চুয়ান্নতম পত্র
১৮ মুহররম ১৩৩০ হিঃ
গাদীরের হাদীসের কিছু অংশের প্রতি ইঙ্গিত
তাবরানী ও অনেকেই যাইদ ইবনে আরকাম হতে বর্ণিত এ হাদীসটির বিশুদ্ধতার বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।
তিনি বর্ণনা করেছেন,নবী করিম (সা.)‘
গাদীরে খুম’
নামক স্থানে একটি বৃক্ষের নীচে একটি খুতবা পাঠ করেন যা এরূপ : হে লোকসকল! খুব শীঘ্রই আমি আমার প্রভুর পক্ষ হতে দাওয়াত পাব এবং আমি তা গ্রহণ করবো
। আমি দায়িত্বশীল এবং এ বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হব
এবং তোমরাও দায়িত্বশীল ও তোমাদের দায়িত্বের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে
তখন তোমরা আমার বিষয়ে কি বলবে? সকলে বলল,“
আপনি আপনার ওপর আরোপিত রেসালতের দায়িত্ব পালন করেছেন,জিহাদ করেছেন,উপদেশ ও নির্দেশনা দিয়েছেন। আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম পুরস্কার দান করুন।”
রাসূল (সা.) বললেন,“
তোমরা কি এ সাক্ষ্য প্রদান কর না,আল্লাহ্ ছাড়া কোন মাবুদ নেই ও মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল,বেহেশত-দোযখ,মৃত্যু,মৃত্যুর পর পুনরুত্থান সবই সত্য? তোমরা মৃত্যুর পরবর্তী জীবন ও কিয়ামতের বিষয়ে কি বিশ্বাস স্থাপন কর নি? তারা বলল,“
হ্যাঁ,আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি।”
অতঃপর মহানবী (সা.) বলেন,“
হে আল্লাহ্! আপনি সাক্ষী থাকুন।”
অতঃপর তিনি ঘোষণা করেন,“
হে লোকসকল! আল্লাহ্ আমার মাওলা ও অভিভাবক এবং আমি মুমিনদের অভিভাবক হিসেবে তাদের নিজেদের অপেক্ষা তাদের ওপর অধিক অধিকার রাখি।”
فمن كنت مولاه فهذا مولاه يعنى عليّا اللّهم وال من والاه و عاد من عاداه
সুতরাং জেনে রাখ আমি যার মাওলা বা অভিভাবক এই ব্যক্তি (আলীও) তার মাওলা বা অভিভাবক। হে আল্লাহ্! আপনি তাকে ভালবাসুন যে আলীকে ভালবাসে আর তার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করুন যে আলীর সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে।”
হে লোকসকল! আমি তোমাদের পূর্বেই হাউজে কাওসারে উপস্থিত হব তোমরা হাউজের নিকট আমাকে পাবে। এ হাউজ বসরা হতে সানআ’
র দূরত্ব হতেও দীর্ঘ এবং এর তীরে আকাশের তারকারাজির সংখ্যার মত রৌপ্য পাত্রসমূহ থাকবে। যখন তোমরা এ হাউজে আমার নিকট আসবে তোমাদের আমি দু’
টি ভারী বস্তু (কোরআন ও আমার আহলে বাইত) সম্পর্কে প্রশ্ন করব যে,এ দু’
য়ের সাথে তোমরা কিরূপ আচরণ করেছ। প্রথম ভারী বস্তু আল্লাহর কিতাব যার এক প্রান্ত আল্লাহর হাতে এবং অপর প্রান্ত তোমাদের হাতে যা দ্বারা এটি আঁকড়ে ধরবে যাতে করে বিচ্যুত এবং পরিবর্তিত (আমার পরে) না হয়ে যাও এবং দ্বিতীয় ভারী বস্তু আমার রক্ত সম্পর্কীয় আহলে বাইত যাদের সম্পর্কে সূক্ষ্মদর্শী পরম জ্ঞানী আল্লাহ্ আমাকে জানিয়েছেন এ দু’
টি ভারী বস্তু হাউজে আমার সঙ্গে মিলিত হওয়া পর্যন্ত পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না।”
হাকিম তাঁর‘
মুসতাদরাক’
গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১০৯ পৃষ্ঠায় হযরত আলী (আ.)-এর মানাকিব বর্ণনায় যাইদ ইবনে আরকাম হতে দু’
টি সূত্রে (যা বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে সহীহ বলে পরিগণিত) হাদীসটি উল্লেখ করেছেন,“
যখন রাসূল (সা.) বিদায় হজ্ব হতে ফিরে আসছিলেন তখন‘
গাদীরে খুম’
নামক স্থানে থামলেন। একটি বৃক্ষের নীচে উঁচু মঞ্চ প্রস্তুত করা হলো। তিনি তার ওপর দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশ্যে বললেন : আমি আমার প্রভুর পক্ষ হতে আহবায়িত হয়েছি এবং তা গ্রহণ করেছি। আমি তোমাদের মাঝে দু’
টি মূল্যবান বস্তু রেখে যাচ্ছি যার একটি অপরটি হতে বৃহৎ,তার একটি হলো আল্লাহর কিতাব এবং অপরটি আমার আহলে বাইত। এ দু’
বস্তুর সঙ্গে তোমরা কিরূপ আচরণ করবে? এরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না যতক্ষণ না হাউজে আমার সঙ্গে মিলিত হবে। আল্লাহ্ আমার মাওলা ও অভিভাবক এবং আমি মুমিনদের মাওলা। অতঃপর রাসূল (সা.) আলীর হাত ধরে ঘোষণা করলেন :من كنت مولاه فهذا وليّه
আমি যার মাওলা এও (আলীও) তার মাওলা। হে আল্লাহ্! আপনি তাকে ভালবাসুন যে আলীকে ভালবাসে এবং তার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করুন যে আলীর সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে।”
হাদীসটি বেশ দীর্ঘ হওয়া সত্ত্বেও হাকিম পুরোটিই বর্ণনা করেছেন কিন্তু যাহাবী তাঁর‘
তালখিস’
গ্রন্থে শেষ অংশ বর্ণনা করেন নি। হাকিম উক্ত গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ৫৩৩ পৃষ্ঠায় যাইদ ইবনে আরকাম হতে দ্বিতীয় বারের মত হাদীসটি বর্ণনা করে একে বিশুদ্ধ বলেছেন। যাহাবী তাঁর‘
তালখিস’
গ্রন্থেও এ সত্যটি স্বীকার করেছেন।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল যাইদ ইবনে আরকাম
হতে বর্ণনা করেছেন,“
আমরা রাসূলের সঙ্গে এক উপত্যকায় উপস্থিত হলাম যাকে‘
গাদীরে খুম’
বলা হত। সেখানে একটি বৃক্ষের সঙ্গে কাপড় ঝুলিয়ে ছায়া সৃষ্টি করা হলে নবী তার নীচে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিলেন : তোমরা কি জান না এবং সাক্ষ্য দিবে না,আমি মুমিনদের ওপর তাদের হতে অধিকতর ক্ষমতার অধিকারী? সবাই বলল : হ্যাঁ। অতএব,আমি যার ওপর ক্ষমতার অধিকারী (মাওলা) আলীও তার মাওলা। হে আল্লাহ্! আপনি তাকে ভালবাসুন যে আলীকে ভালবাসে এবং তার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করুন যে আলীর সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে।
নাসায়ী যাইদ ইবনে আরকাম
হতে বর্ণনা করেছেন,“
যখন নবী (সা.) বিদায় হজ্ব হতে ফিরে আসছিলেন তখন‘
গাদীরে খুম’
নামক স্থানে অবতরণ করলেন ও একটি বৃক্ষের তলা পরিষ্কার করার আদেশ দিলেন। অতঃপর তিনি বললেন : আমি আল্লাহর পক্ষ হতে দাওয়াত পেয়ে তা গ্রহণ করেছি। আমি তোমাদের মাঝে দু’
টি মূল্যবান ও ভারী বস্তু রেখে যাচ্ছি যার একটি অপরটি হতে বৃহৎ;আল্লাহর কিতাব এবং আমার রক্ত সম্পর্কীয় আহলে বাইত। আমার আহলে বাইতের সঙ্গে আচরণের বিষয়ে সতর্ক হও কারণ তারা একে অপর হতে বিচ্ছিন্ন হবে না যতক্ষণ না হাউজে কাউসারে আমার সঙ্গে মিলিত হবে। অতঃপর বললেন : আল্লাহ্ আমার মাওলা (অভিভাবক) ও আমি মুমিনদেরও মাওলা (অভিভাবক) এবং আলীর হাত (উঁচু করে) ধরে বললেন : আমি যার মাওলা এই আলী তার মাওলা। হে আল্লাহ্! আপনি তাকে ভালবাসুন যে আলীকে ভালবাসে এবং শত্রুতা করুন তার সঙ্গে যে আলীর সঙ্গে শত্রুতা করে।”
আবু তুফাইল বলেন,“
আমি যাইদকে প্রশ্ন করলাম : আপনি কি রাসূল (সা.) হতে এটি শুনেছেন?
তিনি বললেন : ঐ বৃক্ষের নীচে এমন কোন ব্যক্তি ছিল না যে তার চক্ষু দিয়ে তা দেখে নি এবং কর্ণ দিয়ে তা শ্রবণ করে নি।”
এ হাদীসটি মুসলিম তাঁর‘
সহীহ’
গ্রন্থে যাইদ ইবনে আরকাম হতে কয়েকটি সূত্রে বর্ণনা করেছেন কিন্তু আহলে সুন্নাহর অন্যান্য হাদীসবেত্তার মত হাদীসটির শেষ অংশ কেটে বাদ দিয়ে সংক্ষিপ্ত করেছেন।
আহমাদ ইবনে হাম্বল বাররা ইবনে আযেব
হতে দু’
টি সূত্রে বর্ণনা করেছেন,“
আমরা নবী (সা.)-এর সঙ্গে হজ্ব হতে প্রত্যাবর্তনের সময়‘
গাদীরে খুমে’
যাত্রা বিরতি করলাম। আহবানকারী আহবান করে জানাল : নামাযের জামায়াত। নবী (সা.)-এর জন্য বৃক্ষের নীচে ব্যবস্থা করা হলে তিনি যোহর নামায পড়ালেন ও অতঃপর আলীর হাত ধারণ করে ঘোষণা করলেন : তোমরা কি অবগত নও আমি মুমিনদের নিজেদের হতে তাদের ওপর অধিক অধিকার রাখি। সকলে বলল : হ্যাঁ। অতঃপর আলীর হাত উঁচু করে ধরে বললেন : আমি যার মাওলা এই আলী তার মাওলা। হে আল্লাহ্! আপনি তাকে ভালবাসুন যে আলীকে ভালবাসে এবং তার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করুন যে আলীর সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে। তখন হযরত উমর আলীর নিকট এসে বললেন : মোবারকবাদ হে আলী ইবনে আবি তালিব! এখন হতে আপনি সকল মুমিন পুরুষ ও নারীর অভিভাবক হলেন।”
নাসায়ী আয়েশা বিনতে সা’
দ
হতে বর্ণনা করেছেন,“
আমার পিতা হতে শুনেছি জোহফার দিনে নবী (সা.) আলীর হস্তধারণ করতঃ নিম্নোক্ত ভাষণ প্রদান করেন যাতে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করে তিনি বলেন : হে লোকসকল! আমি কি তোমাদের অভিভাবক? লোকেরা বলল : অবশ্যই। অতঃপর আলীর হাত উঁচু করে ধরে বললেন : সে আমার স্থলাভিষিক্ত,সে আমার ঋণ পরিশোধ করবে। আমি তার বন্ধুদের প্রতি ভালবাসা পোষণ করি ও তার শত্রুদের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করি।”
নাসায়ী তাঁর‘
খাসায়েস’
গ্রন্থের ২৫ পৃষ্ঠায় সা’
দ হতে বর্ণনা করেছেন,“
আমরা রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। যখন‘
গাদীরে খুমে’
পৌঁছলাম তিনি যাত্রা বিরতির নির্দেশ দিয়ে বললেন : যারা আগে চলে গিয়েছে তাদের এখানে প্রত্যাবর্তন করতে বল। যখন পশ্চাতগামীরা এসে মিলিত হলো তখন তিনি প্রশ্ন করলেন (জনতার উদ্দেশ্যে) : তোমাদের নেতা কে? সকলে বলল : আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল। তিনি তখন আলীর হাত ধরে দাঁড় করিয়ে ঘোষণা করলেন : আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল যার নেতা ও অভিভাবক এই আলীও তার নেতা ও অভিভাবক। হে আল্লাহ্! আপনি আলীর প্রতি ভালবাসা পোষণকারীকে ভালবাসুন এবং তার প্রতি শত্রুতা পোষণকারীর প্রতি শত্রুতা পোষণ করুন।”
এ বিষয়ে এত অধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে তা এখানে উল্লেখের সুযোগ নেই। এ হাদীসগুলোতে সুস্পষ্টরূপে আলীর স্থলাভিষিক্ত হবার বিষয়টি ঘোষিত হয়েছে। তাই আলী-ই মুসলমানদের ওপর রাসূল (সা.)-এর পর দায়িত্বশীল যেমনটি ফযল ইবনে আব্বাস ইবনে আবু লাহাব বলেছেন,
و
كان
وليّ
العهد
بعد
محمّد
عليّ
و
في
كلّ
المواطن
صاحبه
মুহাম্মদের পর স্থলাভিষিক্ত হলেন তিনি
আলী,রাসূলের সার্বক্ষণিক সহযোগী ছিলেন যিনি।
ওয়াসসালাম
শ