চৌত্রিশতম পত্র
২৭ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ
১। যেদিন আলী (আ.)-এর পুত্রদের শাব্বার,শাব্বির ও মুশবির বলেছেন।
২। ভ্রাতৃবন্ধনের দিন।
৩। মসজিদের দিকে উন্মুক্ত দ্বারসমূহ রুদ্ধ করার দিন।
রাসূল (সা.)-এর জীবনী অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা করলে দেখবেন তিনি আলী ও হারুন (আ.)-কে আসমানের দুই যুগ্ম তারকা ও মানবদেহের দুই চোখের সাথে তুলনা করেছেন। এ দুই উম্মতের মধ্যে তাঁদের থেকে অন্য কেউই শ্রেষ্ঠ ছিলেন না।
১। আর এজন্যই তিনি চান নি আলী (আ.)-এর সন্তানদের নাম হারুনের সন্তানদের হতে ভিন্ন কিছু হোক। এজন্য তাঁদের হাসান,হুসাইন ও মুহসিন
নাম রেখেছেন ও বলেছেন,“
তাদের নাম হারুনের সন্তানদের সহনামে রাখলাম কারণ তাদের (হারুনের সন্তানদের নাম) শাব্বার,শাব্বির ও মুশবির ছিল।”
রাসূল (সা.) তাঁর এই কর্মের মাধ্যমে এ দুই হারুনের মধ্যের মিলকে তুলে ধরে সম্মান ও মর্যাদার ক্ষেত্রে তাঁদের শ্রেষ্ঠত্বকে সর্বজনীনতা দান করতে চেয়েছিলেন।
২। এজন্যই আলী (আ.)-কে নিজের ভাই হিসেবে মনোনীত করে অন্যদের ওপর হারুনের প্রাধান্যের সর্বজনীনতার বিষয়টিকে উল্লেখ করার মাধ্যমে বিষয়টিকে তাকীদ দিয়েছেন। যে দু’
বার ভ্রাতৃত্বের আকদ পাঠ করা হয় দু’
বারই তিনি আগ্রহী ছিলেন তাঁদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব লাভ করুক। এজন্য প্রথম আকদের সময় সাহাবীদের মধ্যে হযরত আবু বকরকে হযরত উমরের সাথে,হযরত উসমানকে হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফের সাথে ভ্রাতৃত্ববন্ধন সৃষ্টি করলেও দ্বিতীয় আকদের সময় হযরত আবু বকরকে খারাজা ইবনে যাইদের ভ্রাতা এবং হযরত উমরকে উতবান ইবনে মালিকের ভ্রাতা মনোনীত করেন। অথচ উভয় আকদেই আলীকে নিজের ভ্রাতা বলে মনোনীত ও ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে যে সকল হাদীস বর্ণিত হয়েছে (যার অধিকাংশই সহীহ) তার উল্লেখ এখানে সম্ভব নয়।
এজন্য ইবনে আব্বাস,ইবনে উমর,যাইদ ইবনে আরকাম,যাইদ ইবনে আবি আউফি,আনাস ইবনে মালিক,হুজাইফা ইবনে ইয়ামান,মুখদাজ ইবনে ইয়াযীদ,উমর ইবনে খাত্তাব,বাররা ইবনে আযেব,আলী ইবনে আবি তালিব ও অন্যান্যদের হতে বর্ণিত হাদীসসমূহ লক্ষ্য করুন।
মহানবী (সা.) হযরত আলীকে লক্ষ্য করে বলেছেন,أنت أخي في الدّنيا و الآخرة
অর্থাৎ তুমি দুনিয়া ও আখেরাতে আমার ভাই।
আমরা আমাদের বিংশতম পত্রে বর্ণনা করেছি রাসূল (সা.) আলীর স্কন্ধে হাত রেখে বললেন,“
এ আমার ভাই,আমার স্থলাভিষিক্ত ও তোমাদের মাঝে আমার প্রতিনিধি,তার কথা শুনবে ও তার আনুগত্য করবে।”
একদিন রাসূল (সা.) হাস্যোজ্জ্বল মুখে সাহাবীদের সামনে উপস্থিত হলেন। আবদুর রহমান ইবনে আউফ রাসূলকে তাঁর আনন্দের কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। রাসূল উত্তরে বললেন,“
আমার ভাই ও পিতৃব্যপুত্র এবং আমার কন্যার ব্যাপার আমার প্রভুর পক্ষ হতে আমার নিকট সুসংবাদ এসেছে যে,মহান আল্লাহ্ ফাতিমাকে আলীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন...।”
সাওয়ায়েক গ্রন্থের ১০৩ পৃষ্ঠায় আবু বকর খাওয়ারেজমী সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে।
যখন নারীকুল শিরোমণি হযরত ফাতিমার সঙ্গে শ্রেষ্ঠ পুরুষ আলী (আ.)-এর বিবাহ সম্পন্ন হলো তখন নবী (সা.) উম্মে আইমানকে বললেন,“
আমার ভ্রাতাকে ডাক।”
উম্মে আইমান বললেন,“
তিনি আপনার ভ্রাতা এবং আপনি তাঁকে নিজ কন্যার সঙ্গে বিবাহ দিচ্ছেন?”
রাসূল (সা.) বললেন,“
হ্যাঁ,উম্মে আইমান।”
অতঃপর তিনি আলীকে ডেকে আনলেন।
মহানবী (সা.) বারবার আলীর প্রতি ইশারা করে বলতেন,
هذا أخي و ابن عمّي و صهري و أبو ولدي
অর্থাৎ এ আমার ভাই,আমার চাচার পুত্র,আমার জামাতা ও আমার সন্তানদের পিতা।
একদিন রাসূল (সা.) আলীর সঙ্গে আলোচনা করার সময় বললেন,“
তুমি আমার ভাই ও বন্ধু।”
অন্য একবার তিনি বলেন,“
তুমি আমার ভ্রাতা এবং বেহেশতে বন্ধু হিসেবে আমার সঙ্গে থাকবে।”
অন্য একদিন আলী,তদীয় ভ্রাতা জা’
ফর এবং যাইদ ইবনে হারিসার মধ্যে কোন একটি ঘটনায় তাঁকে লক্ষ্য করে রাসূল (সা.) বলেন,“
হে আলী! তুমি আমার ভ্রাতা,আমার বংশধরদের পিতা,তুমি আমার হতে এবং আমার প্রতিই তোমার প্রত্যাবর্তন।”
অনুরূপ এক দিন আলীকে উপদেশ দিয়ে বললেন,“
তুমি আমার ভাই,আমার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে আমার ঋণ পরিশোধ করবে,আমার প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে,আমার ওপর আরোপিত দায়িত্ব পালন করবে।”
যখন তাঁর (আমার মাতাপিতা তাঁর জন্য উৎসর্গীকৃত) মৃত্যুকাল উপস্থিত হলো তখন মহানবী বললেন,“
আমার ভাইকে ডাক।”
হযরত আলী (আ.) আসলে বললেন,“
আমার নিকটে আস।”
তিনি তাঁর নিকটবর্তী হয়ে তাঁর পবিত্র মাথা নিজের বুকের ওপর টেনে নিলেন। এমতাবস্থায় রাসূল (সা.) তাঁকে অনেক কথা বললেন এবং কথা বলতে বলতেই তাঁর পবিত্র আত্মা দেহ হতে ঊর্ধ্বে যাত্রা করল
এবং তাঁর বর্ণিত কথাগুলোর একটি হলো : বেহেশতের দ্বারে নিম্নোক্ত কথাটি লেখা রয়েছে-
لا إله إلّا الله مُحمّد رّسول الله عليّ أخو رسول الله
অর্থাৎ আল্লাহ্ ছাড়া কোন উপাস্য নেই মুহাম্মদ তাঁর রাসূল আলী রাসূলের ভ্রাতা।
মহান আল্লাহ্‘
লাইলাতুল মাবি’
তে (অর্থাৎ হিজরতের রাত্রি যে রাত্রিতে হযরত আলী রাসূলের বিছানায় তাঁর স্থানে রাসূলের প্রাণ রক্ষার জন্য শয়ন করেছিলেন) হযরত জিবরাঈল ও মিকাঈল (আ.)-কে বললেন,“
আমি তোমাদের দু’
জনের মধ্যে ভাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন করলাম এবং তোমাদের একজনকে অন্যজন অপেক্ষা দীর্ঘজীবন দান করতে চাই। তোমাদের মধ্যে কে রাজী আছো তার জীবন সংক্ষিপ্ত ও অন্যজনের জীবন দীর্ঘ হোক।”
তাঁরা দু’
জনই নিজ জীবনের দীর্ঘতা চাইলেন। তখন মহান আল্লাহ্ তাঁদেরকে ওহী প্রেরণ করে বললেন,“
তোমরা আলী ইবনে আবি তালিবের মত হতে পারবে না। আমি মুহাম্মদ ও আলীর মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করে দিয়েছি। আলী মুহাম্মদের বিছানায় শয়ন করেছে যাতে নিজেকে তার জন্য উৎসর্গ করতে পারে এবং এভাবে তার জীবনকে নিজের জীবনের ওপর প্রাধান্য দিয়ে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে। তোমরা পৃথিবীতে নেমে যাও এবং তার জীবন রক্ষা কর।”
তাঁরা পৃথিবীতে অবতরণ করলেন এবং জিবরাঈল ও মিকাঈল যথাক্রমে হযরত আলী (আ.)-এর মাথা ও পায়ের নিকট অবস্থান নিলেন। হযরত জিবরাঈল আহবান করে বললেন,“
বাহ! বাহ! হে আবু তালিবের পুত্র! তোমাকে নিয়ে আল্লাহ্ ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করছেন।”
এ ঘটনার পটভূমিতেই নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে-
)
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْرِي نَفْسَهُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ وَاللَّهُ رَءُوفٌ بِالْعِبَادِ(
এবং মানুষের মাঝে এমন লোক আছে যে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নিজের জীবনকে বাজী রাখে আর মহান আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু।
(সূরা বাকারা : ২০৭)
হযরত আলী (আ.) সব সময় বলতেন,“
আমি আল্লাহর বান্দা,রাসূল (সা.)-এর ভ্রাতা এবং আমিই সিদ্দীকে আকবর। আমি ব্যতীত অন্য কেউ এ দাবী করলে সে মিথ্যাবাদী বৈ কিছু নয়।”
হযরত আলী (আ.) আরো বলেছেন,“
আল্লাহর শপথ,আমি রাসূলের ভ্রাতা,তাঁর চাচার সন্তান ও তাঁর জ্ঞানের উত্তরাধিকারী,তাই তাঁর কাছে আমা হতে কে অধিকতর যোগ্য?”
তৃতীয় খলীফা নির্বাচনের দিন শুরার সদস্য উসমান,আবদুর রহমান,সা’
দ ও যুবাইরের উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন,“
তোমাদের কসম দিয়ে বলছি ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের দিন রাসূল (সা.) আমাকে ব্যতীত তোমাদের মধ্য হতে কাউকেই কি নিজের ভ্রাতা হিসেবে মনোনীত করেছেন?”
তাঁরা বললেন,“
আল্লাহ্ জানেন,না।”
বদরের যুদ্ধে যখন আলী (আ.) ওয়ালিদের মুখোমুখি হন তখন ওয়ালিদ তাঁকে প্রশ্ন করে,“
কে তুমি?”
আলী (আ.) বলেন,“
আমি আল্লাহর বান্দা ও রাসূলের ভ্রাতা।”
অনুরূপ একবার হযরত উমরের খিলাফতের সময় আলী (আ.) তাঁকে প্রশ্ন করলেন,“
যদি বনি ইসরাঈলের একজন লোক আপনার নিকট আসে ও তাদের একজন বলে : আমি মূসা (আ.)-এর চাচাত ভাই তবে অন্যান্যদের ওপর তাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করবেন কি?”
হযরত উমর বললেন,“
অবশ্যই।”
আলী বললেন,“
আমি খোদার কসম করে বলছি আমি রাসূলের ভ্রাতা ও চাচাত ভাই।”
হযরত উমর নিজের গায়ের চাদর খুলে মাটিতে বিছিয়ে দিলেন ও আল্লাহর শপথ করে বললেন,“
আপনি অবশ্যই এর ওপর বসবেন যতক্ষণ না আমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হচ্ছি।”
রাসূলের ভ্রাতা ও চাচাত ভাই হবার কারণেই হযরত উমর তাঁর প্রতি এই সম্মান প্রদর্শন করেন।
৩। আমার কলম আমার এখতিয়ারের বাইরে চলে গিয়েছিল। যা হোক রাসূল (সা.) মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা এবং অন্যায় ও অপবিত্রতা হতে মসজিদ মুক্ত রাখার নিমিত্তে যেসকল সাহাবীর ঘর মসজিদের দিকে উন্মুক্ত ছিল তা বন্ধ করার নির্দেশ দেন কিন্তু হযরত আলীর ঘরকে পূর্বের মত খোলা রাখেন ও আল্লাহর পক্ষ হতে নির্দেশিত হয়ে আলী (আ.)-এর জন্য অপবিত্র অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ মুবাহ ঘোষণা করেন যেমনটি হযরত হারুন (আ.)-এর জন্যও ছিল। এ বিষয়েও আলী ও হযরত হারুন (আ.)-এর মধ্যে আমরা সাদৃশ্য লক্ষ্য করি। ইবনে আব্বাস বলেন,“
রাসূলুল্লাহ্ (সা.) যে সকল ঘর মসজিদের দিকে উন্মুক্ত হত সেগুলোকে বন্ধ করে দেন আলীর ঘর ব্যতীত। আলী ঐ পথেই মসজিদে প্রবেশ ও অতিক্রম করতেন। যেহেতু ঐ পথ ব্যতীত অন্য পথ ছিল না তাই অপবিত্র অবস্থাতেও সে পথেই বের হতেন।”
বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে সহীহ
একটি হাদীসানুযায়ী হযরত উমর ইবনে খাত্তাব বলেন,“
আলীকে তিনটি বস্তু দান করা হয়েছে,এর একটি যদি আমার হত তবে আরবের শ্রেষ্ঠ সম্পদ (লাল চুলের উষ্ট্র) হতে তা আমার নিকট উত্তম বলে পরিগণিত হত। তাঁর স্ত্রী রাসূলের কন্যা। তাঁর ঘর রাসূলের ঘর ও মসজিদ সংলগ্ন ছিল;সেখানে রাসূলের জন্য যা হালাল ছিল তা তাঁর জন্যও হালাল ছিল এবং খায়বারের দিন রাসূল তাঁর হাতেই পতাকা তুলে দেন।”
অন্য একটি সহীহ হাদীস মতে একদিন সা’
দ ইবনে মালিক আলী (আ.)-এর কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,“
রাসূল (সা.) তাঁর চাচা আব্বাস ও অন্যান্যদের মসজিদ হতে বাইরে যাবার নির্দেশ দিলে আব্বাস বললেন : আমাদের বের হতে বলছ অথচ আলীকে কাছে রেখেছ? রাসূল বললেন : আমি তোমাদের বের হতে বা তাকে থাকার নির্দেশ দেই নি,বরং আল্লাহ্ তোমাদের বাইরে যেতে ও তাকে এখানে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।”
হযরত যাইদ ইবনে আরকাম বলেন,“
রাসূল (সা.)-এর অনেক সাহাবীরই দরজা মসজিদের দিকে উন্মুক্ত ছিল ও তাঁরা সে পথে বাইরে যেতেন। রাসূল (সা.) আলীর গৃহ ব্যতীত অন্য সকল গৃহের দরজা বন্ধ করার নির্দেশ দিলেন। লোকেরা এ বিষয়ে কথা উঠালে রাসূল (সা.) দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করে বললেন : আমিই মসজিদের দিকে উন্মুক্ত সকল দ্বারকে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছি আলীর দ্বার ব্যতীত এবং আমি এরূপ করতে নির্দেশিত হয়েই তা করেছি।”
তাবরানী তাঁর‘
আল কাবীর’
গ্রন্থে ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন,“
রাসূল (সা.) একদিন মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেন : আমি নিজের ইচ্ছায় তোমাদের মসজিদ হতে বের হবার নির্দেশ দান করি নি এবং তাকে (আলী)-ও অবস্থান করতে বলি নি,বরং আল্লাহ্ তোমাদের বের হতে ও তাকে এখানে অবস্থান করতে বলেছেন। আমি বান্দা হিসেবে তাঁর নির্দেশ পালনকারী মাত্র। ওহীর মাধ্যমে যা আমাকে নির্দেশ দান করা হয় তা ব্যতীত আমি অন্য কিছু করি না।”
রাসূল (সা.) আরো বলেছেন,“
হে আলী! তুমি ও আমি ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে বৈধ নয় অপবিত্র অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করা।”
সা’
দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস,বাররা ইবনে আজেব,ইবনে আব্বাস,ইবনে উমর ও হুজাইফা ইবনে উসাইদ গাফফারী সকলেই বর্ণনা করেছেন,“
নবী (সা.) মসজিদে আসলেন ও বললেন : মহান আল্লাহ্ মূসাকে ওহীর মাধ্যমে নির্দেশ দিলেন : আমার জন্য পবিত্র মসজিদ নির্মাণ কর এবং সেখানে তুমি ও হারুন ব্যতীত কেউ যেন সর্বাবস্থায় অবস্থান না করে। তিনি আমাকেও নির্দেশ দিয়েছেন পবিত্র মসজিদ নির্মাণের সেখানে যেন আমি ও আমার ভাই আলী ব্যতীত অন্য কেউ অবস্থান (সর্বাবস্থায়) না করে।”
আমাদের এ ক্ষুদ্র লেখায় এ সম্পর্কিত সকল হাদীস ও রেওয়ায়েত একত্রিত করা সম্ভব নয়। এমন কি নির্ভরযোগ্য যে সকল বর্ণনা ইবনে আব্বাস,আবু সাঈদ খুদরী,যাইদ ইবনে আরকাম,আসমা বিনতে উমাইস,উম্মে সালামাহ্,হুজাইফা ইবনে উসাইদ,সা’
দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস,বাররা ইবনে আযেব,আলী ইবনে আবি তালিব,উমর ইবনে খাত্তাব,আবু যর,আবু তুফাইল,বুরাইদা আসলামী,আবু রাফে,রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর কৃতদাস,জাবির ইবনে আবদুল্লাহ্ আনসারী ও অন্যান্যদের হতে এসেছে তাও লিপিবদ্ধ করা অসম্ভব।
রাসূল (সা.) হতে একটি দোয়া বর্ণিত হয়েছে যা এরূপ- হে আল্লাহ! আমার ভ্রাতা মূসা আপনার নিকট প্রার্থনা জানিয়েছিলেন : হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষকে প্রসারিত করে দিন ও আমার জন্য আমার কাজকে সহজ করে দিন। আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন যাতে করে জনগণ আমার কথা বুঝতে পারে। আমার পরিবার হতে আমার ভ্রাতা হারুনকে আমার সহযোগী মনোনীত করুন। তার মাধ্যমে আমার মেরুদণ্ডকে শক্তিশালী করুন ও আমার কাজে তাকে সহযোগী করুন। আপনি তাঁর প্রতি ওহী প্রেরণ করে বলেছিলেন : অতিশীঘ্রই তোমার ভ্রাতার মাধ্যমে তোমার বাহুকে আমি শক্তিশালী করবো ও তোমাদের উচ্চ মর্যাদা ও সম্মান দান করবো।
হে পরওয়ারদিগার! আমি মুহাম্মদ আপনার বান্দা ও রাসূল। আমার বক্ষকে আপনি প্রসারিত করুন। আমার কর্মকে আমার জন্য সহজ করে দিন। আমার পরিবার হতে আমাকে একজন সহযোগী দান করুন এবং সে হলো আলী।
বাযযার অনুরূপ একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যেখানে নবী (সা.) আলী (আ.)-এর হাত ধরে বললেন,“
হযরত মূসা আল্লাহর নিকট চেয়েছিলেন যেন হযরত হারুনের মাধ্যমে তাঁর মসজিদকে পবিত্র রাখেন এবং আমি তাঁর নিকট আলীর মাধ্যমে আমার মসজিদ পবিত্র রাখার প্রার্থনা করছি।”
অতঃপর একজনকে হযরত আবু বকরের নিকট পাঠালেন যেন তাঁর মসজিদের দিকে উন্মুক্ত দ্বারটি বন্ধ করে দেন। তিনি বললেন,“
শুনলাম ও মেনে নিলাম।”
অতঃপর একে একে হযরত উমর,হযরত আব্বাসসহ সকল সাহাবীর নিকট এ নির্দেশ পাঠালেন। অতঃপর বললেন,“
আমি তোমাদের দ্বারসমূহ বন্ধ করি নি বা আলীর দ্বার উন্মুক্ত রাখি নি,বরং আল্লাহ্ই আলীর দ্বার উন্মুক্ত করেছেন ও তোমাদের দ্বারসমূহ বন্ধ করেছেন।”
হযরত আলী (আ.)-এর হযরত হারুনের সঙ্গে সাদৃশ্যের প্রমাণ হিসেবে এতটুকু আলোচনাই যথেষ্ট মনে করছি যেখানে তাঁদের পদমর্যাদা ও সম্মানের সর্বজনীনতা প্রমাণিত হয়েছে।
ওয়াসসালাম
শ