বাষট্টিতম পত্র
২ সফর ১৩৩০ হিঃ
চল্লিশ হাদীস
হ্যাঁ,আমাদের নিকট রাসূল (সা.)-এর পবিত্র আহলে বাইত হতে সহীহ ও মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত কিছু হাদীস রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে আহলে সুন্নাহ্ অবগত নয়। আমরা সেখান হতে আপনার জন্য চল্লিশটি হাদীস
এখানে উল্লেখ করছি :
১। মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনুল হুসাইন ইবনে মূসা ইবনে বাবাওয়াইহ্ কুমী (শেখ সাদুক) তাঁর‘
ইকমালুদ্দীন ও ইতমামুন নিয়ামাহ্’
গ্রন্থে আবদুল্লাহ্ ইবনে সামুরা সূত্রে রাসূল (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,
يا بن سمرة إذا اختلفت الأهواء و تفرّقت الآراء فعليكم بعليّ بن أبي طالب فإنّه إمام أمّتي و خليفتي عليهم من بعدي
“
হে সামুরাহর পুত্র! যখন ইচ্ছা ও মত বহুধা বিভক্ত হয়ে পড়বে তখন তোমরা আলীর সাথে থাকবে। কারণ সে উম্মতের ইমাম ও তাদের ওপর আমার পরে আমার পক্ষ হতে স্থলাভিষিক্ত (খলীফা)।”
২। সাদুক তাঁর একই গ্রন্থে ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন,“
রাসূল (সা.) বলেছেন :
إنّ الله تبارك و تعالى اطّلع إلى أهل الأرض اطلاعة فاختارني منها فجعلني نبيّا ثمّ اطّلع الثانية فاختار عليا فجعله إماما ثمّ أمرني أن اتّخذه أخا و وليّا و وصيّا و خليفة و وزيرا
মহান আল্লাহ্ পৃথিবীবাসীদের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন ও আমাকে মনোনীত করে তাঁর নবী করলেন। অতঃপর দ্বিতীয়বারের মত পৃথিবীবাসীদের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আলীকে গ্রহণ করে ইমাম মনোনীত করলেন ও আমাকে নির্দেশ দিলেন যেন তাকে আমি ভাই,সহযোগী,প্রতিনিধি,স্থলাভিষিক্ত ও পরামর্শদাতা হিসেবে গ্রহণ করি।”
৩। সাদুক নিজ সূত্রে ইমাম সাদিক (আ.) হতে এবং তিনি তাঁর পিতা ও পিতামহের সূত্রে রাসূল (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,“
রাসূল (সা.) বলেছেন : জিবরাঈল আল্লাহর পক্ষ হতে আমাকে সংবাদ দিয়েছেন,আল্লাহ্ বলেছেন : যে কেউ এ সাক্ষ্য দিবে যে,আমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই,মুহাম্মদ আমার বান্দা ও রাসূল,আলী ইবনে আবি তালিব আমার খলীফা ও তার সন্তানেরা আমার হুজ্জাত (আমার পক্ষ হতে নিদর্শন) তাকে আমি বেহেশতে প্রবেশ করাবো।”
৪। পুনরায় সাদুক তাঁর‘
ইকমালুদ্দীন ওয়া ইতমামুন নিয়ামাহ্’
গ্রন্থে ইমাম সাদিক (আ.) হতে তাঁর পিতা ও পিতামহের সূত্রে বর্ণনা করেছেন,“
রাসূল (সা.) বলেছেন : আমার পর নেতার (ইমাম) সংখ্যা বারজন। তাদের প্রথম হলো আলী এবং শেষ হলো মাহ্দী। তারা আমার খলীফা ও স্থলাভিষিক্ত।”
৫। সাদুক আসবাগ ইবনে নুবাতাহ্ হতে বর্ণনা করেছেন,তিনি বলেন,“
একদিন আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) আমাদের নিকট আসলেন,সে সময় তিনি তাঁর পুত্র হাসানের হাত ধরেছিলেন,এমতাবস্থায় তিনি আমাদেরকে বললেন : একদিন রাসূল (সা.) তাঁর ঘর হতে বের হলেন তখন আমার হাত তাঁর হাতে ধরা ছিল এবং তিনি বলছিলেন : সর্বোত্তম মানুষদের নেতা ও ইমাম আমার পর আমার এই ভাই আলী,সে সকল মুসলমানের ইমাম ও নেতা যখন আমি মৃত্যুবরণ করবো।”
৬। সাদুক তাঁর উপরোক্ত গ্রন্থে ইমাম রেযা (আ.) হতে তাঁর পিতা ও পিতামহের সূত্রে বর্ণনা করেছেন,“
রাসূল (সা.) বলেছেন : যে কেউ পছন্দ করে আমার দীনকে আঁকড়ে ধরতে ও মুক্তির তরণীতে আরোহণ করতে সে যেন আলী ইবনে আবি তালিবের অনুসরণ করে। সে আমার জীবদ্দশায় ও আমার মৃত্যুর পরে আমার খলীফা ও আমার উম্মতের ওপর আমার স্থলাভিষিক্ত।”
৭। সাদুক ইমাম রেযা (আ.) হতে একই সূত্রে বর্ণনা করেছেন,রাসূল (সা.) বলেছেন,“
আমি ও আলী এ উম্মতের দু’
জন পিতা ও শিক্ষক। যে ব্যক্তি আমাদের চিনবে সে আল্লাহকেই চিনল,আর যে আমাদের না চিনবে ও স্বীকার না করবে সে যেন আল্লাহকেই না চিনে অস্বীকার করল। আলী হতে এ উম্মতের যুবকদের দু’
জন নেতার জন্ম হয়েছে,হাসান ও হুসাইন এবং হুসাইনের বংশ হতে নয় ব্যক্তির জন্ম হবে যাদের আনুগত্য আমারই আনুগত্য এবং তাদের নাফরমানি ও নির্দেশ অমান্য করা আমার নির্দেশ অমান্য করার শামিল। তাদের নবম ব্যক্তি হলো মাহ্দী।”
(*২২)
৮। সাদুক তাঁর একই গ্রন্থে ইমাম হাসান আসকারী (আ.) হতে বর্ণনা করেছেন,তিনি তাঁর পিতা ও পিতামহ হতে এবং তিনি তাঁর পিতা ও পিতামহ হতে,এভাবে রাসূল (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,“
তিনি ইবনে মাসউদকে লক্ষ্য করে বলেন :
يا بن مسعود عليّ بن أبي طالب إمامكم بعدي و خليفتي عليكم
হে ইবনে মাসউদ! আলী আমার পরে তোমাদের ওপর আমার খলীফা ও তোমাদের নেতা।”
৯। সাদুক হযরত সালমান ফারসী হতে বর্ণনা করেছেন,তিনি বলেন,“
নবী (সা.)-এর ঘরে প্রবেশ করে দেখলাম হুসাইন ইবনে আলী তাঁর কোলে বসে রয়েছে এবং নবী (সা.) তাঁর ঠোঁটে চুমু খেয়ে তাকে বলছেন : তুমি নেতা ও নেতার পুত্র,তুমি ইমাম ও ইমামের পুত্র ও ভ্রাতা,তুমি ইমামদের পিতা,তুমি আল্লাহর নিদর্শন এবং তোমার সন্তানদের মধ্য হতে নয়জন আল্লাহ্ মনোনীত নেতা ও হুজ্জাত রয়েছে। তাদের নবম ও শেষ ব্যক্তি হলো মাহ্দী।”
১০। সাদুক‘
ইকমালুদ্দীন’
গ্রন্থে হযরত সালমান ফারসী হতে আরেকটি দীর্ঘ হাদীসে রাসূল (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,“
রাসূল (সা.) হযরত ফাতিমা (আ.)-কে বলেন : হে ফাতিমা! তুমি কি জান আল্লাহ্ আমাদের পরিবারের জন্য দুনিয়ার ওপর আখেরাতকে মনোনীত করেছেন। আল্লাহ্ পৃথিবীর আধিবাসীদের দিকে দৃষ্টি দিয়ে প্রথমে আমাকে মনোনীত করেন,অতঃপর দ্বিতীয় দৃষ্টিতে তোমার স্বামীকে মনোনীত করে আমাকে প্রত্যাদেশ দেন তোমাকে তার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার এবং আমার পরামর্শদাতা ও আমার উম্মতের জন্য খলীফা ঘোষণা করার। তাই তোমার পিতা সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও তোমার স্বামী সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিনিধি। কিয়ামতে সর্বপ্রথম ব্যক্তি হিসেবে তুমি আমার সঙ্গে মিলিত হবে।”
১১। সাদুক তাঁর‘
ইকমালুদ্দীন’
গ্রন্থে একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন এবং এতে তিনি উল্লেখ করেছেন হযরত উসমানের সময় মুহাজির ও আনসার হতে দুইশ লোক মসজিদে সমবেত হয়ে ফিকাহ্ ও ইসলামী জ্ঞানের বিষয়ে মতামত পেশ করে পরস্পরের ওপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করছিল। কিন্তু হযরত আলী (আ.) তাদের মাঝে উপস্থিত থাকলেও নীরব ছিলেন। তারা তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলল,“
হে আবুল হাসান! আপনি কেন নীরব হয়ে রয়েছেন?”
আলী তখন তাদের রাসূলের একটি উক্তির প্রতি ইশারা করলেন যে,রাসূল (সা.) বলেছেন,
عليّ أخي و وزيري و وارثي و وصيّي و خليفتي في أمّتي و وليّ كلّ مؤمن بعدي فأقرّوا له بذلك
“
আলী আমার ভাই,পরামর্শদাতা,সহযোগী,উত্তরাধিকারী,খলীফা ও আমার উম্মতের ওপর আমার স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি এবং সে মুমিনদের ওপর আমার পর নেতা। তোমরা অবশ্যই তাকে মেনে নেবে।”
১২। অপর একটি হাদীসে সাদুক আবদুল্লাহ্ ইবনে জা’
ফর (রা.),ইমাম হাসান (আ.),ইমাম হুসাইন (আ.),আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস,উমর ইবনে আবি সালামাহ্,উসামা ইবনে যাইদ,সালমান ফারসী,আবু যর ও মিকদাদ (রা.) হতে বর্ণনা করেছেন,তাঁরা সকলেই বলেছেন,“
নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি :
أنا أولى بالمؤمنين من أنفسهم ثمّ أخي عليّ أولى بالمؤمنين من أنفسهم
আমি মুমিনদের নিজেদের চেয়ে তাদের ওপর অধিক অধিকারপ্রাপ্ত তেমনি আমার পর আলী মুমিনদের নিজেদের চেয়ে তাদের ওপর অধিক অধিকারপ্রাপ্ত।”
১৩। একই গ্রন্থে সাদুক আসবাগ ইবনে নুবাতাহ্ সূত্রে ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন,তিনি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছেন : আমি,আলী,হাসান,হুসাইন ও হুসাইনের বংশধর হতে তার নয়জন সন্তান পবিত্র (মাসূম)।
১৪। সাদুক আবাইয়াহ্ ইবনে বিবঈর সূত্রে ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন,রাসূল (সা.) বলেছেন,“
আমি নবীদের নেতা এবং আলী নবীদের স্থলাভিষিক্তদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও তাদের নেতা।”
১৫। সাদুক‘
ইকমালুদ্দীন’
নামক উপরোক্ত গ্রন্থে ইমাম সাদিক হতে বর্ণনা করেছেন,তিনি তাঁর পিতামহ হতে এবং তিনি তাঁর পিতা ও পিতামহের মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন,রাসূল (সা.) বলেছেন,মহান আল্লাহ্ নবীদের মধ্য হতে আমাকে এবং আমার মাধ্যমে আলীকে সকল নবীর প্রতিনিধিদের মধ্য হতে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। তিনি আলীর মাধ্যমে তার সন্তান হাসান ও হুসাইনকে এবং হুসাইনের সন্তানদের মধ্য হতে স্থলাভিষিক্ত মনোনীত করেছেন যাতে করে সীমা লঙ্ঘনকারী ও বিচ্যুতরা দীনকে বিকৃত করতে না পারে।
১৬। সাদুক ঐ গ্রন্থে হযরত আলী হতে বর্ণনা করেছেন,রাসূল (সা.) বলেছেন,“
আমার পর নেতার সংখ্যা হবে বার জন,তাদের প্রথম হলো তুমি ও শেষ ব্যক্তি মাহ্দী,তার হাতে আল্লাহ্ পূর্ব ও পশ্চিমে দীনকে প্রসারিত (বিজয়ী) করবেন।”
১৭। সাদুক তাঁর‘
আমালী’
গ্রন্থে ইমাম সাদিক (আ.) সূত্রে তাঁর পিতা পিতামহদের মাধ্যমে রাসূল (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,“
আলী আমা হতে ও আমি আলী হতে,সে আমার মাটি হতেই সৃষ্ট হয়েছে,সুন্নাহর যে সকল বিষয়ে মানুষ দ্বিমত ও বিভেদ পোষণ করবে সে তার ব্যাখ্যা দান করবে,সে মুমিনদের নেতা,আলোকিত ও উজ্জ্বল মুখের অধিকারীদের ইমাম এবং নবীদের প্রতিনিধিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।”
১৮। সাদুক তাঁর‘
আমালী’
গ্রন্থে হযরত আলীর সূত্রে একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেছেন যেখানে রাসূল (সা.) বলেছেন,“
আলী মুমিনদের ইমাম (নেতা),আল্লাহ্ তাঁর ইমামতের সাক্ষ্য আরশে গ্রহণ করেছেন এবং ফেরেশতাদেরকে সাক্ষী রেখেছেন যে,সে পৃথিবীতে আল্লাহর হুজ্জাত (নিদর্শন),দলিল ও মুসলমানদের ইমাম।”
১৯। সাদুক তাঁর‘
আমালী’
গ্রন্থে ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন যে,রাসূল (সা.) আলীকে বলেছেন,“
হে আলী! তুমি মুসলমানদের নেতা,মুমিনদের ইমাম,উজ্জ্বল মুখ ব্যক্তিদের প্রধান,আল্লাহর পক্ষ হতে আমার পরবর্তী ঐশী নিদর্শন এবং নবীগণের প্রতিনিধিদের নেতা।”
২০। সাদুক তাঁর‘
আমালী’
গ্রন্থে ইবনে আব্বাস হতে আরেকটি বর্ণনায় বলেছেন,রাসূল (সা.) আলীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,“
হে আলী! তুমি আমার উম্মতের মধ্যে আমার পক্ষ হতে প্রতিনিধি ও খলীফা,তোমার সম্পর্ক আমার সঙ্গে আদমের সঙ্গে শীসের সম্পর্কের ন্যায়।”
২১। সাদুক তাঁর‘
আমালী’
গ্রন্থে হযরত আবু যর হতে বর্ণনা করেছেন,“
রাসূল (সা.) একদিন মসজিদে নববীতে বলেন : এখন এই দ্বার দিয়ে যে ব্যক্তি প্রবেশ করবে সে মুসলমানদের ইমাম ও মুমিনদের নেতা। তখনই আলী প্রবেশ করলেন। অতঃপর রাসূল (সা.) তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে আমাদের দিকে লক্ষ্য করে বললেন : এ ব্যক্তি আমার পর তোমাদের ওপর ইমাম ও নেতা।”
২২। সাদুক তাঁর‘
আমালী’
গ্রন্থে জাবের ইবনে আবদুল্লাহ্ আনসারী হতে বর্ণনা করেছেন যে,রাসূল (সা.) বলেছেন,“
আলী ইবনে আবি তালিব ইসলামে সবচেয়ে অগ্রসর ও জ্ঞানে সবার হতে শ্রেষ্ঠ এবং আমার পর খলীফা ও ইমাম।”
২৩। সাদুক তাঁর‘
আমালী’
গ্রন্থে ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন,রাসূল (সা.) বলেছেন,“
হে লোকসকল! আল্লাহ্ হতে কে অধিক সত্যবাদী হতে পারে? মহান পরাক্রমশালী আল্লাহ্ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন আমি ঘোষণা করি আলী হেদায়েতের ধ্বজাধারী,সে ইমাম,খলীফা ও আমার স্থলাভিষিক্ত। তাকে আমি ভাই ও পরামর্শদাতা হিসেবে গ্রহণ করতে আদিষ্ট হয়েছি।”
২৪। ইবনে আব্বাস হতে সাদুক বর্ণনা করেছেন,তিনি বলেন,“
রাসূল (সা.) আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা পাঠ করেন যাতে তিনি বলেন : আমার চাচাতো ভাই আলী আমার সহযোগী,খলীফা ও আমার পক্ষ হতে নির্দেশ প্রচারকারী।”
২৫। সাদুক তাঁর‘
আমালী’
গন্থে আমীরুল মুমিনীন আলী হতে বর্ণনা করেছেন,“
নবী (সা.) একদিন আমাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিয়ে বললেন : হে লোকসকল! আল্লাহর মাস তোমাদের নিকট এসেছে। অতঃপর রমযান মাসের ফজীলত বর্ণনা করে খুতবা দিলেন। আমি রাসূল (সা.)-কে প্রশ্ন করলাম : হে আল্লাহর রাসূল! এ মাসের সর্বোত্তম আমল কি? নবী (সা.) বললেন : আল্লাহর নির্দেশিত গুনাহসমূহ হতে দূরে থাকা ও তাকওয়া অবলম্বন করা। অতঃপর রাসূল (সা.) ক্রন্দন করলেন। আমি প্রশ্ন করলাম : হে আল্লাহর রাসূল কেন আপনি ক্রন্দন করছেন? জবাবে বললেন : এ মাসেই তোমার রক্তপাতকে একদল হালাল ও বৈধ মনে করবে। অতঃপর বললেন :
يا عليّ أنت وصيّي و أبو ولدي و خليفتي على أمّتي في حياتي و بعد موتي أمرك أمري و نَهيك نَهيي
হে আলী! তুমি আমার স্থলাভিষিক্ত এবং আমার সন্তানদের পিতা,আমার উম্মতের মধ্যে আমার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর আমার খলীফা ও প্রতিনিধি। তোমার আদেশ আমারই আদেশ এবং তোমার নিষেধ আমারই নিষেধ।”
২৬। সাদুক তাঁর‘
আমালী’
গ্রন্থে হযরত আলী (আ.) হতে বর্ণনা করেছেন,নবী (সা.) বলেছেন,“
হে আলী! তুমি আমার ভাই এবং আমিও তোমার ভাই। আল্লাহ্ আমাকে নবুওয়াতের জন্য নির্বাচন করেছেন ও তোমাকে ইমামতের জন্য। আমাকে কোরআন অবতীর্ণের জন্য ও তোমাকে তার ব্যাখ্যার জন্য মনোনীত করা হয়েছে। তুমি আমার উম্মতের শিক্ষক ও পিতা। হে আলী! তুমি আমার উত্তরাধিকারী,স্থলাভিষিক্ত,খলীফা,প্রতিনিধি,পরামর্শদাতা এবং আমার সন্তানদের পিতা।”
২৭। সাদুক তাঁর‘
আমালী’
গ্রন্থে ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন,“
নবী (সা.) একদিন মসজিদে কোবাতে আনসারদের সমাবেশে আলীকে উদ্দেশ্য করে বলেন : হে আলী! তুমি আমার ভ্রাতা যেমনভাবে আমি তোমার ভ্রাতা,তুমি আমার পরে আমার স্থলাভিষিক্ত ও আমার উম্মতের জন্য ইমাম ও আমার প্রতিনিধি (খলীফা)। আল্লাহ্ সেই ব্যক্তিকে ভালবাসেন যে তোমাকে ভালবাসে এবং যে ব্যক্তি তোমার সঙ্গে শত্রুতা করে তার সঙ্গে তিনি শত্রুতা পোষণ করেন।”
২৮। সাদুক তাঁর‘
আমালী’
গ্রন্থে উম্মে সালামাহ্ হতে একটি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেছেন যেখানে রাসূল (সা.) বলেছেন,“
হে উম্মে সালামাহ্! তুমি শোন এবং সাক্ষী থাক,আলী ইবনে আবি তালিব আমার স্থলাভিষিক্ত ও আমার পর খলীফা,সে আমার প্রতিশ্রুতি পূরণকারী এবং আমার লক্ষ্যসমূহের চারপাশ থেকে শত্রুদের বিতারণকারী।”
২৯। সাদুক তাঁর‘
আমালী’
গ্রন্থে সালমান ফারসী হতে বর্ণনা করেছেন,“
রাসূল (সা.) বলেছেন : হে মুহাজির ও আনসারগণ! তোমাদের কি আমি এমন কিছুর দিক নির্দেশনা দেব আমার পরে যাকে আঁকড়ে ধরলে কখনো বিচ্যুত হবে না? তারা বলল : হে আল্লাহর রাসূল! হ্যাঁ। রাসূল (সা.) বললেন : এই আলী আমার ভ্রাতা,পরামর্শদাতা,স্থলাভিষিক্ত,উত্তরাধিকারী,খলীফা ও প্রতিনিধি এবং তোমাদের ইমাম। তোমরা আমাকে যেরূপ ভালবাস তাকেও তদ্রুপ ভালবাস। আমাকে যেমন সম্মান কর তাকেও তেমন সম্মান কর। জিবরাঈল আমার প্রতি এ সত্যসমূহ তোমাদের নিকট প্রকাশ করার নির্দেশ এনেছেন।”
৩০। সাদুক তাঁর‘
আমালী’
গ্রন্থে যাইদ ইবনে আরকাম হতে বর্ণনা করেছেন,“
নবী (সা.) বলেছেন : তোমাদের কি আমি এমন বিষয়ের দিকে নির্দেশনা দেব যাকে আঁকড়ে ধরলে তোমরা কখনো বিচ্যুত ও ধ্বংস হবে না? অতঃপর বললেন : আলী তোমাদের ইমাম ও অভিভাবক। তাকে তোমরা সহযোগিতা করবে,তাকে সত্যায়ন করবে ও তার কল্যাণকামী হবে। জিবরাঈল এটি প্রচারের জন্য আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন।”
৩১। সাদুক তাঁর‘
আমালী’
গ্রন্থে ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন,রাসূল (সা.) বলেছেন,يا عليّ أنت إمام أمّتي و خليفتي عليها بعدي
“
হে আলী! তুমি আমার উম্মতের ইমাম এবং আমার পর তাদের ওপর আমার খলীফা।”
৩২। সাদুক তাঁর‘
আমালী’
গ্রন্থে ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন,“
রাসূল বলেছেন : আল্লাহ্ আমার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছেন যে,তিনি আমার উম্মতের মধ্য হতে কোন এক ব্যক্তিকে আমার ভাই,উত্তরাধিকারী,খলীফা ও স্থলাভিষিক্ত হিসেবে মনোনীত করবেন। আমি প্রশ্ন করলাম সে ব্যক্তি কে? তিনি বললেন : সে তোমার উম্মতের নেতা এবং তোমার পর আমার হুজ্জাত বা ঐশী নিদর্শন। আমি বললাম : হে প্রতিপালক! কে সেই ব্যক্তি? ওহীর মাধ্যমে (আমাকে) বলা হলো : সে আলী ইবনে আবি তালিব। আমি তাকে পছন্দ করি এবং সেও আমাকে পছন্দ করে।”
৩৩। সাদুক তাঁর‘
আমালী’
গ্রন্থে সাদিক (আ.) সূত্রে তাঁর পিতামহের মাধ্যমে রাসূল (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,“
যখন আমি মিরাজে গিয়েছিলাম আল্লাহ্ আলী সম্পর্কে আমাকে বলেন যে,সে সৎ কর্মশীলদের (মুত্তাকীদের) ইমাম,আলোকিত মুখাবয়বদের নেতা ও মুমিনদের বাদশাহ।”
(*২৩)
৩৪। সাদুক তাঁর‘
আমালী’
গ্রন্থে ইমাম রেয়া (আ.) হতে বর্ণনা করেছেন,নবী (সা.) বলেছেন,“
আলী আমা হতে এবং আমি আলী হতে,আলীর হত্যাকারীকে আল্লাহ্ হত্যা করুন,আলী আমার পর আমার উম্মতের নেতা।”
৩৫। শায়খুত তায়িফা আবু জা’
ফর মুহাম্মদ ইবনে হাসান তুসী তাঁর‘
আমালী’
গ্রন্থে হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির হতে বর্ণনা করেছেন যে,রাসূল (সা.) আলীকে বলেন,“
তোমাকে আল্লাহ্ এমন একটি সৌন্দর্য দিয়ে সাজিয়েছেন যা আল্লাহর নিকট সবচেযে প্রিয় এবং অন্য কাউকে তা তিনি দান করেন নি। তোমাকে আল্লাহ্ যুহদ বা দুনিয়াবিমুখতার সৌন্দর্য দ্বারা এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে,দুনিয়া থেকে যেমন তুমি কোন লাভ পাবে না তেমনি সেও তোমার দ্বারা লাভবান হবে না। আল্লাহ্ তোমার হৃদয়ে হতদরিদ্র ও অসহায়দের প্রতি ভালবাসা এমনভাবে দিয়েছেন যে,তুমি তাদের আনুগত্যে এবং তারা তোমার নেতৃত্বে সন্তুষ্ট। সৌভাগ্য সেই ব্যক্তির যে তোমাকে ভালবাসে ও সততার সাথে তোমার আনুগত্য করে এবং দুর্ভাগ্য সেই ব্যক্তির যে তোমার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে ও তোমার প্রতি মিথ্যারোপ করে।”
৩৬। শেখ তুসী তাঁর‘
আমালী’
গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন,হযরত আলী (আ.) কুফার মিম্বারে বলেছেন,“
আমি রাসূল (সা.) হতে দশটি বৈশিষ্ট্য লাভ করেছি যা আমার নিকট পৃথিবীর সব কিছু হতে প্রিয়। তিনি আমাকে বলেছেন : হে আলী! তুমি দুনিয়া ও আখেরাতে আমার ভাই,পুনরুত্থান দিবসে তুমি আমার সর্বাধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত ব্যক্তি,বেহেশতে তোমার ঘর আমার ঘরের মুখোমুখি হবে,তুমি আমার বংশের উত্তরাধিকারী,আমার প্রতিশ্রুতি পূরণকারী,আমার অনুপস্থিতিতে আমার পরিবারের সংরক্ষণকারী,তুমি আমার উম্মতের নেতা ও তাদের মাঝে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকারী,তুমি আমার খলীফা এবং আমার খলীফা আল্লাহরই খলীফা। তোমার শত্রু আমারই শত্রু এবং আমার শত্রু আল্লাহরই শত্রু।”
৩৭। সাদুক তাঁর‘
আন্নুসুস আলাল আইম্মা’
গ্রন্থে ইমাম হাসান ইবনে আলী হতে বর্ণনা করেছেন,তিনি বলেন,“
আলীকে উদ্দেশ্য করে রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি : তুমি আমার জ্ঞানের উত্তরাধিকারী,প্রজ্ঞার খনি এবং আমার পর নেতা।”
৩৮। একই গ্রন্থে সাদুক ইমরান ইবনে হুসাইন হতে বর্ণনা করেছেন,“
আমি রাসূলকে বলতে শুনেছি : হে আলী! তুমি আমার পর ইমাম ও খলীফা।”
৩৯। ঐ গ্রন্থেই সাদুক আলী (আ.) হতে বর্ণনা করেছেন,রাসূল (সা.) বলেছেন,“
হে আলী! আমার আহলে বাইতের যারা দুনিয়া হতে বিদায় নিয়ে চলে গেছে তাদের ওপর আমার প্রতিনিধি এবং আমার উম্মতের জীবিতদের ওপর নেদৃত্বদানকারী ও খলীফা।”
৪০। সাদুক ইমাম হুসাইন ইবনে আলী হতে বর্ণনা করেছেন,“
যখন আল্লাহ্ নিম্নোক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ করেন((
و أولو الأرحام بعضهم أولى ببعض في كتاب الله
‘
আল্লাহর কিতাবে নিকটাত্মীয়দের কেউ কেউ অপরদের হতে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত’
তখন আমি রাসূল (সা.)-এর কাছে এর অর্থ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন : তোমরাই অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত নিকটাত্মীয়,আমার মৃত্যুর পর তোমার পিতা অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত,তারপর তোমার ভ্রাতা হাসান অতঃপর তুমি।”
এ সম্পর্কিত শেষ হাদীস হিসেবে এটি বর্ণনা করলাম। এখানে বর্ণিত হাদীসসমূহ অসংখ্য হাদীসের মধ্যে একটি শাখার ফুলের মত যা সমগ্র বাগান হতে নেয়া হয়েছে বা সমুদ্রের এক ফোঁটা পানির মত। অবশ্য আপনার উদ্দেশ্য পূরণের জন্য এগুলোই যথেষ্ট মনে করছি।
ওয়াসসালাম
শ