ওয়াহাবীদের সৃষ্ট সংশয়ের অপনোদন

 ওয়াহাবীদের সৃষ্ট সংশয়ের অপনোদন0%

 ওয়াহাবীদের সৃষ্ট সংশয়ের অপনোদন লেখক:
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

  • শুরু
  • পূর্বের
  • 44 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 15583 / ডাউনলোড: 5563
সাইজ সাইজ সাইজ
 ওয়াহাবীদের সৃষ্ট সংশয়ের অপনোদন

ওয়াহাবীদের সৃষ্ট সংশয়ের অপনোদন

লেখক:
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বাংলা

পৃথিবীর জীবন ও মৃত্যু পরবর্তী কবরের জীবনের মধ্যে সংযোগ

পবিত্র কোরআনের আয়াতসমূহ ও হাদীস হতে জানা যায় যে,পৃথিবীর অধিবাসী জীবিত মানুষ ও কবরবাসী মৃত মানুষের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে এ অর্থে যে,যখন জীবিত কোন মানুষ তাদেরকে ডাকে ও সম্বোধন করে কিছু বলে অথবা চায় তারা আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে তার উত্তর দিয়ে থাকে। এখানে আমরা এ সম্পর্কিত কিছু আয়াত ও হাদীসের প্রতি ইশারা করছি।

ক) আয়াতসমূহ :

মহান আল্লাহ হযরত সালিহ (আ.)-এর জাতি সম্পর্কে বলেছেন,

( فَأَخَذَتْهُمُ الرَّ‌جْفَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دَارِ‌هِمْ جَاثِمِينَ۞ فَتَوَلَّىٰ عَنْهُمْ وَقَالَ يَا قَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِ‌سَالَةَ رَ‌بِّي وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلَـٰكِن لَّا تُحِبُّونَ النَّاصِحِينَ)

অতঃপর ভূমিকম্প তাদের পাকড়াও করল। ফলে তারা তাদের গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে রইল। (হযরত সালেহ) তাদের (মৃতদেহগুলো) হতে মুখ ফিরিয়ে নিলেন ও বললেন : হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের কাছে আমার প্রতিপালকের নির্দেশ ও বাণী পৌঁছিয়েছি এবং তোমাদের মঙ্গল কামনা করেছি, কিন্তু তোমরা মঙ্গলাকাঙ্ক্ষীদের ভালোবাস না। ৪৬

২। হযরত শুয়াইব (আ.)-এর উম্মত সম্পর্কেও অনুরূপ বর্ণনা এসেছে।

৩। অন্যত্র বলা হয়েছে :

( وَاسْأَلْ مَنْ أَرْ‌سَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رُّ‌سُلِنَا أَجَعَلْنَا مِن دُونِ الرَّ‌حْمَـٰنِ آلِهَةً يُعْبَدُونَ )

আপনার পূর্বে যে সকল রাসূল প্রেরণ করেছি তাদের জিজ্ঞাসা করুন, পরম করুণাময় (আল্লাহ) ছাড়া কি অন্য কোন উপাস্য আমি ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করেছিলাম। ৪৭

৪। অন্যত্র কয়েকটি আয়াতে বিভিন্ন নবীর উপর দরুদ ও সালাম প্রেরণ করে বলেছেন :

( سَلَامٌ عَلَىٰ نُوحٍ فِي الْعَالَمِينَ )

বিশ্ববাসীদের মধ্যে নূহের উপর সালাম। ৪৮

( سَلَامٌ عَلَىٰ إِبْرَ‌اهِيمَ )

ইবরাহিমের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। ৪৯

( سَلَامٌ عَلَىٰ مُوسَىٰ وَهَارُ‌ونَ )

মূসা ও হারুনের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। ৫০

( سَلَامٌ عَلَىٰ إِلْ يَاسِينَ )

ইল ইয়াসিনের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। ৫১

( سَلَامٌ عَلَى الْمُرْ‌سَلِينَ )

নবিগণের উপর শান্তি বর্ষিত হোক৫২

উপরিউক্ত আয়াতসমূহ হতে বোঝা যায় পৃথিবীর জীবন ও মৃত্যু পরবর্তী জীবনের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে এবং কবরে মানুষ ভূপৃষ্ঠের অধিবাসীদের কথোপকথন শুনতে পায় ও তাদের সালামের জবাব দান করে ।

শেখ মাহমুদ শালতুত বলেছেন, কোরআন ও হাদীস হতে জানা যায় যখন মানুষের দেহ হতে আত্মা বিচিছন্ন হয় তখন সে মৃত্যুবরণ করে,কিন্তু তখনও তার অনুধাবন ক্ষমতা থাকে (ও অন্যরূপ জীবন নিয়ে সে বেঁচে থাকে) এবং তাকে কেউ সালাম দিলে সে তা শুনতে পায়,তার কবর জিয়ারতকারীকে চিনতে পারে ও কবরে বেহেশ্তী নিয়ামত ও দোযখের আজাবকে অনুভব করে।৫৩

শাইখুল ইসলাম ইজ্জুদ্দীন ইবনে আবদুস সালাম তাঁর ফতোয়া গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, বাহ্যিকভাবে বোঝা যায় মৃত ব্যক্তি তার জিয়ারতকারীকে (সাক্ষাৎকারী জীবিত ব্যক্তিকে) চিনতে পারে । কারণ শরীয়ত আমাদের নির্দেশ দিয়েছে মৃত ব্যক্তিকে সালাম দেয়ার এবং শরীয়তের প্রবক্তা কখনোই এমন ব্যক্তিকে সম্বোধন করার নির্দেশ দেন নি যে শুনতে পায় না। ৫৪

খ) হাদীসসমূহ :

১। মহানবী বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি মুমিন ভাইয়ের কবরের পাশ দিয়ে যায় এবং সে ব্যক্তি পৃথিবীতে ঐ মৃত ব্যক্তির পরিচিতদের অন্তর্ভুক্ত হয়,তবে মহান আল্লাহ মৃত ব্যক্তির আত্মাকে তার সালাম ও কাঙ্ক্ষিত বিষয়ের জবাব দানের জন্য সজাগ করেন। ৫৫

২। মহানবী হতে বর্ণিত হয়েছে যে,মৃত ব্যক্তি তার জানাযায় অংশগ্রহণকারীদের পদধ্বনি শুনতে পায়।৫৬

৩। ইবনে কাইয়্যেম জাওযীয়া তাঁর আররুহ গ্রন্থে বলেছেন, সাহাবিগণ ও প্রাচীন আলেমদের মধ্যে এ বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে যে,মৃত ব্যক্তি তার জিয়ারতকারী ব্যক্তিকে চিনতে পারে এবং তার আগমনে আনন্দিত হয়।৫৭

৪। ইবনে আবিদ দুনিয়া তাঁর আল কুবুর গ্রন্থে হযরত আয়েশা হতে বর্ণনা করেছেন,মহানবী বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি তার মুমিন ভ্রাতাকে জিয়ারত করে অর্থাৎ তার কররের নিকটে যায় ও সেখানে বসে,তবে মৃত ব্যক্তি তার সাহচর্যে আনন্দিত হয় ও তার সালামের উত্তর দেয়,ততক্ষণ তার সাহচর্য অনুভব করে যতক্ষণ না সে সেখান হতে উঠে চলে যায়।৫৮

৫। আবু হুরাইরা মহানবী (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,যখন কোন ব্যক্তি মৃতের কবরের পাশ দিয়ে যায় ও তাকে সালাম দেয় তখন মৃত ব্যক্তি তাকে চিনতে পারে ও তার সালামের জবাব দান করে।৫৯

৬। বায়হাকী সাঈদ ইবনে মুসাইয়ের হতে বর্ণনা করেছেন,তিনি বলেছেন,আমরা আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)-এর সঙ্গে মদীনায় কবরস্থানে পৌঁছলে তিনি উচ্চৈঃস্বরে বললেন, হে কবরবাসী! তোমাদের উপর আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদের সংবাদ আমাদের জানাও নতুবা আমাদের খবর শোন। সাঈদ বলেন, তখন তাদের কণ্ঠ শুনতে পেলাম : ওয়া আলাইকুমুস্ সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ইয়া আমীরাল মুমিনীন! আমাদেরকে আপনাদের সংবাদ জানান। হযরত আলী (আ.) বললেন, তোমাদের স্ত্রীরা অন্য স্বামী গ্রহণ করেছে,তোমাদের সম্পদ উত্তরসূরিদের মধ্যে বণ্টিত হয়েছে। তোমাদের সন্তানরা ইয়াতীমদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তোমাদের নির্মিত গৃহগুলোতে তোমাদের শত্রুরা বাস করছে। আমাদের নিকট  এই হলো খবর। তোমাদের কী খবর? সাঈদ বলেন, এক মৃত ব্যক্তি বলল যে,তার কাফনের কাপড় ছিন্নভিন্ন হয়েছে,তার চুলগুলো ঝরে পড়েছে,চর্ম দেহ হতে বিচ্ছিন্ন হয়েছে,চক্ষু অক্ষিকোটর হতে বেরিয়ে মুখের উপর ঝুলে পড়েছে,নাকের ছিদ্র হতে গলিত রস বেরিয়ে আসছে। যা এখানকার জন্য প্রেরণ করেছিলাম তা পেয়েছি এবং করণীয় যা করি নি তার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।৬০

ইবনে কাইয়্যেম জাওযিয়া মৃত ব্যক্তিরা জীবিত ব্যক্তি কর্তৃক তার কবর জিয়ারতকে অনুভব করতে পারে কিনা  প্রসঙ্গে বলেন, মৃত ব্যক্তির কবর জিয়ারতকারীকে জায়ের (সাক্ষাৎকারী) বলা হয়,এর অর্থ মৃত ব্যক্তি তার সাক্ষাৎকারীকে চিনে নতুবা তাকে জায়ের বলা হতো না।৬১

৭। বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে, যখন মৃত ব্যক্তিকে কবরের ভিতর শোয়ানো  হয়,তখন সে তাকে দাফন করতে আসা ব্যক্তিদের পদধ্বনি শুনতে পায়। ৬২

৮। আবু হুরাইরা বলেছেন, মহানবী (সা.) যখনই কবর জিয়ারতে যেতেন এরূপে কবরবাসীদের সম্বোধন করতেন ,৬৩

السلام علیکم اهل الدیار من المومنین و المسلمین و انا ان شاءالله بکم لاحقون اسال الله لنا ولکم العافية

৯। ইবনে আব্বাস বলেছেন, এক সাহাবী একটি কবরের নিকট তাঁবু পাতলেন,কিন্তু জানতেন না সেটি একটি মৃত ব্যক্তির কবর। হঠাৎ করে তাঁর কানে সূরা মুল্ক তেলাওয়াতের শব্দ আসল। সূরা পাঠ শেষ হওয়া পর্যন্ত তা তাঁর কানে ভেসে আসছিল। পরবর্তীতে তিনি রাসূল (সা.)-এর নিকট পৌঁছে ঘটনাটি খুলে বললেন। মহানবী বললেন, সূরা মুল্ক কবরের আজাবের প্রতিরোধক এবং মানুষকে কবরের আজাব হতে মুক্তি দেয়।৬৪

কবরে বা বারজাখে নবিগণের জীবন

নবিগণের বারজাখী জীবন সম্পর্কে আহলে সুন্নাতের হাদীস গ্রন্থসমূহে বর্ণিত কয়েকটি হাদীস :

১. আনাস ইবনে মালিক মহানবী (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন, নবিগণ তাঁদের কবরে জীবিত রয়েছেন এবং নামায পড়েন। এই হাদীসটি হাফিজ হাইসামী তাঁর মাজমায়ুজ জাওয়ায়িদ ৬৫ গ্রন্থে এবং আল্লামা মানাভী তাঁর ফাইজুল ক্বাদীর ৬৬ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। মুহাদ্দিস  আলবানী৬৭   হাদীসটির বিশুদ্ধতার স্বীকৃতি দিয়েছেন।

২. মহানবী (সা.) বলেছেন : মৃত্যুর পর আমার অবগতি আমার জীবিতাবস্থার ন্যায়। ৬৮

৩. হযরত আলী (আ.) বর্ণনা করেছেন : এক বছর এক আরব বেদুইন রাসূলের কবরের নিকট এসে বলল : হে আল্লাহর রাসূল! আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। কবরের ভিতর হতে জবাব এল : আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করেছেন। ৬৯

৪. দারেমী তাঁর সুনান গ্রন্থে সাঈদ ইবনে আবদুল আজিজ সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে,তিনি রাসূল (সা.)-এর কবরের মধ্যে হতে জিকরের শব্দ শুনে নামাজের ওয়াক্ত হয়েছে বুঝতে পারতেন।৭০

দারেমী সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেব হতে বর্ণনা করেছেন যে,ইয়াযীদের সৈন্যবাহিনী কর্তৃক মদীনার হত্যা ও লুণ্ঠনের দিনগুলোতে তিনি মহানবীর কবর হতে আজান শুনেছেন,আর মসজিদ তখন লোকশূন্য ছিল।৭১

৫। হাফিজ হাইসামী সহীহ সূত্রে আবূ হুরাইরা হতে বর্ণনা করেছেন যে,মহানবী (সা.) বলেছেন : সেই সত্তার কসম আবুল কাসেম মুহাম্মদের জীবন যাঁর হাতে নিবদ্ধ,ঈসা ইবনে মারিয়াম ন্যায়বিচারক ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে আবির্ভূত হবেন। তিনি ক্রুশসমূহ নিশ্চিহ্ন করবেন,শুকরসমূহ হত্যা করবেন,সকল কিছুর সংস্কার সাধন করবেন,মানুষের মধ্যে বিদ্যমান শত্রুতার অবসান ঘটাবেন,প্রচুর সম্পদ দান করবেন,কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি আমার কবরে এসে আমাকে সম্বোধন করে জবাব না পাবেন,ততক্ষণ তাঁকে কেউ গ্রহণ করবে না। ৭২

৬. হাফিজ হাইসামী সহীহ হাদীস সূত্রে আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (সা.) বলেছেন : আমার জীবিতাবস্থা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এ জন্য যে,আমার হতে হাদীস শোন ও বর্ণনা কর। আমার মৃত্যু তোমাদের জন্য কল্যাণকর এ কারণে যে,তোমাদের কর্মসমূহ (আমলনামা) আমার কাছে উপস্থাপন করা হবে এবং আমি তোমাদের সৎকর্ম দেখে আল্লাহর শোকর আদায় করব এবং তোমাদের মন্দ কর্মের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করব। ৭৩

ইউসুফ ইবনে আলী জানানী মদীনাবাসী হাশেমী বংশের এক নারী হতে বর্ণনা করেছেন যে,মসজিদের কোন কোন খাদেম তাকে জ্বালাতন করত। তিনি মহানবীর সাহায্য প্রার্থনা করলে তাঁর পবিত্র কবর হতে শুনতে পেলেন : আমি ধৈর্যের ক্ষেত্রে তোমার আদর্শ। তাই ধৈর্যধারণ কর। কয়েকদিন পর আপনা আপনিই সমস্যাটির সমাধান হয়ে গেল এভাবে যে,তারা সকলেই মারা গেল।৭৪

বারজাখী জীবনে আল্লাহর ওলীদের মর্যাদা

হাকিম নিশাবুরী ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন: একদিন মহানবী (সা.) বসেছিলেন এবং আসমা বিনতে উমাইস তখন তাঁর নিকটেই ছিলেন। হঠাৎ করে মহানবী (সা.) কারো সালামের জবাব দিলেন। (আসমা আশ্চর্যান্বিত হলে) তিনি বললেন : হে আসমা! জাফর,জীবরাঈল ও মিকাঈলের সাথে আমাদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সালাম দিয়েছিলেন। ৭৫

কাজী সুবুকী বলেছেন : আল্লাহর ওলিগণ তাঁদের জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর আল্লাহর ইচ্ছায় ও শক্তিতে কোন কিছুর উপর প্রভাব রাখেন। মহান আল্লাহ তাঁদেরকে এ মর্যাদা দিয়েছেন ও তাঁদের হাত ও মুখের মাধ্যমে বিভিন্ন (অলৌকিক) কর্ম সম্পাদন করান। ৭৬

মৃতদের জন্য কোরআন পাঠ করা

ইবনে কাইয়্যেম জাওযিয়া বলেছেন : পূর্ববর্তীদের (সাহাবী,তাবেয়ীন ও অগ্রবর্তী আলেমদের) হতে বর্ণিত হয়েছে যে,তাঁরা মৃত্যুর পূর্বে তাঁদের কবরের পাশে কোরআন তেলাওয়াতের অসিয়ত করতেন। ৭৭

বর্ণিত হয়েছে আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর অসিয়ত করে যান তাঁর কবরের পাশে সূরা বাকারা পাঠ করার। আহমাদ ইবনে হাম্বাল প্রথমদিকে এ কর্মকে বৈধ মনে করতেন না,পরবর্তীকালে তিনি তাঁর মত পরিবর্তন করেন।

খাল্লাল তাঁর আল ক্বিরাআত ইনদাল কুবুর গ্রন্থে স্বীয় সূত্রে আলা ইবনে লাহলাজ হতে বর্ণনা করেছেন,তাঁর পিতা অসিয়ত করে যান : যখন আমাকে কবরে রাখবে তখন বলবে

بسم الله وعلي سنّة رسول الله

অতঃপর যখন আমাকে মাটি দ্বারা আবৃত করবে তখন আমার শিয়রে বসে সূরা বাকারা পাঠ কর,যেমনটি আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর বলেছেন। ৭৮

হাসান ইবেন সাব্বাহ জাফারানী বলেছেন : জনাব শাফেয়ীর কাছে মৃত ব্যক্তির কবরের নিকট কোরআন তেলাওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন যে,এতে কোন সমস্যা নেই। ৭৯

খাল্লাল শা বী হতে বর্ণনা করেছেন: যখন আনসারদের কেউ মৃত্যুবরণ করত তারা তার কবরের নিকটে যেতেন ও কোরআন পাঠ করতেন। ৮০

হাসান ইবনে জারভী বলেছেন : আমার ভগ্নীর কবরের নিকটে গিয়ে সূরা মুল্ক পড়েছিলাম। কয়েকদিন পর এক ব্যক্তি এসে আমাকে বলল যে,আমার ভগ্নীকে স্বপ্নে দেখেছে,সে বলছে, আমার ভ্রাতাকে আল্লাহ উত্তম বিনিময় দান করুন। সে আমার কবরের নিকটে কোরআন পাঠ করেছে,তা হতে আমি লাভবান হয়েছি। ৮১

এক ব্যক্তি জুমুআর দিন তার মাতার কবরের নিকট সূরা ইয়াসীন পাঠ করত। একদিন সূরা পাঠ ইয়াসীন পাঠ করে সকল কবরবাসীর রুহের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করল। কয়েকদিন পর এক ব্যক্তি তার নিকট এসে বলল: তুমি কি অমুক ব্যক্তি? সে বলল : হ্যাঁ । তখন ঐ ব্যক্তি বলল : আমার এক কন্যা মৃত্যুবরণ করেছে। তাকে স্বপ্নে দেখলাম সে তার কবরে অত্যন্ত আনন্দিত অবস্থায় বসে আছে। আমি তাকে তার আনন্দের কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে বলল যে,অমুক ব্যক্তি সকল কবরবাসীর উদ্দেশে সূরা ইয়াসীন পাঠ করার কারণে আমরা আল্লাহর শাস্তি হতে মুক্তি লাভ করেছি। ৮২

ইয়াসায়ী বর্ণনা করেছেন রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমাদের মৃতদের উপর সূরা ইয়াসীন পাঠ কর। ৮৩

মুফাজ্জাল ইবনে মুয়াফ্ফাক বলেছেন : আমি প্রতিদিন আমার পিতার কবর জিয়ারত করতাম। একদিন বিশেষ ব্যস্ততার কারণে তাঁর কবর জিয়ারতে যেতে পারি নি। ঐদিন রাতে তাঁকে স্বপ্নে দেখলাম যে,তিনি আমাকে বলছেন : হে পুত্র! কেন আমার জিয়ারতে আস নি? আমি বললাম : আপনি কি আপনার কবর জিয়ারতে আসলে বুঝতে পারেন? তিনি বললেন : আল্লাহর শপথ! যখন তুমি আমার কবরের উদ্দেশে ঘর থেকে বের হও তখন হতে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত আমি তোমাকে পর্যবেক্ষণ করি। ৮৪

মুজাহিদ সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন, মৃত ব্যক্তিকে কবরে তার সন্তানের সৎকর্ম সম্পর্কে জানানো হয়। ৮৫

ইবনে কাইয়েম জাওযিয়া বলেছেন, উপরিউক্ত বিষয়ের সপক্ষে একটি উত্তম দলিল হলো প্রাচীনকাল হতেই মানুষ মৃতদের কবরে শয়ন করানোর পর তালক্বীন (ঈমানের বিষয়সমূহ আবৃত্তির মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দেয়া) করে আসছে। যদি মৃতরা শুনতে না পেত ও এর মাধ্যমে লাভবান না হতো তবে তালক্বীন অনর্থক পরিগণিত হতো।৮৬

আহমাদ ইবনে হাম্বালকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি তা করার নির্দেশ দেন ও এটি উত্তম বলে উল্লেখ করেন।

সুয়ূতী তাঁর শিফাউস্ সুদুর গ্রন্থে বলেন : কোরআন তেলাওয়াতের সওয়াব মৃত ব্যক্তির নিকট পৌঁছে কিনা এ বিষয়ে মতদ্বৈততা রয়েছে। পূর্বেকার আলেমগণের অধিকাংশ এবং চার মাযহাবের প্রবক্তাদের হতে তিনজন এ বিষয়ে একমত যে,সেই সওয়াব তাদের নিকট পৌঁছে। কেবল ইমাম শাফেয়ী এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেছেন এ যুক্তিতে যে,পবিত্র কোরআন বলছে :

( وَأَن لَّيْسَ لِلْإِنسَانِ إِلَّا مَا سَعَىٰ )

মানুষ তাই পায় যা সে করে। ৮৭ কিন্তু অন্যরা এর জবাবে নিম্নোক্ত দলিলসমূহ উপস্থাপন করেন :

প্রথমত উপরিউক্ত আয়াত নিম্নোক্ত এ আয়াতের

( وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّ‌يَّتُهُم بِإِيمَانٍ )

এবং যারা ঈমান এনেছে ও তাদের সন্তানদের মধ্যে যারা ঈমানে তাদের অনুগামী- মাধ্যমে রহিত হয়ে গিয়েছে। ৮৮

দ্বিতীয়ত পূর্বোক্ত আয়াতটিতে হযরত ইবরাহীম (আ.) ও হযরত মূসা (আ.)-এর জাতি সম্পর্কে বলা হয়েছে ও তাদের মধ্যেই নির্দিষ্ট।

তৃতীয়ত আয়াতটিতেانسان বলতে শুধু কাফেরকে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু মুমিনগণ নিজেদের সৎকর্ম ছাড়াও তার জন্য প্রেরিত দোয়ার দ্বারা লাভবান হয়ে থাকে।

চতুর্থত আয়াতটির উদ্দেশ্য হল মানুষকে তার প্রচেষ্টা ও কর্ম অনুযায়ী ফলদান যা ন্যায় বিচারের দাবী। কিন্তু মহান আল্লাহ তাঁর অসীম অনুগ্রহের কারণে অন্যভাবেও মৃতব্যক্তির প্রতি সওয়াব পৌঁছিয়ে দিয়ে থাকেন।

পঞ্চমতللانسان শব্দটিতে لام علی অর্থে এসেছে অর্থাৎ অসৎকর্মের ক্ষেত্রে একের শাস্তি অপর কেউ পাবে না কিন্তু সৎকর্মের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়ে আল্লাহর অনুমতিক্রমে নিয়তের অনুবর্তী।৮৯

মৃতের উপকৃত হওয়া  

পবিত্র কোরআনের আয়াত ও হাদীসসমূহ হতে বোঝা যায় মৃত ব্যক্তির জন্য কোরআন তেলাওয়াত ও ক্ষমা প্রার্থনা করলে তা হতে তারা লাভবান হয়।

১। আয়াতসমূহ

মহান আল্লাহ বলেছেন :

( الَّذِينَ يَحْمِلُونَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُونَ بِهِ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَحْمَةً وَعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِينَ تَابُوا وَاتَّبَعُوا سَبِيلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ)

যারা আরশ বহন করে এবং যারা তার চারপাশে আছে তারা তাঁদের পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আপনার রহমত ও জ্ঞান সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে। অতএব, যারা তওবা করে এবং আপনার পথ অনুসরণ করে তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করুন। ৯০

অন্যত্র বলেছেন :

( تَكَادُ السَّمَاوَاتُ يَتَفَطَّرْنَ مِنْ فَوْقِهِنَّ وَالْمَلَائِكَةُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِمَنْ فِي الْأَرْضِ )

যখন নিকট আকাশ উপর হতে ফেটে পড়ার উপক্রম হয় তখন ফেরেশতাগণ তাদের পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে এবং পৃথিবীবাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। ৯১

মহান আল্লাহ আরো বলেন :

( وَالَّذِينَ جَاءُوا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ )

যারা তাদের পরে আগমন করেছে তাদের জন্য দোয়া করে তারা (আনসাররা) বলে : হে আমাদের পালনকর্তা!, আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভ্রাতাদেরকে ক্ষমা করুন। ৯২

২। হাদীসসমূহ

বিভিন্ন হাদীস হতেও জানা যায় মৃতগণ জীবিতদের সৎকর্মের প্রেরিত সওয়াব হতে লাভবান হয়ে থাকে। সহীহ বুখারী ও মুসলিম হযরত আয়েশা হতে বর্ণনা করেছে রাসূল (সা.) বলেছেন : যদি কোন মৃত ব্যক্তির রোজা কাযা থাকে তবে তার পক্ষে তার ওয়ালী (সন্তান বা এরূপ অন্য কেউ) কাযা আদায় করবে। ৯৩

ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত হয়েছে যে,তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-এর নিকট এসে বলল : হে আল্লাহর রাসূল! আমার মাতা মৃত্যুবরণ করেছেন এবং তার উপর এক মাসের কাযা রোজা ফরজ ছিল। আমি কি তার পক্ষে তা আদায় করতে পারব? মহানবী (সা.) বললেন, হ্যাঁ,দ্বীনের বিধান আদায় করাটাই বাঞ্ছিত। ৯৪

অন্য এক হাদীসে এসেছে এক নারী মহানবীর  নিকট প্রশ্ন করল : আমার মাতা হজ্জ্ব না করেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। আমি কি তার পক্ষে তা আদায় করতে পারব? তিনি বললেন : হ্যাঁ,তার পক্ষে তা আদায় কর। ৯৫

আতা ইবনে রিবাহ বর্ণনা করেছেন : এক ব্যক্তি মহানবীকে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি আমার মৃত মাতার পক্ষে দাস মুক্ত করতে পারব? মহানবী (সা.) বললেন : হ্যাঁ,পুনরায় সে বলল, এই দাস মুক্তির সওয়াব হতে সে কি লাভবান হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ

সাদ ইবনে উবাদা রাসূলকে প্রশ্ন করলেন, আমার মাতা জীবিতাবস্থায় মানত করেছিলেন কিন্তু পালন করতে পারেন নি। আমি কি তার মানতটি পালন করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ । সাদ পুনরায় বললেন, এর মাধ্যমে  তিনি কি লাভবান হবেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ

আবু হুরাইরা বর্ণনা করেছেন যে,এক ব্যক্তি রাসুলের নিকট এসে বলল, আমার পিতা মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু তার সম্পদের জন্য কোন ওসিয়ত করে যাননি। আমি যদি তার পক্ষে সাদকা দান করি তবে তা কি তার গুনাহের কাফ্ফারা হিসেবে পরিগণিত হবে? তিনি বললেন : হ্যাঁ। মহানবী আরো বললেন : তোমাদের মৃতদের জন্য সূরা ইয়াসীন পাঠ কর। ৯৬