আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত6%

আল মুরাজায়াত লেখক:
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ: ইতিহাস

আল মুরাজায়াত
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 133 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 69481 / ডাউনলোড: 9381
সাইজ সাইজ সাইজ
আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত

লেখক:
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বাংলা

অষ্টম পত্র

১৫ জিলক্বদ ১৩২৯ হিঃ

১।   যে বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছি তা লক্ষ্য করা হয় নি।

২।   কেউ নিজের পরিচয় দান করলে তা চক্রের সৃষ্টি করে এ ধারণা ভুল।

৩।  হাদীসে সাকালাইন।

৪।   হাদীসে সাকালাইন মুতাওয়াতির হবার পক্ষে দলিল।

৫।   যে ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর আহলে বাইতের (عترت ) সঙ্গে সংযুক্ত না হবে সে বিপথগামী হবে।

৬।   আহলে বাইত নূহ (আ.)-এর তরণীস্বরূপ;ক্ষমার দ্বার এবং দীনী বিভেদ হতে মুক্তির উপায়।

৭।  আহলে বাইত বলতে এখানে কাদের বোঝানো হয়েছে?

৮।  কেন তাঁদেরকে নূহ (আ.)-এর তরণী ও ক্ষমার দ্বারের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

১। আমরা মহানবী (সা.)-এর বাণীর মাধ্যমেই শুধু যুক্তি প্রদর্শন করার ক্ষেত্রে অবহেলা প্রদর্শন করি নি,বরং আমাদের পত্রের শুরুতে এরূপ একটি হাদীসের প্রতি ইশারা করেছি যা পরিষ্কাররূপে আহলে বাইতের ইমামগণের অনুসরণকে ফরয ঘোষণা করেছে,অন্যদের নয়।

কেননা বলেছি রাসূল (সা.) তাঁদেরকে কোরআনের সমকক্ষ,জ্ঞানবানদের নেতা,মুক্তির তরণী,উম্মতের রক্ষাকেন্দ্র ও ক্ষমার দ্বার বলে ঘোষণা করেছেন। এগুলো রাসূল হতে বর্ণিত সহীহ ও স্পষ্ট হাদীসসমূহের সারসংক্ষেপ। বলেছিলাম,আপনি তাঁদের অন্তর্ভুক্ত ইশারা ও ইঙ্গিতই যাঁদের বোঝার জন্য যথেষ্ট (কোন ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই)।

২। সুতরাং আমরা যা বলেছি,এ হাদীসের ভিত্তিতে তাঁদের কথা আহলে বাইতের বিরোধীদের ওপর প্রমাণ হিসেবে অগ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণে তাঁদের উপস্থাপিত বাণী চক্র বলে গণ্য হবে না।

৩। এখন রাসূলের বাণীতে যে বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছিল তার প্রতি লক্ষ্য করুন। তিনি অজ্ঞ ও অসচেতন ব্যক্তিবর্গকে উচ্চৈঃস্বরে আহবান করে বলেছেন,

يَا أيّهَا النّاسُ إنّي تَرَكتُ فِيكُم مَا إِن أَخَذتُم بِهِ لَن تَضِلّوا , كِتَابَ الله وَ عِترَتِي أهلَ بَيتِي

হে লোকসকল! আমি তোমাদের মাঝে এমন বস্তু রেখে যাচ্ছি যদি তা ধারণ কর তবে কখনোই বিপথগামী হবে না। আর তা হলো আল্লাহর কিতাব এবং আমার রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় (আহলে বাইত)। ১৬

তিনি আরও বলেছেন,

إنّي ترَكتُ فِيكُم مَا إِنْ تَمَسّكتُم بِهِ لَن تَضِلّوا بَعدِي كِتَابَ اللهِ حَبلٌ مَمدُوْدٌ منَ السّمَاءِ إِلَى الأرضِ وَ عِترَتِي أَهلَ بَيتِي وَ لَن يَفتَرِقَا حَتّى يَرِدَا عَلَيّ الحَوضَ فَانظُرُوا كَيفَ تُخَلِّفُونِي فِيهِمَا

নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মধ্যে দু টি জিনিস আমানত রেখে যাচ্ছি,যদি এ দু টিকে আঁকড়ে ধর তাহলে কখনোই গোমরাহ হবে না। তার একটি হলো আল্লাহর কিতাব কোরআন যা আসমান হতে যমীন পর্যন্ত প্রসারিত রজ্জু ও অন্যটি আমার আহলে বাইত। এ দু টি কখনোই পরস্পর হতে বিচ্ছিন্ন হবে না এবং এ অবস্থায়ই হাউজে কউসারে আমার সাথে মিলিত হবে। তাই লক্ষ্য রেখো তাদের সাথে তোমরা কিরূপ আচরণ করবে। ১৭

অন্য এক স্থানে রাসূল (সা.) বলেছেন,

আমি তোমাদের মাঝে দু টি খলীফা বা প্রতিনিধি রেখে যাচ্ছি। আল্লাহর কিতাব যা আসমান হতে যমীন পর্যন্ত প্রসারিত এবং আমার নিকটাত্মীয় ও পরিবার। তারা হাউজে কাওসারে আমার সাথে মিলিত হওয়া পর্যন্ত একে অপর হতে বিচ্ছিন্ন হবে না। ১৮

তিনি আরও বলেছেন,

তোমাদের মাঝে দু টি ভারী বস্তু (মূল্যবান বস্তু) রেখে যাচ্ছি। আল্লাহর কিতাব ও আমার আহলে বাইত। তারা হাউজে কাওসারে আমার সঙ্গে মিলিত হওয়া পর্যন্ত পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না। ১৯ (*৯)

রাসূল (সা.) অন্যত্র বলেছেন,

খুব শীঘ্রই আল্লাহ্পাকের পক্ষ থেকে আমাকে আহবান করা হবে এবং আমি তা গ্রহণ করবো। আমি তোমাদের মাঝে দু টি ভারী বস্তু রেখে যাচ্ছি : আল্লাহর কিতাব ও আমার আহলে বাইত। আল্লাহর কিতাব রজ্জুর মত আসমান হতে যমীন পর্যন্ত প্রসারিত। তিনি আরো বলেছেন, আমার ইতরাত অর্থাৎ নিকটাত্মীয় রক্তজ বংশধরগণই আমার আহলে বাইত। সর্বজ্ঞাত ও সূক্ষ্মদর্শী আল্লাহ্ আমাকে জানিয়েছেন,এরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না ও এ অবস্থায়ই আমার সাথে হাউজে কাওসারে মিলিত হবে। আমি লক্ষ্য করব আমার পর তাদের সাথে তোমরা কিরূপ আচরণ কর। ২০

যখন রাসূল বিদায় হজ্ব হতে প্রত্যাবর্তন করছিলেন তখন গাদীরে খুম নামক স্থানে অবতরণ করে নির্দেশ দিলেন বৃহৎ বৃক্ষসমূহের নীচে পরিষ্কার করে সেখানে সকলকে অবস্থান নিতে। অতঃপর তিনি বললেন,

আমাকে আহবান করা হয়েছে ও আমি তা গ্রহণ করেছি। আমি তোমাদের মাঝে দু টি মূল্যবান বস্তু রেখে যাচ্ছি যার একটি অপরটি হতে বৃহৎ। কোরআন ও আমার নিকটাত্মীয় ও রক্তজ বংশধর (আহলে বাইত)। তাদের প্রতি লক্ষ্য রেখো এবং মনে রেখো তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না। অতঃপর তিনি বললেন,

إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ مَولاي وَ أنا مَولى كُلِّ مُؤْمِنٍ

নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্ আমার অভিভাবক এবং আমি সকল মুমিনের অভিভাবক।

তারপর আলী (আ.)-এর হাত উঁচু করে ধরে বললেন,

مَن كُنتُ مَولاهُ فَهذَا وَلِيُّهُ , اَللّهُمَّ وَالِ مَن وَالاهُ وَعَادِ مَنْ عَادَاه .

আমি যার মাওলা বা অভিভাবক আলীও তার মাওলা। হে আল্লাহ্,তুমি তাকে ভালবাস যে আলীকে ভালবাসে এবং তার প্রতি শত্রুতা পোষণ কর যে আলীর প্রতি শত্রুতা পোষণ করে। ২১

আবদুল্লাহ ইবনে হানতাব বলেছেন, রাসূল (সা.) জুহফাতে আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দান করেন ও প্রশ্ন করেন : আমি কি তোমাদের ওপর তোমাদের অপেক্ষা অধিক অধিকার রাখি না? সবাই বলল : হ্যাঁ।

অতঃপর বললেন,

إنّي سَائِلُكُمْ عَنْ اِثنَيْن :اَلْقُرْآن وَ عِتْرَتِيْ

আমি তোমাদেরকে অবশ্যই দু টি বিষয়ে প্রশ্ন করবো। আর তা হলো কোরআন ও আমার আহলে বাইত। ২২

৪। নির্ভরযোগ্য সুন্নাহ্ দু টি মূল্যবান বস্তুকে আঁকড়ে ধরাকে ফরয বলেছে যা মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত। হাদীসটির বর্ণনাকারী সাহাবীর সংখ্যা বিশ-এর অধিক এবং এ বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে যে,রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষিতে একথাগুলো বিভিন্নভাবে বলেছেন।

যেমনটি লক্ষ্য করেছেন বিদায় হজ্ব থেকে ফিরার পথে গাদীরে খুমে,তদ্রুপ আরাফাতের ময়দানে,তায়েফ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর,আবার কখনো মদীনার মিম্বারে,এমন কি তাঁর শেষ অসুস্থতার সময়ও (যখন তাঁর কক্ষ সাহাবীদের দ্বারা পূর্ণ ছিল) তিনি এ কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করেছেন।

হে লোকসকল! অতি শীঘ্রই আমার আত্মা স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করবে এবং (আমি) এ পৃথিবী থেকে চলে যাব। আমি তোমাদের এরূপ একটি কথা বলব যার পর তোমাদের ওজর পেশ করার কোন সুযোগ থাকবে না। জেনে রাখ,আমি কোরআন ও আমার আহলে বাইতকে তোমাদের মাঝে রেখে যাচ্ছি।

অতঃপর আলী (আ.)-এর হাত উঁচু করে ধরে বললেন,

هذَا عَلِيّ مَعَ الْقُرْآنِ وَ الْقرآنُ مَعَ عَلِيٍّ لا يَفْتَرِقَانِ حَتَّى يَرِدَا عَلَيَّ الْحَوْض

এই আলী কোরআনের সঙ্গে এবং কোরআনও আলীর সঙ্গে। তারা হাউজে কাওসারে মিলিত হওয়া পর্যন্ত পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না। ২৩

এ বিষয়টিকে আহলে সুন্নাহর অনেক বড় বড় আলেম স্বীকার করেছেন,এমন কি ইবনে হাজার হাদীসে সাকালাইন বর্ণনা করার পর বলেছেন, জেনে রাখুন,কোরআন ও আহলে বাইতকে আঁকড়ে ধরার হাদীসটি কয়েকটি সনদে বর্ণিত হয়েছে এবং বিশের অধিক সাহাবী তা বর্ণনা করেছেন।

অতঃপর এর সঙ্গে এ কথাগুলো যোগ করেছেন, ১১ নম্বর সন্দেহের জবাবে এ হাদীসগুলোর কয়েকটি সনদের কথা আমরা বলেছি যার কোনটি রাসূল (সা.) বিদায় হজ্বে আরাফাতের ময়দানে,কোনটি মদীনাতে অসুস্থতার সময় তাঁর গৃহে যখন প্রচুর সাহাবী সমবেত হয়েছিলেন তখন বর্ণনা করেছেন,কোনটি গাদীরে খুমে এবং কোনটি তায়েফ হতে প্রত্যাবর্তনের সময় বর্ণনা করেছেন বলে বলা হয়েছে। এ হাদীসগুলো পরস্পর বিরোধী নয়। কারণ হতেই পারে সকল স্থানেই রাসূল (সা.) এ সত্যকে পুনরাবৃত্তি করেছেন কোরআন ও আহলে বাইতের মহান গুরুত্বের কথা চিন্তা করে।২৪

আহলে বাইতের ইমামগণের মর্যাদার জন্য এটিই যথেষ্ট যে,আল্লাহ্ ও রাসূল (সা.) তাঁদেরকে কোরআনের পাশাপাশি ও এর সমপর্যায়ে স্থান দিয়েছেন যার মধ্যে অসত্য ও বাতিল কোনরূপেই প্রবেশ করতে পারে না।

) لا يأتَيْهِ الْبَاطِلُ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَ لا مِنْ خَلْفِهِ(

অর্থাৎএতে মিথ্যার প্রবেশাধিকার নেই , না সামনের দিক হতে, না পেছন দিক হতে। ২৫

এগুলোই আহলে বাইতের ইমামগণের অনুসরণের পক্ষে কোরআন ও সুন্নাতের স্পষ্ট দলিল হিসেবে আমাদের এ পথে পরিচালিত করেছে। কারণ মুসলমানরা কোরআনের স্থলে অন্য কিছুকেই গ্রহণ করতে পারে না। তাই কিরূপে সম্ভব তদস্থলে এমন কিছু গ্রহণ করবে যা কোরআনের সমমানের ও সমমর্যাদার হবে না?

৫। তদুপরি হাদীসে এসেছে-

إنّي تارِكٌ فِيكُمْ ما إن تَمسّكْتُمْ بِهِ لَنْ تَضِلّوا :كِتابَ اللهِ وَ عِتْرَتِيْ

অর্থাৎ নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে এমন কিছু রেখে যাচ্ছি যাকে আঁকড়ে ধরলে তোমরা কখনও বিপথগামী হবে না। (ভাবার্থ হলো যে কেউ এ দু'টিকে একসঙ্গে আঁকড়ে না ধরবে সে গোমরাহ হয়ে যাবে।) এ হাদীসের (হাদীসে সাকালাইন) সঙ্গে তাবরানীর বর্ণনানুসারে রাসূলুল্লাহ্ এ কথাটিও সংযোগ করেছেন,

فَلا تُقَدِّموهُمَا فَتُهْلِكُوا وَ لا تُقَصِّرُوا عَنهُما فَتُهْلِكُوا وَلا تُعَلِّمُوهُمْ  فَإِنَّهُمْ أعْلَمُ مِنْكُمْ

তাদের চেয়ে অগ্রবর্তী হয়ো না তাহলে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে এবং তাদের ব্যাপারে উপেক্ষার দৃষ্টি নিক্ষেপ করো না,তবে ধ্বংসগহ্বরে নিক্ষিপ্ত হবে। তাদেরকে কোন কিছু শিক্ষাদান করতে যেও না কারণ তারা তোমাদের চেয়ে জ্ঞানী।

ইবনে হাজার বলেন, তাদের চেয়ে অগ্রবর্তী হয়ো না বা তাদেরকে উপেক্ষা করো না,তাদেরকে কিছু শেখানোর চেষ্টা করো না- নবীর এ কথাটির অর্থ হলো যে কেউ জ্ঞানের যে পর্যায়েই পৌঁছে থাকুক না কেন আহলে বাইত দীনি দায়িত্ব ও জ্ঞানের ক্ষেত্রে তাদের ওপর প্রধান্য রাখেন। ২৬  

৬। যে সকল প্রামাণ্য দলিল মুসলমানদের আহলে বাইতের প্রতি পরিচালিত করে ও এ পথে চলতে বাধ্য করে তার একটি হলো নবী করিম (সা.)-এর এ বাণীটি-

أَلا إِنَّ مَثَلَ أَهْل بَيْتِيْ فِيْكُم مَثَلُ سَفِيْنَةِ نُوح مَنْ رَكِبَهَا نَجا وَ مَنْ تَخَلَّفَ عَنْهَا غَرَقَ

জেনে রাখো,নিশ্চয়ই আমার আহলে বাইত তোমাদের জন্য নূহের তরণির মত। যে ব্যক্তি তাতে আরোহণ করবে সে মুক্তি পাবে আর যে তা থেকে বিরত থাকবে সে নিমজ্জিত হবে।২৭

এছাড়াও রাসূল বলেছেন,

শুধু আমার আহলে বাইতই নূহের কিস্তির মত যে তাতে আরোহণ করবে সে নাজাত পাবে,যে আরোহণ না করবে সে নিমজ্জিত হবে। আমার আহলে বাইত তোমাদের মাঝে বনি ইসরাঈলের ক্ষমার দ্বারের অনুরূপ,যে তাতে প্রবেশ করবে সে ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে। ২৮

অন্যত্র বলেছেন,

النُّجُومُ  أمَانٌ لِأهْلِ الأرْضِ مِنَ الْغَرَقِ وَ أَهْلُ بَيْتِي أمانٌ لِأمّتِي مِنَ ا لْلاِخْتِلافِ (فِي الدّينِ )فَإِذَا خَالَفَتْهَا قَبِيلَةٌ مِنَ الْعَرَبِ (يَعْني في اَحْكامِ اللهِاِخْتلفوا فَصَارُوا حِزْبَ     

তারকারাজি পৃথিবীর অধিবাসীদের জন্য নিমজ্জিত হওয়া থেকে রক্ষাকবচ। আর আমার আহলে বাইত উম্মতের দীনের ক্ষেত্রে বিভক্তি হতে রক্ষার আশ্রয়স্থল। যদি আরবদের মধ্যে কোন গোত্র তাদের বিরোধিতা করে (আল্লাহর হুকুম ও বিধানের ক্ষেত্রে) তবে সে গোত্র শয়তানের দলে পরিণত হবে। ২৯ (*১১)

এগুলোই উম্মতের জন্য আহলে বাইতের অনুসরণকে অপরিহার্য করে তোলে এবং তাঁদের বিরোধিতা থেকে দূরে রাখে। আমার মনে হয় না এর থেকে সুষ্ঠু কোন ভাষা ও শব্দের মাধ্যমে এটি মানুষকে বোঝানো সম্ভব।

৭। কিন্তু আহলে বাইত বলতে এখানে যা বোঝানো হয়েছে তা রাসূল (সা.)-এর বংশধারার মধ্যকার ইমামগণের মধ্যে সীমাবদ্ধ,অন্য কোন ব্যক্তি এর অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ এই সম্মান ও মর্যাদা যাঁরা আল্লাহর নির্দেশকে বাস্তবায়ন করেন ও তাঁরই ঐশী নিদর্শন তাঁরা ব্যতীত অন্য কারো জন্য প্রযোজ্য নয়। একথাটি যেরূপ হাদীস ও রেওয়ায়েত হতে সেরূপ বুদ্ধিবৃত্তিকভাবেও প্রমাণিত। আহলে সুন্নাতের অনেক প্রসিদ্ধ আলেমও তা স্বীকার করেছেন। উদাহরণস্বরূপ : ইবনে হাজার তাঁর আসসাওয়ায়েকুল মুহরাকাহ্ গ্রন্থে বলেছেন,

অনেকে বলেছেন : যে আহলে বাইতের কথা বলা হয়েছে তাঁরা রক্ষিত,তাঁরা আহলে বাইতের আলেমগণ হতে পারেন কারণ মানুষ তাঁদের মাধ্যমেই হেদায়েতপ্রাপ্ত হন;তাঁরা মানুষের মাঝে তারকাস্বরূপ এবং যদি তাঁরা পৃথিবীতে না থাকেন তবে মানুষের ওপর আল্লাহর আজাব পতিত হয়।

অতঃপর বলেন, এবং এটি মাহ্দী (আ.)-এর সময় ঘটবে। কারণ ইমাম মাহ্দী (আ.) সম্পর্কিত হাদীসসমূহ থেকে জানা যায় হযরত ঈসা (আ.) তাঁর পেছনে নামায পড়বেন এবং দাজ্জাল তাঁর সময়েই নিহত হবে। এর পরই একের পর এক আল্লাহর নিদর্শনসমূহ প্রকাশিত হতে শুরু করবে। ৩০

অন্যত্র তিনি বলেছেন, মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো : আপনার আহলে বাইতের পরবর্তীতে মানুষ কিরূপে জীবন যাপন করবে? জবাব দিলেন : কোমর ভাঙ্গা গাধার ন্যায়। ৩১

৮। আপনি ষ্পষ্টত বুঝতে পেরেছেন যে,নবী (সা.)-এর আহলে বাইতকে নূহ (আ.)-এর তরণীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে কারণ যে কেউ দীনের মৌলিক ও বিধানগত বিষয়ে (ফিকাহ্গত) আহলে বাইতের ইমামগণ হতে নির্দেশনা গ্রহণ করবে তারা জাহান্নামের শাস্তি হতে মুক্তি লাভ করবে। আর কেউ যদি তার বিরোধিতা করে সে ঐ ব্যক্তির মত যে নূহ (আ.)-এর সময়ের প্লাবন হতে পাহাড়ের ওপর আশ্রয় গ্রহণ করেও মুক্তি পায় নি। এখানে নিমজ্জিত হবার অর্থ জাহান্নামে পতিত হওয়া। তাই এমন কর্ম হতে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

তাঁদেরকে ক্ষমার দ্বারের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে কারণ আল্লাহ্ ঐ দ্বারকে তাঁর শক্তিমত্তার বরাবরে তাঁর নির্দেশানুযায়ী মস্তক অবনত করা ও বিনয়ী হবার পথ হিসেবে বলেছেন এবং এ কারণেই এ দ্বার বনী ইসরাঈলের জন্য ক্ষমার পথ হয়েছিল। তদ্রুপ এই উম্মতের জন্য এ দ্বারকে আহলে বাইতের মোকাবিলায় আল্লাহর নির্দেশের অনুকূলে আত্মসমর্পণ করা এবং ক্ষমা ও মাগফিরাত লাভের উপায় করা হয়েছে। ইবনে হাজার এই হাদীসগুলো উদ্ধৃত করার পর আহলে বাইতকে নূহ (আ.)-এর তরণী ও ক্ষমার দ্বারের সঙ্গে তুলনা করার কারণ এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন,

তাঁদেরকে নূহ (আ.)-এর তরণীর সঙ্গে তুলনা করার কারণ এটিই,যে কেউ তাঁদের ভালবাসবে ও সম্মান করবে সে আল্লাহর নিয়ামতের শোকর আদায় করেছে এবং সে অবশ্যই আহলে বাইতের ইমামগণের মাধ্যমে হেদায়েতপ্রাপ্ত হবে ও তাঁদের বিরোধিতার অন্ধকার হতে মুক্তি লাভ করবে। আর যে কেউ তাঁদের বিরোধিতা করবে আল্লাহর নিয়ামতের অস্বীকৃতির সাগরে নিমজ্জিত ও ধ্বংসের গহ্বরে পতিত হবে। ৩২

অতঃপর বলেছেন, তাঁদেরকে ক্ষমার দ্বারের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে এজন্য যে,এ দ্বারে প্রবেশ করা বায়তুল মুকাদ্দাস বা রাইহার দ্বারে প্রবেশের মত (যদি তা আল্লাহর সামনে মস্তক অবনত করার উদ্দেশ্যে হয়) ক্ষমা লাভের কারণ। আল্লাহ্পাক আহলে বাইতের ভালবাসাকে উম্মতের ক্ষমা লাভের উপায় করে দিয়েছেন। ৩৩

সুতরাং আহলে বাইতের অনুসরণের বিষয়টি অপরিহার্য হওয়া সম্পর্কিত হাদীসসমূহ মুতাওয়াতির ও বহুল প্রচারিত। বিশেষত আহলে বাইত হতে বর্ণিত হাদীসসমূহ সহীহ বলে পরিগণিত। আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়বেন এ ভয় যদি না করতাম তবে আমার লেখনীকে স্বাধীন করে ছেড়ে দিতাম যাতে তা পূর্ণতায় পৌঁছায়। যা হোক যতটুকু লিখলাম আশা করি তা এ উদ্দেশ্য পূরণে সক্ষম হবে।

ওয়াসসালাম

নবম পত্র

১৭ জিলক্বদ ১৩২৯ হিঃ

এ বিষয়ে আরো অধিক সংখ্যক হাদীস বর্ণনার আহবান।

আপনার কলমের লাগামকে ছেড়ে দিন ও কোন সমালোচনাকে ভয় করবেন না। আমার কান আপনার পূর্ণ অধিকারে এবং আমার হৃদয় আপনার জ্ঞান হতে কিছু অর্জন করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। আমি সম্পূর্ণ শান্তভাবে আপনার কথা শ্রবণ করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে রেখেছি। আপনার যুক্তি প্রদর্শনের প্রক্রিয়া আমাকে মুগ্ধ করেছে। তাই ক্লান্তি ও সমালোচনার ভয়কে মন থেকে দূরীভূত করেছি। সুতরাং আপনার বুদ্ধিদীপ্ত ও প্রজ্ঞাময় বক্তব্য থেকে আমাকে আরো অধিক জানার সুযোগ দিন। কারণ আপনার কথার মধ্যে আমি হারিয়ে যাওয়া প্রজ্ঞাকে খুঁজে ফিরছি। আপনার সচল কলম থেকে প্রজ্ঞাময় সকল কথা আমাকে বলুন।

ওয়াসসালাম

কোরআন মজীদ ও আরবী ভাষার চূড়ান্ত বিকাশ

আল্লাহ্ তা আলা তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)কে তাঁর যুগ থেকে শুরু করে ক্বিয়ামত্ পর্যন্ত স্থান-কাল ও পরিবেশ-পরিস্থিতি নির্বিশেষে সমগ্র মানবপ্রজাতির পথনির্দেশের জন্য পাঠান। বস্তুতঃ সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবীকে পাঠানোর এটাই অনিবার্য দাবী যে , তাঁকে তাঁর যুগ থেকে শুরু করে ক্বিয়ামত্ পর্যন্ত স্থান-কাল ও পরিবেশ-পরিস্থিতি নির্বিশেষে সমগ্র মানবপ্রজাতির পথনির্দেশের জন্য পাঠানো হবে। এমতাবস্থায় তাঁকে দেয় মু জিযাহ্ সমূহের মধ্যে অন্ততঃ এমন একটি মু জিযাহ্ থাকা অপরিহার্য ছিলো যা হবে স্থান ও কালের সীমাবদ্ধতার উর্ধে , অন্যদিকে তাঁকে যে হেদায়াত-গ্রন্থ দেয়া প্রয়োজন তার বিষয়বস্তুর ব্যাপকতা এমনই সীমাহীন হওয়া অপরিহার্য যাকে পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণকে ( আঃ) প্রদত্ত গ্রন্থ ও পুস্তিকা (ছ্বাহীফাহ্)র সাথে কোনোভাবেই তুলনা করা সম্ভব নয়।

কিন্তু এমন কোনো বিশালায়তন গ্রন্থ নাযিল্ করাও বাস্তবসম্মত হতো না যা থেকে পথনির্দেশ গ্রহণ করা মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য হতো। তাই এ গ্রন্থের বৈশিষ্ট্য এমন হওয়া অপরিহার্য ছিলো যে , সংক্ষেপে কিন্তু ভাষাগত কৌশলের মাধ্যমে তাতে ক্বিয়ামত্ পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য তাদের জীবনের সকল দিকের পথনির্দেশের সমাহার ঘটবে। আর এ ধরনের গ্রন্থ মানবিক ক্ষমতার উর্ধে বিধায় এ গ্রন্থকে শ্রেষ্ঠতম ও কালোত্তীর্ণ মু জিযাহ্ হিসেবে গণ্য করা ছাড়া গত্যন্তর নেই।

বস্তুতঃ এ ধরনের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী গ্রন্থ নাযিলের জন্য একটি যথোপযুক্ত ভাষার উদ্ভব অপরিহার্য। কিন্তু কেবল মানবিক আন্তঃক্রিয়ার মাধ্যমে এ ধরনের একটি উপযুক্ত ভাষা তো না-ও গড়ে উঠতে পারে। তাই আল্লাহ্ তা আলা স্বাভাবিক মানবিক গতিধারায় পরোক্ষ সহায়তার মাধ্যমে এ ধরনের একটি ভাষার বিকাশ ও তাকে উন্নতির চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত করার নিশ্চিত ব্যবস্থা করবেন এটাই বিচারবুদ্ধির দাবী।

আমরা বাস্তবেও দেখতে পাই যে , আরবী ভাষা - যে ভাষায় কোরআন মজীদ নাযিল্ হয়েছে - একদিকে যেমন অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বিকাশের চরম পর্যায়ে উপনীত হয় , অন্যদিকে এ ভাষার গুণগত মান তথা প্রকাশক্ষমতা এমনই বিস্ময়কর মাত্রায় ব্যাপকতার অধিকারী ও উন্নত যে , বিশ্বের অন্য কোনো ভাষা এর ধারেকাছেও পৌঁছতে সক্ষম নয়।

রাসূলে আকরাম্ হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর আবির্ভাবের মোটামুটি সমসময়েই আরবী ভাষা তার চরমোন্নতির পর্যায়ে উপনীত হয় এবং আরবী ভাষা-সাহিত্যের শ্রেষ্ঠতম প্রতিভাগুলোরও এ সময়েই আবির্ভাব ঘটে। তাদের সামনে কোরআন মজীদকে এক কালোত্তীর্ণ মু জিযাহ্ রূপে পেশ করা হয়। আর ভাষাশৈলীর সৌন্দর্য ও মান এবং প্রকাশের ব্যাপকতা ও সূক্ষ্মতার বিচারে কোরআন মজীদের অনন্যতার কারণে এ গ্রন্থকে মানবিক প্রতিভার উর্ধে বলে ইসলামের দুশমন তৎকালীন শ্রেষ্ঠতম আরবী সাহিত্যপ্রতিভাসমূহ স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলো।

অন্যান্য আসমানী কিতাব্ মু জিযাহ্ নয় কেন

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে , আল্লাহর কালাম্ যেহেতু আল্লাহর কালাম্ , সেহেতু তা যে ভাষাতেই নাযিল্ হোক না কেন , তা ঐ ভাষার ভাষা-সাহিত্যগত মানের বিচারে শ্রেষ্ঠতম ও নিখুঁততম হতে বাধ্য। আর মানুষের প্রতিভা যতোই তীক্ষ্ণ হোক না কেন , যেহেতু সে মানুষ , সেহেতু কোনো মানবিক প্রতিভার বক্তব্যই মানের দিক থেকে খোদায়ী কালামের সমপর্যায়ে উপনীত হতে পারে না। অতএব , অন্যান্য আসমানী গ্রন্থও যখন নাযিল্ হয়েছিলো তখন তৎকালীন সংশ্লিষ্ট ভাষা-সাহিত্যের মানের ভিত্তিতে বিচার করলে তা মানবিক ক্ষমতার উর্ধে প্রমাণিত হতো। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তা হচ্ছে :

(1) সংশ্লিষ্ট ভাষাসমূহ ঐ সব গ্রন্থ নাযিলের সময় স্বীয় বিকাশের চরমোৎকর্ষে উপনীত হয়েছিলো কিনা তা ঐতিহাসিক বিচারে নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে যতোটা জানা যায় , একমাত্র আরবী ভাষা ছাড়া সকল ভাষারই পরবর্তীকালে ক্রমোন্নতি ঘটে এবং এ সব ভাষার মধ্যে জীবিত ভাষাগুলোর মানোন্নয়ন এখনো অব্যাহত রয়েছে। এর মানে হচ্ছে , ঐ সব গ্রন্থ নাযিল-কালে ভাষা-সাহিত্যের মানের বিচারে সংশ্লিষ্ট ভাষাসমূহে রচিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম প্রমাণিত হলেও , ঐ সব গ্রন্থ যদি অবিকৃতভাবে টিকে থাকতো , তো পরবর্তীকালে সংশ্লিষ্ট ভাষা-সাহিত্যের উন্নতি হবার কারণে ঐ সব গ্রন্থের খোদায়ী কালাম্ হবার ব্যাপারে ভাষা-সাহিত্যের পণ্ডিতদের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হতো।

(2) সংশ্লিষ্ট জাতিসমূহের মধ্যে ভাষা-সাহিত্যগত শ্রেষ্ঠতম প্রতিভাসমূহ সমাজের সর্বাধিক সম্মানিত ও গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠী হিসেবে গণ্য হতো না বিধায় ঐ সব গ্রন্থকে সেগুলো নাযিল্ হবার সময় বা পরে কখনোই ভাষা-সাহিত্যের মানগত দৃষ্টিকোণ থেকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গণ্য করা হয় নি। ফলে অন্য মু জিযাহ্ দ্বারা সংশ্লিষ্ট নবীর নবুওয়াত প্রমাণিত হওয়ায় তাঁর আনীত গ্রন্থকে লোকেরা আল্লাহর কিতাব্ মনে করেছে , ভাষা-সাহিত্যের মানগত দৃষ্টিকোণ থেকে অনন্য বিবেচনা করে আল্লাহর কিতাব্ মনে করে নি। অর্থাৎ নবীর আনীত কিতাব্ হওয়ার কারণে একটি কিতাবকে আল্লাহর কিতাব্ মনে করা হয়েছে , এর বিপরীতে কিতাবকে মু জিযাহ্ হিসেবে লক্ষ্য করে সেটিকে তার বাহকের নবুওয়াতের প্রমাণরূপে গণ্য করা হয় নি।

(3) ঐ সব গ্রন্থ কালের প্রবাহে হারিয়ে গেছে বা বিকৃত হয়েছে এবং কতক গ্রন্থ মূল ভাষায় অবশিষ্ট নেই বা অন্য ভাষার অনুবাদ থেকে পুনরায় মূল ভাষায় অনূদিত হয়েছে (যা ঐ সব গ্রন্থের অনুসরণের দাবীদার মনীষীগণও স্বীকার করেন)। ফলে বর্তমানে ঐ সব গ্রন্থকে সংশ্লিষ্ট ভাষার ভাষা-সাহিত্যগত মানের মানদণ্ডে বিচার করা আদৌ সম্ভব নয়।

এ প্রসঙ্গে এরূপ মনে করা অযৌক্তিক হবে না যে , যেহেতু পূর্ববর্তী ঐশী গ্রন্থসমূহ সাময়িক প্রয়োজনে সুনির্দিষ্ট স্থান , কাল ও জনগোষ্ঠীর পথনির্দেশের জন্য নাযিল্ করা হয়েছিলো এবং সংশ্লিষ্ট ভাষাসমূহ স্বীয় সম্ভাবনার চরমোন্নতিতে উপনীত হয় নি বিধায় ভাষাগত ও সাহিত্যিক মানের বিবেচনায় ঐ সব গ্রন্থকে ঐ সব ভাষার সর্বকালের শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থরূপে নাযিল্ করা সম্ভব ছিলো না (কারণ তা করা হলে ঐ সব গ্রন্থ সংশ্লিষ্ট লোকদের বোধগম্য হতো না) , সেহেতু পরবর্তীকালে ঐ সব ভাষার চরমোন্নতির যুগে যাতে ঐ সব ঐশী গ্রন্থ নিম্ন মানের বলে প্রতিভাত না হয় , সে উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ তা আলা ঐ সব গ্রন্থকে বিলুপ্তি বা বিকৃতি থেকে সুরক্ষা প্রদান করেন নি।

শুধু তা-ই নয় , এমনকি ঐ সব ঐশী গ্রন্থ নাযিলের যুগে যদি সংশ্লিষ্ট ভাষা স্বীয় সম্ভাবনার চরমোন্নতির অধিকারীও হতো তথাপি ঐ সব গ্রন্থের বিলুপ্তি বা বিকৃতি থেকে সুরক্ষা পাওয়ার কারণ ছিলো না। কারণ , সে ক্ষেত্রে ঐ সব গ্রন্থকে কেবল সংশ্লিষ্ট ভাষার শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থাবলীর সাথে তুলনা করেই শ্রেষ্ঠতম গণ্য করা হতো না , বরং অন্যান্য ভাষার শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থাবলীর সাথেও তুলনা করা হতো। ফলে শ্রেষ্ঠতম ভাষার (আরবী) শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থের (কোরআন) সাথে তুলনা করে ঐ সব গ্রন্থের মান সম্পর্কে নিম্নতর ধারণা সৃষ্টি হতো এবং সেগুলোর ঐশী গ্রন্থ হওয়া সম্পর্কেও সন্দেহ সৃষ্টি হতো। সুতরাং ঐ সব গ্রন্থের বিলুপ্তি বা বিকৃতি মূল ঐশী গ্রন্থগুলোর সম্মান রক্ষার্থেই অপরিহার্য ছিলো।

এর বিপরীতে যে গ্রন্থ ক্বিয়ামত্ পর্যন্ত স্থান-কাল নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য পথনির্দেশকের ভূমিকা পালন করবে অনিবার্যভাবেই সে গ্রন্থের এমন এক ভাষায় নাযিল্ হওয়া প্রয়োজন ছিলো যে ভাষা হবে সাহিত্যিক মানের বিচারে শ্রেষ্ঠতম তথা সংক্ষিপ্ততম কথায় সুন্দরতমভাবে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাব প্রকাশের উপযোগী এবং সে ভাষার চরমতম উন্নতির পর্যায়ে তা নাযিল্ হওয়া অপরিহার্য যাতে ক্বিয়ামত্ পর্যন্ত কোনো যুগে কোনো দেশে ও কোনো ভাষায়ই ঐ গ্রন্থের সমমানসম্পন্ন গ্রন্থ রচনা করা সম্ভব না হয়। আর কার্যতঃও তা-ই হয়েছে।

বস্তুতঃ কোরআন মজীদ উক্ত তিনটি ক্ষেত্রেই পূর্ববর্তী ঐশী গ্রন্থাবলী থেকে ভিন্নতার অধিকারী। অর্থাৎ যেহেতু কোরআন নাযিল-কালে আরবী ভাষা ও সাহিত্য তার উৎকর্ষতার চরমতম পর্যায়ে উপনীত হয়েছিলো সেহেতু কোরআন মজীদ তখন যেমন আরবী ভাষার অপ্রতিদ্ব দ্বী শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থ ছিলো , এখনো তা-ই আছে এবং ভবিষ্যতেও তা-ই থাকবে ; পরবর্তী কালের ভাষা-সাহিত্যের মানের বিচারে তার শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থের মর্যাদা হারাবার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই।

দ্বিতীয়তঃ কোরআন নাযিলের যুগে আরবদের মধ্যে এ ভাষার শ্রেষ্ঠতম কবি , সুবক্তা ও আরবী ভাষার অলঙ্কারবিশেষজ্ঞগণের আবির্ভাব ঘটেছিলো এবং ঐ যুগের আরব জনগণের কাছে কবি , সুবক্তা ও আরবী ভাষার অলঙ্কারবিশেষজ্ঞগণ সর্বাধিক সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। ফলে কোরআন মজীদের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় তাঁদের অপারগতা কোরআনের ঐশী গ্রন্থ হবার ব্যাপারে জনগণের সামনে অকাট্য দলীলে পরিণত হয়।

কোরআনের মু জিযাহর সাথে পরিচিতি অপরিহার্য

এ প্রসঙ্গে একটি বিষয় স্মরণ রাখা বিশেষভাবে প্রয়োজন। তা হচ্ছে , যে কোনো মু জিযাহকে কেবল সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞগণই মু জিযাহরূপে পরিপূর্ণ প্রত্যয় সহকারে অনুভব করতে পারেন ; সাধারণ জনগণ ঐ বিশেষজ্ঞদের স্বীকৃতি বা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যর্থতা থেকে প্রত্যয়ে উপনীত হতে পারে। সুতরাং বলা বাহুল্য যে , কোরআন মজীদের অলৌকিকত্ব কেবল তাঁদের সামনেই পূর্ণাঙ্গরূপে প্রতিভাত হওয়া সম্ভব যারা আরবী ভাষা ও তার প্রকাশক্ষমতার ওপরে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম দক্ষতা বা ব্যুৎপত্তির অধিকারী। বরং তাঁরাও যতোই অলৌকিকত্ব পর্যবেক্ষণের দৃষ্টিতে কোরআন মজীদ অধ্যয়ন করবেন ততোই তাঁদের কাছে এ মহাগ্রন্থের নব নব বিস্ময়কর দিক ধরা পড়বে - যা আরবী ভাষায় পূর্ণাঙ্গ ব্যুৎপত্তির অধিকারী নয় এমন লোকের পক্ষে পুরোপুরি বুঝতে পারা সম্ভব নয়। তবে মোটামুটিভাবে কোরআন মজীদের অলৌকিকত্ব সম্পর্কে ধারণা লাভ মুক্তবুদ্ধি সম্পন্ন যে কোনো লোকের পক্ষেই সম্ভব।

এখানে একটি পার্শ্বপ্রসঙ্গের উল্লেখ প্রয়োজন মনে করছি। তা হচ্ছে , যার কাছে রাসূলে আকরাম্ হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর নবুওয়াতের সত্যতা প্রতিভাত হয়েছে তার কাছে কোরআন মজীদের খোদায়ী কালাম্ হওয়ার বিষয়টি স্বতঃপ্রতিভাত। অন্যদিকে যার কাছে কোরআন মজীদ মানবীয় প্রতিভার উর্ধে এক অলৌকিক গ্রন্থরূপে প্রমাণিত হবে সে ব্যক্তির পক্ষে হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর নবুওয়াতের সত্যতা মেনে নেয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। কিন্তু কোরআন মজীদের অলৌকিকত্ব প্রতিভাত হওয়া সত্ত্বেও যে ব্যক্তি তাঁর নবুওয়াতকে স্বীকার না করবে , তা যে নেহায়েতই অন্ধ গোঁড়ামি তা বলাই বাহুল্য।

সে যা-ই হোক , কোরআন মজীদের অলৌকিকত্ব সম্পর্কে সাধারণ মুসলিম জনগণের প্রত্যয় থাকলেও এ প্রত্যয় হচ্ছে এজমালী (মোটামুটি) ধরনের। এ গ্রন্থের অলৌকিকত্বের মূল বৈশিষ্ট্য ও তার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে খুব কম লোকেরই ধারণা আছে , অথচ প্রতিটি মুসলমানেরই এ সম্পর্কে অন্ততঃ একটি ন্যূনতম পর্যায় পর্যন্ত অবশ্যই ধারণা থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে বর্তমান যুগে যেভাবে ইসলামের দুশমনদের পক্ষ থেকে সব ধরনের উপায়-উপকরণ ও প্রচারমাধ্যম ব্যবহার করে ইসলামের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হামলা ও বিভ্রান্তিকর প্রচারাভিযান চলছে তখন এ প্রয়োজন আরো বেশী তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে। আর যারা দ্বীনের প্রচার-প্রসারের কাজে সময়-শ্রম ব্যয়ে আগ্রহী তাঁদের জন্য এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা অপরিহার্য প্রয়োজন।

বক্ষ্যমাণ গ্রন্থ প্রসঙ্গে

আরবী ও ফার্সী ভাষায় কোরআন মজীদের মু জিযাহ্ সম্পর্কে বহু গ্রন্থ রচিত হয়েছে , তেমনি রয়েছে কোরআনের ইতিহাস ও কোরআন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জ্ঞান-বিজ্ঞানের ওপর বহু মূল্যবান গ্রন্থ। কিন্তু বাংলা ভাষায় কোরআন মজীদের মু জিযাহ্ সংক্রান্ত কোনো গ্রন্থ এ পর্যন্ত অত্র লেখকের চোখে পড়ে নি। তাই এ প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যেই বক্ষ্যমাণ গ্রন্থের অবতারণা।

কোরআন মজীদের পরিচিতিমূলক গ্রন্থে ও কোরআন মজীদের তাফসীরের মুখবন্ধে সাধারণতঃ কোরআনের মু জিযাহ্ সম্পর্কে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিন্তু তা কোরআন মজীদের মু জিযাহ্ সম্পর্কে ন্যূনতম পূর্ণাঙ্গ ধারণা লাভের জন্য যথেষ্ট নয়। অন্যদিকে আরবী ও ফার্সী ভাষায় কোরআন মজীদের মু জিযাহ্ সম্পর্কে যে সব স্বতন্ত্র গ্রন্থ পাওয়া যায় সে সবের আয়তনের ব্যাপকতা ছাড়াও সে সবের রচনামান এমনই উঁচু স্তরের যে , আমাদের সমাজে সে সব গ্রন্থের অনুবাদ অনুধাবনের জন্যে প্রয়োজনীয় ইলমী পূর্বপ্রস্তুতির খুবই অভাব রয়েছে।

অন্যদিকে যে সব আরবী-ফার্সী গ্রন্থে অংশবিশেষরূপে কোরআন মজীদের মু জিযাহ্ সম্পর্কিত আলোচনা স্থানলাভ করেছে সে সব আলোচনা বাংলাভাষী পাঠক-পাঠিকাদের এতদসংক্রান্ত প্রয়োজন পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। তবে এ সবের মধ্যে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুজতাহিদ্ ইরাকের নাজাফে অবস্থিত দ্বীনী জ্ঞানকেন্দ্রে দীর্ঘ সাত দশকেরও বেশীকাল যাবত দ্বীনী জ্ঞান চর্চাকারী ও বিতরণকারী আল্লামাহ্ সাইয়েদ আবূল্ ক্বাসেম্ খূয়ী (রহ্ঃ) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ আল্-বায়ান্ ফী তাফসীরিল্ ক্বুরআন্-এর অংশবিশেষে কোরআন মজীদের মু জিযাহ্ সম্পর্কে যে আলোচনা করেছেন তা আয়তনের দিক থেকে যেমন মধ্যম , তেমনি প্রকাশভঙ্গির দিক থেকে প্রাঞ্জল ও সহজবোধ্য এবং তা বাংলাভাষী পাঠক-পাঠিকাদের প্রয়োজন পূরণে অনেকাংশে সহায়ক হবে বলে মনে হয়েছে। এ কারণে গ্রন্থটির সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ের অনুবাদে হাত দেই এবং 1989 খৃস্টাব্দের এপ্রিলের শুরুতে এর অনুবাদের কাজ শেষ হয়।

অবশ্য আল্-বায়ান্-এর মু জিযাহ্ সংক্রান্ত অধ্যায়ের যে অনুবাদ করি তাকে আক্ষরিক অর্থে শুধু অনুবাদ বলা চলে না। কারণ , প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এতে পাদটীকা যোগ করা ছাড়াও মরহূম খূয়ীর আলোচনার ভিতর থেকে দু -একটি অংশ যরূরী নয় বিবেচনায় বাদ দেই , কোথাও কোথাও আক্ষরিক অনুবাদের পরিবর্তে ভাবানুবাদ করি , কয়েকটি জায়গায় অধিকতর সুবিন্যাসের লক্ষ্যে বক্তব্য অগ্র-পশ্চাত করি এবং ক্ষেত্রবিশেষে বক্তব্য যোগ করে আলোচনার সম্পূরণ করি। এছাড়া পাঠক-পাঠিকাদের ব্যবহারের সুবিধার্থে বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিষয়বস্তু বিবেচনায় তাঁর বক্তব্যে উপশিরোনাম প্রদান করি , যদিও অনেক উপশিরোনাম তাঁরই দেয়া ছিলো।

এছাড়া , স্বভাবতঃই একটি গ্রন্থের অংশবিশেষ হিসেবে লিখিত আলোচনা একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ হিসেবে লিখিত আলোচনা থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে এবং তাতে পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থের সকল দিক প্রতিফলিত হয় না বিধায় এর সম্পূরণের মাধ্যমে একে পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থে রূপদানের লক্ষ্যে এর শুরুতে তিনটি নিবন্ধ এবং শেষে পরিশিষ্ট আকারে আরো দু টি নিবন্ধ , আল্লামাহ্ খূয়ীর লেখা অংশসমূহের ভিতরে কতক উপশিরোনাম ও এ গ্রন্থে ব্যবহৃত পরিভাষা সমূহের ব্যাখ্যা যোগ করি।

আল্লামাহ্ খূয়ীর লেখার অনুবাদ 1989 খৃস্টাব্দের এপ্রিলের শুরুতে শেষ হলেও প্রায় বিশ বছর পর এটিকে পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থের রূপ দেয়ার উদ্যোগ নেই এবং নিজেই কম্পিউটার-কম্পোজের কাজে হাত দেই। গ্রন্থটির পূর্ণতা প্রদান ও কম্পোজের কাজ 2010 খৃস্টাব্দের জানুয়ারী মাসে সমাপ্ত হলেও প্রকাশের পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয় নি। দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত গ্রন্থটি এভাবে থেকে যাওয়ার পর অতি সম্প্রতি মূলতঃ ফেসবুকে পরিবেশনের লক্ষ্যে এটি পরিমার্জনের কাজে হাত দেই। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে মরহূম খূয়ীর লেখার অনুবাদকৃত অংশগুলোতে আমার পক্ষ থেকে যোগকৃত পাদটীকাগুলোর সংখ্যাধিক্য ও তার আয়তন একটি গ্রন্থের গতিশীলতার জন্য সহায়ক নয় বিবেচনায় প্রায় সবগুলো পাদটীকাকেই মূল পাঠে সমন্বিত করে নেই। (ফেসবুকের জন্য প্রস্তুত কপিতে অবশ্য অবশিষ্ট পাদটীকাগুলোও প্রথম বা তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে মূল পাঠের ভিতরে দিয়েছি ; আলাদা কোনো পাদটীকা দেই নি।) সেই সাথে আরো কিছু পরিবর্তন ও নতুন উপশিরোনাম যোগ করি। ফলে সব মিলিয়ে গ্রন্থটির আয়তনের শতকরা প্রায় ষাট ভাগ দাঁড়িয়েছে অত্র গ্রন্থকারের রচনা এবং চল্লিশ ভাগের কিছু বেশী মরহূম খূয়ীর রচনার অনুবাদ।

অত্র গ্রন্থে উদ্ধৃত বাইবেলের উদ্ধৃতি সমূহের অনুবাদের ক্ষেত্রে বাইবেলের অন্যতম প্রাচীন বঙ্গানুবাদ ধর্ম্মপুস্তক-এর সাহায্য নিয়েছি। (ধর্ম্মপুস্তক - 1937 খৃস্টাব্দের সংস্করণ যা লন্ডনে রয়েছে তার ফটোকপি থেকে 1950 সালে ব্রিটিশ ও ফরেণ বাইবেল সোসাইটির দ্বারা 23 নম্বর চৌরঙ্গী রোড কলিকাতা হতে প্রকাশিত সংস্করণ ব্যবহার করেছি।) এছাড়া ইসলামী জ্ঞানচর্চায় অপেক্ষাকৃত নবীন যে সব পাঠক-পাঠিকা ইসলামী পরিভাষা সমূহের সাথে খুব বেশী পরিচিত নন এমন পাঠক-পাঠিকাদের , বিশেষ করে অমুসলিম পাঠক-পাঠিকাদের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে গ্রন্থে ব্যবহৃত পরিভাষা সমুহের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পরিশিষ্ট আকারে যোগ করেছি।

অত্র গ্রন্থ প্রসঙ্গে আরো কয়েকটি কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি। একটি হচ্ছে এই যে , অত্র গ্রন্থে উদ্ধৃত কোরআন মজীদের কতক আয়াতে (মূল আরবী আয়াতে) আল্লাহ্ তা আলা নিজের জন্য আমরা শব্দ ব্যবহার করেছেন। তৎকালীন আরবী বাকরীতিতে সর্বোচ্চ কর্তৃত্বশালীদের মুখে এক বচনে আমরা ব্যবহারের প্রচলন ছিলো , এ কারণে তৎকালীন আরবের মোশরেকরা এ ব্যাপারে প্রশ্ন তোলে নি। কিন্তু যদিও বাংলা সহ আরো অনেক ভাষায় সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব বা বিনয় প্রকাশের জন্য এর প্রচলন রয়েছে তথাপি বাংলা বাকরীতিতে অনেক ক্ষেত্রে এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে বিনয়স্বরূপ আমরা এবং কর্তৃত্বভাব প্রকাশের জন্য আমি ব্যবহারেরও প্রচলন আছে। এ কারণে বাংলা ভাষায় আল্লাহ্ তা আলার জন্য আমরা শব্দের ব্যবহার বেখাপ্পা শুনায় বিধায় আমরা এক বচনে এর অনুবাদ করেছি। অত্র গ্রন্থে এ ধরনের সকল আয়াতের ক্ষেত্রেই আমরা এ রীতি অনুসরণ করেছি।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে এই যে , অত্র গ্রন্থে যে সব আরবী-ফার্সী শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলোর বানানের ক্ষেত্রে আমরা যথাসম্ভব মূল উচ্চারণ প্রতিফলনের চেষ্টা করেছি। এ কারণে দীর্ঘ ঈ-কার ও দীর্ঘ ঊ-কার বজায় রাখা ছাড়াও কতক শব্দে , বিশেষ করে কম প্রচলিত শব্দে প্রতিবর্ণায়ন রীতি অনুযায়ী যথাসাধ্য মূল উচ্চারণ প্রতিফলিত করার লক্ষ্যেص -এর জন্য ছ্ব ,ط -র জন্য ত্ব ,ع -এর জন্য সংশ্লিষ্ট বর্ণের আগে ( ) চিহ্ন ,غ -এর জন্য গ্ব ,ق -এর জন্য ক্ব , আলেফ্ মামদূদাহ্ (آ ) ও যবরের পরবর্তী আলেফ্ (ا )-এর জন্য ডবল আ-কার (াা) এবং সাকিন্ হামযাহ্ (ء )র জন্য ( ) চিহ্ন ব্যবহার করেছি। এছাড়াও আরো কিছু নিজস্ব বানান অনুসরণ করেছি।

আশা করি অত্র গ্রন্থখানি বাংলাভাষী পাঠক-পাঠিকাদের নিকট , বিশেষ করে যারা আল্লাহর দ্বীনকে ভালোভাবে জানতে , অনুসরণ করতে ও প্রতিষ্ঠা করতে চান তাঁদের নিকট সাদরে গ্রহণীয় হবে।

এ গ্রন্থ সম্পর্কে পাঠক-পাঠিকাদের যে কোনো মতামত সাদরে গ্রহণ করা হবে।

গ্রন্থটি যদি পাঠক-পাঠিকাদেরকে কোরআন মজীদের মু জিযাহর সাথে কিছুটা হলেও পরিচিত করাতে সক্ষম হয় এবং বাংলাভাষী ইসলাম-গবেষকগণ এ বিষয়ে অধিকতর গবেষণামূলক পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হন তাহলেই লেখকের শ্রম সার্থক হবে।

পরিশেষে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ইতের নিকট মুনাজাত করি , তিনি যেন অত্র গ্রন্থকে তাঁর দ্বীনের খেদমতরূপে গণ্য করেন এবং মরহূম আল্লামাহ্ সাইয়েদ আবূল্ ক্বাসেম্ খূয়ীর , অত্র লেখকের , এ গ্রন্থের প্রকাশ-প্রচারের সাথে জড়িতদের ও এর পাঠক-পাঠিকাদের সকলের পরকালীন মুক্তির পাথেয়স্বরূপ করে দিন।

কোরআন মজীদ ও আরবী ভাষার চূড়ান্ত বিকাশ

আল্লাহ্ তা আলা তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)কে তাঁর যুগ থেকে শুরু করে ক্বিয়ামত্ পর্যন্ত স্থান-কাল ও পরিবেশ-পরিস্থিতি নির্বিশেষে সমগ্র মানবপ্রজাতির পথনির্দেশের জন্য পাঠান। বস্তুতঃ সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবীকে পাঠানোর এটাই অনিবার্য দাবী যে , তাঁকে তাঁর যুগ থেকে শুরু করে ক্বিয়ামত্ পর্যন্ত স্থান-কাল ও পরিবেশ-পরিস্থিতি নির্বিশেষে সমগ্র মানবপ্রজাতির পথনির্দেশের জন্য পাঠানো হবে। এমতাবস্থায় তাঁকে দেয় মু জিযাহ্ সমূহের মধ্যে অন্ততঃ এমন একটি মু জিযাহ্ থাকা অপরিহার্য ছিলো যা হবে স্থান ও কালের সীমাবদ্ধতার উর্ধে , অন্যদিকে তাঁকে যে হেদায়াত-গ্রন্থ দেয়া প্রয়োজন তার বিষয়বস্তুর ব্যাপকতা এমনই সীমাহীন হওয়া অপরিহার্য যাকে পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণকে ( আঃ) প্রদত্ত গ্রন্থ ও পুস্তিকা (ছ্বাহীফাহ্)র সাথে কোনোভাবেই তুলনা করা সম্ভব নয়।

কিন্তু এমন কোনো বিশালায়তন গ্রন্থ নাযিল্ করাও বাস্তবসম্মত হতো না যা থেকে পথনির্দেশ গ্রহণ করা মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য হতো। তাই এ গ্রন্থের বৈশিষ্ট্য এমন হওয়া অপরিহার্য ছিলো যে , সংক্ষেপে কিন্তু ভাষাগত কৌশলের মাধ্যমে তাতে ক্বিয়ামত্ পর্যন্ত সকল মানুষের জন্য তাদের জীবনের সকল দিকের পথনির্দেশের সমাহার ঘটবে। আর এ ধরনের গ্রন্থ মানবিক ক্ষমতার উর্ধে বিধায় এ গ্রন্থকে শ্রেষ্ঠতম ও কালোত্তীর্ণ মু জিযাহ্ হিসেবে গণ্য করা ছাড়া গত্যন্তর নেই।

বস্তুতঃ এ ধরনের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী গ্রন্থ নাযিলের জন্য একটি যথোপযুক্ত ভাষার উদ্ভব অপরিহার্য। কিন্তু কেবল মানবিক আন্তঃক্রিয়ার মাধ্যমে এ ধরনের একটি উপযুক্ত ভাষা তো না-ও গড়ে উঠতে পারে। তাই আল্লাহ্ তা আলা স্বাভাবিক মানবিক গতিধারায় পরোক্ষ সহায়তার মাধ্যমে এ ধরনের একটি ভাষার বিকাশ ও তাকে উন্নতির চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত করার নিশ্চিত ব্যবস্থা করবেন এটাই বিচারবুদ্ধির দাবী।

আমরা বাস্তবেও দেখতে পাই যে , আরবী ভাষা - যে ভাষায় কোরআন মজীদ নাযিল্ হয়েছে - একদিকে যেমন অত্যন্ত দ্রুত গতিতে বিকাশের চরম পর্যায়ে উপনীত হয় , অন্যদিকে এ ভাষার গুণগত মান তথা প্রকাশক্ষমতা এমনই বিস্ময়কর মাত্রায় ব্যাপকতার অধিকারী ও উন্নত যে , বিশ্বের অন্য কোনো ভাষা এর ধারেকাছেও পৌঁছতে সক্ষম নয়।

রাসূলে আকরাম্ হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর আবির্ভাবের মোটামুটি সমসময়েই আরবী ভাষা তার চরমোন্নতির পর্যায়ে উপনীত হয় এবং আরবী ভাষা-সাহিত্যের শ্রেষ্ঠতম প্রতিভাগুলোরও এ সময়েই আবির্ভাব ঘটে। তাদের সামনে কোরআন মজীদকে এক কালোত্তীর্ণ মু জিযাহ্ রূপে পেশ করা হয়। আর ভাষাশৈলীর সৌন্দর্য ও মান এবং প্রকাশের ব্যাপকতা ও সূক্ষ্মতার বিচারে কোরআন মজীদের অনন্যতার কারণে এ গ্রন্থকে মানবিক প্রতিভার উর্ধে বলে ইসলামের দুশমন তৎকালীন শ্রেষ্ঠতম আরবী সাহিত্যপ্রতিভাসমূহ স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলো।

অন্যান্য আসমানী কিতাব্ মু জিযাহ্ নয় কেন

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে , আল্লাহর কালাম্ যেহেতু আল্লাহর কালাম্ , সেহেতু তা যে ভাষাতেই নাযিল্ হোক না কেন , তা ঐ ভাষার ভাষা-সাহিত্যগত মানের বিচারে শ্রেষ্ঠতম ও নিখুঁততম হতে বাধ্য। আর মানুষের প্রতিভা যতোই তীক্ষ্ণ হোক না কেন , যেহেতু সে মানুষ , সেহেতু কোনো মানবিক প্রতিভার বক্তব্যই মানের দিক থেকে খোদায়ী কালামের সমপর্যায়ে উপনীত হতে পারে না। অতএব , অন্যান্য আসমানী গ্রন্থও যখন নাযিল্ হয়েছিলো তখন তৎকালীন সংশ্লিষ্ট ভাষা-সাহিত্যের মানের ভিত্তিতে বিচার করলে তা মানবিক ক্ষমতার উর্ধে প্রমাণিত হতো। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তা হচ্ছে :

(1) সংশ্লিষ্ট ভাষাসমূহ ঐ সব গ্রন্থ নাযিলের সময় স্বীয় বিকাশের চরমোৎকর্ষে উপনীত হয়েছিলো কিনা তা ঐতিহাসিক বিচারে নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে যতোটা জানা যায় , একমাত্র আরবী ভাষা ছাড়া সকল ভাষারই পরবর্তীকালে ক্রমোন্নতি ঘটে এবং এ সব ভাষার মধ্যে জীবিত ভাষাগুলোর মানোন্নয়ন এখনো অব্যাহত রয়েছে। এর মানে হচ্ছে , ঐ সব গ্রন্থ নাযিল-কালে ভাষা-সাহিত্যের মানের বিচারে সংশ্লিষ্ট ভাষাসমূহে রচিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম প্রমাণিত হলেও , ঐ সব গ্রন্থ যদি অবিকৃতভাবে টিকে থাকতো , তো পরবর্তীকালে সংশ্লিষ্ট ভাষা-সাহিত্যের উন্নতি হবার কারণে ঐ সব গ্রন্থের খোদায়ী কালাম্ হবার ব্যাপারে ভাষা-সাহিত্যের পণ্ডিতদের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হতো।

(2) সংশ্লিষ্ট জাতিসমূহের মধ্যে ভাষা-সাহিত্যগত শ্রেষ্ঠতম প্রতিভাসমূহ সমাজের সর্বাধিক সম্মানিত ও গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠী হিসেবে গণ্য হতো না বিধায় ঐ সব গ্রন্থকে সেগুলো নাযিল্ হবার সময় বা পরে কখনোই ভাষা-সাহিত্যের মানগত দৃষ্টিকোণ থেকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গণ্য করা হয় নি। ফলে অন্য মু জিযাহ্ দ্বারা সংশ্লিষ্ট নবীর নবুওয়াত প্রমাণিত হওয়ায় তাঁর আনীত গ্রন্থকে লোকেরা আল্লাহর কিতাব্ মনে করেছে , ভাষা-সাহিত্যের মানগত দৃষ্টিকোণ থেকে অনন্য বিবেচনা করে আল্লাহর কিতাব্ মনে করে নি। অর্থাৎ নবীর আনীত কিতাব্ হওয়ার কারণে একটি কিতাবকে আল্লাহর কিতাব্ মনে করা হয়েছে , এর বিপরীতে কিতাবকে মু জিযাহ্ হিসেবে লক্ষ্য করে সেটিকে তার বাহকের নবুওয়াতের প্রমাণরূপে গণ্য করা হয় নি।

(3) ঐ সব গ্রন্থ কালের প্রবাহে হারিয়ে গেছে বা বিকৃত হয়েছে এবং কতক গ্রন্থ মূল ভাষায় অবশিষ্ট নেই বা অন্য ভাষার অনুবাদ থেকে পুনরায় মূল ভাষায় অনূদিত হয়েছে (যা ঐ সব গ্রন্থের অনুসরণের দাবীদার মনীষীগণও স্বীকার করেন)। ফলে বর্তমানে ঐ সব গ্রন্থকে সংশ্লিষ্ট ভাষার ভাষা-সাহিত্যগত মানের মানদণ্ডে বিচার করা আদৌ সম্ভব নয়।

এ প্রসঙ্গে এরূপ মনে করা অযৌক্তিক হবে না যে , যেহেতু পূর্ববর্তী ঐশী গ্রন্থসমূহ সাময়িক প্রয়োজনে সুনির্দিষ্ট স্থান , কাল ও জনগোষ্ঠীর পথনির্দেশের জন্য নাযিল্ করা হয়েছিলো এবং সংশ্লিষ্ট ভাষাসমূহ স্বীয় সম্ভাবনার চরমোন্নতিতে উপনীত হয় নি বিধায় ভাষাগত ও সাহিত্যিক মানের বিবেচনায় ঐ সব গ্রন্থকে ঐ সব ভাষার সর্বকালের শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থরূপে নাযিল্ করা সম্ভব ছিলো না (কারণ তা করা হলে ঐ সব গ্রন্থ সংশ্লিষ্ট লোকদের বোধগম্য হতো না) , সেহেতু পরবর্তীকালে ঐ সব ভাষার চরমোন্নতির যুগে যাতে ঐ সব ঐশী গ্রন্থ নিম্ন মানের বলে প্রতিভাত না হয় , সে উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ তা আলা ঐ সব গ্রন্থকে বিলুপ্তি বা বিকৃতি থেকে সুরক্ষা প্রদান করেন নি।

শুধু তা-ই নয় , এমনকি ঐ সব ঐশী গ্রন্থ নাযিলের যুগে যদি সংশ্লিষ্ট ভাষা স্বীয় সম্ভাবনার চরমোন্নতির অধিকারীও হতো তথাপি ঐ সব গ্রন্থের বিলুপ্তি বা বিকৃতি থেকে সুরক্ষা পাওয়ার কারণ ছিলো না। কারণ , সে ক্ষেত্রে ঐ সব গ্রন্থকে কেবল সংশ্লিষ্ট ভাষার শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থাবলীর সাথে তুলনা করেই শ্রেষ্ঠতম গণ্য করা হতো না , বরং অন্যান্য ভাষার শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থাবলীর সাথেও তুলনা করা হতো। ফলে শ্রেষ্ঠতম ভাষার (আরবী) শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থের (কোরআন) সাথে তুলনা করে ঐ সব গ্রন্থের মান সম্পর্কে নিম্নতর ধারণা সৃষ্টি হতো এবং সেগুলোর ঐশী গ্রন্থ হওয়া সম্পর্কেও সন্দেহ সৃষ্টি হতো। সুতরাং ঐ সব গ্রন্থের বিলুপ্তি বা বিকৃতি মূল ঐশী গ্রন্থগুলোর সম্মান রক্ষার্থেই অপরিহার্য ছিলো।

এর বিপরীতে যে গ্রন্থ ক্বিয়ামত্ পর্যন্ত স্থান-কাল নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য পথনির্দেশকের ভূমিকা পালন করবে অনিবার্যভাবেই সে গ্রন্থের এমন এক ভাষায় নাযিল্ হওয়া প্রয়োজন ছিলো যে ভাষা হবে সাহিত্যিক মানের বিচারে শ্রেষ্ঠতম তথা সংক্ষিপ্ততম কথায় সুন্দরতমভাবে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাব প্রকাশের উপযোগী এবং সে ভাষার চরমতম উন্নতির পর্যায়ে তা নাযিল্ হওয়া অপরিহার্য যাতে ক্বিয়ামত্ পর্যন্ত কোনো যুগে কোনো দেশে ও কোনো ভাষায়ই ঐ গ্রন্থের সমমানসম্পন্ন গ্রন্থ রচনা করা সম্ভব না হয়। আর কার্যতঃও তা-ই হয়েছে।

বস্তুতঃ কোরআন মজীদ উক্ত তিনটি ক্ষেত্রেই পূর্ববর্তী ঐশী গ্রন্থাবলী থেকে ভিন্নতার অধিকারী। অর্থাৎ যেহেতু কোরআন নাযিল-কালে আরবী ভাষা ও সাহিত্য তার উৎকর্ষতার চরমতম পর্যায়ে উপনীত হয়েছিলো সেহেতু কোরআন মজীদ তখন যেমন আরবী ভাষার অপ্রতিদ্ব দ্বী শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থ ছিলো , এখনো তা-ই আছে এবং ভবিষ্যতেও তা-ই থাকবে ; পরবর্তী কালের ভাষা-সাহিত্যের মানের বিচারে তার শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থের মর্যাদা হারাবার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই।

দ্বিতীয়তঃ কোরআন নাযিলের যুগে আরবদের মধ্যে এ ভাষার শ্রেষ্ঠতম কবি , সুবক্তা ও আরবী ভাষার অলঙ্কারবিশেষজ্ঞগণের আবির্ভাব ঘটেছিলো এবং ঐ যুগের আরব জনগণের কাছে কবি , সুবক্তা ও আরবী ভাষার অলঙ্কারবিশেষজ্ঞগণ সর্বাধিক সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। ফলে কোরআন মজীদের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় তাঁদের অপারগতা কোরআনের ঐশী গ্রন্থ হবার ব্যাপারে জনগণের সামনে অকাট্য দলীলে পরিণত হয়।

কোরআনের মু জিযাহর সাথে পরিচিতি অপরিহার্য

এ প্রসঙ্গে একটি বিষয় স্মরণ রাখা বিশেষভাবে প্রয়োজন। তা হচ্ছে , যে কোনো মু জিযাহকে কেবল সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞগণই মু জিযাহরূপে পরিপূর্ণ প্রত্যয় সহকারে অনুভব করতে পারেন ; সাধারণ জনগণ ঐ বিশেষজ্ঞদের স্বীকৃতি বা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ব্যর্থতা থেকে প্রত্যয়ে উপনীত হতে পারে। সুতরাং বলা বাহুল্য যে , কোরআন মজীদের অলৌকিকত্ব কেবল তাঁদের সামনেই পূর্ণাঙ্গরূপে প্রতিভাত হওয়া সম্ভব যারা আরবী ভাষা ও তার প্রকাশক্ষমতার ওপরে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম দক্ষতা বা ব্যুৎপত্তির অধিকারী। বরং তাঁরাও যতোই অলৌকিকত্ব পর্যবেক্ষণের দৃষ্টিতে কোরআন মজীদ অধ্যয়ন করবেন ততোই তাঁদের কাছে এ মহাগ্রন্থের নব নব বিস্ময়কর দিক ধরা পড়বে - যা আরবী ভাষায় পূর্ণাঙ্গ ব্যুৎপত্তির অধিকারী নয় এমন লোকের পক্ষে পুরোপুরি বুঝতে পারা সম্ভব নয়। তবে মোটামুটিভাবে কোরআন মজীদের অলৌকিকত্ব সম্পর্কে ধারণা লাভ মুক্তবুদ্ধি সম্পন্ন যে কোনো লোকের পক্ষেই সম্ভব।

এখানে একটি পার্শ্বপ্রসঙ্গের উল্লেখ প্রয়োজন মনে করছি। তা হচ্ছে , যার কাছে রাসূলে আকরাম্ হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর নবুওয়াতের সত্যতা প্রতিভাত হয়েছে তার কাছে কোরআন মজীদের খোদায়ী কালাম্ হওয়ার বিষয়টি স্বতঃপ্রতিভাত। অন্যদিকে যার কাছে কোরআন মজীদ মানবীয় প্রতিভার উর্ধে এক অলৌকিক গ্রন্থরূপে প্রমাণিত হবে সে ব্যক্তির পক্ষে হযরত মুহাম্মাদ (ছ্বাঃ)-এর নবুওয়াতের সত্যতা মেনে নেয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। কিন্তু কোরআন মজীদের অলৌকিকত্ব প্রতিভাত হওয়া সত্ত্বেও যে ব্যক্তি তাঁর নবুওয়াতকে স্বীকার না করবে , তা যে নেহায়েতই অন্ধ গোঁড়ামি তা বলাই বাহুল্য।

সে যা-ই হোক , কোরআন মজীদের অলৌকিকত্ব সম্পর্কে সাধারণ মুসলিম জনগণের প্রত্যয় থাকলেও এ প্রত্যয় হচ্ছে এজমালী (মোটামুটি) ধরনের। এ গ্রন্থের অলৌকিকত্বের মূল বৈশিষ্ট্য ও তার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে খুব কম লোকেরই ধারণা আছে , অথচ প্রতিটি মুসলমানেরই এ সম্পর্কে অন্ততঃ একটি ন্যূনতম পর্যায় পর্যন্ত অবশ্যই ধারণা থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে বর্তমান যুগে যেভাবে ইসলামের দুশমনদের পক্ষ থেকে সব ধরনের উপায়-উপকরণ ও প্রচারমাধ্যম ব্যবহার করে ইসলামের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হামলা ও বিভ্রান্তিকর প্রচারাভিযান চলছে তখন এ প্রয়োজন আরো বেশী তীব্রভাবে অনুভূত হচ্ছে। আর যারা দ্বীনের প্রচার-প্রসারের কাজে সময়-শ্রম ব্যয়ে আগ্রহী তাঁদের জন্য এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা অপরিহার্য প্রয়োজন।

বক্ষ্যমাণ গ্রন্থ প্রসঙ্গে

আরবী ও ফার্সী ভাষায় কোরআন মজীদের মু জিযাহ্ সম্পর্কে বহু গ্রন্থ রচিত হয়েছে , তেমনি রয়েছে কোরআনের ইতিহাস ও কোরআন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জ্ঞান-বিজ্ঞানের ওপর বহু মূল্যবান গ্রন্থ। কিন্তু বাংলা ভাষায় কোরআন মজীদের মু জিযাহ্ সংক্রান্ত কোনো গ্রন্থ এ পর্যন্ত অত্র লেখকের চোখে পড়ে নি। তাই এ প্রয়োজন পূরণের লক্ষ্যেই বক্ষ্যমাণ গ্রন্থের অবতারণা।

কোরআন মজীদের পরিচিতিমূলক গ্রন্থে ও কোরআন মজীদের তাফসীরের মুখবন্ধে সাধারণতঃ কোরআনের মু জিযাহ্ সম্পর্কে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিন্তু তা কোরআন মজীদের মু জিযাহ্ সম্পর্কে ন্যূনতম পূর্ণাঙ্গ ধারণা লাভের জন্য যথেষ্ট নয়। অন্যদিকে আরবী ও ফার্সী ভাষায় কোরআন মজীদের মু জিযাহ্ সম্পর্কে যে সব স্বতন্ত্র গ্রন্থ পাওয়া যায় সে সবের আয়তনের ব্যাপকতা ছাড়াও সে সবের রচনামান এমনই উঁচু স্তরের যে , আমাদের সমাজে সে সব গ্রন্থের অনুবাদ অনুধাবনের জন্যে প্রয়োজনীয় ইলমী পূর্বপ্রস্তুতির খুবই অভাব রয়েছে।

অন্যদিকে যে সব আরবী-ফার্সী গ্রন্থে অংশবিশেষরূপে কোরআন মজীদের মু জিযাহ্ সম্পর্কিত আলোচনা স্থানলাভ করেছে সে সব আলোচনা বাংলাভাষী পাঠক-পাঠিকাদের এতদসংক্রান্ত প্রয়োজন পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। তবে এ সবের মধ্যে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুজতাহিদ্ ইরাকের নাজাফে অবস্থিত দ্বীনী জ্ঞানকেন্দ্রে দীর্ঘ সাত দশকেরও বেশীকাল যাবত দ্বীনী জ্ঞান চর্চাকারী ও বিতরণকারী আল্লামাহ্ সাইয়েদ আবূল্ ক্বাসেম্ খূয়ী (রহ্ঃ) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ আল্-বায়ান্ ফী তাফসীরিল্ ক্বুরআন্-এর অংশবিশেষে কোরআন মজীদের মু জিযাহ্ সম্পর্কে যে আলোচনা করেছেন তা আয়তনের দিক থেকে যেমন মধ্যম , তেমনি প্রকাশভঙ্গির দিক থেকে প্রাঞ্জল ও সহজবোধ্য এবং তা বাংলাভাষী পাঠক-পাঠিকাদের প্রয়োজন পূরণে অনেকাংশে সহায়ক হবে বলে মনে হয়েছে। এ কারণে গ্রন্থটির সংশ্লিষ্ট অধ্যায়ের অনুবাদে হাত দেই এবং 1989 খৃস্টাব্দের এপ্রিলের শুরুতে এর অনুবাদের কাজ শেষ হয়।

অবশ্য আল্-বায়ান্-এর মু জিযাহ্ সংক্রান্ত অধ্যায়ের যে অনুবাদ করি তাকে আক্ষরিক অর্থে শুধু অনুবাদ বলা চলে না। কারণ , প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এতে পাদটীকা যোগ করা ছাড়াও মরহূম খূয়ীর আলোচনার ভিতর থেকে দু -একটি অংশ যরূরী নয় বিবেচনায় বাদ দেই , কোথাও কোথাও আক্ষরিক অনুবাদের পরিবর্তে ভাবানুবাদ করি , কয়েকটি জায়গায় অধিকতর সুবিন্যাসের লক্ষ্যে বক্তব্য অগ্র-পশ্চাত করি এবং ক্ষেত্রবিশেষে বক্তব্য যোগ করে আলোচনার সম্পূরণ করি। এছাড়া পাঠক-পাঠিকাদের ব্যবহারের সুবিধার্থে বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিষয়বস্তু বিবেচনায় তাঁর বক্তব্যে উপশিরোনাম প্রদান করি , যদিও অনেক উপশিরোনাম তাঁরই দেয়া ছিলো।

এছাড়া , স্বভাবতঃই একটি গ্রন্থের অংশবিশেষ হিসেবে লিখিত আলোচনা একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ হিসেবে লিখিত আলোচনা থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে এবং তাতে পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থের সকল দিক প্রতিফলিত হয় না বিধায় এর সম্পূরণের মাধ্যমে একে পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থে রূপদানের লক্ষ্যে এর শুরুতে তিনটি নিবন্ধ এবং শেষে পরিশিষ্ট আকারে আরো দু টি নিবন্ধ , আল্লামাহ্ খূয়ীর লেখা অংশসমূহের ভিতরে কতক উপশিরোনাম ও এ গ্রন্থে ব্যবহৃত পরিভাষা সমূহের ব্যাখ্যা যোগ করি।

আল্লামাহ্ খূয়ীর লেখার অনুবাদ 1989 খৃস্টাব্দের এপ্রিলের শুরুতে শেষ হলেও প্রায় বিশ বছর পর এটিকে পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থের রূপ দেয়ার উদ্যোগ নেই এবং নিজেই কম্পিউটার-কম্পোজের কাজে হাত দেই। গ্রন্থটির পূর্ণতা প্রদান ও কম্পোজের কাজ 2010 খৃস্টাব্দের জানুয়ারী মাসে সমাপ্ত হলেও প্রকাশের পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয় নি। দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত গ্রন্থটি এভাবে থেকে যাওয়ার পর অতি সম্প্রতি মূলতঃ ফেসবুকে পরিবেশনের লক্ষ্যে এটি পরিমার্জনের কাজে হাত দেই। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে মরহূম খূয়ীর লেখার অনুবাদকৃত অংশগুলোতে আমার পক্ষ থেকে যোগকৃত পাদটীকাগুলোর সংখ্যাধিক্য ও তার আয়তন একটি গ্রন্থের গতিশীলতার জন্য সহায়ক নয় বিবেচনায় প্রায় সবগুলো পাদটীকাকেই মূল পাঠে সমন্বিত করে নেই। (ফেসবুকের জন্য প্রস্তুত কপিতে অবশ্য অবশিষ্ট পাদটীকাগুলোও প্রথম বা তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে মূল পাঠের ভিতরে দিয়েছি ; আলাদা কোনো পাদটীকা দেই নি।) সেই সাথে আরো কিছু পরিবর্তন ও নতুন উপশিরোনাম যোগ করি। ফলে সব মিলিয়ে গ্রন্থটির আয়তনের শতকরা প্রায় ষাট ভাগ দাঁড়িয়েছে অত্র গ্রন্থকারের রচনা এবং চল্লিশ ভাগের কিছু বেশী মরহূম খূয়ীর রচনার অনুবাদ।

অত্র গ্রন্থে উদ্ধৃত বাইবেলের উদ্ধৃতি সমূহের অনুবাদের ক্ষেত্রে বাইবেলের অন্যতম প্রাচীন বঙ্গানুবাদ ধর্ম্মপুস্তক-এর সাহায্য নিয়েছি। (ধর্ম্মপুস্তক - 1937 খৃস্টাব্দের সংস্করণ যা লন্ডনে রয়েছে তার ফটোকপি থেকে 1950 সালে ব্রিটিশ ও ফরেণ বাইবেল সোসাইটির দ্বারা 23 নম্বর চৌরঙ্গী রোড কলিকাতা হতে প্রকাশিত সংস্করণ ব্যবহার করেছি।) এছাড়া ইসলামী জ্ঞানচর্চায় অপেক্ষাকৃত নবীন যে সব পাঠক-পাঠিকা ইসলামী পরিভাষা সমূহের সাথে খুব বেশী পরিচিত নন এমন পাঠক-পাঠিকাদের , বিশেষ করে অমুসলিম পাঠক-পাঠিকাদের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে গ্রন্থে ব্যবহৃত পরিভাষা সমুহের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা পরিশিষ্ট আকারে যোগ করেছি।

অত্র গ্রন্থ প্রসঙ্গে আরো কয়েকটি কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি। একটি হচ্ছে এই যে , অত্র গ্রন্থে উদ্ধৃত কোরআন মজীদের কতক আয়াতে (মূল আরবী আয়াতে) আল্লাহ্ তা আলা নিজের জন্য আমরা শব্দ ব্যবহার করেছেন। তৎকালীন আরবী বাকরীতিতে সর্বোচ্চ কর্তৃত্বশালীদের মুখে এক বচনে আমরা ব্যবহারের প্রচলন ছিলো , এ কারণে তৎকালীন আরবের মোশরেকরা এ ব্যাপারে প্রশ্ন তোলে নি। কিন্তু যদিও বাংলা সহ আরো অনেক ভাষায় সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব বা বিনয় প্রকাশের জন্য এর প্রচলন রয়েছে তথাপি বাংলা বাকরীতিতে অনেক ক্ষেত্রে এক ব্যক্তির পক্ষ থেকে বিনয়স্বরূপ আমরা এবং কর্তৃত্বভাব প্রকাশের জন্য আমি ব্যবহারেরও প্রচলন আছে। এ কারণে বাংলা ভাষায় আল্লাহ্ তা আলার জন্য আমরা শব্দের ব্যবহার বেখাপ্পা শুনায় বিধায় আমরা এক বচনে এর অনুবাদ করেছি। অত্র গ্রন্থে এ ধরনের সকল আয়াতের ক্ষেত্রেই আমরা এ রীতি অনুসরণ করেছি।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে এই যে , অত্র গ্রন্থে যে সব আরবী-ফার্সী শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলোর বানানের ক্ষেত্রে আমরা যথাসম্ভব মূল উচ্চারণ প্রতিফলনের চেষ্টা করেছি। এ কারণে দীর্ঘ ঈ-কার ও দীর্ঘ ঊ-কার বজায় রাখা ছাড়াও কতক শব্দে , বিশেষ করে কম প্রচলিত শব্দে প্রতিবর্ণায়ন রীতি অনুযায়ী যথাসাধ্য মূল উচ্চারণ প্রতিফলিত করার লক্ষ্যেص -এর জন্য ছ্ব ,ط -র জন্য ত্ব ,ع -এর জন্য সংশ্লিষ্ট বর্ণের আগে ( ) চিহ্ন ,غ -এর জন্য গ্ব ,ق -এর জন্য ক্ব , আলেফ্ মামদূদাহ্ (آ ) ও যবরের পরবর্তী আলেফ্ (ا )-এর জন্য ডবল আ-কার (াা) এবং সাকিন্ হামযাহ্ (ء )র জন্য ( ) চিহ্ন ব্যবহার করেছি। এছাড়াও আরো কিছু নিজস্ব বানান অনুসরণ করেছি।

আশা করি অত্র গ্রন্থখানি বাংলাভাষী পাঠক-পাঠিকাদের নিকট , বিশেষ করে যারা আল্লাহর দ্বীনকে ভালোভাবে জানতে , অনুসরণ করতে ও প্রতিষ্ঠা করতে চান তাঁদের নিকট সাদরে গ্রহণীয় হবে।

এ গ্রন্থ সম্পর্কে পাঠক-পাঠিকাদের যে কোনো মতামত সাদরে গ্রহণ করা হবে।

গ্রন্থটি যদি পাঠক-পাঠিকাদেরকে কোরআন মজীদের মু জিযাহর সাথে কিছুটা হলেও পরিচিত করাতে সক্ষম হয় এবং বাংলাভাষী ইসলাম-গবেষকগণ এ বিষয়ে অধিকতর গবেষণামূলক পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হন তাহলেই লেখকের শ্রম সার্থক হবে।

পরিশেষে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল ইতের নিকট মুনাজাত করি , তিনি যেন অত্র গ্রন্থকে তাঁর দ্বীনের খেদমতরূপে গণ্য করেন এবং মরহূম আল্লামাহ্ সাইয়েদ আবূল্ ক্বাসেম্ খূয়ীর , অত্র লেখকের , এ গ্রন্থের প্রকাশ-প্রচারের সাথে জড়িতদের ও এর পাঠক-পাঠিকাদের সকলের পরকালীন মুক্তির পাথেয়স্বরূপ করে দিন।


4

5

6

7

8

9

10

11

12

13

14

15

16

17

18

19

20

21

22

23

24

25

26

27

28

29

30

31

32

33

34

35

36

37

38

39

40

41

42

43

44

45

46

47

48

49