আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত4%

আল মুরাজায়াত লেখক:
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ: ইতিহাস

আল মুরাজায়াত
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 133 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 69511 / ডাউনলোড: 9383
সাইজ সাইজ সাইজ
আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত

লেখক:
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বাংলা

1

2

3

4

5

6

7

8

9

10

11

12

13

14

15

একশতম পত্র

৮ রবিউস সানী ১৩৩০ হিঃ

১।   আলোচনার কেন্দ্র পরিত্যাগ।

২।   আহবান গ্রহণ।

১। আপনি স্বীকার করেছেন যে সকল বিষয়ের উল্লেখ আমরা করেছি তাতে তাঁরা হস্তক্ষেপ করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ্,আমাদের কথাকে সত্যায়ন করেছেন। এখন তাঁদের এ কর্মের পেছনে সৎ উদ্দেশ্য,সাধারণের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দান,উম্মতের জন্য সর্বোত্তম পথ গ্রহণ,ইসলামের শক্তি ও সম্মান বৃদ্ধির প্রচেষ্টা প্রভৃতি বিষয় ছিল কি না তা আমাদের আলোচনার বহির্ভূত বিষয়। আমাদের মূল আলোচ্য বিষয় তাঁরা এ সকল বিষয়ে রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহ্ অনুযায়ী আমল করেছেন কি করেন নি? কিন্তু কেন তা করেন নি তা আমাদের আলোচনার কেন্দ্র বহির্ভূত।

২। আপনার সর্বশেষ পত্রে হযরত আলী (আ.) সম্পর্কে যে সকল সহীহ হাদীস আহলে সুন্নাহ্ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে কিন্তু সাহাবীগণ তদনুযায়ী আমল করেন নি বা সেগুলোকে উপেক্ষা করেছেন তা আলোচনা করার আহবান জানিয়েছেন। আপনি স্বয়ং সুন্নাহ্ ও হাদীসের ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ের বিশেষজ্ঞদের নেতা এবং হাদীস সংকলন অধ্যয়ন ও বিশ্লেষণে দীর্ঘ সময় ধরে কঠোর শ্রম দিয়ে আসছেন। তাই আমি কি করে ভাবতে পারি যে সকল বিষয় আমরা সংক্ষেপে আলোচনা করেছি আপনি সে সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত নন? কে আমাদের ইশারাকৃত ঐ সকল বিষয়ে নিজকে আপনার হতে অধিকতর জ্ঞানী মনে করতে পারে? আহলে সুন্নাহর আলেমদের মধ্যে আপনার সমপর্যায়ের অন্য কেউ রয়েছেন কি? অবশ্যই নেই।

তাই বিস্তারিত আলোচনার জন্য আপনার যে আহবান তাকে আমরা এ বাক্যটির নমুনা মনে করছি যে, কত অধিক প্রশ্নকারী রয়েছে যারা এ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত

আপনি নিশ্চয়ই জানেন,অনেক সাহাবীই হযরত আলী (আ.)-এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতেন এবং তাঁর সঙ্গে শত্রুতা করে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন। তাঁরা আলী (আ.)-কে কষ্ট ও অপবাদ দিতেন,তাঁর প্রতি অবিচার করতেন,তাঁকে মন্দ বলা ও গালি দেয়াকে নিজেদের জন্য অপরিহার্য কর্ম মনে করতেন,এমন কি কেউ কেউ আলী (আ.),তাঁর পরিবার ও বন্ধুদের বিরুদ্ধে অস্ত্রও ধারণ করেছেন। হাদীস ও ইতিহাস গ্রন্থসমূহ এর সাক্ষী।

অথচ নবী (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করেছে সে আল্লাহর আনুগত্য করেছে,আর যে আমার নির্দেশ অমান্য করেছে সে আল্লাহরই নির্দেশ অমান্য করেছে। যে ব্যক্তি আলীর আনুগত্য করেছে সে আমারই আনুগত্য করেছে। আর যে আলীর নির্দেশ অমান্য করেছে সে আমার নির্দেশই অমান্য করেছে।

অন্যত্র রাসূল (সা.) বলেছেন, যদি কেউ আমা হতে বিচ্ছিন্ন হয় সে আল্লাহ্ হতে বিচ্ছিন্ন হয় আর যে আলী হতে বিচ্ছিন্ন হয় সে আমা হতেই বিচ্ছিন্ন হয়।

রাসূল আরো বলেছেন, হে আলী! তুমি পৃথিবীতেও যেমনি নেতা আখেরাতেও তেমনি নেতা। তোমার বন্ধু আমারই বন্ধু এবং আমার বন্ধু আল্লাহরই বন্ধু। তোমার শত্রু আমারই শত্রু এবং আমার শত্রু আল্লাহর শত্রু। ধ্বংস সেই ব্যক্তির জন্য যে আমার পর তোমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়।

তিনি আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি আলীকে মন্দ বলল (গালি দিল) সে আমাকেই মন্দ বলল,আর যে আমাকে মন্দ বলল সে আল্লাহকেই যেন মন্দ বলল।

রাসূল (সা.) বলেছেন, যে আলীকে কষ্ট দিল সে আমাকেই কষ্ট দিল আর যে আমাকে কষ্ট দিল সে আল্লাহকেই কষ্ট দিল।

অন্যত্র নবী বলেছেন, যে আলীকে ভালবাসল সে আমাকেই ভালবাসল,আর যে তাকে অপছন্দ করল সে আমাকেই অপছন্দ করল।

রাসূল (সা.) আলী (আ.)-কে বলেছেন, হে আলী! মুমিন ব্যতীত কেউ তোমাকে ভালবাসবে না এবং মুনাফিক ব্যতীত কেউ তোমার প্রতি অন্তরে বিদ্বেষ পোষণ করবে না।

রাসূল (সা.) বলেছেন, হে আল্লাহ্! যে আলীকে ভালবাসে আপনি তাকে ভালবাসুন এবং যে তার সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে আপনি তার প্রতি শত্রুতা পোষণ করুন। তার সাহায্যকারীকে আপনি সাহায্য করুন। যে তাকে অপমানিত করতে চায় তাকে আপনি অপমানিত করুন।

একদিন রাসূল (সা.) হযরত আলী,ফাতিমা,ইমাম হাসান ও হুসাইন (আ.)-কে লক্ষ্য করে বললেন, তোমাদের সঙ্গে যে যুদ্ধ করে আমিও তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করি এবং তোমাদের সঙ্গে যে সন্ধি করে আমিও তাদের সঙ্গে সন্ধি করি।

যেদিন রাসূল (সা.) তাঁদের (আহলে বাইত) ওপর আবা (এক প্রকার বস্ত্র) বিছিয়ে দিয়ে আল্লাহর নিকট দোয়া করেছিলেন সেদিন তিনি বলেছিলেন, তাদের সঙ্গে যারা যুদ্ধে লিপ্ত হয় আমি তাদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হই,যারা তাদের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করে আমিও তাদের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করি। তাদের সঙ্গে আমি শত্রুতা পোষণ করি যারা তাদের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ করে।

এরূপ অধিকাংশ হাদীসই এই সকল সাহাবী গ্রহণ করেন নি,বরং এর বিপরীত আচরণ করেছেন। এক্ষেত্রে নিজ প্রবৃত্তি ও উদ্দেশ্য দ্বারা পরিচালিত হয়ে তাঁরা এগুলোকে উপেক্ষা করেছেন। চিন্তাশীল সচেতন ব্যক্তিরা সুনান গ্রন্থসমূহে হযরত আলী (আ.)-এর ফজীলত ও মর্যাদা বর্ণনাকারী হাদীসসমূহ সম্পর্কে অবগত যার সংখ্যা শতাধিক। এ সকল হাদীসে তাঁর আনুগত্যের অপরিহার্যতা ও তাঁর সঙ্গে শত্রুতা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে সুস্পষ্টরূপে। এর প্রতিটিতে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের নিকট তাঁর বিশেষ সম্মান,মর্যাদা ও স্থান বর্ণিত হয়েছে। পূর্ববর্তী পত্রসমূহে এর অনেকাংশই আমরা উল্লেখ করেছি তদুপরি অবর্ণিত অংশ এর কয়েক গুণ। আলহামদুলিল্লাহ্,আপনি সুনান গ্রন্থসমূহের ওপর পর্যাপ্ত জ্ঞানের অধিকারী ও এগুলোর ওপর আপনার পূর্ণ দখল রয়েছে। আপনার নিকট প্রশ্ন এর কোনটিতে আলীর প্রতি কটুক্তি ও যুদ্ধ করা বৈধ ঘোষিত হয়েছে কি? এর কোনটিতে তাঁর সঙ্গে শত্রুতা ও বিদ্বেষ পোষণ করার কথা বলা হয়েছে কি? এগুলোতে তাঁর অধিকার হরণ,তাঁকে কষ্টে আপতিত করা,তাঁর প্রতি অবিচার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে কি? কখনোই নয়। তবে কেন মুসলমানদের মিম্বারে জুমআ ও ঈদের দিনে তাঁর প্রতি লানত ও অভিশাপ বর্ষণ তাঁদের সুন্নাহ্য় পরিণত হয়েছিল? কেন তাঁরা এ সকল হাদীসের বিশুদ্ধতা ও আধিক্যের প্রতি গুরুত্ব দিতেন না? কারণ তাঁরা এ সকল হাদীসকে তাঁদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের পরিপন্থী মনে করতেন। তাঁরা উত্তমরূপে জানতেন আলী (আ.) নবীর ভ্রাতা,স্থলাভিষিক্ত,উত্তরাধিকারী,রক্ত সম্পর্কীয়দের নেতা,পরম বন্ধু,তাঁর উম্মতের হারুন (আ.),তাঁর নয়নের মনির জীবনসঙ্গী (ও সমমর্যাদার ব্যক্তি),তাঁর সন্তানদের পিতা,তাঁর ওপর সর্বপ্রথম ঈমান আনয়নকারী,ইখলাস (নিষ্ঠা)-এর ক্ষেত্রে সকলের ঊর্ধ্বে,সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী,সর্বাধিক আমলকারী,ধৈর্যের ক্ষেত্রে সকলের আদর্শ,ইয়াকীন (দৃঢ় বিশ্বাস)-এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে দৃঢ়,দীনের পথে সর্বাধিক কষ্ট সহ্যকারী,ঐশী পরীক্ষায় সর্বোত্তমরূপে উত্তীর্ণ,মর্যাদার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ,দীনের ক্ষেত্রে সকল হতে অগ্রগামী ও প্রথম,ইসলামের ওপর সর্বাধিক দক্ষ,রাসূলের সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী,চরিত্র ও আচরণে রাসূলের সদৃশ,বাণী ও নীরবতার ক্ষেত্রে অনন্য এবং হেদায়েতের নমুনা। তদুপরি তাঁরা ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে নিজ ইচ্ছা ও প্রবৃত্তিকে এর ওপর অগ্রাধিকার দিয়েছেন। সুতরাং এখানে আশ্চর্যের কিছু নেই যে,তাঁরা ইমামতের ক্ষেত্রে গাদীরের হাদীসকে দূরে ঠেলে দেবেন এবং এরূপ অন্যান্য শত হাদীসের ন্যায় গাদীরের হাদীসটিকেও নিজ ইচ্ছানুযায়ী ভিন্নরূপে ব্যাখ্যা করবেন। এটিই স্বাভাবিক,তাঁরা রাসূলের এ বাণী শুনে থাকবেন যে,তিনি (সা.) বলেছেন, আমি তোমাদের মাঝে দু টি ভারী বস্তু রেখে যাচ্ছি যদি তা তোমরা আঁকড়ে ধর কখনোই পথভ্রষ্ট হবে না,আল্লাহর কিতাব ও আমার রক্ত সম্পর্কীয় আহলে বাইত। রাসূল (সা.) তাঁদের বলেন, আমার আহলে বাইতের উদাহরণ হলো নূহের তরণির ন্যায়। যে তাতে আরোহণ করবে সে মুক্তি পাবে আর যে আরোহণ করবে না সে নিমজ্জিত হবে এবং আমার আহলে বাইত বনি ইসরাঈলের তওবা ও মুক্তির তোরণের ন্যায়। যে কেউ তাতে প্রবেশ করবে ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে

রাসূল (সা.) বলেন, আকাশের তারকারা পৃথিবীবাসীদের নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষার উপায়। আমার আহলে বাইতও তদ্রুপ বিভেদ হতে মুক্তির উপায়। তাই আরবদের কোন গোত্র তাদের বিরোধিতা করলে বা তাদের বিষয়ে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে শয়তানের দলে পরিণত হবে।

পরিশেষে বলা যায় এরূপ সকল সহীহ হাদীসের প্রতি তাঁরা অনুগত ছিলেন না।

ওয়াসসালাম

একশত একতম পত্র

১০ রবিউস সানী ১৩৩০ হিঃ

কেন হযরত আলী (আ.) সাকীফার দিন তাঁর খেলাফত ও স্থলাভিষিক্তের বিষয়ে উল্লিখিত হাদীসগুলো হতে যুক্তি উপস্থাপন করেন নি?

সত্য সুস্পষ্টরূপে প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বজগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহর প্রশংসা যে,এখন শুধু একটি বিষয় অজ্ঞাত রয়ে গেছে,তাঁর চি হ্ন ও নিদর্শন প্রকাশিত হয় নি। বিষয়টি আপনার নিকট উপস্থাপন করছি এ উদ্দেশ্যে যেন অস্পষ্টতা ও গোপনীয়তার পর্দা উন্মোচিত হয়। প্রশ্ন হলো কেন ইমাম আলী (আ.) হযরত আবু বকর ও তাঁর হাতে বাইয়াতকারীদের বিপক্ষে খেলাফত সম্পর্কিত যে সকল হাদীস আপনি উল্লেখ করেছেন তা দলিল হিসেবে উপস্থাপন করেন নি? আপনি কি ইমাম হতে উপরোক্ত হাদীসের অর্থ সম্পর্কে অধিকতর অবহিত?

ওয়াসসালাম

একশত দুইতম পত্র

১১ রবিউস সানী ১৩৩০ হিঃ

১।   সাকীফায় হযরত আলী (আ.)-এর উপরোক্ত দলিল উপস্থাপনে যে প্রতিবন্ধকতাসমূহ ছিল।

২।   ইমাম আলী ও তাঁর শুভানুধ্যায়ীরা ঐ প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও এতদ্সংক্রান্ত দলিলসমূহ বিভিন্ন স্থানে উল্লেখ করেছেন।

১। সকলেই এ বিষয়ে অবগত আছেন,হযরত আলী (আ.),বনি হাশিম ও তাঁর শুভানুধ্যায়ীরা কেউই সাকীফায় উপস্থিত ছিলেন না। সেদিন তাঁরা সেখানে যান নি এবং সেদিনের সংঘটিত সকল কিছু হতে তাঁরা দূরে ছিলেন (অনবহিত ছিলেন)। নবী (সা.)-এর মৃত্যুর পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি ছিল তা হলো নবীর গোসল ও দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা। তাই ওয়াজিব এ দায়িত্ব পালনের জন্যই তিনি ও তাঁর সহযোগীরা ব্যস্ত ছিলেন। নবীর পবিত্র দেহ দাফনের পূর্বেই সাকীফার কর্মকর্তা ও উদ্যোক্তারা তাঁদের কর্ম সম্পাদন করে আবু বকরের বাইয়াতের বিষয়টি পাকাপোক্ত করে ফেলেছিলেন। তাঁরা ঐক্যবদ্ধভাবে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে,যে কোন কথা ও কর্ম যা সাকীফার বাইয়াতকে দুর্বল,সন্দেহযুক্ত ও আশঙ্কার দিকে ঠেলে দিতে পারে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এজন্য তাঁরা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাও নিয়েছিলেন।

হযরত আলী (আ.) যেহেতু সেখানে উপস্থিতই ছিলেন না সুতরাং কিরূপে তাঁদের বিরুদ্ধে এতদ্সংক্রান্ত দলিল প্রমাণ উপস্থাপন করবেন? এমন কি সাকীফা ও মসজিদে নববীতে বাইয়াতের পরও তাঁকে সে সযোগ দেয়া হয় নি। কিরূপে সম্ভব তিনি এ বিষয়ে আলোচনা করবেন যখন ক্ষমতাধিকারীরা সুপরিকল্পিত ও সতর্কতামূলকভাবে পূর্ব হতেই শক্তি ও ক্ষমতা প্রয়োগের নীতি অবলম্বন করেছিলেন।

বর্তমান সময়েও কোন ব্যক্তির পক্ষে প্রতিষ্ঠিত একটি সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা সম্ভব কি? যদি এরূপ কোন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায় তবে সে ব্যক্তি রক্ষা পাবে কি? কখনোই নয়। বর্তমানের সঙ্গে সে সময়ের তুলনা করে দেখুন। কারণ বর্তমান ও সে সময়ের সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই। (আর বিশেষ ব্যক্তিরাও পরিস্থিতি তাঁদের অনুকূলে না থাকলে এরূপ পদক্ষেপে কখনোই আগ্রহী নন) তবে যদি সকল মুসলমান এ বিষয়ে পূর্ণ সচেতনতার সঙ্গে তাদের নেতার আনুগত্য করে তখনই কেবল ক্ষমতার এ প্রভাববলয় ছিন্ন করা সম্ভব,নতুবা নয়।(*২৮)

উপরন্তু হযরত আলী (আ.) সে সময় ও সেদিন এরূপ যুক্তি প্রদর্শনকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও নিজ অধিকার চিরতরে বিলুপ্ত হবার উপায় ভিন্ন অন্য কিছু মনে করেন নি। কারণ তিনি খোদ ইসলাম ও তাওহীদের বিষয়ে আতঙ্কিত ছিলেন। পূর্বে আমরা উল্লেখ করেছি তিনি সে সময় এমন দুই সমস্যার মুখোমুখি ছিলেন যা অন্য কেউ ছিলেন না। একদিকে খেলাফতের বিষয়ে রাসূল (সা.)-এর সুস্পষ্ট হাদীসসমূহ তাঁকে করুণস্বরে আহবান করছিল যা তাঁর হৃদয়কে রক্তাক্ত করছিল ও অন্তর দগ্ধ হচ্ছিল। অন্যদিকে তিনি আশঙ্কা করছিলেন বিদ্রোহীদের বিশৃঙ্খলার কারণে সমগ্র আরব উপদ্বীপ ধ্বংসের সম্মুখীন হবে,আরবরা দলে দলে মুরতাদ হয়ে ইসলামের প্রসার চিরতরে রুদ্ধ হয়ে যাবে যা ইসলামের বিলুপ্তিই ডেকে আনবে।

মদীনার মুনাফিকরা তাঁকে শঙ্কিত করছিল কারণ তারা নিফাকে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিল। মদীনার পার্শ্ববর্তী এলাকার সেই সব আরব যাদের কোরআনই মুনাফিক বলে ঘোষণা করেছে তারাও তাঁর শঙ্কার কারণ ছিল। যেহেতু তারা রাসূলের ওপর অবতীর্ণ বিধানাবলী সম্পর্কে অবহিত ছিল না তাই নিফাকের ক্ষেত্রে কঠোর ছিল। তারা রাসূলের মৃত্যুর ফলে শক্তি ও মনোবল অর্জন করেছিল। অপর পক্ষে মুসলমানরা অন্ধকার ঝড়ের রাত্রিতে একদল হিংস্র নেকড়ের মুখে রাখালহীন মেষপালের মত হয়ে পড়েছিল।

ভণ্ড নবী মুসাইলামা কায্যাব,কুৎসা রটনাকারী তালহা ইবনে খুওয়াইলিদ,প্রতারক সাজাহ বিনতে হারিস ও তাদের সহযোগীরা যেমন ইসলামকে ধ্বংস এবং মুসলমানদের চূর্ণবিচূর্ণ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল। রোম,পারস্য ও অন্যান্য সম্রাজ্যের শাসকবর্গও তেমনি ওত পেতে বসেছিল। এছাড়াও যে সকল বিদ্রোহী নবী (সা.) ও তাঁর আহলে বাইত ও তাঁদের প্রেমিকদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করত তারা ইসলামের চরম বিরোধিতা করত এবং ইসলামের মূলোৎপাটনের জন্য সব সময় সচেষ্ট ছিল। এ শক্তিশালী প্রতিপক্ষসমূহ রাসূলের ওফাতের বিষয়টিকে তাদের জন্য সুযোগ ও লক্ষ্যে পৌঁছা চূড়ান্ত মনে করে দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ গ্রহণ করে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা এ সুযোগের সর্বোত্তম সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে চেয়েছিল নির্যাতিতদের সহায় ও ন্যায়ের ধ্বজাধারী এ মুসলমানদের পৃথিবী থেকে নিশ্চি হ্ন করতে।

তখন যেহেতু ইসলামী রাষ্ট্রক্ষমতা ততটা মজবুত ও দৃঢ় হয়ে ওঠে নি সেহেতু সে মুহূর্তকেই এ আক্রমণের প্রকৃত সময় বলে তারা মনে করেছে।

হযরত আলী (আ.) এ দুই ভিন্নমুখী সমস্যার মধ্যে ছিলেন। সুতরাং তিনি নিজ ন্যায্য অধিকারকে মুসলমানদের জীবনের বিপরীতে বিসর্জন দেবেন এটিই তো স্বাভাবিক।৫০৫ অবশ্য তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তাঁর খেলাফতের অধিকারকে ভিন্নভাবে সংরক্ষণ করবেন এবং এজন্য যারা তাঁর এ অধিকার হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে এমনভাবে যুক্তি উপস্থাপন করেন যাতে মুসলমানদের ঐক্য বিনষ্ট না হয় আর শত্রুরাও সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিশৃঙ্খলার জন্ম দিতে না পারে। এজন্যই তিনি গৃহে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেন যতক্ষণ না তাঁকে জোরপূর্বক গৃহ হতে বের করা হয় (বাইয়াতের উদ্দেশ্যে)। তিনি যদি স্বেচ্ছায় বাইয়াত করতেন তবে তাঁর অনুসারীরা তাঁর খেলাফতের পক্ষে কোন দলিল-প্রমাণ উপস্থাপনে সক্ষম হতেন না। এভাবে হযরত আলী (আ.) কোন রক্তপাত ছাড়াই তাঁর খেলাফতের অধিকার ও দীনের হেফাজতের মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন।

ইমাম যখন দেখলেন ইসলামের শত্রুদের প্রচেষ্টা নস্যাতের সঙ্গে ইসলামের টিকে থাকা নির্ভর করছে তখন তিনি অভ্যন্তরীণ ঐক্য রক্ষার স্বার্থে খলীফাদের সঙ্গে সহাবস্থানের নীতি অবলম্বন করেন। তিনি উম্মতের ঐক্য ও দীনের নিরাপত্তাকে নিজ অধিকারের ওপর অগ্রাধিকার দান করেন। আখেরাতকে দুনিয়ার ওপর প্রাধান্য দান এবং দু টি গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিবের মধ্যে দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে অধিকতর গুরুত্বের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেয়ার লক্ষ্যে তিনি তাঁদের সঙ্গে সমঝোতা করেন। সুতরাং সুস্পষ্ট যে,তৎকালীন অবস্থা ও পরিবেশ তাঁকে তাঁর খেলাফতের অধিকারের সপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন বা এজন্য বিদ্রোহের সুযোগ দেয় নি।

২। এতদ্সত্ত্বেও বিভিন্ন অবস্থা ও পরিপ্রেক্ষিতে তিনি,তাঁর সন্তানগণ ও তাঁর অনুরাগী মনীষীগণ নবী (সা.)-এর ওসিয়ত সম্পর্কিত ঐ আলোচনা ও সুস্পষ্ট হাদীসসমূহ উল্লেখ করতেন। বিশেষজ্ঞগণ এ বিষয়ে সম্পূর্ণরূপে অবগত।

ওয়াসসালাম

একশত তিনতম পত্র

১২ রবিউস সানী ১৩৩০ হিঃ

ইমাম ও তাঁর বন্ধু-অনুরাগীদের যুক্তিসমূহ বর্ণনার আহবান।

ইমাম (আলী) কোথায় এরূপ কথা বলেছেন? তাঁর বংশধর ও বন্ধুরাই বা কখন এ বিষয়ে যুক্তি প্রদর্শন করেছেন? তার কিছু উদাহরণ পেশ করুন।

ওয়াসসালাম

পঁচিশতম পত্র

১৬ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

১।   এ হাদীসের প্রতি তাঁর বিশ্বাস।

২।   এ বিষয়ে আরো আলোচনার আহবান।

১। সেই শক্তির প্রতি ঈমান আনছি যিনি আপনার জ্ঞানের আলোয় আমার অন্ধকারকে দূরীভূত করে আলোকিত করেছেন ও আমার অস্পষ্টতাকে দূর করেছেন। সেই আল্লাহর প্রশংসা যিনি আপনাকে তাঁর নিদর্শন ও চিহ্নে পরিণত করেছেন।

২। এ বিষয়ে আরো প্রামাণ্য হাদীস উপস্থাপন করুন।

ওয়াসসালাম

ছাব্বিশতম পত্র

১৭ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

১।   হযরত আলী (আ.)-এর শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়ে দশটি ফজীলত বর্ণিত হয়েছে যা অন্য কারো মধ্যে ছিল না।

২।   কেন আমরা এ হাদীস হতে দলিল পেশ করেছি?

১। হাদীসে দার (যে হাদীসটি বিংশতম পত্রে উল্লেখ করেছি) ছাড়াও আরেকটি হাদীস এখানে বর্ণনা করছি আপনার অবগতির জন্য।

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল তাঁর মুসনাদ গ্রন্থে,ইমাম নাসায়ী তাঁর খাছায়েসুল আলাভীয়া তে,হাকিম তাঁর মুসতাদরাক গ্রন্থের ৩য় খণ্ডে,যাহাবী তাঁর তালখিস গ্রন্থে (হাদীসটির বিশুদ্ধতাকে স্বীকার করে) ও সুনান লেখকগণ তাঁদের সুনানে আমর ইবনে মাইমুন হতে এ হাদীসটি এনেছেন এবং এর বিশুদ্ধতার বিষয়ে একমত হয়েছেন। আমর বলেন, ইবনে আব্বাসের নিকট বসেছিলাম,নয় দল লোক তাঁর নিকট এসে বলল : আমাদের সঙ্গে আসুন নতুবা আপনার নিকট হতে সবাইকে চলে যেতে বলুন। আপনার সঙ্গে আমাদের কথা আছে। ইবনে আব্বাস বললেন : তোমাদের সঙ্গে যাব। আমর ইবনে মাইমুন বলেন, ইবনে আব্বাস তখনও অন্ধ হন নি,তাঁর চোখ ভাল ছিল। ইবনে আব্বাস তাদের সঙ্গে একদিকে চলে গেলেন। তাঁরা কি কথা বললেন তা আমরা শুনি নি। কিছুক্ষণ পর ইবনে আব্বাস তাঁর পরিধেয় বস্ত্রটি ঝাড়তে ঝাড়তে ফিরে এলেন ও বলতে লাগলেন : এমন ব্যক্তির তারা নিন্দা করছে যার দশটি ফজীলত রয়েছে যা কোন ব্যক্তির মধ্যেই নেই। তারা এমন ব্যক্তির নিন্দা করছে যার সম্পর্কে স্বয়ং রাসূল (সা.) বলেছেন : এমন ব্যক্তিকে আমি আজ যুদ্ধে প্রেরণ করবো যাকে আল্লাহ্ কোনদিনই লাঞ্ছিত ও অপদস্থ করবেন না,আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল তাকে ভালবাসে আর সেও আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে। যখন রাসূল এ মর্যাদার কথা বলছিলেন তখন সকলেই ঘাড় টান করে অপেক্ষা করছিল এ সৌভাগ্য তার ভাগ্যে জুটুক। তখন রাসূল (সা.) বললেন : আলী কোথায়? আলী আসলেন,তাঁর তখন চক্ষু পীড়া ছিল,তিনি কিছু দেখতে পারছিলেন না। রাসূল নিজ জিহ্বার পানি তাঁর চোখে লাগিয়ে দিলেন এবং তিনবার যুদ্ধের পতাকাটি এদিক-ওদিক নাড়িয়ে আলীর হাতে দিলেন। আলী তা নিয়ে খায়বারে গেলেন ও যুদ্ধে জয়ী হয়ে ইহুদী গোত্রপতি হুয়াইয়ের কন্যা সাফিয়াসহ অন্যান্যদের বন্দী করে রাসূল (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হলেন।

ইবনে আব্বাস বলেন : নবী (সা.) অমুককে (হযরত আবু বকর) মক্কাবাসীদের জন্য সূরা তওবা পাঠ করে শুনানোর জন্য প্রেরণ করলেন এবং তারপর আলীকে তাঁর নিকট হতে তা গ্রহণ করতে বললেন ও ঘোষণা করলেন : এমন ব্যক্তি এ সূরা পাঠ করবে যে আমা হতে এবং আমি তার হতে।

ইবনে আব্বাস বলেন : নবী (সা.) তাঁর সকল চাচা ও চাচার পুত্রদের প্রতি আহবান জানালেন দুনিয়া আখেরাতে তাঁর সহযোগী হতে কিন্তু তারা তা করতে সম্মত না হলে আলী দাঁড়িয়ে বললেন: আমি দুনিয়া ও আখেরাতে আপনার সহযোগী হব। রাসূল (সা.) বললেন : তুমি দুনিয়া ও আখেরাতে আমার বন্ধু,আমার সহযোগী। অতঃপর পুনরায় তাদের প্রতি এ আহবান জানালেন। তবুও তারা কেউ সম্মত হলো না,শুধু আলী দাঁড়িয়ে সাড়া দিলেন। আর রাসূল বললেন : তুমি দুনিয়া ও আখেরাতে আমার সহযোগী ও বন্ধু।

ইবনে আব্বাস বলেন : আলী হযরত খাদিজাহর পর রাসূলের ওপর ঈমান আনয়নকারী প্রথম ব্যক্তি।

তিনি আরো বলেন : রাসূল (সা.) নিজ চাদরকে আলী,ফাতিমা,হাসান ও হুসাইনের ওপর বিছিয়ে দিলেন ও বললেন : হে আহলে বাইত! আল্লাহ্ ইচ্ছা করেছেন তোমাদের হতে সকল

পাপ-পঙ্কিলতা দূর করতে ও তোমাদের পবিত্র করতে।২৩৪

ইবনে আব্বাস বলেন : আলী নিজের জীবনকে বিপন্ন করে রাসূল (সা.)-এর ঘুমানোর স্থানে তাঁর পোষাক পড়ে শুয়েছিলেন,রাসূলের জন্য তাঁর জীবনকে আল্লাহর নিকট বিক্রয় করেছিলেন,তখন কাফেররা তাঁর প্রতি পাথর বর্ষণ করছিল।

তিনি বলেন : নবী তাবুকের যুদ্ধের জন্য যাত্রা করলেন,মদীনায় লোকেরাও তাঁর সঙ্গে মদীনা হতে বের হলো। আলী তাঁকে বললেন : আমিও আপনার সঙ্গে যাব। রাসূল (সা.) বললেন : না। আলী কেঁদে ফেললেন। নবী তাঁকে বললেন : তুমি কি এতে খুশী নও,তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্কে হারুন ও মূসার মধ্যকার সম্পর্কের মত হোক? তবে পার্থক্য এই,আমার পর কোন নবী নেই। এটি ঠিক হবে না যে,আমি চলে যাব অথচ তুমি আমার স্থলাভিষিক্ত হবে না।

নবী (সা.) তাঁকে (আলীকে) বলেছেন :أنت ولِيّ كلّ مؤمن بعدي و مؤمنة   অর্থাৎ তুমি আমার পর সকল মুমিন পুরুষ ও নারীর অভিভাবক।

ইবনে আব্বাস আরো বলেন : নবী মসজিদের মধ্যে অতিক্রমকারী সকল দ্বার বন্ধ করে দেন শুধু আলীর দ্বার ব্যতীত। আলী অপবিত্র (জুনুব) অবস্থায়ও মসজিদে প্রবেশ করতেন এবং ঐ দ্বার ব্যতীত বাইরে যাবার অন্য কোন পথও ছিল না। নবী (সা.) বলেছেন : আমি যার মাওলা (অভিভাবক) আলীও তার মাওলা।

উপরোক্ত ঘটনা বর্ণনা করে হাকিম বলেছেন, এ হাদীস সনদের দিক থেকে সঠিক,তদুপরি বুখারী ও মুসলিম তা বর্ণনা করেন নি। তদ্রুপ যাহাবীও তাঁর তালখিস গ্রন্থে হাদীসটিকে বিশুদ্ধ বলেছেন।

২। এ হাদীসের মধ্যে যে সুস্পষ্ট দলিল রয়েছে তা কারো নিকট গোপন নেই। এ হাদীস এটিই প্রমাণ করে যে,হযরত আলী (আ.) রাসূল (সা.)-এর পর তাঁর স্থলাভিষিক্ত।

আপনি কি এখানে লক্ষ্য করেছেন রাসূল (সা.) কিরূপে আলী (আ.)-কে দুনিয়া ও আখেরাতের মাওলা বা অভিভাবক হিসেবে অভিহিত করে তাঁকে তাঁর অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি তাঁদের সম্পর্ককে হারুন ও মূসার মত বলেছেন শুধু এ পার্থক্য ব্যতীত যে,তাঁর পর কেউ নবী নেই অর্থাৎ নবুওয়াতের মর্যাদা ব্যতীত রাসূল (সা.)-এর অন্য সকল মর্যাদা আলী (আ.)-এরও রয়েছে।

আপনি সম্যক জ্ঞাত,হযরত হারুন ও মূসা (আ.)-এর মধ্যে সম্পর্কের ধরন কিরূপ ছিল। হযরত হারুন (আ.) মূসা (আ.)-এর সঙ্গে নবুওয়াতের ক্ষেত্রে অংশীদার ছিলেন। তাছাড়া তিনি তাঁর সহযোগী,পরামর্শদাতা,খলীফা ও প্রতিনিধিও ছিলেন। তাই হযরত মূসা (আ.)-এর মত হযরত হারুনের অনুসরণ সকল উম্মতের জন্য অপরিহার্য বা ওয়াজিব ছিল। এজন্যই হযরত মূসা (আ.) দোয়া করেছিলেন, আমার আহল (পরিবার) হতে একজনকে আমার সহযোগী কর,আমার ভাই হারুনকে ও তার মাধ্যমে আমার কোমরকে মজবুত কর ও তাকে আমার কাজের অংশীদার কর। (সূরা ত্বাহা : ২৯)

হযরত মূসা (আ.) হারুনকে বললেন, আমার জাতির মধ্যে আমার স্থলাভিষিক্ত হও। তাদেরকে সংশোধন কর ও অন্যায়কারীদের পথ অবলম্বন কর না। ২৩৫ আল্লাহ্ হযরত মূসা (আ.)-কে বললেন, তুমি আমার নিকট যা চেয়েছিলে তা তোমাকে দেয়া হলো। ২৩৬

সুতরাং এ হাদীস অনুযায়ী আলী (আ.) এ জাতির মধ্যে রাসূল (সা.)-এর খলীফা,তাঁর পরিবারের মধ্যে তাঁর স্থলাভিষিক্ত ও তাঁর কাজে (খেলাফতের বিষয়ে,নবুওয়াতের বিষয়ে নয়) অংশীদার। তাই আলী (আ.) রাসূলের উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি এবং রাসূলের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে তাঁর আনুগত্য সর্বাবস্থায় হযরত হারুনের মত যাঁর আনুগত্য মূসা (আ.)-এর উম্মতের ওপর অপরিহার্য ছিল। বিষয়টি দিবালোকের মত স্পষ্ট।

যে কেউ এ হাদীসটি ( মানযিলাত -এর হাদীস) শ্রবণ করবে আলী সম্পর্কে এসব মর্যাদা তার স্মরণে আসবে এবং এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। নবীও তাই এ বিষয়টি সকলের জন্য সুস্পষ্ট করে বলেছেন, এটি ঠিক হবে না,তোমাকে আমার স্থলভিষিক্ত না করেই আমি চলে যাব।

এটি আলী (আ.)-এর খেলাফতের পক্ষে স্পষ্ট দলিল যে,আলীকে নিজের খলীফা মনোনীত না করে যাওয়াকে রাসূল (সা.) সঠিক মনে করেন নি। রাসূল (সা.) তাঁর এ কাজটি আল্লাহর নির্দেশেই করেছিলেন,যেমনটি নিম্নোক্ত আয়াতের তাফসীরে এসেছে-

) يا أَيُّهَا الرَّسُوْل بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّك وَ إِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ(

হে নবী! যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা পৌঁছে দিন। যদি আপনি তা না করেন তাহলে তাঁর রেসালতের কিছুই আপনি পৌঁছান নি।২৩৭

যদি কেউ এ আয়াতের আপনি তাঁর রেসালতের কিছুই পৌঁছান নি অংশটি লক্ষ্য করেন এবং এর সঙ্গে রাসূলের এ কথাটি নিশ্চয়ই এটি সঠিক হবে না,তোমাকে খলীফা নিযুক্ত না করেই চলে যাব মিলিয়ে দেখেন তাহলে দেখবেন দু টি বাণীই একটি লক্ষ্যকে অনুসরণ করছে।

আমাদের রাসূল (সা.)-এর এ বাণীটি কখনোই ভুলে গেলে চলবে না, তুমি আমার পর সকল মুমিনদের অভিভাবক। এটি অকাট্য দলিল হিসেবে হাদীসে এসেছে যে,আলী (আ.) রাসূল (সা.)-এর স্থলাভিষিক্ত। প্রসিদ্ধ কবি কুমাইত (আল্লাহ্ তাঁকে রক্ষা করুন) যেমনটি বলেছেন-

কত সুন্দর অভিভাবক তিনি সেই শ্রেষ্ঠ অভিভাবকের পর,যিনি তাকওয়ার কেন্দ্র ও আদবের শিক্ষকের পর মনোনীত হয়েছেন।

ওয়াসসালাম

সাতাশতম পত্র

১৮ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

 ‘ মানযিলাত -এর হাদীসের বিষয়ে সন্দেহ।

মানযিলাত -এর হাদীসটি সহীহ ও মুস্তাফিয (খবরে ওয়াহেদের চেয়ে বহুল প্রচারিত) কিন্তু বিশিষ্ট হাদীসবিদ আমেদী এ হাদীসের সনদের বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন। তাই আপনাদের অনেক শত্রুরই দ্বিধান্বিত হওয়া স্বাভাবিক। আপনি কিরূপে তাদের নিকট এটি প্রমাণ করবেন। উত্তর জানিয়ে বাধিত করুন।

ওয়াসসালাম

আটাশতম পত্র

১৯ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

১।   মানযিলাত -এর হাদীস প্রসিদ্ধ হাদীসসমূহের অন্যতম।

২।   এ সত্যের সপক্ষে প্রমাণ।

৩।   আহলে সুন্নাহর যে সকল রাবী এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।

৪।   এ হাদীসটির বিষয়ে আমেদীর সন্দেহ পোষণের কারণ।

১। আমেদী এ সন্দেহের মাধ্যমে নিজের ওপরই জুলুম করেছেন। কারণ মানযিলাত -এর হাদীসটি সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও প্রসিদ্ধ হাদীসসমূহের একটি।

২। এ হাদীসের সনদের বিশুদ্ধতার বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। হাদীসটি সম্পর্কে দ্বন্দ্বের কোন অবকাশ নেই এবং এর প্রামাণিকতার বিষয়ে কেউ প্রশ্ন উঠাতে পারেন না,এমন কি যাহাবী অত্যন্ত কঠোরতা সত্ত্বেও মুসতাদরাক গ্রন্থের সারসংক্ষেপে হাদীসটির সহীহ হবার কথা স্বীকার করেছেন।৩৩৮ ইবনে হাজার হাইসামী বিভিন্ন বিষয়ে আক্রমণাত্মক ভূমিকা সত্ত্বেও তাঁর সাওয়ায়েক গ্রন্থের দ্বাদশ পর্বে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন ও এর বিশুদ্ধতার বিষয়টি প্রসিদ্ধ হাদীস বিশারদদের (এ বিষয়ে যাঁদের প্রতি রুজু করা উচিত) সূত্রে বর্ণনা করেছেন।৩৩৯ আপনি এ গ্রন্থটি অধ্যয়ন করুন। যদি হাদীসটি এতটা প্রমাণ্য না হত তাহলে বুখারী তাঁর সহীহ গ্রন্থে তা উল্লেখ করতেন না। কারণ বুখারী হযরত আলীর বৈশিষ্ট্য,ফজীলত ও মর্যাদা বর্ণনায় যথেষ্ট সতর্ক ও পারতঃপক্ষে বিরত থাকতেন ও এ বিষয়ে তিনি নিজের ওপর জুলুম করেছেন। মুয়াবিয়া যিনি আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী ও সব সময় তাঁর প্রতি বিদ্বেষ ও শত্রুতা পোষণ করতেন,এমন কি মিম্বারে আলীর ওপর লানত পড়ার জন্য নির্দেশ জারী করেছিলেন তদুপরি তিনি মানযিলাত -এর হাদীসটি অস্বীকার করেন নি। মুসলিমের৩৪০ সূত্রে উদ্ধৃত হয়েছে : একবার মুয়াবিয়া সা দ ইবনে আবি ওয়াক্কাসকে বললেন : কি কারণে আবু তোরাবের (আলী [আ.]-এর) নিন্দা কর না? সা দ জবাবে বললেন : মহানবী (সা.) তাঁর বিষয়ে তিনটি কথা বলেছেন সেগুলো মনে হওয়ায় এ কাজ হতে আমি বিরত হলাম। ঐ তিনটি বৈশিষ্ট্যের যদি একটিও আমার থাকত তাহলে আরবের শ্রেষ্ঠ সম্পদ হতেও তা আমার নিকট প্রিয়তর বলে গণ্য হত। নবী (সা.) কোন কোন যুদ্ধের সময় তাঁকে মদীনায় রেখে যেতেন ও বলতেন : তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্ক মূসা ও হারুনের মত হোক তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও? শুধু পার্থক্য এটিই আমার পর তুমি নবী নও।২৪১ মুয়াবিয়া একথা শুনে চুপ হয়ে গেলেন ও সা দকে আলীর প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করা হতে বিরত থাকার অপরাধ ক্ষমা করে দিলেন।

আরো বাড়িয়ে বললে বলা যায় স্বয়ং মুয়াবিয়া মানযিলাত -এর হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইবনে হাজার তাঁর সাওয়ায়েক ২৪২ গ্রন্থে বলেছেন, আহমাদ বর্ণনা করেছেন : এক ব্যক্তি কোন একটি বিষয়ে মুয়াবিয়াকে প্রশ্ন করলে তিনি বললেন : আলী এ বিষয়ে অধিকতর জ্ঞাত,তাকে প্রশ্ন কর। লোকটি বলল : আলী অপেক্ষা তোমার উত্তর আমার নিকট অধিকতর প্রিয়। মুয়াবিয়া বললেন : মন্দ কথা বলেছ,এমন ব্যক্তি হতে তুমি বীতশ্রদ্ধ যাঁকে রাসূল (সা.) জ্ঞানের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল মুখ মনে করতেন ও তাঁকে বলেছেন :

أَنْتَ مِنِّيْ بِمَنْزِلَةِ هَارُوْنَ مِنِ مُوْسى إِلّا أَنَّهُ لا نَبِيَّ بَعْدِي

তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্ক মূসা ও হারুনের মত,শুধু এ পার্থক্য ব্যতীত যে,আমার পর কোন নবী নেই।

যখনই হযরত উমরের জন্য কোন সমস্যা দেখা দিত,তিনি আলী (আ.)-কে ডাকতেন।

সুতরাং মানযিলাত -এর হাদীসটি এমন একটি বিষয় যাতে মুসলমানদের সকল মাজহাব ও দল ঐকমত্য পোষণ করে,হাদীসটির বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।

৩। আল জাম বাইনাস্ সিহাহ আস সিত্তাহ্ ২৪৩ আল জাম বাইনাস্ সহীহাইন ২২৪ গ্রন্থের লেখকদ্বয়ও হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। সহীহ বুখারীতে তাবুকের যুদ্ধের২৪৫ বর্ণনায় হাদীসটি রয়েছে।

সহীহ মুসলিমে২৪৬ হযরত আলীর ফাজায়েল অধ্যায়ে হাদীসটি এসেছে। এছাড়া সুনানে ইবনে মাজাহ্তে২৪৭ নবী (সা.)-এর সাহাবীদের ফাজায়েল অধ্যায়ে ও মুসতাদরাকে হাকিম -এ হযরত আলীর মানাকিব ২৪৮ বা বৈশিষ্ট্যের আলোচনায় এ হাদীসটি আনা হয়েছে। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল তাঁর মুসনাদ গ্রন্থে সা দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস হতে কয়েকটি সূত্রে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন২৪৯

আহমাদ তাঁর মুসনাদে ইবনে আব্বাস২৫০ ,আসমা বিনতে উমাইস২৫১ ,আবু সাঈদ খুদরী২৫২ এবং মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান২৫৩ ও আরো কয়েকটি সূত্রে অন্যান্য সাহাবী হতেও হাদীসটি নকল করেছেন।

তাবরানী এ হাদীসটি আসমা বিনতে উমাইস,উম্মে সালামাহ্,হাবিশ ইবনে জুনাদাহ্,ইবনে উমর,ইবনে আব্বাস,জাবির ইবনে সামুরাহ্,যায়েদ ইবনে আরকাম,বাররাহ্ ইবনে আযেব এবং আলী ইবনে আবি তালিব ও অন্যান্যদের হতে বর্ণনা করেছেন।

বাযযার তাঁর মুসনাদে ও তিরমিযী তাঁর সহীহ গ্রন্থে আবু সাঈদ খুদরী হতে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ইবনে আবদুল বার তাঁর ইসতিয়াব গ্রন্থে হযরত আলী (আ.)-এর পরিচিতি পর্বে হাদীসটি বর্ণনা করে বলেছেন, হাদীসটি বিশুদ্ধতম ও সর্বাপেক্ষা প্রতিষ্ঠিত হাদীস যা সা দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রাসূল (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি আরো বলেন, সা দ হতে এত অধিক সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে যে,ইবনে আবি খাইসামাহ্ ও অন্যরাও তা বর্ণনা করেছেন। ইবনে আবদুল বারের মতে হাদীসটির অন্যান্য বর্ণনাকারীরা হলেন ইবনে আব্বাস,আবু সাঈদ খুদরী,উম্মে সালামাহ্,আসমা বিনতে উমাইস,জাবের ইবনে আবদুল্লাহ্ অনসারী ও আরো কয়েকজন সাহাবী।

যে সকল মুহাদ্দিস,সীরাহ্ লেখক ও হাদীস বর্ণনাকারী তাবুকের যুদ্ধের ঘটনা বর্ণনা করেছেন তাঁরা এ হাদীসটি তাঁদের বর্ণনায় এনেছেন।

পূর্ববর্তী ও পরবর্তীকালের সকল রিজাল লেখকই (শিয়া-সুন্নী নির্বিশেষে) হযরত আলী

(আ.)-এর পরিচিতি বর্ণনায় এ হাদীসটি এনেছেন।

আহলে বাইতের মানাকিব (বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা) বর্ণনাকারী ব্যক্তিরা যেমন আহমাদ ইবনে হাম্বল ও তাঁর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলেই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। সুতরাং এটি এমন এক হাদীস যা সকল যুগেই প্রতিষ্ঠিত হাদীসগুলোর একটি বলে পরিগণিত হত।

৪। অতএব,আমেদীর সন্দেহ (হাদীসটির বিষয়ে) এ ক্ষেত্রে কোন মূল্যই রাখে না,বরং বলা যায় তিনি কোন হাদীসবেত্তা নন ও এ বিষয়ে তাঁর কোন জ্ঞান নেই। উসূলশাস্ত্রের জ্ঞান দিয়ে হাদীসের সনদ ও সূত্র পর্যালোচনা সম্ভব নয়। তাই সুস্পষ্ট ও প্রতিষ্ঠিত হাদীসের সনদে সন্দেহ সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাঁর সে প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।

ওয়াসসালাম

উনত্রিশতম পত্র

২০ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

১।   হাদীসটির সনদের বিশুদ্ধতার সত্যায়ন।

২।   হাদীসটির সার্বিকতার বিষয়ে সন্দেহ।

৩।   হাদীসের প্রামাণিকতার (প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপনের উপযোগিতার) বিষয়ে আপত্তি উত্থাপন।

১। হাদীসটি ( মানযিলাত -এর হাদীস) যে সুপ্রতিষ্ঠিত সে বিষয়ে আপনার বর্ণনায় আমার সন্দেহ নেই। এক্ষেত্রে আমেদী যে ভুল করেছেন এর কারণ হাদীসশাস্ত্রে তাঁর জ্ঞানের অভাব। আমি তাঁর বিশ্বাস ও মত উপস্থাপন করে আপনাকে কষ্টে ফেলেছি তাতে আপনি বাধ্য হয়েছেন এ বিষয়ে  প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা দিতে। এ ভুলের জন্য আমি আপনার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী। আশা করি বিষয়টিকে ক্ষমার চোখে দেখবেন।

২। আপনাদের বিরোধীদের মধ্যে আমেদী ছাড়াও অনেকেই মনে করেছেন মানযিলাত -এর হাদীসটি সর্বজনীন নয়,বরং তা বিশেষভাবে তাবুকের যুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং সে সময়ের জন্যই তিনি রাসূলের স্থলাভিষিক্ত ছিলেন। এর প্রমাণ হিসেবে তাঁরা এ হাদীসের প্রেক্ষাপট যেখানে রাসূল (সা.) আলীকে মদীনায় তাঁর স্থানে রেখে যাচ্ছেন তার উল্লেখ করেন। ইমাম আলী (আ.) যখন রাসূল (সা.)-কে বললেন, আমাকে কি মহিলা ও শিশুদের মাঝে রেখে যাচ্ছেন? তখন নবী (সা.) তাঁকে বললেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে মূসার স্থলাভিষিক্ত হারুনের মত তুমি আমার স্থলাভিষিক্ত হও এ পার্থক্য সহ যে আমার পর কোন নবী নেই? বাহ্যিকভাবে রাসূলের উদ্দেশ্য ছিল এটিই বলা,রাসূলের সাথে আলীর সম্পর্ক মূসা (আ.)-এর সঙ্গে হারুন (আ.)-এর সম্পর্কের ন্যায়। কারণ হযরত মূসা (আ.) তুর পর্বতে যাবার সময় নিজের জাতির মধ্যে হারুন (আ.)-কে স্থলাভিষিক্ত হিসেবে রেখে যান।

সুতরাং এ থেকে বোঝা যায় রাসূল (সা.) বলতে চেয়েছেন তাবুকের যুদ্ধের সময় তাঁর অনুপস্থিতিতে আলী তাঁর স্থলাভিষিক্ত যেমনভাবে মূসা ইবাদতের জন্য তুর পর্বতে যাবায় সময় হারুনকে স্থলাভিষিক্ত করে যান।

৩। তাছাড়া হাদীসটি এক্ষেত্রে প্রমাণ্য না হবারও সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ যদিও হাদীসটি সর্বজনীন তবুও নবুওয়াতের বিষয়টি বাদ যাওয়ায় বাক্যটির বাকী অংশ সর্বজনীনতা হারিয়েছে। তাই হাদীসটি এক্ষেত্রে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপনের যোগ্যতা  রাখে না।

ওয়াসসালাম

 


18

19

20

21

22

23

24

25

26

27

28

29

30

31

32

33

34

35

36

37

38

39

40

41

42

43

44

45

46

47

48

49