ه
৯০। হারুন ইবনে সা’
দ আজালী কুফী
যাহাবী তাঁর নামের পাশে সাংকেতিকভাবে মুসলিম লিখেছেন,যেহেতু তিনি মুসলিমের রিজাল ও রাবীদের অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর তাঁর চরিত্র বর্ণনা করে বলেছেন,“
তিনি সত্যবাদী কিন্তু কট্টর রাফেযী ও অন্যদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী।”
আব্বাস ইবনে মুঈন হতে বলেছেন,“
হারুন শিয়া গালীদের (বাড়াবাড়ির আকীদা পোষণকারী) অন্তর্ভুক্ত।”
তিনি আবদুর রহমান ইবনে আবু সাঈদ খুদরী হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। মুহাম্মদ ইবনে আবি হাফছ আত্তার,মাসউদী এবং হাসান ইবনে হাই তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আবু হাতেম তাঁকে ত্রুটিহীন বলে উল্লেখ করেছেন।
৯১। হাশিম ইবনে বুরাইদ ইবনে যাইদ (আবু আলী কুফী)
যাহাবী তাঁর নামের পাশে সাংকেতিক আবু দাউদ ও নাসায়ী লিখেছেন,কারণ তিনি এ দুই সহীহর রিজালদের অন্তর্ভুক্ত। তিনি ইবনে মুঈনের সূত্রে তাঁর রাফেযী ও শিয়া হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বস্ত হবার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। অতঃপর আহমাদ হতে তাঁর ত্রুটিহীনতার কথা বলেছেন। হাশিম যাইদ ইবনে আলী এবং মুসলিম বাতিন হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর পুত্র আলী ইবনে হাশিম ও খারিবী তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হাশিম যে শিয়া পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এ সত্যটি আলী ইবনে হাশিমের পরিচিতি পর্বে আমরা বর্ণনা করেছি।
৯২। হুবাইরা ইবনে বারীম হিমায়ারী
তিনি হযরত আলী (আ.)-এর সাহাবীদের অন্তর্গত। আলীর প্রতি ভালবাসা ও তাঁর বেলায়েতের স্বীকৃতিতে তিনি হারিসের মত। যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে তাঁর নামের পাশে সুনানের লেখকগণের নাম সাংকেতিক চিহ্নে লিখেছেন,কারণ সুনানসমূহের সনদে রাবীদের তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। অতঃপর আহমাদের সূত্রে বলেছেন,“
তিনি ত্রুটিহীন এবং হারিস হতে আমাদের নিকট অধিকতর প্রিয়।”
যাহাবী আরো বলেছেন,“
ইবনে খাররাশ বলেছেন যে,তিনি দুর্বল। সিফ্ফিনের যুদ্ধে তিনি যুদ্ধাহতদের হত্যা করেন।”
জাওযাজানী বলেছেন,“
তিনি মুখতার সাকাফীর পক্ষে খাযেরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন।”
শাহরেস্তানী তাঁর‘
মিলাল ওয়ান নিহাল’
-এ তাঁকে শিয়া রিজালদের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন এবং তিনি হযরত আলী হতে যে হাদীস বর্ণনা করেছেন তা সুনান গ্রন্থসমূহে লিপিবদ্ধ রয়েছে। আবু ইসহাক ও আবু ফাখিতাহ্ তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৯৩। হিশাম ইবনে যিয়াদ (আবু মাকদাম বাসরী)
শাহরেস্তানী তাঁর‘
মিলাল ওয়ান নিহাল’
-এ তাঁকে শিয়া রিজালদের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
-এ নামানুসারে এবং কুনিয়ার স্থানেهاء
বর্ণের স্থলে তাঁর পরিচয় দান করেছেন। কুনিয়ার আলোচনায় তাঁর নামের পাশে(ت ق)
লিখেছেন,কারণ সুনান লেখকগণ তাঁর ওপর নির্ভর করতেন।
যে সকল হাদীস তিনি হাসান ও কারযী হতে বর্ণনা করেছেন তা সহীহ তিরমিযীতে দেখতে পারেন। শাইবান ইবনে ফারুখ,কাওয়ারিরী এবং অন্যান্যরা তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
৯৪। হিশাম ইবনে আম্মার ইবনে নুসাইর ইবনে মাইসারাহ আবুল ওয়ালিদ (জা’
ফারী দামেস্কী)
তিনি বুখারীর সহীহতে তাঁর উস্তাদ। ইবনে কুতাইবা তাঁকে শিয়া রিজালের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। তিনি তাঁর‘
মা’
আরিফ’
গ্রন্থের‘
আল ফিরাক’
অধ্যায়ে শিয়া রিজালদের নামের তালিকায় তাঁর নাম এনেছেন।
যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে তাঁকে ইমাম,খাতীব,ক্বারী,মুহাদ্দিস,দামেস্কের আলেম,সত্যবাদী ও অধিক হাদীস বর্ণনাকারী বলে উল্লেখ করে বলেছেন তিনি এমন অনেক হাদীস নকল করেছেন যা অনেকেরই পছন্দ নয়।
বুখারী‘
যে ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত ও দরিদ্রকে সময় দেয়’
সে সম্পর্কিত হাদীসের এবং‘
সঠিক
ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবসায় পদ্ধতি’
সম্পর্কিত আলোচনা অধ্যায়ে তাঁর হতে সরাসরি হাদীস বর্ণনা করেছেন। বিশেষজ্ঞ পণ্ডিতগণ এ বিষয়ে অধিকতর অবগত আছেন। তাঁর বর্ণিত অন্যান্য হাদীস নবী করীম (সা.)-এর সাহাবীদের ফাজায়েল,পানীয়সমূহের আলোচনায় এবং মাগাজী বা যুদ্ধসমূহ নামক গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। তিনি ইয়াহিয়া ইবনে হামযাহ্,সাদাকা ইবনে খালিদ,আবদুল হামিদ ইবনে আবিল ঈশরীন ও অন্যান্যদের হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে বলেছেন,“
অসংখ্য লোক কোরআন ও হাদীস শিক্ষার জন্য তাঁর নিকট যেত ও তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করত।”
ওয়ালিদ ইবনে মুসলিম তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি তাঁর শিক্ষকদের অন্যতম। হিশাম আবু লাহিয়া হতে হাদীস বর্ণনার অনুমতিপ্রাপ্ত। আবদান বলেছেন,“
তৎকালীন সময়ে তাঁর সমকক্ষ কেউ ছিল না।”
কেউ বলেছেন,“
হিশাম বাগ্মী,ভাষা অলংকারশাস্ত্রবিদ এবং জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন।”
আমার মতে তিনি অন্যান্য শিয়াদের মত কোরআনের শব্দসমূহ আল্লাহর সৃষ্টি বলে বিশ্বাস করতেন অর্থাৎ বর্তমানে কোরআনে যে বর্ণ ও ধ্বনি রয়েছে সেভাবেই রাসূল (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে।‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে হিশামের পরিচিতি পর্বে বর্ণনা করা হয়েছে- আহমাদ তাঁর এ বিশ্বাসের কথা শুনে বলেন,“
আমি তাকে অজ্ঞ ও মূর্খ পেয়েছি। আল্লাহ্ তাকে হত্যা করুন।”
আহমাদ হিশামের লিখিত একটি গ্রন্থের প্রথমে দেখলেন লেখা রয়েছে-
الحمد لله الّذي تجلّى لخلقه بخلقه
সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেকে তাঁর সৃষ্টির কাছে প্রকাশিত করেছেন।
আহমাদ তা দেখে রাগের প্রচণ্ডতায় একবার উঠছিলেন ও একবার বসছিলেন এবং ক্রোধের সাথে বললেন যারা হিশামের পেছনে নামায পড়েছেন তাঁরা যেন তা পুনরায় আদায় করেন।
হিশামের বক্তব্যতে আল্লাহর পবিত্রতা,তাঁর সৃষ্টিতে তাঁর নিদর্শনের প্রমাণ,তাঁর পবিত্রতার প্রকৃতি ও মর্যাদা যেভাবে বর্ণিত হয়েছে তা দৃষ্টিমান ব্যক্তিদের নিকট গোপন নয়। কারণ তাঁর বক্তব্য এই কথার সমার্থক যে,প্রতিটি বস্তুতেই আল্লাহর নিদর্শন রয়েছে। অবশ্যই তাঁর কথা এ থেকেও পরিষ্কার ও বোধগম্য। কিন্তু আলেমগণ নিজের ইচ্ছামত একজন অপরের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন।
হিশাম ১৫৩ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন ও ২৪৫ হিজরীর মুহররম মাসে মৃত্যুবরণ করেন। আল্লাহ্ তাঁকে রহম করুন।
৯৫। হাশিম ইবনে বাশির ইবনে কাসিম ইবনে দীনার সালামী (আবু মুয়াবিয়া,ওয়াসেতী)
তিনি প্রকৃতপক্ষে বাল্খের লোক,কারণ তাঁর প্রপিতা কাসিম ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে ওয়াসেত এসেছিলেন।
ইবনে কুতাইবা তাঁর‘
মা’
আরিফ’
গ্রন্থে তাঁকে শিয়া রিজালের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। তিনি ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল এবং তাঁর পর্যায়ের অনেকেরই শিক্ষক। যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
গ্রন্থে তাঁর নামের পাশে সিহাহ সিত্তাহর গ্রন্থকার কর্তৃক তাঁর হাদীস হতে যুক্তি প্রদর্শনের সাংকেতিক চি
হ্ন লিখেছেন এবং তাঁকে হাফিয বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে তিনি সেসব আলেমের অন্তর্ভুক্ত যাঁরা যুহরী ও হুসাইন ইবনে আবদুর রহমান হতে হাদীস শ্রবণ করেছেন।
ইয়াহিয়া ইবনে কাত্তান,আহমাদ,ইয়াকুব দাউরাকী এবং অনেকেই তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। যে সকল হাদীস তিনি হামিদ তাভীল,ইসমাঈল ইবনে আবি খালিদ,আবু ইসহাক শায়বানী ও অন্যদের হতে বর্ণনা করেছেন তা সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আপনি দেখতে পারেন।
বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনানুসারে উমর,নাকেদ,আমর ইবনে যুরারাহ্ এবং সাঈদ ইবনে সুলাইমান তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া বুখারীতে আমর ইবনে আওফ,সা’
দ ইবনে নাদর,মুহাম্মদ ইবনে নিবহান,আলী ইবনে মাদিনী ও কুতাইবা তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং সহীহ মুসলিমে আহমাদ ইবনে হাম্বল,শুরাইহ্,ইয়াকুব দাউরাকী,আবদুল্লাহ্ ইবনে মুতী,ইয়াহিয়া ইবনে ইয়াহিয়া,সাঈদ ইবনে মানসুর,ইবনে আবি শাইবা,ইসমাঈল ইবনে সালিম,মুহাম্মদ ইবনে সাবাহ,দাউদ ইবনে রশিদ,আহমাদ ইবনে মানী,ইয়াহিয়া ইবনে আইউব,যুহাইর ইবনে হারব,উসমান ইবনে আবি শাইবা,আলী ইবনে হাজার এবং ইয়াযীদ ইবনে হারুন তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
তিনি ১৮৩ হিজরীতে ৭৯ বছর বয়সে বাগদাদে ইন্তেকাল করেন। আল্লাহ্ তাঁকে রহম করুন।
و
৯৬। ওয়াকী ইবনে জাররাহ্ ইবনে মালিহ ইবনে আদী (তাঁর কুনিয়াত তাঁর পুত্র সুফিয়ান রাওয়াসীর নামানুসারে আবু সুফিয়ান)
তিনি কাইস গাইলান গোত্রের লোক। ইবনে কুতাইবা তাঁর‘
মা’
আরিফ’
গ্রন্থে শিয়া রিজালের অন্তর্ভুক্ত বলেছেন। ইবনে মাদিনী তাঁর‘
তাহ্যীব’
গ্রন্থে তাঁর শিয়া হবার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
মারওয়ান ইবনে মুয়াবিয়ার এ বিষয়ে কোন সন্দেহ ছিল না যে,তিনি রাফেযী। একদিন ইয়াহিয়া ইবনে মুঈন মারওয়ানের নিকট বেশ কিছু লিখিত বস্তু দেখলেন যার প্রতিটি লেখা ছিল অমুক এরূপ,অমুক এরূপ,সেখানে ওয়াকীর নামও লিখা ছিল এবং তাতে তাঁকে রাফেযী বলে সম্বোধন করা হয়েছে। ইবনে মুঈন তাঁকে বললেন,“
ওয়াকী তোমার চেয়ে উত্তম।”
সে শুনে বলল,“
হ্যাঁ।’
ওয়াকী একথা শুনে বললেন,“
ইয়াহিয়া আমাদের বন্ধু।”
আহমাদ ইবনে হাম্বলকে প্রশ্ন করা হলো,“
যদি আবদুর রহমান ইবনে মাহদী এবং ওয়াকী কোন বিষয়ে দ্বৈতমত পোষণ করেন তবে কার কথাকে গ্রহণ করবেন?”
তিনি যে দৃষ্টিকোণ থেকে আবদুর রহমানকে দেখতেন সে দৃষ্টিতে বললেন,“
আবদুর রহমানকে।”
কারণ আবদুর রহমানের দৃষ্টিতে পূর্ববর্তীগণ ত্রুটিমুক্ত,ওয়াকীর দৃষ্টিতে নন।
এ কথার সপক্ষে দলিল হলো যাহাবীর‘
মিযান’
-এ হাসান ইবনে সালিহের পরিচিতি পর্বে ওয়াকীর যে বক্তব্য তিনি এনেছেন। ওয়াকী বলেছেন,“
হাসান ইবনে সালিহ আমার নেতা ও পথ প্রদর্শক।”
তাঁকে বলা হলো,“
হাসান হযরত উসমানের জন্য দোয়া করেন না।”
ওয়াকী বললেন,“
তুমি হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের ওপর দরূদ পড়?”
এখানে ওয়াকী হযরত উসমানকে হাজ্জাজের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
উপরোক্ত বিষয়গুলো যাহাবী তাঁর‘
মিযানুল ই’
তিদাল’
-এ এনেছেন। সিহাহ সিত্তাহর হাদীসবিদগণ তাঁর হাদীসসমূহ যুক্তি হিসেবে গ্রহণ করেছেন। যে সকল হাদীস তিনি আ’
মাশ,সাওরী,শো’
বা,ইসমাঈল ইবনে আবি খালিদ এবং আলী ইবনে মোবারক হতে বর্ণনা করেছেন তা সহীহ বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে। এ দুই হাদীসগ্রন্থেই ইসহাক হানযালী এবং মুহাম্মদ ইবনে নুমাইর তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
বুখারীর বর্ণনামতে,আবদুল্লাহ্ ইবনে হামিদী,মুহাম্মদ ইবনে সালাম,ইয়াহিয়া ইবনে জা’
ফর ইবনে আ’
য়ুন,ইয়াহিয়া ইবনে মূসা,মুহাম্মদ ইবনে মাকাতিল তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। মুসলিমের মতে,যুহাইর,ইবনে আবি শাইবা,আবু কুরাইব,আবু সাঈদ আশাজ,নাছর ইবনে আলী,সাঈদ ইবনে আযহার,ইবনে আবি উমর,আলী ইবনে খাশরাম,উসমান ইবনে আবি শাইবা এবং কুতাইবা ইবনে সাঈদ তাঁর হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
তিনি ১৯৭ হিজরীর মুহররম মাসে হজ্ব হতে ফেরার পথে ৬৮ বছর বয়সে ফাইদ নামক স্থানে মৃত্যুবরণ করেন।