দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা

দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা0%

দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা লেখক:
: মোঃ মাঈনুদ্দিন তালুকদার
প্রকাশক: শহীদ আল্লামা বাকের সাদর (রহঃ) বিশ্ব সম্মেলন কমিটি,কোম-ইরান।
বিভাগ: নবুয়্যত

দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা

লেখক: শহীদ আয়াতুল্লাহ সাইয়েদ মুহাম্মদ বাকের সাদর (রহঃ)
: মোঃ মাঈনুদ্দিন তালুকদার
প্রকাশক: শহীদ আল্লামা বাকের সাদর (রহঃ) বিশ্ব সম্মেলন কমিটি,কোম-ইরান।
বিভাগ:

ভিজিট: 12429
ডাউনলোড: 3359

পাঠকের মতামত:

দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 26 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 12429 / ডাউনলোড: 3359
সাইজ সাইজ সাইজ
দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা

দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহের উপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা

লেখক:
প্রকাশক: শহীদ আল্লামা বাকের সাদর (রহঃ) বিশ্ব সম্মেলন কমিটি,কোম-ইরান।
বাংলা

বৈজ্ঞানিক যুক্তির মাধ্যমে স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণঃ

ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি যে,স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য বৈজ্ঞানিক যুক্তি আরোহ পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল যা স্বয়ং সম্ভাবনার উপর প্রতিষ্ঠিত। এ যুক্তি প্রদর্শনের পূর্বে উক্ত পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করাটা সমীচীন বলে মনে করছি । অতঃপর  এ পদ্ধতির একটা মূল্যায়ন করব। এর ফলে আমরা এ পদ্ধতি কতটা গ্রহণযোগ্য এবং সত্য উদ্ঘাটন ও কোন কিছু শনাক্তকরণ বা জানার ক্ষেত্রে কতখানি নির্ভরযোগ্য তা জানতে পারব।

আরোহ যুক্তি পদ্ধতি যা সম্ভাবনা তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত,তা একটি অত্যন্ত সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম জটিল ভাষ্য সম্বলিত পদ্ধতি,যার জন্য গভীর মনোযোগের প্রয়োজন। আর আরোহ যুক্তি পদ্ধতির মূলনীতিসমূহ এবং সম্ভাবনা তত্ত্বের পূর্ণ বিশ্লেষণধর্মী অধ্যয়ন ও গবেষণার মাধ্যমেই এ পদ্ধতির একটা সর্বাঙ্গীণ সূক্ষ্ম (গভীর) মূল্যায়ন করা যেতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রে আমরা এ পদ্ধতির  জটিল ভাষ্যসমূহ এবং দুর্র্বোধ্য বিশ্লেষণ পরিহার করার চেষ্টা করব।

এ কারণে আমাদেরকে দু টি বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করতে হচ্ছে। যথা :

১. পদ্ধতির সংজ্ঞা উপস্থাপন (যা স্বয়ং প্রমাণের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে) এবং এর সরল ও সংক্ষিপ্তরূপে ব্যাখ্যা প্রদান।

২. এ পদ্ধতির মূল্যায়ন এবং এর গ্রহণযোগ্যতার সীমারেখা নির্দিষ্টকরণ। তবে তা যুক্তিবিদ্যাভিত্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে এবং যুক্তিবিদ্যা ও গাণিতিক  ভিত্তিমূলসমূহের অনুসন্ধানের  মাধ্যমে  নয়-যার  উপর এ পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত। কারণ এর অর্থ হবে জটিল,জটিল বিষয়ে পদার্পণ করা যার জন্য গভীর মনোযোগের প্রয়োজন,বরং যুক্তি প্রমাণ উপস্থাপন করার ক্ষেত্রে এমন একটি পদ্ধতি উপস্থাপন করতে চাই যা শুধু সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বকেই প্রমাণ করে। আর এ জ্ঞানের আলোকেই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের প্রতি সকলের বিশ্বাস অর্জিত হবে। তাই বলব,সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে যে পদ্ধতির উপর আমরা নির্ভর করব তা অনুরূপ পদ্ধতিই যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কোন কিছুকে প্রমাণ করতে বা বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বৈজ্ঞানিক বিষয়ের ক্ষেত্রে কাজে লাগে।

অতএব,আমরা দৈনন্দিন জীবনে স্বাভাবিক কারণেই কোন সত্যকে প্রমাণ করতে বা কোন বস্তুর স্বরূপ উদ্ঘাটন করতে যে পদ্ধতির পদচারণা করি সে পদ্ধতিই হলো সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য এখানে আমাদের মনোনীত পদ্ধতি। তবে এ পদ্ধতি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণ করার ক্ষেত্রে উপমা (Analogie) হিসাবে ব্যবহৃত হয়। নতুবা স্বয়ং মহান প্রভুই এ সমস্ত ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়ের অস্তিত্ব প্রদান করেন।

উদাহরণস্বরূপ,আপনার দৈনন্দিন জীবনের কোন এক সময় ডাকের মাধ্যমে একটি চিঠি এসে পৌঁছল। চিঠিটি পড়েই বুঝতে পারেন যে,তা আপনার ভাইয়ের নিকট থেকে প্রেরিত হয়েছে। যদি কোন চিকিৎসক রোগসমূহ নিবারণে সফল হন,তাহলে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে,তিনি একজন দক্ষ চিকিৎসক।

অনুরূপ,অসুস্থ অবস্থায় যদি আপনাকে কয়েকটি পেনিসিলিন ইনজেকশন দেয়া হয়,আর প্রতিবারই যদি কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া পরিদৃষ্ট হয়,তবে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে,পেনিসিলিন আপনার দেহে এক বিশেষ প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে।

উপরিউক্ত প্রতিটি উদাহরণের ক্ষেত্রেই প্রকৃতপক্ষে আপনি সম্ভাবনাভিত্তিক আরোহ যুক্তি পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। প্রকৃতি বিজ্ঞানিগণও তাঁদের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় যখন সূর্যের নির্দিষ্ট কোন বিশেষত্বকে সৌরমণ্ডলে পরিলক্ষণ করেন,তবে এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেন যে,উক্ত গ্রহসমূহ সূর্যেরই অংশবিশেষ ছিল যেগুলো তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

বিজ্ঞানিগণ নেপচুন গ্রহটিকে আবিষ্কারের পূর্বে গ্রহসমূহের পরিক্রমণ পথ পর্যবেক্ষণ করেছেন। অতঃপর এ পর্যবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে যুক্তি উপস্থাপন করেছেন যে,নেপচুন নামক একটি গ্রহ সৌরমণ্ডলে বিদ্যমান।

অনুরূপ,অনুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কারের পূর্বেই কতগুলো নির্দিষ্ট ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয় ও ঘটনার আলোকে ইলেকট্রনের অস্তিত্ব প্রমাণ করেছেন।

প্রকৃতি বিজ্ঞানিগণ উল্লিখিত প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রকৃতপক্ষে সম্ভাবনাভিত্তিক আরোহ যুক্তি পদ্ধতির উপর নির্ভর  করেছেন। আর এটা সে পদ্ধতিই যে পদ্ধতিকে আমরা প্রজ্ঞাবান সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে ব্যবহার করব। তখন আমরা এর অর্থ স্পষ্টরূপে অনুধাবন করব।

.আরোহ পদ্ধতির সংজ্ঞা এবং এর মূলনীতিসমূহ :

এখন আমরা সম্ভাবনাভিত্তিক আরোহ পদ্ধতিকে সুস্পষ্ট ও সরলরূপে উপস্থাপন করতে চাই । এ  উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য আমরা নিম্নলিখিত পাঁচটি বিষয় উপস্থাপন করব :

. ইন্দ্রিয় গ্রাহণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় অনেক ঘটনা বা বিষয় পরিলক্ষিত হয়।

. পর্যবেক্ষণ ও এ সকল ঘটনাকে সমবেত করার পর  ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের পর্যায়ে পৌঁছব। এ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের জন্য এমন কতগুলো কল্পনা নির্ধারণ করতে হবে যেগুলো পরীক্ষালব্ধ বিষয়গুলোর অনুরূপ এবং আমাদের ইপ্সিত ব্যাখ্যাগুলোর জন্য উপযুক্ত হবে। উপযুক্ত হওয়ার অর্থ হলো এই যে,এ কল্পনাগুলো যখন প্রমাণিত হবে,তখন ঐ পরীক্ষালব্ধ বিষয়গুলো উপপাদ্যসমূহের (প্রমাণিত কল্পনা) অন্তর্গত বা ঐগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট হবে।

. যদি এ সকল কল্পনা প্রকৃতপক্ষেই সঠিক ও চূড়ান্ত না হয়,তবে পরীক্ষালব্ধ ফলাফলগুলো এবং ঐগুলোর উপর নির্ভরশীল সিদ্ধান্তগুলো হবে দুর্বল। অর্থাৎ যদি ধরে নেয়া হয় যে,এ কল্পনা বা প্রকল্প সঠিক নয়,তাহলে এ সব ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়ের অনস্তিত্বের সম্ভাবনা অথবা এগুলোর মধ্যে অন্তত একটির অনস্তিত্বের সম্ভাবনার সাথে এগুলোর অস্তিত্বের সম্ভাবনার অনুপাত অত্যন্ত ক্ষীণ হবে। যেমন শতকরা এক ভাগ অথবা এক হাজার ভাগের এক ভাগ।

. এ থেকে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারব যে,কল্পনাটি সত্য। আর তা সত্য হওয়ার দলিল হচ্ছে ঐ সকল বিষয়ের অস্তিত্ব যেগুলোর অস্তিত্ব সম্পর্কে আমরা ইতোমধ্যে প্রথম ধাপেই নিশ্চিত হয়েছি (অর্থাৎ উপলব্ধি করতে পেরেছি)।

. পরীক্ষালব্ধ ফলাফলগুলোর প্রমাণের মাত্রা গ-তে উল্লিখিত নীতির বিপরীত। কারণ সেখানে আমরা বলেছিলাম যে,ফলাফলগুলোর উপস্থিতির সম্ভাবনা কল্পনাগুলোর অসত্যতার ভিত্তিতে তাদের অনুপস্থিতির সম্ভাবনার সাথে সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং এ সম্পর্ক যত কম হবে প্রমাণের মাত্রা তত দৃঢ় হবে,এমনকি অনেক সময়  কল্পনাগুলোর সঠিকতার ভিত্তিতে সম্পূর্ণ নিশ্চিত প্রমাণরূপে প্রতিভাত হয়।

এ বিষয়গুলো প্রকৃতপক্ষে সম্ভবনার মূল্যমানের জন্য সঠিক মানদণ্ড বা স্কেলস্বরূপ যেগুলো স্বয়ং সম্ভাবনাভিত্তিক মতবাদের উপর প্রতিষ্ঠিত। মানুষ অভ্যাসবশত ও ফেতরাতগত কারণেই এ মানদণ্ডগুলোকে প্রায় সঠিকভাবেই প্রয়োগ করে থাকে। এ জন্য আমরা এখানে শুধু সম্ভাবনা মানের ফেতরাতগত মূল্যায়নই যথেষ্ট  মনে করব এবং যুক্তিবিদ্যা ও গণিতভিত্তিক জটিল ব্যাখ্যার অবতারণা পরিহার করব।

এটা এমন এক পদ্ধতি যা প্রতিটি সম্ভাবনাভিত্তিক আরোহ পদ্ধতি-কি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে,কি গবেষণা ও অনুসন্ধানে,কি প্রজ্ঞাবান সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণে প্রযোজ্য যুক্তি ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রেই আমরা ব্যবহার করে থাকি।

.আরোহ পদ্ধতির মূল্যায়ন :

ইতোপূর্বে আমরা আলোচনা করেছি যে,এই পদ্ধতিকে দৃষ্টান্তের মাধ্যমে মূল্যায়ন করব এবং প্রথমেই দৈনন্দিন জীবন থেকে এ দৃষ্টান্ত উল্লেখ করব। পূর্বে আমরা বলেছিলাম,একটি চিঠি  আপনার নিকট আসল এবং আপনি তা পড়লেন;বুঝতে পারলেন যে,চিঠিটি আপনার ভাই ব্যতীত অন্য কারো (যার সাথে চিঠিপত্র বিনিময় হয়) কাছ থেকে প্রেরিত হয়নি। এখানে আপনি সম্ভাবনাভিত্তিক আরোহ যুক্তি পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন। চিঠিটি আপনার ভাই কর্তৃক প্রেরিত-এ বিষয়টি  যখন আপনার কাছে স্পষ্ট হলো,তখন প্রকৃতপক্ষে তা এমন একটি প্রতিপাদ্য বিষয় যা আরোহ  যুক্তি  ও আরোহ পদ্ধতির মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে। এখানে কিছু বিষয় লক্ষ্যণীয় :

প্রথম ধাপ : আপনি এখানে কিছু  ঘটনার মুখোমুখী হয়েছিলেন। যেমন :

-চিঠিটিতে একটি নাম আছে যা আপনার ভাইয়ের নামের অনুরূপ।

-চিঠির লেখাগুলোর ধরন আপনার ভাইয়ের লেখার মতো।

-শব্দ,অক্ষর এবং শব্দসমূহের মধ্যবর্তী ব্যবধান,বর্ণনা-পদ্ধতি ও চিঠির ভাষা সেরকমই যেরকম আপনার ভাই লিখে থাকেন।

-বর্ণনার ভাবভঙ্গি ঠিক সেরকম যেরকমটি আপনার ভাইয়ের লিখায় ইতোপূর্বে দেখেছেন।

-লেখার পদ্ধতি ও অক্ষরগুলোর মাত্রা যেরকমটি আপনার ভাইয়ের লেখায় সাধারণত দেখা যায় সেরকম।

-চিঠিতে উল্লিখিত বিষয় সেগুলোই যেগুলো আপনার ভাই জানেন।

-সাধারণত আপনার ভাই আপনার কাছে যা আকাঙ্ক্ষা করেন,পত্র-লেখক ও তা-ই করেছেন।

-বিষয়বস্তুতে উল্লিখিত দৃষ্টিভঙ্গি আপনার ভাইয়ের মতোই।

অতএব,এগুলোই হলো ঘটমান বিষয়সমূহ।

দ্বিতীয় ধাপ : নিজের কাছে আপনি প্রশ্ন করেন যে,সত্যিই কি এ চিঠিটি আপনার ভাই কর্তৃক প্রেরিত না আপনার ভাইয়ের মতো নামের অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক প্রেরিত। এখানেই আপনার জন্য কিছু কল্পনার (পরিভাষাগত) অবতারণা হবে যা ঐ ঘটমান বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অর্থাৎ যদি চিঠিটি আপনার ভাই কর্তৃক প্রেরিত হয়,তবে প্রথম ধাপে যে সব তথ্য আপনি পর্যবেক্ষণ করেছেন তা পরিপূর্ণ হওয়া স্বাভাবিক।

তৃতীয় ধাপ : নিজেকে প্রশ্ন করুন : মনে করি এ চিঠিটি আমার ভাই কর্তৃক প্রেরিত না হয়ে অন্য কারো কর্তৃক প্রেরিত হয়েছে,তাহলেও কি প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে বর্ণিত বিষয়গুলো ঘটতে পারে না? এর জবাব অনেকগুলো কল্পনার উপর নির্ভর করে। কারণ তখন আমাদেরকে স্বীকার করতে হবে যে,এ নামে অন্য এক ব্যক্তি আছে,যার লেখার পদ্ধতি,হাতের লেখা,বর্ণনার ধরন,ভাষা শৈলী,অনুরূপ জ্ঞান,চাহিদা ও অন্যান্য বিষয়ে আমার ভাইয়ের সাথে সাদৃশ্য আছে। এ সমস্ত বিষয়ের আলোকে আমরা দেখতে পাব যে,ঐ ধরনের বিষয়গুলোর উপস্থিতির সম্ভাবনা (অন্য কারো ক্ষেত্রে) কম। আর এ বিষয়গুলোর (যেগুলোর উপর আমরা একান্তভাবে নির্ভরশীল) পরিমাণ যত বেশি হবে,এ ধরনের সম্ভাবনাও তত বেশি হ্রাস পাবে।

অনুসন্ধানের জন্য মৌলিক যুক্তিবিদ্যা আমাদেরকে শিখায় যে,কিভাবে সম্ভাবনাকে অনুমান করব;কিভাবে এ সম্ভাবনা দুর্বল ও ভিত্তিহীন হয়ে যায় এবং কেনইবা উল্লিখিত বিষয়গুলোর বিস্তৃতির সাথে সাথে তাদের সংগঠিত হওয়ার সম্ভাবনা দুর্বলতর হতে থাকে? তবে এ বিষয়টির বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন মনে করি না। কারণ সাধারণ পাঠকমণ্ডলীর জন্য এটা অনুধাবন করা কঠিন। তাছাড়া সৌভাগ্যবশত এ সম্ভাবনার দুর্বলতা বিষয়টির ব্যাখ্যা অনুধাবনের উপর নির্ভরশীল নয়। যেমনি করে উপর থেকে মানুষের নীচে পড়ে যাওয়া অভিকর্ষ বল ও অভিকর্ষ সূত্রের উপর,মানুষের জ্ঞানের উপর নির্ভর করে না।

অতএব,আপনার ভাইয়ের সদৃশ এক ব্যক্তির (যিনি সমস্ত  উল্লিখিত বিষয়ে আপনার ভাইয়ের সাথে সাদৃশ্যমান) অস্তিত্ব থাকা অসম্ভব-এটা প্রমাণ করার প্রয়োজন নেই। যেমন কোন ব্যাংক এ সম্ভাবনার পরিমাণ অনুসন্ধানের জন্য (যে ব্যাংকের সকল গ্রাহক উক্ত ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা থেকে খরচ নির্বাহ করে) যুক্তিবিদ্যার মৌলিক জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। কারণ এমনটি ঘটার সম্ভাবনা সত্যিই দুর্বল। তবে এক বা একাধিক ব্যক্তির এমনটি করার সম্ভাবনা আছে।

চতুর্থ ধাপ : যখন চিঠিটির এ সকল বিষয় (শুধু কিছুটা দুর্বল সম্ভাবনা ব্যতীত যে,চিঠিটি আপনার ভাই কর্তৃক প্রেরিত নয়-অন্য করো থেকে এসেছে) আপনি  পর্যবেক্ষণ করবেন,তখন বাহ্যিক বিষয়বস্তুর সঠিকতার আলোকে বুঝতে পারবেন যে,চিঠিটি প্রকৃতই  আপনার ভাই কর্তৃক প্রেরিত হয়েছে।

পঞ্চম ধাপ : চিঠিটি আপনার ভাই কর্তৃক প্রেরিত-এ চতুর্থ ধাপটিকে প্রাধান্য দেয়া এবং তৃতীয় ধাপের অপর সম্ভাবনাটি দুর্বল হওয়া প্রসঙ্গে এক পক্ষের প্রাধান্য দানের মাত্রা যত বেশি হবে,অন্য পক্ষের মাত্রা তত বেশি দুর্বলতর হবে। অতএব,আমরা এ থেকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে,চিঠিটি অবশ্যই আপনার ভাইয়ের। অর্থাৎ এ দু ধাপের মধ্যে তুলনা করলে আমরা দেখতে পাই যে,প্রাধান্যপ্রাপ্ত বিষয়টি ও দুর্বল সম্ভাবনাময় বিষয়টির মধ্যে ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্ক বিদ্যমান।

অতএব,সম্ভাবনার মাত্রা যতটা কম হবে প্রাধান্যের মাত্রা ততটা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। সুতরাং চিঠিটি আপনার ভাইয়ের-এর সঠিকতার বিরোধী কোন নিদর্শন যখন পাওয়া যাবে না তখন এ বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে যে,চিঠিটি আপনার ভাই কর্তৃক প্রেরিত-পঞ্চম ধাপে প্রামাণ্য বিষয়টির যবনিকাপাত ঘটবে।

উপরিউক্ত উদাহরণটি ছিল মানুষের দৈনন্দিন জীবন থেকে নেয়া। এখন অপর একটি উদাহরণ কোন মতবাদকে প্রমাণ করার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের যুক্তি প্রদর্শনের পদ্ধতি থেকে বর্ণনা করব। যেমন গ্রহসমূহের উৎপত্তির উৎস সম্পর্কে মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বলেন,কোটি কোটি বছর পূর্বে এ ন টি গ্রহ জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডরূপে সূর্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। সকল বিজ্ঞানীই এ মতবাদের উপর একমত রয়েছেন। তবে কিরূপে সূর্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে-এ ব্যাপারে তাঁরা বিভিন্ন মত ব্যক্ত করে থাকেন। যাহোক,মূল মতবাদ যার উপর সকলেই একমত তা নিম্নোক্ত ধাপসমূহের মাধ্যমে প্রমাণ করা যায় :

প্রথম ধাপ :বিজ্ঞানিগণ এ ধাপে কিছু বিষয়কে ইন্দ্রিয় ও পরীক্ষা - নিরীক্ষার মাধ্যমে নিম ্ন ক্রম অনুসারে লক্ষ্য করেছেন :

১. সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর ঘূর্ণন আপন অক্ষে সূর্যের ঘূর্ণনের সাথে মিল রয়েছে এবং উভয়ই পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তিত হয়।

২. আপন অক্ষের উপর পৃথিবীর ঘূর্ণন সূর্যের  ঘূর্ণনের মতোই। অর্থাৎ পশ্চিম থেকে পূর্বে।

৩. সূর্যের বিষুব রেখার সাথে সমান্তরাল অক্ষরেখার উপর পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে আবর্তিত হয় যেন সূর্য হলো যাঁতাকলের  অক্ষ আর পৃথিবী হলো ঐ যাঁতাকলের উপর অবস্থিত একটি বিন্দু।

৪. যে সকল উপাদান থেকে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে সে সকল উপাদান সূর্যেও মোটামুটি বিদ্যমান।

৫. সূর্য ও পৃথিবীতে বিদ্যমান মৌলসমূহের পরিমাণগত  অনুপাত সমান ও একই। যেমন পৃথিবী ও সূর্য উভয়েরই দাহ্য মৌলিক উপদান হচ্ছে হাইড্রোজেন।

৬. সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর গতিবেগ ও আপন অক্ষের  উপর এর গতিবেগ এবং আপন অক্ষের উপর সূর্যের গতিবেগের মধ্যে সম্পর্ক বিদ্যমান।

৭. ব্যবহারিক হিসাব নিরূপণ ও গণনার ভিত্তিতে পৃথিবী এবং সূর্যের আয়ুষ্কালের মধ্যে সামঞ্জস্য বিদ্যমান।

৮. পৃথিবীর কেন্দ্র উত্তপ্ত ও অগ্নিসদৃশ,যা প্রমাণ করে যে,সৃষ্টির আদিতে পৃথিবী সম্পূর্ণরূপে অগ্নিসদৃশ ছিল।

উপরোল্লিখিত বিষয়গুলো হলো বিজ্ঞানিগণ কর্তৃক ইন্দ্রিয় ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত কয়েকটি  বিষয়,যেগুলো তাঁরা প্রথম ধাপে হস্তগত করেছেন।

দ্বিতীয় ধাপ : এখানে মনীষিগণ একটি কল্পনাকে ৩ নির্বাচন করেছেন যার মাধ্যমে এ সমস্ত বিষয়কে ব্যাখ্যা করা যায়। অর্থাৎ যদি কল্পনাটি প্রকৃতপক্ষে সত্য হয়, তবে তা উল্লিখিত বিষয়গুলোকে সত্যায়িত ও ব্যাখ্যায়িত করবে। কল্পনাটি নিম্নরূপ :

পৃথিবী  সূর্যেরই অংশ,যা কোন কারণে সূর্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে

অতএব,উপরোল্লিখিত বিষয়গুলোর ভিত্তিতে (যা প্রথম ধাপে উল্লিখিত হয়েছে) আমাদের পক্ষে উল্লিখিত কল্পনাটির ব্যাখ্যা প্রদান সম্ভব হয়েছে।

১. সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর পরিক্রমণের দিক আপন অক্ষে সূর্যের ঘূর্ণনের দিক সদৃশ। অর্থাৎ পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে। এ সাদৃশ্যের  কারণ কল্পনাটির সাথে নিম্নরূপে প্রমাণিত হয়। যদি কোন গতিশীল বস্তু থেকে একটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে,তবে নিত্যতার সূত্র অনুসারে তা মূল বস্তুর গতির দিকের অনুরূপ দিকে গতি বজায় রাখে (যেমন রশির মাধ্যমে কোন বস্তুকে আবর্তিত করলে তা থেকে কোন অংশ বিচ্ছিন্ন হলে ঐ বিচ্ছিন্ন অংশ গতির অনুরূপ দিকই বজায় রাখে)।

২. আপন অক্ষে পৃথিবীর ঘূর্ণন আপন অক্ষে সূর্যের ঘূর্ণনের সদৃশ এবং উভয়েই পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে ঘোরে। উল্লিখিত কল্পনাটি এটাও ব্যাখ্যা করে। কারণ যদি পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘূর্ণায়মান কোন বস্তু থেকে কোন অংশ বিচ্ছিন্ন হয়,তবে নিত্যতার সূত্র অনুসারে ঐ বিচ্ছিন্ন অংশও একই দিকে গতি বজায় রাখবে।

৩. এ ক্ষেত্রেও ২-এর অনুরূপ ব্যাখ্যা প্রযোজ্য। 

৪ ও ৫. পৃথিবীতে বিদ্যমান উপাদানসমূহ এবং সূর্যে বিদ্যমান উপাদনসমূহের মধ্যে পরিমাণ ও অবস্থাগত দিক থেকে সাদৃশ্য ও আনুপাতিক সম্পর্ক বিদ্যমান। উল্লিখিত কল্পনাটির মাধ্যমে এদেরও ব্যাখ্যা করা যায়। (বলা যায়,যেহেতু পৃথিবী সূর্যের একটি অংশ,সেহেতু যে সকল উপাদান অংশে বিদ্যমান,অবশ্যই সেগুলো সমগ্রেও বিদ্যমান থাকবে।)

৬. সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর গতিবেগ আপন অক্ষের উপর এর গতিবেগ এবং আপন অক্ষের উপর সূর্যের গতিবেগের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। পৃথিবী সূর্য থেকে পৃথক হয়েছে -এ কল্পনার মাধ্যমে এটা ব্যাখ্যা করা যায়। কারণ পৃথিবীর আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি সূর্যের গতি থেকেই উৎসারিত।

৭. সূর্য এবং পৃথিবীর আয়ুষ্কালের সামঞ্জস্যকেও পৃথিবী সূর্য্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে -এ কল্পনাটির মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়।

৮. এ পর্যায়েও পূর্বের মতোই আমরা বলতে পারি যে,সৃষ্টির আদিতে পৃথিবী সম্পূর্ণরূপে উত্তপ্ত অগ্নিকুণ্ডের মতো ছিল। পৃথিবীর অভ্যন্তরের উত্তপ্ত অবস্থা প্রকৃতপক্ষে পৃথিবী সূর্য থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়েছে -এ কল্পনাকেই সত্যায়িত করে।

তৃতীয় ধাপ : পৃথিবী সূর্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে -এ কল্পনাটি যদি সঠিক না হয়,তবে উপরিউক্ত বিষয়গুলোকে এর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যেমনি অসম্ভব তেমনি এর অধীনে বিষয়গুলোকে একত্র করাও অসম্ভব। কারণ যে কল্পনাটির অসত্যতা ধারণা করা হয়েছে তার অধীনে কতগুলো অপরাপর বিচ্ছিন্ন বিষয়কে আকস্মিকভাবে একত্র করতে পারার সম্ভাবনা প্রকৃতই দুর্বল। কারণ কল্পনাটির অসত্যতার সম্ভাবনার ফলে আমাদের অপর এক শ্রেণির কল্পনার দ্বারস্থ হতে হবে যেগুলোর মাধ্যমে উল্লিখিত বিষয়গুলোকে  ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হব। যেমন :

সূর্যের নিজ অক্ষের উপর ঘূর্ণনের সাথে সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর প্রদক্ষিণ এবং উক্ত ঘূর্ণন ও প্রদক্ষিণ পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে হওয়ার যে শৃঙ্খলা বিদ্যমান আছে ঐ শৃঙ্খলার ব্যাপারে আমদেরকে ধরে নিতে হবে যে,পৃথিবী সূর্য থেকে বহু দূরে অবস্থিত একটি অংশ,যা হয় নিজে নিজেই সৃষ্ট হয়েছে অথবা অন্য কোন নক্ষত্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে এ সৌর পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। একই সাথে ধরে নিতে হবে যে,পৃথিবী যখন অপন কক্ষপথে প্রবেশ করেছিল তখন সূর্যের পশ্চিম পার্শ্বে অবস্থিত কোন বিন্দুতে প্রবেশ করেছিল। ফলে,পশ্চিম থেকে পূর্বে পরিক্রমণ করছে। কারণ যদি সূর্যের পূর্বে অবস্থিত কোন বিন্দুতে প্রবেশ করত,তাহলে অবশ্যই পূর্ব থেকে পশ্চিমে আবর্তিত হতো।

আপন অক্ষের উপর এবং সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘূর্ণনের ক্ষেত্রে যে অভিন্নতা বিদ্যমান,সে ক্ষেত্রে আমাদেরকে ধরে নিতে হবে যে,অন্য কোন নক্ষত্র বিদ্যমান যা থেকে পৃথিবী বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং যা পশ্চিম থেকে পূর্বে ঘূর্ণনরত।

সূর্যের বিষুব রেখার সাথে সমান্তরাল অক্ষরেখার উপর পৃথিবী পরিক্রমণ করছে,এ ক্ষেত্রে আমাদেরকে মনে করতে হবে যে,সূর্যের বিষুব রেখার উল্লম্ব অবস্থানে অন্য কোন নক্ষত্র বিদ্যমান যা থেকে পৃথিবী বিচ্ছিন্ন হয়েছে।

সূর্য এবং পৃথিবীর উপাদানসমূহের অভিন্নতার ক্ষেত্রে মনে করতে হবে যে,একই উপাদানসম্বলিত সূর্য ভিন্ন অন্য কোন নক্ষত্র বিদ্যমান যা থেকে পৃথিবী বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং যা উপাদানসমূহের অনুপাতের ক্ষেত্রেও সূর্যের অনুরূপ।

সূর্যের পরিপার্শ্বে পৃথিবীর প্রদক্ষিণের দ্রুতি,আপন অক্ষে তার দ্রুতি এবং আপন অক্ষে সূর্যের দ্রুতির মধ্যকার বিদ্যমান শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে আমাদেরকে ধরে নিতে হবে যে,অন্য কোন নক্ষত্র বিদ্যমান যা পৃথিবীকে এমনভাবে বিচ্ছিন্ন করেছে যে,সূর্যের গতিবেগের অনুপাতে এর গতিবেগ বজায় থাকে।

সূর্য এবং পৃথিবীর আয়ুষ্কাল এবং সৃষ্টির আদিতে এর তাপমাত্রার ক্ষেত্রে মনে করতে হবে যে,পৃথিবী এমন এক নক্ষত্র (সূর্য ভিন্ন) থেকে বিছিন্ন হয়েছে যা সূর্যের আয়ুষ্কালের সম আয়ুষ্কালবিশিষ্ট এবং তার তাপমাত্রাও এ সূর্যের তাপমাত্রার মতোই।

অতএব,আমরা লক্ষ্য করলাম যে, পৃথিবী সূর্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে -এ কল্পনাটি যদি সত্য না হয়,তবে প্রাগুক্ত সমুদয় সম্ভাবনা ও কল্পনাকে সত্য বলে মেনে নিতে হবে এবং এ সকল শৃঙ্খলা ও সামঞ্জস্যতা যে আকস্মিকভাবে সৃষ্ট হয়েছে,তা-ও বিশ্বাস করতে হবে। আর উপরিউক্ত কল্পনার বিপরীতে এ সকল শৃঙ্খলাবদ্ধ ঘটনার আকস্মিকভাবে উদ্ভব ও সমবেত হওয়ার সম্ভাবনাও সত্যিই ক্ষীণ। অপরপক্ষে,গৃহীত কল্পনাটিই (সূর্য থেকে পৃথিবী বিচ্ছিন্ন হয়েছে) সমস্ত পরীক্ষালব্ধ বিষয়কে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট।

চতুর্থ ধাপ : যেহেতু সূর্য থেকে পৃথিবী  বিচ্ছিন্ন হয়েছে -এ কল্পনাটি অসত্য মনে করলে পৃথিবীর ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত বিষয়গুলোর উপস্থিতির সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়ে সেহেতু এটা মনে করাই শ্রেয় যে,উল্লিখিত কল্পনাটি সত্য,যা সমগ্র পরিলক্ষিত বিষয়কে ব্যাখ্যা করতে পারে। অতএব, পৃথিবী সূর্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে -এ কল্পনাটিই অপর পক্ষের  উপর প্রাধান্য পাবে।

পঞ্চম ধাপ : চতুর্থ  ধাপে বর্ণিত প্রাধান্যপ্রাপ্ত বিষয় (অর্থাৎ সূর্য থেকে পৃথিবী বিচ্ছিন্ন হয়েছে) এবং তৃতীয় ধাপে বর্ণিত ক্ষীণ সম্ভাবনাময় বিষয়ের (সমস্ত পরিলক্ষিত বিষয় সূর্য ভিন্ন অন্য কোন নক্ষত্র থেকে প্রাপ্ত )মধ্যে তুলনা করব। এখানে আমরা দেখতে পাব যে,চতুর্থ ধাপের উপসংহার তৃতীয় ধাপের উপসংহারের উপর প্রকৃতই প্রাধান্য পাওয়ার দাবি রাখে।

আর এর ভিত্তিতেই আমরা সূর্য থেকে পৃথিবীর বিচ্ছিন্ন হওয়ার সপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করব এবং বিজ্ঞানীরা এ পদ্ধতির মাধ্যমেই উক্ত কল্পনাকে সুস্পষ্টরূপে প্রমাণ করতে পেরেছেন।