন?

এখন আমাদের দেখতে হবে, ঐ সময় কাফেলাগুলো পবিত্র মক্কা থেকে মদীনা পর্যন্ত দূরত্ব কত দিনে অতিক্রম করত। তবে এ ক্ষেত্রে স্বয়ং মহানবী (সা.)-এর ভ্রমণ-বৃত্তান্ত ছাড়া আর কোন স্পষ্ট দলিল আমাদের হাতে নেই। মহানবী মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতকালে ৯ দিনে এ দূরত্ব অতিক্রম করেছিলেন।১৩

ঠিক একইভাবে মহানবী (সা.) হিজরতের অষ্টম বর্ষে এ দূরত্ব ১১ দিনে অতিক্রম করেছিলেন।১৪

পার্থক্যের কারণ হচ্ছে এই, মহানবী (সা.) প্রথম সফরের ক্ষেত্রে (হিজরতের সময়) দু’জন সফরসঙ্গীসহ এ দূরত্ব অতিক্রম করেছিলেন। অথচ দ্বিতীয় সফরের সময় (মক্কা বিজয় অভিযানে) দশ হাজার সৈন্যের এক সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। তাই স্বাভাবিকভাবে তিনি এ সফরে কিছুটা ধীর গতিতে এ দূরত্ব অতিক্রম করেছিলেন।

মহানবী (সা.) যদি ১৯ যিলহজ্ব গাদীরে খুম অঞ্চল ত্যাগ করে থাকেন, এ অবস্থায় আমরা যদি দূরত্ব অতিক্রম করার মোট সময়কাল ৯ দিন ধরি, তা হলে তিনি জুহ্ফাহ্ থেকে মদীনা পর্যন্ত দূরত্ব ৬ দিনে অতিক্রম করে থাকবেন এবং সে মর্মে তিনি ২৪ যিলহজ্ব মদীনা নগরীতে প্রবেশ করে থাকবেন। আর পবিত্র মক্কা থেকে মদীনা নগরীর মধ্যবর্তী দূরত্ব অতিক্রম করার সময়কাল ১১ দিন ধরলে তিনি অবশ্যই এ দূরত্ব (জুহ্ফাহ্ থেকে মদীনা) সাড়ে সাত দিনের মধ্যে অতিক্রম করে থাকবেন এবং নিয়মানুযায়ী তিনি ২৬ যিলহজ্বের মধ্যাহ্নে মদীনায় প্রবেশ করবেন। তাই এই হিসাব অনুসারে বলা সম্ভব হবে কি যে, ২৪, ২৫ বা ২৭ যিলহজ্বে মুবাহালার মহা ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল?

মুবাহালার ঘটনার মাস ও দিন সংক্রান্ত বিখ্যাত অভিমতটির অসারত্ব আরো স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয় যখন আমরা জানতে পারি, নাজরানের প্রতিনিধি দল বেশ কিছু আলোচনা ও তর্ক-বিতর্কের পর মুবাহালা করার ব্যাপারে সম্মত হয়ে অবশেষে মুবাহালায় অসম্মতি জানায় এবং বেশ কিছু শর্তসাপেক্ষে শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করে। কারণ নাজরানের প্রতিনিধি দল হাতের আঙ্গুলে সোনার আংটি পরে, গলায় ক্রুশ ঝুলিয়ে অত্যন্ত জমকালো ও দামী পোশাক পরে মদীনা নগরীতে আগমন করে সরাসরি মসজিদে নববীতে উপস্থিত হয়েছিল। কিন্তু মহানবী (সা.) তাদের সাথে এমনভাবে মুখোমুখী হন যে, অসন্তুষ্টির চিহ্ন তাঁর পবিত্র মুখমণ্ডলে ফুটে উঠেছিল।

এ ঘটনার পর নাজরানের প্রতিনিধি দল সেখান থেকে বের হয়ে হযরত আলী (আ.)-এর সাথে যোগাযোগ করে মহানবীর অসন্তুষ্ট ও ক্রুদ্ধ হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করে। হযরত আলী (আ.) তাদেরকে বলেছিলেন : “আপনারা অবশ্যই রেশমী পোশাক এবং স্বর্ণালংকার বাদ দিয়ে সাদামাটা পোশাক পরিধান করে মহানবী (সা.)-এর কাছে যাবেন। তা হলে তিনিও আপনাদের উন্মুক্ত চিত্তে ও প্রশান্ত বদনে গ্রহণ করবেন।”

পরের বার নাজরানের প্রতিনিধি দল আড়ম্বরহীন অবস্থায় মহানবীর নিকট উপস্থিত হলে তিনিও তাদেরকে প্রশস্ত বদনে গ্রহণ করেন। এরপর তারা মহানবীর কাছে মসজিদে নববীতে নামায আদায় করার আবেদন জানালে তিনিও মসজিদে নববীতে তাদের নামায আদায় করার ব্যাপারে সম্মতি দান করেন। এরপর দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। দীর্ঘ আলোচনা ও বিতর্কের পর উভয় পক্ষ মুবাহালা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, উপরিউক্ত আলোচনাসমূহ মুফাসসিরগণ এবং ইবনে হিশাম তাঁর সীরাত গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।১৫

মুবাহালার দিন ঠিক করা হলো। অতঃপর ঐ দিন যখন মহানবী (সা.) কেবল হযরত আলী, কন্যা ফাতিমা (আ.) এবং তাঁর দু’সন্তান হযরত হাসান ও হযরত হুসাইন (আ.)-কে মুবাহালার ময়দানে এনেছিলেন, তখন তাঁর সরল ও আড়ম্বরহীন অবস্থা নাজরানের প্রতিনিধিদলকে মুবাহালা থেকে বিরত রেখেছিল এবং তারা জিযিয়া কর দিতে সম্মত হয়েছিল।

একের পর এক সংঘটিত এ সব ঘটনা, যেসব ‘মুনতাখাবুত তাওয়ারিখ’ গ্রন্থের রচয়িতার অভিমত অনুসারে চার অধিবেশনের সময় পরিমাণ দীর্ঘ হয়েছিল, সেসব কি এক দিনে সমাপ্ত হতে পারে? নিশ্চিতভাবেই এক দিনে সে সব সম্পন্ন হওয়া অসম্ভব।

এসব হিসাব-নিকাশ থেকে প্রতীয়মান হয়, মুবাহালা অনুষ্ঠান এবং শান্তিচুক্তি হিজরতের দশম বর্ষের ২১, ২৪, ২৫ বা ২৭ যিলহজ্বে সম্পাদিত হয় নি।

এছাড়াও নাজরান হিজায ও ইয়েমেনের মধ্যেকার একটি সীমান্ত শহর। কাফেলাগুলোর আসা-যাওয়ার মাধ্যমে মদীনা নগরীর খবর আপনা-আপনি সেখানে পৌঁছে যেত। এ কারণে এটাই স্বাভাবিক যে, হজ্ব পালন করার উদ্দেশ্যে মহানবী (সা.)-এর পবিত্র মক্কাভিমুখে যাত্রার সংবাদ নাজরানবাসীর কানে পৌঁছে থাকবে। এ অবস্থায় যতক্ষণ পর্যন্ত তারা মদীনায় মহানবীর প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে নিশ্চিত না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য মদীনার উদ্দেশে নাজরানের প্রতিনিধি দলের যাত্রা একেবারেই অবাস্তব।

হিজরতের নবম বর্ষের যিলহজ্ব মাসে মুবাহালা

এখানে এ কথা হয় তো বলা সম্ভব, হিজরতের নবম বর্ষের যিলহজ্ব মাসই ছিল মুবাহালার সঠিক তারিখ ও সময়কাল। ঘটনাক্রমে কতিপয় ঐতিহাসিকও প্রথম বারের মতো এ ধরনের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।১৬

তবে ঐতিহাসিক হিসাব-নিকাশের ভিত্তিতেও এ অভিমতের ভিত্তিহীনতা প্রমাণিত হয়। কারণ আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.), যিনি নিজেই মুবাহালার এ ঘটনার সাক্ষীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং শান্তিচুক্তির মূল পাঠ লিপিবদ্ধ করেছিলেন, তিনি হিজরতের নবম বর্ষের যিলহজ্ব মাসে মহানবী (সা.)-এর পক্ষ থেকে সূরা তাওবার প্রথম কয়েক আয়াত মিনায় মুশরিকদের উদ্দেশে পাঠ করে শোনানোর দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছিলেন। বাস্তবিকপক্ষে হিজরতের নবম বর্ষ ছিল হাজীগণের তত্ত্বাবধান এবং পরিচালনার দায়িত্ব মুসলমানদের হাতে আসার দ্বিতীয় বছর। আর আমীরুল মুমিনীন হযরত আলীও ঐ বছর আমীনুল হজ্ব (হাজীদের সচিব) মনোনীত হয়েছিলেন।

এটা অত্যন্ত স্পষ্ট, হজ্ব অনুষ্ঠান যদি যিলহজ্ব মাসের ১২ তারিখে সমাপ্ত হয়, তবে আলী (আ.)-এর মতো ব্যক্তিত্ব, যিনি হাজীদের তত্ত্বাবধানকারী ছিলেন, মক্কায় অনেক আত্মীয়-স্বজন থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবে ১৩ যিলহজ্ব মক্কা ত্যাগ করে মদীনা অভিমুখে রওয়ানা হতে পারবেন না। কারণ, উল্লিখিত কারণগুলো ছাড়াও ঐ যুগে হাজীগণ কখনো একাকী পথ চলতে ও সওয়ারী পশুর উপর আরোহণ করে পানি, গুল্মলতাবিহীন মরু-প্রান্তর পাড়ি দিতে সক্ষম ছিলেন না। বরং সেকালে তাঁদেরকে সামষ্টিকভাবে ও কাফেলাবদ্ধ হয়ে মদীনার উদ্দেশে পবিত্র মক্কা নগরী ত্যাগ করতে হতো। তাই আলী (আ.) যত দ্রুত সম্ভব মক্কা-মদীনার অন্তর্বর্তী দূরত্ব অতিক্রম করেও ২৪ যিলহজ্বের আগে কখনই পবিত্র মদীনা নগরীতে পৌঁছতে সক্ষম হবেন না। এ অবস্থায় তিনি কিভাবে মদীনায় নাজরানের প্রতিনিধি দলকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দান এবং মহানবী কি কারণে তাদেরকে উষ্ণতার সাথে বরণ করেন নি, তার কারণ তাদের কাছে ব্যাখ্যা করতে এবং মুবাহালার এ মহা ঘটনার সাক্ষী হতে পারবেন?

এসব ঐতিহাসিক সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রতীয়মান হয়, মুবাহালার ঘটনার দিন, মাস ও বছর সংক্রান্ত প্রসিদ্ধ অভিমত ততটা নির্ভরযোগ্য নয় এবং এ মহা ঘটনা যা পবিত্র কুরআন, তাফসীর ও হাদীসের আলোকে সন্দেহাতীত বিষয়াদির অন্তর্ভুক্ত, তা ঘটার সময়কাল নির্ধারণের জন্য অবশ্যই অনেক বেশি অধ্যয়ন ও গবেষণা করতে হবে।

এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে, সম্মানিত আলেমগণ কিভাবে মুবাহালার তারিখ, মাস ও বছরের ব্যাপারে এ ধরনের অভিমত গ্রহণ করেছেন?

উত্তরে অবশ্যই বলতে হয়, মরহুম শেখ তূসী মুসনাদ রূপে বর্ণিত এক হাদীসের ভিত্তিতে এ অভিমত গ্রহণ করেছিলেন। তবে এ হাদীসের সনদে এমন সব ব্যক্তি (রাবী) আছে, যাদেরকে রিজালবিদরা কখনোই বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য বলে বিবেচনা করেন নি। যেমন :

১. মুহাম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে মাখযুম : তাল আকবাবীর হাদীসের শিক্ষক ছিলেন। তবে তিনি (রিজালবিদগণ কর্তৃক) বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য বলে বিবেচিত হন নি।১৭

২. হাসান ইবনে আলী আল আদভী : আল্লামা তাঁকে ‘যাঈফ’ (দুর্বল) বলে গণ্য করেছেন।১৮

৩. মুহাম্মদ ইবনে সাদাকাহ্ আল আম্বারী : শেখ তূসী তাঁকে ‘গালী’ (চরমপন্থী) বলেছেন।১৯

মরহুম সাইয়্যেদ ইবনে তাউস ‘ইকবালুল আমাল’ গ্রন্থে মুবাহালা সংক্রান্ত বেশ কিছু বিষয় আবুল ফযলের গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করেছেন এবং আমরা উল্লেখ করেছি, এ লোকটির জীবনের দু’টি অধ্যায় ছিল। তাঁর জীবনের একটি অধ্যায়ে তিনি নির্ভরযোগ্য ছিলেন বা বিবেচিত হতেন এবং অপর অধ্যায়ের নির্ভরযোগ্যতা নেই। আর এটাও স্পষ্ট নয়, আবুল ফযল মুবাহালা সংক্রান্ত বিষয়াদি তাঁর জীবনের কোন্ অধ্যায়ে রচনা করেছিলেন এবং আলেমগণও তাঁর জীবনের কোন্ অধ্যায় হতে রেওয়ায়েত ও বর্ণনা গ্রহণ করেছেন।

আর ঠিক একইভাবে সাইয়্যেদ ইবনে তাউস মারফূ সূত্রে বর্ণিত এক হাদীসের ওপর নির্ভর করে ২৪ যিলহজ্বকে মুবাহালার দিবস সাব্যস্ত করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যে হাদীসের সনদ পূর্ণাঙ্গ নয়, তা-ই মারফূ হাদীস। এ ধরনের হাদীস দাবী প্রমাণ করতে অক্ষম।

তথ্যসূত্র :

১. সমকালীন বহু সূত্রে ও পরম্পরায় বর্ণিত যার মধ্যে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকে না।

২. তারিখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৬৫ এবং আদ্ দুররে মানসূর, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৮

৩. মিসবাহুল মুজতাহিদ, পৃ. ৭০৪

৪. ইকবালুল আমাল, পৃ. ৭৪৩

৫. প্রাগুক্ত

৬. মরহুম সাইয়্যেদ ইবনে তাউস আবুল ফযল মুহাম্মদের বংশ পরিচয় সঠিকভাবে বর্ণনা করেন নি। তবে নাজ্জাশীর বর্ণনা মতে তাঁর বংশনামা হচ্ছে : মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে বুহলুল ইবনে মুত্তালিব। তাই তাঁর ঊর্ধ্বতন প্রপিতামহের নাম আবদুল মত্তালিব নয়, বরং মুত্তালিব। আর মুত্তালিব তাঁর ঊর্ধ্বতন পঞ্চম পিতৃপুরুষ। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, নাজ্জাশীর দৃষ্টিতে মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহর জীবনের দু’ টি অধ্যায় ছিল। তাঁর জীবনের একটি অধ্যায় নির্ভরযোগ্য এবং আরেকটি অধ্যায় নির্ভরযোগ্য নয়। আর এ কারণেই তিনি বলেছেন :“ বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য (মুওয়াসসাক) ব্যক্তিরা তার জীবনের যে অধ্যায়ে তিনি দৃঢ়পদ ছিলেন, সেই সময়কালে তার থেকে যে সব হাদীস বর্ণনা করেছেন, সেগুলো ব্যতীত আমি তার থেকে হাদীস বর্ণনা করা থেকে বিরত থেকেছি।” (নাজ্জাশী প্রণীত ফেহরেস্ত, পৃ. ২৮১-২৮২) শেখ নাজ্জাশী তাঁর রিজালবিদ্যার ৫১১ পৃষ্ঠায় বলেছেন :“ তিনি অধিক অধিক হাদীস বর্ণনাকারী; তবে একদল রিজালবিদ তাঁকে‘ যাঈফ’ (দুর্বল) বলেছেন।”

৭. তাঁর নাম‘ সাহীফা-ই-সাজ্জাদিয়া’ র সনদসমূহে বর্ণিত হয়েছে এবং তিনি‘ শাইখুত তায়িফা’ র শায়খগণের অন্তর্ভুক্ত। তাঁর মৃত্যুসাল ৪৬০ হিজরী। তিনি মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ্ শাইবানী থেকে মুবাহালা গ্রন্থের হাদীসসমূহ উদ্ধৃত করেছেন। দেখুন : আয যারীয়াহ্, ১৫তম খণ্ড, পৃ. ৩৪৪

৮. সীরাতে ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড, পৃ. ৬০২-৬০৩ এবং শেখ আল মুফীদ প্রণীত কিতাব আল ইরশাদ, পৃ. ৮৯

৯. আত তাবাকাতুল কুবরা, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩৫৮ এবং শেখ আল মুফীদ প্রণীত কিতাব আল ইরশাদ, পৃ. ৮৭

১০. জুহ্ফাহ্ পবিত্র মক্কা থেকে তিন মঞ্জিলের দূরত্বে এবং মদীনা থেকে সাত মঞ্জিলের দূরত্বে অবস্থিত। আর লোহিত সাগর থেকে এ স্থানের দূরত্ব প্রায় ৬ মাইল (দুই ফারসাখ)। বর্তমানে এ অঞ্চলটি রাবুগ, যা মক্কা থেকে মদীনা অভিমুখী সড়কের উপর অবস্থিত, এর নিকটবর্তী।-নাভাভীর তাহরীর গ্রন্থ এবং আত তাহযীব।

ইয়াকুত তাঁর গ্রন্থ‘ মারাসিদুল ইত্তিলা’ র ১০৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন : মক্কার চার মঞ্জিলের দূরত্বে অবস্থিত জুহ্ফাহ্ শাম ও মিশরবাসীদের মীকাত। গাদীরে খুম থেকে এ অঞ্চলের দূরত্ব দু’ মাইল এবং লোহিত সাগর থেকে এ অঞ্চলের দূরত্ব প্রায় ৬ মাইল। তবে এখন গাদীরে খুম মক্কার ২২০ কি.মি. দূরত্বের মধ্যে অবস্থিত। আল্লামা মাসউদীও‘ আত তানবীহ ওয়াল ইশরাফ’ গ্রন্থের ২২১-২২২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন : গাদীরে খুম‘ খাররার’ নামে খ্যাত একটি জলাশয়ের অদূরে অবস্থিত।

১১. এক মাইল তিন হাজার হাত এবং এক ফারসাখ নয় হাজার হাত; আরেক অভিমত অনুসারে এক মাইল চার হাজার হাত এবং এক ফারসাখ বারো হাজার হাত। যা হোক এক মাইল আসলে এক ফারসাখের এক-তৃতীয়াংশ এবং তিন মাইলে এক ফারসাখ।

১২. অভিনন্দন জানানোর বিস্তারিত বিবরণ জানার জন্য আল গাদীর গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ২৪৫-২৫৭ পৃষ্ঠা অধ্যয়ন করুন।

১৩. মহানবী (সা.) রবী মাসের চতুর্থ রাতে মদীনার উদ্দেশে পবিত্র মক্কা ত্যাগ করেছিলেন এবং ঐ মাসের ১২ তারিখে মধ্যাহ্নের কাছাকাছি সময় মদীনার কুবা মহল্লায় প্রবেশ করেন। বিদ্যমান সাক্ষ্য-প্রমাণ ও নিদর্শনসমূহের ভিত্তিতে বলা যায়, মহানবী (সা.) মক্কা-মদীনার অন্তর্বর্তী দূরত্ব কুরাইশদের পশ্চাদ্ধাবনের কারণে দ্রুতগতিতে অতিক্রম করেছিলেন।-সীরাতে ইবনে হিশাম, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৩৯ এবং আত তাবাকাতুল কুবরা, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৩৫

১৪. বিহারুল আনওয়ার, ২২তম খণ্ড, পৃ. ১৯

১৫. সীরাতে ইবনে হিশাম, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৭৫ এবং মাজমাউল বায়ান, ১ম খণ্ড, পৃ. ৪১০

১৬. মুনতাখাবুত তাওয়ারিখ গ্রন্থের রচয়িতা এ গ্রন্থের ৪০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন : এ ঘটনাটি মুফাসসিরগণ সূরা তাওবার তাফসীরে রেওয়ায়েত করেছেন এবং আল গাদীর গ্রন্থে (৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৩১৮-৩২১) আহলে সুন্নাতের ৭২ জন ব্যক্তিত্ব থেকেও এ ঘটনার বর্ণনা দেয়া হয়েছে যে, এ বছরের (হিজরতের নবম বর্ষে) শেষে নাজরানের খ্রিষ্টানদের সাথে মহানবীর মুবাহালার ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। কারণ, বর্ণিত হয়েছে যে, এ ঘটনা যিলহজ্ব মাসে মক্কা বিজয়ের পর সংঘটিত হয়েছিল এবং বিদায় হজ্বের যিলহজ্ব অর্থাৎ হিজরতের দশম বর্ষের যিলহজ্ব মাসে অবশ্যই তা সংঘটিত হয় নি। স্মর্তব্য, গাদীরে খুমের ঘটনাও বিদায় হজ্বের যিলহজ্ব মাসে সংঘটিত হয়েছিল। অতএব, মুবাহালার ঘটনা আগের বছরের (হিজরতের নবম বর্ষে) যিলহজ্ব মাসে অবশ্যই ঘটে থাকবে।

১৭. যদিও মামাকানী তানকীহুল মাকাল গ্রন্থে হাদীস শিক্ষক হবার কারণে তাঁকে‘ সিকাহ্’ (বিশ্বস্ত) বলে গণ্য করেছেন।

১৮. তানকীহুল মাকাল, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৯৪

১৯. তূসীর রিজাল, পৃ. ৩৯