একশত চারতম পত্র
১৫ রবিউস সানী ১৩৩০ হিঃ
১। ইমাম আলী (আ.) যে সকল ক্ষেত্রে এ সম্পর্কিত দলিল উপস্থাপন করেছেন।
২। হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.)-ও এ সম্পর্কিত দলিল উপস্থাপন করেছেন।
১। ইমাম আলী (আ.) এ সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশের দিকে সূক্ষ্ম দৃষ্টি রাখতেন। যাতে ইসলামের কোন ক্ষতি না হয় এজন্য সতর্কতামূলকভাবে কখনোই তাঁর শত্রুদের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করতেন না। মুসলমানদের সম্মান ও মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রেখে তিনি কখনো তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেন না। কখনো তিনি তাঁর অধিকার দাবী না করে বা এ বিষয়ে কিছু উল্লেখ না করে বলতেন‘
কোন ব্যক্তি তার অধিকার আদায়ের বিষয়ে বিলম্ব করলে সেটি তার ত্রুটি বলে গণ্য নয়,বরং ত্রুটি ঐ ব্যক্তির যে বিষয়ে তার অধিকার নেই তা যদি সে হস্তগত করে।’
তাঁর অধিকার সম্পর্কিত হাদীস উল্লেখের ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ পন্থা অবলম্বন করতেন যাতে তাঁর প্রজ্ঞার প্রতিফলন ঘটত। যেমন লক্ষ্য করেছেন তিনি রাহবার দিনে (তাঁর খেলাফতের সময়কালে) কিরূপে লোকদের সমবেত করে গাদীর দিবসকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বললেন,“
তোমাদের আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি,যে কোন মুসলমান গাদীরের সেই দিনে রাসূল কি বলেছিলেন তা শুনে থাকলে দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দাও। যারা নবীকে ঐ দিন সে অবস্থায় দেখেছে তারা ব্যতীত অন্যদের দাঁড়ানোর প্রয়োজন নেই।”
ত্রিশ জন সাহাবী যাঁদের বারজন বদরী সাহাবী ছিলেন উঠে দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দিলেন গাদীর দিবসে নবী (সা.) হতে হাদীসটি শুনেছেন।
হযরত উসমানের হত্যা এবং বসরা ও সিরিয়ায় উদ্ভূত ফিতনার জটিল পরিস্থিতিতে তিনি এ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। আমার আত্মার শপথ,সেরূপ মুহূর্তে এ ধরনের দলিল উপস্থাপন খুব কমই লক্ষ্য করা যায় যদিও তা প্রজ্ঞাপূর্ণ। হযরত আলী (আ.)-এর মহান মর্যাদার প্রতি সালাম তাঁর এ কর্মের জন্য। যে মুহূর্তে গাদীরের হাদীস সকলের স্মরণ হতে মুছে যাবার উপক্রম হয়েছিল সে মুহূর্তে রাহবার ঐ বৃহৎ সমাবেশে তিনি তা উজ্জ্বল ও জীবিত করে তোলেন।
সেদিন গাদীর দিবসের দৃশ্য সকলের নিকট তিনি প্রতিমূর্ত করে তোলেন। রাসূল (সা.) হযরত আলী (আ.)-এর হাত উঁচিয়ে ধরে রয়েছেন,এক লক্ষ বা ততোধিক সাহাবী তাঁদের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন এবং নবী (সা.) ঘোষণা করছেন,“
আলী আমার পর তোমাদের মাওলা (অভিভাবক)।”
এ কারণেই গাদীরের হাদীস মুতাওয়াতির হাদীসসমূহের সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ। নবী (সা.)-এর প্রজ্ঞাকে লক্ষ্য করুন কোন্ প্রেক্ষাপটে তিনি এ ঘোষণা দিয়েছেন। তাঁর মনোনীত প্রতিনিধির প্রজ্ঞাও লক্ষ্য করুন কিরূপে তিনি রাহবায় সকলকে সমবেত করে এভাবে কসম দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণের মাধ্যমে গাদীরকে জীবন্ত করে তুলেছেন। এভাবে ইমাম আলী (আ.) সময়ের চাহিদানুযায়ী অত্যন্ত নমনীয়তার সঙ্গে তাঁর অধিকারের বিষয়টি তুলে ধরেছেন। পূর্ণ সতর্কতা ও শান্তি বজায় রেখে তিনি সকল সময় এ বিষয়টিকে উপস্থাপন করতেন এবং এভাবেই খেলাফত সম্পর্কিত রাসূলের হাদীসসমূহকে প্রচারের দায়িত্ব পালন করতেন ও কোন উচ্চবাচ্য ছাড়াই এ সম্পর্কে অসচেতন মানুষদের সচেতন করতেন। ফলে তা কখনোই বিদ্বেষ ও বিশৃঙ্খলার জন্ম দিত না।
এ সম্পর্কিত যে সকল হাদীস সুনান লেখকগণ উল্লেখ করেছেন তা আপনার অবগতির জন্য যথেষ্ট বলে মনে করছি। লক্ষ্য করুন যেদিন নবী (সা.) মহান আল্লাহর নির্দেশে তাঁর নিকটাত্মীয়দের ভীতি প্রর্দশনের জন্য তাঁর চাচা ও মক্কার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি আবু তালিবের গৃহে তাদের সমবেত করেছিলেন সেদিন যে দীর্ঘ হাদীস তিনি বর্ণনা করেন তার গুরুত্ব কতটা?
উম্মতের নিকট এ ঘটনা ইসলাম ও নবুওয়াতের নিদর্শন হিসেবে পরিগণিত। কারণ সেদিন নবী (সা.) মু’
জিযার মাধ্যমে সামান্য খাদ্যের দ্বারা বড় সংখ্যার একদল মানুষকে পরিতুষ্ট করেছিলেন। এ হাদীসটির শেষে বর্ণিত হয়েছে নবী (সা.) সেখানে আলীর কাঁধে হাত রেখে বলেন,“
এ বালক (আলী) তোমাদের মাঝে আমার ভ্রাতা,স্থলাভিষিক্ত ও নির্বাহী প্রতিনিধি। তোমরা তার কথা শ্রবণ ও তার আনুগত্য করবে।”
হযরত আলী (আ.) প্রায়ই বলতেন,“
রাসূল (সা.) আমার সম্পর্কে বলেছেন :
أنْتَ وَليّ كلّ مُؤمِن بعْدي
তুমি আমার পর সকল মুমিনের অভিভাবক।”
রাসূলের এ হাদীসটিও তিনি প্রায়ই উল্লেখ করতেন,أنْتَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هارونَ منْ موسى
তুমি আমার নিকট সে অবস্থানে রয়েছ যে অবস্থান মূসার নিকট হারুনের ছিল। এমন কি গাদীরে খুমের এ হাদীসটিও ইমাম আলী (আ.) অনেকবার উল্লেখ করেছেন,“
নবী (সা.) বলেছেন :
ألسْتُ أولى بالمؤمنين من أنْفُسهم؟ قالوا بَلى! قالَ : من كنتُ وليّه فهذا عليّ وَلِيّه
আমি কি মুমিনদের নিজেদের অপেক্ষা তাদের ওপর অধিক অধিকার রাখি না? তারা বলল : হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন : আমি যার অভিভাবক আলীও তার অভিভাবক।”
প্রতিষ্ঠিত ও অনস্বীকার্য এরূপ অনেক হাদীসই তিনি বিশ্বস্ত ও সম্মানিত ব্যক্তিদের মাঝে বর্ণনা ও প্রচার করেছেন। যে সময়ের প্রেক্ষাপটে যে বিষয়গুলো উপস্থাপনের সুযোগ ছিল তা তিনি উপস্থাপন করেছেন। যদিও তা তাদের ওপর কোন প্রভাব ফেলে নি তদুপরি তিনি যতটুকু প্রয়োজন ছিল ততটুকু বলেছেন,যেমন শুরা বা পরামর্শ পরিষদের (উমর ইবনে খাত্তাবের মৃত্যু পরবর্তীতে) কর্মকাণ্ডের দিন তিনি এর সদস্যদের খলীফা মনোয়ননের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে নিজ মর্যাদা ও অবস্থানের সপক্ষে পর্যাপ্ত দলিল-প্রমাণ উপস্থাপন করেন।
তাঁর খেলাফতের সময়েও নিজ অধিকার ও বঞ্চনার বিষয়ে মিম্বারে বলেছেন,“
আল্লাহর শপথ,অমুক খেলাফতের পোষাক পরিধান করেছে অথচ সে ভালভাবেই জানত আমার সাথে খেলাফতের সম্পর্ক ঘানির (যাতা) কেন্দ্রীয় দণ্ডের ন্যায়,জ্ঞান আমার অস্তিত্ব থেকেই উৎসারিত হয় এবং আমার মর্যাদার শীর্ষ চূড়ায় পৌঁছার চিন্তা কোন বিহঙ্গও করতে পারে না। তাই আমি সাধারণ পোষাক পরিধান করে নিজেকে সঙ্কুচিত করে নিলাম। ভাবছিলাম নিজ অধিকার আদায়ের জন্য একক সংগ্রামে লিপ্ত হব নাকি এ বঞ্চনা আমার হৃদয়ে যে অন্ধকারের ছায়া ফেলেছে তাতে ধৈর্য ধারণ করবো? এটি এমন অবস্থার সৃষ্টি করেছিল তা চিন্তা করতে বৃদ্ধরা অথর্ব এবং শিশুরা বৃদ্ধে পরিণত হয়ে যেত এবং মুমিনরা এতটা কষ্ট পেত যে,তাদের জীবনাবসান ঘটত এবং মৃত্যুর মাধমে স্রষ্টার নৈকট্যকেই শ্রেয় মনে করত। দেখলাম ধৈর্য ধারণই বুদ্ধিবৃত্তিক। ধৈর্য ধারণ করলাম এমন অবস্থায় যে,আমার চোখে কণ্টক এবং গলায় হাড় বিদ্ধ হয়েছিল। আমার উত্তরাধিকার এভাবে হৃত হলো।”
খুতবা-ই শিকশিকিয়ার শেষ পর্যন্ত এ বিষয়টি তিনি বর্ণনা করেছেন।
কতবার তিনি বলেছেন,“
হে আল্লাহ্! আমি কুরাইশ ও তাদের সহযোগীদের বিপক্ষে আপনার সাহায্য চাই।
তারা আমার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। আমার মর্যাদা ও সম্মানকে ক্ষুদ্র করে ফেলেছে। খেলাফতের বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।”
অতঃপর তিনি বলেছেন,“
কোন কোন অধিকার রয়েছে যা আদায় করতে হয়।”
তখন এক ব্যক্তি উঠে বলল,“
হে আবু তালিবের পুত্র! তুমি খেলাফতের প্রতি লোভী।”
তিনি বললেন,“
আল্লাহর শপথ,তোমরা আমার চেয়ে এর প্রতি অধিকতর লোভী কারণ আমি ঐ অধিকার দাবী করছি যা আমার আর তোমরা তা দখলের নিমিত্তে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছ।”
আবার বলেছেন,“
আল্লাহর শপথ,রাসূলের ওফাতের পর হতে এখন পর্যন্ত আমি আমার অধিকার হতে বঞ্চিত এবং আমার প্রতি সকল সময় স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ করা হয়েছে।”
অন্যত্র বলেছেন,“
আমাদের যে অধিকার রয়েছে তা যদি দেয়া হয় তা উত্তম আর যদি না দেয়া হয় তবে ধৈর্য ধারণ করবো যদিও তা দীর্ঘ হয়।”
নিজ ভ্রাতা আকীলের প্রতি লিখিত পত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন,“
মহান আল্লাহ্ আমার প্রতি অসদাচরণের কারণে কুরাইশদের শাস্তি দিন,তারা আমার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করেছে,তোমার মাতার সন্তানকে ক্ষমতা ও শাসনকার্য (হুকুমত) থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।”
অনেক বার বলেছেন,“
লক্ষ্য করলাম আমার আহলে বাইত ব্যতীত কোন সহযোগী নেই। তাই তাদের মৃত্যুমুখে নিক্ষেপ হতে বিরত হলাম,কাঁটা বিদ্ধ চোখ বন্ধ করলাম,হাড় বিদ্ধ গলায় পানীয় পান করলাম,ক্রোধ দমনের জন্য চরম তিক্ততার সাথে ধৈর্য ধারণ করলাম।”
যখন তাঁর কিছু সাহাবী তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন,“
কিরূপে আপনার আত্মীয়-স্বজন সর্বোত্তম ও যোগ্যতম হওয়া সত্ত্বেও আপনার হতে এ পদ কেড়ে নিল?”
তিনি বললেন,“
হে আসাদের ভ্রাতা! তুমি একজন দ্বিধাগ্রস্ত ব্যক্তি। যদিও সঠিক সময় ও স্থানে তুমি প্রশ্ন কর নি তদুপরি তোমার সাথে আমার আত্মীয়তার কারণে এ বিষয়ে তোমার জানার অধিকার রয়েছে। জানতে চেয়েছ আমাদের মর্যাদা সর্বাধিক ও রাসূল (সা.)-এর নৈকট্যের ক্ষেত্রে আমরা সবচেয়ে নিকটের হওয়া সত্ত্বেও কেন আমাদের সাথে স্বৈরাচারী আচরণ করা হয়েছে। এর কারণ হলো আমাদের সম্মান ও মর্যাদা তাদের অনেককে ঈর্ষান্বিত ও এর প্রতি লোভাতুর করে। আবার অনেকে কল্যাণের চিন্তা করে মহত্ত্বের সাথে এ হতে বিরত হলেন। এখন আল্লাহ্ বিচারক এবং কিয়ামতে সকলের প্রত্যাবর্তন তাঁর দিকে।”
অন্যত্র তিনি বলেছেন,“
আমাদের ভিন্ন তারা কোথায় যারা নিজেদের প্রকৃত জ্ঞানের অধিকারী করেছিল? এ এক মিথ্যা দাবী যা আমাদের বিপক্ষে করা হয়েছে এবং আমাদের প্রতি অন্যায় ও অবিচার করা হয়েছে। তারা এসে লক্ষ্য করুক আল্লাহ্ আমাদের সমুন্নত এবং তাদের অসম্মানিত করেছেন। আল্লাহ্ আমাদের দিয়েছেন,তাদের বঞ্চিত করেছেন,তিনি আমাদের নিজ অনুগ্রহ ও নিয়ামতে প্রবেশ করিয়েছেন,তাদেরকে বহিষ্কার করেছেন। আমাদের মাধ্যমেই মানুষ হেদায়েতপ্রাপ্ত ও দৃষ্টিবান হয়। ইমাম ও নেতা কুরাইশদের মধ্যে বনি হাশেমের জন্য নির্দিষ্ট করা হযেছে,অন্যদের মাঝে নেতৃত্বের এরূপ যোগ্যতা নেই। তাই তাদের হতে (ইসলামী রাষ্ট্রের) নেতা হতে পারে না।”
তাঁর কোন কোন খুতবায় এরূপ এসেছে- যখন রাসূল (সা.)-এর রুহ আল্লাহর উদ্দেশ্যে যাত্রা করল তখন অনেকেই ইসলামপূর্ব যুগে ফিরে গেল। প্রবৃত্তি তাদের পথভ্রষ্ট করল। তারা প্রতারণার আশ্রয় নিল ও অনাত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করল। তাদের যে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করতে বলা হয়েছিল তা রক্ষা করল না,বরং খেলাফতের প্রাসাদকে তার প্রকৃত স্থান থেকে স্থানান্তর এবং পথভ্রষ্টতা ও ত্রুটিপূর্ণ স্থানে স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিল। তারা ঐ সকল ব্যক্তি যারা হিংসায় নিমজ্জিত ছিল,যারা প্রবৃত্তির নেশায় মত্ত হয়ে পড়েছিল। তারা ফিরআউনের বংশধরের পথ অবলম্বন করেছিল,প্রকাশ্যে দীন ত্যাগ করে দুনিয়ার সাথে সংযুক্ত হয়েছিল।
নিজ খেলাফতের বাইয়াত গ্রহণের পর তিনি যে খুতবা পাঠ করেন যা নাহজুল বালাগাহর একটি উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয় ব্যক্তব্যের অন্তর্ভুক্ত,তাতে তিনি বলেন,‘‘
এই উম্মতের কোন ব্যক্তিকেই রাসূলের আহলে বাইতের সাথে তুলনা করা সম্ভব নয়,মুহাম্মদ (সা.)-এর বংশধরগণ যে নিয়ামতের অন্তর্ভুক্ত তারা তার অন্তর্ভুক্ত নয়,তারা এক সারিভুক্ত হতে পারে না। নবীর আহলে বাইত দীনের ভিত্তি ও ইয়াকীনের স্তম্ভ,সীমা লঙ্ঘনকারীরা তাদের দিকে প্রত্যাবর্তন করবে,পশ্চাদপদরা তাদের দিকে সংযুক্ত হবে,তাদের মাঝেই নবীর উত্তরাধিকারী,নির্বাহী প্রতিনিধিত্ব ও বেলায়েতের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। এখন খেলাফত তার প্রকৃত অধিকারীর নিকট ফিরে এসেছে,স্থানচ্যুত হবার পর তার সঠিক স্থানে প্রত্যাবর্তন করেছে।”
অন্য এক খুতবায় তিনি তাঁর বিরোধীদের কথায় অবাক হয়ে বলেছেন,“
আমি আশ্চর্যান্বিত হই এবং কেনই বা আর্শ্চয হব না কারণ এ সকল ব্যক্তি তাদের দীনের যুক্তি ও নিদর্শনের ক্ষেত্রে ভুলে আপতিত হয়ে না নবীর অনুসরণ করছে,না নবীর স্থলাভিষিক্ত মনোনীত প্রতিনিধির।”
২। এ বিষয়ে হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.)-ও কয়েকটি সুস্পষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। তাঁর উদ্ধৃত দু’
টি প্রসিদ্ধ খুতবা মুখে মুখে বংশ পরম্পরায় সকলের নিকট পৌঁছেছে যা মুখস্থ করার জন্য আহলে বাইতের ইমামগণ তাঁদের সন্তানদের উদ্বুদ্ধ করতেন। এ বিষয়ে কোরআন হিফয (মুখস্থ) করার মত এ দুই খুতবা হিফজ করাও তাঁদের জন্য আবশ্যকীয় মনে করতেন।
যে সকল ব্যক্তি খেলাফতকে প্রকৃত স্থান হতে চ্যুত করে নিজেরা তা দখল করেছিল হযরত ফাতিমা (আ.) তাদের কর্মের প্রতিবাদ করে বলেন,“
দুর্ভাগ্য তাদের যারা খেলাফতকে রেসালতের দৃঢ় পর্বত ও এর চূড়া হতে স্থানচ্যুত করেছে,নবুওয়াতের স্তম্ভ ও ফেরেশতাদের অবতীর্ণ হবার স্থান থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। ঐ ব্যক্তি হতে খেলাফতকে দূরে সরিয়েছে যে দীন ও দুনিয়ার বিষয়ে সবচেয়ে জ্ঞানী। তাদের এ কর্মের ফল প্রকাশ্য ক্ষতি ব্যতীত কিছুই হতে পারে না। আবুল হাসানের মধ্যে কোন ত্রুটি কি তারা দেখেছিল? কেন তাঁর প্রতি তারা অসন্তষ্ট? আল্লাহর শপথ,তারা যুদ্ধে আবুল হাসানের তরবারীর ক্ষুরধারতা,আল্লাহর নির্দেশের ক্ষেত্রে তাঁর দৃঢ়তা ও ক্রোধ সম্পর্কে জানত। আল্লাহর শপথ,তারা যদি রাসূলের নির্দেশ মত খেলাফত পরিচালনার দায়িত্ব তাঁর হাতে অর্পণ করে তাঁর আনুগত্য করত তাহলে তিনি দৃঢ়তার সাথে তা ধারণ করে তাদের জন্য শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ জীবনের ব্যবস্থা করতেন যেখানে কোন অসন্তষ্টিই থাকত না। কোন ব্যক্তিই কষ্টে পতিত হত না। তিনি তাদের এমন গন্তেব্যে পৌঁছে দিতেন যেখান হতে জীবন-সঞ্চারী সুপেয় ধারা প্রবাহিত হয়,স্বচ্ছ ও পরিষ্কার পানি যার নদীসমূহের তীর উপচে পড়ে। যে পানিতে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই যা তার প্রবাহকে বন্ধ করতে পারে। তিনি অবিরত প্রবাহমান এ পানি হতে তাদের তৃষ্ণা নিবারণ করাতেন যা কখনোই শেষ হবার নয়। তিনি গোপন ও প্রকাশ্যে তাদের উপদেশ দিতেন। তিনি আসমান ও যমীনের বরকতের দ্বার তাদের জন্য উন্মুক্ত করতেন। ক্ষুধার প্রাচীর তিনি বিলুপ্ত করতেন। এসব ব্যতীত তিনি কিছুই চাইতেন না। তাই তাঁর বিষয়ে যারা এরূপ করেছে অতি শীঘ্রই আল্লাহ্ তাদের শাস্তি দেবেন। শ্রবণ কর তোমাদের জন্য কঠিন দিন অপেক্ষা করছে। যে অবস্থায় রয়েছ তা হতে বিস্ময়কর অবস্থা তোমাদের সামনে রয়েছে। কিরূপ নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থলই না তোমরা তোমাদের জন্য নির্ধারণ করেছ! কিরূপ দুর্বল হাতলই না তোমরা ধারণ করেছ! কত মন্দ নেতা ও অভিভাবক তোমরা তোমাদের জন্য নির্ধারণ করেছ! অত্যাচারীরা কি মন্দ ব্যবাসায়ই না করেছে! মূল শাখা ত্যাগ করে তারা পাতা ও অগ্রভাগ ধারণ করেছে,পাখা ত্যাগ করে পুচ্ছ ধরেছে,ঘোড়ার কেশর ত্যাগ করে লেজের চুল ধারণ করেছে। এ গোত্রসমূহের নাসিকা কর্তিত ও ভূলুণ্ঠিত হোক। তারা ভেবেছে উত্তম কাজ করেছে অথচ প্রকৃতপক্ষে তারা অন্যায়কারী ও তাদের চিন্তাশক্তি অক্ষম। ধ্বংস তাদের জন্য। যে ব্যক্তি অন্যদের সত্যের পথে হেদায়েত করে সে অধিকতর অনুসরণযোগ্য নাকি ঐ ব্যক্তি যে হেদায়তের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী? তোমাদের কি হয়েছে? কিরূপ মন্দ তোমাদের ফয়সালা!
এগুলো নমুনা হিসেবে উপস্থাপন করলাম। পবিত্র আহলে বাইতের বক্তব্যগুলোকে এর সাথে মিলিয়ে তুলনা করুন।
ওয়াসসালাম
শ