বিশতম পত্র
৯ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ
১। কোরআন ও সুন্নাহর দলিলসমূহের প্রতি সংক্ষিপ্ত ইঙ্গিত।
২। কোরআনের আয়াত‘
নিকটাত্মীয়দের ভীতি প্রদর্শন কর’
।
৩। আহলে সুন্নাহর হাদীসবিদ ও গ্রন্থকারগণের এ আয়াত সম্পর্কে বক্তব্য।
১। যিনি মহানবী (সা.)-এর জীবনেতিহাস অধ্যয়ন ও আল্লাহ্ প্রবর্তিত বিধি-বিধান,ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ও তার শরীয়তসম্মত নিয়মবিধি প্রণয়ণ ও ভিত্তি প্রস্তুতের পদ্ধতি সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করেছেন তিনি বুঝতে পারবেন,হযরত আলী (আ.)-ই বিভিন্ন বিষয়ে রাসূলের পরামর্শদাতা,শত্রুর বিরুদ্ধে তাঁর সহযোগী,তাঁর জ্ঞানের পাত্র,তাঁর নির্দেশের উত্তরাধিকারী ও খেলাফতের ক্ষেত্রে তাঁর মনোনীত প্রতিনিধি ছিলেন। যদি কোন ব্যক্তি রাসূলের নবুওয়াতী জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে (যুদ্ধ,শান্তি,সফর,হিজরত ও অন্যান্য) তাঁর কথা ও জ্ঞানের নির্ভরযোগ্য সূত্র ও বর্ণনাগুলো লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন তিনি তাঁর প্রচার কার্যক্রম শুরুর সময় হতে মৃত্যু পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে এটিকে স্পষ্ট করেছেন।
২। যখন ইসলাম মক্কায় কোন প্রভাবই রাখত না তখন মহান আল্লাহ্ কোরআনের নিম্নলিখিত আয়াতটি নাযিল করে রাসূলকে নির্দেশ দেনو أنذر عشيرتك الأقربين
অর্থাৎ নিজের নিকটাত্মীয়দের ভয় প্রদর্শন কর। অতঃপর রাসূল (সা.) তাদের আবু তালিবের ঘরে সমবেত করেন,তাদের সংখ্যা সেদিন ৪০ জন ছিল। তাঁদের মধ্যে আবু তালিব,আবু লাহাব,হামযাহ্,ও আব্বাস ছিলেন।
এ হাদীসের শেষে নবী (সা.) তাদের উদ্দেশ্যে বলেন,“
হে আবদুল মুত্তালিবের সন্তানেরা! আমি আল্লাহর শপথ করে বলতে পারি আমি আরবদের মধ্যে এমন কোন যুবকের সন্ধান জানি না যে তার গোত্র ও সম্প্রদায়ের জন্য এরূপ উত্তম কোন বস্তু এনেছে যা আমি এনেছি,যার মধ্যে দুনিয়া ও আখেরাতের সকল কল্যাণ রয়েছে। আমি তোমাদের সেদিকে দাওয়াত করছি।
فأيّكم يوازرني على أمري هذا على أن يكون أخي و وصيّي و خليفتي فيكم؟
তোমাদের মধ্যে কে আছে যে আমাকে এক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে ও আমার পৃষ্ঠপোষক হবে,সে আমার ভাই,খলীফা,প্রতিনিধি ও স্থলাভিষিক্ত হবে।”
আলী (আ.) ব্যতীত সেদিন সকলেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। যদিও তখন তাঁর বয়স কম ছিল তবু তিনি দাঁড়িয়ে বলেছিলেন,أنا يا نبيّ الله أكون وزيرك
“
হে আল্লাহর নবী! আমি আপনার সহযোগী হব।”
তখন নবী (সা.) তাঁর হাত আলী (আ.)-এর কাঁধে রেখে বলেছিলেন,
إنّ هذا أخي و وصيّي و خليفتي فيكم فاسمعوا له و أطيعوه
“
নিশ্চয়ই সে তোমাদের মধ্যে আমার ভাই,স্থলাভিষিক্ত ও প্রতিনিধি (খলীফা) অতএব,তার কথা শ্রবণ কর ও আনুগত্য কর।
তারা একথা শুনে হাসতে হাসতে আবু তালিবকে বলল,“
তোমাকে বলা হলো তোমার সন্তানের কথা শ্রবণ কর ও তার আনুগত্য কর।”
৩। প্রচুর সংখ্যক হাদীসের হাফেজ এই হাদীসটি এভাবেই বর্ণনা করেছেন যেমন ইবনে ইসহাক,ইবনে জারির,ইবনে আবি হাতেম,ইবনে মারদুইয়া,আবু নাঈম ও বায়হাকী তাঁদের সুনান গ্রন্থে এবং সা’
লাবী ও তাবারী তাঁদের‘
তাফসীরে কাবীর’
গ্রন্থে সূরা শুআরার তাফসীরে,তাছাড়া তাবারী তাঁর‘
তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক’
গ্রন্থের ২য় খণ্ডে,ইবনে আসির তাঁর‘
কামিল’
গ্রন্থের ২য় খণ্ডে এ হাদীসটি সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছেন। যে স্থানে রাসূল (সা.)-কে আল্লাহ্ তাঁর দাওয়াতকে প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন সে ঘটনা বর্ণনায় এটি নকল করা হয়েছে। আবুল ফিদা তাঁর ইতিহাস গ্রন্থের
১ম খণ্ডে‘
প্রথম মুসলমান কে’
এ আলোচনায় এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন। ইমাম আবু জা’
ফর আসকাফী মু’
তাযিলী তাঁর‘
নাকজুল উসমানিয়া’
গ্রন্থে এ হাদীসকে বিশুদ্ধ বলে স্বীকার করেছেন। হালাবী তাঁর সীরাত গ্রন্থে আরকামের ঘরে নবী (সা.) ও সাহাবীদের গোপন সভা সম্পর্কিত আলোচনায় এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
একই অর্থে এবং সদৃশ শব্দের ব্যবহারে এ হাদীসটি অনেক প্রসিদ্ধ গ্রন্থকার ও রাবী বর্ণনা করেছেন,যেমন তাহাভী,জিয়া মুকাদ্দাসী তাঁর‘
আল মুখতারাহ্’
,সাঈদ ইবনে মানসুর তাঁর সুনানে। এটি জানার জন্য আহমাদ ইবনে হাম্বলের‘
মুসনাদ’
গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ১৫৯ পৃষ্ঠা দেখতে পারেন। তাছাড়া ঐ গ্রন্থেরই ১ম খণ্ডের ৩৩১ পৃষ্ঠায় ইবনে আব্বাস হতে একটি মূল্যবান হাদীস এনেছেন যাকে এ হাদীসের সারাংশ বলা যেতে পারে। এ হাদীসটিতে ইবনে আব্বাস অন্যদের ওপর আলী (আ.)-এর দশটি শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলেছেন।
এ মূল্যবান হাদীসটি নাসায়ী তাঁর‘
খাসায়েসুল আলাভিয়া’
গ্রন্থের ৬ষ্ঠ পৃষ্ঠায় ও হাকিম নিশাবুরী তাঁর‘
মুসতাদরাক’
গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১৩২ পৃষ্ঠায় ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া‘
কানযুল উম্মাল’
গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডে এই হাদীস বিস্তারিতভাবে এসেছে।
মুসনাদে আহমাদের পাদটিকায়‘
মুনতাখাব কানযুল উম্মাল’
রয়েছে,তাতেও হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে। ৫ম খণ্ডের ৪১ পৃষ্ঠা হতে ৪৩ পৃষ্ঠার পাদটিকায় তা দেখতে পারেন। যাহাবীও তাঁর‘
তালখিস’
গ্রন্থে হাদীসটির বিশুদ্ধতার বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
ওয়াসসালাম
শ