প্রকাশকের কথা
মহানবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পরপরই যখন ইমামীয়া শিয়ারা একটি স্বতন্ত্র ধারা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে,তখন থেকেই এই চিন্তা ও বিশ্বাসের ধারাটি সম্পর্কে বিভিন্ন রূপ সন্দেহ সৃষ্টি ও অপযুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রশ্নের সম্মুখীন করে তাকে নিশ্চি
হ্ন করার প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এ অপচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে এবং কখনো তা তীব্র,আবার কখনো তা কিছুটা স্তিমিত হয়েছে।
উমাইয়া ও আব্বাসীয় খলিফাদের সময় দরবারী আলেমরা যারা ঐ অত্যাচারী শাসকদের থেকে পৃষ্ঠপোষকতা পেত তারা আহলে বাইতের পবিত্র ইমামগণ ও তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে অপযুক্তি উপস্থাপন করত এবং সন্দেহ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাতো। এমনকি তারা তাঁদের মোকাবিলায় কৃত্রিম মাজহাব সৃষ্টি করে বিকৃত বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করা এবং এর মাধ্যমে সর্বসাধারণকে আহলে বাইতের ইমামদের হতে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়েছে।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দীতে ক্ষমতাসীন শাসকদের পক্ষ থেকে প্রকৃত ইমামীয়া শিয়া বিশ্বাসকে দুর্বল করার লক্ষ্যে বিভিন্ন রূপ কৌশল গৃহীত হয়। অষ্টম হিজরীতে এসে ইবনে তাইমিয়ার আবির্ভাবের মাধ্যমে সন্দেহ সৃষ্টির ধারায় নতুন মাত্রা যোগ হয়। ইবনে তাইমিয়া সবচেয়ে বেশি চেষ্টা করেছেন শিয়াদের তাওহীদের বিশ্বাসকে (দুর্বল হাদীসসমূহের ভিত্তিতে) প্রশ্নের সম্মুখীন করতে। এমনকি তিনি মহানবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের সদস্যদের প্রতি শিয়াদের বিশেষ সম্মান প্রদর্শনের বিষয়টিরও সমালোচনা করেছেন।
ইবনে তাইমিয়ার অনুসৃত পন্থাটি দ্বিতীয় বারের মতো দ্বাদশ হিজরী শতাব্দীতে ওয়াহাবী ফির্কার প্রতিষ্ঠাতা আবদুল ওয়াহাব নজদীর মাধ্যমে পুনর্জীবিত ও গতিশীলতা লাভ করে। বিগত কয়েক শতাব্দী ধরে,বিশেষত শেষ দু’
শতক ধরে শিয়া আকীদায় বিশ্বাসীদের পক্ষ হতে তাদের উত্থাপিত সন্দেহের জবাবে অসংখ্য গ্রন্থ রচিত হয়েছে। দুঃখজনকভাবে এ সত্ত্বেও শিয়াদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও সন্দেহ সৃষ্টির প্রয়াস বন্ধ হয় নি। বিভিন্ন কারণেই তারা এরূপ সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। তন্মধ্যে এই সকল ব্যক্তির বক্রচিন্তা,বোঝার অক্ষমতা,শিয়াদের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে অজ্ঞতা,তাদের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থসমূহ অধ্যয়ন না করা,প্রথম শ্রেণীর শিয়া উৎসসমূহের সঙ্গে অপরিচিতি,হিংসাপরায়ণ মনোবৃত্তি,মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইতের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ,দুনিয়ালোভ,সমসাময়িক শাসকদের সঙ্গে আঁতাত,শিয়াদের বিরুদ্ধে লিখতে তাদের শত্রুদের রচিত বইয়ের সাহায্য নেয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
বর্তমান সময়ে প্রতি বছরই আমরা লক্ষ্য করছি শিয়া আকীদা-বিশ্বাসকে খণ্ডন করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ভাষায় শত শত গ্রন্থ রচিত ও প্রকাশিত হচ্ছে যার অধিকাংশই ওয়াহাবী আকীদায় বিশ্বাসীদের রচিত। এ গ্রন্থগুলোর সবই একই ধাঁচের। বিগত একশ বছরে তাদের লেখনীতে তেমন কোন পরিবর্তন আসে নি,বরং তারা তাদের পূর্ববর্তীদের কথারই পূনরাবৃত্তি করে আসছে। এর বিপরীতে শিয়াদের পক্ষ হতেও শত শত গ্রন্থ রচিত হয়েছে যার ইতিবাচক প্রভাব সর্বত্রই লক্ষণীয়। এ গ্রন্থগুলো মহানবী (সা.)-এর আহলে বাইতের ধারার পবিত্র বিশ্বাসসমূহের উপর আরোপিত সন্দেহসমূহের অপনোদনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। সম্প্রতি রচিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন আলী আসগার রেজওয়ানী রচিত‘
শিয়া পরিচিতি ও সংশয়ের জবাব’
শীর্ষক গ্রন্থটি উল্লেখযোগ্য যা দু’
খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। অত্র গ্রন্থটি উক্ত গ্রন্থের নির্বাচিত আটটি অধ্যায়ের অনুবাদ। আমরা আশা করছি এটি প্রকাশের মাধ্যমে মহানবী (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের চিন্তাধারার প্রসারে ক্ষুদ্র একটি পদক্ষেপ হলেও নিতে পেরেছি। সবশেষে সম্মানিত আলেম আয়াতুল্লাহ্ আল উজমা সাইয়েদ আবদুল করিম মুসাভী আরদেবিলীর (মুদ্দাজিল্লুহুল আলী) দপ্তরের পক্ষ থেকে এই বইটি প্রকাশের ক্ষেত্রে যে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেয়া হয়েছে তার জন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি এবং তাঁর সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। যদি কোন আগ্রহী ব্যক্তি এই মহান ফকীহর মূল্যবান ফতোয়াসমূহ হতে উপকৃত হতে চান,তাহলে নিম্নোক্ত ঠিকানায় যোগাযোগ করতে পারেন।
ই-মেইল : iso১১০@gmail.com
ইসলামী সেবা দপ্তর
কোম,ইরান