সত্তরতম পত্র
১১ সফর ১৩৩০ হিঃ
১। রাসূল (সা.)-এর ওসিয়তকে অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
২। ওসিয়তকে অস্বীকার করার কারণ।
৩। অস্বীকারকারীদের বর্ণিত দলিলসমূহ প্রামাণ্য নয়।
৪। বিবেক ও বুদ্ধিবৃত্তি ওসিয়তের সপক্ষে রায় দান করে।
১। রাসূল যে আলীকে প্রতিনিধিত্বের ওসিয়ত করে গিয়েছিলেন নিম্নবর্ণিত দলিলে তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই :
রাসূল তাঁকে তাঁর প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেছেন
,তাঁকে ওসিয়ত করে গিয়েছেন দাফন-কাফনের
,তাঁর ঋণ পরিশোধের,তাঁর প্রতিশ্রুতিসমূহ পূরণের এবং তাঁর ওপর আরোপিত অসমাপ্ত দায়িত্ব পালনের।
তিনি তাঁকে আরো ওসিয়ত করেছেন তাঁর পর মানুষের মধ্যে সৃষ্ট অনৈক্যের সময় সঠিক ব্যাখ্যা প্রদানের
,আর উম্মতের প্রতি ওসিয়ত করে জানিয়ে গেছেন যে,আলী (আ.) উম্মতের ওপর রাসূলের পর নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী
,তিনি রাসূল (সা.)-এর ভ্রাতা
ও সন্তানদের পিতা
,তাঁর পরামর্শদাতা
ও গোপনীয় রহস্য সম্পর্কে জ্ঞাত একমাত্র ব্যক্তি
,তাঁর প্রতিনিধি
ও স্থলাভিষিক্ত
,জ্ঞান নগরীর দ্বার
,প্রজ্ঞা গৃহের প্রবেশদ্বার
,তাঁর উম্মতের রক্ষাফটক
,নিরাপত্তা ও মুক্তির তরণি
। তাই রাসূলের মত তাঁর আনুগত্যও উম্মতের ওপর ওয়াজিব এবং তাঁর নির্দেশের বিরোধিতা কাবীরা গুনাহ যেহেতু তা নবীর নির্দেশের বিরোধিতার শামিল
। তাঁর অনুসরণ নবীরই অনুসরণ,তাঁর হতে বিচ্ছিন্নতা নবী হতেই বিচ্ছিন্নতা
,নবী (সা.) সেই ব্যক্তির সাথে সন্ধি ও শান্তি স্থাপন করেন যে আলীর সাথে সন্ধি করে ও তার সাথে যুদ্ধ করেন যে আলীর সাথে যুদ্ধ করে
,যে আলীকে ভালবাসে রাসূল (সা.) তাকে ভালবাসেন ও যে আলীর সাথে শত্রুতা পোষণ করে তার সাথে শত্রুতা পোষণ করেন
,যে আলীকে ভালবাসল সে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকেই ভালবাসল,যে আলীর বিষয়ে মনে বিদ্বেষ পোষণ করে সে প্রকৃতপক্ষে তার মনে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের প্রতিই বিদ্বেষ পোষণ করে
,যে আলীকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করল সে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করল এবং যে আলীকে অস্বীকার করল সে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করল
,যে আলীকে কষ্ট দিল সে তাঁদেরকে কষ্ট দিল
,যে আলীকে গালি দিল সে তাঁদের দু’
জনকেই গালি দিল
,তিনি পুণ্যবানদের নেতা,অন্যায়কারীদের হন্তা,যে ব্যক্তি তাঁকে সহযোগিতা করবে সে জয়ী হবে এবং যে তাঁর সঙ্গে অসহযোগিতা করবে সে অপমানিত হবে
,তিনি মুসলমানদের নেতা,মুত্তাকীদের ইমাম এবং উজ্জ্বল মুখাবয়বদের (সৎ কর্মশীল) প্রধান
,তিনি হেদায়েতের ধ্বজা ও আল্লাহর আউলিয়াদের শীর্ষ ব্যক্তি,আল্লাহর আনুগত্য ও তাকওয়ার যে পথ অবলম্বনকে তাঁর বান্দার ওপর অপরিহার্য করা হয়েছে তিনি সে পথের প্রজ্জ্বলিত নূর
,তিনি সিদ্দীকে আকবর এবং এই উম্মতের ফারুক ও মুমিনদের প্রধান
,তাঁর অবস্থান সত্যমিথ্যার পার্থক্যকারী ও প্রজ্ঞাময় স্মরণ (পবিত্র কোরআন)-এর সমপর্যায়ে
,রাসূলের নিকট তাঁর স্থান মূসার নিকট হারুনের ন্যায়
,তাঁর স্থান রাসূলের নিকট আল্লাহর নিকট রাসূলের স্থানের ন্যায়
,দেহের জন্য মাথার গুরুত্ব যেরূপ রাসূলের নিকট আলীর গুরুত্ব অনুরূপ
,তিনি রাসূলের প্রাণের মত
,মহান আল্লাহ্ পৃথিবীবাসীদের প্রতি দৃষ্টি দিয়ে এ দু’
ব্যক্তিকে মনোনীত করেছেন
,তিনি আরো বলেছেন (বিদায় হজ্বে আরাফাতে) যে,আলী ব্যতীত অন্য কেউ তাঁর পক্ষ হতে নির্দেশ দান করতে পারবে না
,এই সকল বিশেষত্ব আলী ব্যতীত অন্য কারো ছিল না এবং কেবল তিনিই এ সব কিছুর অধিকারী হিসেবে নবীর স্থলাভিষিক্তের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হবার যোগ্যতা রাখেন। এখন প্রশ্ন ওঠা উচিত যে,কোন জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তির জন্য এ সকল ওসিয়তকে অস্বীকার করা সম্ভব কি? কোন দূরভিসন্ধি না থাকলে কেউ এ বিষয়গুলোর বিরোধিতা করতে পারে না। ওসিয়ত কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে কোন কাজের দায়িত্ব দেয়া ভিন্ন অন্য কিছু কি?
২। প্রথম তিন খলীফার খেলাফতের সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল নয় বিধায় চার মাজহাবের অনুসারীরা এই ওসিয়তগুলোকে অস্বীকার করেছেন।
৩। আমাদের আহলে সুন্নাহর ভাইয়েরা আমাদের যুক্তির বিপরীতে কোন প্রমাণ উপস্থাপনে সক্ষম নন। বুখারী ও অন্যান্যরা তালহা ইবনে মুসরেফ হতে যে বর্ণনাটি করেছেন,“
আবদুল্লাহ্ ইবনে আবি আউফিকে প্রশ্ন করলাম : নবী কি কোন ওসিয়ত করে গিয়েছেন? উত্তর দিলেন : না। আমি বললাম : কিরূপে তিনি অন্যদের ওপর ওসিয়ত করাকে ওয়াজিব করেন অথচ নিজের জন্য অপ্রয়োজনীয় মনে করে ত্যাগ করেন? তিনি বললেন : আল্লাহর কিতাবকে আমাদের জন্য রেখে গিয়েছেন।”
এ বর্ণনাটি আমাদের যুক্তির বিপরীতে দলিল হতে পারে না। কারণ এ হাদীসটি আমাদের নিকট প্রতিষ্ঠিত নয়। তদুপরি এটি শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। নবী (সা.)-এর আহলে বাইত হতে ওসিয়তের বিষয়ে সহীহ হাদীসসমূহ মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত। সুতরাং যে কোন হাদীস এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে তা গ্রহণযোগ্য নয় ও প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপনের অযোগ্য বিবেচিত হয়।
৪। এ সকল কথা বাদ দিলেও ওসিয়তের জন্য কোন যুক্তি ও দলিল উপস্থাপনের প্রয়োজন পড়ে না। কারণ আকল বা বিবেক তার প্রতি নির্দেশ করে।
কবির ভাষায়- যে শক্তি ও ক্ষমতার অধিকারী সে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। সূর্যের উজ্জ্বলতার বর্ণনা দান বৃথা বৈ কিছু নয়।
কিন্তু বুখারী ইবনে আবি আউফি সূত্রে নবী (সা.) হতে যে বর্ণনা করেছেন তাতে তিনি আল্লাহর কিতাব অনুসরণের ওসিয়ত করে গিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন,কথাটি সত্য। কিন্তু তিনি নবীর সমগ্র ওসিয়ত বর্ণনা করেন নি। কারণ নবী (সা.) আল্লাহর কিতাবের সঙ্গে দ্বিতীয় মূল্যবান ভারী বস্তু আহলে বাইতের অনুসরণের কথাও বলেছেন এবং তাঁর উম্মতকে উভয় ভারী বস্তুকে আঁকড়ে ধরার ওসিয়ত করেছেন এবং যদি তারা উভয়টিকে আঁকড়ে না ধরে তাহলে বিপথগামী হবে বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি আরো বলেছেন যে,এ দু’
টি পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন হবে না যতক্ষণ না হাউজে কাউসারে নবীর সঙ্গে মিলিত হবে।
নবী (সা.)-এর পবিত্র আহলে বাইত সূত্রে এ সম্পর্কিত সহীহ হাদীসসমূহ মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। এ সম্পর্কিত অন্য সূত্রে বর্ণিত হাদীসসমূহ আট এবং চুয়ান্ন নম্বর পত্রে আমরা উল্লেখ করেছি।
ওয়াসসালাম
শ