ওয়াহাবীদের সৃষ্ট সংশয়ের অপনোদন

 ওয়াহাবীদের সৃষ্ট সংশয়ের অপনোদন14%

 ওয়াহাবীদের সৃষ্ট সংশয়ের অপনোদন লেখক:
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বিভাগ: ধর্ম এবং মাযহাব

  • শুরু
  • পূর্বের
  • 44 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 16130 / ডাউনলোড: 5858
সাইজ সাইজ সাইজ
 ওয়াহাবীদের সৃষ্ট সংশয়ের অপনোদন

ওয়াহাবীদের সৃষ্ট সংশয়ের অপনোদন

লেখক:
প্রকাশক: ইসলামী সেবা দপ্তর,কোম,ইরান
বাংলা

1

2

ইমাম হুসাইন (আ.)-এর কবর জিয়ারতের ফজিলত

আহলে বাইতের ইমামগণের হাদীসসমূহে ইমাম হুসাইনের কবর জিয়ারতের বিষয়ে বিশেষ তাগিদ দেয়া হয়েছে। যেমন :

১। ইমাম বাকির (আ.) বলেছেন : আমাদের অনুসারীদের অবশ্যই ইমাম হুসাইনের কবর জিয়ারত করতে বল। কারণ ইমাম হুসাইনের ইমামতে বিশ্বাসী যে কোন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তাঁর কবর জিয়ারত ওয়াজিব করেছেন। ১৭০

২। ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : আমাদের অনুসারীদের মধ্যে যে ব্যক্তি ইমাম হুসাইনের কবর জিয়ারত করবে ফিরে আসার পূর্বেই তার সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। ১৭১

৩। ইমাম রেজা (আ.) তাঁর পিতা মূসা কাজিমের সূত্রে ইমাম সাদিক (আ.) হতে বর্ণনা করেছেন : ইমাম হুসাইনের জিয়ারতকারীর জিয়ারতের সময় তার জীবনকাল হিসেবে পরিগণিত হবে না। ১৭২

৪। ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : যে ব্যক্তি মহানবী (সা.),হযরত আলী (আ.) ও হযরত ফাতিমা জাহরার (আ.) প্রতিবেশী হিসেবে বেহেশতে থাকতে চায়,সে ইমাম হুসাইনের জিয়ারত ত্যাগ করতে পারে না। ১৭৩

৫। ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : যে কেউ ইমাম হুসাইনের জিয়ারতে যাবে এমতাবস্থায় সে ইমাম হুসাইনের সত্যিকার অবস্থান ও মর্যাদাকে অনুধাবন করেছে তবে তার সকল গুনাহ (পূর্বের ও পরের) ক্ষমা করে দেয়া হবে। ১৭৪

৬। আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবি নাসর বলেছেন : আমাদের কিছু নির্ভরযোগ্য রাবী ইমাম রেজাকে (আ.) ইমাম হুসাইনের কবর জিয়ারতের সওয়াব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি জবাবে বলেন, এর সওয়াব এক উমরাহর সমান।১৭৫

৭। মুহাম্মদ ইবনে সিনান বলেছেন : আমি ইমাম রেজাকে বলতে শুনেছি যে,তিনি বলেছেন, যে কেউ ইমাম হুসাইনের কবর জিয়ারত করবে আল্লাহ তার আমলনামায় মকবুল হজ্জ্বের সওয়াব লিখে দিবেন। ১৭৬

৮। ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : ইমাম হুসাইনের কবর জিয়ারতের সওয়াব বিশটি হজ্জ্বের সমান অথবা তার হতেও উত্তম। ১৭৭

কেন ইমাম হুসাইন (আ.)-এর কবর জিয়ারত কাবা ঘরের জিয়ারত হতে উত্তম?

কোন কোন ওয়াহাবী আলেম উপরিউক্ত হাদীসসমূহ দেখে ইমামীয়া শীয়াদের উপর ক্রোধান্বিত হয়েছে এবং তাদের উপর প্রচণ্ড হামলা করেছে। তারা দাবী করেছেন যে,এ ধরনের হাদীসসমূহ মুসলমানদের হজ্জ্ব করা হতে বিরত রাখে এবং হজ্জ্বের প্রতি তাদের বিশ্বাসকে দুর্বল করে। শুধু তাই নয় (নাউজুবিল্লাহ্) ইমাম হুসাইনকে আল্লাহর উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তাই এরূপ চিন্তা বিশ্বাসের প্রচারকে প্রতিহত করতে হবে। কারণ তা একরূপ অতিরঞ্জন। এই আপত্তির জবাবে আমরা কয়েকটি বিষয় ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন মনে করছি :

১। সম্ভাবনা রয়েছে এই হাদীসসমূহ বিশেষ দৃষ্টিকোণ হতে বর্ণিত হয়েছে অর্থাৎ যখনই ইসলাম হুমকির সম্মুখীন এবং মুসলমানরা নামায,রোজা,হজ্জ্ব প্রভৃতির মত ইবাদতগুলোর বাহ্যিকতার প্রতিই কেবল লক্ষ্য করবে কিন্তু ইবাদত তার প্রকৃত মর্ম ও অর্থ হারিয়ে অন্তঃসারশূন্য হয়ে পড়বে তখন অবশ্যই শাহাদাতের রক্তিম পথে অগ্রসর হতে হবে। কারণ প্রথমে ইসলামী সমাজ ও শরীয়তের দেহে প্রকৃত প্রাণের সঞ্চার করতে হবে তারপর শরীয়তের বাহ্যিকতার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। (৬০ হিজরীর জিলহজ্জ্ব মাসের ৮ তারিখে ইমাম হুসাইন (আ.) হজ্জ্বের জন্য আরাফার দিকে যাত্রা না করে কুফার দিকে যাত্রা করেন। তাঁর এ কর্মের উদ্দেশ্য ছিল সবাইকে বলা যে,ইসলামের প্রাণের অস্তিত্ব না থাকলে,তা শুধুই সামাজিক আচারে পরিণত হলে ও সমাজে তার শিরক,কুফর,ও বিদআত প্রতিরোধকারী ভূমিকা না থাকলে জিহাদ ও শাহাদাতের পথ বেছে নিতে হবে-সেক্ষেত্রে নিছক আচারভিত্তিক ইবাদত মূল্যহীন। যদি কোন মুসলিম দেশে ইসলামের শুধু নাম থাকে,কিন্তু তার শরীয়তের কোন প্রাণ না থাকে তখন উচিত হবে ইমাম হুসাইনের পথ অবলম্বন করে জাতিকে প্রকৃত ইসলামের সাথে পরিচিত করানো। অতঃপর শরীয়তের বাহ্যিকতার প্রতি দৃষ্টি দেয়া,যেমনটি ইমাম হুসাইন করেছেন। যখন সবাই হজ্জ্ব করার জন্য মক্কায় আসছিল তখন তিনি হজ্জ্বের অনুষ্ঠান অসমাপ্ত রেখে তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধে রত হন। মুসলিম উম্মতকে জাগরিত করতে ও শরীয়তকে পুনর্জীবন দানের লক্ষ্যে স্বীয় জীবন বিলিয়ে দেন।

২। কাবার সম্মান এ কারণেই যে,তা আল্লাহর নির্দেশে তাঁর প্রেরিত এক রাসূলের মাধ্যমে নির্মিত হয়েছে। কোন কোন হাদীসের বর্ণনামতে কাবা আল্লাহর প্রতিপালক ও মাবুদ হওয়ার বৈশিষ্ট্যের প্রতিপালক,কিন্তু আল্লাহর রাসূল (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইতের ইমামগণ আল্লাহর সকল গুণের প্রতিচ্ছায়া ও প্রকাশ। এ কারণেই আমরা জিয়ারতে জামেয়ে কাবিরাতে পড়ে থাকি

من أراد الله بدأ بکم و من وحّدهُ قبل عنکم و من قصده توجَّهُ

অর্থাৎ যারা আল্লাহকে চায়,তারা আপনাদের থেকে শুরু করে,যে কেউ আল্লাহকে এক জানে,সে আপনাদের থেকে গ্রহণ করে,যে কেউ আল্লাহর প্রতি যাত্রা করে,আপনাদের প্রতি দৃষ্টি দেয়। দোয়া নুদবাতেও আমরা পড়ি

أین وجهُ الله الّذی إلیه یتوجَّهُ الاولیاء

কোথায় আল্লাহ বিরাজমান যার প্রতি তাঁর ওলীরা মুখ ফেরায়।

৩। প্রতি মুসলমানের জন্য ওয়াজিব হলো শরীয়তের বিধি-বিধান শিক্ষা করা,তারপর তা পালন করা,যেমন হজ্জ্ব ও হজ্জ্ব সম্পর্কিত মাসলা-মাসায়েল শিক্ষা করা অপরিহার্য। অতঃপর হজ্জ্বে গমনের পর তা আদায় করতে হবে। যেহেতু ইমামগণ মহানবী (সা.)-এর শরীয়তের ব্যাখ্যা দানকারী সেহেতু প্রথমে তাঁদের শরণাপন্ন হয়ে তাঁদের ঐশী ও শরীয়তগত বেলায়েতকে (অভিভাবকত্ব) মেনে নিয়ে তাঁদের নির্দেশানুযায়ী হজ্জ্ব পালন করতে হবে। এক্ষেত্রে ইমামদের বেলায়েত শরীয়তের বিধান,যেমন হজ্জ্বের উপর প্রাধান্য রাখে।

৪। সম্ভবত ইমামের মর্যাদা ও সঠিক পরিচয়সহ জিয়ারত করলে তবেই তা মুস্তাহাব হজ্জ্বের উপর শ্রেষ্ঠত্ব রাখবে এবং এ হাদীসের উদ্দেশ্য ওয়াজিব হজ্জ্ব নয়। কারণ জিয়ারতের মতো মুস্তাহাব কর্ম কখনোই হজ্জ্বের মতো ওয়াজিব কর্মের উপর প্রাধান্য রাখতে পারে না। কিন্তু মুস্তাহাব জিয়ারত ও মুস্তাহাব হজ্জ্বের মধ্যে মুস্তাহাব জিয়ারতের প্রাধান্য রয়েছে।

কবরের উপর সৌধ নির্মাণ

মুসলমানদের সাথে ওয়াহাবীদের বিরোধের অন্যতম  বিষয় হলো কবরের উপর গম্বুজ ও সৌধ নির্মাণ সম্পর্কিত। ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে মুসলমানগণ এই রীতিটি অনুসরণ করে এসেছে এবং এ বিষয়টি জায়েয ও মুস্তাহাব হওয়ার সপক্ষে কোরআন ও হাদীস হতে দলিল প্রমাণ উপস্থাপন করেছে। উপরন্তু এ কর্মটি যৌক্তিক এবং তা বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের অনুসৃত রীতির সাথে সামঞ্জস্যশীল। কিন্তু ইবনে তাইমিয়ার সময় হতে এই রীতির বিরোধিতা শুরু হয়। তিনি কবরের উপর সৌধ ও গম্বুজ তৈরিকে শিরক বলে ঘোষণা করেন। হিজাযে আলে সউদের আধিপত্যের সময় এই বিশ্বাস তুঙ্গে পৌঁছায় ও সউদী শাসকগণ এই ফতোয়ার ব্যবহারিক বাস্তবায়নে রত হয়। ওয়াহাবী আলেমদের ফতোয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তারা সকল মাজার,কবরের উপরে নির্মিত সৌধ ও গম্বুজ ধ্বংসকার্যে রত হয়। মহানবীর কবর ব্যতীত সকল সৌধ তারা ধ্বংস করে। তাঁর পবিত্র রওজা ধ্বংসের ইচ্ছা থাকলেও মুসলমানদের প্রতিরোধের ভয়ে তারা তা করতে পারে নি। তারা তাদের এ ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে এ প্রবন্ধে আমরা এই বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করব।

ওয়াহাবীদের  ফতোয়া

১। ইবনে তাইমিয়া বলেছেন : আল্লাহর নবিগণ তাঁদের আহলে বাইতের সদস্য ও অন্যান্য সৎকর্মশীল বান্দাদের কবরের উপর যে সকল সৌধ নির্মিত হয়েছে তা হারাম ও বিদআত। যা অন্য স্থান হতে ইসলামে প্রবেশ করেছে।১৭৮

২। তিনি অন্যত্র বলেছেন : শিয়ারা কবরসমূহের উপর যে সৌধ নির্মাণ করে তার সামনে সম্মান প্রদর্শনের জন্য নত হয়ে থাকে তা মুশরিকদের মূর্তিপূজার ন্যায়। তারা কাবা ঘরের হজ্জ্বের ন্যায় ঐ সকল কবর ও সৌধের উদ্দেশ্যে হজ্জ্ব করে থাকে।১৭৯

৩। সেনআনী বলেছেন : ওলীদের কবরের উপর নির্মিত সৌধ মূর্তির ন্যায় এবং তারা জাহেলী যুগের মুশরিকদের ন্যায় ওলীদের কবরের সামনে বিভিন্ন আচার পালন করে। ১৮০

৪। ওয়াহাবীদের ফতোয়া প্রদানের স্থায়ী পরিষদ এক প্রশ্নের জবাবে বলেছে, কবরের উপর সৌধ নির্মাণ নিষিদ্ধ বিদআত যা কবরবাসীর প্রতি অতিমানবীয় বিশ্বাস ও তার প্রতি অতিরঞ্জিত সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে হয়ে থাকে এবং তা মানুষকে শিরকের দিকে পরিচালিত করে। তাই মুসলমানদের (দায়িত্বশীল) নেতা অথবা তার প্রতিনিধির কবরের উপর নির্মিত এরূপ সৌধসমূহ ধ্বংস করে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়ার নির্দেশ দান করা উচিত। এর মাধ্যমে কর্মগত বিদআতের মূলোৎপাটন করে শিরকের পথ চিরতরে রুদ্ধ করতে হবে। ১৮১

৫। নাসিরুদ্দীন আলবানী সউদ বংশের শাসকদের প্রস্তাব করেছে মহানবীর পবিত্র রওজার সবুজ গম্বুজটি ভেঙ্গে ফেলার। সে বলেছে, এটি আফসোসের বিষয় যে,দীর্ঘদিন হল রাসূলের কবরের উপর একটি গম্বুজ প্রস্তুত হয়েছে আমার বিশ্বাস সউদী সরকারের একত্ববাদের দাবী যদি সত্য হয়ে থাকে তবে তাদের উচিত তা চূর্ণ করে মসজিদে নববীকে তার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা। ১৮২

কবরের উপর সৌধ নির্মাণ ও পবিত্র কোরআন

পবিত্র কোরআন কবরের উপর সৌধ নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে সুস্পষ্ট কিছু না বললেও কোরআনের আয়াত হতে এ সম্পর্কিত বিধান পাওয়া যায়। এ যুক্তিতে যে-

১। কবরের উপর সৌধ নির্মাণ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের শামিল। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে তাঁর নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে নির্দেশ দিয়েছেন,কারণ তা অন্তরের পরহেজগারীর (আত্মসংযম) প্রমাণ। যেমন বলা হয়েছে,

( وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ)

যারা আল্লাহর ( দ্বীনের) নিদর্শনসমূহের সম্মান করে তা অন্তরের পরহেজগারীর প্রমাণস্বরূপ ১৮৩

شعائر শব্দটি شعیره শব্দের বহুবচন যার অর্থ নিদর্শন ও প্রমাণ। আল্লাহর নিদর্শন (شعائر الله )হলো এমন কোন প্রতীক যা আল্লাহর দিক নির্দেশক। যদি কেউ আল্লাহর নিকট পৌঁছাতে চায় (নৈকট্য পেতে চায়) তবে ঐ প্রতীকের মাধ্যমে তাতে পৌঁছাতে পারে। অবশ্য আল্লাহর নিদর্শন অর্থ যদি তাঁর দ্বীনের নিদর্শন বুঝায় তবে আয়াতটির অর্থ হবে যদি কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চায় তবে তাঁর দ্বীনের নিদর্শনসমূহের স্থান প্রদর্শনের মাধ্যমে তা অর্জন করতে হবে।

পবিত্র কোরআনে সাফা ও মারওয়াকে আল্লাহর নিদর্শন ও চিহ্ন বলা হয়েছে:

( إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ)

নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া (পর্বত দু টি) আল্লাহর (দ্বীনের) নির্দশন। ১৮৪

কোরবানীর উদ্দেশ্যে যে উটকে মিনায় নিয়ে যাওয়া হয় তাকেও আল্লাহর নিদর্শন বলা হয়েছে,

( وَالْبُدْنَ جَعَلْنَاهَا لَكُمْ مِنْ شَعَائِرِ)

আমরা কোরবানীর হৃষ্টপুষ্ট উষ্ট্রকে তোমাদের জন্য আল্লাহর ( দ্বীনের) নিদর্শন বানিয়েছি। ১৮৫

এ বিষয়গুলো ইবরাহীমের ধর্মের (দ্বীনে হানিফের) নিদর্শনসমূহরে অন্তুর্ভুক্ত। মুজদালিফাকেمَشعَر বলা হয়,কারণ তা আল্লাহর দ্বীনের নিদর্শন ও প্রতীক স্বরূপ। হজ্জ্বের সকল আচারই আল্লাহর দ্বীনের নিদর্শন কারণ তা একত্ববাদী ও অবিকৃত ধর্মের প্রতীকস্বরূপ।

যেহেতু এই আচারসমূহ আল্লাহর দ্বীনের নিদর্শনস্বরূপ এবং মানবজাতিকে একত্ববাদী ও অবিকৃত ঐশী দ্বীনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়,সেহেতু নিঃসন্দেহে বলা যায়,আল্লাহর নবী ও ওলিগণ তাঁর দ্বীনের সর্বোচ্চ নিদর্শন। কারণ তারা হলেন নিষ্পাপ,কখনোই অন্যায়কর্ম করেন না এবং তাদের বাণী ও কর্ম সত্যের অনুরণন। তাঁরা এমন এক আদর্শ যাদের অনুসরণে একত্ববাদ ও মহাসত্যের পথ খুঁজে পাওয়া যায়।

যখন মহানবী (সা.),তাঁর স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি (পবিত্র ইমামগণ) ও আল্লাহর অন্যান্য ওলিগণ এরূপ বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী তখন তাদের সকল স্মৃতি সংরক্ষন যেমন তাঁদের কবর,তা সংরক্ষনের নিমিত্তে তার উপর সৌধ ও গুম্বুজ নির্মাণ আল্লাহর নিদর্শনের প্রতি সম্মানেরই নমুনা স্বরূপ। কারণ এরূপ কর্ম সেই ব্যক্তিবর্গের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে করা হয়,যাদের কর্ম,বাণী ও নির্দেশনা মানুষকে আল্লাহর দিকে পরিচালিত করে।

কুরতুবী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, আল্লাহর নিদর্শন হলো এমন কিছু যা তাঁর দ্বীনের চিহ্ন ও স্মৃতি বহন করে বিশেষত যে সকল বিষয় দ্বীনের আচারের পথে সংশ্লিষ্ট।১৮৬

মিশরীয় লেখক প্রফেসর আব্বাস মাহমুদ আল আক্কাদ কারবালা ও ইমাম হুসাইনের মাজার সম্পর্কে বলেছেন : কারাবালা এমন একস্থান যেখানে মুসলমানরা শিক্ষাগ্রহণ ও ইমাম হুসাইনের স্মরণের জন্য যায়। অমুসলমানরাও সেখানে দর্শনের জন্য যায়। কিন্তু যদি ঐ ভূমির প্রকৃত মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হয় তবে অবশ্যই তা সেই সব ব্যক্তিদের জিয়ারতের স্থান হওয়া উচিত যারা স্বজাতির জন্য বিশেষ পবিত্রতা ও মর্যাদায় বিশ্বাসী। কারণ জিয়ারতের স্থানগুলোর মধ্যে ইমাম হুসাইনের মাজার হতে উত্তম কোন স্থানের কথা আমার জানা নেই।

২। মহানবীর পবিত্র আহলে বাইতের সদস্যদের কবরসমূহের উপর সৌধ নির্মাণ মহানবীর নিকটাত্মীয়দের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ স্বরূপ।

পবিত্র কোরআন সুস্পষ্টরূপে আল্লাহর নবীর রক্তসম্পর্কীয় নিকটাত্মীয়দের প্রতি ভালবাসা পোষণের নির্দেশ দিয়েছে-

( قُلْ لَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّة)

  তোমাদের হতে আমি আমার ( রিসালাতের দায়িত্বের) কোন বিনিময় চাই না কেবল আমার অতিনিকটাত্মীয়দের প্র তি ভালোবাসা ছাড়া১৮৭

নিঃসন্দেহে মহানবীর অতিনিকটাত্মীয়দের কবর সংরক্ষণের নিমিত্তে তার উপর সৌধ নির্মাণ করে জিয়ারতকারীদের জন্য তা চিহ্ন হিসেবে উপস্থাপন তাঁদের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ স্বরূপ। কারণ প্রতিটি ভালোবাসারই প্রকাশ আছে এবং শুধু তাঁদের আনুগত্য করা ও তাঁদের প্রতি আন্তরিক ভালবাসা পোষণ করাই ভালোবাসার নিদর্শন নয়,বরং সৌধ নির্মাণের মাধ্যমে তাঁদের কবর সংরক্ষণও তাঁদের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন,যেহেতু এরূপ কর্ম কোন সূত্রেই নিষিদ্ধ করা হয় নি। (আবুশ শুহাদা,পৃ. ৫৬)

৩। আল্লাহর ওলীদের কবরের উপর সৌধ নির্মাণ পবিত্র গৃহসমূহকে সমুন্নত রাখার নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত,মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে অনুমতি দিয়েছেন যেসকল গৃহে আল্লাহর নাম স্মরণ করা হয় তা সমুন্নত করার।

( فِي بُيُوتٍ أَذِنَ اللَّهُ أَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ يُسَبِّحُ لَهُ فِيهَا بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ) ( رِجَالٌ لَا تُلْهِيهِمْ تِجَارَةٌ وَلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ)

  আল্লাহ যেসব গৃহকে (যাতে তাঁর নূর রয়েছে) মর্যাদায় উন্নীত করার এবং সেগুলোতে তাঁর নাম উচ্চারণ করার আদেশ দিয়েছেন, সেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এমন লোকেরা যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করা থেকে এবং জাকাত প্রদান করা থেকে বিরত রাখে না। (সূরা নূর : ৩৬-৩৭)

উপরিউক্ত আয়াত হতে আমাদের বক্তব্যের সপক্ষে দু টি প্রমাণ উপস্থাপন করা যায়।

প্রথমত উপরিউক্ত আয়াতে গৃহ বলতে শুধু মসজিদ বুঝানো হয়নি,বরং আয়াতের উদ্দেশ্য মসজিদসহ যে কোন স্থান যেখানে আল্লাহর নাম স্মরণ করা হয়,যেমন নবিগণ ও তাঁদের স্থলাভিষিক্ত পবিত্র প্রতিনিধিদের গৃহ। এমনকি এ দাবীও সত্য যে,উপরিউক্ত আয়াতটিতে মসজিদ ভিন্ন অন্য গৃহের বা গৃহসমূহের কথা বলা হয়েছে। কারণ গৃহ বলতে যে কোন চার দেয়াল ও ছাদ বিশিষ্ট স্থানকে বুঝানো হয়। যেমন পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে :

( وَلَوْلَا أَنْ يَكُونَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً لَجَعَلْنَا لِمَنْ يَكْفُرُ بِالرَّحْمَنِ لِبُيُوتِهِمْ سُقُفًا مِنْ فِضَّةٍ وَمَعَارِجَ عَلَيْهَا يَظْهَرُونَ)

যদি সব মানুষের এক মতাবলম্বী (কাফের) হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকত তবে যারা দয়াময়কে (আল্লাহকে) অস্বীকার করে তাদের গৃহসমূহের ছাদ ও সিঁড়িকে যা দ্বারা তারা উপরে যেত আমি রৌপ্য নির্মিত করে দিতাম। ১৮৮

উপরিউক্ত আয়াত হতে বোঝা যায় আরবী ভাষায় যে,কোন ছাদ বিশিষ্ট কক্ষকেই গৃহ((بیت)) বলা হয়। তদুপরি হাদীসসমূহে বলা হয়েছে মসজিদ ছাদবিহীন হওয়া মুস্তাহাব। তাই উল্লিখিত আয়াতে গৃহ বলতে মসজিদ ভিন্ন অন্য গৃহের কথা বলা হয়েছে। উপরন্তু রাসূলের আহলে বাইতের সূত্রে ইমাম বাকির (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে,উপরিউক্ত আয়াতে গৃহ বলতে নবিগণ ও হযরত আলীর গৃহের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।১৮৯

পবিত্র কাবাগৃহকে বাইতুল্লাহ্ বলা হয়,কারণ তার ছাদ রয়েছে।

দ্বিতীয়ত আয়াতে যে সমুন্নত করার কথা বলা হয়েছে তার দু রকম অর্থ হতে পারে :

ক) গৃহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ও আধ্যাত্মিক মর্যাদা দান যেমনটি আমরা এ আয়াতটিতে পড়ি

( وَرَفَعْنَاهُ مَكَانًا عَلِيًّا)

আমরা তার মর্যাদাকে সমুন্নত করেছি। ১৯০

খ) আয়াতের লক্ষ্য বাহ্যিক ও বস্তুগত উন্নয়ন অর্থাৎ ঐরূপ গৃহ বা স্থানের যেমন ওলীদের কবরের উপর সৌধ নির্মাণের মাধ্যমে গৃহ বা কবরকে উন্নীত করা।

জামাখশারী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে বলেছেন : গৃহকে উন্নীত করার অর্থ গৃহের কাঠামোকে উচ্চ করা যেমনটি নিম্নোক্ত আয়াতে বলা হয়েছে-

( وَإِذْ يَرْفَعُ إِبْرَاهِيمُ الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ وَإِسْمَاعِيلُ)

( স্মরণ কর) যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল কাবাগৃহের ভিত্তিকে উন্নীত করেছিল। অথবা কাবাগৃহের প্রতি মর্যাদা দেখানোও সম্মান প্রদর্শন।"১৯১

তাফসীরে রুহুল বায়ানে বলা হয়েছে(أن ترفع) উন্নীত করার অর্থ উচ্চ করা অথবা সেগুলোর মর্যাদাকে বৃদ্ধি করা।১৯২

যদি আয়াতটিতে উন্নীত করার অর্থ বাহ্যিক ও কাঠামোগত উন্নয়নের কথা বলা হয়ে থাকে তবে তা সুস্পষ্টভাবে আল্লাহর নবী ও ওলীদের কবরকে উন্নীত করণের দলিল হবে। বিশেষত যখন মহানবী (সা.) সহ তাঁর আহলে বাইতের কয়েকজন ইমাম তাঁদের গৃহেই সমাধিস্থ হয়েছিলেন। আর যদি উন্নীত করণের অর্থ মর্যাদা দান ও অবস্তুগত উন্নয়ন হয়ে থাকে তবে তার অর্থ হবে নবী ও আল্লাহর ওলীদের গৃহ ও কবরসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নিমিত্তে তা সংরক্ষন করা,সৌধ নির্মাণ ও তার মেরামত করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। আল্লামা সুয়ূতী আনাস ইবনে মালিক ও কুরাইদা হতে বর্ণনা করেছেন যে,মহানবী (সা.)فی بیوت اذن أن ترفع আয়াতটি পাঠ করলে একব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করল : এখানে কোন গৃহসমূহের কথা বলা হয়েছে?

রাসূল (সা.) বললেন : নবিগণের গৃহসমূহ । হযরত আবু বকর রাসূলকে তখন হযরত আলী ও ফাতিমার গৃহের দিকে ইঙ্গিত করে জিজ্ঞেস করলেন : হে আল্লাহর রাসূল! এই গৃহটিও কি ঐসব গৃহের অন্তর্ভুক্ত,আল্লাহ ও আপনার দৃষ্টিতে যার প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন করা উচিত। তিনি বললেন : এই গৃহটি ঐ গৃহসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। ১৯৩

পৃথিবীর জীবন ও মৃত্যু পরবর্তী কবরের জীবনের মধ্যে সংযোগ

পবিত্র কোরআনের আয়াতসমূহ ও হাদীস হতে জানা যায় যে,পৃথিবীর অধিবাসী জীবিত মানুষ ও কবরবাসী মৃত মানুষের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে এ অর্থে যে,যখন জীবিত কোন মানুষ তাদেরকে ডাকে ও সম্বোধন করে কিছু বলে অথবা চায় তারা আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে তার উত্তর দিয়ে থাকে। এখানে আমরা এ সম্পর্কিত কিছু আয়াত ও হাদীসের প্রতি ইশারা করছি।

ক) আয়াতসমূহ :

মহান আল্লাহ হযরত সালিহ (আ.)-এর জাতি সম্পর্কে বলেছেন,

( فَأَخَذَتْهُمُ الرَّ‌جْفَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دَارِ‌هِمْ جَاثِمِينَ۞ فَتَوَلَّىٰ عَنْهُمْ وَقَالَ يَا قَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِ‌سَالَةَ رَ‌بِّي وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلَـٰكِن لَّا تُحِبُّونَ النَّاصِحِينَ)

অতঃপর ভূমিকম্প তাদের পাকড়াও করল। ফলে তারা তাদের গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে রইল। (হযরত সালেহ) তাদের (মৃতদেহগুলো) হতে মুখ ফিরিয়ে নিলেন ও বললেন : হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের কাছে আমার প্রতিপালকের নির্দেশ ও বাণী পৌঁছিয়েছি এবং তোমাদের মঙ্গল কামনা করেছি, কিন্তু তোমরা মঙ্গলাকাঙ্ক্ষীদের ভালোবাস না। ৪৬

২। হযরত শুয়াইব (আ.)-এর উম্মত সম্পর্কেও অনুরূপ বর্ণনা এসেছে।

৩। অন্যত্র বলা হয়েছে :

( وَاسْأَلْ مَنْ أَرْ‌سَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رُّ‌سُلِنَا أَجَعَلْنَا مِن دُونِ الرَّ‌حْمَـٰنِ آلِهَةً يُعْبَدُونَ )

আপনার পূর্বে যে সকল রাসূল প্রেরণ করেছি তাদের জিজ্ঞাসা করুন, পরম করুণাময় (আল্লাহ) ছাড়া কি অন্য কোন উপাস্য আমি ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করেছিলাম। ৪৭

৪। অন্যত্র কয়েকটি আয়াতে বিভিন্ন নবীর উপর দরুদ ও সালাম প্রেরণ করে বলেছেন :

( سَلَامٌ عَلَىٰ نُوحٍ فِي الْعَالَمِينَ )

বিশ্ববাসীদের মধ্যে নূহের উপর সালাম। ৪৮

( سَلَامٌ عَلَىٰ إِبْرَ‌اهِيمَ )

ইবরাহিমের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। ৪৯

( سَلَامٌ عَلَىٰ مُوسَىٰ وَهَارُ‌ونَ )

মূসা ও হারুনের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। ৫০

( سَلَامٌ عَلَىٰ إِلْ يَاسِينَ )

ইল ইয়াসিনের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। ৫১

( سَلَامٌ عَلَى الْمُرْ‌سَلِينَ )

নবিগণের উপর শান্তি বর্ষিত হোক৫২

উপরিউক্ত আয়াতসমূহ হতে বোঝা যায় পৃথিবীর জীবন ও মৃত্যু পরবর্তী জীবনের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে এবং কবরে মানুষ ভূপৃষ্ঠের অধিবাসীদের কথোপকথন শুনতে পায় ও তাদের সালামের জবাব দান করে ।

শেখ মাহমুদ শালতুত বলেছেন, কোরআন ও হাদীস হতে জানা যায় যখন মানুষের দেহ হতে আত্মা বিচিছন্ন হয় তখন সে মৃত্যুবরণ করে,কিন্তু তখনও তার অনুধাবন ক্ষমতা থাকে (ও অন্যরূপ জীবন নিয়ে সে বেঁচে থাকে) এবং তাকে কেউ সালাম দিলে সে তা শুনতে পায়,তার কবর জিয়ারতকারীকে চিনতে পারে ও কবরে বেহেশ্তী নিয়ামত ও দোযখের আজাবকে অনুভব করে।৫৩

শাইখুল ইসলাম ইজ্জুদ্দীন ইবনে আবদুস সালাম তাঁর ফতোয়া গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, বাহ্যিকভাবে বোঝা যায় মৃত ব্যক্তি তার জিয়ারতকারীকে (সাক্ষাৎকারী জীবিত ব্যক্তিকে) চিনতে পারে । কারণ শরীয়ত আমাদের নির্দেশ দিয়েছে মৃত ব্যক্তিকে সালাম দেয়ার এবং শরীয়তের প্রবক্তা কখনোই এমন ব্যক্তিকে সম্বোধন করার নির্দেশ দেন নি যে শুনতে পায় না। ৫৪

খ) হাদীসসমূহ :

১। মহানবী বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি মুমিন ভাইয়ের কবরের পাশ দিয়ে যায় এবং সে ব্যক্তি পৃথিবীতে ঐ মৃত ব্যক্তির পরিচিতদের অন্তর্ভুক্ত হয়,তবে মহান আল্লাহ মৃত ব্যক্তির আত্মাকে তার সালাম ও কাঙ্ক্ষিত বিষয়ের জবাব দানের জন্য সজাগ করেন। ৫৫

২। মহানবী হতে বর্ণিত হয়েছে যে,মৃত ব্যক্তি তার জানাযায় অংশগ্রহণকারীদের পদধ্বনি শুনতে পায়।৫৬

৩। ইবনে কাইয়্যেম জাওযীয়া তাঁর আররুহ গ্রন্থে বলেছেন, সাহাবিগণ ও প্রাচীন আলেমদের মধ্যে এ বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে যে,মৃত ব্যক্তি তার জিয়ারতকারী ব্যক্তিকে চিনতে পারে এবং তার আগমনে আনন্দিত হয়।৫৭

৪। ইবনে আবিদ দুনিয়া তাঁর আল কুবুর গ্রন্থে হযরত আয়েশা হতে বর্ণনা করেছেন,মহানবী বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি তার মুমিন ভ্রাতাকে জিয়ারত করে অর্থাৎ তার কররের নিকটে যায় ও সেখানে বসে,তবে মৃত ব্যক্তি তার সাহচর্যে আনন্দিত হয় ও তার সালামের উত্তর দেয়,ততক্ষণ তার সাহচর্য অনুভব করে যতক্ষণ না সে সেখান হতে উঠে চলে যায়।৫৮

৫। আবু হুরাইরা মহানবী (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,যখন কোন ব্যক্তি মৃতের কবরের পাশ দিয়ে যায় ও তাকে সালাম দেয় তখন মৃত ব্যক্তি তাকে চিনতে পারে ও তার সালামের জবাব দান করে।৫৯

৬। বায়হাকী সাঈদ ইবনে মুসাইয়ের হতে বর্ণনা করেছেন,তিনি বলেছেন,আমরা আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)-এর সঙ্গে মদীনায় কবরস্থানে পৌঁছলে তিনি উচ্চৈঃস্বরে বললেন, হে কবরবাসী! তোমাদের উপর আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদের সংবাদ আমাদের জানাও নতুবা আমাদের খবর শোন। সাঈদ বলেন, তখন তাদের কণ্ঠ শুনতে পেলাম : ওয়া আলাইকুমুস্ সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ইয়া আমীরাল মুমিনীন! আমাদেরকে আপনাদের সংবাদ জানান। হযরত আলী (আ.) বললেন, তোমাদের স্ত্রীরা অন্য স্বামী গ্রহণ করেছে,তোমাদের সম্পদ উত্তরসূরিদের মধ্যে বণ্টিত হয়েছে। তোমাদের সন্তানরা ইয়াতীমদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তোমাদের নির্মিত গৃহগুলোতে তোমাদের শত্রুরা বাস করছে। আমাদের নিকট  এই হলো খবর। তোমাদের কী খবর? সাঈদ বলেন, এক মৃত ব্যক্তি বলল যে,তার কাফনের কাপড় ছিন্নভিন্ন হয়েছে,তার চুলগুলো ঝরে পড়েছে,চর্ম দেহ হতে বিচ্ছিন্ন হয়েছে,চক্ষু অক্ষিকোটর হতে বেরিয়ে মুখের উপর ঝুলে পড়েছে,নাকের ছিদ্র হতে গলিত রস বেরিয়ে আসছে। যা এখানকার জন্য প্রেরণ করেছিলাম তা পেয়েছি এবং করণীয় যা করি নি তার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।৬০

ইবনে কাইয়্যেম জাওযিয়া মৃত ব্যক্তিরা জীবিত ব্যক্তি কর্তৃক তার কবর জিয়ারতকে অনুভব করতে পারে কিনা  প্রসঙ্গে বলেন, মৃত ব্যক্তির কবর জিয়ারতকারীকে জায়ের (সাক্ষাৎকারী) বলা হয়,এর অর্থ মৃত ব্যক্তি তার সাক্ষাৎকারীকে চিনে নতুবা তাকে জায়ের বলা হতো না।৬১

৭। বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে, যখন মৃত ব্যক্তিকে কবরের ভিতর শোয়ানো  হয়,তখন সে তাকে দাফন করতে আসা ব্যক্তিদের পদধ্বনি শুনতে পায়। ৬২

৮। আবু হুরাইরা বলেছেন, মহানবী (সা.) যখনই কবর জিয়ারতে যেতেন এরূপে কবরবাসীদের সম্বোধন করতেন ,৬৩

السلام علیکم اهل الدیار من المومنین و المسلمین و انا ان شاءالله بکم لاحقون اسال الله لنا ولکم العافية

৯। ইবনে আব্বাস বলেছেন, এক সাহাবী একটি কবরের নিকট তাঁবু পাতলেন,কিন্তু জানতেন না সেটি একটি মৃত ব্যক্তির কবর। হঠাৎ করে তাঁর কানে সূরা মুল্ক তেলাওয়াতের শব্দ আসল। সূরা পাঠ শেষ হওয়া পর্যন্ত তা তাঁর কানে ভেসে আসছিল। পরবর্তীতে তিনি রাসূল (সা.)-এর নিকট পৌঁছে ঘটনাটি খুলে বললেন। মহানবী বললেন, সূরা মুল্ক কবরের আজাবের প্রতিরোধক এবং মানুষকে কবরের আজাব হতে মুক্তি দেয়।৬৪

কবরে বা বারজাখে নবিগণের জীবন

নবিগণের বারজাখী জীবন সম্পর্কে আহলে সুন্নাতের হাদীস গ্রন্থসমূহে বর্ণিত কয়েকটি হাদীস :

১. আনাস ইবনে মালিক মহানবী (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন, নবিগণ তাঁদের কবরে জীবিত রয়েছেন এবং নামায পড়েন। এই হাদীসটি হাফিজ হাইসামী তাঁর মাজমায়ুজ জাওয়ায়িদ ৬৫ গ্রন্থে এবং আল্লামা মানাভী তাঁর ফাইজুল ক্বাদীর ৬৬ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। মুহাদ্দিস  আলবানী৬৭   হাদীসটির বিশুদ্ধতার স্বীকৃতি দিয়েছেন।

২. মহানবী (সা.) বলেছেন : মৃত্যুর পর আমার অবগতি আমার জীবিতাবস্থার ন্যায়। ৬৮

৩. হযরত আলী (আ.) বর্ণনা করেছেন : এক বছর এক আরব বেদুইন রাসূলের কবরের নিকট এসে বলল : হে আল্লাহর রাসূল! আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। কবরের ভিতর হতে জবাব এল : আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করেছেন। ৬৯

৪. দারেমী তাঁর সুনান গ্রন্থে সাঈদ ইবনে আবদুল আজিজ সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে,তিনি রাসূল (সা.)-এর কবরের মধ্যে হতে জিকরের শব্দ শুনে নামাজের ওয়াক্ত হয়েছে বুঝতে পারতেন।৭০

দারেমী সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেব হতে বর্ণনা করেছেন যে,ইয়াযীদের সৈন্যবাহিনী কর্তৃক মদীনার হত্যা ও লুণ্ঠনের দিনগুলোতে তিনি মহানবীর কবর হতে আজান শুনেছেন,আর মসজিদ তখন লোকশূন্য ছিল।৭১

৫। হাফিজ হাইসামী সহীহ সূত্রে আবূ হুরাইরা হতে বর্ণনা করেছেন যে,মহানবী (সা.) বলেছেন : সেই সত্তার কসম আবুল কাসেম মুহাম্মদের জীবন যাঁর হাতে নিবদ্ধ,ঈসা ইবনে মারিয়াম ন্যায়বিচারক ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে আবির্ভূত হবেন। তিনি ক্রুশসমূহ নিশ্চিহ্ন করবেন,শুকরসমূহ হত্যা করবেন,সকল কিছুর সংস্কার সাধন করবেন,মানুষের মধ্যে বিদ্যমান শত্রুতার অবসান ঘটাবেন,প্রচুর সম্পদ দান করবেন,কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি আমার কবরে এসে আমাকে সম্বোধন করে জবাব না পাবেন,ততক্ষণ তাঁকে কেউ গ্রহণ করবে না। ৭২

৬. হাফিজ হাইসামী সহীহ হাদীস সূত্রে আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (সা.) বলেছেন : আমার জীবিতাবস্থা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এ জন্য যে,আমার হতে হাদীস শোন ও বর্ণনা কর। আমার মৃত্যু তোমাদের জন্য কল্যাণকর এ কারণে যে,তোমাদের কর্মসমূহ (আমলনামা) আমার কাছে উপস্থাপন করা হবে এবং আমি তোমাদের সৎকর্ম দেখে আল্লাহর শোকর আদায় করব এবং তোমাদের মন্দ কর্মের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করব। ৭৩

ইউসুফ ইবনে আলী জানানী মদীনাবাসী হাশেমী বংশের এক নারী হতে বর্ণনা করেছেন যে,মসজিদের কোন কোন খাদেম তাকে জ্বালাতন করত। তিনি মহানবীর সাহায্য প্রার্থনা করলে তাঁর পবিত্র কবর হতে শুনতে পেলেন : আমি ধৈর্যের ক্ষেত্রে তোমার আদর্শ। তাই ধৈর্যধারণ কর। কয়েকদিন পর আপনা আপনিই সমস্যাটির সমাধান হয়ে গেল এভাবে যে,তারা সকলেই মারা গেল।৭৪

বারজাখী জীবনে আল্লাহর ওলীদের মর্যাদা

হাকিম নিশাবুরী ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন: একদিন মহানবী (সা.) বসেছিলেন এবং আসমা বিনতে উমাইস তখন তাঁর নিকটেই ছিলেন। হঠাৎ করে মহানবী (সা.) কারো সালামের জবাব দিলেন। (আসমা আশ্চর্যান্বিত হলে) তিনি বললেন : হে আসমা! জাফর,জীবরাঈল ও মিকাঈলের সাথে আমাদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সালাম দিয়েছিলেন। ৭৫

কাজী সুবুকী বলেছেন : আল্লাহর ওলিগণ তাঁদের জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর আল্লাহর ইচ্ছায় ও শক্তিতে কোন কিছুর উপর প্রভাব রাখেন। মহান আল্লাহ তাঁদেরকে এ মর্যাদা দিয়েছেন ও তাঁদের হাত ও মুখের মাধ্যমে বিভিন্ন (অলৌকিক) কর্ম সম্পাদন করান। ৭৬

মৃতদের জন্য কোরআন পাঠ করা

ইবনে কাইয়্যেম জাওযিয়া বলেছেন : পূর্ববর্তীদের (সাহাবী,তাবেয়ীন ও অগ্রবর্তী আলেমদের) হতে বর্ণিত হয়েছে যে,তাঁরা মৃত্যুর পূর্বে তাঁদের কবরের পাশে কোরআন তেলাওয়াতের অসিয়ত করতেন। ৭৭

বর্ণিত হয়েছে আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর অসিয়ত করে যান তাঁর কবরের পাশে সূরা বাকারা পাঠ করার। আহমাদ ইবনে হাম্বাল প্রথমদিকে এ কর্মকে বৈধ মনে করতেন না,পরবর্তীকালে তিনি তাঁর মত পরিবর্তন করেন।

খাল্লাল তাঁর আল ক্বিরাআত ইনদাল কুবুর গ্রন্থে স্বীয় সূত্রে আলা ইবনে লাহলাজ হতে বর্ণনা করেছেন,তাঁর পিতা অসিয়ত করে যান : যখন আমাকে কবরে রাখবে তখন বলবে

بسم الله وعلي سنّة رسول الله

অতঃপর যখন আমাকে মাটি দ্বারা আবৃত করবে তখন আমার শিয়রে বসে সূরা বাকারা পাঠ কর,যেমনটি আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর বলেছেন। ৭৮

হাসান ইবেন সাব্বাহ জাফারানী বলেছেন : জনাব শাফেয়ীর কাছে মৃত ব্যক্তির কবরের নিকট কোরআন তেলাওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন যে,এতে কোন সমস্যা নেই। ৭৯

খাল্লাল শা বী হতে বর্ণনা করেছেন: যখন আনসারদের কেউ মৃত্যুবরণ করত তারা তার কবরের নিকটে যেতেন ও কোরআন পাঠ করতেন। ৮০

হাসান ইবনে জারভী বলেছেন : আমার ভগ্নীর কবরের নিকটে গিয়ে সূরা মুল্ক পড়েছিলাম। কয়েকদিন পর এক ব্যক্তি এসে আমাকে বলল যে,আমার ভগ্নীকে স্বপ্নে দেখেছে,সে বলছে, আমার ভ্রাতাকে আল্লাহ উত্তম বিনিময় দান করুন। সে আমার কবরের নিকটে কোরআন পাঠ করেছে,তা হতে আমি লাভবান হয়েছি। ৮১

এক ব্যক্তি জুমুআর দিন তার মাতার কবরের নিকট সূরা ইয়াসীন পাঠ করত। একদিন সূরা পাঠ ইয়াসীন পাঠ করে সকল কবরবাসীর রুহের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করল। কয়েকদিন পর এক ব্যক্তি তার নিকট এসে বলল: তুমি কি অমুক ব্যক্তি? সে বলল : হ্যাঁ । তখন ঐ ব্যক্তি বলল : আমার এক কন্যা মৃত্যুবরণ করেছে। তাকে স্বপ্নে দেখলাম সে তার কবরে অত্যন্ত আনন্দিত অবস্থায় বসে আছে। আমি তাকে তার আনন্দের কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে বলল যে,অমুক ব্যক্তি সকল কবরবাসীর উদ্দেশে সূরা ইয়াসীন পাঠ করার কারণে আমরা আল্লাহর শাস্তি হতে মুক্তি লাভ করেছি। ৮২

ইয়াসায়ী বর্ণনা করেছেন রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমাদের মৃতদের উপর সূরা ইয়াসীন পাঠ কর। ৮৩

মুফাজ্জাল ইবনে মুয়াফ্ফাক বলেছেন : আমি প্রতিদিন আমার পিতার কবর জিয়ারত করতাম। একদিন বিশেষ ব্যস্ততার কারণে তাঁর কবর জিয়ারতে যেতে পারি নি। ঐদিন রাতে তাঁকে স্বপ্নে দেখলাম যে,তিনি আমাকে বলছেন : হে পুত্র! কেন আমার জিয়ারতে আস নি? আমি বললাম : আপনি কি আপনার কবর জিয়ারতে আসলে বুঝতে পারেন? তিনি বললেন : আল্লাহর শপথ! যখন তুমি আমার কবরের উদ্দেশে ঘর থেকে বের হও তখন হতে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত আমি তোমাকে পর্যবেক্ষণ করি। ৮৪

মুজাহিদ সহীহ সূত্রে বর্ণনা করেছেন, মৃত ব্যক্তিকে কবরে তার সন্তানের সৎকর্ম সম্পর্কে জানানো হয়। ৮৫

ইবনে কাইয়েম জাওযিয়া বলেছেন, উপরিউক্ত বিষয়ের সপক্ষে একটি উত্তম দলিল হলো প্রাচীনকাল হতেই মানুষ মৃতদের কবরে শয়ন করানোর পর তালক্বীন (ঈমানের বিষয়সমূহ আবৃত্তির মাধ্যমে স্মরণ করিয়ে দেয়া) করে আসছে। যদি মৃতরা শুনতে না পেত ও এর মাধ্যমে লাভবান না হতো তবে তালক্বীন অনর্থক পরিগণিত হতো।৮৬

আহমাদ ইবনে হাম্বালকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি তা করার নির্দেশ দেন ও এটি উত্তম বলে উল্লেখ করেন।

সুয়ূতী তাঁর শিফাউস্ সুদুর গ্রন্থে বলেন : কোরআন তেলাওয়াতের সওয়াব মৃত ব্যক্তির নিকট পৌঁছে কিনা এ বিষয়ে মতদ্বৈততা রয়েছে। পূর্বেকার আলেমগণের অধিকাংশ এবং চার মাযহাবের প্রবক্তাদের হতে তিনজন এ বিষয়ে একমত যে,সেই সওয়াব তাদের নিকট পৌঁছে। কেবল ইমাম শাফেয়ী এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেছেন এ যুক্তিতে যে,পবিত্র কোরআন বলছে :

( وَأَن لَّيْسَ لِلْإِنسَانِ إِلَّا مَا سَعَىٰ )

মানুষ তাই পায় যা সে করে। ৮৭ কিন্তু অন্যরা এর জবাবে নিম্নোক্ত দলিলসমূহ উপস্থাপন করেন :

প্রথমত উপরিউক্ত আয়াত নিম্নোক্ত এ আয়াতের

( وَالَّذِينَ آمَنُوا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّ‌يَّتُهُم بِإِيمَانٍ )

এবং যারা ঈমান এনেছে ও তাদের সন্তানদের মধ্যে যারা ঈমানে তাদের অনুগামী- মাধ্যমে রহিত হয়ে গিয়েছে। ৮৮

দ্বিতীয়ত পূর্বোক্ত আয়াতটিতে হযরত ইবরাহীম (আ.) ও হযরত মূসা (আ.)-এর জাতি সম্পর্কে বলা হয়েছে ও তাদের মধ্যেই নির্দিষ্ট।

তৃতীয়ত আয়াতটিতেانسان বলতে শুধু কাফেরকে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু মুমিনগণ নিজেদের সৎকর্ম ছাড়াও তার জন্য প্রেরিত দোয়ার দ্বারা লাভবান হয়ে থাকে।

চতুর্থত আয়াতটির উদ্দেশ্য হল মানুষকে তার প্রচেষ্টা ও কর্ম অনুযায়ী ফলদান যা ন্যায় বিচারের দাবী। কিন্তু মহান আল্লাহ তাঁর অসীম অনুগ্রহের কারণে অন্যভাবেও মৃতব্যক্তির প্রতি সওয়াব পৌঁছিয়ে দিয়ে থাকেন।

পঞ্চমতللانسان শব্দটিতে لام علی অর্থে এসেছে অর্থাৎ অসৎকর্মের ক্ষেত্রে একের শাস্তি অপর কেউ পাবে না কিন্তু সৎকর্মের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়ে আল্লাহর অনুমতিক্রমে নিয়তের অনুবর্তী।৮৯

মৃতের উপকৃত হওয়া  

পবিত্র কোরআনের আয়াত ও হাদীসসমূহ হতে বোঝা যায় মৃত ব্যক্তির জন্য কোরআন তেলাওয়াত ও ক্ষমা প্রার্থনা করলে তা হতে তারা লাভবান হয়।

১। আয়াতসমূহ

মহান আল্লাহ বলেছেন :

( الَّذِينَ يَحْمِلُونَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُونَ بِهِ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَحْمَةً وَعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِينَ تَابُوا وَاتَّبَعُوا سَبِيلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ)

যারা আরশ বহন করে এবং যারা তার চারপাশে আছে তারা তাঁদের পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আপনার রহমত ও জ্ঞান সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে। অতএব, যারা তওবা করে এবং আপনার পথ অনুসরণ করে তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করুন। ৯০

অন্যত্র বলেছেন :

( تَكَادُ السَّمَاوَاتُ يَتَفَطَّرْنَ مِنْ فَوْقِهِنَّ وَالْمَلَائِكَةُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِمَنْ فِي الْأَرْضِ )

যখন নিকট আকাশ উপর হতে ফেটে পড়ার উপক্রম হয় তখন ফেরেশতাগণ তাদের পালনকর্তার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করে এবং পৃথিবীবাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। ৯১

মহান আল্লাহ আরো বলেন :

( وَالَّذِينَ جَاءُوا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ )

যারা তাদের পরে আগমন করেছে তাদের জন্য দোয়া করে তারা (আনসাররা) বলে : হে আমাদের পালনকর্তা!, আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভ্রাতাদেরকে ক্ষমা করুন। ৯২

২। হাদীসসমূহ

বিভিন্ন হাদীস হতেও জানা যায় মৃতগণ জীবিতদের সৎকর্মের প্রেরিত সওয়াব হতে লাভবান হয়ে থাকে। সহীহ বুখারী ও মুসলিম হযরত আয়েশা হতে বর্ণনা করেছে রাসূল (সা.) বলেছেন : যদি কোন মৃত ব্যক্তির রোজা কাযা থাকে তবে তার পক্ষে তার ওয়ালী (সন্তান বা এরূপ অন্য কেউ) কাযা আদায় করবে। ৯৩

ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত হয়েছে যে,তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-এর নিকট এসে বলল : হে আল্লাহর রাসূল! আমার মাতা মৃত্যুবরণ করেছেন এবং তার উপর এক মাসের কাযা রোজা ফরজ ছিল। আমি কি তার পক্ষে তা আদায় করতে পারব? মহানবী (সা.) বললেন, হ্যাঁ,দ্বীনের বিধান আদায় করাটাই বাঞ্ছিত। ৯৪

অন্য এক হাদীসে এসেছে এক নারী মহানবীর  নিকট প্রশ্ন করল : আমার মাতা হজ্জ্ব না করেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। আমি কি তার পক্ষে তা আদায় করতে পারব? তিনি বললেন : হ্যাঁ,তার পক্ষে তা আদায় কর। ৯৫

আতা ইবনে রিবাহ বর্ণনা করেছেন : এক ব্যক্তি মহানবীকে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি আমার মৃত মাতার পক্ষে দাস মুক্ত করতে পারব? মহানবী (সা.) বললেন : হ্যাঁ,পুনরায় সে বলল, এই দাস মুক্তির সওয়াব হতে সে কি লাভবান হবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ

সাদ ইবনে উবাদা রাসূলকে প্রশ্ন করলেন, আমার মাতা জীবিতাবস্থায় মানত করেছিলেন কিন্তু পালন করতে পারেন নি। আমি কি তার মানতটি পালন করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ । সাদ পুনরায় বললেন, এর মাধ্যমে  তিনি কি লাভবান হবেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ

আবু হুরাইরা বর্ণনা করেছেন যে,এক ব্যক্তি রাসুলের নিকট এসে বলল, আমার পিতা মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু তার সম্পদের জন্য কোন ওসিয়ত করে যাননি। আমি যদি তার পক্ষে সাদকা দান করি তবে তা কি তার গুনাহের কাফ্ফারা হিসেবে পরিগণিত হবে? তিনি বললেন : হ্যাঁ। মহানবী আরো বললেন : তোমাদের মৃতদের জন্য সূরা ইয়াসীন পাঠ কর। ৯৬


5

6

7

8

9

10

11

12

13

14