আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত0%

আল মুরাজায়াত লেখক:
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ: ইতিহাস

আল মুরাজায়াত

লেখক: আল্লামাহ্ সাইয়্যেদ আবদুল হুসাইন শারাফুদ্দীন আল মুসাভী
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ:

ভিজিট: 66984
ডাউনলোড: 8919

পাঠকের মতামত:

আল মুরাজায়াত
বইয়ের বিভাগ অনুসন্ধান
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 133 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 66984 / ডাউনলোড: 8919
সাইজ সাইজ সাইজ
আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত

লেখক:
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বাংলা

আটাশিতম পত্র

১১ রবিউল আউয়াল ১৩৩০ হিঃ

এ যুক্তি অগ্রহণযোগ্য।

যে কেউ পূর্ণ ঈমান ও ন্যায়সহ বিচার করবে সে সঠিক কথাটিই বলবে ও ন্যায়ের পক্ষে রায় দেবে।

এ সকল অপযুক্তির বিপরীতে আপনি যে যুক্তিসমূহ এনেছেন এর বাইরেও অনেক যুক্তি রয়েছে। সেগুলো আপনার সমীপে উপস্থাপন করে বিচারের ভার আপনার ওপরই অর্পণ করছি।

প্রথম উত্তরটিতে তাঁরা বলেছেন নবী (সা.) যখন লেখার জন্য কালি ও কাগজ আনার নির্দেশ দেন সম্ভবত এর মাধ্যমে তিনি তাঁদের পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন। এ বিষয়ে আপনি যা বলেছেন তার সঙ্গে আমি যোগ করতে চাই যে,সে মুহূর্তে নবী (সা.) [আমার পিতামাতা তাঁর জন্য উৎসর্গীকৃত হোক] তাঁর জীবনের শেষ পর্যায়ে ও মৃত্যুমূলে ছিলেন তাই সে মুহূর্ত পরীক্ষার মুহূর্ত হতে পারে না,বরং উম্মতকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্র্ণ ওসিয়ত ও পূর্ণাঙ্গ উপদেশ দেয়ার মুহূর্ত সেটি। তিনি তাঁর সর্বশেষ ওসিয়তের মাধ্যমে তাদেরকে সতর্ক করবেন ও নিজ দায়িত্বের ইতি টানবেন এটিই যুক্তিযুক্ত। মৃত্যুমুহূর্তে মানুষ কৌতুক করে না,বরং নিজ ও নিকটবর্তী ব্যক্তি বা আত্মীয়-স্বজনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেয়। আর মৃত্যুগামী ব্যক্তিটি যদি হয় রাসূল (সা.) সেক্ষেত্রে এটি আরো অধিক প্রযোজ্য।

যে নবী তাঁর সমগ্র জীবনের সুস্থতার সময় এভাবে তাঁদের পরীক্ষার সুযোগ পান নি মৃত্যুমুহূর্তে কিভাবে তাঁর পক্ষে তা সম্ভব? তাঁদের বিতর্কের কারণে নবী (সা.)-এর অসন্তুষ্টিও এ বিষয়টি পরিষ্কার করে। নবীর নির্দেশের বিরোধিতার মাধ্যমে তাঁরা সত্যপথ অবলম্বন করে থাকলে নবী এ বিরোধিতায় খুশি ও সন্তুষ্ট হতেন। যে কেউ হাদীসটিকে ভালভাবে লক্ষ্য করলে নবী প্রলাপ বকছেন কথাটি হতে নিশ্চিত হবেন যে,তাঁরা জানতেন নবী (সা.) যে বিষয়ে কথা বলবেন তা তাঁদের পছন্দনীয় নয়। এ জন্যই নবীর বিরুদ্ধে এ ধরনের কথা বলে তাঁরা দ্বন্দ্বময় ও বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি করেন। ইবনে আব্বাসের ক্রন্দনও ঘটনাটিকে বিষাদময় বলে। তাঁর বর্ণনাও তাঁদের এ যুক্তির অসারতা প্রমাণ করে। অপব্যাখ্যাকারীরা বলেছেন হযরত উমর সঠিক পথ অনুধাবনের বিষয়ে যথার্থ ছিলেন এবং এ বিষয়ে আল্লাহ্ হতে ইলহামপ্রাপ্ত হতেন।

কিন্তু এ কথাটি এমন স্থানে বলা হয়েছে যে,কেউ তা গ্রহণ করবে না,কারণ এক্ষেত্রে কথা বলার অর্থ নবী (সা.) নন বরং হযরত উমর সত্যকে অধিক অনুধাবন করেছেন ও আল্লাহর পক্ষ হতে প্রাপ্ত ওহী অপেক্ষা ইলহামের গুরুত্ব বেশী।

তাঁদের একদল আবার বলেছেন হযরত উমর ভালবাসার তাড়নায় রাসূলকে লেখা হতে নিবৃত্ত করতে চেয়েছিলেন যাতে তাঁর ওপর কষ্ট আপতিত না হয় এবং তিনি ব্যথার তীব্রতায় ক্লান্ত হয়ে না পড়েন। কিন্তু আপনি জানেন বিষয়টি লিখিত হলে নবীর অন্তর পরিতৃপ্ত হত এবং পথভ্রষ্টতা হতে উম্মতের মুক্তি ও নিরাপত্তা তাঁর চক্ষু উজ্জ্বল করত। তদুপরি নবীর ইচ্ছা পবিত্র লক্ষ্য হতে উৎসারিত ও অবশ্য পালনীয় বিধায় তা লঙ্ঘনের অধিকার কারো নেই। রাসূল (সা.) কাগজ ও কালি চাইলে তাঁর এ নির্দেশের বিরোধিতা অপরাধ বলে পরিগণিত। কারণ কোরআন বলেছে, কোন বিষয়ে খোদা ও তাঁর রাসূল ফয়সালা ও নির্দেশ দেয়ার পর কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর এ বিষয়ে কোন এখতিয়ার নেই এবং যে কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করবে সে সুস্পষ্ট গোমরাহীর মধ্যে নিমজ্জিত। (সূরা আহযাব : ৩৬)

এরূপ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাসূলের বিরোধিতা ও তাঁর সামনে বিশৃঙ্খলা ও বিভেদ সৃষ্টি নবীর জন্য ওসিয়ত লেখা অপেক্ষা অধিকতর কষ্টদায়ক ছিল। কারণ এ ওসিয়ত উম্মতকে বিচ্যুতি হতে রক্ষা করত। এটি কিরূপে সম্ভব,যে ব্যক্তি রাসূলের লেখার কষ্টকে সহ্য করতে পারেন না তিনি রাসূলের সামনে বললেন রাসূলের বুদ্ধিবৃত্তি লোপ পেয়েছে,তিনি প্রলাপ বকছেন ?

যাঁরা উমরেরحسبنا كتاب الله আমাদের জন্য কোরআনই যথেষ্ট কথাটির সপক্ষে দলিল হিসেবে কোরআনের( ما فرَّطنا في الكتاب من شيء ) আমরা কোরআনে কোন কিছুই পরিত্যাগ করি নি এবং( اليوم أكملت لكم دينكم ) এইদিন আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণ করলাম এ দু টি আয়াতকে এনেছেন তাঁদের উদ্দেশ্যে বলব এ দু টি আয়াত পথভ্রষ্টতা হতে রক্ষা ও হেদায়েতকে নিশ্চিত করে না। যদি তা হত তবে নবী (সা.) তাঁর সমগ্র প্রচেষ্টাকে এ লেখার জন্য নিয়োজিত করতেন না। যদি কোরআনের অস্তিত্বই পথভ্রষ্টতা হতে রক্ষার জন্য যথেষ্ট হত তাহলে উম্মতের মধ্যে দূর হবার মত নয় এমন বিভেদ সৃষ্টি হত না।৪৯১

তাঁদের উদ্ধৃত সর্বশেষ উত্তরে আপনি উল্লেখ করেছেন তাঁরা বলেন হযরত উমর এ হাদীস হতে বুঝেন নি এ লেখা প্রত্যেকটি উম্মতকে বিচ্যুতি হতে রক্ষা করবে,বরং তিনি ভেবেছেন এর ফলে উম্মত পথভ্রষ্টতার ওপর একমত হবে না এবং যেহেতু তিনি জানতেন উম্মতের পক্ষে পথভ্রষ্টতার ওপর একমত হওয়া সম্ভব নয় তাই তিনি এরূপ কথা বলে রাসূলকে লেখা হতে বিরত রাখেন।

এ বিষয়ে আপনার উল্লিখিত দিকগুলো ছাড়া অন্যান্য দিকও রয়েছে বিশেষত হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রাসূলের বক্তব্য হতে সর্বসাধারণের জন্য সুস্পষ্ট বিষয়টিকে অবশ্যই অনুধাবন করেছিলেন যে,এ লেখা সমগ্র উম্মতকে বিচ্যুতি হতে রক্ষা করবে। কারণ শিক্ষিত,অশিক্ষিত,শহুরে,গ্রাম্য সকলের চিন্তাবোধে এই অর্থই ধরা দেয়। তাই হযরত উমর নিশ্চিত বুঝেছিলেন রাসূল (সা.) সামষ্টিকভাবে উম্মতের পথভ্রষ্টতার বিষয়ে ভীত ছিলেন না যেহেতু প্রায়শঃই তিনি বিভিন্নভাবে উম্মতের সামষ্টিকভাবে বিচ্যুত হওয়া সম্ভব নয় বলে উল্লেখ করেছেন,যেমন কখনো বলেছেন, আমার উম্মত কখনো পথভ্রষ্টতার ওপর একতাবদ্ধ হবে না ,কখনো বলেছেন, আমার উম্মত ভুলের ওপর একতাবদ্ধ হবে না ,আবার কখনো বলেছেন, সব সময়ই আমার উম্মতের এক অংশ সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে । তদ্রুপ কোরআনেও এসেছে তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে ও সৎ কর্ম করেছে আল্লাহ্ তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন পূর্ববর্তীদের ন্যায় তাদেরও পৃথিবীতে নেতৃত্ব দান করবেন এবং তাদের জন্য মনোনীত দীনকে প্রতিষ্ঠিত ও দৃঢ় করবেন ও তাদের ভীতিকে নিরাপত্তায় পরিবর্তিত করে দেবেন এজন্য যে,তারা আমার ইবাদত করবে এবং কোন কিছুকেই আমার অংশীদার করবে না। ৪৯২ সুতরাং কোরআন ও সুন্নাহ্য় অসংখ্য স্থানে সুস্পষ্টরূপে বর্ণিত হয়েছে সমগ্র উম্মত পথভ্রষ্টতার ওপর ঐক্যবদ্ধ হতে পারে না। তাই কোরআন ও সুন্নাহ্ সুস্পষ্টরূপে যে বিষয়টিকে উম্মতের জন্য প্রত্যাখ্যান করেছে হযরত উমর উম্মতের জন্য রাসূল (সা.) সে আশঙ্কাই করেছেন মনে করে কাগজ ও কালি আনতে নিষেধ করেছেন এ যুক্তি অপাঙ্ক্তেয়। বরং অন্যরা এ নির্দেশ হতে যা বুঝে হযরত উমরও তাই বুঝেছিলেন। তদুপরি কাগজ ও কালি না আনা ও এ বিষয়ে বিতণ্ডা সৃষ্টির জন্য রাসূল (সা.) তাঁদের ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে বলেছেন, সকলেই বেরিয়ে যাও যা হতে বোঝা যায় তাঁর নির্দেশটি ওয়াজিব বা অবশ্য পালনীয় ছিল। যদি প্রকৃতই হযরত উমর সঠিকভাবে রাসূলের কথা বুঝতে না পেরে এরূপ বলতেন তাহলে রাসূল (সা.) অবশ্যই তাঁকে বুঝাতেন। নবী (সা.) যদি তাঁদের বুঝাতে পারবেন মনে করতেন তবে তাঁদের বেরিয়ে যেতে বলতেন না। ইবনে আব্বাসের দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে ক্রন্দন আমাদের যুক্তিকেই প্রতিষ্ঠিত করে। ন্যায়ত কোন ব্যাখ্যাই এই শোককে মুছতে পারে না যেমনটি আপনি বলেছেন, এটি একটি বিশেষ ও বাস্তব ঘটনা যা আকস্মিকভাবে সংঘটিত হয়েছিল। যদিও একবারই তা ঘটে থাকে তা বিধ্বংসী ও পঙ্গুকারী ছিল। ইন্নালিল্লাহি ও ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

ওয়াসসালাম

উননব্বইতম পত্র

১৪ রবিউল আউয়াল ১৩৩০ হিঃ

১।   ব্যাখ্যাগুলো সঠিক না হবার বিষয়ে স্বীকারোক্তি।

২।   সাহাবীগণ কর্তৃক এরূপ ভিন্ন ব্যাখ্যার অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোও উল্লেখের আহবান।

১। আপনি অপব্যাখ্যাকারীদের পথ রুদ্ধ করেছেন,তাদের লক্ষ্যের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাদের ওপর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সুতরাং এ বিষয়ে সন্দেহের আর অবকাশ রইল না এবং আপনার যুক্তিতে কোন দ্বিধা ও অস্পষ্টতাও রইল না।

২। অন্যান্য যেসব ক্ষেত্রে সাহাবীগণ কোরআন ও সুন্নাহকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন সেগুলোও উল্লেখ করুন।

ওয়াসসালাম

নব্বইতম পত্র

১৭ রবিউল আউয়াল ১৩৩০ হিঃ

উসামার সেনাদল

উচ্চৈঃস্বরে সত্যের বাণী প্রচারে যদি মানুষের সমালোচনার ভয় না করেন তবে সত্যই আপনার কথা যথার্থ। আপনি প্রকৃতই বৃক্ষের এক দৃঢ় ও ফলদায়ক শাখা। মানুষ আপনার নিকট আশ্রয় পেতে পারে এবং আপনার কথাও বিশ্বাস করতে পারে,আপনার মত পেলে অন্যদের মতের তারা মুখাপেক্ষী হবে না যেহেতু আপনি সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশ্রিত করেন না,আপনার সম্মান উচ্চ ও হৃদয় পবিত্র। আপনার আত্মিক পবিত্রতা আপনাকে কলুষতা হতে দূরে রেখেছে। আল্লাহ্ আপনাকে সম্মানিত করুন। আপনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন অন্যান্য যে সকল ক্ষেত্রে সাহাবীগণ নিজ মতকে নবী (সা.)-এর নির্দেশের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন সেগুলো উল্লেখ করার। এর উল্লেখযোগ্য দলিল হিসেবে রাসূলের জীবদ্দশায় প্রেরিত সর্বশেষ সেনাদল যা রোমানদের উদ্দেশ্যে উসামা ইবনে যাইদ ইবনে হারেসার নেতৃত্বে প্রেরিত হয়েছিল সে সম্পর্কে বর্ণনা করছি। নবী (সা.) এ সেনাদল প্রেরণের বিষয়টিতে খুবই গুরুত্ব দিয়েছিলেন এবং এজন্য সাহাবীদের প্রস্তুত হবার নির্দেশ দিয়ে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। নবী (সা.) স্বয়ং সাজসরঞ্জাম ও প্রস্তুতির বিষয়টি তদারকের মাধ্যমে তাঁদের মনোবলকে দৃঢ় করছিলেন। নবী (সা.) আনসার ও মুহাজেরদের সকলকেই,এমন কি হযরত আবু বকর,উমর,৪৯৩ আবু উবাইদাকেও সেনাদলের সঙ্গে যাত্রার নির্দেশ দেন। একাদশ হিজরীর সফর মাসের ২৫ তারিখে এ ঘটনা ঘটেছিল।

ঐদিন প্রভাতে নবী (সা.) উসামাকে ডেকে বললেন, তোমার পিতার শাহাদাত স্থানের দিকে অশ্ব নিয়ে রওয়ানা হও। তোমাকে এ সেনাদলের দায়িত্ব দিলাম।৪৯৪ উবনার৪৯৫ অধিবাসীদের ওপর প্রত্যুষে আক্রমণ করে তাদের অবরোধ কর। তাদের নিকট এ হামলার খবর পৌঁছার পূর্বেই দ্রুত সেখানে পৌঁছাও। যদি তাদের ওপর জয়ী হও তাহলে সেখানে স্বল্পদিন অবস্থান কর। যাত্রার সময় অভিজ্ঞ ও পথ চেনে এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে নাও। অগ্রগামী সৈন্যদের সঙ্গে পূর্বেই পাহারাদার ও গুপ্তচরদের প্রেরণ কর। ২৮ সফর নবী (সা.)-এর আরোগ্য লাভের সম্ভাবনা লোপ পেল এবং তিনি প্রচণ্ড মাথা ব্যথা ও জ্বরে আক্রান্ত হলেন। ২৯ তারিখে তিনি লক্ষ্য করলেন সেনাদল তাঁর নির্দেশের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করছে। এজন্য স্বয়ং সেনাদলের মধ্যে গিয়ে তাঁদের উৎসাহিত করলেন। তাঁদের মনোবলকে দৃঢ় ও উজ্জীবিত করার জন্য নিজ হাতে পতাকা বেঁধে উসামার হাতে দিয়ে বললেন, আল্লাহর নামে তাঁর পথে যুদ্ধ কর এবং সকল কাফিরকে ঐ এলাকা হতে বহিষ্কার কর। উসামা পতাকা হাতে মদীনা হতে বের হয়ে বুরাইদার হাতে অর্পণ করেন ও জুরফে ছাউনি ফেলার নির্দেশ দেন। যদিও নবী (সা.) তাঁদেরকে যাত্রার জন্য উপর্যুপরি তাকিদ দিয়েছিলেন তদুপরি তাঁরা নবীর নির্দেশ অমান্য করে সেখানে অপেক্ষা করতে থাকেন। নবী (সা.) তাঁদের বলেছিলেন, প্রত্যুষে উবনার অধিবাসীদের ওপর আক্রমণ কর। দ্রুত যাত্রা কর যাতে আক্রমণস্থলে খবর পৌঁছার পূর্বেই পৌঁছাতে পার অথচ অবশ্য পালনীয় ও সুস্পষ্ট এ নির্দেশ সত্ত্বেও তাঁরা তা পালন করেন নি। নবী (সা.)-এর এ নির্দেশ হতে অবশ্যই তাঁরা ফরয ও ওয়াজিব বুঝেছিলেন,মুস্তাহাব নয়।

সাহাবীদের অনেকেই উসামার সেনাপ্রধান মনোনয়নের বিষয়টিকে উপহাস করেছেন যেমন মুতার যুদ্ধের সময় উসামার পিতা যাইদকে সেনানায়ক মনোনয়নের বিষয়টিকেও উপহাস ও নবীর নিকট এর তীব্র প্রতিবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। এক্ষেত্রেও যখন নবী (সা.) সেনাদলের দায়িত্ব উসামার ওপর অর্পণ করে বললেন এই সেনাদলের দায়িত্ব তোমার হাতে অর্পণ করলাম ও তোমাকে সেনাপতি মনোনীত করলাম এবং অসুস্থ শরীরে পতাকা বেঁধে তাঁর হাতে দিলেন তখনও তাঁরা এর প্রতিবাদ করতে লাগলেন। নবী (সা.) তাঁদের এ আচরণে ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট হয়ে প্রচণ্ড অসুস্থতা৪৯৬ সত্ত্বেও (শরীরে প্রচণ্ড জ্বর ও মাথা ব্যথা এবং মাথায় জ্বরপট্টি বাঁধা ছিল) গৃহ হতে বের হয়ে এসে তাঁদেরকে এ কর্ম হতে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেন। এ ঘটনাটি ১০ রবিউল আউয়াল নবী (সা.)-এর ওফাতের দু দিন পূর্বে ঘটে। তিনি ঘরে হতে বের হয়ে মসজিদের মিম্বারে গেলেন। আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তনের পর বললেন, হে লোকসকল! উসামার সেনাপতিত্বের বিষয়ে এটি কিরূপ কথা যা আমার কানে পৌঁছেছে? এখন তোমরা তার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলছ,ইতোপূর্বে তোমরা তার পিতার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলে। তার পিতা যেরূপ সেনাপতিত্বের যোগ্যতাসম্পন্ন ছিল সেও অনুরূপ সেনাপতিত্বের যোগ্যতাসম্পন্ন। অতঃপর নবী (সা.) তাঁদের যাত্রার জন্য তাকিদ দিলেন এবং সেনাদল জুরফের দিকে যাত্রা করল।

নবী (সা.) চরম অসুস্থতার সময়ও বারংবার বলছিলেন, উসামার সেনাদলকে সুসজ্জিত হতে বল,তাকে যাত্রা করতে বল,দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছতে বল। তদুপরি যাত্রার ক্ষেত্রে তাঁরা গড়িমসি করতে থাকেন। ১২ রবিউল আউয়াল সোমবার উসামা সেনা ছাউনী হতে রাসূলের সঙ্গে দেখা করতে আসলে রাসূল তাঁকে আল্লাহর রহমত ও সাহায্যের আশা দিয়ে যাত্রা করার জন্য পুনঃনির্দেশ দিলেন। এ দিনই রাসূল (সা.) ইন্তেকাল করেন। উসামা নবীকে বিদায় জানিয়ে গিয়েও পরে আবু উবাইদা ও হযরত উমরকে নিয়ে ফিরে আসলেন। সেনাদলও মদীনার নিকটবর্তী তিবায় ফিরে আসল। তাঁরা আবু বকরের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলেন যুদ্ধযাত্রা হতে বিরত থাকবেন যদিও তাঁরা এ বিষয়ে রাসূল (সা.)-এর পুনঃ পুনঃ তাকিদ,দ্রুত যাত্রার নির্দেশ,শত্রু অবহিত হবার পূর্বেই ঐ স্থানে পৌঁছানো ও আক্রমণের নির্দেশ শুনেছিলেন। তাঁরা দেখেছেন এ বিষয়ে রাসূলের পক্ষে যা করা সম্ভব তার সবটুকুই তিনি করেছেন। সেনাদলকে সুসজ্জিত করা,উসামাকে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান,স্ব হস্তে তাঁর হাতে পতাকা অর্পণ এবং মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তেও যাত্রার জন্য নির্দেশ প্রদান সবই করেছেন। রাসূলের মৃত্যুর পর আবু বকর ব্যতীত সকলেই সেনাদলের যাত্রা মূলতবী করার পক্ষে ছিলেন। যখন তাঁরা দেখলেন আবু বকর সেনা প্রেরণের বিষয়ে অনঢ় তখন উমর ইবনে খাত্তাব আনসারদের মাধ্যমে উসামাকে অপসারণের পরামর্শ দেন ও বলেন অন্য কাউকে তার স্থলাভিষিক্ত করুন। অথচ কয়েকদিনও অতিবাহিত হয় নি নবী (সা.) উসামার সেনাপতিত্বের বিষয়ে প্রতিবাদের কারণে তাঁদের ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে মাথায় জ্বরপট্টি বাঁধা অবস্থায় শরীরের প্রচণ্ড উত্তাপসহ মাটিতে পা টেনে টেনে মিম্বারে উপস্থিত হয়ে বলেছিলেন হে লোকসকল! এটি কিরূপ কথা তোমরা উসামার সেনাপতিত্বের বিষয়ে বলছ? তোমরা ইতোপূর্বে তার পিতার বিষয়েও অনুরূপ কথা বলেছিলে। আল্লাহর শপথ,যাইদ সেনাপতি পদের জন্য উপযুক্ত ছিল আর তার পুত্রও সে পদের জন্য যোগ্য । লক্ষ্য করুন নবী (সা.) এখানে আল্লাহর শপথ করে বিশেষ্য পদ দিয়ে শুরু করে তাকিদের জন্য তাকিদের লাম(لام التّأكيد) ও কসম ব্যবহার করেছেন

 (وأيم الله إن كان لخليقا بالامارة و إن ابنه من بعده لخليق بِها) এজন্য যাতে তাঁরা মন হতে বিদ্বেষ দূর করেন। কিন্তু তাঁরা এ বিদ্বেষ অন্তরে পোষণ করে রেখেছিলেন এবং নবীর ইন্তেকালের পর উসামাকে অপসারণের দাবী তুলেছিলেন কিন্তু খলীফা তাঁদের দাবী প্রত্যাখ্যান করে তাঁকে বহাল রাখেন। সেনাদলের যাত্রা মূলতবী করার পরামর্শও তিনি গ্রহণ করেন নি। এ বিষয়ে তাঁরা এতটা বাড়াবাড়ি করেন যে,খলীফা আবু বকর হযরত উমরকে বলেন, হে খাত্তাবের পুত্র! তোমার মাতার তোমার জন্য ক্রন্দন করা উচিত কারণ নবী (সা.) তাকে সেনাপতি নিযুক্ত করেছেন আর তুমি আমাকে বলছ তাকে পদচ্যুত করতে? ৪৯৭

অতঃপর তাঁদের আপত্তি সত্ত্বেও সেনাদল যাত্রা করল। এক হাজার আরোহীসহ মোট তিন হাজার সেনার বাহিনী নিয়ে উসামা যাত্রা করেন। যে সকল ব্যক্তিকে রাসূল ঐ সেনাদলের সঙ্গে যাত্রা করতে বলেছিলেন তাঁদের অনেকেই এ সেনাদলের সঙ্গে যাত্রা হতে বিরত থাকেন অথচ নবী (সা.) বলেছিলেন, যে উসামার সেনাদলের সঙ্গে যাত্রা হতে বিরত থাকবে তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক। ৪৯৮ আপনি অবগত আছেন যে,তাঁরা প্রথম বারেও যাত্রা করতে বিলম্ব করেন এবং দ্বিতীয় বারে যাত্রা হতে বিরত থাকেন। নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থে তাঁরা সুন্নাহর ওপর নিজস্ব প্রবৃত্তিকে প্রাধান্য দানকে অধিকতর লাভজনক মনে করেছেন। যেহেতু তাঁরা দেখেছেন নবীর নির্দেশ মত তাঁর মৃত্যুর পূর্বে সেনাদলের সঙ্গে যাত্রা করলে খেলাফত তাঁদের হাতছাড়া হয়ে যাবে সেহেতু নবীর নির্দেশ অমান্য করে তাঁরা বিলম্ব করেন যদিও উসামার যাত্রা পরবর্তীতে মূলতবী হয় নি।

মহানবী (আমার পিতামাতা তাঁর জন্য উৎসর্গীকৃত) চেয়েছিলেন এ সকল ব্যক্তি হতে মদীনাকে মুক্ত রেখে শান্তিপূর্ণ ও নিশ্চয়তার সাথে হযরত আলী (আ.)-এর হাতে খেলাফত অর্পণ করতে যাতে করে তাঁরা ফিরে আসার পূর্বেই তাঁর খেলাফত দৃঢ় ও প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তাঁরা ফিরে এসে কোন গোলযোগ সৃষ্টি করতে না পারেন। ১৭ বছরের উসামার হাতে রাসূল (সা.) সেনাপতিত্বের দায়িত্ব এজন্য অর্পণ করেছিলেন যাতে তাঁদের মধ্যকার কিছু আত্মগর্বী ও অহঙ্কারী ব্যক্তির গর্ব চূর্ণ হয় ও ক্ষমতার কেন্দ্রে তাঁদের হতে যুবক কোন ব্যক্তিকে অধিষ্ঠিত করলেও মেনে নিতে বাধ্য হয় এবং কোন মন্দ আচরণ ও বিশৃঙ্খলার জন্মদান না করতে পারেন। তাঁরা এটি বুঝতে পেরেই উসামার বিষয়ে আপত্তি তুলতে থাকেন ও তাঁর সঙ্গে যাত্রায় গড়িমসি করতে থাকেন এবং এ অবস্থায়ই রাসূল (সা.) তাঁর প্রভুর সান্নিধ্যে চলে যান।

তাঁরা কখনো যুদ্ধ প্রস্তুতি বন্ধের,কখনোও বা পতাকা খুলে ফেলা,কখনো উসামাকে অপসারণের চেষ্টা করছিলেন। তাঁদের অনেকেই উসামার সেনাদল হতে ফিরে আসেন।৪৯৯

সুতরাং উসামার সেনাদল প্রেরণের এ ঘটনাতেই পাঁচটি ক্ষেত্রে তাঁরা নবী (সা.)-এর নির্দেশ পালন হতে বিরত থাকেন এবং এরূপ রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে তাঁরা নিজ মত অনুযায়ী কাজ করতেন,নবীর সুন্নাহর প্রতি ভ্রুক্ষেপ করতেন না।

ওয়াসসালাম

একানব্বইতম পত্র

১৯ রবিউল আউয়াল ১৩৩০ হিঃ

১।   উসামার সেনাদল হতে বিরত থাকার পক্ষে যুক্তি।

২।   এ সেনাদলে অংশ গ্রহণে বিরোধিতাকারীদের রাসূল (সা.) অভিসম্পাত করেছেন এমন কোন হাদীস নেই।

১। হ্যাঁ,রাসূল (সা.) উসামার সঙ্গে যুদ্ধযাত্রার জন্য তাঁদের তাকিদ দিয়েছিলেন এবং কাজটি এতটা দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন যে উসামাকে বলেছিলেন আজ ভোরেই উবনার অধিবাসীদের ওপর হামলা কর (বিকেল পর্যন্তও তাঁদের সময় দেন নি),এজন্য যত শীঘ্র সম্ভব যাত্রা কর । সুতরাং নবী (সা.) তাঁদের বিলম্বে সন্তুষ্ট ছিলেন না এবং এ বিষয়ে তাঁদের ওপর কড়াকড়িও তিনি আরোপ করেছিলেন। কিন্তু এর পরপরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং তাঁর অসুস্থতা এতটা তীব্র হয় যে,তাঁরা নবীর জীবন নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ কারণে তাঁদের মন নবী (সা.) হতে বিচ্ছিন্ন হতে সায় দিচ্ছিল না। তাঁরা জুরফে এজন্য অপেক্ষা করছিলেন যাতে নবীর অবস্থার খবরাখবর জানতে পারেন। নবীর প্রতি অসম্ভব ভালবাসা তাঁদের এ অবস্থায় ফেলেছিল। সুতরাং তাঁদের বিলম্ব ও অপেক্ষার কারণ এ দু টি ভিন্ন কিছু হতে পারে না- প্রথমত,নবীর সুস্থতা কামনায় তাঁরা চেয়েছিলেন চক্ষু উজ্জ্বল করতে,দ্বিতীয়ত,(যদি নবী সুস্থ না হয়ে ওঠেন) নবীর উত্তরাধিকারী হিসেবে যিনি ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবেন তাঁর ক্ষমতার ভিতকে মজবুত ও শক্তিশালী করতে। তাই তাঁদের বিলম্ব ও অপেক্ষাকে আমরা ত্রুটি বলতে পারি না,বরং তাঁরা এক্ষেত্রে ক্ষমার যোগ্য।

নবীর মৃত্যুর পূর্বে উসামাকে সেনাপতি মনোনয়নে তাঁরা যে বিরোধিতা করেছিলেন (নবীর বক্তব্য ও কর্ম হতে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া সত্ত্বেও) এজন্য যে,উসামা একজন যুবক ছিলেন অথচ তাঁরা প্রবীণ অথবা বৃদ্ধ। স্বাভাবিকভাবেই প্রবীণরা কোন তরুণের নেতৃত্বের আওতায় যেতে চায় না ও বাস্তবে যুবকদের নির্দেশ পালন ও আনুগত্যে তাদের অনীহা থাকে। সুতরাং উসামার নেতৃত্বকে মেনে নিতে তাঁদের অস্বীকৃতি মানবিক প্রবণতা থেকে উৎসারিত এবং এটিকে বিদআত বা অন্যায় বলা যায় না।

কিন্তু নবীর মৃত্যুর পরও উসামার নেতৃত্বের বিষয়ে আপত্তির বিষয়টি অনেক আলেমই এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে,তাঁদের দৃষ্টিতে উসামার অপসারণ অধিকতর কল্যাণকর ছিল এবং মনে করেছিলেন খলীফাও তাঁদের পরামর্শের সঙ্গে একমত হবেন। কিন্তু ন্যায়ত এ বিষয়ে আপত্তি উত্থাপনকে আমি যুক্তিসম্মত মনে করি না। কারণ নবী (সা.) এক্ষেত্রে এতটা অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন যে,শরীরে প্রচণ্ড উত্তাপ ও জ্বর নিয়েও মাথায় পট্টি বাঁধা অবস্থায় তিনি ঘর হতে বেরিয়ে এসে মিম্বারে গিয়ে উচ্চৈঃস্বরে খুতবা দেন ও তাঁদের এ কর্মের তীব্র সমালোচনা করেন যা একটি ঐতিহাসিক সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত বলে সকলেই জেনেছেন। তাই এক্ষেত্রে তাঁদের ওজর ও আপত্তির কারণ আল্লাহ্ ব্যতীত কেউ জানেন না।

কিন্তু উসামার সেনাদলকে প্রেরণে রাসূলের বিশেষ দৃষ্টি ও নির্দেশ এবং এ বিষয়ে উপর্যুপরি বক্তব্যের পরও খলীফা আবু বকরের নিকট এ সেনাদল প্রেরণ স্থগিত করার আহবান তাঁরা এজন্য রেখেছিলেন যে,তাঁরা ইসলামের কেন্দ্র রক্ষার জন্য একে অধিকতর সতর্কতা মনে করেছিলেন। তাঁরা ভীত ছিলেন সেনাদল মদিনা হতে বেরিয়ে গেলে পার্শ্ববর্তী এলাকার মুশরিকরা সেখানে হামলা করতে পারে। কেননা নবীর মৃত্যুর পর নিফাক প্রকাশিত হয়ে পড়েছিল ও ইহুদী-নাসারারা শক্তি অর্জন করেছিল,বিভিন্ন আরব গোত্রগুলো মুরতাদ হতে শুরু করেছিল। অনেক গোত্রই যাকাত দিতে অস্বীকার করেছিল। এ কারণেই সাহাবীরা খলীফার সঙ্গে কথা বলে উসামার সেনাদল প্রেরণ স্থগিত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খলীফা এতে রাজী হন নি এবং তাঁদেরকে বলেন, আল্লাহর শপথ,রাসূলের নির্দেশ অমান্য করা অপেক্ষা পাখিরা আমাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গিয়ে তাদের খাদ্যে পরিণত করাকে আমি শ্রেয় মনে করি।

খলীফা আবু বকর হতে আহলে সুন্নাহর আলেমরা এ বক্তব্যসমূহ বর্ণনা করেছেন। যদিও আবু বকর ব্যতীত অন্য সকলেই উসামার সেনাদল প্রেরণের বিরোধিতা করেছেন তদুপরি এর পেছনে ইসলামকে রক্ষা ব্যতীত তাঁদের অন্য কোন উদ্দেশ্য ছিল না।

উসামার সেনাদলের সঙ্গে যাত্রা হতে হযরত আবু বকর ও উমর যে বিরত ছিলেন তা ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তিকে মজবুত করা ও খেলাফত সংরক্ষণের উদ্দেশ্যেই ছিল। কারণ এ ছাড়া মুহাম্মাদী রাষ্ট্র ও দীনকে সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না।

২। আপনি শাহরেস্তানীর মিলাল ওয়ান নিহাল হতে যে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন তা সনদহীন ও মুরসাল। হালাবী ও যাইনী দাহলান তাঁদের সীরাত গ্রন্থে বলেছেন যে,এ বিষয়ে কোন হাদীসই নেই। যদি এক্ষেত্রে আহলে সুন্নাহর সূত্রে কোন হাদীস আপনার জানা থাকে তা উল্লেখ করে আমাদের পথ-নির্দেশনা দিন। আল্লাহ্ আপনাকে সুস্থ রাখুন।

ওয়াসসালাম