আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত0%

আল মুরাজায়াত লেখক:
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ: ইতিহাস

আল মুরাজায়াত

লেখক: আল্লামাহ্ সাইয়্যেদ আবদুল হুসাইন শারাফুদ্দীন আল মুসাভী
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ:

ভিজিট: 67180
ডাউনলোড: 8947

পাঠকের মতামত:

আল মুরাজায়াত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 133 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 67180 / ডাউনলোড: 8947
সাইজ সাইজ সাইজ
আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত

লেখক:
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বাংলা

সাঁইত্রিশতম পত্র

২৯ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

ওয়ালী শব্দটির কয়েকটি সাধারণ অর্থ রয়েছে। আপনার দাবীর সপক্ষে কোরআন ও হাদীসের প্রমাণ কোথায়?

ওয়ালী শব্দের সাধারণ অর্থ সাহায্যকারী,বন্ধু এবং অভিভাবক যিনি কোন বিষয়ে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন,যেমন প্রতিবেশী,সহযোগী,আনুগত্যকারী,পরিবার প্রধান বুঝানো হয়ে থাকে। সুতরাং যে হাদীস আপনি এনেছেন তার অর্থ বোধ হয় আলী আমার পরবর্তীতে তোমাদের সাহায্যকারী,বন্ধু,ভালবাসার পাত্র ও সহযোদ্ধা। আপনার দাবীর সপক্ষে কোরআন ও হাদীসের প্রমাণ কোথায়?

ওয়াসসালাম

আটত্রিশতম পত্র

৩০ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

১।   ওয়ালী শব্দের লক্ষ্য।

২।   এ অর্থেই যে ওয়ালী শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে তার সপক্ষে প্রমাণ।

১। ওয়ালী শব্দের অনেকগুলো অর্থের মধ্যে অভিভাবক একটি। যিনি কোন দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনিই অভিভাবক । এই হাদীসেও ওয়ালী সর্বাধিক ব্যবহৃত এ অর্থেই এসেছে। যেমন অক্ষম ব্যক্তির ওয়ালী হলো তার পিতা,দাদা,তাদের নিযুক্ত অছি এবং শারয়ী হাকীম। কারণ তারা ঐ ব্যক্তির দায়িত্ব গ্রহণ করেন ও তার সকল বিষয়ে অধিকার লাভ করেন।

২। হাদীসটিতে ওয়ালী যে এ অর্থেই এসেছে তা বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের নিকট গোপন নয়,কারণ রাসূল (সা.) যখন বলেন, সেই আমার পর তোমাদের অভিভাবক

 ( و هو وليّكم بعدي) তখন তা বেলায়েত বা অভিভাবকত্বের অর্থই বুঝায়।২৯৯ এ হাদীসটিতে ওয়ালী শব্দটি অন্য কোন অর্থের সঙ্গে সঙ্গতিশীল নয়,কারণ বন্ধুত্ব,ভালবাসা,সহায়তা প্রভৃতি অর্থ বিশেষ ব্যক্তির জন্য উল্লেখ অপ্রয়োজনীয় এবং স্বাভাবিকভাবেই মুমিন পুরুষ ও নারী একে অপরের বন্ধু ও সাহায্যকারী।

যদি ওয়ালী শব্দের অর্থ এখানে অভিভাবক ব্যতীত অন্য কিছু হত তবে তা বিশেষ কোন মর্যাদা বা শ্রেষ্ঠত্বের বিষয় নয় যে রাসূল তাঁর ভাইয়ের জন্য এমন অবস্থায় তা উল্লেখ করবেন। কি গোপন রহস্য রয়েছে যার কারণে নবী (সা.) এরূপ কষ্ট করে কথাগুলো বলবেন?!রাসূল (সা.) বরং কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে পরিষ্কার করার জন্য এরূপ করেছেন।

মহানবী (সা.)-এর সুস্পষ্ট প্রজ্ঞা,তাঁর নিষ্পাপত্ব এবং শেষ নবী হিসেবে তাঁর দায়িত্ব তাই সাধারণ এ সকল ধারণার ঊর্ধ্বে। তদুপরি হাদীসগুলো থেকে এটি স্পষ্ট হয় যে,বেলায়েত বা অভিভাবকত্ব নবীর পর শুধু আলী (আ.)-এর জন্যই নির্দিষ্ট। এ কারণেই আমরা ওয়ালী শব্দের উপরোক্ত অর্থ গ্রহণ করেছি এবং এটি ব্যতীত অন্যান্য অর্থ,যেমন সাহায্যকারী,বন্ধু ও ভালবাসার পাত্র প্রভৃতির সঙ্গে তা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে,আলী (আ.) যখন কিশোর ছিলেন তখন হতে রাসূলের সান্নিধ্যে প্রশিক্ষিত হয়েছেন। এই রেসালতের ক্রোড়েই তিনি যৌবনে পৌঁছেছেন। সেই কৈশোর হতে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি মুসলমানদের সাহায্যকারী ছিলেন এবং সকল সময়েই মুসলমানদের প্রতি তাঁর গভীর ভালবাসা ও বন্ধুত্ব ছিল। তাই মুসলমানদের বন্ধু,সাহায্যকারী ও তাদের প্রতি ভালবাসার বৈশিষ্ট্যগুলো নবীর মৃত্যুর পরবর্তী সময়ের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখের কোন প্রয়োজন নেই।

অপর যে হাদীসটি আমাদের দাবীর সপক্ষে প্রমাণ তা হলো মুসনাদে আহমাদের ৫ম খণ্ডের ৩৪৭ পৃষ্ঠায় বুরাইদাহ্ হতে ইবনে আব্বাস ও সাঈদ ইবনে যুবাইর সূত্রে বর্ণিত হাদীস। বুরাইদাহ্ বলেছেন, ইয়েমেনের যুদ্ধে আলীর সঙ্গে ছিলাম। তার ওপর অসন্তুষ্ট হয়েছিলাম। তাই নবী (সা.)-এর নিকট পৌঁছে তার বিষয়ে অভিযোগ করলে তাঁর চেহারা পরিবর্তিত হয়ে গেল এবং তিনি বললেন :

يا بريدة ألست أولى بالمؤمنين من أنفسهم؟ قلت بلى يا رسول الله. قال من كنت مولاه فعليّ مولاه

হে বুরাইদাহ্! আমি কি মুমিনদের ওপর তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক অধিকার রাখি না? আমি বললাম : অবশ্যই,ইয়া রাসূলাল্লাহ্! তিনি বললেন : আমি যার মাওলা (অভিভাবক) আলীও তার মাওলা।

হাকিম নিশাবুরী তাঁর মুসতাদরাক গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১১০ পৃষ্ঠায় হাদীসটি এনেছেন এবং বলেছেন সহীহ মুসলিমের শর্তানুসারে হাদীসটি সহীহ।

যাহাবী তাঁর তালখিসে মুসতাদরাক গ্রন্থে মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদীসটিকে বিশুদ্ধ বলেছেন। আপনি জানেন, আমি কি মুমিনদের নিজেদের অপেক্ষা তাদের ওপর অধিক অধিকার রাখি না বাক্যটি পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যা আমাদের দাবীর সত্যতাকে সুস্পষ্ট করে।

যে কেউ এ হাদীসগুলোর প্রতি এবং এর পরিবেশ-পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিকতাকে লক্ষ্য করবে,নিঃসন্দেহে তার নিকট সুস্পষ্ট হবে যে,আমাদের দাবী সত্য। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর।

ওয়াসসালাম

উনচল্লিশতম পত্র

৩০ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

   

বেলায়েতের আয়াত সম্পর্কে আলোচনার আহবান।

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আলোচনার ময়দানে আপনি সত্যবাদী,বিতর্কে আপনি দৃঢ়পদ। এ বিষয়ে আপনি এতটা শক্তিশালী যে,আপনার প্রতিপক্ষ আপনার বিরোধিতার শক্তি হারিয়ে ফেলে ময়দানে রণভঙ্গ দিতে বাধ্য হবে।

আমি প্রথম ব্যক্তি হিসেবে আপনার বর্ণিত হাদীসসমূহের দলিল-প্রমাণের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করছি। যদি সাহাবীদের নির্দেশানুযায়ী আমল করা ওয়াজিব না হত তবে হয়তো আপনার কথা আমি মেনে নিতাম। যেহেতু পূর্ববর্তী সৎ কর্মশীল সাহাবীদের অনুসরণ অপরিহার্য তাই বাহ্যিকভাবে হাদীসগুলোর যে অর্থ আমরা বুঝেছি তা গ্রহণ করতে পারছি না।

আপনি আপনার পত্রের শেষে একটি সুস্পষ্ট আয়াত বর্ণিত হাদীসসমূহের পক্ষে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করেছেন কিন্তু আয়াতটি কিরূপে আপনাদের দাবীকে সত্য প্রমাণ করে তার ব্যাখ্যা প্রদান করেন নি। আয়াতটির ব্যাখ্যা প্রদান করে তাতে আমাদের চিন্তা করার সুযোগ দিন।

ওয়াসসালাম

চল্লিশতম পত্র

২ মুহররম ১৩৩০ হিঃ

১।   বেলায়েতের আয়াত আলী (আ.) সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে।

২।   আয়াতটির শানে নুযূল (অবতীর্ণ হবার পটভূমি)।

৩।   আয়াতটির ব্যাখ্যার মাধ্যমে প্রমাণ উপস্থাপন।

১। আল কোরআনের একটি সুস্পষ্ট আয়াত আপনার অবগতির জন্য পড়ছি। আর এটি হলো সূরা মায়েদাহর ৫৫-৫৬ নং আয়াত-

 ) إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ (৫৫) وَمَنْ يَتَوَلَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ(

তোমাদের ওয়ালী বা অভিভাবক হলেন একমাত্র আল্লাহ্,তাঁর রাসূল ও সেসব ব্যক্তি যারা ঈমান এনেছে,নামায কায়েম করেছে এবং রুকু অবস্থায় যাকাত দিয়েছে। যে কেউ আল্লাহ্,তাঁর রাসূল এবং যারা ঈমান এনেছে তাদের ভালবাসে৩০০ ও সৎ কর্ম করে (সে নিজ দায়িত্ব পালন করেছে) নিশ্চয়ই আল্লাহর দল বিজয়ী হবে।

এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই যে,এ আয়াতটি আলী (আ.)-এর সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে যখন তিনি রুকুরত অবস্থায় ভিক্ষুককে তাঁর আংটি দান করেন।

২। হযরত আলী রুকুরত অবস্থায় ভিক্ষুককে নিজ আংটি দান করলে আল্লাহ্ এ আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। এ সম্পর্কিত হাদীস রাসূল (সা.)-এর আহলে বাইতের ইমামদের হতে মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু অন্যদের হতে বর্ণিত এ সম্পর্কিত হাদীস (যেমন ইবনে সালাম হতে বর্ণিত হাদীস) মারফু তাই প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপনের জন্য তা যথেষ্ট। এজন্য সহীহ নাসায়ী অথবা জাম বাইনা সিহাহ সিত্তাহ্ গ্রন্থে সূরা মায়েদাহর তাফসীর দেখুন। এছাড়া হযরত আলী ও ইবনে আব্বাস সূত্রেও এ সম্পর্কিত হাদীস মারফু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। ইবনে আব্বাস বর্ণিত হাদীসটি ওয়াহেদীর আসবাবুন নুযূল গ্রন্থে উপরোক্ত আয়াতের তাফসীরে এসেছে। খাতীব বাগদাদী তাঁর আল মুত্তাফিক ৩০১ গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

আবু আশশাইল ও ইবনে মারদুইয়া তাঁদের মুসনাদে হযরত আলীর হাদীসটি এনেছেন। এ আয়াতটি যে আলী (আ.)-এর বিষয়ে অবতীর্ণ হয়েছে তা সকল মুফাসসিরই স্বীকার করেছেন। এজন্য কানযুল উম্মাল গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৪০৫ পৃষ্ঠার ৬১৩৭ নং হাদীসটি দেখুন।

আহলে সুন্নাহর কয়েকজন প্রসিদ্ধ আলেম এ বিষয়ে যে ইজমা রয়েছে তা তাঁদের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন,যেমন ইমাম কুশচী তাঁর শারহে তাজরীদ গ্রন্থে ইমামতের আলোচনায় তা এনেছেন।

গায়াতুল মারাম গ্রন্থে অষ্টাদশ অধ্যায়ে উপরোক্ত আয়াতের শানে নুযূলে আমাদের অনুরূপ ২৪টি হাদীস আহলে সুন্নাহ্ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। বিষয়টি যদি আকাশের সূর্যের মত সুস্প ষ্ট না হত আর আমার লেখাকেও যদি সংক্ষিপ্ত করতে না হত তবে এতদ্সংক্রান্ত সকল সহীহ হাদীস এখানে লিপিবদ্ধ করতাম। যা হোক,আলহামদুলিল্লাহ্ এ বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আহলে সুন্নাহর সূত্রে বর্ণিত এরূপ একটি হাদীস যা ইমাম আবু ইসহাক আহমাদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম নিশাবুরী সা লাবী৩০২ বর্ণনা করেছেন তা এখানে উল্লেখ করছি। তিনি তাঁর তাফসীরে কাবীর গ্রন্থে উক্ত আয়াতের স্থানে হযরত আবু যর গিফারী সূত্রে বর্ণনা করেছেন, আমার এই দু কর্ণ দ্বারা রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি (যদি না শুনে থাকি তবে তা বধির হোক),আমার এই দু চোখ দিয়ে আমি দেখেছি (যদি না দেখে থাকি তবে তা অন্ধ হোক),নবী (সা.) বলতেন : আলী সৎ কর্মশীলদের নেতা ও অস্বীকারকারীদের হত্যাকারী। সে-ই সম্মানিত যে আলীকে সাহায্য করবে আর সে-ই লাঞ্ছিত যে আলীকে লাঞ্ছিত করতে চায়। জেনে রাখ,আমি একদিন রাসূলের সঙ্গে মসজিদে নামাযরত ছিলাম। একজন ভিক্ষুক মসজিদে এসে কিছু চাইল। কেউ তাকে সাহায্য না করলে আলী তাঁর কনিষ্ঠা আঙ্গুল (যাতে আংটি ছিল) দ্বারা তাকে ইশারা করলেন। ভিক্ষুক তাঁর নিকটবর্তী হয়ে আংটিটি খুলে নিল। অতঃপর রাসূল (সা.) আল্লাহর দরবারে অনুনয় করে প্রার্থনা করে বললেন : হে আল্লাহ্! আমার ভ্রাতা মূসা আপনার নিকট প্রার্থনা করে বলেছিলেন : আমার বক্ষকে প্রসারিত করে দিন,আমার কাজকে আমার নিকট সহজ করে দিন। আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন যাতে আমার কথা অন্যরা বোঝে। আমার ভাই হারুনকে আমার সহযোগী বানিয়ে দিন। তার মাধ্যমে আমার মেরুদণ্ডকে শক্তিশালী করুন এবং আমার কাজে তাকে অংশীদার করুন যাতে করে আপনার আরো অধিক প্রশংসা ও গুণকীর্তন করতে পারি। আপনি আমাদের ওপর সর্বদ্রষ্টা। হে আল্লাহ্! আপনি মূসাকে বলেছিলেন : তোমার প্রার্থনা আমি গ্রহণ করলাম। তুমি যা চেয়েছ তা তোমাকে দেয়া হলো। হে আল্লাহ্! আমিও আপনার বান্দা ও রাসূল। আমাদের হৃদয়ের প্রসারতা দান করুন। আমার কাজকে সহজ করে দিন। আমার পরিবার হতে আলীকে আমার সহযোগী করুন। তার মাধ্যমে আমার মেরুদণ্ডকে শক্তিশালী করুন।

হযরত আবু যর (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ,তখনও রাসূলের দোয়া করা শেষ হয় নি,হযরত জিবরাঈল (আ.) ওহী নিয়ে আসলেন-

) إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ (৫৫) وَمَنْ يَتَوَلَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ(

৩। আপনি (আপনার মাধ্যমে আল্লাহ্ সত্যকে সাহায্য করুন) জানেন যে,এখানে ওয়ালী অর্থ অভিভাবক হিসেবে অধিকার লাভ । যেমন আমরা বলি অমুক ব্যক্তি অমুকের অভিভাবক। আরবী ভাষাবিদরা বলেন,كلّ من ولى أمر أحد فهو وليّه অর্থাৎ যে কেউ কারো কোন বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত হবে সে ঐ ব্যক্তির ওয়ালী।

সুতরাং এ আয়াতের অর্থ হবে একমাত্র যে ব্যক্তি তোমাদের বিভিন্ন বিষয়ে তোমাদের ওপর দায়িত্ব লাভ করেছেন (অভিভাবক হিসেবে অধিকার লাভ করেছেন) তিনি একমাত্র আল্লাহ্,তাঁর রাসূল এবং আলী (যেহেতু ঈমান আনয়ন,নামায আদায় ও রুকুরত অবস্থায় যাকাত দানের বৈশিষ্ট্যগুলো শুধু তাঁর মধ্যেই ছিল এবং তাঁর বিষয়েই আল্লাহ্ এই আয়াত অবতীর্ণ করেছেন)।

মহান আল্লাহ্ বেলায়েত ও অভিভাবকত্বের এই অধিকারকে তাঁর নিজের জন্য,তাঁর রাসূল (সা.) ও উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যের ব্যক্তির (আলীর) জন্য একইভাবে বর্ণনা করে নির্দিষ্ট করেছেন। আপনি জানেন,মহান আল্লাহর বেলায়েত সর্বজনীন। সুতরাং তাঁর রাসূল ও নিয়োজিত ওয়ালীর বেলায়েতও সর্বজনীন ও একই পন্থায় কার্যকর। সুতরাং আমরা এর অর্থ সাহায্যকারী,ভালবাসার পাত্র,বন্ধু ইত্যাদি করবো তা বৈধ হবে না। তদুপরি বাক্যের প্রথমেإنَّما (একমাত্র) ব্যবহার করায় বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়েছে। সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর।

ওয়াসসালাম

একচল্লিশতম পত্র

৩ মুহররম ১৩৩০ হিঃ

আলোচ্য আয়াতেالّذين آمنو ا বহুবচন এসেছে। কিভাবে তা একবচনে ব্যবহৃত হওয়া সম্ভব?

আপনার কথার পরিপ্রেক্ষিতের বলা যায়

) و الّذين آمنوا الّذين يقيمون الصّلوة و يؤتون الزّكوة و هم راكعون(

বাক্যটিতে সবস্থানেই বহুবচন এসেছে। তাই বহুবচনই এর বাস্তবতা। সেক্ষেত্রে কিভাবে তা হযরত আলী (কাঃ)-এর জন্য প্রযোজ্য হবে। যেহেতু তিনি এক ব্যক্তি। এ বিষয়ে আপনার জবাব কি?

ওয়াসসালাম

বিয়াল্লিশতম পত্র

৪ মুহররম ১৩৩০ হিঃ

১।   আরবরা একবচনের ক্ষেত্রেও কখনো কখনো বহুবচনের ব্যবহার করে।

২।   এর সপক্ষে নমুনা উপস্থাপন।

৩।   এ বিষয়ে তাবারী যা বলেছেন।

৪।   এ বিষয়ে যামাখশারী যা বলেছেন।

৫।   আমি যা মনে করি।

১। আরবরা একবচনের জন্যও বহুবচন ব্যবহার করে থাকে। পরিস্থিতির এরূপ দাবীর কারণেই এমনটি করা হয়।

২। এ কথার সপক্ষে দলিল হিসেবে সূরা আলে ইমরানের ১৭৩ নম্বর আয়াতকে আমরা উল্লেখ করতে পারি যেখানে বলা হয়েছে-

) الَّذِينَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ إِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيمَانًا وَقَالُوا حَسْبُنَا اللَّـهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ(

যাদেরকে লোকেরা বলেছে তোমাদের সাথে মোকাবিলা করার জন্য লোকেরা সমাবেশ করেছে (বহু সাজ-সরঞ্জামসহ),তাদের ভয় কর,তখন তাদের বিশ্বাস (ঈমান) আরও দৃঢ়তর হয়ে যায় এবং তারা বলে আমাদের জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট,কতই না উত্তম সংরক্ষণকারী তিনি!

আমরা জানি এখানে বক্তা এক ব্যক্তি,সে হলো নাঈম ইবনে মাসউদ আশজাঈ (মুফাসসির,মুহাদ্দিস ও হাদীসবেত্তাগণ এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেন)।

মহান আল্লাহ্ এখানে এক ব্যক্তিকে বোঝাতে আন্-নাস শব্দ ব্যবহার করেছেন যা বহুবচন। এখানে বহুবচন ব্যবহারের উদ্দেশ্য হলো যে সকল ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির অসত্য ও ভিত্তিহীন কথায় কর্ণপাত করেন নি তাঁদের সম্মানিত করা। কথিত আছে,আবু সুফিয়ান ঐ ব্যক্তিকে দশটি উট দান করে যাতে সে এরূপ গুজবের মাধ্যমে মুসলমানদের ভীত ও দুর্বল করতে চেষ্টা চালায়। তাই সে এ কাজ করে। সে মুসলমানদের নিকট এসে বলে, হে লোকসকল! মুশরিকদের যোদ্ধারা তোমাদের বিরুদ্ধে প্রস্তুত হয়ে রয়েছে,তাদের হতে ভীত হও। মুসলমানদের অধিকাংশই এ কথা শুনে আবু সুফিয়ানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পতিত হলে রাসূল (সা.) সত্তর জন অশ্বারোহী নিয়ে সেদিকে যাত্রা করেন। এ আয়াত এই সত্তর জন ব্যক্তির শানে অবতীর্ণ হয়েছিল যাঁরা ঐ গুজবের প্রতি ভ্রুক্ষেপ ও কর্ণপাত করেন নি।

সুতরাং এখানে আন্-নাস একবচনের স্থানে ব্যবহার একটি সম্মানের বিষয়। যেহেতু যে সত্তর জন ব্যক্তি রাসূলের সঙ্গে যাত্রা করেন তাঁদের জন্য অলঙ্কারিকভাবে অধিকতর উপযুক্ত শব্দ ব্যবহার করা উচিত সেজন্য সেখানেالّذين قال لَهم رجل إنّ النّاس قد جَمعوا  যাদেরকে একজন ব্যক্তি বলেছিল না বলে الّذين قال لَهم النّاس তাদেরকে লোকসকল বলেছিল বলা হয়েছে।

এরূপ বিষয় আল্লাহর বাণীতে,রাসূলের হাদীসে এবং আরবদের কথায় প্রচুর লক্ষ্য করা যায়। যেমন আল্লাহ্ বলেছেন,

) يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُ‌وا نِعْمَتَ اللَّـهِ عَلَيْكُمْ إِذْ هَمَّ قَوْمٌ أَن يَبْسُطُوا إِلَيْكُمْ أَيْدِيَهُمْ فَكَفَّ أَيْدِيَهُمْ عَنكُمْ(

হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের ওপর আল্লাহর নিয়ামতের কথা স্মরণ কর যখন এক সম্প্রদায় তোমাদের দিকে স্বীয় হস্ত প্রসারিত করতে সচেষ্ট হয়েছিল তখন তিনি তাদের হস্ত তোমাদের হতে প্রতিহত করে দিলেন।

এখানে উল্লেখ্য,উপরোক্ত আয়াতে সম্প্রদায় বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে ঘটনা হলো বনি মাহারেব গোত্রের গুরাস নামক এক ব্যক্তি বনি নাজির গোত্রের আমর ইবনে জাহাশের নির্দেশে অস্ত্রধারণ করতঃ রাসূলের ওপর আক্রমণের পরিকল্পনা করে। তখন আল্লাহ্ রাসূলকে তা অবহিত করার মাধ্যমে রক্ষা করেন। এ ঘটনাটি মুফাসসির ও হাদীসবিদগণ উল্লেখ করেছেন। ইবনে হিশাম তাঁর সিরাত গ্রন্থের ৩য় খণ্ডে জাতুর রিকাহ্ নামক যুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ্ কওম বা সম্প্রদায় শব্দটি বহুবচন হওয়া সত্ত্বেও এই এক ব্যক্তির জন্য ব্যবহার করেছেন কারণ এ ঘটনায় রাসূলের জীবন রক্ষা পায় যা মুসলমানদের প্রতি বিশেষ রহমত বলে গণ্য।

তেমনি মুবাহিলার আয়াতে আবনা , নিসা আনফুস শব্দগুলো সর্বজনীন হওয়া সত্ত্বেও ইমাম হাসান ভ্রাতৃদ্বয়,হযরত ফাতিমা ও হযরত আলীর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। এটি সর্বসম্মতভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং তাঁদের সম্মান ও মর্যাদার কারণেই তা করা হয়েছে।

এ উদাহরণসমূহ একবচনের স্থানে বহুবচন ব্যবহারকে অদূষণীয়,এমন কি কোন কোন ক্ষেত্রে অলঙ্কারশাস্ত্রের জন্য অপরিহার্য বলে প্রমাণ করে।

৩। ইমাম তাবারসী তাঁর মাজমাউল বায়ান গ্রন্থে উপরোক্ত আয়াতের (বেলায়েতের আয়াত) তাফসীরে বলেছেন, এখানে বহুবচন বাচক শব্দ হযরত আলীর জন্য ব্যবহার তাঁর প্রতি সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শনের নিমিত্তে করা হয়েছে। কারণ ভাষাবিদগণ একবচনের স্থলে বহুবচনের ব্যবহার এ উদ্দেশ্যেই করে থাকেন। এটি এতটা প্রসিদ্ধ রীতি যে,দলিল-প্রমাণ উপস্থাপনের প্রয়োজন পড়ে না।

৪। যামাখশারী তাঁর তাফসীরে কাশশাফ গ্রন্থে বলেছেন, যদি প্রশ্ন করা হয় বহুবচন সূচক শব্দ কিরূপে হযরত আলীর জন্য ব্যবহার করা হলো,তার উত্তরে বলব যদিও একের অধিক ব্যক্তি এরূপ কাজ সম্পাদন করে নি তদুপরি যাতে মানুষ এরূপ কাজের প্রতি উৎসাহিত হয় এবং তদ্রুপ সম্মান লাভের জন্য প্রচেষ্টা চালায় সেজন্যই এখানে বহুবচন সূচক শব্দ একবচনের স্থানে ব্যবহৃত হয়েছে। মুসলমানদের অপরিহার্যরূপে দরিদ্র ও অভাবীদের প্রতি সাহায্যের ক্ষেত্রে আগ্রহী করে তোলার জন্য নামাযের মধ্যেও তা বিলম্বিত না করার শিক্ষা এখানে দেয়া হয়েছে।

৫। একবচনের স্থলে বহুবচনের ব্যবহারের বিষয়টি আমার দৃষ্টিতে এসব হতেও সূক্ষ্ম একটি বিষয় এবং এটি অধিকাংশ মানুষের জন্য আল্লাহর বিশেষ রহমতের ফলশ্রুতিতে দান করা হয়েছে। কারণ হযরত আলী ও বনি হাশিমের প্রতি বিদ্বেষ,হিংসা ও শত্রুতা পোষণকারী মুনাফিকরা ও অন্যদের মধ্যে যারা তাঁর হতে অগ্রগামী হবার ইচ্ছা পোষণ করত তারা একবচনের মাধ্যমে বিষয়টি হযরত আলীর জন্য নির্দিষ্ট হওয়াকে কোন ক্রমেই মেনে নিতে পারত না। যেহেতু তখন সত্যকে আড়াল করার সরাসরি কোন সুযোগ তারা পেত না তাই সম্ভাবনা ছিল তা করতে ব্যর্থ হয়ে তারা এমন কর্মে লিপ্ত হত যার ফলশ্রুতিতে ইসলামই বিপন্ন হয়ে পড়ত। এখানে একবচনের স্থানে বহুবচন ব্যবহারের মাধ্যমে সে পথ বন্ধ করা হয়েছে এবং রাসূল (সা.) হতে বিভিন্নভাবে বর্ণিত হাদীসসমূহের মাধ্যমে বেলায়েতের বিষয়টিকে স্বস্থানে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। রাসূলের মাধ্যমে এটি প্রতিষ্ঠিত হবার প্রক্রিয়া সেদিন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল যেদিন দীনকে পূর্ণাঙ্গ ও নিয়ামতকে সম্পূর্ণ করেন। যে বিষয়টি গ্রহণে জনসাধারণ কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হয় সে বিষয়ের প্রচারে এরূপ প্রজ্ঞাপূর্ণ পদক্ষেপেরই প্রয়োজন। নতুবা একবচনের মাধ্যমে বিষয়টি নির্দিষ্ট হলে তারা একগুঁয়েমীবশত সরাসরি তা প্রত্যাখ্যান করত।

এ গুরুত্বপূর্ণ দিকটি শুধু এ আয়াতের জন্য নয়,বরং কোরআনের যে সকল আয়াত আলী (আ.) ও আহলে বাইতের শানে বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর জন্যও প্রযোজ্য এবং বিষয়টি সুস্পষ্ট। এই বিষয়টিকে আমি আমার সাবিলুল মুমিনীন ওয়া তানযিলুল আয়াত গ্রন্থে সুস্পষ্ট দলিল-প্রমাণসহ উপস্থাপন ও স্পষ্ট করেছি। হেদায়েত ও তৌফিকের জন্য আল্লাহর প্রশংসা করছি।

ওয়াসসালাম

তেতাল্লিশতম পত্র

৪ মুহররম ১৩৩০ হিঃ

আয়াতের ধরন ও প্রেক্ষাপট থেকে বোঝা যায় যে,এখানে ওয়ালী বলতে বন্ধু বোঝানো হয়েছে।

আল্লাহ্ আপনার পিতাকে পুরস্কৃত করুন। আপনি আমার মন হতে সন্দেহ দূর করেছেন ও সত্যকে আমার নিকট প্রকাশ করেছেন। তবে একটি বিষয় আমার নিকট পরিষ্কার নয়,তা হলো আয়াতটি কাফেরদের বন্ধু ও ওয়ালী হিসেবে গ্রহণের বিরোধিতার ধারাবাহিকতায় এসেছে কারণ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী আয়াত হতে তাই বোঝা যায়। এটি এর সপক্ষে অন্যতম দলিল যে আয়াতে ওয়ালী র উদ্দেশ্য সাহায্যকারী , বন্ধু ভালবাসার পাত্র হিসেবে গ্রহণ । অনুগ্রহপূর্বক ব্যাখ্যা দান করুন।

ওয়াসসালাম