আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত0%

আল মুরাজায়াত লেখক:
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ: ইতিহাস

আল মুরাজায়াত

লেখক: আল্লামাহ্ সাইয়্যেদ আবদুল হুসাইন শারাফুদ্দীন আল মুসাভী
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ:

ভিজিট: 66899
ডাউনলোড: 8915

পাঠকের মতামত:

আল মুরাজায়াত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 133 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 66899 / ডাউনলোড: 8915
সাইজ সাইজ সাইজ
আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত

লেখক:
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বাংলা

ح

১৮। হারিস ইবনে হাছিরাহ্ আজাদী কুফী (আবু নোমান)

আবু হাতিম রাজী তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, তিনি একজন প্রকৃত ও সম্ভ্রান্ত শিয়া। আবু আহমাদ জুবাইরী তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, তিনি রাজাআ ত (মৃতদের পুনরুজ্জীবিত হওয়ায়) বিশ্বাস করতেন। ইবনে আদী বলেছেন, যদিও তাঁকে আমি দুর্বল হাদীস বর্ণনাকারী মনে করি তদুপরি তাঁর হাদীস সংকলিত হওয়া উচিত,তিনি ঐ সকল ব্যক্তিবর্গের অন্তর্ভুক্ত যা কুফাকে শিয়া আগুনে ভস্মীভূত করেছে। জানিয বলেছেন, আমি জারীরকে প্রশ্ন করলাম : হারিস হাছিরাহকে দেখেছেন? তিনি বললেন : হ্যাঁ,একজন বৃদ্ধ জ্ঞানী ব্যক্তি,স্বল্পভাষী,গম্ভীর এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দৃঢ়তা প্রদর্শনকারী। ইয়াহিয়া ইবনে মুঈন তাঁর নাম এভাবে স্মরণ করেছেন, নির্ভরযোগ্য ও সত্যবাদী এবং শিয়া। নাসায়ীও তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন।

সুফিয়ান সাওরী,মালিক ইবনে মুগুল,আবদুল্লাহ্ ইবনে নুমাইর এবং তাঁদের সমকালীন অনেকেই তাঁর থেকে হাদীস শিক্ষা করেছেন অর্থাৎ তিনি তাঁদের শিক্ষক ছিলেন এবং তাঁরা তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করতেন।

যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে উপরোক্ত কথাগুলো বলেছেন। যে সকল হাদীস তিনি যাইদ ইবনে ওয়াহাব,আকরামা ও অন্যান্যদের হতে বর্ণনা করেছেন তা সুনান গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে।

নাসায়ী আব্বাদ ইবনে ইয়াকুব রাওয়াজানী,আবদুল্লাহ্ ইবনে আবদুল মালিক মাসউদী সূত্রে হারিস ইবনে হাছিরাহ্ হতে এবং তিনি যাইদ ইবনে ওয়াহাব হতে বর্ণনা করেছেন, আলী (আ.)-কে বলতে শুনেছি যে,আমি আল্লাহর বান্দা ও রাসূলের ভাই,আমি ব্যতীত যে কেউ এই দাবি করবে,সে মিথ্যাবাদী,

হারিস ইবনে হাছিরাহ্ আবু দাউদ সাবিয়ী হতে এবং তিনি ইমরান ইবনে হুসাইন হতে বর্ণনা করেছেন, আমি রাসূলের নিকট উপবিষ্ট ছিলাম ও আলী তাঁর পাশে বসেছিলেন তখন রাসূল (সা.) এ আয়াত তেলাওয়াত করেন-

বল,কে নিঃসহায়ের ডাকে সাড়া দেন যখন সে ডাকে ও কষ্ট দূরীভূত করেন এবং তোমাদেরকে পৃথিবীতে খলীফা ও স্থলাভিষিক্ত মনোনীত করেন? (সূরা নমল : ৬২)

আলী তা শ্রবণ করে ভয়ে কম্পমান হলে রাসূল তাঁর পিঠে হাত রেখে বললেন, তোমাকে মুমিন ব্যতীত কেউ ভালবাসবে না এবং মুনাফিক ব্যতীত কেউ তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে না এবং কিয়ামত পর্যন্ত এটি অব্যাহত থাকবে।

এ হাদীসটি মুহাম্মদ ইবনে কাসির ও অন্যান্যরা হারিস ইবনে হাছিরাহ্ হতে বর্ণনা করেছেন। যাহাবী নাফি ইবনে হারিস হতে একই সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি তাঁর হাদীসের সনদ হারিস ইবনে হাছিরাহতে পৌঁছলে তাঁর সম্পর্কে বলেন, তিনি একজন সত্যবাদী কিন্তু শিয়া ব্যক্তিত্ব।

১৯। হারিস ইবনে আবদুল্লাহ্ হামেদানী

তিনি হযরত আলী (আ.)-এর বিশেষ সাহাবী ও তাবেয়ীনের অন্তর্ভুক্ত। তিনি যে শিয়া ছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি প্রথম ব্যক্তি যাঁর সম্পর্কে রিজালশাস্ত্রবিদ ইবনে কুতাইবা শিয়া রিজাল (অর্থাৎ অন্যতম শিয়া হাদীস বর্ণনাকারী) বলেছেন।

যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে তাঁকে তাবেয়ীদের অন্যতম বড় আলেম বলে উল্লেখ করেছেন এবং ইবনে হাইয়ান সূত্রে বলেছেন, তিনি শিয়া বিশ্বাসে বাড়াবাড়ি করতেন। অতঃপর আহলে সুন্নাহর পক্ষ হতে তাঁর ওপর বিভিন্ন অভিযোগ ও দোষারোপের বিবরণ দিয়ে বলেছেন, তদুপরি তাঁরা স্বীকার করতেন তিনি সবচেয়ে বড় ফকীহ্ ও আলেম এবং ফিকাহ্শাস্ত্রের উওরাধিকার বিষয়ক হিসাব সুন্দরভাবে সামাধান করতে পারতেন। সুনানে আরবাআহতে তাঁর থেকে বর্ণিত হাদীস রয়েছে এবং নাসায়ী হাদীসের রাবীদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কড়াকড়ি সত্ত্বেও তাঁর হাদীস হতে দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন ও তাঁকে শক্তিশালী রাবী মনে করতেন।

যদিও শিয়া হবার কারণে আহলে সুন্নাহ্ তাঁর তীব্র সমালোচনা করেছেন তথাপি হাদীসগ্রন্থ সমূহের সকল অধ্যায়েই তাঁরা তাঁর হাদীস এনেছেন। শা বী তাঁকে মিথ্যাবাদী বলেলেও তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করতেন।

যাহাবী তাঁর মি যানুল ই তিদাল গ্রন্থে বলেছেন, শা বী সম্ভবত হারিসের বর্ণনার ধরন ও তাঁর বর্ণিত বিভিন্ন কাহিনীকে অস্বীকার করেছেন কিন্তু রাসূল (সা.) হতে তাঁর বর্ণিত হাদীসকে নয়।

আরো বলেছেন, হারেস জ্ঞান ও ইলমের এক বিশাল পাত্র। অতঃপর মুহাম্মদ ইবনে সিরিনের সূত্রে বলেছেন, আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদের পাঁচজন ছাত্র ছিল যাঁরা তাঁর হতে জ্ঞান শিক্ষা করেছেন। আমি তাঁদের চারজনকে দেখেছি কিন্তু পঞ্চম ব্যক্তি হারিসকে দেখি নি যদিও তিনি জ্ঞান ও চরিত্রে অন্যদের হতে শ্রেষ্ঠ ছিলেন।

এর সঙ্গে তিনি এ কথাটি যুক্ত করেছেন, আলকামা,মাসরুক ও উবাইদার মধ্যে কে উত্তম সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। আমার মতে মহান আল্লাহ্ অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের শা বীর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন যাঁরা তাঁকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছেন ও তাঁকে নীচ ও হীন বলেছেন অর্থাৎ তাঁর উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছেন (এ সকল আলেম হারিস সম্পর্কে শা বীর মিথ্যা অভিযোগের উত্তর দিয়েছেন এবং তাঁকে প্রত্যাখ্যান করছেন)।

যেমন ইবনে আবদুল্লাহ্ তাঁর জামেয়ুল বায়ান গ্রন্থে ইবরাহীম নাখয়ী যিনি শো বার কথাকে মিথ্যা বলেছেন সেটি আলোচনা করতে গিয়ে বলেছেন, আমার মনে হয় শা বী হারিসকে মিথ্যাবাদী বলার শাস্তি পেয়েছে। ইবনে আবদুল বার বলেছেন, হারিস হতে কোন মিথ্যাই কখনো শুনি নি। তাঁর প্রতি অন্যদের ক্ষোভের কারণ আলীর প্রতি তাঁর অতিরিক্ত ভালবাসা ও অন্যদের ওপর আলীকে প্রাধান্য দেয়ার বিষয়। এ কারণেই শা বী তাঁকে মিথ্যাবাদী বলেছেন। শা বীর বিশ্বাস ছিল আবু বকর প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ও তিনি অন্য সকলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ তদ্রুপ তিনি উমরকে আবু বকর ব্যতীত অন্যদের হতে শ্রেষ্ঠ মনে করতেন.।১০১

আমার জানা মতে অন্য যাঁরা হারিসের বিরুদ্ধে অপবাদ আরোপ করেছেন তাঁদের একজন হলেন মুহাম্মদ ইবনে সা দ। তিনি তাঁর তাবাকাত গ্রন্থের ষষ্ঠ খণ্ডে হারিস সম্পর্কে বলেছেন, সে একজন খারাপ আকীদায় বিশ্বাসী ব্যক্তি। আমি বিশ্বাস করি হারিসের বিষয়ে ইবনে সা দ সংকীর্ণতা দেখিয়েছেন এবং শিয়া রিজাল ও রাবীদের বিষয়ে তিনি তাঁর জ্ঞান ও কর্মের ক্ষেত্রে ইনসাফ করেন নি। হারিসের খারাপ আকীদা বলতে যা সা দ বুঝিয়েছেন তা হলো আহলে বাইতের মহান মান ও মর্যাদা সম্পর্কে তাঁর সচেতনতা ও বিশ্বাস। ইবনে আবদুল বারও তেমনি মনে করেন।

হারিস ৬৫ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহ্ তাঁকে রহম করুন।

২০। হাবিব ইবনে আবি সাবিত আসাদী কাহেলী,কুফী

তিনি তাবেয়ীনের অন্যতম,ইবনে কুতাইবা তাঁর মা আরিফ গ্রন্থে ও শাহরেস্তানী তাঁর মিলাল ও নিহাল -এ তাঁকে শিয়া রিজালের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। যাহাবী তাঁর মি যান গ্রন্থে তাঁর নামের পার্শ্বে সিহাহ সিত্তাহর চি হ্ন দিয়েছেন এজন্য যে,সিহাহ সিত্তাহর হাদীস লেখকগণ তাঁর বর্ণিত হাদীসসমূহ হতে প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন ও তাঁকে নির্ভরযোগ্য মনে করতেন। তিনি বলেছেন, সিহাহ সিত্তাহর হাদীস লেখকগণ সন্দেহাতীতভাবে তাঁর বর্ণিত হাদীস হতে বিধি-বিধান গ্রহণ করতেন এবং ইবনে মুঈন ও অন্যান্য অনেকে তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন।

আমার মতে শিয়া হবার কারণেই দূলাবী তাঁকে দুর্বল হাদীস বর্ণনাকারী বলেছেন। তদ্রুপ ইবনে আউনের কর্মও আমাকে আশ্চর্যান্বিত করেছে,কারণ তিনি হাবিবের মধ্যে কোন ত্রুটি অনুসন্ধানে ব্যর্থ হয়ে তাঁকে এক চোখ অন্ধ বলে সম্বোধন করেছেন। কিন্তু বাস্তবে চোখের ত্রুটি কোন ত্রুটি নয়,বরং তাঁর মধ্যেই ত্রুটি যে কথা ও বাক্যে শালীনতা রক্ষা করে না।

আপনি এজন্য সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে সাঈদ ইবনে জুবাইর ও আবু ওয়াইল হতে হাবিব যে সকল হাদীস বর্ণনা করেছেন তা অধ্যয়ন করুন। কিন্তু যাইদ ইবনে ওয়াহাব হতে তাঁর বর্ণিত হাদীস শুধু সহীহ বুখারীতে রয়েছে।

সহীহ মুসলিমে তিনি মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস,তাউস,জাহ্হাক মুশরেফী,আবুল আব্বাস ইবনে শায়ের,আবু মিনহাল আবদুর রহমান,আতা ইবনে ইয়াসার,ইবরাহীম সা দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস ও মুজাহিদ হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। সহীহ মুসলিম ও বুখারীতে তাঁর হাদীসগুলো মূসাআ র সাওরী ও শো বাহর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।

সহীহ মুসলিমের সূত্র অনুযায়ী সুলাইমান আ মাশ,হুসাইন,আবদুল আযীয ইবনে সাইয়াহ্ ও আবু ইসহাক শায়বানী তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

হাবিব ১১৯ হিজরীতে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। আল্লাহ্ তাঁকে রহম করুন।

২১। হাসান ইবনে হাই

হাই-এর পূর্ণ নাম সালিহ ইবনে সালিহ হামাদানী। সুতরাং তিনি (হাসান) আলী ইবনে সালিহর ভ্রাতা। দু ভাইই শিয়াদের প্রসিদ্ধ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত। হাসান ও আলী পরস্পর জমজ ভাই ছিলেন,তবে আলী হাসানের কয়েক মুহূর্ত পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন। তাই হাসান আলীকে নাম ধরে ডাকতেন না,বরং তাঁকে সম্মানিত সম্ভাষণ করতেন ও আবু মুহাম্মদ বলে ডাকতেন। মুহাম্মদ ইবনে সা দ তাঁর তাবাকাত গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডে আলী ইবনে হাই-এর পরিচয় পর্বে তা উল্লেখ করেছেন।

যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে এ দু জন সম্পর্কেই বলেছেন। হাসান সম্পর্কে তিনি বলেছেন, তিনি প্রসিদ্ধ ব্যক্তিদের অন্তুর্ভুক্ত ও শিয়া মতানুসারী। তিনি রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের নিয়োজিত ইমামদের পিছনে জুমআর নামায পড়তেন না ও অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোকে ওয়াজিব মনে করতেন। তাঁর ব্যাপারে বলা হয়ে থাকে,তিনি হযরত উসমানের জন্য দোয়া ও মাগফেরাত কামনা করতেন না।

ইবনে সা দ তাঁর তাবাকাত গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডে তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, তিনি হাদীস বর্ণনায় বিশ্বাসযোগ্য ও সত্যপরায়ণ। প্রচুর হাদীস তিনি বর্ণনা করেছেন,তবে শিয়া মতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন।

ইবনে কুতাইবা তাঁর মা আরিফ গ্রন্থে তাঁকে হাদীসবেত্তা ও শিয়া বলে উল্লেখ করেছেন। শিয়া রিজালদের যে তালিকা তিনি তাঁর গ্রন্থের শেষে সন্নিবেশিত করেছেন সেখানে তিনি তাঁর নাম এনেছেন।

মুসলিম ও সুনানের রচয়িতাগণ তাঁর হাদীস হতে প্রমাণ উপস্থাপন করতেন। সহীহ মুসলিমের সূত্র মতে হাসান সামাক ইবনে হারব,ইসমাঈল আদী,আছেম আহওয়াল ও হারুন ইবনে সা দ হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং উবায়দুল্লাহ্ ইবনে মূসা আব্বাসী,ইয়াহিয়া ইবনে আদম,হামিদ ইবনে আবদুর রহমান রাওয়াসেবী,আলী ইবনে যাইদ,আহমাদ ইবনে ইউনুস এবং তাঁদের পর্যায়ের অনেকেই তাঁর নিকট হতে হাদীস শিক্ষা করেছেন।

যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে ইবনে মুঈন ও অন্যান্যদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, তাঁরা তাঁকে নির্ভরযোগ্য মনে করতেন। আবদুল্লাহ্ ইবনে আহমাদ তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন, রিজালদের মধ্যে শারিক হতে হাসান অধিক নির্ভরযোগ্য ও যথার্থ। যাহাবী আবু হাতেমের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, হাসান নির্ভরযোগ্য,সংরক্ষণকারী এবং বিশ্বস্ত। আবু জারআ বলেছেন, হাসানের মধ্যে ইবাদত,দুনিয়াবিমুখতা,ফিকাহর জ্ঞান ও হাদীস সমন্বিত হয়েছিল।

নাসায়ীও তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। আবু নাঈম বলেছেন, আটশ মুহাদ্দিস হতে হাদীস লিপিবদ্ধ ও শিক্ষা গ্রহণ করেছি কিন্তু হাসান ইবনে সালিহের ন্যায় কাউকেই পাই নি। তিনি ব্যতীত সকলেই কোথাও না কোথাও ভুল করেছেন।

উবাইদা ইবনে সুলাইমান বলেছেন, আমার মনে হয় সালিহের আত্মিক পবিত্রতার কারণে আল্লাহ্ তাঁকে শাস্তি দানে লজ্জাবোধ করবেন।

ইয়াহিয়া ইবনে আবু বকর হাসান ইবনে সালিহকে বললেন, মৃত ব্যক্তির গোসলের পদ্ধতি আমাদের জন্য বর্ণনা করুন। হাসান প্রচণ্ড ক্রন্দনের ফলে শেষ পর্যন্ত তা বর্ণনা করার মত অবস্থা লাভ করলেন না।

আবদুল্লাহ্ ইবনে মূসা বলেছেন, আমি আলী ইবনে সালিহের জন্য কোরআন পড়তাম,যখন সূরা মরিয়মের ৮৪ নং আয়াত(فلا تجعل عليهم) যেখানে কাফেরদের শাস্তির জন্য তড়িঘড়ি করো না বলা হয়েছে সেখানে পৌঁছলাম,তাঁর দৃষ্টি ভ্রাতা হাসানের ওপর পতিত হলো যিনি কিয়ামতের শাস্তির ভয়াবহতার কথা শুনে মূর্ছা গিয়েছিলেন এবং ভূপতিত গরুর ন্যায় খরখর শব্দ করছিলেন। আলী তাঁকে মাটি হতে উঠিয়ে মুখমণ্ডল হতে ধুলা-বালি বিদূরিত করে পানি দিয়ে ধুয়ে দিলেন,তাঁকে দেয়ালের সঙ্গে ঠেস দিয়ে বসালেন,কিছুক্ষণ পর তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলেন।

ওয়াকি বলেছেন, হাসান এবং আলী সালিহের দুই পুত্র। এ দু পুত্র তাঁদের মাতার সঙ্গে রাত্রিকে তিন ভাগ করে পালাক্রমে রাত্রি জাগতেন ও ইবাদত করতেন। তাঁদের মাতার মৃত্যুর পর রাত্রিকে দু ভাগে ভাগ করে ইবাদত করতেন। যখন আলী মৃত্যুবরণ করেন তখন হাসান সমগ্র রাত্রি ইবাদতের জন্য জাগতেন।

আবু সুলাইমান দারানী বলেন, হাসান ইবনে সালিহ ব্যতীত অপর কোন ব্যক্তিকে এরূপ দেখি নি যে,আল্লাহর ভয় তাঁর চেহারায় এতটা প্রকট হয়। এক রাত্রিতে তিনি নামাযে সূরা নাবা তেলাওয়াত শুরু করে ভয়ে মূর্ছা গেলেন। জ্ঞান ফিরলে পুনরায় নামায শুরু করে তা পড়ে শেষ করতে সক্ষম হলেন না।

তিনি ১০০ হিজরীতে জন্মগ্রহণ ও ১৯৯ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহ্ তাঁকে রহম করুন।

২২। হাকীম ইবনে উতাইবা কুফী

ইবনে কুতাইবা স্পষ্টত বলেছেন, তিনি শিয়া ছিলেন। তিনি তাঁর মা আরেফ গ্রন্থেও তাঁকে শিয়া রিজালের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। বুখারী ও মুসলিম তাঁর হাদীস হতে প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। এজন্য যে সকল হাদীস তিনি আবু জুহাইফা,ইবরাহীম নাখয়ী,মুজাহিদ এবং সাঈদ ইবনে জুবাইর হতে বর্ণনা করেছেন তা সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে অধ্যয়ন করতে পারেন।

সহীহ মুসলিম সূত্র মতে আবদুর রহমান ইবনে আবী লাইলা,কায়েস ইবনে মুখাইমারা,আবূ সালিহ,যার ইবনে আবদুল্লাহ্,সাঈদ ইবনে আবদুর রহমান ইবনে আবযী,ইয়াহিয়া ইবনে হাজ্জার,আবদুল্লাহ্ ইবনে উমরের দাস নাফে,আতা ইবনে আবু রিবাহ,আম্মারাহ্ ইবনে উমাইর,আবাক ইবনে মালিক,শো বা,মাইমুন ইবনে মেহরান,হাসান আরানী,মুসআব ইবনে সা দ এবং আলী ইবনে হুসাইন হতে তিনি হাদীস বর্ণনা করেছেন।

সহীহ বুখারীতে শুধু আবদুল মালিক ইবনে আবি গানিয়াহ্ তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু সহীহ মুসলিমে আ মাশ,আমর ইবনে কাইস,যাইদ ইবনে আবি উনাইসাহ্,মালিক ইবনে মুগুল,আবান ইবনে তাগলিব,হামযাহ্ যিয়াত,মুহাম্মদ ইবনে জাহ্হাদাহ্,মাতরাফ এবং আবু আওয়ানাহ্ তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

তিনি ১১৫ হিজরীতে মাত্র ৩০ বছর বয়সে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন।

২৩। হাম্মাদ ইবনে ঈসা জুহফা (যিনি জুহফাতে নিমজ্জিত হয়েছেন)

আবু আলী তাঁর মুনতাহাল মাকাল গ্রন্থে তাঁর নাম এনেছেন। হাসান ইবনে আলী ইবনে দাউদ রিজাল সম্পর্কিত তাঁর সংক্ষিপ্ত গ্রন্থে এবং রিজাল ও অভিধান লেখকগণ সকলেই তাঁকে শিয়া আলেম,নির্ভরযোগ্য এবং হেদায়েত প্রাপ্ত ইমামদের সাহাবী হিসেবে বলেছেন। তিনি ইমাম সাদিক (আ.) হতে সত্তরটি হাদীস শ্রবণ করেছেন,তন্মধ্যে বিশটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। হাম্মাদ লিখিত কয়েকটি গ্রন্থ শিয়া আলেমগণ অবিচ্ছিন্ন সনদে নকল করেছেন।

হাম্মাদ ইবনে ঈসা একবার ইমাম কাযেম (আ.)-এর নিকট গিয়ে বললেন, আপনার জন্য আমার জীবন উৎসর্গীকৃত। আমার জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন যেন তিনি আমাকে বাড়ি,স্ত্রী,সন্তান,দাস এবং মৃত্যু পর্যন্ত প্রতি বছর হজ্ব করার তৌফিক দান করেন।

ইমাম প্রথমে বললেন, আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ। হে আল্লাহ্! আপনি তাকে বাড়ি,স্ত্রী,সন্তান,দাস ও পঞ্চাশ বছরে পঞ্চাশটি হজ্ব করার তৌফিক দান করুন।

হাম্মাদ বলেন, যখন ইমাম পঞ্চাশ বছরের শর্ত আরোপ করলেন তখন বুঝলাম এর বেশী আমাকে দান করা হবে না। বর্তমানে আটচল্লিশ বছর হলো প্রতি বছর আমি হজ্ব করছি। এটি আমার সেই ঘর যা আল্লাহ্ আমাকে দিয়েছেন। আমার স্ত্রীও এই ঘরে অবস্থান করছে এবং আমার কথা শুনছে,আমার পুত্র ও দাসও এখানে রয়েছে।

এ ঘটনার দু বছর পর তাঁর পঞ্চাশটি হজ্ব পূর্ণ হয়। পরবর্তী বছর তিনি তাঁর বন্ধু আব্বাস নওফেলীসহ হজ্বের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। যখন ইহরামের স্থান জোহফাতে পৌঁছলেন তখন ইহরামের জন্য গোসল করতে গেলে ঢলের পানিতে নিমজ্জিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। পঞ্চাশ বারের অধিক হজ্ব করার তৌফিকও তাঁর হলো না। আল্লাহ্ তাঁকে রহম করুন। তিনি ২০৯ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। তিনি কুফার অধিবাসী কিন্তু বসরাতে জীবন নির্বাহ করেছেন এবং সত্তরাধিক বয়সে দুনিয়া ত্যাগ করেন।

আমরা তাঁর পরিচিতি ও বিবরণ মুখতাসারুল কালাম ফি মুয়াল্লিফিশ-শিয়া ফি সাদরিল ইসলাম গ্রন্থে এনেছি।

যাহাবী তাঁর মিযান গ্রন্থে তাঁর নামের পাশে(ت ق) চি হ্ন ব্যবহার করেছেন সুনানের লেখকগণের নামের আদ্যক্ষর হিসেবে যাঁরা তাঁর হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি ইমাম সাদিক (আ.) হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। যারা তাঁর শিয়া হবার কারণে বিদ্বেষবশত তাঁর বিরুদ্ধে অশোভন কথা বলেছে যাহাবী তাদের সমালোচনা করেছেন।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো দারে কুতনী তাঁকে দুর্বল হাদীস বর্ণনাকারী বলেছেন অথচ তাঁর বর্ণিত হাদীস হতে প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। এ ধরনের ব্যক্তিদের কর্ম এরূপই(وكذلك يفعلون)

২৪। হামারান ইবনে আ য়ুন (যুরারাহর ভ্রাতা)

তাঁরা দু জনই (হামারান ও যুরারাহ্) প্রসিদ্ধ শিয়া,শরীয়তের রক্ষাকারী,মুহাম্মদের বংশধরদের জ্ঞানের সমুদ্র,অন্ধকারের প্রদীপ এবং হেদায়েতের পতাকা ও ধ্বজাধারী। এ দু জন ইমাম বাকির ও ইমাম সাদিক (আ.)-এর সঙ্গে সব সময় সম্পৃক্ত ছিলেন,সেজন্য ইমামগণের নিকট বিশেষ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন।

যাহাবী হামারানকে তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে স্থান দিয়েছেন ও সাংকেতিক(ق) চি হ্ন তাঁর নামের পাশে লিপিবদ্ধ করেছেন সুনানের হাদীস বর্ণনাকারী বোঝানোর জন্য। অতঃপর বলেছেন, তিনি আবু তুফাইল ও অন্যান্যদের হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

হামযাহ্ তাঁর জন্য কোরআন পাঠ করতেন এবং তিনি কোরআন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত ছিলেন। ইবনে মুঈন তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, তিনি গুরুত্বপূর্ণ নন। আবু হাতেম বলেছেন, তিনি সম্মানিত শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত। আবু দাউদ তাঁকে রাফেযী বলেছেন।

خ

২৫। খালিদ ইবনে মুখাল্লাদ কাতওয়ানী কুফী (আবু হাইসাম)

তিনি ইসমাঈল বুখারীর শিক্ষক। ইবনে সা দ তাঁর তাবাকাত গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ২৮৩ পৃষ্ঠায় তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, তিনি প্রকাশ্যে নিজেকে শিয়া বলে দাবী করতেন। তিনি ২১৩ হিজরীর মহররম মাসের ১৫ তারিখে আব্বাসী খলীফা মামুনের শাসনামলে কুফায় ইন্তেকাল করেন। তিনি শিয়া মাজহাবের বিষয়ে বাড়াবাড়ি করতেন। অনেকেই তাঁর নিকট হাদীস শিক্ষা করতেন...।

আবু দাউদ তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, পরম সত্যবাদী কিন্তু শিয়া।

জাওযাজানী বলেছেন, তিনি কোন ভয়-ভীতি ছাড়াই প্রকাশ্যে বিরোধীদের সমালোচনা করতেন ও তাঁর খারাপ আকীদা-বিশ্বাসকে বর্ণনা এবং তা রক্ষার চেষ্টা করতেন।

আবু দাউদ ও জাওযাজানীর বক্তব্যগুলো যাহাবী তাঁর মিযান গ্রন্থে এনেছেন। মুসলিম ও বুখারী কোন কোন ক্ষেত্রে তাঁর হাদীস হতে প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। এজন্য যে সকল হাদীস তিনি মুগীরাহ্ ইবনে আবদুর রহমান হতে বর্ণনা করেছেন তা সহীহ বুখারীতে দেখতে পারেন। সহীহ মুসলিমে তিনি মুহাম্মদ ইবনে জা ফর ইবনে আবি কাসির,মালিক ইবনে আনাস ও মুহাম্মদ ইবনে মূসা হতে যে সকল হাদীস বর্ণনা করেছেন তা অধ্যয়ন করুন।

কিন্তু সুলাইমান ইবনে বেলাল ও আলী ইবনে মুসাহ্হার সূত্রে তাঁর থেকে বর্ণিত হাদীস সহীহ বুখারী ও মুসলিম উভয় গ্রন্থে রয়েছে। বুখারী কোন মাধ্যম ছাড়া সরাসরি তাঁর থেকে কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন ও মুহাম্মদ ইবনে উসমান ইবনে কারামার মাধ্যমে দু টি হাদীস তাঁর হতে বর্ণনা করেছেন।

সহীহ মুসলিমে আবু কুরাইব,আহমাদ ইবনে উসমান আওদী,কাসিম ইবনে যাকারিয়া,আবদ ইবনে হামিদ,ইবনে আবি শাইবা এবং মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে নুমাইর তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। সুনান লেখকগণ তাঁর মাজহাব সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া সত্ত্বেও তাঁর বর্ণিত হাদীস হতে দলিল-প্রমাণ এনেছেন।

د

২৬। দাউদ ইবনে আবু দাউদ (আবুল জাহ্হাফ)

ইবনে আদী তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, আমি তাঁর বর্ণিত হাদীস হতে প্রমাণ উপস্থাপন করি না,তিনি শিয়া এবং তাঁর সকল রেওয়ায়েতেই আহলে বাইতের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণিত হয়েছে...। কথাটি গভীরভাবে চিন্তা করুন ও ভাবুন কতটা আশ্চর্যজনক! আহলে বাইতের বিদ্বেষীরা দাউদকে কতটা কষ্ট দিয়েছে লক্ষ্য করুন! যদিও সুফিয়ান সাওরী,সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা,আলী ইবনে আবিস ও অন্যান্য শীর্ষ পর্যায়ের রিজালগণ তাঁর থেকে হাদীস শিক্ষা করেছেন তদুপরি তাঁর প্রতি এরূপ আচরণ?!আবু দাউদ ও নাসায়ী তাঁর বক্তব্য থেকে দলিল উপস্থাপন করেছেন। আহমাদ ও ইয়াহিয়া তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। নাসায়ী বলেছেন, তাঁর হাদীসে সমস্যা নেই। হাতেম বলেছেন, হাদীস বর্ণনায় তিনি একজন সৎ ব্যক্তি।

যাহাবী তাঁর মিযানুল ই তিদাল গ্রন্থে উপরোক্ত বক্তব্যগুলো এনেছেন। যেসকল হাদীস সুনানে আবু দাউদ ও নাসায়ীতে তাঁর সূত্রে আবু হাতেম আশজায়ী,ইকরামা ও অন্যান্যদের হতে বর্ণিত হয়েছে তা লক্ষ্য করুন।