ছিয়াশিতম পত্র
৮ রবিউল আউয়াল ১৩৩০ হিঃ
১। বৃহস্পতিবারের কষ্টদায়ক ঘটনা।
২। নবী কেন নির্দেশ দানের পর তা হতে বিরত হলেন?
১। নবী (সা.)-এর নির্দেশ অনুযায়ী আমল (কর্ম সম্পাদন) না করার ঘটনা অসংখ্য। এগুলোর মধ্যে সরচেয়ে প্রসিদ্ধ ও কষ্টদায়ক ঘটনা হলো বৃহস্পতিবারের বেদনাদায়ক ঘটনা।
সহীহ হাদীসগ্রন্থসমূহ ছাড়া অন্যান্য সুনান লেখকগণও এ ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। ইতিহাস ও হাদীস বর্ণনাকারীদের সকলেই তা উল্লেখ করেছেন। যেমন বুখারী
উবাইদুল্লাহ্ ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে উতবা ইবনে মাসউদ সূত্রে ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন,নবী (সা.)-এর ওফাতের পূর্বে একদল লোক রাসূলের ঘরে সমবেত হয়েছিলেন যাঁদের মধ্যে উমর ইবনুল খাত্তাবও ছিলেন। রাসূল (সা.) বললেন,هلمّ أكتُبْ لكم كتاباً لا تضلّوا بعده
“
আন,তোমাদের জন্য এমন কিছু লিখে দিয়ে যাব যাতে তারপর তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না।”
উমর বললেন,“
তাঁর ব্যথা তীব্র হয়েছে। তোমাদের নিকট কোরআন রয়েছে। আল্লাহর কিতাবই আমাদের জন্য যথেষ্ট।”
তখন উপস্থিত জনতার মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হলো ও পরস্পর বিতর্ক শুরু করল। কেউ কেউ বলল,“
কাগজ নিয়ে এসো। নবী (সা.) এমন কিছু লিখে দিয়ে যাবেন যাতে আমরা বিচ্যুত না হই।”
কেউ কেউ উমরের কথা পুনরাবৃত্তি করতে লাগল। যখন বিতর্ক তীব্র হলো তখন রাসূল (সা.) বললেন,“
তোমরা এখান থেকে চলে যাও।”
ইবনে আব্বাস প্রায়ই বলতেন,“
বিপদ তখন থেকেই শুরু হয়েছে যখন বিতর্ক ও চিৎকারের মাধ্যমে রাসূল (সা.)-কে লিখা হতে বিরত রাখা হলো।”
এ হাদীসটি সহীহ হাদীসসমূহের অন্তর্ভুক্ত ও এর বিশুদ্ধতার বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। বুখারী
তাঁর‘
সহীহ’
-এর কয়েক স্থানে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং মুসলিম তাঁর‘
সহীহ’
তে
‘
ওয়াসাইয়া’
অধ্যায়ের শেষে এটি এনেছেন।
আহমাদ তাঁর মুসনাদে
ও অন্যান্য সুনান লেখকগণ তাঁদের গ্রন্থে ইবনে আব্বাস হতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হাদীসটি বর্ণনার ক্ষেত্রে তাঁরা হুবহু শাব্দিক বর্ণনা না করে ভাবগত বর্ণনা করেছেন। কারণ হযরত উমর যে শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন তা হলোإِنّ النّبِيّ يَهجر
‘
নবী প্রলাপ বকছেন’
কিন্তু তাঁরা বলেছেনاِنَّ النّبيّ قَدْ غَلَبَ عَليهِ الوجع
‘
নবীর ব্যথা তীব্র হয়েছে’
। এভাবে তাঁরা চেয়েছেন কথাটির কর্কশতাকে কমিয়ে সাধারণ পর্যায়ে আনতে। আমাদের দাবীর পক্ষে প্রমাণ হলো আবু বকর আহমাদ ইবনে আযীয জাওহারীর‘
আসসাকিফা’
গ্রন্থ
যেখানে তিনি ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন,“
নবীর ওফাতের পূর্বে ঘরে বেশ কিছু লোক সমবেত হয়েছিলেন এবং উমর ইবনে খাত্তাব তাঁদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন। রাসূল (সা.) বললেন : কাগজ ও কলম নিয়ে আস। আমি তোমাদের জন্য এক পত্র লিখে দিয়ে যাব যাতে তোমরা কখনো বিপথগামী না হও। উমর তখন এমন এক কথা বললেন যার ভাবার্থ নবীর ব্যথা প্রকট হয়েছে,আমাদের নিকট আল্লাহর কিতাব রয়েছে তাই যথেষ্ট(حسبنا كتابُ الله)
। তখন নবীর গৃহে অবস্থানরতদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিল। কেউ বলতে লাগলেন কাগজ ও কালি আন,নবী কিছু লিখে দিয়ে যাবেন। কেউ কেউ উমরের কথার পুনরাবৃত্তি করতে লাগলেন। বিতর্ক তীব্র হলে নবী (সা.) রাগান্বিত হয়ে বললেন : সকলেই উঠে পড়।”
সুতরাং স্পষ্ট বুঝতে পারছেন হযরত উমরের উচ্চারিত শব্দ নয়,বরং তাঁরা ভাবার্থ এনেছেন। যে সকল হাদীসবেত্তা রাসূল (সা.)-এর বক্তব্যের বিরোধিতাকারীর নাম উল্লেখ করেন নি তাঁরা মূল শব্দটি তাঁদের বর্ণনায় এনেছেন। যেমন বুখারী তাঁর‘
সহীহ’
গ্রন্থের‘
কিতাবে জিহাদ ও সাইর’
-এর‘
জাওয়াযুল ওফাদ’
অধ্যায়ে কাবিছা সূত্রে ইবনে উয়াইনা হতে,তিনি সালমান আহ্ওয়াল হতে,তিনি সাঈদ ইবনে যুবাইর হতে বর্ণনা করেছেন,“
ইবনে আব্বাস আফসোস করে বললেন :
يوم الخميس و ما يوم الخميس ثمّ بكى حتّى خضب دمْعه الحصباء
বৃহস্পতিবার! হায় কি বৃহস্পতিবারই! অতঃপর তিনি এত অধিক ক্রন্দন করলেন যে,তাঁর গণ্ডদেশ ভিজে গেল। কিছুক্ষণ পর বললেন : বৃহস্পতিবার নবীর ব্যথা তীব্র হলে তিনি বললেন : কাগজ নিয়ে আস,আমি তোমাদের জন্য এমন কিছু লিখে দেব যাতে তোমরা কখনোই পথভ্রষ্ট না হও। তখন উপস্থিতরা বিতর্কে লিপ্ত হলে একজন বলল :هجر رسول الله
নবীর বুদ্ধিবৃত্তি লোপ পেয়েছে। নবী (সা.) বললেন :
دعوني فالذي أنا فيه خير مما تدعوني إليه
আমাকে আমার অবস্থায় ত্যাগ কর। তোমরা আমাকে যার দিকে আহবান কর তা হতে আমি উত্তম অবস্থায় রয়েছি।”
মহানবী (সা.) ওফাতের সময় তিনটি বিষয়ে ওসিয়ত করে গিয়েছেন : মুশরিকদের আরব উপদ্বীপ হতে বহিষ্কার করা,মদীনায় আগত অতিথিদের উপঢৌকন দেয়া এবং তৃতীয় বিষয়টি ভুলে গিয়েছেন বলে রাবী উল্লেখ করেছেন।
মুসলিম এ হাদীসটি তাঁর‘
সহীহ’
-এর‘
কিতাবুল ওয়াসিয়াহ্’
অধ্যায়ের শেষে ও আহমাদ তাঁর‘
মুসনাদ’
গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ২২ পৃষ্ঠায় ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন। অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ হাদীসটি নকল করেছেন।
মুসলিম তাঁর‘
সহীহ’
গ্রন্থের‘
কিতাবুল ওয়াসিয়াহ্’
অধ্যায়ে সাঈদ ইবনে যুবাইর হতে অন্য একটি সূত্রে ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন যে,তিনি বলেন,“
বৃহস্পতিবার! কি বৃহস্পতিবারই!”
অতঃপর তিনি কাঁদতে লাগলেন। তাঁর চক্ষু হতে অশ্রু মুক্তদানার মত গলদেশ বেয়ে পড়তে লাগল এবং বললেন,“
নবী বলেছিলেন : ভেড়ার কাঁধের হাড় বা কাগজ ও কালি নিয়ে আস,আমি এমন কিছু লিখে দিয়ে যাব তার পর আর কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তখন কেউ কেউ বললেন :إنّ رسول الله يَهجر
রাসূল প্রলাপ বকছেন।”
যদি বৃহস্পতিবারের এই বড় মুসিবতের ঘটনা কেউ পর্যালোচনা ও অধ্যয়ন করে তার নিকট সুস্পষ্ট হবে‘
রাসূল প্রলাপ বকছেন’
কথাটি উমর ইবনে খাত্তাবই প্রথম বলেছেন। অন্যান্যরা তারপর এ কথার পুনরাবৃত্তি করেন। কারণ প্রথম হাদীসটিতে
লক্ষ্য করেছেন ইবনে আব্বাস বলেছেন,‘
যাঁরা রাসূলের গৃহে ছিলেন তাঁদের মধ্যে বিতর্ক ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলো। কেউ কেউ বলছিলেন কাগজ আন নবী তোমাদের জন্য এমন কিছু লিখে দিয়ে যাবেন যাতে তোমরা পথভ্রষ্ট না হও। কেউ কেউ উমরের কথার পুনরাবৃত্তি করছিলেন অর্থাৎ বলছিলেন নবীর বুদ্ধিবৃত্তি লোপ পেয়েছে,তিনি প্রলাপ বকছেন’
। (নাউযুবিল্লাহ্)
তাবরানী তাঁর‘
আওসাত’
গ্রন্থে উমর ইবনে খাত্তাব
হতে একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। সেখানে উল্লিখিত হয়েছে- যখন নবী (সা.) অসুস্থ হলেন তখন বললেন : কালি ও কাগজ নিয়ে আস,আমি তোমাদের জন্য এমন কিছু লিখে দিয়ে যাব যাতে পরবর্তীতে তোমরা পথভ্রষ্ট না হও। পর্দার আড়াল হতে মহিলারা বললেন : তোমরা শুনতে পাচ্ছ না,নবী কি বলছেন? উমর বলেন,“
আমি বললাম,তোমরা নারীরা হযরত ইউসুফের নারীদের ন্যায়। যখনই নবী অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন তোমরা চোখের ওপর চাপ দিয়ে কাঁদার চেষ্টা কর আর যখন তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন তোমরা তাঁর ঘাড়ে চেপে বস।”
নবী (সা.) এ কথা শুনে বললেন,“
তারা তোমার থেকে উত্তম। তাদেরকে কিছু বল না(دعوهنّ فإنّهنّ خير منكم)
।”
এখানে লক্ষ্য করুন তিনি সুন্নাহর অনুবর্তী না হয়ে বিরোধিতা করেছেন। যদি তিনি এক্ষেত্রে অনুবর্তী হতেন তাহলে পথভ্রষ্টতা হতে রক্ষা পেতেন। আফসোস যদি তিনি অনুসরণ হতে বিরত থেকেই স্তব্ধ হতেন! কিন্তু তিনি তা না করে বিরোধিতা করে বলেছেনحسبنا كتاب الله
‘
আমাদের জন্য আল্লাহর কিতাবই যথেষ্ট’
। যেন নবী (সা.) তাঁদের মাঝে আল্লাহর কিতাবের অবস্থান সম্পর্কে অবগত ছিলেন না এবং তাঁরা নবী অপেক্ষা কোরআনের বৈশিষ্ট্য ও উপকারিতা সম্পর্কে অধিকতর জ্ঞাত। এরপরও যদি ক্ষান্ত হতেন ও নবীকে চরম অসন্তুষ্ট না করে বলতেন‘
তিনি প্রলাপ বকছেন’
। নবীর বিদায় মুহূর্তে ও জীবন সায়াহ্নে এমন শব্দ ব্যবহার করে তাঁর হৃদয়কে যদি ক্ষতবিক্ষত না করতেন!
তাঁদের এ কর্ম হতে মনে হয় যদিও তাঁরা বলেছেন‘
আল্লাহর কিতাবই আমাদের জন্য যথেষ্ট’
তদুপরি তাঁরা শুনেন নি আল্লাহর কিতাব সর্বক্ষণ আহবান করে বলছে,
(
ما آتيكم الرَّسولُ فَخُذُوه و ما نَهاكُم عَنْه فانتهوا
)
“
নবী তোমাদের যা দেন তা গ্রহণ কর এবং যে বিষয় হতে তোমাদের নিষেধ করেন তা হতে বিরত হও।”
(সূরা হাশর : ৭)
‘
নবী প্রলাপ বকছেন’
কথাটি বলার সময় তাঁরা বোধ হয় কোরআনের এ আয়াতটি ভুলে গিয়েছিলেন-
এ বাণী সম্মানিত রাসূলের যিনি শক্তিমান ও আরশের অধিপতির নিকট বিশিষ্ট মর্যাদার অধিকারী। আসমানসমূহে তাঁর আনুগত্য করা হয় এবং তিনি বিশ্বস্ত। তোমাদের বন্ধু (মহানবী) উম্মাদ নন। (সূরা তাকভীর : ২২)
তাঁরা কোরআনের এ আয়াতটিও কি পড়েন নি যেখানে বলা হয়েছে-
“
নিশ্চয়ই এটি সম্মানিত রাসূলের বাণী এবং এটি কোন কবির কথা নয়। তারা কমই ঈমান আনে। এটি কোন গণকের কথাও নয়। কত কম তারা উপদেশ গ্রহণ করে! এটি মহান বিশ্ব প্রতিপালকের পক্ষ হতে অবতীর্ণ।”
(সূরা হাক্কাহ্ : ৪০-৪৩)
যেন তাঁরা কোরআনের এ আয়াতটিও অধ্যয়ন করেন নি যেখানে আল্লাহ্ বলেছেন,
“
তোমাদের সাথী পথভ্রষ্ট নন ও তিনি বিচ্যুতও হন নি। তিনি প্রবৃত্তি হতেও কিছু বলেন না। তিনি যা বলেন তা তাঁর ওপর অবতীর্ণ ওহী বৈ কিছু নয় যা শক্তিশালী ফেরেশতা তাঁকে শিক্ষাদান করে।”
(সূরা নাজম : ২-৫)
যেন তাঁরা কোরআনের এরূপ অন্যান্য সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ শ্রবণ করেন নি যেখানে বলা হয়েছে-“
নবী নিষ্পাপ,তাঁর কথা প্রলাপ নয়,চিন্তা ও যুক্তি ব্যতীত তিনি কথা বলেন না।”
তদুপরি আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিও এটি স্বীকার করে যে,নবী (সা.) মাসুম বিধায় বৃথা ও অযথা কথা বলেন না।
তাই সত্য এই যে,তাঁরা জানতেন নবী (সা.) খেলাফতের প্রতিশ্রুতিকে দৃঢ় ও আহলে বাইতের ইমামদের সর্বজনীন নেতৃত্বকে সুন্নাহর ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে বিশেষত আলী (আ.)-এর অভিভাবকত্ব ও স্থলাভিষিক্ত হবার বিষয়টিকে তাগিদের জন্য তেমনটি করতে চেয়েছিলেন। তাই তাঁরা রাসূলকে এ কাজ হতে বিরত থাকতে বাধ্য করেন। দ্বিতীয় খলীফার সাথে ইবনে আব্বাসের কথোপকথন হতে বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়।
আপনি যদি নবীরايتوني أكتب لكم كتابا لن تضلّوا بعده
‘
আমার জন্য কালি ও কাগজ আন,আমি এমন কিছু লিখে দিয়ে যাব যার পর তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না’
এ হাদীসটির সাথে হাদীসে সাকালাইনকে অর্থাৎإنّي تارك فيكم ما إن تمسكتم به لنْ تضِلوا : كتاب الله و عترتي أهل بيتي
‘
আমি তোমাদের মাঝে যে বস্তু রেখে যাচ্ছি যদি তা তোমরা আঁকড়ে ধর কখনোও পথভ্রষ্ট হবে না : আল্লাহর কিতাব ও আমার রক্ত সম্পর্কীয় আহলে বাইত’
মিলিয়ে দেখেন তাহলে লক্ষ্য করবেন এ দুই হাদীসের লক্ষ্য একই এবং নবী (সা.) তাঁর অসুস্থতার সময় হাদীসে সাকালাইনে যা উম্মতের জন্য ওয়াজিব করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা প্রদান করতে চেয়েছিলেন।
২। কিন্তু কেন পরবর্তীতে তিনি লেখা হতে বিরত হলেন? এর জবাবে বলব ঐ সকল ব্যক্তির পক্ষ হতে তাঁর নামে যে কথাগুলো বলা হয়েছিল তাতে তিনি বাধ্য হন লেখা হতে বিরত থাকতে। কারণ এরূপ কথার পর তাঁর লেখা ফিতনা ও বিভেদ ছাড়া অন্য কোন ভূমিকা রাখতে পারত না এজন্য যে,তাঁর লেখা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠত রাসূল (সা.) নাউযুবিল্লাহ্ হয়তো ঘোরের মধ্যে প্রলাপ বকছিলেন যেহেতু তাঁর বুদ্ধিবৃত্তি তখন লোপ পেয়েছিল। এটি অসম্ভব কোন কথা ছিল না,কারণ রাসূলের সামনে যখন এরূপ কথা বলা হয়েছে তখন রাসূলের ওফাতের পর তা বলা আরো স্বাভাবিক। তাই রাসূল (সা.)-এর জন্য‘
তোমরা সকলেই উঠে পড়’
বলা ছাড়া কোন উপায় ছিল না। যদি নবী লেখার বিষয়ে নাছোড়বান্দা হতেন তাহলে তারাও নবীকে প্রলাপ বকছেন বলে গোঁয়ারতুমি করত এবং তাঁদের পক্ষের লোকেরা শেষ জীবনে নবী পাগল হয়ে গিয়েছিলেন (নাউযুবিল্লাহ্) বলে প্রচারের জন্য উঠে পড়ে লাগত এবং নবীর কথাকে খণ্ডনের জন্য গ্রন্থসমূহ রচনা করত এবং যাঁরা সে হাদীসের ওপর নির্ভর করতেন তাঁদের যুক্তিকে এভাবে অগ্রাহ্য করত।
তাই মহানবী (সা.)-এর সর্বোচ্চ প্রজ্ঞা তাঁকে লেখা হতে বিরত থাকতে নির্দেশ দেয় যাতে তাঁর নবুওয়াতের ওপর কোন আঘাত না আসে। অন্যদিকে নবী (সা.) জানতেন আলী (আ.),তাঁর অনুসারী ও বন্ধুরা যাঁরা পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী,তাঁরা এ লেখার বিষয়বস্তুর প্রতি অনুগত যদিও অন্যরা তা গ্রহণযোগ্য মনে করে আমল করবে না। সুতরাং এরূপ পরিস্থিতিতে বুদ্ধিবৃত্তি (আকল) না লেখার পক্ষেই মত দেয় কারণ লেখা সে পরিস্থিতিতে বিভেদ ছাড়া অন্য কিছুর জন্ম দিত না এ সত্য সকলের নিকট স্পষ্ট।
ওয়াসসালাম
শ