ط
৪৩। তাউস ইবনে কাইসান খাওলানী হামাদানী ইয়ামানী (আবু আবদুর রহমান)
তাঁর মাতা পারস্য দেশীয় ও পিতা নামির ইবনে কাসিত গোত্রের। তাঁর পিতা বাজির ইবনে রাইসানের ক্রীতদাস এবং হামিরী।
আহলে সুন্নাহর আলেমগণ তাঁকে প্রাচীন শিয়াদের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। শাহরেস্তানী তাঁর‘
আল মিলাল ওয়ান নিহাল’
গ্রন্থে ও ইবনে কুতাইবা তাঁর‘
মা’
আরিফ’
গ্রন্থে তাঁকে শিয়া রিজাল বলে উল্লেখ করেছেন।
সিহাহ সিত্তাহর হাদীস লেখকগণ তাঁর হাদীসকে ব্যবহার করে প্রমাণ ও দলিল উপস্থাপন করেছেন। এজন্য আপনি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে ইবনে আব্বাস,ইবনে উমর ও আবু হুরাইরা হতে তাঁর বর্ণিত হাদীসগুলো দেখতে পারেন।
এছাড়া হযরত আয়েশা,যায়েদ বিন সাবিত,আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর হতে তাঁর বর্ণিত হাদীস সহীহ মুসলিমে রয়েছে। তাঁর থেকে বুখারীতে শুধু যুহরী হাদীস বর্ণনা করেছেন ও মুসলিমে মাত্র কয়েকজন রাবী তাঁর থেকে হাদীস নকল করেছেন।
তিনি মক্কায় ১০৪ বা ১০৬ হিজরীতে জিলহজ্ব মাসের সপ্তম দিনে হজ্বের কয়েকদিন পূর্বে মৃত্যুবরণ করেন। ইমাম হাসান ইবনে আলীর পুত্র আবদুল্লাহ্ মানুষের ভীড়ের মধ্যে তাঁর জানাযা বহন করেন। এত অধিক লোক জানাযায় অংশগ্রহণ করে যে,জনতার চাপে আবদুল্লাহর পরিধেয় বস্ত্র পশ্চাত দিকে ছিড়ে যায় ও তাঁর পাগড়ী খুলে পড়ে যায়।
ظ
৪৪। যালিম ইবনে আমর ইবনে সুফিয়ান আবুল আসওয়াদ দু’
আলী
তাঁর শিয়া হওয়ার বিষয়টি ও ইমাম আলী,হাসান,হুসাইন এবং আহলে বাইতের অন্যান্য সদস্যগণের প্রতি তাঁর ভালবাসার দিকটি সূর্যালোকের চেয়েও স্পষ্ট। আমরা আমাদের ইসলামের প্রাথমিক যুগের শিয়া জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কিত‘
মুখতাছারুল কালাম ফি মুয়াল্লিফিশ-শিয়া মিন সাদরিল ইসলাম’
গ্রন্থে তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তাঁর শিয়া হবার ব্যাপারে কোন সন্দেহ না থাকা সত্ত্বেও সিহাহ সিত্তাহর লেখকগণ তাঁর হাদীস প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য ব্যবহার করেছেন।
এজন্য সহীহ বুখারীতে হযরত উমর ইবনে খাত্তাব হতে তাঁর বর্ণিত হাদীসগুলো দেখুন। এছাড়া আবু মুসা আশা’
আরী ও ইমরান ইবনে হুসাইন হতে তাঁর বর্ণিত হাদীস সহীহ মুসলিমে লক্ষণীয়। ইয়াহিয়া ইবনে ইয়ামুর যেসকল হাদীস তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন তা সহীহ বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে। সহীহ বুখারীতে আবদুল্লাহ্ ইবনে বুরাইদাহ্ ও মুসলিমে তাঁর পুত্র আবু হারব তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৯৯ হিজরীতে বসরায় যে মহামারী দেখা দেয় তাতে তিনি অসুস্থ হয়ে ৮৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহ্ তাঁকে রহম করুন। তিনি আলী (আ.)-এর নির্দেশানুযায়ী আরবী ব্যাকরণশাস্ত্রের(علم نحو)
নিয়ম-কানুন তৈরী করেন। এ বিষয়গুলো আমরা আমাদের পূর্বোল্লিখিত গ্রন্থে উল্লেখ করেছি।
ع
৪৫। আমের ইবনে ওয়ায়েলা ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে উমার লাইসী
তাঁর বংশীয় নাম আবু তুফাইল। তিনি উহুদ যুদ্ধের বছর মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন ও মহানবী (সা.)-এর সময়কালের আট বছর পেয়েছিলেন।
ইবনে কুতাইবা তাঁর‘
মা’
আরিফ’
গ্রন্থে তাঁকে রাফেযীদের মধ্যে কট্টর অংশের অন্তর্ভুক্ত বলে উল্লেখ করেছেন। ইমাম হুসাইনের রক্তের বদলা গ্রহণকারী মুখতার সাকাফীর সেনাবাহিনীর পতাকাধারী ও রাসূল (সা.)-এর সর্বশেষ জীবিত সাহাবী বলেও তিনি তাঁকে স্মরণ করেছেন।
ইবনে আবদুল বার তাঁর‘
ইসতিয়াব’
গ্রন্থে তাঁর সম্পর্কে বলেছেন,“
তিনি কুফায় বসবাস করতেন ও সকল স্থানে হযরত আলী (আ.)-এর সঙ্গে ছিলেন,হযরত আলীর মৃত্যুর পর মক্কায় যান। তিনি একজন বিজ্ঞ,জ্ঞানী,উপস্থিত বুদ্ধিসম্পন্ন,মিষ্টভাষী ও সাহিত্যিক ছিলেন। আলীর অনুসারীদের মধ্যে একজন সত্যিকারের খোদামুখী ব্যক্তি।”
তিনি আরো বলেছেন,“
আবু তুফাইল একদিন মুয়াবিয়ার দরবারে উপস্থিত হলে মুয়াবিয়া তাঁকে প্রশ্ন করলেন : তোমার বন্ধু আবুল হাসান (আলী)-এর প্রতি তোমার ভালবাসার অবস্থা এখন কিরূপ? তিনি জবাব দিলেন : হযরত মূসার প্রতি তাঁর মাতার ভালবাসার ন্যায়। তবে পার্থক্য এটুকু যে,আলীর প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণে আমি লজ্জিত ও তাঁর নিকট ক্ষমাপ্রার্থী।
মুয়াবিয়া বললেন : তুমি উসমানকে গৃহবন্দীকারী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি বললেন : না,তবে তখন আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। মুয়াবিয়া বললেন : তবে কেন তাঁর সাহায্যে এগিয়ে যাও নি? আবু তুফাইল বললেন : সে তোমার সাহায্য চেয়েছিল তবুও কেন তুমি তার সাহায্যে যাও নি অথচ সিরিয়ার সকল অধিবাসী তোমার সঙ্গে ছিল ও তোমার নির্দেশ মানত। তবে কি তোমার কোন অভিসন্ধি ছিল? মুয়াবিয়া বললেন : তবে কি তুমি দেখ নি আমি উসমানের খুনের দাবীতে কিয়াম করেছি? এটিই তার প্রতি আমার সাহায্য। আবু তুফাইল বললেন : তোমার একথা কবি আখু জাফের মত যিনি বলেছেন,
لألفينك بعد الموت تندبني
আমি দেখছি আমার মৃত্যুর পর আমার জন্য ক্রন্দন করছ
و في حياتي ما زودتني زادا
অথচ আমার জীবদ্দশায় কোন সাহায্যই তুমি কর নি।
যুহরী,আবু যুবাইর,ইবনে আবি হুসাইন,আবদুল মালিক ইবনে আবজার,ক্বাতাদাহ্,মা’
রুফ,ওয়ালিদ ইবনে জামিহি,মানসুর ইবনে হাইয়ান,কাসিম ইবনে আবি বুরদাহ্,আমর ইবনে দিনার,ইকরামা ইবনে খালিদ,কুলসুম ইবনে হাবিব,ফোরাত কায্যায্,আবদুল আযীয ইবনে রাফী তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। যেসকল হাদীস তাঁরা আবু তুফাইল হতে বর্ণনা করেছেন তা সহীহ মুসলিমে রয়েছে।
সহীহ মুসলিমের বর্ণনা মতে আবু তুফাইল হজ্ব সম্পর্কিত একটি হাদীস রাসূল (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,যার মধ্যে রাসূলের গুণাবলীসমূহ সুন্দরভাবে বর্ণিত হয়েছে।
নবুওয়াতের নিদর্শন ও নামায সম্পর্কে মুয়াজ ইবনে জাবাল হতে এবং কাযা ও ক্বাদার (ভাগ্য) সম্পর্কিত একটি হাদীস তিনি আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ হতে বর্ণনা করেছেন। এছাড়া তিনি হযরত আলী (আ.),হুজাইফা ইবনে উসাইদ,হুজাইফা ইবনে ইয়ামান,আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস,হযরত উমর ইবনে খাত্তাব হতেও হাদীস বর্ণনা করেছেন। যাঁরা সহীহ মুসলিম ও সিহাহ সিত্তাহর অন্যান্য হাদীস গ্রন্থের ওপর গবেষণা করেছেন তাঁরা বিষয়টি ভালভাবেই জানেন।
তাঁর মৃত্যুর ব্যাপারে কয়েকটি কথা প্রচলিত রয়েছে। হিজরী ১০০,১০২,১০৭ অথবা ১১০ সাল তাঁর মৃত্যুর বছর বলে উল্লিখিত হয়েছে। ইবনে কাইসারানী ১২০ হিজরীতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করেন।
৪৬। আব্বাদ ইবনে ইয়াকুব ইসলামী রাওয়াজানী (কুফী)
দারে কুতনী বলেন,“
আব্বাদ ইবনে ইয়াকুব শিয়া ও সত্যবাদী।”
ইবনে হাইয়ান বলেছেন,“
আব্বাদ ইবনে ইয়াকুব রাফেযী বিশ্বাসের দিকে মানুষদের দাওয়াত করতেন।”
ইবনে খুজাইমা বলেছেন,“
এমন এক ব্যক্তি যিনি হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য কিন্তু মাজহাবের বিষয়ে অভিযুক্ত,তিনি হলেন আব্বাদ ইবনে ইয়াকুব।”
আব্বাদই সেই ব্যক্তি যিনি ফযল ইবনে কাসিম হতে ও তিনি সুফিয়ান সাওরী হতে,তিনি যুবাইদ হতে এবং যুবাইদ মুররাহ্ হতে বর্ণনা করেছেন,আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ নিম্নোক্ত আয়াতটিকে এভাবে তেলাওয়াত করতেন-و كفى الله المؤمنين القتال بعليّ
অর্থাৎ আল্লাহ্পাক আলীর মাধ্যমে মুমিনদের যুদ্ধ হতে মুক্তি দিয়েছেন।
আবার তিনি শারিক হতে,তাঁর হতে আছিম,তিনি যার হতে ও তিনি আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ হতে বর্ণনা করেছেন,“
রাসূল (সা.) বলেছেন : যখন মুয়াবিয়াকে আমার মিম্বারে দেখবে তখন তাকে হত্যা কর।”
তাবারী ও অন্যরা এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
আব্বাদ সব সময় বলতেন,“
যে ব্যক্তি তার দৈনন্দিন নামাযে নবী (সা.)-এর আহলে বাইতের শত্রুদের হতে সম্পর্কহীনতার ঘোষণা দিয়ে আল্লাহর সাহায্য না চায়,সে নবীর বংশধরদের শত্রুদের সঙ্গে পুনরুত্থিত হবে।”
তিনি আরো বলেছেন,“
মহান আল্লাহ্ ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে এর ঊর্ধ্বে যে,আলী (আ.)-এর সঙ্গে বাইয়াত ভঙ্গ করে যুদ্ধ করার পরও তালহা ও যুবাইরকে বেহেশতে দেয়ার মত বিচার করবেন।”
সালিহ ইবনে জাযারাহ্ বলেছেন,“
আব্বাদ ইবনে ইয়াকুব হযরত উসমানের তীব্র সমালোচনা করতেন এবং আবাদান আহওয়াজী নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণনা করেছেন : আব্বাদ ইবনে ইয়াকুব হযরত আলী (আ.)-এর অধিকারকে অবৈধভাবে দখলকারীদের তীব্র ভাষায় আক্রমণ করতেন।”
এতদ্সত্ত্বেও আহলে সুন্নাহর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ যেমন বুখারী,তিরমিযী,ইবনে মাজাহ্,ইবনে খুযাইমা ও ইবনে আবি দাউদ তাঁর থেকে হাদীসশাস্ত্র শিক্ষা লাভ করেছেন। এ কারণেই তিনি তাঁদের শিক্ষক ও বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি।
আবু হাতেম যদিও এক্ষেত্রে এই সকল ব্যক্তিবর্গের বিপরীতে তাঁর সম্পর্কে ভিন্ন ধারণা পোষণ করতেন তদুপরি বলেছেন,“
তিনি (আব্বাদ) একজন বড় মাপের মানুষ ও বিশ্বস্ত।”
যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে তাঁর সম্পর্কে বলেছেন,“
তিনি আলী ও তাঁর বংশধরদের বিষয়ে অতিরঞ্জনকারী শিয়া ও বিদআতের প্রবর্তক,তদুপরি হাদীস বর্ণনায় সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত।”
অতঃপর আমরা তাঁর সম্পর্কে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করেছি তিনি তাই বলেছেন।
বুখারী তাঁর সহীহ হাদীসে তাঁর হতে কোন মাধ্যম ছাড়া সরাসরি হাদীস বর্ণনা করেছেন।
তিনি ২৫০ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহ্ তাঁকে রহম করুন। কিন্তু কাসিম ইবনে যাকারিয়া মুতরিয তাঁর প্রতি যে মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছে তা সমুদ্র খনন করে পানি আনয়নের মতই মিথ্যা অভিযোগ ছাড়া কিছু নয়। এ ধরনের হীন ব্যক্তি হতে আল্লাহর আশ্রয় চাই।
و الله المستعان على ما تصفون
(তোমরা যা বর্ণনা করছ সে বিষয়ে একমাত্র আল্লাহ্ই আমার সাহায্য স্থল।
৪৭। আবদুল্লাহ্ ইবনে দাউদ আবদুর রহমান হামাদানী (কুফী)
তিনি বসরার হারাবাত্তাহর অধিবাসী। ইবনে কুতাইবা তাঁর‘
মা’
আরিফ’
গ্রন্থে তাঁকে শিয়া রিজালের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। বুখারী তাঁর সহীহে তাঁর হাদীস হতে প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। এজন্য আ’
মাশ,হিশাম ইবনে উরওয়া ও ইবনে জারীহ হতে তাঁর বর্ণিত হাদীসসমূহ দেখতে পারেন। বুখারীতে কয়েকটি স্থানে মুশাদ্দাদ,আমর ইবনে আলী ও নাছর ইবনে আলী তাঁর সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
তিনি ২১২ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
৪৮। উসামা ইবনে আমর ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে জাবের ইবনে বাশির ইবনে আতাওয়ারা ইবনে আমের ইবনে মালিক ইবনে লাইস (আবদুল্লাহ্ ইবনে শাদ্দাদ ইবনে হাদ,আবুল ওয়ালিদ কুফী)
তিনি হযরত আলী (আ.)-এর সাহাবী এবং তাঁর মাতা সালমা ইবনে উমাইস খাসআমি আসমা বিনতে উমাইসের ভগ্নী। সেই সূত্রে তিনি আবদুল্লাহ্ ইবনে জা’
ফর,মুহাম্মদ ইবনে আবু বকরের খালাতো ভাই ও হযরত হামযাহ্ ইবনে আবদুল মুত্তালিবের কন্যা আম্মারার মাতৃকুলের ভাই।
ইবনে সা’
দ তাঁকে কুফার অধিবাসী তাবেয়ীদের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন এবং ইলম ও ফিকাহ্শাস্ত্রের পণ্ডিত বলে তাঁকে উল্লেখ করেছেন। তিনি তাঁর‘
তাবাকাত’
গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৮৬ পৃষ্ঠায় আবদুল্লাহ্ ইবনে শাদ্দাদের পরিচয় এভাবে দিয়েছেন- আবদুল্লাহ্ ইবনে শাদ্দাদ কিছু সংখ্যক কোররাকে (ক্বারী ও কোরআন বিশারদ) নিয়ে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। এটি আবদুর রহমান মুহাম্মদ ইবনে আশআসের সময়ের ঘটনা। আবদুল্লাহ্ দাজিলের যুদ্ধে নিহত হন। তিনি ফকীহ্,হাদীস বিশেষজ্ঞ,শিয়া ও একজন নির্ভরযোগ্য রাবী ছিলেন।
এ যুদ্ধ ৮১ হিজরীতে সংঘটিত হয়। সিহাহ সিত্তাহর লেখকগণ ও অন্যান্য হাদীসবিদ আবদুল্লাহ্ ইবনে শাদ্দাদের হাদীস দলিল-প্রমাণ উপস্থাপনে ব্যবহার করেছেন।
আবু ইসহাক শায়বানী,মা’
বাদ ইবনে খালিদ ও সা’
দ ইবনে ইবরাহীম তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। সিহাহ সিত্তাহ্ ও মুসনাদসমূহে হাদীসগুলো রয়েছে। সহীহ বুখারী ও মুসলিমের মতে তিনি হযরত আলী,হযরত আয়েশা ও মায়মুনা হতে সরাসরি হাদীস শিক্ষা করেছেন।
৪৯। আবদুল্লাহ্ ইবনে উমার ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আবান ইবনে সালিহ,ইবনে উমাইর কুরশী (কুফার অধিবাসী এবং মেশকদানী উপাধীতে ভূষিত)
তিনি মুসলিম,আবু দাউদ,বাগাভী (বাগাওয়ী) ও তাঁদের সমকালীন অনেকেরই উস্তাদ ছিলেন। এ সকল ব্যক্তিবর্গ তাঁর হতে জ্ঞান ও হাদীস শিক্ষা করেছেন।
আবু হাতেম বলেছেন,‘
তিনি শিয়া কিন্তু খুবই সত্যবাদী ব্যক্তি।’
সালিহ ইবনে মুহাম্মদ জাযরাহ্ বলেন,“
তিনি বিশ্বাসে বাড়াবাড়ি করে থাকেন তদুপরি আবদুল্লাহ্ ইবনে আহমাদ তাঁর পিতা হতে বলেছেন : মেশকদানেহ্ নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত।”
যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে বলেছেন,“
তিনি খুবই সত্যপরায়ণ ও হাদীসবেত্তা। তিনি ইবনে মোবারক,দার অওয়ারদী ও তাবাকা হতে হাদীস শুনেছেন এবং মুসলিম,আবু দাউদ,বাগাভী ও আরো অনেকেই তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।”
যাহাবী তাঁর নামের পাশে সাংকেতিকভাবে মুসলিম ও আবু দাউদ লিখেছেন যেহেতু তাঁরা তাঁর হাদীস ব্যবহার করে প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। তদুপরি আমরা এতক্ষণ বিভিন্ন আলেম হতে তাঁর সম্পর্কে যা উল্লেখ করেছি তিনিও তাই বলেছেন।
আবদুল্লাহ্ ইবনে মোবারক,আবদাহ্ ইবনে সুলাইমান,আবদুর রহমান ইবনে সুলাইমান,আলী ইবনে হাশিম,আবুল আহওয়াছ,হুসাইন ইবনে আলী জো’
ফী এবং মুহাম্মদ ইবনে ফুজাইল হতে তাঁর বর্ণিত হাদীস সহীহ মুসলিমে বিদ্যমান। ফিতনাসমূহ সম্পর্কে মুসলিম কোন মাধ্যম ব্যতীত সরাসরি তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
যাহাবীর মতে তিনি ২৩৯ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। আবুল আব্বাস সিরাজের মতে তাঁর মৃত্যু ২৩৭ অথবা ২৩৮ হিজরীতে।
৫০। আবদুল্লাহ্ ইবনে লাহিয়া ইবনে উকবা হাজরামী (মিশরের আলেম ও কাজী)
ইবনে কুতাইবা তাঁর‘
মা’
আরিফ’
গ্রন্থে তাঁকে শিয়া রিজালের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন।‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে লাহিয়ার পরিচয় পর্বে ইবনে আদীর সূত্রে বলা হয়েছে,“
তিনি শিয়া মতবাদে বাড়াবাড়ি করতেন।”
আবু ইয়ালী কামিল ইবনে তালহা হতে বর্ণনা করেছেন,“
লাহিয়া,হাই ইবনে আবদুল্লাহ্ মাগাফেরী,তিনি আবু আবদুর রহমান হাবলী হতে,তিনি আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর হতে বর্ণনা করেছেন,যখন রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ইন্তেকালের পূর্বে অসুস্থতায় পড়লেন তখন তিনি বললেন : আমার ভাইকে বলো আমার নিকট আসতে,হযরত আবু বকর এলে নবী তাঁর হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললেন : আমার ভাইকে আমার নিকট আসতে বলো,হযরত উসমান এলে নবী করিম (সা.) পুনরায় মুখ ফিরিয়ে বললেন : আমার ভাইকে ডাক। অতঃপর হযরত আলীকে খবর দেয়া হলে তিনি নবীর শয্যা পাশে গেলেন। রাসূল (সা.) তাঁকে স্বীয় চাদরে জড়িয়ে বুকের সঙ্গে চেপে ধরলেন। যখন আলী (আ.) রাসূলের নিকট থেকে চলে আসলেন তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো : নবী (সা.) আপনাকে কি বলেছেন? তিনি বললেন : রাসূল আমাকে জ্ঞানের এক হাজার দ্বারের শিক্ষা দিলেন যার প্রতিটি দ্বার হতে আবার হাজার দ্বার উন্মোচিত হয় এরূপ ভাবে।”
যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে তাঁর নামের পাশে(د,ت,ق)
লিখেছেন অর্থাৎ আবু দাউদ,তিরমিযী ও সুনানে আরবাআহর হাদীস লেখকগণ তাঁর হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর হাদীসসমূহ আপনি আহলে সুন্নাহর এ হাদীস গ্রন্থসমূহে দেখতে পারেন।
ইবনে খাল্লেকান তাঁর‘
ওয়াফায়াতুল আ’
য়ান’
গ্রন্থে তাঁকে প্রশংসার সাথে স্মরণ করেছেন। সহীহ মুসলিমে ইবনে ওয়াহাব তাঁর হতে এবং তিনি ইয়াযীদ ইবনে আবি হাবিব হতে হাদীস নকল করেছেন।
ইবনে কাইসারানী তাঁর‘
আল জাম বাইনা কিতাবাই আবি নাসর আল কালাবাযী ওয়া আবি বাকর আল ইস্ফাহানী’
নামক রিজাল গ্রন্থে মুসলিম ও বুখারীর হাদীস বর্ণনাকারীদের তালিকায় লাহিয়ার নাম এনেছেন।
তিনি ১৭৪ হিজরীর রবিউসসানী মাসের ১৫ তারিখ রবিবারে মৃত্যুবরণ করেন।
৫১। আবদুল্লাহ্ ইবনে মাইমুন কাদ্দাহ (মক্কার অধিবাসী ও ইমাম সাদিক [আঃ]-এর সাহাবী)
যাহাবী তাঁর নামের পাশে সাংকেতিকভাবে তিরমিযী লিখেছেন। কারণ তিরমিযী তাঁর হাদীস নকল করেছেন ও প্রমাণ উপস্থাপনে ব্যবহার করেছেন। তিনি ইমাম জা’
ফর ইবনে মুহাম্মদ আস্ সাদিক (আ.) ও তালহা ইবনে আমর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন বলেও যাহাবী উল্লেখ করেছেন।
৫২। আবদুর রহমান ইবনে সালিহ আযদী,আবু মুহাম্মদ (কুফার অধিবাসী)
তাঁর ছাত্র ও বন্ধু আব্বাস দাওরী তাঁর সম্পর্কে বলেছেন,“
তিনি শিয়া ছিলেন।”
ইবনে আদী বলেছেন,“
সে শিয়া হবার কারণে অগ্নিতে দগ্ধ হয়েছে।”
সালিহ জাযরাহ্ তাঁর সম্পর্কে বলেছেন,“
তিনি হযরত উসমানের সমালোচনা করতেন ও তাঁর প্রতি অপমানজনক কথা বলতেন।”
আবু দাউদ বলেন,“
তিনি সাহাবীদের দোষত্রুটি সম্পর্কে গ্রন্থ রচনা করেন। তাই তিনি একজন মন্দ ব্যক্তি।”
তদুপরি আব্বাস দাওরী ও ইমাম বাগাভী তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং নাসায়ীও তাঁর হাদীস নকল করেছেন।
যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে তাঁর নামের পাশে সাংকেতিকভাবে নাসায়ী লিখেছেন,কারণ নিসায়ী তাঁর বর্ণিত হাদীসসমূহ হতে দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন করতেন। ইবনে মুঈন তাঁকে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য বলেছেন। তিনি পূর্ববতী ব্যক্তিদের বিভিন্ন বাণীও লিপিবদ্ধ করতেন।
তিনি ২৩৫ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। আপনি শারিক ও অন্যদের হতে তাঁর বর্ণিত হাদীস সুনান গ্রন্থসমূহে দেখতে পারেন।
৫৩। আবদুর রাজ্জাক ইবনে হাম্মাম ইবনে নাফে হিমইয়ারী সানআনী
তিনি শিয়াদের তৎকালীন সময়ের একজন সৎ ও প্রসিদ্ধ ব্যক্তি। ইবনে কুতাইবা তাঁর‘
মা’
আরিফ’
গ্রন্থে তাঁকে শিয়া রিজালের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। ইবনে আসির তাঁর ইতিহাস গ্রন্থ‘
আল কামিল’
-এ
২১১ হিজরীর ঘটনাপ্রবাহ বর্ণনাকালে তাঁর মৃত্যুর ঘটনা বর্ণনা করে বলেছেন,“
এ বছর আবদুর রাজ্জাক ইবনে হাম্মাম সানআনী মুহাদ্দিস মৃত্যুবরণ করেন। তিনি আহমাদের উস্তাদ ছিলেন ও তাঁকে তিনি হাদীস বর্ণনার অনুমতি দিয়েছিলেন।”
মুত্তাকী হিন্দী তাঁর‘
কানযুল উম্মাল’
গ্রন্থের ৫৯৯৪ নং হাদীস বর্ণনাকালে তাঁর সম্পর্কে বলেছেন ও তাঁর শিয়া হবার বিষয়টি সত্যায়ন করেছেন।
যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে বলেছেন,“
আবদুর রাজ্জাক ইবনে হাম্মাম ইবনে নাফে ইবনে আবু বকর হিমইয়ারী সানআনী একজন বড় আলেম ও বিশ্বস্ত রাবী।”
তাঁর পরিচয় দিতে গিয়ে আরো বলেন,“
তিনি অনেক কিছু লিখেছেন যেমন তাঁর‘
আল জামেয়ুল কাবীর’
গ্রন্থটি জ্ঞানের ভাণ্ডার। মানুষ জ্ঞান আহরণের জন্য নিকট ও দূর সব স্থান হতে তাঁর নিকট আসত। তাঁর নিকট শিক্ষা গ্রহণকারী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে আহমাদ,ইসহাক,ইয়াহিয়া,যাহলী,রামাদী ও আবদের নাম স্মরণীয়।”
অতঃপর যাহাবী তাঁকে মিথ্যায়নে আব্বাস ইবনে আবদুল আযীযের উদ্ধৃতি এনে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন,“
এ বিষয়টিতে কোন মুসলমানই,এমন কি আব্বাসের সহযোগী হাফিযগণও একমত নন। হাদীসশাস্ত্রবিদগণ সকলেই তাঁর বর্ণিত হাদীস তাঁদের দলিল-প্রমাণে ব্যবহার করেছেন।”
অতঃপর তাঁর পরিচয় সম্পর্কে তায়ালেসীর বাণী এভাবে এনেছেন,“
ইবনে মুঈনকে বলতে শুনেছি : একদিন আবদুর রাজ্জাক হতে এমন কিছু কথা শুনেছি যা থেকে সে যে শিয়া তা বুঝতে পেরেছি। তাকে প্রশ্ন করলাম : তোমার শিক্ষকগণ যাঁদের হতে তুমি জ্ঞান শিক্ষা করেছ,যেমন মুয়াম্মার,মালিক,ইবনে জারিহ,আবু সুফিয়ান এবং আওজায়ী সকলেই সুন্নী,তুমি শিয়া মাজহাব কোথায় শিক্ষা লাভ করেছ? সে বলল : জা’
ফর ইবনে সুলাইমান দ্বাবয়ী আমার নিকট এসেছিলেন,আমি তাঁকে হেদায়েতপ্রাপ্ত,জ্ঞানী ও সৎ পেয়েছি,তাঁর নিকটই এ মাজহাবের শিক্ষা লাভ করেছি।”
আবদুর রাজ্জাক তাঁর এ কথায় নিজে শিয়া হবার বিষয়টি স্বীকার করেছেন ও বলেছেন জা’
ফর দ্বাবয়ী থেকে তা শিখেছেন। কিন্তু মুহাম্মদ ইবনে আবি বাকর মুকাদ্দামীর মতে জা’
ফর দ্বাবয়ী আবদুর রাজ্জাকের মাধ্যমে শিয়া হয়েছেন। এ কারণেই যাহাবীর ‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে মুহাম্মদ ইবনে আবি বাকরের কথা বলা হয়েছে,তিনি আবদুর রাজ্জাককে সব সময় অভিসম্পাত করতেন এ কারণে যে,তিনি জা’
ফর দ্বাবয়ীকে পথভ্রষ্ট করেছেন (শিয়া মাজহাব শিক্ষা দানের মাধ্যমে)।
ইবনে মুঈন প্রায়ই আবদুর রাজ্জাকের যুক্তির মাধ্যমে প্রমাণ উপস্থাপন করতেন যদিও তিনি তাঁর সামনে স্বীকার করতেন যে,তিনি শিয়া।
আহমাদ ইবনে আবি খাইসামাহ বলেছেন,“
ইবনে মুঈনকে বলা হলো আহমাদ বলেন,উবাইদুল্লাহ্ ইবনে মূসার বর্ণিত হাদীসসমূহ গ্রহণযোগ্য নয় যেহেতু সে শিয়া।”
ইবনে মুঈন জবাব দিলেন,“
যে আল্লাহ্ ব্যতীত উপাস্য নেই তাঁর শপথ,আবদুর রাজ্জাক এ বিষয়ে উবাইদুল্লাহ্ হতে শতগুণ বাড়াবাড়ি করেন অথচ আমি আবদুর রাজ্জাক হতে যে পরিমাণ হাদীস শিক্ষা করেছি তা উবায়দুল্লাহ্ হতে শেখা হাদীসের কয়েকগুণ।”
আবু সালিহ মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল দ্বারারী বলেছেন,“
আমরা সানয়াতে আবদুর রাজ্জাকের নিকট ছিলাম। আমাদের বলা হলো : আহমাদ ইবনে মুঈন ও অন্যান্যরা শিয়া হবার কারণে আবদুর রাজ্জাক কর্তৃক বর্ণিত হাদীস গ্রহণ করেন না অথবা অপছন্দ করেন। এ খবর শুনে আমরা খুব মর্মাহত হলাম। মনে মনে ভাবলাম,আবদুর রাজ্জাকের নিকট হাদীস শিক্ষার জন্য এত পথ পাড়ি দিয়ে এত খরচ করে এত পরিশ্রম ও ক্লান্তি সহ্য করলাম,সবই অর্থহীন হয়ে গেল। অতঃপর হজ্বের মৌসুমে হাজীদের সঙ্গে মক্কার দিকে রওয়ানা হলাম। সেখানে ইয়াহিয়া ইবনে মুঈনের সঙ্গে দেখা হলে তাঁকে বিষয়টি সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তিনি বললেন : হে আবু সালিহ! যদি আবদুর রাজ্জাক ইসলাম থেকেও ফিরে যায় তবুও তাঁর হাদীসকে ত্যাগ করবো না।”
ইবনে আদী হতে যেমনটি আবদুর রাজ্জাক সম্পর্কে‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
-এ এসেছে,“
তিনি আহলে বাইতের প্রশংসায় এমন সব হাদীস বর্ণনা করেন যার সঙ্গে অন্য কেউ একমত নয়
ও আহলে বাইত বিরোধীদের এমন সব ত্রুটি ও বিচ্যুতির বিবরণ দিয়েছেন যা অন্য কেউ দেয় নি। তাঁকে শিয়া বলে অভিহিত করা হয়েছে।”
এতদ্সত্ত্বেও যখন আহমাদ ইবনে হাম্বলকে প্রশ্ন করা হলো : হাদীসের বিষয়ে আবদুর রাজ্জাক হতে উত্তম কাউকে দেখেছেন কি? তিনি জবাব দিলেন,“
না।”
ইবনে কাইসারানী তাঁর‘
আল জাম বাইনা রিজালিস সহিহাইন’
গ্রন্থে আবদুর রাজ্জাক সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল হতে বলেছেন,“
যখনই লোকেরা মুয়াম্মারের হাদীসের বিষয়ে সন্দেহে পড়ত তখন আবদুর রাজ্জাকের মতামতকে প্রধান্য দিত।”
মুখাল্লাদ শা’
য়িরী বলেন,“
আমি আবদুর রাজ্জাকের নিকট ছিলাম,কেউ একজন মুয়াবিয়ার প্রসঙ্গ আনলে আবদুর রাজ্জাক বললেন : আমাদের এ সভাকে আবু সুফিয়ানের পুত্রের স্মরণে নোংরা ও অপবিত্র করো না।”
যাইদ ইবনে মোবারক বলেছেন,“
আমরা আবদুর রাজ্জাকের নিকট অবস্থান করছিলাম,তিনি ইবনে হাদাসান হতে বর্ণিত হাদীসের আলোচনার এ পর্যায়ে পৌঁছলেন যে,হযরত উমর ইমাম আলী ও হযরত আব্বাসের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন : হে আব্বাস! তুমি এসেছ তোমার ভ্রাতুষ্পুত্রের মিরাসের দাবীতে আর এই ব্যক্তি আলী এসেছে তার স্ত্রীর উত্তরাধিকার পিতার সূত্র হতে নেয়ার জন্য। তখন আবদুর রাজ্জাক বললেন : এই ব্যক্তির অজ্ঞতাপূর্ণ আচরণকে লক্ষ্য কর,রাসূলের চাচাকে বলছে তিনি তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্রের মিরাস চান? আর তাঁর ভাই আলীকে বলছে তাঁর স্ত্রীর পিতার মিরাস চান। ঔদ্ধত্য কোথায় গিয়েছে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলতেও তার এতটা আপত্তি।”
এত কিছু আনা সত্ত্বেও আহলে সুন্নাহর প্রায় সকল আলেম ও হাদীসবিদ তাঁর হতে হাদীস গ্রহণ করেছেন ও জ্ঞান লাভের জন্য তাঁর শরণাপন্ন হয়েছেন। তাঁদের সকলেই তাঁর হাদীস হতে কোন ব্যতিক্রম ছাড়াই প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। এ কারণেই ইবনে খাল্লেকান তাঁর‘
ওয়াফায়াতুল আ’
য়ান’
গ্রন্থে আবদুর রাজ্জাকের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন,“
রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর পর আবদুর রাজ্জাক ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তির নিকট জ্ঞান ও হাদীস শিক্ষার জন্য মানুষের এত অধিক আগমন ঘটে নি।”
তিনি তাঁর এ গ্রন্থে আরো বলেছেন,“
তাঁর সমকালীন ইসলামী সমাজের প্রতিষ্ঠিত আলেমগণের মধ্যে যাঁরা তাঁর হাদীস নকল করেছেন তাঁদের মধ্যে সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা (আবদুর রাজ্জাক তাঁর হাদীসের শিক্ষাগুরু),আহমাদ ইবনে হাম্বল,ইয়াহিয়া ইবনে মুঈন ও অন্যান্যরাও রয়েছেন।”
আমার জানা মতে তাঁর বর্ণিত হাদীস সিহাহ সিত্তাহর সবক’
টিতে ও মুসনাদসমূহে (যে গ্রন্থসমূহে রেওয়ায়েতের সনদগুলো উল্লেখ করা হয়ে থাকে) পূর্ণ রয়েছে।
তিনি ১২৬ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন ও ২০ বছর বয়সে হাদীস ও ইসলামের অন্যান্য জ্ঞানে ব্যাপৃত হন। তিনি ২১১ হিজরীর শাওয়াল মাসে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ইমাম সাদিক (আ.)-এর সময়কালের ২২ বছর পেয়েছিলেন। তিনি ইমাম জাওয়াদ (আ.)-এর শাহাদাতের ৯ বছর পূর্বে ইন্তেকাল করেন। আল্লাহ্ আহলে বাইতের ইমামগণের সাথে তাঁকে পুনরুত্থিত করুন যাঁদের জন্য তিনি তাঁর সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছেন।
৫৪। আবদুল মালিক ইবনে আ’
য়ুন
আবদুল মালিকের ভ্রাতা যুরারাহ্,হামরান এবং বুকাইর ও সন্তানগণ (আবদুর রহমান,মালিক,মূসা,দ্বারিস ও উম্মুল আসওয়াদ) সকলেই পূর্ববর্তী শিয়াদের মধ্যে সৎ কর্মশীল ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তাঁরা শরীয়তের পাত্র পূর্ণ করার মত খেদমতের তৌফিক লাভ করেছিলেন এবং উত্তম ও নেক সন্তানের অধিকারী হয়েছিলেন। তাঁরা সকলেই তাঁদের পিতাদের মত ও পথকে ধারণ করেছিলেন।
যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে আবদুল মালিক সম্পর্কে বলেছেন,“
আবদুল মালিক ইবনে আ’
য়ুন আবু ওয়াইল ও অন্যান্যদের হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবু হাতেম বলেছেন,“
তিনি হাদীসের বিষয়ে গ্রহণযোগ্যতার পর্যায়ে রয়েছেন।”
ইবনে মুঈন বলেছেন,“
তাঁর কথা মূল্য ও গুরুত্বহীন।”
অন্য কেউ বলেছেন,“
সত্যবাদী কিন্তু রাফেযী।”
ইবনে উয়াইনা বলেছেন,‘
আবদুল মালিক আমাদের জন্য হাদীস বর্ণনা করতেন ও তিনি রাফেযী ছিলেন।”
আবু হাতেম বলেছেন,“
তিনি প্রকৃতই শিয়া ও তাঁর হাদীস গ্রহণযোগ্য।”
সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা ও সুফিয়ান সাওরী তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। অন্যদের মত তাঁর হাদীসকেও তাঁরা সমগুরুত্ব দিয়ে লিপিবদ্ধ করেছেন।
ইবনে কাইসারানী তাঁর‘
জাম বাইনা রিজালুস সহিহাইন’
গ্রন্থে তাঁর বিষয়ে বলেছেন,“
আবদুল মালিক ইবনে আ’
য়ুন হামরানের ভ্রাতা,কুফার অধিবাসী শিয়া।”
তিনি সহীহ বুখারীর তাওহীদের আলোচনার অধ্যায়ে আবু ওয়ায়েল হতে এবং সহীহ মুসলিমের ঈমানের আলোচনায় তাঁর সূত্রেই হাদীস বর্ণনা করেছেন। সহীহ বুখারী ও মুসলিমেও সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা তাঁর থেকে হাদীস নকল করেছেন।
তিনি ইমাম সাদিক (আ.)-এর সময় মৃত্যুবরণ করেন এবং তাঁর মৃত্যুর মুহূর্তে ইমাম সাদিক (আ.) তাঁর জন্য দোয়া করেন।
আবু জা’
ফর ইবনে বাবাওয়াইহ্ বর্ণনা করেছেন,ইমাম সাদিক (আ.) সাহাবীদের সঙ্গে নিয়ে মদীনায় তাঁর কবর যিয়ারত করেছেন। কি সৌভাগ্য তাঁর(طوبى له و حسن مآب)
!
৫৫। উবাইদুল্লাহ্ ইবনে মূসা আবাসী (কুফার অধিবাসী এবং বুখারীর শিক্ষক,তাঁর সহীহ গ্রন্থে)
ইবনে কুতাইবা তাঁর‘
মা’
আরিফ’
গ্রন্থে তাঁকে হাদীসবিদদের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন ও শিয়া হবার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। ঐ গ্রন্থের‘
আল ফিরাক’
অধ্যায়ে কতিপয় শিয়া রিজালের নামের তালিকায় তাঁর নাম এনেছেন।
ইবনে সা’
দ তাঁর‘
তাবাকাত’
গ্রন্থের ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে তাঁর পরিচিতি পর্বে তাঁকে শিয়া বলে অভিহিত করে বলেছেন,“
তিনি শিয়া মাজহাব সত্য হবার বিষয়ে কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। এ কারণেই সাধারণ জনগণের অনেকেই তাঁর হাদীস গ্রহণ করত না। তিনি কোরআনের প্রতি বিশেষভাবে দুর্বল ছিলেন এবং সর্বক্ষণ কোরআন তেলাওয়াত করতেন ও এ থেকে লাভবান হতেন।”
ইবনে মাসউদ তাঁর‘
কামিল’
গ্রন্থের ৬ষ্ঠ অধ্যায়ের ১ ও ৯ পৃষ্ঠায় তাঁর মৃত্যুসন ২১৩ হিজরী বলেছেন ও আরো বলেছেন,“
উবাইদুল্লাহ্ ইবনে মূসা আবাসী একজন শিয়া ফকীহ্ ও বুখারীর শিক্ষক ছিলেন এবং বুখারীকে তিনি তাঁর হাদীস নকল করার অনুমতি দিয়েছিলেন।”
যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে তাঁর সম্পর্কে বলেছেন,“
উবাইদুল্লাহ্ ইবনে মূসা কুফার অধিবাসী ও বুখারীর শিক্ষক। তিনি স্বভাবগতভাবেই সত্যবাদী,বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য কিন্তু শিয়া মতাবলম্বী ও আহলে সুন্নাহর পথ হতে বিচ্যুত।”
আবু হাতেম ও ইবনে মুঈন তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলে অভিহিত করেছেন। যাহাবী আরো বলেন,“
আবু হাতেম হতে বলেছেন : আবু নাঈম তাঁর থেকে বিশ্বস্ত এবং উবাইদুল্লাহ্ ইসরাঈল হতে অধিক নির্ভরযোগ্য। কারণ ইসরাঈল উবাইদুল্লাহর নিকট কোরআন শিক্ষা করতেন।”
আহমাদ ইবনে আবদুল্লাহ্ আজালী বলেন,“
উবাইদুল্লাহ্ ইবনে মূসা কোরআনের জ্ঞানে জ্ঞানী ব্যক্তি ও এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের একজন। তাঁকে কখনো মাথা উদ্ধত করতে দেখি নি বা হাসতেও দেখি নি।”
আবু দাউদ বলেছেন,“
উবাইদুল্লাহ্ আবাসী আহলে সুন্নাহ্ হতে বিচ্যুত শিয়া মতাবলম্বী।”
যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে মাতার ইবনে মাইমুনের পরিচিতি পর্বে তাঁর সম্পর্কে বলেছেন,“
উবাইদুল্লাহ্ একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি এবং তিনি শিয়া মতাবলম্বী। ইবনে মুঈন উবাইদুল্লাহ্ ইবনে মূসা ও আবদুর রাজ্জাক হতে হাদীস শিক্ষা করেছেন যদিও জানতেন তাঁরা দু’
জন শিয়া।”
যাহাবী তাঁর মিযানে আবদুর রাজ্জাকের পরিচয় দিতে গিয়ে আহমাদ ইবনে আবি খাইসামাহ্ হতে বর্ণনা করেছেন,“
ইবনে মুঈনকে প্রশ্ন করা হলো : আহমাদ বলেন,শিয়া হবার কারণে উবাইদুল্লাহ্ ইবনে মূসার হাদীস অগ্রহণযোগ্য। ইবনে মুঈন বললেন : যে আল্লাহ্ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই তাঁর শপথ,আবদুর রাজ্জাক শিয়া বিষয়ে উবাইদুল্লাহ্ হতে কয়েকশ’
গুণ অধিক বাড়াবাড়ি করেন অথচ আমি তাঁর হতে উবাইদুল্লাহ্ অপেক্ষা কয়েকগুণ বেশী হাদীস শিক্ষা লাভ করেছি।”
আমার জানা মতে আহলে সুন্নাহ্ ও অন্যান্যরা তাঁদের সহীহ হাদীস গ্রন্থে উবাইদুল্লাহর হাদীস থেকে প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। আপনি এজন্য শাইবান ইবনে আবদুর রহমান হতে তাঁর বর্ণিত হাদীসসমূহ যা সহীহ বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে তা দেখতে পারেন। আ’
মাশ,হিশাম ইবনে উরওয়া এবং ইসমাঈল ইবনে আবি খালিদ হতে তাঁর বর্ণিত হাদীস বুখারী শরীফে রয়েছে।
যে সকল হাদীস তিনি ইসরাঈল,হাসান ইবনে সালিহ ও উসামা ইবনে যাইদ হতে বর্ণনা করেছেন তা সহীহ মুসলিমে রয়েছে। বুখারী তাঁর হতে সরাসরি ও ইসহাক ইবনে ইবরাহীম,আবু বকর ইবনে আবি শাইবা,আহমাদ ইবনে ইসহাক বুখারী,মাহমুদ ইবনে গাইলান,আহমাদ ইবনে আবি সারিজ,মুহাম্মদ ইবনে হাসান ইবনে আশকাব,মুহাম্মদ ইবনে খালিদ যাহলী এবং ইউসুফ ইবনে মূসা কাত্তান সূত্রে তাঁর হতে হাদীস নকল করেছেন।
মুসলিম হাজ্জাজ ইবনে শাঈর,কাসিম ইবনে যাকারিয়া,আবদুল্লাহ্ ইবনে দারেমী,ইসহাক ইবনে মানসুর,ইবনে আবি শাইবা,আবদ ইবনে হামিদ,ইবরাহীম ইবনে দিনার এবং ইবনে নুমাইরের সূত্রে তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে বলেছেন,“
তিনি ২১৩ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। তিনি দুনিয়াবিমুখ,ইবাদতকারী ও হাদীসের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত ছিলেন।”
তিনি জিলক্বদ মাসে মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহ্ তাঁর কবরে পবিত্রতা ছড়িয়ে দিন ও তাঁকে তাঁর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দিন।
৫৬। উসমান ইবনে উমাইর সাকাফী (তিনি কুফা ও বাজালীর অধিবাসী)
তাঁর কুনিয়াত আবু ইয়াকজান। তাছাড়া তিনি‘
উসমান ইবনে আবি জারআ’
,‘
উসমান ইবনে কাইস’
এবং‘
উসমান ইবনে আবি হামিদ’
নামেও পরিচিত।
আবু আহমাদ যুবাইরী বলেছেন,‘
তিনি রাজাআ’
ত বা আহলে বাইতের ইমামদের পুনরুজ্জীবিত হওয়ায় বিশ্বাসী ছিলেন।”
আহমাদ ইবনে হাম্বল বলেছেন,“
আবুল ইয়াকজান বনি আব্বাসের বিরুদ্ধে ইবরাহীম ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে হাসানের বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেছেন।”
ইবনে আদী বলেছেন,“
তাঁর মাজহাব গ্রহণযোগ্য নয়। যদিও তিনি হাদীস বর্ণনায় দুর্বল ও রাজাআ’
তে বিশ্বাসী ছিলেন,তদুপরি হাদীসবিদগণ তাঁর হাদীস গ্রহণ করতেন।”
এখানে আমি একটি বিষয় উল্লেখ করতে চাই তা হলো,যখনই এ সকল ব্যক্তিবর্গ কোন শিয়া মুহাদ্দিসের ত্রুটি অন্বেষণে লিপ্ত হন ও তাঁদের মান-মর্যাদার হানি ঘটাতে চান,রাজাআ’
তের বিষয়ে তাঁদের বিশ্বাসকে সামনে টেনে আনেন। এর ভিত্তিতেই তাঁরা উসমান ইবনে উমাইরকে দুর্বল বলেছেন যখন মুঈন বলেছেন,“
তাঁর হাদীসের কোন মূল্য নেই।”
এতদ্সত্ত্বেও আ’
মাশ,সুফিয়ান,শো’
বা,শারিক ও এদের মত অনেকেই তাঁর নিকট হতে হাদীস শিক্ষা করেছেন।
আবু দাউদ,তিরমিযীসহ অন্যান্য হাদীসবিদগণ তাঁর হাদীস হতে প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। এজন্য আনাস ইবনে মালিক হতে তাঁর বর্ণিত হাদীস দেখতে পারেন।
এ বিষয়গুলো যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এবং তাঁর নামের পাশে(د,ت,ق)
লিখেছেন এটি বুঝানোর জন্য যে,সুনান লেখকগণ তাঁর হাদীস নকল করেছেন।
৫৭। আদী ইবনে সাবিত,কুফী
ইবনে মুঈন বলেন,“
তিনি শিয়া এবং এ বিষয়ে চূড়ান্ত রকম বাড়াবাড়ি করতেন।”
দারে কুতনী বলেন,“
তিনি রাফেযী এবং এক্ষেত্রে বাড়াবাড়িকারী। কিন্তু হাদীসের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য।”
জাওযাজানী বলেন,“
তিনি আহলে সুন্নাহর পথ হতে বিচ্যুত।”
মাসউদী বলেন,“
শিয়া বিশ্বাস এবং হাদীসের বিষয়ে এরূপ দৃঢ় বিশ্বাসী অন্য কাউকে আমি দেখি নি।”
যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে বলেছেন,“
তিনি শিয়া আলেম ও সত্যপরায়ণ,তাঁদের মসজিদের ইমাম ও কাজী (বিচারক)। যদি সকল শিয়াই তাঁর মত হত তবে তাদের মন্দ বিষয়সমূহ দূরীভূত হয়ে যেত।”
অতঃপর বিভিন্ন হাদীসবেত্তা হতে উপরোক্ত উদ্ধৃতিসমূহ যা আমরা বলেছি তা এনেছেন।
তিনি আরো বলেছেন,“
দারে কুতনী,আহমাদ ইবনে হাম্বল,আহমাদ আজালী এবং নাসায়ী তাঁকে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত বলেছেন।”
তিনি তাঁর নামের পাশে সিহাহ সিত্তাহর সংকেত লিখেছেন তাঁর হাদীস বর্ণনার বিষয়টি তাঁদের নিকট গ্রহণযোগ্য হবার কারণে।
এজন্য আপনি সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বাররা ইবনে আযেব,তার মাতামহ আবদুল্লাহ্ ইবনে ইয়াযীদ,আবদুল্লাহ্ ইবনে আবি আউফী,সুলাইমান ইবনে সারুদ এবং সাঈদ ইবনে জুবাইর হতে তাঁর বর্ণিত হাদীস দেখতে পারেন।
কিন্তু যার ইবনে হাবিশ এবং আবু হাজিম আশজায়ী হতে তাঁর বর্ণিত হাদীসসমূহ শুধু মুসলিম শরীফে রয়েছে। তাছাড়া আ’
মাশ,মাসআর (বা মুসা’
আর),সাঈদ,ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ আনসারী,যাইদ ইবনে আবি আনিসা এবং ফুজাইল ইবনে গাজওয়ান তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৫৮। আতীয়াহ্ ইবনে সা’
দ ইবনে জুনাদাহ্ আওফী,আবুল হাসান কুফী (প্রসিদ্ধ তাবেয়ী)
যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে সালিম মুরাদী হতে বর্ণনা করেছেন,“
আতীয়াহ্ শিয়া মতবাদে বিশ্বাসী।”
ইবনে কুতাইবা তাঁর‘
মা’
আরিফ’
গ্রন্থে তাঁর প্রপৌত্র হুসাইন ইবনে হাসান ইবনে আতীয়াহর পরিচিতি পর্বে তাঁর সম্পর্কে বলেছেন,“
আতীয়াহ্ ইবনে সা’
দ হাজ্জাজের শাসনামলে একজন বড় ফকীহ্ আলেম ছিলেন এবং শিয়া আকীদা পোষণ করতেন।”
তিনি তাঁর গ্রন্থের‘
ফিরাক’
অধ্যায়ে শিয়া রিজালদের নামের তালিকায় তাঁর নাম এনেছেন।
ইবনে সা’
দ তাঁর‘
তাবাকাত’
গ্রন্থের ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে তাঁকে যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তাতে বোঝা যায় তিনি শিয়া মতে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর পিতা সা’
দ ইবনে জুনাদাহ্ ইমাম আলী (আ.)-এর সাহাবী ও অনুচর ছিলেন। হযরত আলী (আ.) যখন কুফায় ছিলেন একদিন সা’
দ এসে বললেন,“
আমীরুল মুমিনীন! আমার এক পুত্রসন্তান জন্মেছে,তার জন্য নাম মনোনীত করুন।”
ইমাম বললেন,هذا عطية الله
“
এটি আল্লাহর দান।”
তাই তাঁর নাম রাখা হয় আতীয়াহ্।
ইবনে সা’
দ তাঁর‘
তাবাকাত’
গ্রন্থে বলেছেন,“
আতীয়াহ্ তাঁর পুত্র আশআসসহ হাজ্জাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন এবং ইবনে আশআসের বাহিনী পরাস্ত হলে তিনি পারস্য পালিয়ে যান,হাজ্জাজ পারস্যে তার প্রতিনিধি মুহাম্মদ ইবনে কাসিমকে লিখে পাঠায় : আতীয়াহকে গ্রেফতার করে আলী ইবনে আবি তালিবের ওপর লা’
নত করতে বলো। যদি সে তা না করে তবে তাকে চরম বেত্রাঘাত করে তার শ্মশ্রু মুণ্ডন করে দেবে। মুহাম্মদ তাঁকে এনে উপরোক্ত কাজে রাজী করাতে ব্যর্থ হয়ে চারশ বেত্রাঘাত করে ও তাঁর শ্মশ্রু মুণ্ডন করে দেয়।
যখন কুতাইবা খোরাসানের গভর্ণর হলেন তখন আতীয়াহ্ তাঁর নিকট গেলেন এবং উমর ইবনে হুবাইরা ইরাকের শাসক হলে তাঁর নিকট পত্র লিখে ইরাকে প্রত্যাবর্তনের অনুমতি চাইলে তিনি তাঁকে অনুমতি দেন এবং ১১১ হিজরীতে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি কুফায় ছিলেন।
ইবনে সা’
দ বলেন,“
তিনি একজন বিশ্বস্ত রাবী এবং অনেক সুন্দর হাদীস তাঁর থেকে বর্ণিত হয়েছে।”
তাঁর কয়েকজন প্রপৌত্র ছিল,তাঁরা সকলেই আহলে বাইতের অনুসারী ছিলেন। তাঁদের মধ্যে বিশেষ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন,জ্ঞানী ও আলেম ব্যক্তির সমাবেশ ঘটেছিল,যেমন হুসাইন ইবনে হাসান ইবনে আতীয়াহ্,যিনি হাফস ইবনে গিয়াসের পরে মিশরের কাজী হন। অতঃপর তিনি মাহ্দীর সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ২০১ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। অনুরূপ মুহাম্মদ ইবনে সা’
দ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে হাসান আতীয়াহ্ বাগদাদের কাজী ছিলেন ও মুহাদ্দিস হিসেবে তাঁর পিতা সা’
দ এবং চাচা হুসাইন ইবনে হাসান ইবনে আতীয়াহ্ হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
আতীয়াহ্ আউফীর হাদীস হতে আবু দাউদ ও তিরমিযী প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। এ দুই সহীহ গ্রন্থে তিনি ইবনে আব্বাস,আবু সাঈদ খুদরী ও ইবনে উমর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি তাঁর পিতা ও দাদার সূত্রে বেহেশতের নারীদের নেত্রী হযরত ফাতিমা (আ.) হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর হতে যাঁরা হাদীস বর্ণনা করেছেন তাঁরা হলেন তাঁর পুত্র হাসান ইবনে আতীয়াহ্,হাজ্জাজ ইবনে আরতাত,মাসআর,হাসান ইবনে আদাওয়ান ও অন্যান্যরা।
৫৯। আলা ইবনে সালেহ তায়িমী (কুফার অধিবাসী)
‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে তাঁর পরিচিতি পর্বে আবু হাতেম হতে বর্ণনা করা হয়েছে যে,তিনি একজন প্রকৃতই শিয়া।
আমার জানা মতে এতদ্সত্ত্বেও আবু দাউদ ও তিরমিযী তাঁর থেকে বর্ণিত হাদীস হতে দলিল উপস্থাপন করেছেন। ইবনে মুঈন তাঁকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন।
আবু হাতেম ও আবু জারআ বলেছেন,“
তাঁর হাদীস অনুসরণে কোন সমস্যা নেই।”
আপনি ইয়াযীদ ইবনে আবি মরিয়ম ও হাকাম ইবনে উতাইবা হতে তাঁর বর্ণিত হাদীস সহীহ তিরমিযী,আবু দাউদ এবং আহলে সুন্নাহর অন্যান্য হাদীসগ্রন্থে দেখতে পারেন।
আবু নাঈম,ইয়াহিয়া ইবনে বুকাইর ও তাঁদের সমপর্যায়ের অনেকেই তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
আলা ইবনে সালিহ আলা ইবনে আবিল আব্বাস নন। কারণ আলা ইবনে আবিল আব্বাস সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা ও সুফিয়ান সাওরীর শিক্ষক ও মাশায়িখ (তাঁর থেকে তাঁরা হাদীস বর্ণনার অনুমতিপ্রাপ্ত হয়েছিলেন) এবং তিনি আবু তুফাইল হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। সুতরাং তিনি আলা ইবনে সালিহের বেশ কিছুদিন পূর্বের। তাছাড়া তিনি আলা ইবনে সালিহের (কুফার অধিবাসী) বিপরীতে মক্কার কবি ছিলেন।
যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে দু’
জনকেই স্মরণ করেছেন এবং উভয়কে শিয়া রিজালের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। কবি আলার আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর প্রশংসায় বেশ কিছু কবিতা রয়েছে যা সত্যানুসন্ধানীদের জন্য সত্য পথ পাবার অকাট্য প্রমাণ। তাছাড়া ইমাম হুসাইনের উদ্দেশ্যে তাঁর মর্সিয়াগুলো হৃদয়বিদারক। নবী করিম (সা.) ও মুমিনদের নিকট তিনি এ কারণে ধন্যবাদার্হ। আল্লাহ্ তাঁর ওপর সন্তুষ্ট।
৬০। আলকামা ইবনে কাইস ইবনে আবদুল্লাহ্ নাখয়ী,আবু শাবাল (ইয়াযীদের পুত্র আসওয়াদ ও ইবরাহীমের চাচা)
তিনি আহলে বাইতের প্রতি তীব্র ভালবাসা পোষণকারীদের অন্যতম। শাহরেস্তানী তাঁর‘
আল মিলাল ওয়ান নিহাল’
-এ তাঁকে শিয়া রিজালের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। তিনি শীর্ষস্থানীয় মুহাদ্দিসদের
অন্তর্ভুক্ত যাঁর সম্পর্কে আবু ইসহাক জাওযাজানী বলেছেন,“
কুফার কিছু সংখ্যক লোক তাঁদের আকীদা ও মাজহাবের কারণে পছন্দ করত না,তাঁরা কুফার মুহাদ্দিসদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়।”
আলকামা ও তাঁর ভ্রাতা উবাই আলী (আ.)-এর অনুচরদের মধ্যে পরিগণিত এবং সিফ্ফিনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। উবাই এ যুদ্ধে শহীদ হন এবং তাঁকে অত্যধিক নামাযী হবার কারণে‘
আবিস্ সালাত’
অর্থাৎ নামাযের পিতা বলা হতো।
আলকামা অবশ্য জামালের যুদ্ধ,সিফ্ফিনের যুদ্ধ ও নাহরাওয়ানের যুদ্ধে বায়াতভঙ্গকারী,বিদ্রোহী এবং যারা দীন থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল তাদের রক্তে নিজের তরবারীকে সিক্ত করেছিলেন। তাঁর পা ঐ যুদ্ধে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। সুতরাং তিনি আল্লাহর পথে যুদ্ধকারীদের মধ্যে গণ্য এবং মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত মুয়াবিয়ার সঙ্গে তাঁর শত্রুতা ছিল।
মুয়াবিয়া তার শাসনামলে যে সকল ব্যক্তিকে তার সম্মুখে উপস্থিত হবার নির্দেশ দেয় আলকামা তাদের অন্যতম। মুয়াবিয়ার প্রতিনিধি আবু বারদাহকে আলকামা বলেন,“
আমাকে এর থেকে বাদ দাও,আমাকে ত্যাগ কর।”
ইবনে সা’
দ তাঁর‘
তাবাকাত’
গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৫৭ পৃষ্ঠায় আলকামার অবস্থা সম্পর্কে এ বিষয়টি উল্লেখ করেন। আহলে সুন্নাহর হাদীসবিদদের নিকট তাঁর শিয়া হবার বিষয়টি পূর্ণ অবগতির পরেও তিনি মর্যাদা ও ন্যায়পরায়ণতার আলোয় উজ্জ্বল। সিহাহ সিত্তাহ্ ও অন্যান্য হাদীস লেখকগণ তাঁর হাদীস দলিল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। আপনি ইবনে মাসউদ,আবু দারদা ও হযরত আয়েশা হতে তাঁর সূত্রে বর্ণিত হাদীস সহীহ বুখারী ও মুসলিমে দেখতে পারেন। এছাড়া সহীহ মুসলিমে তিনি হযরত উসমান এবং ইবনে মাসউদ হতে কিছু হাদীস বর্ণনা করেছেন।
তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র ইবরাহীম নাখয়ী তাঁর সূত্রে যেসকল হাদীস বর্ণনা করেছেন তাও সহীহ বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে। আবদুর রহমান ইবনে ইয়াযীদ,ইবরাহীম ইবনে ইয়াযীদ ও শা’
বী তাঁর সূত্রে যে হাদীস বর্ণনা করেছেন তা সহীহ মুসলিমে বিদ্যমান। তিনি ৬২ হিজরীতে কুফায় মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহ্ তাঁকে রহম করুন।
৬১। আলী ইবনে বাদিমা
যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে আহমাদ ইবনে হাম্বল হতে তাঁর সম্পর্কে বলেছেন,“
তাঁর বর্ণিত হাদীস নির্ভরযোগ্য ও দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য। তিনি শিয়াদের মধ্যে নেতৃস্থানীয়।”
যাহাবী ইবনে মুঈন সূত্রে বলেছেন,“
তিনি হাদীস বর্ণনায় বিশ্বস্ত ও ইকরামা এবং অন্যান্যদের হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।”
শো’
বা ও মুয়াম্মার তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি তাঁর নামের পাশে যে সংকেত লিখেছেন তার অর্থ আহলে সুন্নাহর হাদীসবিদগণ তাঁর হাদীস বর্ণনা ও নকল করেছেন।
৬২। আলী ইবনে জা’
দ,আবুল হাসান জওহারী বাগদাদী (বনি হাশিমের ক্রীতদাস)
তিনি বুখারীর অন্যতম শিক্ষক। ইবনে কুতাইবা তাঁর‘
মা’
আরিফ’
গ্রন্থে তাঁকে শিয়া রিজালের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন।‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে যাহাবী তাঁর সম্পর্কে বলেছেন,“
তিনি ষাট বছর পালাক্রমে একদিন রোযা রাখতেন ও একদিন খেতেন।”
ইবনে কাইসারানী তাঁর‘
জাম বাইনা সহিহাইন’
গ্রন্থে বলেছেন,“
বুখারী তাঁর হতে ১২টি হাদীস নকল করেছেন।”
তিনি ২০৩ হিজরীতে ৯৬ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।
৬৩। আলী ইবনে যাইদ ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে যুহাইর ইবনে আবি মালিকা ইবনে জাফআন,আবুল হাসান কুরশী তায়িমী (বসরার অধিবাসী)
আহমাদ আজালী তাঁর সম্পর্কে বলেছেন,“
তিনি শিয়া মাজহাবের অনুসারী।”
ইয়াযীদ ইবনে জারিগ বলেছেন,“
আলী ইবনে যাইদ রাফেযী।”
এতদ্সত্ত্বেও তাবেয়ীদের মধ্যে অনেকেই যেমন শো’
বা,আবদুল ওয়ারিস ও তাঁদের সমপর্যায়ের অন্যান্যরা তাঁর থেকে হাদীস শিক্ষা করেছেন।
তিনি বসরার শ্রেষ্ঠ তিন ফকীহর একজন। ক্বাতাদাহ্,আলী ইবনে যাইদ এবং আশআস হাদানী তিনজনই অন্ধ ছিলেন। হাসান বসরীর মৃত্যুর পর আলী ইবনে যাইদকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হবার জন্য বলা হয়,কারণ তাঁর মান-মর্যাদা ও জ্ঞানের বদৌলতে তাঁর সঙ্গে কেবল নামকরা ও সর্বপরিচিত ব্যক্তিবর্গই ওঠাবসা করতেন। এরূপ সম্মান কোন শিয়ার জন্য বসরাতে বিরল।
উপরোক্ত বিষয়গুলো যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। কাইসারানী তাঁর‘
জাম বাইনা রিজালুস সহিহাইন’
গ্রন্থে বলেছেন,“
মুসলিম সাবিত বানানীর সঙ্গে তাঁর রেওয়ায়েত নকল করেছেন। তিনি জিহাদ সম্পর্কে আনাস ইবনে মালিক হতে হাদীস শুনেছেন।”
তিনি ১৩১ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন।
৬৪। হাসান ইবনে সালিহের ভ্রাতা আলী ইবনে সালিহ
হাসান ইবনে সালিহের পরিচিতি পর্বে তাঁর ভাই আলী ইবনে সালিহ সম্পর্কেও বলেছি। তিনি তাঁর ভ্রাতার মতই প্রাচীন শিয়াদের মধ্যে জ্ঞানী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত। মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থে তাঁর হাদীস প্রমাণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন।
আলী ইবনে সালিহ সালামা ইবনে কুহাইল হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। ওয়াকী আলী ইবনে সালিহ হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি তাঁর জমজ ভ্রাতা হাসানের সঙ্গে ১০০ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন ও তাঁর ভ্রাতার পূর্বেই ১৫১ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
৬৫। আলী ইবনে গুরাব আবু ইয়াহিয়া ফাযারী (কুফার অধিবাসী)
ইবনে হাইয়ান বলেছেন,“
তিনি শিয়া বিষয়ে বাড়াবাড়ি করতেন।”
এজন্যই জাওযাজানী বলেছেন,“
তাঁর কথা গ্রহণযোগ্য নয় ও তিনি নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি নন।”
আবু দাউদ বলেছেন,“
তাঁর হাদীস ত্যাগ করা হয়েছে।”
কিন্তু দারে কুতনী ও ইবনে মুঈন তাঁকে বিশ্বস্ত বলেছেন। আবু হাতেমের মতে তাঁর হাদীস গ্রহণে অসুবিধা নেই।
আবু জারআ বলেছেন,“
তিনি সত্যবাদী।”
আহমাদ ইবনে হাম্বল বলেছেন,“
আমি তাঁকে সত্যপরায়ণ পেয়েছি।”
ইবনে মুঈনও তাঁকে সত্যবাদী বলেছেন।
বিভিন্ন হাদীস বিশেষজ্ঞের উপরোক্ত মতামতগুলোকে যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে আবু ইয়াহিয়াকে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন। তিনি তাঁর নামের পাশে সাংকেতিকভাবে(س, ق)
লিখেছেন কারণ সুনানের লেখকগণ তাঁর হাদীসসমূহ প্রমাণ উপস্থাপনে ব্যবহার করেছেন। তিনি হিশাম ইবনে উরওয়া ও উবাইদুল্লাহ্ ইবনে উমর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইবনে সা’
দ তাঁর‘
তাবাকাত’
গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ২৭৩ পৃষ্ঠায় বলেছেন,“
উসমান সম্পর্কে আ’
মাশের হাদীস ইসমাঈল ইবনে রাজা তাঁর সূত্রেই বর্ণনা করেছেন।”
তিনি ১৮৪ হিজরীতে খলীফা হারুন উর রশীদের শাসনামলে কুফায় মৃত্যুবরণ করেন।
৬৬। আলী ইবনে কাদিম কুফী (আবুল হাসান খুযায়ী)
তিনি আহমাদ ইবনে ফোরাতের শিক্ষক। আহমাদ ইবনে ফোরাত,ইয়াকুব ফাসায়ী ও তাঁদের পর্যায়ের অনেকেই তাঁর হতে হাদীস শিক্ষা করেছেন এবং তাঁর হাদীস দলিল হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
ইবনে সা’
দ তাঁর‘
তাবাকাত’
গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডে ২৮২ পৃষ্ঠায় স্বীকার করেছেন যে,তিনি কট্টর ধরনের শিয়া ছিলেন। এ কারণেই ইয়াহিয়া তাঁকে দুর্বল বলেছেন। কিন্তু আবু হাতেম তাঁকে সত্যবাদী বলেছেন।
বিভিন্ন হাদীসবিদদের তাঁর সর্ম্পকিত উপরোক্ত মন্তব্যগুলো যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তিনি তাঁর নামের পাশে সাংকেতিকভাবে আবু দাউদ ও তিরমিযী লিখেছেন এটি বোঝানোর জন্য যে,তাঁরা তাঁর হাদীস নকল করেছেন। তাঁরা সাঈদ ইবনে আবু উরুরা এবং কাতার হতে আবু হাসান খুযায়ীর হাদীস বর্ণনা করেছেন।
তিনি খলীফা মামুনের শাসনামলে ২১৩ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহ্ তাঁকে রহম করুন।
৬৭। আলী ইবনে মুনযির তারায়েফী
তিরমিয়ী,নাসায়ী,ইবনে সায়েদ,আবদুর রহমান ইবনে আবি হাতেম এবং তাঁদের সমকালীন অনেকেই তাঁর ছাত্র। তাঁরা তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা ও দলিল হিসেবে তাঁর কথা পেশ করেছেন।
যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে তাঁর নামের পাশে(ت س ف)
লিখেছেন কারণ সুনানের লেখকগণ তাঁর হাদীস দলিল হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
তিনি নাসায়ী সূত্রে বলেছেন,“
আলী ইবনে মুনযির প্রকৃত শিয়া এবং বিশ্বস্ত। তাঁর ওপর নির্ভর করা যায়।”
ইবনে আবি হাতেম বলেছেন,“
তিনি সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত।”
তিনি ইবনে ফুযাইল,ইবনে উয়াইনা ও ওয়ালিদ ইবনে মুসলিম হাদীস বর্ণনা বরেছেন। সুতরাং নাসায়ী তাঁর শিয়া হবার বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তদুপরি তাঁর সহীহতে তাঁর হাদীস ব্যবহার করেছেন। কুৎসা রটনাকারীদের এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।
ইবনে মুনযির ২৫৬ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহ্ তাঁকে রহম করুন।
৬৮। আলী ইবনে হাশিম ইবনে বুরাইদ খায্যাজ আয়েযী (আবুল হাসান কুফী)
ইমাম আহমাদের শিক্ষক ও মাশায়িখ
। আবু দাউদ বলেছেন,“
তিনি শিয়া,তবে বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য।”
ইবনে হাইয়ান বলেছেন,“
আলী ইবনে হাশিম শিয়া মতবাদে বাড়াবাড়ি করতেন।”
জা’
ফর ইবনে আবান বলেছেন,“
ইবনে নুমাইরকে বলতে শুনেছি,আলী ইবনে হাশিম শিয়া ও এ বিষয়ে কট্টর।”
বুখারী বলেছেন,“
আলী ইবনে হাশিম ও তাঁর পিতা বাড়াবাড়ি রকমভাবে শিয়া মাজহাবের পক্ষপাতিত্ব করতেন।”
আমার মতে এ কারণেই বুখারী তাঁর হাদীস পরিত্যাগ করেছেন। তবে সিহাহ সিত্তাহর বাকী পাঁচজন হাদীসলেখক তাঁর হাদীস দলিল হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
ইবনে মুঈন ও অন্যান্যরা তাঁকে বিশ্বস্ত বলেছেন। আবু দাউদ তাঁকে নির্ভরযোগ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আবু জারআ বলেছেন,“
তিনি সত্যবাদী।”
নাসায়ী বলেছেন,“
তিনি ত্রুটিমুক্ত ও তাঁর হাদীসের ওপর আমল করা যায়।”
উপরোক্ত মন্তব্যগুলো যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে এনেছেন।
খাতীব বাগদাদী তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে আলী ইবনে হাশিম সম্পর্কে মুহাম্মদ ইবনে সুলাইমান বাগানদী সূত্রে বলেছেন,“
আলী ইবনে মাদিনী বলেন : আলী ইবনে হাশিম ইবনে বুরাইদ শিয়া ও সত্যপরায়ণ।”
তিনি আরো বলেছেন,“
মুহাম্মদ ইবনে আলী আজুরী আবু দাউদকে আলী ইবনে হাশিম সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন : তাঁর সম্পর্কে ঈসা ইবনে ইউনুসকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম,তিনি তাঁর জবাবে বললেন : তিনি শিয়া পরিবারের সদস্য ও তাঁদের মধ্যে মিথ্যার কোন বালাই নেই।”
খাতীব ইবরাহীম ইবনে জাওযাজানীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন,“
হাশিম ইবনে বুরাইদ ও তাঁর পুত্র আলী ইবনে হাশিম তাঁদের মাজহাবের বিষয়ে বাড়াবাড়ি করতেন।”
তদুপরি সিহাহ সিত্তাহর পাঁচজন তাঁর হাদীস প্রমাণ উপস্থাপনে ব্যবহার করতেন। আপনি সহীহ মুসলিমের‘
নিকাহ্’
অধ্যায় ও অনুমতি বিষয়ক আলোচনা পর্যায়ক্রমে হিশাম ইবনে উরওয়া এবং তালহা ইবনে ইয়াহিয়া হতে তাঁর বর্ণিত হাদীস দেখতে পারেন।
তাছাড়া সহীহ মুসলিমে আবু মুয়াম্মার,ইসমাঈল ইবনে ইবরাহীম ও আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর ইবনে আবান তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
তিনি আহমাদ ইবনে হাম্বল,আবু শাইবার পুত্রগণ এবং তাঁদের সমপর্যায়ের অনেকেরই উস্তাদ ছিলেন এবং তাঁরা তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। যাহাবী বলেছেন,“
আহমাদের শিক্ষকদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম ইন্তেকাল করেন।”
১৮১ হিজরীতে তাঁর মৃত্যু হয়।
৬৯। আম্মার ইবনে যারীক (কুফী)
যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে তাঁর সম্পর্কে সুলায়মানীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন,“
তিনি রাফেযী।”
রাফেযী হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম,আবু দাউদ এবং নাসায়ী তাঁর হাদীস দলিল হিসাবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি আ’
মাশ,আবু ইসহাক সারিয়ী,মানসুর এবং আবদুল্লাহ্ ইবনে ঈসা হতে যে সকল হাদীস বর্ণনা করেছেন তা সহীহ মুসলিমে রয়েছে। এ হাদীসগ্রন্থে আবুল জাওয়াব,আবুল আহ্ওয়াছ,সালাম ইবনে আহমাদ জুবাইরী এবং ইয়াহিয়া ইবনে আদম তাঁর সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৭০। আম্মার ইবনে মুয়াবিয়া অথবা ইবনে আবি মুয়াবিয়া (তাঁকে ইবনে খাব্বাব এবং কখনো কখনো ইবনে সালিহ দুহনী বাজালী কুফীও বলা হয়েছে)
তাঁর বংশীয় নাম আবু মুয়াবিয়া। তিনি শিয়াদের প্রসিদ্ধ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত। আহলে বাইতের প্রেম ও ভালবাসার কারণে তাঁকে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে,এমন কি এ কারণে বুশর ইবনে মারওয়ান তাঁর পা কর্তন করে। তিনি সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা,সুফিয়ান সাওরী,শো’
বা,শারিক এবং আবাবের শিক্ষক ছিলেন। তাঁরা তাঁর হতে হাদীস শিক্ষা করেছেন ও তাঁর হাদীস প্রমাণ উপস্থাপনে ব্যবহার করেছেন।
আহমাদ,ইবনে মুঈন,আবু হাতেম ও অন্যান্যরা তাঁকে বিশ্বস্ত বলেছেন। মুসলিম এবং সুনানে আরবাআহতে তাঁর হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
যাহাবী তাঁর মিযান গ্রন্থে উপরোক্ত মন্তব্যসমূহ এনেছেন। দুই স্থানে তাঁর পরিচিতি বর্ণনা করে তাঁর শিয়া ও বিশ্বস্ত হবার বিষয়টি সত্যায়ন করেছেন। তিনি সুষ্পষ্টরূপে বলেছেন,“
আকিল ব্যতীত অন্য কেউই তাঁর বিষয়ে কিছু বলেন নি ও শিয়া হওয়া ব্যতীত অন্য কোন ত্রুটির কথা কেউ উল্লেখ করেন নি।”
হজ্ব সম্পর্কে আবু যুবাইর হতে তাঁর বর্ণিত হাদীসসমূহ সহীহ মুসলিমে রয়েছে। তিনি ১৩৩ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
৭১। আমর ইবনে আবদুল্লাহ্ আবু ইসহাক সাবিয়ী হামাদানী (কুফার অধিবাসী)
ইবনে কুতাইবার‘
মা’
আরিফ’
ও শাহরেস্তানীর‘
মিলাল ওয়ান নিহাল’
গ্রন্থানুসারে তিনি মুহাদ্দিসদের শীর্ষস্থানীয়দের অন্তর্ভুক্ত ও শিয়া ছিলেন। এ মাজহাবকে আহলে বাইতের শত্রুরা (নাসেবী) ভাল দৃষ্টিতে দেখে না যদিও প্রকৃত ও সত্য পথ এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে। এ কারণেই‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
-এ যুবাইদের পরিচয় পর্বে যাহাবী জাওযাজানীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন,“
জাওযাজানী বলেছেন : কুফায় একদল লোক ছিলেন,জনসাধারণ তাঁদের আকীদার কারণে পছন্দ করতো না,তাঁরা কুফার মুহাদ্দিসদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় যেমন আবু ইসহাক,মঞ্জুর,যুবাইদ ইয়ামী,আ’
মাশ এবং তাঁদের সমবয়স্ক ও নিকটবর্তী ব্যক্তিবর্গ। মানুষ কেবল সত্যবাদিতার কারণেই তাঁদের হাদীস গ্রহণ করত,এমন কি যদি তাঁরা পূর্ণাঙ্গ সনদ ব্যতীত কোন হাদীস বর্ণনা করতেন তবুও মানুষ তা মেনে নিত।”
যেসব পূর্ণাঙ্গ সনদহীন হাদীস (হাদীসে মুরসাল) তিনি বর্ণনা করেছেন ও নাসেবীরাও তা মেনে নিয়েছে এরূপ একটি হাদীস হলো আমর ইবনে ইসমাঈলের আবু ইসহাক সূত্রে বর্ণিত হাদীস যা‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
-এ তাঁর পরিচয় পর্বে উদ্ধৃত হয়েছে- রাসূল (সা.) বলেছেন,“
আলীর নমুনা বৃক্ষস্বরূপ,যার মূল আমি,শাখা-প্রশাখা হলো স্বয়ং আলী,তার ফল হল হাসান ও হুসাইন এবং শিয়ারা তার পত্রসমূহ।”
মুগীরাহ্ যিনি বলেছেন,আ’
মাশ ও আবু ইসহাক কুফাবাসীদের ধ্বংস করেছে তা এ কারণে যে,তাঁরা নবী পরিবারের প্রতি বিশেষ ভালবাসা পোষণ করতেন ও নবীর সুন্নাহ্ সংরক্ষণে ছিলেন বদ্ধপরিকর। তাঁরা জ্ঞানের সমুদ্র এবং আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে সর্বদা প্রস্তুত ছিলেন। এ সকল বৈশিষ্ট্যের কারণেই সিহাহ সিত্তাহ্ ও অন্যান্য হাদীসবেত্তাগণ তাঁদের হাদীস প্রমাণ উপস্থাপনে ব্যবহার করতেন।
আপনি বাররা ইবনে আজেব,যাইদ ইবনে আরকাম,হারিসা ইবনে ওয়াহাব,সুলাইমান ইবনে সারুদ,নুমান ইবনে বাশার,আবদুল্লাহ্ ইবনে ইয়াযীদ খাতমী এবং মাইমুন হতে তাঁর বর্ণিত হাদীস সহীহ মুসলিম ও বুখারীতে দেখতে পারেন।
শো’
বা,সুফিয়ান সাওরী,যুহাইর এবং স্বীয় প্রপৌত্র ইউসুফ ইবনে ইসহাক ইবনে আবি ইসহাক তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
ইবনে খাল্লেকান‘
ওয়াফায়াতুল আ’
য়ান’
গ্রন্থে তাঁর সম্পর্কে বলেছেন,“
তিনি হযরত উসমানের শাসনামলের শেষদিকে (তিন বছর পূর্বে) জন্মগ্রহণ করেন ও ১২৭ বা ১২৮ হিজরীতে,কারো মতে ১২৯ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। ইয়াহিয়া ইবনে মুঈন ও মাদায়েনীর মতে তিনি ১৩২ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন।
৭২। আউফ ইবনে আবি জামিলা বাসরী,আবু সাহল (যদিও আরাবী [মরুচারী বেদুইন আরব] নন তথাপি আরাবী বলে প্রসিদ্ধ)
যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে তাঁর সম্পর্কে বলেছেন,তাঁকে সব সময় সত্যবাদী আতা বলে ডাকা হত এবং বলা হয় যে,তিনি শিয়া। কেউ কেউ তাঁকে বিশ্বস্ত বলেছেন। অতঃপর জা’
ফর ইবনে সুলাইমান হতে বর্ণনা করেছেন যে,তিনি শিয়া এবং বান্দার তাঁকে রাফেযী বলেছেন।
ইবনে কুতাইবা তাঁর‘
মা’
আরিফ’
গ্রন্থে তাঁকে শিয়া রিজাল হিসাবে উল্লেখ করেছেন। রূহ,হাউযাহ্,শো’
বা,নাযর ইবনে শামিল,উসমান ইবনে হাইসাম ও তাঁদের পর্যায়ের অনেকেই তাঁর নিকট হাদীস শিক্ষা করেছেন। সিহাহ সিত্তাহ্ ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থের লেখকগণ তাঁর হাদীস দলিল হিসেবে পেশ করেছেন। আবুল হাসান বাসরীর পুত্রদ্বয় হাসান ও সাঈদ,মুহাম্মদ ইবনে সিরিন এবং সাইয়ার ইবনে সালামাহ্ হতে তাঁর বর্ণিত হাদীস সহীহ বুখারীতে রয়েছে।
নাযর ইবনে শামিল হতে তাঁর বর্ণিত হাদীস সহীহ মুসলিমে পাবেন। আবু রাজা উতারাদী হতে তাঁর নকলকৃত হাদীস উভয় হাদীস গ্রন্থেই রয়েছে।
তিনি ১৪০ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহ্ তাঁকে রহম করুন।
ف
৭৩। ফযল ইবনে দাকিন
দাকিনের মূল নাম আমর ইবনে হাম্মাদ ইবনে যুহাইর মালায়ী কুফী। তিনি আবু নাঈম নামে প্রসিদ্ধ। তিনি সহীহ বুখারীর হাদীসের শিক্ষক।
আহলে সুন্নাহর আলেমগণের মধ্যে অনেকেই,যেমন ইবনে কুতাইবা তাঁর‘
মা’
আরিফ’
গ্রন্থে তাঁকে শিয়া রিজালের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন।
যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে তাঁর সম্পর্কে বলেছেন,“
ফযল ইবনে দাকিন নির্ভরযোগ্য,তবে তাঁর একমাত্র ত্রুটি হলো তিনি শিয়া।”
তাঁর সম্পর্কে ইবনে জুনাইদ খাতলীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে যাহাবী বলেছেন,“
জুনাইদ বলেন : ইবনে মুঈনকে বলতে শুনেছি যখনই কোন ব্যক্তির নাম নেয়া হয় যদি নাঈম তাঁর প্রশংসা করেন তাহলে বোঝা যায় সে ব্যক্তি শিয়া। আর যদি তিনি বলেন অমুক ব্যক্তি মুর্জিয়া,এর অর্থ সে সুন্নী।”
যাহাবীর মতে ইয়াহিয়া ইবনে মুঈনের এ কথা তাঁর মুর্জিয়া হবার সপক্ষে দলিল। আমার মতে এ কথাটি এও প্রমাণ করে,ফযল একজন প্রত্যয়ী শিয়া।
যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে খালিদ ইবনে মুখাল্লাফের পরিচিতি পর্বে জাওযাজানী হতে উল্লেখ করেছেন,“
আবু নাঈম কুফী মাজহাবের (অর্থাৎ শিয়া)।”
সুতরাং ফযল ইবনে দাকিন যে শিয়া ছিলেন এটি সন্দেহাতীতভাবে সত্য। সিহাহ সিত্তাহর লেখকগণ তাঁর হাদীস দলিল হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
হাম্মাম ইবনে ইয়াহিয়া,আবদুল আযীয ইবনে আবি সালামাহ্,যাকারিয়া ইবনে আবি যায়িদা,হিশাম দাস্তওয়াঈ,আ’
মাশ,মাসআর,সাউরী,মালিক,ইবনে উয়াইনা,শাইবান ও যুহাইর হতে তাঁর বর্ণিত হাদীস সহীহ বুখারীতে রয়েছে।
সাইম ইবনে আবি সুলাইমান,ইসমাইল ইবনে মুসলিম,আবু আছেম মুহাম্মদ ইবনে আইয়ুব সাকাফী,আবু উসমান,মূসা ইবনে আলী,আবু শিহাব মূসা ইবনে নাফে,সুফিয়ান,হিশাম ইবনে সা’
দ,আবদুল ওয়াহেদ ইবনে আইমান ও ইসরাঈল হতে তাঁর বর্ণিত হাদীস সহীহ মুসলিমে দেখতে পারেন।
বুখারী তাঁর থেকে সরাসরি ও মুসলিম হাজ্জাজ ইবনে শায়ের,আবদ ইবনে হামিদ,ইবনে আবি শাইবা,আবু সাঈদ আশাজ,ইবনে নুমাইর,আবদুল্লাহ্ দারেমী,ইসহাক হানযালী এবং যুহাইর ইবনে র্হাব সূত্রে তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
তাঁর জন্ম কুফাতে ১৩০ হিজরীতে ও মৃত্যু ২১০ হিজরীর শাবান মাসের শেষ মঙ্গলবার আব্বাসী খলীফা মু’
তাসীমের শাসনামলে। ইবনে সা’
দ তাঁর‘
তাবাকাত’
গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ২৭৯ পৃষ্ঠায় তাঁর সম্পর্কে বলেছেন,‘‘
তিনি বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য। হাদীসের বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষ ও প্রামাণ্য।”
৭৪। ফুযাইল ইবনে মারযূক আগার,আবু আবদুর রহমান (কুফার অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি)
যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে তাঁকে শিয়া বলে প্রসিদ্ধ এবং সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা ও মুঈন সূত্রে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। ইবনে আদী হতে বলেছেন,‘‘
আমার মতে হাদীসের ক্ষেত্রে তাঁর মধ্যে কোন ত্রুটি নেই।”
হাইসাম ইবনে জামিল সূত্রে বলেছেন,“
তিনি জ্ঞান ও তাকওয়ার ক্ষেত্রে সত্যপন্থীদের অন্তর্ভুক্ত ও এর পথনির্দেশক।
মুসলিম শাফিক ইবনে উকবা হতে নামায সম্পর্কিত ও আদি সাবেত হতে যাকাত সম্পর্কিত তাঁর বর্ণিত হাদীস দলিল হিসেবে এনেছেন। তাছাড়া মুসলিম যাকাত সম্পর্কে ইয়াহিয়া ইবনে আদম ও আবু উসামা সূত্রে তাঁর বর্ণিত হাদীস ব্যবহার করেছেন। সুনান গ্রন্থগুলোতে ওয়াকী,ইয়াযীদ,আবু নাঈম আলী ইবনে জা’
দ এবং তাঁদের পর্যায়ের কয়েকজন রাবী তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। কিন্তু যাইদ ইবনে হাব্বাব রাষ্ট্র পরিচালনা সম্পর্কে তাঁর সম্পর্কে যে হাদীস বর্ণনা করেছেন তাতে তাঁর নামে মিথ্যা বলেছেন।
তিনি ১৫৮ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
৭৫। ফিতর ইবনে খালীফা হান্নাত,কুফার অধিবাসী
আবদুল্লাহ্ ইবনে আহমাদ তাঁর পিতাকে ফিতর ইবনে খালীফা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,“
তিনি বিশ্বস্ত ও তাঁর হাদীস দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য।”
তাঁর বর্ণিত হাদীসসমূহ একজন বুদ্ধিমান ও সচেতন ব্যক্তির হাদীস যদিও তিনি শিয়া মতাবলম্বী।
ইবনে মুঈন হতে আব্বাস বলেছেন,“
ফিতর ইবনে খালীফা শিয়া ও বিশ্বস্ত।”
আহমাদ বলেছেন,“
ফিতর ইয়াহিয়া ইবনে মুঈনের মতে নির্ভরযোগ্য,কিন্তু একজন কট্টর ও বিরস লোক।”
এজন্যই আবু বকর ইবনে আয়াশ বলেছেন,“
ফিতর ইবনে খালীফার কোন হাদীসই পরিত্যক্ত হয় নি এ কারণ ব্যতীত যে,তিনি বিচ্যুত আকীদায় বিশ্বাসী অর্থাৎ তাঁর মধ্যে শিয়া হওয়া ব্যতীত অন্য কোন ত্রুটি নেই যার কারণে তাঁর হাদীস গ্রহণ করা যাবে না।”
জাওযাজানী বলেছেন,“
ফিতর ইবনে খালীফা একজন বিভ্রান্ত ব্যক্তি। জা’
ফর আহমার ফিতরের অসুস্থতার সময় তাঁকে বলতে শুনেছে : যদি এমন হত আমার শরীরের প্রতিটি লোম ফেরেশতায় পরিণত হয়ে আহলে বাইতের প্রতি আমার ভালবাসা ও প্রেমের কারণে তাসবিহ পড়ত!”
ফিতর আবু তুফাইল ও মুজাহিদ হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবু উসামা,ইয়াসিন ইবনে আদম,ফাবিছা ও এ পর্যায়ের রাবীদের অনেকে তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
আহমাদ ও অন্যান্যরা তাঁকে বিশ্বস্ত বলেছেন। আবু হাতেম বলেছেন,“
তিনি হাদীস বর্ণনার যোগ্যতাসম্পন্ন”
এবং নাসায়ী তাঁকে নির্ভরযোগ্য,ত্রুটিহীন,হাদীসের সংরক্ষক (হাফিয),বুদ্ধিমান ও চতুর বলে উল্লেখ করেছেন। ইবনে সা’
দ বলেছেন,“
ইনশাল্লাহ্ তিনি বিশ্বস্ত।”
যাহাবী উপরোক্ত বিষয়গুলো তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
-এ এনেছেন। ইবনে কুতাইবা তাঁর‘
মা’
আরিফ’
গ্রন্থে শিয়া রিজালদের নামের তালিকায় তাঁর নাম এনেছেন।
বুখারীর বর্ণনানুযায়ী ফিতর মুজাহিদ হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং সুফিয়ান সাওরী তাঁর হাদীস নকল করেছেন (সহীহ বুখারী‘
আদব’
অধ্যায়)। সুনানে আবরাআহর লেখকগণ তাঁর হাদীস তাঁদের গ্রন্থসমূহে এনেছেন।
م
৭৬। মালিক ইবনে ইসমাঈল ইবনে যিয়াদ ইবনে দারহাম নাহদী (আবু গাসসান কুফী)
বুখারীর সহীহতে তিনি তাঁর উস্তাদ বলে উল্লিখিত হয়েছেন। ইবনে সা’
দ তাঁর‘
তাবাকাত’
গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডে তাঁকে স্মরণ করেছেন। তাঁর পরিচিতি অংশের শেষে তিনি বলেছেন,“
আবু গাসসান একজন সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত রাবী। তিনি নিজেকে শিয়া বলে পরিচয় দিতেন ও এ বিষয়ে কট্টর ছিলেন।”
যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে তাঁর সম্পর্কে যেভাবে বলেছেন তাতে বোঝা যায় তিনি একজন ন্যায়পরায়ণ ও মান-মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি আরো বলেছেন,“
শিয়া মতের শিক্ষা মালিক তাঁর শিক্ষক হাসান ইবনে সালিহ হতে পেয়েছেন। ইবনে মুঈন বলেছেন,“
কুফায় আবু গাসসান হতে নির্ভরযোগ্য কাউকে পাওয়া যায় না।”
আবু হাতেম বলেছেন,“
আমি তাঁর অপেক্ষা বিশ্বস্ত অন্য কাউকে কুফায় পাই নি। আবু নাঈমসহ অন্য কেউই তাঁর সমকক্ষ নয়। তিনি একজন ইবাদতকারী ও সম্মানিত ব্যক্তি। যখনই তাঁর প্রতি আমি দৃষ্টি দিয়েছি তখনই তাঁকে মনে হয়েছে যেন কবর হতে উঠে এসেছেন,তাঁর কপালে সিজদার দু’
টি স্থান স্পষ্ট দৃষ্টিগোচর হত।”
বুখারী তাঁর সহীহের কয়েকটি স্থানে তাঁর হতে কোন মাধ্যম ব্যতীত সরাসরি হাদীস বর্ণনা করেছেন। মুসলিম তাঁর সহীহের‘
হুদুদ’
অধ্যায়ে হারুন ইবনে আবদুল্লাহ্ সূত্রে তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
সহীহ বুখারীতে আবু গাসসান যাঁদের হতে হাদীস নকল করার অনুমতি পেয়েছিলেন ও তাঁর শিক্ষক বলে পরিগণিত হতেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে তাঁরা হলেন ইবনে উয়াইনা,আবদুল আযীয ইবনে সালামাহ্ ও ইসরাঈল। বুখারী তাঁর হাদীস হতে সরাসরি এবং মুসলিম যুহাইর ইবনে মুয়াবিয়া হতে তাঁর হাদীস শিক্ষা লাভ করেছেন।
তিনি ২১৯ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন।
৭৭। মুহাম্মদ ইবনে খাযেম
(আবু মুয়াবিয়া জারির তামিমী কুফী বলে প্রসিদ্ধ)
যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে তাঁর সম্পর্কে বলেছেন,“
মুহাম্মদ ইবনে খাযেম(ع)
জারির বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য। তাঁর মধ্যে উল্লেখ করার মত কোন ত্রুটি আমি পাই নি।‘
কুনিয়াত’
সম্পর্কে আলোচনা পর্বে তাঁর সম্পর্কে আমরা বলব।”
অতঃপর কুনিয়াতের আলোচনায় তাঁর সম্পর্কে বলেছেন,“
আবু মুয়াবিয়া জারির বিশ্বস্ত ও বিজ্ঞ রাবীদের অন্যতম। তিনি হাকিম নিশাবুরীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন : হাকিমের মতে বুখারী ও মুসলিম তাঁর হাদীস প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করেছেন ও তিনি তাঁকে প্রসিদ্ধ শিয়াদের অন্তর্ভুক্ত মনে করেন যাঁরা এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করতেন।”
যেহেতু সিহাহ সিত্তাহর হাদীস লেখকগণ তাঁর হাদীস দলিল হিসেবে উপস্থাপন করতেন সেহেতু যাহাবী তাঁর নামের পার্শ্বে(ع)
লিখেছেন এজন্য যে,এ বিষয়ে তাঁদের মধ্যে ইজমা বা ঐকমত্য রয়েছে।
আপনি আ’
মাশ ও হিশাম ইবনে উরওয়া হতে তাঁর বর্ণিত হাদীসসমূহ বুখারী ও মুসলিমে অধ্যয়ন করতে পারেন। তাছাড়া কয়েকজন নির্ভরযোগ্য রাবী হতে তাঁর বর্ণিত হাদীস সহীহ মুসলিমে রয়েছে। সহীহ বুখারীর মতে আলী ইবনে মাদিনী,মুহাম্মদ ইবনে সালাম,ইউনুস ইবনে ঈসা,কুতাইবা এবং মুসাদ্দিদ তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
সহীহ মুসলিমের বর্ণনানুসারে সাঈদ ওয়াসেতী,সাঈদ ইবনে মানসুর,আমর নাকিদ,আহমদ ইবনে সিনান,আবু নুমাইর,ইসহাক হানযালী,আবু বকর ইবনে আবি শাইবা,আবু কুরাইব এবং যুহাইর তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
এ দু’
টি হাদীসগ্রন্থেই মূসা যামান তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবু মুয়াবিয়া ১১৩ হিজরীতে জন্ম ও ১৯৫ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
৭৮। মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ্ দ্বাবী,তাহানী নিশাবুরী (আবু আবদুল্লাহ্ হাকিম)
তিনি মুহাদ্দিস ও হাফিযদের (হুফফায) নেতা এবং সহস্রাধিক গ্রন্থের প্রণেতা। তিনি তাঁর জ্ঞানার্জনের জন্য যে বিভিন্ন শহর ও দেশে ভ্রমণ করেন তাতে প্রায় দু’
হাজার শিক্ষকের নিকট হাদীস ও অন্যান্য জ্ঞান শিক্ষা করেন।
তাঁর সমসাময়িক আলেমদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়রা,যেমন আলূসী,ইমাম ইবনে ফুরাক ও অন্যান্যরা তাঁকে অগ্রাধিকার দিতেন। তাঁরা তাঁকে বিশেষ সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতেন। তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে তাঁদের মধ্যে কোন সন্দেহ ছিল না। তাঁর পরবর্তী সময়ের সকলেই তাঁর হতে জ্ঞান শিক্ষা করেছেন ও তাঁর ছাত্র হিসেবে গণ্য।
তিনি শিয়াদের মতে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন এবং শরীয়ত ও মাজহাবের খেদমতকারী ও সংরক্ষক বলে বিবেচিত হতেন।
যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
-এ তাঁর সম্পর্কে বলেছেন,“
তিনি সত্যবাদীদের নেতৃস্থানীয়দের অন্তর্ভুক্ত ও শিয়া হিসেবে প্রসিদ্ধ।”
ইবনে তাহিরের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেছেন,“
হাকিম আবু আবদুল্লাহ্ সম্পর্কে আবু ইসমাঈল আবদুল্লাহ্ আনসারীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন : হাদীস বর্ণনায় শীর্ষস্থানীয়দের অন্তর্ভুক্ত কিন্তু দুষ্ট চরিত্রের রাফেযী।”
অতঃপর যাহাবী তাঁর সূত্রে তাঁর ভাষায় ভুল ও আশ্চর্যজনক একটি কথা বর্ণনা করেছেন,আবু আবদুল্লাহ্ বলেছেন,“
হযরত মুস্তাফা (সা.) নাভী কর্তিত ও খতনাকৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছেন এবং আলী রাসূল (সা.)-এর স্থলাভিষিক্ত ও মনোনীত প্রতিনিধি।”
যদিও তিনি এ বিষয়ে স্বীকারোক্তি করেছেন যে,তাঁর জ্ঞান ও সত্যবাদিতার কারণে সকলের নিকট তিনি গ্রহণযোগ্য।
তিনি ৩২১ হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসে জন্মগ্রহণ করেন ও ৪০৫ হিজরীর সফর মাসে আল্লাহর রহমতের দিকে প্রত্যাবর্তন করেন।
৭৯। মুহাম্মদ ইবনে উবাইদুল্লাহ্ ইবনে আবি রাফে (মদীনার অধিবাসী)
তাঁর পিতা উবাইদুল্লাহ্,ভ্রাতা ফযল ও আবদুল্লাহর প্রপিতা আবু রাফে,চাচা রাফে,হাসান মুগীরাহ্,আলী এবং তাঁদের সকল সন্তানই সৎ কর্মশীল ও প্রাচীন শিয়াদের অন্তর্ভুক্ত। তাঁদের বিভিন্ন লেখনী শিয়া মতবাদে তাঁদের অটলাবস্থা ও দৃঢ়তার প্রমাণ,আমরা আমাদের‘
ফুসূলুল মুহিম্মা’
গ্রন্থের ১২ খণ্ডের দ্বিতীয় অধ্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি।
‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে ইবনে আদী মুহাম্মদ হতে বর্ণনা করেছেন,“
তিনি কুফার শিয়াদের অন্তর্ভুক্ত।”
যাহাবী তাঁর নামের পাশে(ت ق)
লিখেছেন,কারণ সুনানের লেখকগণ তাঁর হাদীস নকল করেছেন। তিনি বলেছেন,“
মুহাম্মদ তাঁর পিতা ও প্রপিতা হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।”
মানদাল ও আলী ইবনে হাশিম তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হাব্বান ইবনে আলী,ইয়াহিয়া ইবনে ইয়ালী ও অন্যান্যরাও তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। মুহাম্মদ ইবনে উবাইদুল্লাহ্ কখনো কখনো তাঁর ভাই আবদুল্লাহ্ ইবনে উবাইদুল্লাহ্ হতেও হাদীস বর্ণনা করেছেন।
তাবরানী তাঁর‘
মু’
জামুল কবীর’
গ্রন্থে মুহাম্মাদ ইবনে উবাইদুল্লাহ্ ইবনে আবি রাফে সূত্রে তাঁর পিতা ও দাদা হতে বর্ণনা করেছেন,“
রাসূল (সা.) হযরত আলীকে বলেন : প্রথম যে সকল ব্যক্তি বেহেশতে প্রবেশ করবে তারা হলো আমি,তুমি,হাসান ও হুসাইন এবং আমাদের অনুসারীরা (শিয়া),তারা আমাদের পশ্চাতে,ডানে ও বামে সারিবদ্ধভাবে প্রথম বেহেশতে প্রবেশকারী হিসেবে পরিগণিত হবে।”