আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত0%

আল মুরাজায়াত লেখক:
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ: ইতিহাস

আল মুরাজায়াত

লেখক: আল্লামাহ্ সাইয়্যেদ আবদুল হুসাইন শারাফুদ্দীন আল মুসাভী
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ:

ভিজিট: 66889
ডাউনলোড: 8915

পাঠকের মতামত:

আল মুরাজায়াত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 133 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 66889 / ডাউনলোড: 8915
সাইজ সাইজ সাইজ
আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত

লেখক:
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বাংলা

উনপঞ্চাশতম পত্র

১১ মুহররম ১৩৩০ হিঃ

১।   আলীর ফজীলত ও শ্রেষ্ঠত্বকে স্বীকার।

২।   তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব খেলাফতের বিষয়ে রাসূল (সা.)-এর পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত হওয়াকে অপরিহার্য করে না।

১। ইমাম আবু আবদুল্লাহ্ আহমাদ ইবনে হাম্বল বলেন, রাসূল (সা.) হতে আলী ইবনে আবি তালিবের মত কোন সাহাবীর বিষয়েই এত অধিক ফজীলতসম্পন্ন হাদীস বর্ণিত হয় নি। ৩৪৮

ইবনে আব্বাস বলেন, আলীর মত অন্য কারো ক্ষেত্রেই কোরআনের এত অধিক আয়াত অবতীর্ণ হয় নি। ৩৪৯ অন্যস্থানে তিনি বলেছেন, আলী সম্পর্কে কোরআনে তিন শ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। ৩৫০ তিনি আরো বলেছেন, কোরআনের যে স্থানেইيا ايها الذين آمنوا অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ বলা হয়েছে আলী (আ.) তাঁদের মধ্যে প্রধান ও নেতা। ৩৫১ আল্লাহ্ অসংখ্য আয়াতে সাহাবীদের সমালোচনা করলেও কোথাও আলীকে প্রশংসা ব্যতীত স্মরণ করেন নি।

আবদুল্লাহ্ ইবনে আইয়াশ ইবনে আবি রাবিয়া বলেন, আলী (আ.)-এর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা সম্পর্কে যা কিছুই বলতে চাও দৃঢ়তার সাথে তা বর্ণনা করতে পার। তাঁর ইসলামের অতীত উজ্জ্বল ও ভাস্বর এবং তিনি রাসূল (সা.)-এর জামাতা। হাদীসে তাঁর জ্ঞানের গভীরতা,যুদ্ধে সাহসিকতা,বীরত্ব ও জয় এবং দানের ক্ষেত্রে তাঁর উদারতা নজীরবিহীন। ৩৫২

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলকে হযরত আলী (আ.) এবং মুয়াবিয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে বললেন,৩৫৩ আলীর প্রচুর শত্রু ছিল। তাঁর শত্রুরা তাঁকে ক্ষুদ্র ও ছোট করার জন্য সব সময় তাঁর ত্রুটি অন্বেষণে ব্যস্ত থাকত,তদুপরি এরূপ কিছু পায় নি। ফলে তারা আলীর শত্রুদের (যারা তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে) প্রশংসা করার মাধ্যমে তাঁকে কষ্ট দেয়ার পদ্ধতি অবলম্বন করত।

কাজী ইসমাঈল,নাসায়ী,আবু আলী নিশাবুরী ও অন্যান্যরা বলেছেন, আলীর মত কোন সাহাবীর পক্ষেই সহীহ সনদে এত অধিক ফাজায়েল ও মানাকিব বর্ণিত হয় নি। ৩৫৪

২। এ বিষয়গুলোতে কোন প্রতিবাদ ও সমালোচনার সুযোগ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো নবী (সা.) তাঁর খেলাফতের বিষয়ে সরাসরি বলেছেন নাকি বলেন নি? আপনি যে হাদীস ও সুন্নাহ্গুলো বর্ণনা করেছেন তা বিভিন্ন অবস্থা ও প্রেক্ষাপটে আলী (আ.)-এর বিশেষত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করছে। আমরাও বিশ্বাস করি তিনি এ সকল বিষয়ে অন্যদের হতে শ্রেষ্ঠত্ব রাখেন এবং আপনি যা বর্ণনা করেছেন তার হতে অধিক সংখ্যায় এ সকল হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীসগুলো তাঁর ইমামতের প্রতি ইঙ্গিত করলেও রাসূল (সা.)-এর পর তাঁর স্থলাভিষিক্তের বিষয়টি প্রকাশ করে না।

ওয়াসসালাম

পঞ্চাশতম পত্র

১৩ মুহররম ১৩৩০ হিঃ

নেতার (ইমামের) বৈশিষ্ট্য বর্ণনা হতেই তাঁর নেতৃত্বের (ইমামতের) বিষয়টি প্রমাণিত হয়

আপনার মত উজ্জ্বল ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন,বক্তব্যের প্রেক্ষাপট ও উৎস সম্পর্কে সচেতন এবং এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তি যিনি শেষ নবী হিসেবে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর প্রজ্ঞা,তাঁর কথা ও কর্মের পরিমাপ ও তাঁর কোন কথাই যে প্রবৃত্তির অনুগত নয় সে বিষয়ে সম্যক জ্ঞানের অধিকারী তাঁর নিকট এ সকল হাদীসের বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাধারণ অর্থ অস্পষ্ট ও আবরিত নয় এবং এগুলো বর্ণনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যও অজ্ঞাত নয়। আপনি জন্মগত প্রতিষ্ঠিত আরব হিসেবে এটি উপলব্ধি করেন যে,আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের পক্ষে সম্ভব নয় তাঁদের দীনের রক্ষাকারী প্রতিনিধি ব্যতীত অন্য কারো প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দান করে কথা বলবেন। তাই এ হাদীসগুলো হতে বোঝা যায় আলী বিশেষ মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী এবং সেগুলো সরাসরি খেলাফতের প্রমাণ না দিলেও সেদিকে ইঙ্গিতকারী হিসেবে অপরিহার্য প্রমাণ বলে গণ্য। কারণ নবীকুল শিরোমণি ও শ্রেষ্ঠ রাসূল (সা.) খেলাফতের এইরূপ উচ্চমর্যাদা তাঁর মত নেতৃত্ব ও পদমর্যাদার ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো হাতে স্থানান্তর করতে পারেন না।

তদুপরি আলী সম্পর্কিত বিশেষ হাদীসগুলো যদি কেউ ইনসাফের দৃষ্টিতে লক্ষ্য করে এবং যথাযথভাবে পর্যালোচনা করে তাহলে দেখতে পাবে সেগুলোর অধিকাংশই ইমামতের দিকেই নির্দেশনা দান করে। হয় তা গাদীরের৩৫৫ প্রতিশ্রুতি গ্রহণের হাদীসের মত সরাসরি ইমামতের পূর্ণ প্রমাণ দেয় নতুবা আটচল্লিশতম পত্রের হাদীসগুলোর মত ইমামতের অপরিহার্যতার প্রতি ইঙ্গিত দান করে। যেমন এ হাদীসটি আলী কোরআনের সঙ্গে এবং কোরআন আলীর সঙ্গে এবং এরা একে অপর হতে কখনো বিচ্ছিন্ন হবে না ও এ অবস্থায়ই হাউজে কাওসারে আমার সঙ্গে মিলিত হবে। ৩৫৬

অনুরূপ রাসূল (সা.) হতে বর্ণিত একটি হাদীস, আলীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক আমার দেহের সঙ্গে আমার মাথার সম্পর্কের ন্যায়। ৩৫৭

আবদুর রহমান ইবনে আওফ৩৫৮ বলেন, রাসূল (সা.) আমাদের ভয় প্রদর্শন করে বললেন : সেই মহান সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ নিবদ্ধ,তোমরা অবশ্যই নামায কায়েম করবে,যাকাত দিবে নতুবা তোমাদের প্রতি এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করবো যে আমা হতে এবং আমার প্রাণস্বরূপ। হাদীসটির শেষে এসেছে অতঃপর রাসূল (সা.) আলীর হাত ধারণ করে বললেন, এই সে ব্যক্তি।

এছাড়াও এ সম্পর্কিত আরো হাদীস বিদ্যমান।

যে ব্যক্তি সত্যের সমুদ্রে অবগাহনে আকাঙ্ক্ষী,বুদ্ধিবৃত্তিক সমস্যা ও অস্পষ্টতাকে দূর করার প্রচেষ্টায় লিপ্ত তাকে আমি এ মূল্যবান হাদীসগুলোর প্রতি দৃষ্টি দানের আহবান জানাব। সত্যের অনুসন্ধানে ও গবেষণায় ব্যাপৃত ব্যক্তি সত্য উদ্ঘাটন ব্যতীত যার অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই তার উচিত ব্যক্তিগত আবেগ ও প্রবণতাকে দূরে ঠেলে এই আলোচনার প্রতি নিরপেক্ষ দৃষ্টি দান।

ওয়াসসালাম

একান্নতম পত্র

১৪ মুহররম ১৩৩০ হিঃ

এই প্রমাণসমূহের বিপরীতেও দলিল রয়েছে। আপনার বিরোধীরা প্রথম তিন খলীফার ফজীলতে বর্ণিত হাদীসসমূহ আপনার বিপক্ষে দলিল বলে মনে করেন এবং বিশ্বাস করেন মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে অগ্রগামীদের মধ্যে শ্রেষ্টত্বের বিষয়ে তাঁরা আলী হতে অগ্রগামী। তাই আপনার প্রমাণ অগ্রহণযোগ্য। আপনার বক্তব্য কি?

ওয়াসসালাম

বায়ান্নতম পত্র

১৫ মুহররম ১৩৩০ হিঃ

তাঁদের দাবীর বিপক্ষে জবাব

আমরা মুহাজির ও আনসারদের অগ্রগামী ব্যক্তিবর্গের ফজীলত ও মর্যাদাকে স্বীকার করি। তাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়টিকে অগ্রাহ্য করা যায় না। তাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের জন্য কোরআন ও হাদীসে বর্ণিত বাণীসমূহই যথেষ্ট। আমরা উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসসমূহ পর্যালোচনা করে এমন কিছু পাই নি যাতে করে বলা যায় সেগুলো আলীর শ্রেষ্ঠত্বের বিপক্ষে দলিল,এমন কি তাঁর মধ্যে ইমামতের জন্য প্রয়োজনীয় পারিপার্শ্বিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক দলিলও নেই।

অবশ্য আমাদের বিরোধীরা নিজেদের হতে তাঁদের অনেকের ফজীলত বর্ণনা করে হাদীস বলেছেন যা আমাদের নিকট প্রমাণিত নয়। সুতরাং সেগুলো আমাদের বর্ণিত রেওয়ায়েতের বিপরীতে অগ্রহণযোগ্য এবং অযথা তর্ককারী ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো কাছে তা আশা করা যায় না। কারণ আমরা তাঁদের মত ঐ হাদীসগুলোকে নির্ভরযোগ্য মনে করতে পারি না। আমাদের সূত্রে বর্ণিত হাদীসসমূহকে তাঁদের বিপরীতে এনে প্রমাণ করতে যাওয়া যেমন যুক্তিযুক্ত নয় তেমনি ঐ হাদীসসমূহকে এ হাদীসগুলোর (হযরত আলীর শ্রেষ্ঠত্ব ও ফজীলত বর্ণনাকারী হাদীসসমূহ) বিপরীতে দাঁড় করানোও অযৌক্তিক। তাই আমরা আমাদের বিরোধীদের বর্ণনা হতেই আলীর শ্রেষ্ঠত্ব ও নেতৃত্বের বিষয়টি আলোচনা করছি (আমাদের সূত্রে নয়) যেমন গাদীরের হাদীস ও অন্যান্য হাদীস।

এগুলো বাদ দিলেও আমাদের বিরোধীরা তাঁদের ফজীলত বর্ণনা করে যে হাদীসসমূহ এনেছেন তা আমাদের বর্ণিত হাদীসের বিরোধীও যেমন নয় তেমনি তা তাঁদের খেলাফতের বিষয়টিকেও প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণ করে না। এ কারণে কেউই সেগুলো তাঁদের খেলাফতের জন্য প্রমাণ হিসেবে আনেন নি,এমন কি তাঁরা নিজেরাও সাকীফায়৩৫৯ বা খলীফা নির্বাচনের বিভিন্ন পর্যায়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনায় উপরোক্ত হাদীসসমূহের ওপর নির্ভর করেন নি৩৬০

ওয়াসসালাম

তেপান্নতম পত্র

১৬ মুহররম ১৩৩০ হিঃ

হাদীসে গাদীরের বিবরণ পেশের আহবান।

আপনি অনেক স্থানেই গাদীরের হাদীসের কথা উল্লেখ করেছেন। আহলে সুন্নাহর সূত্রে হাদীসটি আমার জন্য বর্ণনা করুন যাতে বিষয়টি নিয়ে আমি চিন্তা করতে পারি।

ওয়াসসালাম

চুয়ান্নতম পত্র

১৮ মুহররম ১৩৩০ হিঃ

গাদীরের হাদীসের কিছু অংশের প্রতি ইঙ্গিত

তাবরানী ও অনেকেই যাইদ ইবনে আরকাম হতে বর্ণিত এ হাদীসটির বিশুদ্ধতার বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।৩৬১ তিনি বর্ণনা করেছেন,নবী করিম (সা.) গাদীরে খুম নামক স্থানে একটি বৃক্ষের নীচে একটি খুতবা পাঠ করেন যা এরূপ : হে লোকসকল! খুব শীঘ্রই আমি আমার প্রভুর পক্ষ হতে দাওয়াত পাব এবং আমি তা গ্রহণ করবো৩৬২ । আমি দায়িত্বশীল এবং এ বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হব৩৬৩ এবং তোমরাও দায়িত্বশীল ও তোমাদের দায়িত্বের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে৩৬৪ তখন তোমরা আমার বিষয়ে কি বলবে? সকলে বলল, আপনি আপনার ওপর আরোপিত রেসালতের দায়িত্ব পালন করেছেন,জিহাদ করেছেন,উপদেশ ও নির্দেশনা দিয়েছেন। আল্লাহ্ আপনাকে উত্তম পুরস্কার দান করুন। রাসূল (সা.) বললেন, তোমরা কি এ সাক্ষ্য প্রদান কর না,আল্লাহ্ ছাড়া কোন মাবুদ নেই ও মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল,বেহেশত-দোযখ,মৃত্যু,মৃত্যুর পর পুনরুত্থান সবই সত্য? তোমরা মৃত্যুর পরবর্তী জীবন ও কিয়ামতের বিষয়ে কি বিশ্বাস স্থাপন কর নি? তারা বলল, হ্যাঁ,আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি আমরা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। ৩৬৫

অতঃপর মহানবী (সা.) বলেন, হে আল্লাহ্! আপনি সাক্ষী থাকুন। অতঃপর তিনি ঘোষণা করেন, হে লোকসকল! আল্লাহ্ আমার মাওলা ও অভিভাবক এবং আমি মুমিনদের অভিভাবক হিসেবে তাদের নিজেদের অপেক্ষা তাদের ওপর অধিক অধিকার রাখি। ৩৬৬

 فمن كنت مولاه فهذا مولاه  يعنى عليّا اللّهم وال من والاه و عاد من عاداه 

সুতরাং জেনে রাখ আমি যার মাওলা বা অভিভাবক এই ব্যক্তি (আলীও) তার মাওলা বা অভিভাবক। হে আল্লাহ্! আপনি তাকে ভালবাসুন যে আলীকে ভালবাসে আর তার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করুন যে আলীর সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে।

হে লোকসকল! আমি তোমাদের পূর্বেই হাউজে কাওসারে উপস্থিত হব তোমরা হাউজের নিকট আমাকে পাবে। এ হাউজ বসরা হতে সানআ র দূরত্ব হতেও দীর্ঘ এবং এর তীরে আকাশের তারকারাজির সংখ্যার মত রৌপ্য পাত্রসমূহ থাকবে। যখন তোমরা এ হাউজে আমার নিকট আসবে তোমাদের আমি দু টি ভারী বস্তু (কোরআন ও আমার আহলে বাইত) সম্পর্কে প্রশ্ন করব যে,এ দু য়ের সাথে তোমরা কিরূপ আচরণ করেছ। প্রথম ভারী বস্তু আল্লাহর কিতাব যার এক প্রান্ত আল্লাহর হাতে এবং অপর প্রান্ত তোমাদের হাতে যা দ্বারা এটি আঁকড়ে ধরবে যাতে করে বিচ্যুত এবং পরিবর্তিত (আমার পরে) না হয়ে যাও এবং দ্বিতীয় ভারী বস্তু আমার রক্ত সম্পর্কীয় আহলে বাইত যাদের সম্পর্কে সূক্ষ্মদর্শী পরম জ্ঞানী আল্লাহ্ আমাকে জানিয়েছেন এ দু টি ভারী বস্তু হাউজে আমার সঙ্গে মিলিত হওয়া পর্যন্ত পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না। ৩৬৭

হাকিম তাঁর মুসতাদরাক গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ১০৯ পৃষ্ঠায় হযরত আলী (আ.)-এর মানাকিব বর্ণনায় যাইদ ইবনে আরকাম হতে দু টি সূত্রে (যা বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে সহীহ বলে পরিগণিত) হাদীসটি উল্লেখ করেছেন, যখন রাসূল (সা.) বিদায় হজ্ব হতে ফিরে আসছিলেন তখন গাদীরে খুম নামক স্থানে থামলেন। একটি বৃক্ষের নীচে উঁচু মঞ্চ প্রস্তুত করা হলো। তিনি তার ওপর দাঁড়িয়ে জনতার উদ্দেশ্যে বললেন : আমি আমার প্রভুর পক্ষ হতে আহবায়িত হয়েছি এবং তা গ্রহণ করেছি। আমি তোমাদের মাঝে দু টি মূল্যবান বস্তু রেখে যাচ্ছি যার একটি অপরটি হতে বৃহৎ,তার একটি হলো আল্লাহর কিতাব এবং অপরটি আমার আহলে বাইত। এ দু বস্তুর সঙ্গে তোমরা কিরূপ আচরণ করবে? এরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না যতক্ষণ না হাউজে আমার সঙ্গে মিলিত হবে। আল্লাহ্ আমার মাওলা ও অভিভাবক এবং আমি মুমিনদের মাওলা। অতঃপর রাসূল (সা.) আলীর হাত ধরে ঘোষণা করলেন :من كنت مولاه فهذا وليّه আমি যার মাওলা এও (আলীও) তার মাওলা। হে আল্লাহ্! আপনি তাকে ভালবাসুন যে আলীকে ভালবাসে এবং তার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করুন যে আলীর সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে।

হাদীসটি বেশ দীর্ঘ হওয়া সত্ত্বেও হাকিম পুরোটিই বর্ণনা করেছেন কিন্তু যাহাবী তাঁর তালখিস গ্রন্থে শেষ অংশ বর্ণনা করেন নি। হাকিম উক্ত গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ৫৩৩ পৃষ্ঠায় যাইদ ইবনে আরকাম হতে দ্বিতীয় বারের মত হাদীসটি বর্ণনা করে একে বিশুদ্ধ বলেছেন। যাহাবী তাঁর তালখিস গ্রন্থেও এ সত্যটি স্বীকার করেছেন।

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল যাইদ ইবনে আরকাম৩৬৮ হতে বর্ণনা করেছেন, আমরা রাসূলের সঙ্গে এক উপত্যকায় উপস্থিত হলাম যাকে গাদীরে খুম বলা হত। সেখানে একটি বৃক্ষের সঙ্গে কাপড় ঝুলিয়ে ছায়া সৃষ্টি করা হলে নবী তার নীচে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিলেন : তোমরা কি জান না এবং সাক্ষ্য দিবে না,আমি মুমিনদের ওপর তাদের হতে অধিকতর ক্ষমতার অধিকারী? সবাই বলল : হ্যাঁ। অতএব,আমি যার ওপর ক্ষমতার অধিকারী (মাওলা) আলীও তার মাওলা। হে আল্লাহ্! আপনি তাকে ভালবাসুন যে আলীকে ভালবাসে এবং তার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করুন যে আলীর সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে।

নাসায়ী যাইদ ইবনে আরকাম৩৬৯ হতে বর্ণনা করেছেন, যখন নবী (সা.) বিদায় হজ্ব হতে ফিরে আসছিলেন তখন গাদীরে খুম নামক স্থানে অবতরণ করলেন ও একটি বৃক্ষের তলা পরিষ্কার করার আদেশ দিলেন। অতঃপর তিনি বললেন : আমি আল্লাহর পক্ষ হতে দাওয়াত পেয়ে তা গ্রহণ করেছি। আমি তোমাদের মাঝে দু টি মূল্যবান ও ভারী বস্তু রেখে যাচ্ছি যার একটি অপরটি হতে বৃহৎ;আল্লাহর কিতাব এবং আমার রক্ত সম্পর্কীয় আহলে বাইত। আমার আহলে বাইতের সঙ্গে আচরণের বিষয়ে সতর্ক হও কারণ তারা একে অপর হতে বিচ্ছিন্ন হবে না যতক্ষণ না হাউজে কাউসারে আমার সঙ্গে মিলিত হবে। অতঃপর বললেন : আল্লাহ্ আমার মাওলা (অভিভাবক) ও আমি মুমিনদেরও মাওলা (অভিভাবক) এবং আলীর হাত (উঁচু করে) ধরে বললেন : আমি যার মাওলা এই আলী তার মাওলা। হে আল্লাহ্! আপনি তাকে ভালবাসুন যে আলীকে ভালবাসে এবং শত্রুতা করুন তার সঙ্গে যে আলীর সঙ্গে শত্রুতা করে।

আবু তুফাইল বলেন, আমি যাইদকে প্রশ্ন করলাম : আপনি কি রাসূল (সা.) হতে এটি শুনেছেন?৩৭০ তিনি বললেন : ঐ বৃক্ষের নীচে এমন কোন ব্যক্তি ছিল না যে তার চক্ষু দিয়ে তা দেখে নি এবং কর্ণ দিয়ে তা শ্রবণ করে নি।

এ হাদীসটি মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থে যাইদ ইবনে আরকাম হতে কয়েকটি সূত্রে বর্ণনা করেছেন কিন্তু আহলে সুন্নাহর অন্যান্য হাদীসবেত্তার মত হাদীসটির শেষ অংশ কেটে বাদ দিয়ে সংক্ষিপ্ত করেছেন।৩৭১

আহমাদ ইবনে হাম্বল বাররা ইবনে আযেব৩৭২ হতে দু টি সূত্রে বর্ণনা করেছেন, আমরা নবী (সা.)-এর সঙ্গে হজ্ব হতে প্রত্যাবর্তনের সময় গাদীরে খুমে যাত্রা বিরতি করলাম। আহবানকারী আহবান করে জানাল : নামাযের জামায়াত। নবী (সা.)-এর জন্য বৃক্ষের নীচে ব্যবস্থা করা হলে তিনি যোহর নামায পড়ালেন ও অতঃপর আলীর হাত ধারণ করে ঘোষণা করলেন : তোমরা কি অবগত নও আমি মুমিনদের নিজেদের হতে তাদের ওপর অধিক অধিকার রাখি। সকলে বলল : হ্যাঁ। অতঃপর আলীর হাত উঁচু করে ধরে বললেন : আমি যার মাওলা এই আলী তার মাওলা। হে আল্লাহ্! আপনি তাকে ভালবাসুন যে আলীকে ভালবাসে এবং তার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করুন যে আলীর সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে। তখন হযরত উমর আলীর নিকট এসে বললেন : মোবারকবাদ হে আলী ইবনে আবি তালিব! এখন হতে আপনি সকল মুমিন পুরুষ ও নারীর অভিভাবক হলেন।

নাসায়ী আয়েশা বিনতে সা৩৭৩ হতে বর্ণনা করেছেন, আমার পিতা হতে শুনেছি জোহফার দিনে নবী (সা.) আলীর হস্তধারণ করতঃ নিম্নোক্ত ভাষণ প্রদান করেন যাতে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করে তিনি বলেন : হে লোকসকল! আমি কি তোমাদের অভিভাবক? লোকেরা বলল : অবশ্যই। অতঃপর আলীর হাত উঁচু করে ধরে বললেন : সে আমার স্থলাভিষিক্ত,সে আমার ঋণ পরিশোধ করবে। আমি তার বন্ধুদের প্রতি ভালবাসা পোষণ করি ও তার শত্রুদের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করি।

নাসায়ী তাঁর খাসায়েস গ্রন্থের ২৫ পৃষ্ঠায় সা দ হতে বর্ণনা করেছেন, আমরা রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। যখন গাদীরে খুমে পৌঁছলাম তিনি যাত্রা বিরতির নির্দেশ দিয়ে বললেন : যারা আগে চলে গিয়েছে তাদের এখানে প্রত্যাবর্তন করতে বল। যখন পশ্চাতগামীরা এসে মিলিত হলো তখন তিনি প্রশ্ন করলেন (জনতার উদ্দেশ্যে) : তোমাদের নেতা কে? সকলে বলল : আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল। তিনি তখন আলীর হাত ধরে দাঁড় করিয়ে ঘোষণা করলেন : আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল যার নেতা ও অভিভাবক এই আলীও তার নেতা ও অভিভাবক। হে আল্লাহ্! আপনি আলীর প্রতি ভালবাসা পোষণকারীকে ভালবাসুন এবং তার প্রতি শত্রুতা পোষণকারীর প্রতি শত্রুতা পোষণ করুন।

এ বিষয়ে এত অধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে তা এখানে উল্লেখের সুযোগ নেই। এ হাদীসগুলোতে সুস্পষ্টরূপে আলীর স্থলাভিষিক্ত হবার বিষয়টি ঘোষিত হয়েছে। তাই আলী-ই মুসলমানদের ওপর রাসূল (সা.)-এর পর দায়িত্বশীল যেমনটি ফযল ইবনে আব্বাস ইবনে আবু লাহাব বলেছেন,

و كان وليّ العهد بعد محمّد

عليّ و في كلّ المواطن صاحبه

   মুহাম্মদের পর স্থলাভিষিক্ত হলেন তিনি 

     আলী,রাসূলের সার্বক্ষণিক সহযোগী ছিলেন যিনি।৩৭৪

ওয়াসসালাম

পঞ্চান্নতম পত্র

১৯ মুহররম ১৩৩০ হিঃ

মুতাওয়াতির না হলে কিরূপে ঐ হাদীসকে এর দলিল হিসেবে ব্যবহার করা যাবে?

স্বয়ং শিয়ারা বিশ্বাস করে ইমামত প্রমাণের জন্য অবশ্যই হাদীস মুতাওয়াতির হতে হবে কারণ তাদের মতে ইমামত উসূলে দীন বা ধর্মের মৌল বিষয়ের অন্তর্গত। হাদীসটি যেহেতু আহলে সুন্নাহর নিকট মুতাওয়াতির নয় সুতরাং প্রমাণ হিসেবে এ হাদীসের উপস্থাপন গ্রহণযোগ্য নয় যদিও তার সনদ সহীহ হয়ে থাকে।

ওয়াসসালাম