আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত6%

আল মুরাজায়াত লেখক:
: আবুল কাসেম
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বিভাগ: ইতিহাস

আল মুরাজায়াত
  • শুরু
  • পূর্বের
  • 133 /
  • পরের
  • শেষ
  •  
  • ডাউনলোড HTML
  • ডাউনলোড Word
  • ডাউনলোড PDF
  • ভিজিট: 69512 / ডাউনলোড: 9383
সাইজ সাইজ সাইজ
আল মুরাজায়াত

আল মুরাজায়াত

লেখক:
প্রকাশক: এস. এম. আলীম রেজা ৯৩,আরামবাগ,ঢাকা।
বাংলা

1

2

3

4

5

6

7

8

9

10

11

12

13

14

15

16

17

প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যাসমূহ

*১। আহলে সুন্নাহর ভাইয়েরা উসূলে দীনের ক্ষেত্রে দু টি প্রধান ধারার অনুসারী : মু তাযিলা ও আশা ইরা। তবে এ দু টি ছাড়াও অন্যান্য মতবাদ রয়েছে,তদুপরি তাদের প্রত্যাবর্তন এ দু য়ের প্রতিই।

আশা ইরা মতবাদের প্রবক্তা আবুল হাসান আলী ইবনে ইসমাঈল আশা আরী যিনি সাহাবী আবু মূসা আশা আরীর বংশের লোক। তাই কখনো কখনো এ মাজহাবকে আশা আরী মাজহাবও বলা হয়।

*২। আহলে সুন্নাহ্ ওয়াল জামাআহ্ ফুরুয়ে দীন অর্থাৎ ফেকাহ্গত বিধিবিধানের ক্ষেত্রে চার মাজহাবের অনুসারী অর্থাৎ হানাফী,মালিকী,শাফেয়ী ও হাম্বলী পর্যায়ক্রমে আবু হানিফা,মালিক ইবনে আনাস,মুহাম্মদ ইবনে ইদরিস শাফেয়ী এবং আহমাদ ইবনে হাম্বলের নামে পরিচিত। আহলে সুন্নাহর এ চার মাজহাবকে একত্রে মাজাহিব-ই আরবাআহ্ বলা হয়েছে। চতুর্থ পত্রে তাঁদের জন্ম ও মৃত্যু তারিখ উল্লিখিত হয়েছে।

*৩।حطه (হিত্তাহ্) শব্দটির অর্থ ঝরানো,পতন ও নিম্নে আনয়ন। প্রচুর রেওয়ায়েতে রাসূল (সা.) আহলে বাইতের ইমামদেরباب الحطه (বাবুল হিত্তাহ্) বা ক্ষমার দ্বার বলেছেন। বাবুল হিত্তাহ্ বায়তুল মুকাদ্দাসের অন্যতম দ্বার এবং বনি ইসরাঈলকে বায়তুল মুকাদ্দাসে প্রবেশের সময় এ দ্বার দিয়েই প্রবেশ করতে বলা হয়েছিল এবং তখন এ অর্থপূর্ণ ক্ষুদ্র শব্দটি উচ্চারণের আদেশ দেয়া হয়েছিল। তাদের বলা হয়েছিল প্রবেশের সময়حطه আমাদের গুনাহসমূহ ঝরিয়ে দিন শব্দটি সমবেত স্বরে পাঠ করতে। নবী (সা.) আহলে বাইতের ইমামদের এজন্য বাবুল হিত্তাহ্ বলতেন যাতে করে মুসলমানরা তাঁদের মোকাবিলায় আত্মসমর্পণ করে এবং তাঁদের হতেই খোদায়ী বিধান গ্রহণ করে।

حطه শব্দটি পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ৫৮ ও সূরা আরাফের ১৬১ নং আয়াতে এসেছে।

*৪। যে সকল ব্যক্তি নবী (সা.)-এর সাক্ষাৎ লাভ করেছেন তাঁদের সাহাবী,যাঁরা নবীর সাক্ষাৎ পান নি কিন্তু সাহাবীদের সান্নিধ্য পেয়েছেন তাঁদের তাবেয়ী এবং যাঁরা সাহাবীদের সাক্ষাৎ পান নি কিন্তু তাবেয়ীদের সাক্ষাৎ পেয়েছেন তাঁদের তাবে-তাবেয়ীন বলা হয়।

*৫। তিন শতাব্দী বলতে নবী (সা.),সাহাবী ও তাবেয়ীদের সময়কাল বুঝানো হয়েছে। এ তিন যুগে আশা আরী ও চার মাজহাবের কোন অস্তিত্ব ছিল না।

*৬। চার মাজহাবের প্রধানগণ কোন যুক্তি ছাড়া তাঁদের ফতোয়া গ্রহণে নিষেধ করেছেন। আবু হানিফা,মালিক,শাফেয়ী এবং ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল নিজেরাই স্বীকার করেছেন যে,তাঁদের ফতোয়া আল্লাহর ওহীর ন্যায় নয় যে,তার বিরোধী আমল করা যাবে না,বরং তাঁরা সুস্পষ্ট বলেছেন, আমরা অন্যান্য মানুষদের মতই ফতোয়া প্রদানে ভুল করি। তাই যদি নবীর হাদীসে আমাদের ফতোয়ার বিপরীত দেখা যায় সেক্ষেত্রে আমাদের ফতোয়া পরিত্যাগ করে ঐ হাদীস গ্রহণ করবে। এ থেকে বোঝা যায় ফতোয়াকে তাঁরা নিজেদের স্বত্বাধিকারের বস্তু মনে করতেন না এবং ইজতিহাদের ক্ষেত্রে সকল মুসলমান সমান বলে বিশ্বাস করতেন। তাঁদের এরূপ দৃষ্টিভঙ্গির কয়েকটি নমুনা নিম্নে প্রদান করছি :

    আবু হানিফা বলেছেন,

ক)  إذا صحَّ الحديث فهو مذهبي যখন হাদীস সহীহ ও নির্ভুল হবে,আমার ফতোয়াও সেটিই। (ইবনে আবেদীন তাঁর হাসিয়ার ১ম খণ্ডের ৬৩ পৃষ্ঠায় এবং রাসমূল মুফতী রেসালার ১ম খণ্ডের ৪র্থ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য। )

খ)  وَ لاَ يَحلُّ لأحَدٍ أَن يَأخُذَ بِقَوْلنا ما لم يعْلم مِنْ أين أخذناه কারো জন্য বৈধ নয় আমাদের কথাকে গ্রহণ করবে যতক্ষণ না সে নিশ্চিত হবে কোথা হতে আমরা তা নিয়েছি। (ইবনে আবদুল বার তাঁর আল ইনতিকা ফি ফাজাইলিল আইম্মাতিল ফুকাহা ১৪৫ পৃষ্ঠায়; ইবনুল কাইয়েম তাঁর আলামুল মুকেয়ীন গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ৩০৯ পৃষ্ঠায়; শা রানী আল মিযান গ্রন্থের ১ম খণ্ড, ৫৫ পৃষ্ঠায়; ইবনে আবেদীন আল বাহর আর রায়িক গ্রন্থের প্রান্ত লেখনীতে (৬ষ্ঠ খণ্ড,২৯১ পৃষ্ঠা) ও রাসলূল মুফতী গ্রন্থের ২৯ ও ৩২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন। তৃতীয় বর্ণনাটি আব্বাস দাওরী ইবনে মুঈনের ইতিহাসে (১/৭৭/৬) যুফার থেকে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন।)

 

তিনি অন্যত্র বলেছেন,حرام عَلى منْ لَمْ يَعْرِفْ دَلِيلي أَنْ يُفتى بكلامي যে ব্যক্তি আমার ফতোয়ার পক্ষের দলিল সম্পর্কে না জানে,আমার বক্তব্য অনুযায়ী ফতোয়া দান তার জন্য নিষিদ্ধ (হারাম)।

فإنّنا بشر نقول القول اليَوم و نرجع عنه غداً  নিশ্চয়ই আমরাও মানুষ;আজকে একটি কথা বলি আগামীকাল তা হতে ফিরে আসি (পরিবর্তন করি)।

অন্য এক সূত্রে তিনি আবু ইউসুফকে বলেন,

وَيْحَكَ يا يَعْقُوبُ لا تَكْتُبْ كُلَّماَ تسْمع منِّي فإِنِّي قد أرىَ الرَّاي اليوم و أَتركه غداً و أرى الرّأْيَ غداً وأتركه بَعْدَ غدٍ

আফসোস তোমার জন্য হে ইয়াকুব! আমার নিকট হতে যা কিছু শ্রবণ কর তা লিপিবদ্ধ কর না। কারণ আমি আজকে এক মত প্রদান করি কাল তা ফিরিয়ে নিই। আগামীকাল এক ফতোয়া দিই অতঃপর তা পরিহার করি।

গ)  إذا قُلْتُ قَولا يُخالِف كتابَ اللهِ تعالى و خَبَرَ الرسولِ فاتركوا قَوْلي  যখনই কোন ফতোয়া দিই এবং তা আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের হাদীসের বিরোধী হয় তা প্রত্যাখ্যান কর।

মালিক ইবনে আনাস

মালিক ইবনে আনাস হতেও এরূপ উদ্ধৃতি বর্ণিত হয়েছে যার একটি এখানে উল্লেখ করছি :

إنَّما أنا بَشَرٌ اَخْطِئُ وأُصيبُ فانظُروا فِيْ رأيي فَكلّ ما وافَقَ الكتابَ و السنَّةَ فَخذوه وكلُّ ما لم  يُوافِقِ  الكتاب و السنَّة فاتركوْهُ

অবশ্যই আমি মানুষ,কখনো ভুল করি,কখনো সঠিক সিদ্ধান্ত দিই। আমার ফতোয়া যাচাই করে দেখ যদি তা আল্লাহর গ্রন্থ ও রাসূলের সুন্নাহর সাথে সামঞ্জস্যশীল হয় তাহলে তা গ্রহণ কর এবং কোরআন ও সুন্নাহর পরিপন্থী হলে ত্যাগ কর। (ইবনে আবদুল বার তাঁর জামেয়া গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ৩২ পৃষ্ঠায় এবং ইবনে জাযম তাঁর উসূলুল আহকাম গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ১৪৯ পৃষ্ঠায় এটি উল্লেখ করেছেন। )

ইমাম শাফেয়ী

তাঁর হতে এ বিষয়ে প্রচুর বাণী উদ্ধৃত হয়েছে যার কয়েকটি নমুনা হিসেবে পেশ করছি :

ক)

   ما مِنْ أَحَدٍ إِلّا وتَذْهَبُ عليه سُنَّةٌ لِرَسولِ اللهِ وتَعْزبُ عَنْهُ فَمَهما قُلْتُ منْ قَوْلٍ أوْ أَصَّلْتُ منْ أَصْلٍ فيهِ عَنْ رسولِ اللهِ خلافُ مَا قُلْتُ ,فالْقَوْلُ ما قال رَسولُ الله (ص )وهُوَ قولي

যদি কোন ব্যক্তি রাসূলের সুন্নাহকে ভুলে যায় অথবা তার হাতে তা না থাকে সে যেন আমি যে বিষয়ে ফতোয়া দিয়েছি অথবা কোন মৌলিক ভিত্তি স্থাপন করেছি তা রাসূলের বর্ণিত কথার সাথে যাচাই করে দেখে। যদি বিষয়টি তার বিরোধী হয় তবে আমার ফতোয়াকে প্রত্যাখ্যান করে রাসূলের কথাকেই আমার কথা বলে ধরে নেয়।(হাকিম তাঁর মুসতাদরাকে শাফেয়ী হতে এবং ইবনে আসাকির তাঁর তারিখে দামেসকে তাঁর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।{৩ / / ১৫} )

খ)  إِذا وَجَدْتُمْ فِيْ كتابيْ خلافَ سُنَّةِ رَسولِ اللهِ فقولوا بسُنَّةِ رسولِ الله ودَعوا ما قُلْتُ

যখনই আমার গ্রন্থে রাসূলুল্লাহর সুন্নাহর পরিপন্থী কিছু পাও রাসূলের সুন্নাহকে গ্রহণ কর ও আমি যা বলেছি তা ত্যাগ কর। (যাম্মুল কালাম {১ / ৪৭ / ৩} ; আল ইহ্তিজাজ বিশ্ শাফেয়ী {২ / ৮} , ইমাম আসাকির {১০ / / ১৫} )

গ).       و أَنتُمْ أَعْلَمُ بالْحَديث و الرّجالِ مِنِّي فإِذا كان الحديث الصحيح فاعْلموني بهِ أيّ شيء يكون كوفياً

 اوبصرياً او شامياَ حَتّى أذْهبَ إليه إذا كان صَحيحاً

আহমাদ ইবনে হাম্বলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি হাদীস ও রিজালশাস্ত্রে আমার চেয়ে জ্ঞানী। তাই যখনই কোন সহীহ হাদীস পাবেন আমাকে জানাবেন হাদীসটি কিরূপ এবং এর রাবী কুফী,বসরী না সিরিয়ীয় যাতে করে সহীহ হাদীস অনুযায়ী আমি ফতোয়া দিতে পারি।(ইবনে আবদুল বার - এর আল ইহ্তিজাজ বিশ্ শাফেয়ী{১ / ৮} , আল ইনতিকা গ্রন্থের ৭৫ পৃষ্ঠায় , ইমাম জাওযী প্রণীত মানাকিব - ইমাম আহমাদ গ্রন্থের ৪৯৯ পৃষ্ঠা।)

ঘ)  

كل مسئلة صحيح فيها الخبرُ عنْ رسولِ اللهِ (ص )عِنْدَ أهْل النقل بخلاف ما قُلْتُ فأنا راجعٌ عنها في حياتي و بعد موتي

যে কোন বিষয়েই রাবীগণ নবী (সা.) হতে বিশুদ্ধ হাদীসে আমার কথার বিপরীতে কিছু বর্ণনা করলে আমি ঐ ফতোয়া হতে আমার জীবিত ও মৃত্যুবস্থায় এ দিকে (রাসূলের হাদীস ও সুন্নাহর দিকে) প্রত্যাবর্তন করেছি।(যাম্মুল কালাম{১ / ৪৭} , লামুল মূকিয়ীন {২ / / ৬৩} )

ঙ)  إذَا رأَيْتموني أقولُ قولاً و قدْ صحّ عنِ النبيّ (ص) خلافُه فاعْلَموا أنّ عقْلي قدْ ذهب

যখন লক্ষ্য করবে কোন কিছু আমি বলেছি অথচ নবী (সা.) হতে তার বিপরীত বর্ণিত হয়েছে তখন মনে করবে আমার চিন্তাশক্তি ভুল করেছে।(আবু হাফস মুয়াদ্দাব তাঁর মুনতাফী গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ২৩৪ পৃষ্ঠায় এবং ইবনে আসাকির {১ / ১০ / ১৫} তাঁর তারিখে দামেসকে এনেছেন। আবুল কাসেম সামারকান্দীও আমালী গ্রন্থে এটি বর্ণনা করেছেন।)

ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল

অধিকাংশ হাদীসই আহমাদ ইবনে হাম্বল সংকলন করেছেন এবং তিনি ব্যক্তিমত ও ইজতিহাদ সম্বলিত গ্রন্থসমূহকে অপছন্দ করতেন। এজন্য আলোচ্য বিষয়ে তাঁর মত নিম্নরূপ :

ক)  لا تقلّدْني و لا تقلّد مالكاً و لا الشافعي و لا الأوزاعي و لا الثوري و خُذْ مِنْ حيثُ أخذوا

আমার অনুসরণ কর না,মালিক,শাফেয়ী,আওজায়ী এবং সাওরীরও অনুসরণ কর না,বরং তাঁরা যেখান হতে ফতোয়া গ্রহণ করেছেন সেখান হতে ফতোয়া গ্রহণ কর।(ইবনে কাইয়েমের আল আলাম {২ / ৩০২} )

খ)  رأْيُ الأوزاعي و رأْي مالك و رأْي أبي حنيفة كُلّهُ رأْيٌ و هو عنْدي سواء و إنّما الحجّة في الأثار

আওজায়ী,মালিক,আবু হানিফাসহ সকল মতই আমার নিকট সমান। তাই আমার নিকট দলিল হলো কেবল রাসূলের হাদীস।(ইবনে আবদুল বারের জামেয় { / ১৪৯} )

এখানে যা বর্ণিত হলো তা সিফাতু সালাতিন্নাবী গ্রন্থের ২৩-৩৪ পৃষ্ঠা হতে নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে উক্ত গ্রন্থের মূল অংশ ও পাদটীকাগুলো অধ্যয়ন করুন। বইটির লেখক মুহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী। তিনি সিরিয়ার দামেস্কের অধিবাসী এবং মদীনার আল জামেয়াতুল ইসলামিয়া হতে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন বলে মনে হয়।

*৭। ইমামের এ কথার অর্থ যদিও তাঁরা মারা যান অথবা শহীদ হন তদুপরি বারযাখেও এ পৃথিবীর সাথে সম্পর্কিত এবং এ সম্পর্ক এতটা গভীর যেন আমাদের মাঝেই জীবন-যাপন করছেন। ইমাম তাঁর বক্তব্যের শেষে বলেছেন অনেক সত্য রয়েছে ঐ সকল বস্তুর মধ্যে যা তোমরা অস্বীকার কর ,সম্ভবত তা এজন্য যে,উক্ত বক্তব্য অনেকের নিকটই অতিরঞ্জিত মনে হতে পারে ও তারা তা অস্বীকার করতে পারে।

*৮। আপনি আহলে বাইতের ইমামদের বাণী হতেই তাঁদের অনুসরণ অপরিহার্য প্রমাণ করতে চাচ্ছেন যা চক্রের সৃষ্টি করছে এজন্য যে,তাঁদের অনুসরণের অপরিহার্যতা অন্যদের বাণী হতে প্রমাণিত হতে হবে যাতে তা গ্রহণযোগ্য হয়,তাঁদের নিজেদের কথা হতে নয়। তাঁদের বাণী হতেই তাঁদের অনুসরণের সপক্ষে দলিল উপস্থাপন করলে তা যুক্তিবিদ্যার ভাষায় চক্রের সৃষ্টি করে যা অগ্রহণযোগ্য।

লেখক এ পত্রে তার জবাবে বলেছেন এটি চক্রের সৃষ্টি করে না। কারণ তাঁদের নেতা মহানবী (সা.) তাঁর সুস্পষ্ট বক্তব্যে তাঁদের বাণীকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করতে বলেছেন। সুতরাং অন্যান্য দলিলের ন্যায় তাঁদের বাণীও দলিল বলে পরিগণিত এবং একে চক্র বলা যায় না।

*৯। সাকালাইন বা সিকলাইন(ثقلين) শব্দটি অত্যন্ত অর্থবহ কারণ এ শব্দটি অভিধানে মুসাফিরের সম্বল অর্থে যেমন ব্যবহৃত হয়েছে তেমনি অত্যন্ত মূল্যবান বস্তু ও সম্পদের ক্ষেত্রেও। হাদীসটিতে এ শব্দ ব্যবহারের কারণ হযতো এটিই যে,রাসূল (সা.) মৃত্যুর সময় সম্বল হিসেবে এ দু বস্তুই উম্মতের জন্য রেখে গিয়েছেন যার সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমেই সর্বাঙ্গীন সাফল্য লাভ সম্ভব।

হাদীসে সাকালাইন সম্পর্কে আরো অবহিত হবার জন্য ইহকাকুল হাক্ক গ্রন্থের ৯ম খণ্ডের ৩০৯ পৃষ্ঠায় আহলে সুন্নাহর সনদসমূহ অধ্যয়ন করুন।

*১০।হাদীস গ্রহণের ক্ষেত্রে শাইখানের শর্ত :

শাইখাইন বলতে মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ কুশাইরী নিশাবুরী যিনি সহীহ মুসলিম -এর প্রণেতা ও মুসলিম নামে প্রসিদ্ধ এবং মুহাম্মদ ইসমাঈল বুখারী যিনি বুখারী নামে প্রসিদ্ধ ও সহীহ বুখারী -এর সংকলক এ দু ব্যক্তিকে বোঝানো হয়।

আহলে সুন্নাহর ভাইদের নিকট তাঁদের হাদীস গ্রন্থ সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বলে পরিগণিত। তাঁরা তাঁদের হাদীস গ্রন্থে হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে বিশেষ শর্ত অনুসরণ করতেন। এ গ্রন্থ (আল মুরাজিয়াত) হাদীস সহীহ হবার ক্ষেত্রে ঐ শর্তকেই শাইখাইনের শর্ত বলে উল্লেখ করেছে।

মুসলিম তাঁর সহীহ গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ২য় পৃষ্ঠার ভূমিকায় শর্তসমূহ উল্লেখ করতে গিয়ে বলেছেন, নবী (সা.) হতে বর্ণিত হাদীসসমূহকে আমি তিন ভাগে ভাগ করেছি। হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে যে সকল হাদীস অপেক্ষাকৃত ত্রুটিহীন ও এর বর্ণনাকারীরা সঠিক আকীদা-বিশ্বাসের অধিকারী ও বর্ণিত হাদীসের প্রতি অধিকতর আস্থাবান সেই সাথে যদি ঐ সকল হাদীসে কোন বৈপরীত্য ও লক্ষণীয় দোষ না থাকে তবে সেগুলো প্রথমে। অতঃপর ঐ সকল বর্ণনাকারীর হাদীস এনেছি যাঁদের নির্ভরযোগ্যতা ও হিফয করার ক্ষমতা তাঁদের হতে নিম্ন পর্যায়ে ছিল;তাঁরা উত্তম বলে পরিগণিত হলেও পূর্ববর্তী দলের ন্যায় নন। এদের কয়েকজন হলেন আতা ইবনে সায়েব,ইয়াযীদ ইবনে আবি যিয়াদ ও লাইম ইবনে আবি সালিম। প্রথম পর্যায়ের রাবীদের মধ্যে রয়েছেন মানসুর ইবনে মু তামার,সুলাইমান আ মাশ ও ইসমাঈল ইবনে আবি খালিদ প্রমুখ।

তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছেন সেই সকল রাবী যাঁরা হাদীসবিদদের নিকট বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত এবং এ পর্যায়ের রাবীদের হতে আমি বর্ণনা করি নি।

ফতহুল বারী গ্রন্থের ভূমিকায় বুখারীর হাদীস গ্রহণের শর্ত আলোচনা করে উদ্ধৃত হয়েছে : যে সকল হাদীসের সকল বর্ণনাকারীই বিশ্বস্ত বলে ঐকমত্য রয়েছে এবং বিশিষ্ট সাহাবীদের কারো হতে বর্ণনা করেছেন,রাবীদের মধ্যে বিশ্বস্ততার ক্ষেত্রে তাঁর বিষয়ে মতদ্বৈততা না থাকে,হাদীসটিও সনদের ক্ষেত্রে অবিচ্ছিন্ন হয় তবে সে হাদীসসমূহ বুখারীর নিকট গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত। যদি ঐ সাহাবী হতে দু জন রাবী বর্ণনা করেন তা উত্তম,যদি না হয় তাহলে একজনও যথেষ্ট। হাফিয আবু ফযল ইবনে তাহির এ শর্ত বর্ণনা করেছেন।

হাফিয আবু বকর জাযমী বলেছেন, বুখারীর হাদীস গ্রহণের শর্ত ছিল হাদীসের সনদ অবিচ্ছিন্ন,বর্ণনাকারী মুসলমান ও সত্যবাদী,ন্যায়পরায়ণ,হাফিয,উত্তম স্মরণ শক্তির অধিকারী,সুস্থ মতে বিশ্বাসী,ত্রুটি অপেক্ষাকৃত কম ও খিয়ানতকারী না হয়। (ফাতহুল বারী,পৃষ্ঠা ৭)

*১১। এই হাদীসটি আহলে সুন্নাহর অনেক আলেমই নয়জন সাহাবী সূত্রে বর্ণনা করেছেন। ইহকাকুল হাক্ক গ্রন্থের ২৯৪-৩০৮ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।

*১২। এ হাদীসটিতে আল্লাহ্ মানুষকে প্রদত্ত চারটি বড় নিয়ামতের কথা উল্লেখ করেছেন। প্রথম : সুস্থতা;দ্বিতীয় : জীবনকাল;তৃতীয় : অর্থ-সম্পদ;চতুর্থ : পথপ্রদর্শক ইমাম। এই চারটি নিয়ামত তাকে তিনি দিয়েছেন যাতে করে সে পূর্ণতা ও সাফল্যের পথ অতিক্রম করতে পারে। যদি মানুষকে দেহ দেয়া হয় কিন্তু দেহ সুস্থ না থাকে তবে তা হতে লাভবান হওয়া সম্ভব নয়,তেমনি সুস্থতা ও দীর্ঘ জীবন হলেও অর্থ-সম্পদ না থাকলে সর্বোত্তম ব্যবহার সম্ভব নয়। আবার সুস্থতা,সম্পদ ও দীর্ঘ জীবন থাকলেও যদি সঠিক পথপ্রদর্শক না থাকে তবে এ সব কিছুই পথভ্রষ্টতার পথে ব্যয়িত হবে। তখন এই তিন বস্তুই তাকে দুর্ভাগ্য ও ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। এজন্যই এ নিয়ামতসমূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে যে,তা সঠিক পথে ব্যয়িত হয়েছে,নাকি কুফরি ও অকৃতজ্ঞতার পথে ব্যয়িত হয়েছে।

*১৩। যুননুরাইন উসমানের উপাধি যার অর্থ দুই জ্যোতির অধিকারী । তাঁকে এ নামে ডাকা হত এ কারণে যে,তিনি নবীর দুই কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন।

*১৪। কেউ কেউ প্রশ্নটি উত্থাপন করেছেন সূরা মাআরিজ মক্কায় অবতীর্ণ অর্থাৎ গাদীরের ঘটনার প্রায় দশ বছর পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে তাই কিরূপে এর প্রথম আয়াত গাদীরে খুমে অবতীর্ণ হয়েছে বলে দাবী করা হয়েছে?

মরহুম আল্লামাহ্ আমিনী তাঁর আল গাদীর গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ২৩৯-২৬৩ পৃষ্ঠায় এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে সকলেই এ বিষয়ে একমত যে,কোন সূরা মক্কায় অবর্তীণ হবার অর্থ এটি নয় যে,এর সবগুলো আয়াত মক্কায় অবর্তীণ হয়েছে। এ কারণে অনেক মাক্কী সূরাই রয়েছে যার কিছু আয়াত মদীনায় অবর্তীণ হয়েছে,এমন কি এ দাবীও করা যায় না যে,মাক্কী সূরার প্রথম আয়াতগুলো মক্কায় অবর্তীণ হয়েছে। কারণ অনেক মাক্কী সূরারই প্রথম আয়াত মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে আবার এর বিপরীতে অনেক মাদানী সূরার আয়াতসমূহও মক্কায় অবর্তীণ হয়েছে।

আল গাদীর গ্রন্থের লেখক অতঃপর যে সকল মাক্কী সূরার আয়াতসমূহ মদীনায় অবর্তীণ হয়েছে সেগুলোর নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কেন এরূপ করা হয়েছে সে বিষয়ে আমরা অবগত নই। যেমনভাবে আমরা কোরআন অবতীর্ণ হবার ধারার গুঢ় ও পূর্ণ রহস্য সম্পর্কে অবগত নই।

*১৫। সূরা আরাফের ১৭২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ ফিতরাতের ওপর ভিত্তি করে তাওহীদের যে প্রতিশ্রুতি বান্দাদের হতে গ্রহণ করেছেন। এ প্রতিশ্রুতি আমি কি তোমাদের প্রভু নই এই বাক্যের মাধ্যমে গৃহীত হয়েছিল যা আহ্দে আলাসতু (আলাসতুর প্রতিজ্ঞা) নামে প্রসিদ্ধ।

*১৬। আহলে সুন্নাহর হাদীসগ্রন্থগুলোর মধ্যে ছয়টি সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বলে প্রসিদ্ধ এবং এ গ্রন্থগুলোতে বর্ণিত হাদীসসমূহ সহীহ বলে পরিগণিত। তাই এ ছয় গ্রন্থকে সিহাহ সিত্তাহ্ বলা হয়। এগুলো হলো সহীহ বুখারী,সহীহ মুসলিম,সহীহ তিরমিযী,সহীহ আবু দাউদ,সুনানে ইবনে মাজাহ্ ও সুনানে নাসায়ী।

শিয়াদের প্রসিদ্ধ চারটি গ্রন্থ যা কুতুবে আরবাআহ্ নামে পরিচিত তা হলো : কাফী- সংকলক সিকাতুল ইসলাম কুলাইনী,মান লা ইয়াহ্দ্বারুহুল ফাকীহ্- সংকলক শেখ সাদুক,তাহ্যীব ও ইস্তিবসার- সংকলক শেখ তুসী।

*১৭। যাহাবী- মুহাম্মদ ইবনে আহমাদ ইবনে উসমান ইবনে কিসাম দামেস্কী শাফেয়ী যাহাবী নামে প্রসিদ্ধ। তিনি ৬৭৩ হিজরীতে দামেস্কে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দামেস্ক ও মিশরে তাঁর শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করেন। হাদীস ও রিজালশাস্ত্রে তিনি সুপণ্ডিত ছিলেন। তিনি অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন তন্মধ্যে তাযকিরাতুল হুফ্ফায,সাইরুন্নুবলা,মিযানুল ই তিদাল এবং তাজরিদু আসামায়িস্ সাহাবা ব্যাপকভাবে পরিচিত। তিনি ৭৪৮ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। (আনকুনা ওয়াল আলকাব,২য় খণ্ড,২৬৬ পৃষ্ঠা)

*১৮। আবু হাতেম মুহাম্মদ ইবনে ইদরিস হানযালী (আবু হাতেম নামে প্রসিদ্ধ) আহলে সুন্নাহর আলেমদের মতে বিশিষ্ট আলেম ও হাফিয। তাঁকে হাফিযুল মাশরেক বলা হয়ে থাকে। তিনি তীক্ষ্ণ ধী শক্তির অধিকারী ও জ্ঞানের ধারক বলে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি ২৭৭ হিজরীর শাবান মাসে ইন্তেকাল করেন। (আলকুনা ওয়াল আলকাব,২য় খণ্ড,৪৪ পৃষ্ঠা)

*১৯। সম্ভবত আবু হানিফা ফাজরে কাযিব হতে রোযা শুরু হয় মনে করতেন;কিন্তু শিয়া মতে সুবহে সাদিক হতে রোযা শুরু হয়। যেহেতু আ মাশ সুবহে সাদিক পর্যন্ত খাদ্য গ্রহণ করতেন,তাই আবু হানিফা তাঁর রোযাকে বাতিল মনে করতেন। হুজাইফার হাদীস মতে সুবহে সাদিক পর্যন্ত খাদ্য গ্রহণ করা যায় যা আবু হানিফার দৃষ্টিতে বাতিল ছিল তাই তিনি আ মাশ সম্পর্কে এরূপ মন্তব্য করেছেন। গ্রন্থ প্রণেতার মতে আ মাশের এ কর্ম কোরআন অনুসারেই সঠিক।

*২০। আহলে সুন্নাহর জারহ্ তা দিল গ্রন্থগুলোর মধ্যে ইবনে আবি হাতেম এবং ইবনুল ওয়াবাদের গ্রন্থ দু টি প্রসিদ্ধ।

*২১। নাকিসীন অর্থাৎ বাইয়াত ভঙ্গকারীরা হলো ঐ সকল ব্যক্তি যারা হযরত আলী (আ.)-এর সাথে কৃত বাইয়াত ভঙ্গ করে বসরায় উষ্ট্রের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিল। তাদের প্রধান হলেন যুবায়ের ও উম্মুল মুমিনীন আয়েশা।

কাসেতীন বা অত্যাচারীরা হলো মুয়াবিয়া ও তার অনুসারী সেই সব ব্যক্তি যারা সত্যপন্থী ইমামের বিরোধিতা করে সিফ্ফিন যুদ্ধের সৃষ্টি করে।

মারেকীন বা দীনত্যাগীরা হলো খাওয়ারেজ (খারেজীরা) যারা হযরত আলীকে ত্যাগ করে তাঁর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল।

*২২।اَبوا শব্দটিابو   হতে এসেছে যার মূল অর্থ প্রশিক্ষণ ও খাদ্য দান। এজন্য বলা হয়

 أبوت الشيء أبوه أبوا إذا غذوته و بذلك سمى الأب ابا তখনইاَبَوتُ الشيء বলা হয় যখন কাউকে আমরা খাদ্য দেব। পিতাকেأَب   বলা হয় এজন্য যে,তিনি খাদ্য ও প্রশিক্ষণ দান করেন।

হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও হযরত আলী (আ.) উম্মতের সার্বক্ষণিক প্রশিক্ষক হিসেবে তাদের আত্মা ও চিন্তার খোরাক দানকারী ছিলেন বলেই এ উম্মতের পিতা বলে ঘোষিত।

*২৩। মুহাজ্জালিন শব্দটি মুহাজ্জাল শব্দের বহুবচন। যে অশ্বের কপাল,হাত ও পা সাদা বর্ণের তাকে মুহাজ্জাল বলে। অশ্বদলে এরূপ অশ্ব বিশেষত্বের অধিকারী। মুমিনগণও কিয়ামতে পুনরুত্থিত মানব মণ্ডলীর মধ্যে তাঁদের চেহারার ঔজ্জ্বলের কারণে বিশেষত্বের অধিকারী হবেন এবং তাঁদের নেতা হবেন আলী (আ.)।

*২৪। আহলে সুন্নাহর ভাইদের নিকট যে সকল ব্যক্তি এক লক্ষ হাদীস ও বাণী সনদসহ মুখস্থ করেছেন তাঁরা হাফিয বলে পরিগণিত। তিন লক্ষ হাদীস ও বাণী সনদসহ মুখস্থকারীদের হুজ্জাত (নিদর্শন) বলা হয়। কারণ তাঁরা এর সাথে হাদীস বর্ণনাকারীদের বিশ্লেষণগত অবস্থান সম্পর্কেও অবহিত।

হাকিম তাঁকে বলা হয় যিনি সকল হাদীস,এর রাবীদের জীবনরীতি ও চারিত্রিক বিশ্লেষণ সম্পর্কে জ্ঞাত।

হাদীসের প্রথম সারির শিক্ষকদের ইমাম,শাইখ ও মুহাদ্দিস বলা হয়। (সাফিনাতুল বিহার , খণ্ড ১৪ , পৃষ্ঠা ২৮৭)

*২৫। আকাবার বাইয়াত : আকাবার শপথ (বাইয়াতে আকাবা) ইসলামের ভবিষ্যৎ নির্ধারক হিসেবে ইতিহাসে প্রসিদ্ধ। মিনায় জামারায়ে আকাবা র নিকটবর্তী স্থানটিকেই আকাবা বলা হয় যেখানে হাজীরা পাথর নিক্ষেপ করেন। আকাবায় দু বার বাইয়াত অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এজন্য এ দুই বাইয়াতকে যথাক্রমে আকাবায়ে উলা আকাবায়ে সানীয়াহ্ বলা হয়। নিম্নে এ দুই ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হলো :

রাসূল (সা.) হজ্বের মৌসুমে বিভিন্ন গোত্রের ব্যক্তিদের সাথে বসতেন ও তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন। এমন একটি বৈঠকে তিনি মদীনা থেকে আগত খাযরাজ গোত্রের নিকট ইসলামের আহবান পেশ করেন। খাযরাজ গোত্রের লোকেরা মদীনার ইহুদীদের নিকট প্রায়ই শুনত এ সময় একজন নবীর আর্বিভাব ঘটবে। তারা (ইহুদীরা) বলতো নবীর আগমন ঘটলে আমরা তাঁর অনুসরণ করবো এবং তোমরা আদ ও সামুদ জাতির ন্যায় ধ্বংস হবে।

এ কারণেই খাযরাজ গোত্রের অনেকেই ধারণা করে যে,ইনিই সেই নবী। যখন তাদের নিকট প্রমাণিত হয় যে,মুহাম্মদ (সা.)-ই সেই প্রত্যাশিত নবী তখন তারা তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে তাঁকে সত্যায়ন করে। খাযরাজ গোত্রের সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তি হলেন আসআদ ইবনে যুরারাহ্,আবু আমামা,আওফ ইবনে হারেস,রাফে ইবনে মালিক,আমের ইবনে আবদে হারেস,কাতাবা ইবনে আমের ইবনে জাদীদা এবং আকাবা ইবনে আমের ইবনে নাবী।

তাঁরা মদীনায় ফিরে গিয়ে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। পরবর্তী বছর তাঁদের বারজন ব্যক্তি হজ্বের সময় রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাইয়াত করেন। তাঁরা হলেন আসআদ ইবনে যুরারাহ্,হারেসের দুই পুত্র আওফ ও মায়ায,রাফে ইবনে মালিক,যাকওয়ান ইবনে আবদে কাইস,উবাদা ইবনে সামেত,ইয়াযীদ ইবনে সা লাবা,আব্বাস ইবনে উবাদা ইবনে নাদলা,কাতাবা ইবনে আমের,আকাবা ইবনে আম্বার,আবু হাইসাম ইবনে তাইহান ও উওইয়াম ইবনে সায়েদা।

এই বাইয়াত বা শপথ অনুষ্ঠানের পর রাসূল (সা.) মুসআব ইবনে উমাইরকে কোরআন ও ইসলামের বিধান শিক্ষা দানের উদ্দেশ্যে তাঁদের সঙ্গে প্রেরণ করেন। আকাবায় অনুষ্ঠিত এ প্রথম শপথ অনুষ্ঠানকে আকাবায়ে উলা বলা হয় যদিও তা বাইয়াতুন্নিসা নামেও পরিচিত। এই বাইয়াতে তাঁরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন যে,শিরক,চুরি,যিনা (ব্যভিচার) করবেন না,কারো প্রতি অপবাদ আরোপ হতে বিরত থাকবেন,সন্তানদের হত্যা করবেন না,আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করবেন না। মহানবী (সা.) তাঁদের প্রতিশ্রুতি দেন যে,তাঁরা এই শপথ ভঙ্গ না করলে বেহেশতের অধিকারী হবেন এবং প্রতিশ্রুতি পালন না করলে তাঁরা আল্লাহর শাস্তির সম্মুখীন হবেন।

মুসআব ইবনে উমাইরের ইসলাম প্রচারে দু জন বিশিষ্ট ব্যক্তি সা দ ইবনে মায়ায ও উসাইদ ইবনে খুজাইর ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁদের সহযোগিতায় মুসআব অনেককেই প্রভাবিত করতে সক্ষম হন এবং মদীনাবাসীদের মধ্যে ইসলাম গ্রহণের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। তাঁরা নবী (সা.)-এর সাথে সাক্ষাতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং তাঁদের গোত্রের অমুসলমানদের সাথে হজ্ব পালনের নিমিত্তে মক্কায় আগমন করেন। তাঁরা গোপনে নবীর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে মিনায় অপেক্ষা করতে থাকেন।

১১-১৩ জিলহজ্বের এক মধ্য রাতে তাঁরা সত্তরজন সঙ্গোপনে আকাবায় নবীর সাথে মিলিত হন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন নারীও ছিলেন,যেমন কাবের কন্যা ও আসমা ইবনে উমর।

রাসূলের চাচা আব্বাসও তাঁর সাথে ছিলেন যদিও তিনি তখনও ইসলাম গ্রহণ করেন নি। তিনি সর্বপ্রথম মদীনাবাসীদের (পরবর্তীতে আনসার বলে পরিচিত) উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, মুহাম্মদ আমাদের মাঝে প্রিয় ও সম্মানিত। কিন্তু সে চায় তোমাদের সঙ্গে তার বন্ধনকে মজবুত করতে। তোমরা তোমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করলে উত্তম নতুবা সে আমাদের মধ্যেই সম্মানের সঙ্গে থাকবে। আনসাররা জবাবে বললেন, আমরা আপনার কথা শুনলাম। তাঁরা রাসূল (সা.)-কে প্রশ্ন করলেন, হে নবী! আপনি আপনার ও আপনার প্রভুর জন্য আমাদের নিকট যা চান বলুন? নবী (সা.) তাঁদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখলেন। তিনি কোরআন হতে কিছু আয়াত তেলাওয়াত করে তাঁদেরকে ইসলামের বাণীতে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁকে নিজ স্ত্রী-পুত্রের ন্যায় রক্ষার আহবান জানালেন।

তাঁরা ইতিবাচক জবাব দিয়ে বাইয়াতের প্রস্তুতি নিলে আবু হাইসাম বললেন, হে নবী! আমাদের সাথে ইহুদীদের চুক্তি রয়েছে,আপনার জন্য আমরা তা রহিত করছি। কিন্তু পরিশেষে এমন তো হবে না যে,আপনি জয়ী হয়ে আমাদের ছেড়ে নিজ জাতি ও গোত্রের নিকট ফিরে যাবেন? নবী (সা.) মৃদু হেসে বললেন,

 بَلْ الدّم الدّم و الهدْم الهدم انتم مني و انا منكم اسالِم من سالمتم و اُحاربُ مَنْ حاربتم

  রক্তের বিনিময়ে রক্ত,ধ্বংসের বিনিময়ে ধ্বংস,তোমরা আমা হতে ও আমি তোমাদের হতে,তোমরা যার সাথে সন্ধি কর আমিও তাদের সাথে সন্ধি ও শান্তি স্থাপন করি এবং তোমরা যার সাথে যুদ্ধ কর আমিও তার সাথে যুদ্ধ করি।

অতঃপর বললেন, তোমাদের মধ্য হতে বার ব্যক্তিকে তাদের নিজ গোত্রের দায়িত্বের জন্য মনোনীত কর।

তাঁরা খাযরাজ গোত্র হতে নয়জন ও আওস গোত্র হতে তিনজনকে মনোনীত করলেন। অতঃপর আব্বাস ইবনে উবাদা তাঁদের দৃঢ়তা দানের উদ্দেশ্যে বললেন, হে খাযরাজ গোত্রের লোকেরা! মনে রেখ এই ব্যক্তির সঙ্গে তোমরা রঙ্গিন ও কালো যুদ্ধের (তরবারী,ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও বিপদাপদের) সহযোগী হবার অঙ্গীকার করেছ। তাই যদি এমন হয় যে,এতে তোমাদের সম্পদ লুণ্ঠিত ও বিশিষ্টরা নিহত হন তবে পেছনে ফিরে যেও না। কারণ এতে তোমাদের দুনিয়া ও আখেরাতের অমঙ্গল। আর যদি এ অঙ্গীকার রক্ষা কর তাতেই দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ নিহিত।

সকলেই বললেন, আমরা আমাদের সম্পদ ও ব্যক্তিত্বদের হারানোর কষ্ট সহ্য করতে প্রস্তুত। অতঃপর নবীকে লক্ষ্য করে বললেন, এর বিনিময়ে আমরা কি পাব? নবী (সা.) বললেন, জান্নাত। তাঁরা বললেন, আপনার হাত উন্মুক্ত করুন,আমরা বাইয়াত করবো।

এভাবেই বাইয়াতে আকাবাহ্ গৃহীত হলো। সা দ ইবনে উবাদাও এ বাইয়াতে উপস্থিত ছিলেন। এ বাইয়াত বা শপথ অনুষ্ঠান ইসলাম প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

ইবনে কাসির প্রণীত তারিখে কামিল ,২য় খণ্ড,৯৫-১০০ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য।

*২৬। খলীফা আবু বকরের হাতে বাইয়াত সম্পর্কে তাঁর (সা দ ইবনে উবাদা) অন্যতম বক্তব্য ছিল :

لا و اللهِ حتّى أرْميكُم بما في كنانتي و اَخْضبَ سنانَ رُمْحي و اضرب بِسيفي و اُقاتِلكُم بأهْلِ بيتي و مَنْ أطاعني و لو إجتَمعَ معكُم الجنّ و الإنس ما بايعتكم حتّى أعرض على رَبّي

কখনোই না,আল্লাহর শপথ,তোমাদের বাইয়াত করবো না যতক্ষণ না আমার ধনুকের তীর শেষ,আমার বর্শা রক্তিম এবং তরবারী চালনা সমাপ্ত হবে। আমি আমার পরিবার ও অনুগতদের নিয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। যদি সকল মানুষ ও জ্বীন তোমাদের বাইয়াত করে আমি তা করবো না এবং আমার প্রভুর নিকট উপস্থাপন পর্যন্ত আমি এ অবস্থায়ই থাকবো। (কামিল- ইবনে আসির,২য় খণ্ড,২৩১ পৃষ্ঠা)

*২৭। লেখক যে সকল বিষয়ের ইশারা করেছেন তার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করছি :

হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় হযরত উমর নবী (সা.)-এর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে বলেন, তবে কি আমরা সত্যপন্থী ও তারা বাতিলের অনুসারী নয়? নবী (সা.) বললেন, হ্যাঁ। উমর বললেন, আমাদের নিহতরা বেহেশতে ও তাদের নিহতরা কি জাহান্নামে নয়? নবী বললেন, হ্যাঁ। উমর বললেন, তবে কেন আমরা দীনের বিষয়ে অপমান মাথায় নিয়ে মদীনায় ফিরে যাব? নবী বললেন, হে খাত্তাবের পুত্র! আমি আল্লাহর রাসূল,তিনি আমাকে ত্যাগ করতে পারেন না (অপমানিত হতে দিতে পারেন না)। উমর বললেন, তবে কি আপনি বলেন নি আমরা মক্কায় প্রবেশ করবো ও কাবা ঘর তাওয়াফ করবো? নবী বললেন, আমি কি বলেছি এ বছর? তিনি বললেন, না। অতঃপর রাসূল (সা.) বললেন, অবশ্যই তোমরা মক্কায় প্রবেশ করবে ও কাবা তাওয়াফ করবে। (এ ঘটনাটি সহীহ বুখারী কিতাবুশ শুরুত অধ্যায়ে ও মুসলিমের হুদায়বিয়ার সন্ধি র আলোচনায় উদ্ধৃত হয়েছে)

হালাবী তাঁর সীরাত গ্রন্থে এ ঘটনার পূর্ণ বিবরণে উমরের সাথে রাসূলের বাক্য বিনিময়ের শেষে রাসূলের এ উদ্ধৃতিটি এনেছেন যে,তিনি (সা.) বলেন, হে উমর! আমি এতে সন্তুষ্ট হলেও তুমি তাতে হও নি (গ্রহণ কর নি)।

হুনায়নের যুদ্ধে নবী (সা.) যখন কাউকে কাউকে অধিক দান করেন তখন এক ব্যক্তি আল্লাহর শপথ করে বলে এ বণ্টন ন্যায়ের সাথে হয় নি। রাবী বলেন নবী (সা.)-কে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি বলেন, যদি আল্লাহ্ ও তাঁর নবী ইনসাফ ও ন্যায়পরায়ণতা রক্ষা না করেন তবে কে তা করবে? অতঃপর বলেন, আল্লাহ্ হযরত মূসাকে রহম করুন,তিনি এ থেকে অধিক তিরস্কার সহ্য করেছেন ও এ বিষয়ে ধৈর্য ধারণ করেছেন। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল তাঁর মুসনাদ গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ২০ পৃষ্ঠায় সুলাইমান ইবনে রাবীয়া হতে বর্ণনা করেছেন, আমি হযরত উমরকে বলতে শুনেছি : নবী (সা.) গণীমত বণ্টন করছিলেন,আমি তাঁকে বললাম অন্যরা এ গণীমত হতে অধিক পাওয়ার যোগ্য। নবী বললেন : তুমি আমাকে রুক্ষ স্বরে প্রশ্ন করছ।

বদরের যুদ্ধের বন্দীদের ব্যাপারে নবীর সিদ্ধান্ত ছিল বন্দীদের হতে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেবার। কিন্তু উমর এ সিদ্ধান্তকে গ্রহণ না করে বলেন, হযরত হামযাহর উচিত তাঁর ভ্রাতা আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবকে ও আলীর উচিত তাঁর ভ্রাতা আকীলকে হত্যা করা এবং এভাবে সকল মুসলমানই তার নিকটাত্মীয়কে হত্যা করবে। নবী (সা.) তাঁর এ কথায় মনে প্রচণ্ড কষ্ট পান। তাবুকের যুদ্ধে মুসলমানরা ক্ষুধার্ত হলে নবী উট কুরবানী করতে বললে উমর বলেন, উটগুলো নিশ্চি হ্ন হলে আমরাও নিশ্চি হ্ন হয়ে যাব।

রাসূল (সা.) আবদুল্লাহ্ ইবনে উবাইয়ের জানাযার নামায পড়াতে গেলে (ইবনে উবাইয়ের সন্তানদের অনুরোধে) উমর রাসূল (সা.)-এর চাদর টেনে ধরে এতে বাধা দেন। উহুদে ইবনে উবাই নিজ চাদর হযরত হামযাহর কাফনের জন্য খুলে দিয়েছিল সেজন্য নবীও তাঁর চাদর ইবনে উবাইয়ের কাফনের জন্য দিয়ে দেন। যেহেতু তখনও মুনাফিকের জানাযা পড়া নিষিদ্ধ করে ওহী অবর্তীণ হয় নি তাই নবী (সা.) তার জানাযা পড়ান ও বলেন, আমার এ বস্ত্র তার কোন কল্যাণই করবে না। কিন্তু আমার এ কর্মের মাধ্যমে অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করবে।

খুমসের বিষয়ে আল্লাহর সুস্পষ্ট আয়াত হলো :

  ( و اعلَموا أنّما غَنمتم مِنْ شيءٍ فإنَّ لله خُمسه و للرَّسول و لذِى القربى و اليتامى و المساكين و ابن السبيل )

জেনে রাখ খুমস (যা কিছুই তোমরা অর্জন কর,গণীমত হিসেবে পাও তার এক পঞ্চমাংশ) আল্লাহ্,তাঁর রাসূল,নিকটাত্মীয়,ইয়াতিম,মিসকিন ও মুসাফিরের জন্য।

মালিক ইবনে আনাস খুমসের বিষয়ে ফতোয়া দেন যে,এটি শাসক বা সুলতানের হাতে অর্পণ করতে হবে ও তিনি যেমনভাবে চান তা ব্যয় করবেন।

আবু হানিফা ফতোয়া দেন যে,খুমসকে তিন ভাগে ভাগ করে মুসলমানদের ইয়াতিম,মিসকিন ও সম্বলহীন মুসাফিরের মধ্যে বণ্টন করতে হবে। তিনি নিকটাত্মীয়দের সাথে অন্যদের পার্থক্য করেন নি। অথচ সকল মুসলমানই অবগত যে,খুমসেরর একাংশ নবী (সা.)-এর,একাংশ তাঁর নিকটাত্মীয়দের ও একাংশ তাঁর বংশের ইয়াতিম ও মিসকিনদের। কিন্তু খলীফা আবু বকর রাসূল (সা.) ও তাঁর নিকটাত্মীয়দের এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করেন।

উমরের পরামর্শক্রমে আবু বকর কোরআনের সুস্পষ্ট আয়াত ও রাসূলের সুন্নাহর বিপরীতে যাকাতের অন্যতম খাত আল মুয়াল্লাফাতু কুলূবুহুম -কে রহিত করেন। আল জাওহারাতুন্ নাইয়েরা গ্রন্থের ১ম খণ্ডের ১৬৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে- চুক্তিবদ্ধ অমুসলমান,নতুন ঈমান আনয়নকারীরা মদীনায় খলীফার নিকট তাদের অংশ নিতে এলে খলীফা আবু বকর তা লিখে দেন। কিন্তু উমর তাদের থেকে কাগজটি নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেন ও বলেন, ইসলামের তোমাদের কোন প্রয়োজন নেই।

আর হজ্বে তামাত্তু ও মুতা (অস্থায়ী) বিবাহ যা প্রসিদ্ধ এবং আহলে সুন্নাহর সকল নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে এতদ্সংক্রান্ত পবিত্র কোরআনের আয়াতসমূহ সম্পর্কে উমর তাঁর খেলাফতকালে মিম্বারে দাঁড়িয়ে ভাষণে বলেছিলেন, রাসূলুল্লাহর যুগে দু টি মুতা প্রচলিত ছিল;আর আমি এ দু টি নিষিদ্ধ করছি এবং এ দু টির জন্য (অর্থাৎ কোন ব্যক্তি এ দু টি মুতা করলে) আমি শাস্তি দিব। মুতাদ্বয়ের একটি মুতআতুল হজ্ব (হজ্বে তামাত্তু) ও অন্যটি মুতআতুন্ নিসা (মুতা বিবাহ)। অথচ পবিত্র কোরআনে এ দু টি মুতা জায়েয হবার বিষয়টি স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।

হজ্বে তামাত্তু সংক্রান্ত আয়াত : আর তোমাদের মধ্যে যারা হজ্ব ও ওমরা একত্রে একই সাথে (হজ্বে তামাত্তু) পালন করতে চায় তবে যা কিছু সহজলভ্য তা দিয়ে কোরবানী করাই তার ওপর কর্তব্য।- (সূরা বাকারা : ১৯৬)

অস্থায়ী বিবাহ সংক্রান্ত আয়াত : অনন্তর তাদের (মহিলাদের) মধ্যে যাকে ভোগ (ইস্তিমতা বা মুতা) করবে তোমরা তাকে তার নির্ধারিত পারিশ্রমিক (মোহরানা) দান কর।- (সূরা নিসা : ২৪)

অধিকতর অবগতির জন্য তাফসীরে নমুনা আমাদের ধর্মের গ্রন্থ নামক দু টি গ্রন্থে উপরোক্ত আয়াতসমূহের আওতায় যে ব্যাপক ব্যাখ্যা ও আলোচনার অবতারণা করা হয়েছে তা দ্রষ্টব্য।

তালাকের বিষয়ে কোরআনের আয়াত হলো :

 ( الطّلاقُ مرَّتانِ فإمساك بمعْروفٍ أو تسريح بإِحسانٍ فإِن طلّقها فَلا تحلّ لهُ من بَعْد حتّى تَنْكِحَ زوجاً غيره )

তালাক দু বার,এরপর হয় সৎভাবে জীবন যাপন কর নতুবা সদাচারণের সাথে বিদায় দাও। যদি তৃতীয়বার তালাক দাও তবে ঐ স্ত্রী ততক্ষণ তোমার জন্য বৈধ হবে না যতক্ষণ না সে অন্য ব্যক্তির দ্বারস্থ হয় (অর্থাৎ অন্য ব্যক্তি তাকে বিবাহের পর তালাক দেয়)।

এ আয়াত অনুযায়ী তালাক ভিন্নভাবে তিন বার হতে হবে এবং এরপর রাজঈ বলে পরিগণিত হবে। কিন্তু তাঁরা এক বৈঠকে তিন তালাক বৈধ মনে করেন যা কোরআনের আয়াত ও হাদীসের পরিপন্থী। সহীহ মুসলিমের ১ম খণ্ডের ৫৭৪ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে- খলীফা উমরের শাসনকালের দ্বিতীয় বর্ষ পর্যন্ত বিধান হিসেবে এটিই প্রচলিত ছিল। অতঃপর খলীফা তা পরিবর্তন করেন।

হাতেব ইবনে বালতায়ার ঘটনা : হাতেব মক্কার মুশরিকদের নিকট মুসলমানদের আক্রমণের খবর জানিয়ে পত্র পাঠিয়েছিলেন। ঘটনাটি প্রকাশিত হবার পর নবী (সা.) তাঁকে এ কাজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি এ কাজের মাধ্যমে চেয়েছিলাম মুশরিকদের নিকট আমার অবস্থান দৃঢ় করে আমার পরিবার ও সম্পদকে তাদের হাত থেকে নিরাপদে রাখতে। কারণ আমি ব্যতীত আপনার সাহাবীদের সকলেরই কেউ না কেউ মক্কায় রয়েছে যারা তাঁদের পরিবার ও সম্পদ রক্ষা করবে।

নবী (সা.) বললেন, সে সত্য বলেছে,তোমরা তার সম্পর্কে ভাল বৈ মন্দ বল না। উমর এর প্রতিবাদ করে বলেন, এই ব্যক্তি রাসূল ও মুসলমানদের প্রতি খিয়ানত করেছে,একে হত্যা করা হোক।

আটানব্বই নম্বর পত্রে যে সমস্ত ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে তা ফুসূলুল মুহিম্মা গ্রন্থে ব্যাখ্যাসহ এসেছে। আমরা এ সম্পর্কে ওপরে যা বর্ণনা করেছি তা উক্ত গ্রন্থ হতে নিয়েছি।

*২৮। লেখক ইতিহাসের বিভিন্ন পটে মুসলমানদের মধ্যে অসচেতনতা,নির্লিপ্ততা,শৃঙ্খলা ও সমন্বয়ের যে অভাব লক্ষ্য করেছেন তা হতেই এরূপ মন্তব্য করেছেন। আফসোস! তিনি যদি বেঁচে থাকতেন ও ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর প্রতিনিধি ইমাম খোমেইনী (রহঃ)-এর নেতৃত্বে সংঘটিত ইরানের ইসলামী বিপ্লবকে দেখে যেতে পারতেন তাহলে একটি মুসলিম জাতি কিরূপে অধিকার অর্জনে আত্মবিসর্জন,সমন্বয়,সাহসিকতা ও শৃঙ্খলার নমুনা উপস্থাপনে সক্ষম তা দেখে গর্বিত হতেন ও ভিন্নরূপ মন্তব্য করতেন।

ত্রিশতম পত্র

২২ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

১।   আরব ভাষাভাষীরা এ হাদীস হতে সর্বজনীনতাই বুঝেন।

২।   হাদীসটি বিশেষ সময় ও প্রেক্ষাপটের জন্য প্রযোজ্য কথাটির অসারতা।

৩।   হাদীসটি প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপনের যোগ্য নয় কথাটি অযৌক্তিক।

১। হাদীসটি সর্বজনীন নয় এ কথাটির জবাব দানের দায়িত্ব আমরা আরব ভাষাভাষী ও হাদীসটির সাধারণ ও বাহ্যিক অর্থের ওপর ছেড়ে দিচ্ছি এবং আপনিও আরব হিসেবে এর সাক্ষী। আপনি কি মনে করেন আপনার স্বভাষীরা এ হাদীসের সর্বজনীনতার বিষয়ে সন্দেহ করেন? কখনোই নয়। আমি বিশ্বাস করি না আপনার মত কেউ হাদীসটিতে যে ইসমে জিনস্ মুদ্বাফ (সম্বন্ধবোধক জাতিবাচক বিশেষ্য) রয়েছে তা থেকে এ সংশ্লিষ্ট সকল বাস্তব ক্ষেত্র যে এর অন্তর্ভুক্ত তা বোঝেন না।

উদাহরণস্বরূপ যদি আপনি বলেন,منحتكم انصافي অর্থাৎ আমার ইনসাফকে আপনাদেরকে দিলাম,এ বাক্যে ইনসাফের বিষয়টি কি কিছু কিছু বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে নাকি সকল বিষয়ে? ইনসাফের সকল প্রেক্ষাপট এর অন্তর্ভুক্ত নয় কি? আল্লাহ্ না করুন আপনি এ থেকে বাহ্যিক অর্থে সর্বজনীনতা ও সর্বঅন্তর্ভুক্তি ভিন্ন অন্য কিছু বোঝেন।

প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদের কোন খলীফা যদি তাঁর কোন বন্ধুকে বলেন,

جعلت لك ولايتي على الناس অর্থাৎ আমি জনগণের ওপর নিজ বেলায়েত ও অভিভাবকত্বের বিষয়টি তোমার ওপর অর্পণ করলাম অথবা বলেন তোমাকে আমার সাম্রাজ্যের দায়িত্ব দিয়ে আমার স্থলাভিষিক্ত করলাম কথা দু টি হতে সর্বজনীনতা ভিন্ন অন্য কিছু আপনার চিন্তায় প্রথমেই আসে কি? কেউ যদি এ দাবী করে,বিষয়টি কোন কোন বিষয়ের জন্য প্রযোজ্য তবে তাকে কি বিদ্রোহী বলা হবে না? যদি তিনি তাঁর কোন উপদেষ্টাকে বলেন, তোমার অবস্থান আমার শাসন কার্যে হযরত আবু বকরের খেলাফতে উমরের ন্যায় শুধু পার্থক্য এটি যে,তুমি রাসূল (সা.)-এর সাহাবা নও। তবে তাঁর এ মর্যাদা কি বিশেষ কিছু বিষয়ে হবে নাকি সকল বিষয়ে অর্থাৎ সর্বজনীন বলে পরিগণিত হবে। নিঃসন্দেহে আপনি এটিকে সর্বজনীন বলবেন। আমার বিশ্বাস আপনি রাসূলের এ হাদীস انت مني بمنزلة هارون من موسى   যে সর্বজনীনতার প্রতি ইঙ্গিত করে তাই মনে করেন কারণ বাক্যটির শাব্দিক ও সাধারণ অর্থ এটিই। বিশেষত যখন হাদীসটিতে নবুওয়াতের বিষয়টিকে ব্যতিক্রম ধরেই সর্বজনীনতার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সকল আরবকেই প্রশ্ন করতে পারেন।

২। কিন্তু বিরোধীদের এ দাবী হাদীসটি শুধু ঐ প্রেক্ষাপটের জন্যই প্রযোজ্য তা দু টি কারণে অগ্রহণীয়।

প্রথমত হাদীসটি নিজে থেকেই সর্বজনীন তাই বিশেষ প্রেক্ষাপটে বলা হয়েছে বলে তার সর্বজনীনতা ক্ষুন্ন হয় না কারণ প্রেক্ষাপট বিষয়টিকে বিশেষায়িত করে না আর উসূলশাস্ত্রের ভাষায় বললে প্রেক্ষাপট বিশেষায়ক নয়। যেমন কোন অপবিত্র ব্যক্তি (জুনুব) আয়াতুল কুরসী স্পর্শ করলে আপনি যদি তাকে বলেন অপবিত্র ব্যক্তি বা মুহদেস (যার ওজু বা গোসল নেই) কোরআন স্পর্শ করতে পারবে না কথাটি বিশেষ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়,বরং এরূপ ব্যক্তি কোরআনের যে কোন স্থান স্পর্শ করলেই হারাম কাজ করেছে কেননা মুহদেস ব্যক্তি কোরআন স্পর্শ করতে পারবে না কথাটি আয়াতুল কুরসীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। কেউই এ থেকে ভিন্ন কিছু বুঝবে না।

তদ্রুপ কোন চিকিৎসক যদি তার কোন রোগীকে খেজুর খেতে দেখে বলেন, আপনি মিষ্টি খাবেন না সাধারণভাবে এটি থেকে কি খেজুর না খাওয়া বুঝায় নাকি যত ধরনের মিষ্টি আছে তা বুঝায়? আল্লাহর শপথ করে বলতে পারি আমার মনে হয় না এরূপ বিষয়ে কেউ বিশেষত্ব বুঝবে যদি না সে উসূল,ব্যাকরণশাস্ত্র ও সাধারণ বাক্যজ্ঞান বিবর্জিত হয়। তেমনি যে ব্যক্তি মানযিলাত -এর হাদীসটিকে শুধু তাবুকের যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বলে মনে করেন তিনিও এরূপ ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত।

দ্বিতীয়ত যে প্রেক্ষাপটে এ হাদীসটি মহানবী (সা.)-এর মুখ হতে নিঃসৃত হয়েছে তা আলী (আ.)-এর খেলাফতকে (প্রতিনিধিত্বকে) শুধু তাবুক যুদ্ধের জন্য নির্দিষ্ট করে না কারণ আহলে বাইতের ইমামদের হতে প্রচুর সহীহ হাদীস রয়েছে যা প্রমাণ করে বিভিন্ন সময় রাসূল (সা.) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আলোচক ও গবেষকরা এ বিষয়ে পর্যালোচনা করে দেখতে পারেন। আহলে সুন্নাহর রেওয়ায়েতগুলোও এ সত্যের সপক্ষে প্রমাণ।

সুতরাং হাদীসটির প্রেক্ষাপট হতে বিষয়টি বিশেষভাবে তাবুকের যুদ্ধের জন্য প্রযোজ্য কথাটি নিঃসন্দেহে অযৌক্তিক।

৩। কিন্তু সর্বজনীনতা বিশেষায়িত বা পৃথককৃত হবার কারণে বাকী অংশ দলিল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয় কথাটি যে ভুল তা সুস্পষ্ট। আমাদের আলোচ্য বিষয়ে কি কেউ এরূপ কথা বলেছেন? যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে বল প্রয়োগ ও গায়ের জোরে কিছু প্রতিষ্ঠা করতে চায় ও এক ধরনের মস্তিষ্ক বিকৃতির স্বীকার হয়েছেন তিনিই কেবল এরূপ কথা বলতে পারেন। এমন ব্যক্তির উদাহরণ হলো ঐ ব্যক্তির মত যে অন্ধকার রাত্রিতে কোন অন্ধ প্রাণীর পৃষ্ঠে আরোহণ করে তার লক্ষ্যের দিকে রওয়ানা হয়েছে। মূর্খতা ও অজ্ঞতা হতে আল্লাহর আশ্রয় চাই এবং এগুলো হতে মুক্তি লাভের জন্য তাঁর প্রশংসা করছি। সর্বজনীন বিষয় যে বাক্যের দ্বারা বিশেষায়িত হয় তা যদি অস্পষ্ট না হয় তবে মূল বাক্যটি প্রামাণিকতা হারায় না। বিশেষভাবে যদি বিশেষায়ক অংশটি যুক্ত-বিশেষায়ক২৫৪ হয়। বিষয়টি বোঝার জন্য উদাহরণ পেশ করছি। ধরি,কোন মনিব তার গোলামকে বলল, আজ যাইদ ব্যতীত যে কেউ আমার সঙ্গে দেখা করতে আসবে তাকে সম্মান কর। এখন যদি গোলাম যাইদ ব্যতীত অন্য ব্যক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করে তবে সাধারণভাবে সবাই বলবে সে অন্যায় ও ভুল করেছে কারণ তার মনিবের কথামত কাজ করে নি। তাই এ থেকে বিজ্ঞ ব্যক্তি মত দেবেন গোলাম নির্দেশ অমান্যের কারণে অপরাধী ও নিন্দার যোগ্য এবং তার নির্দেশ অমান্যের মাত্রানুযায়ী শাস্তি হওয়া উচিত। শরীয়ত ও বুদ্ধিবৃত্তি দু টিই তাই নির্দেশ করে। সাধারণভাবে কেউ এ কথা মানবেন না যে,যেহেতু সর্বজনীনতা বিশেষায়িত হয়েছে সেহেতু বাকী অংশ প্রামাণিকতা রাখে না,বরং এরূপ কথা কঠিন অপরাধ বলে পরিগণিত। প্রচলিত নিয়ম অনুসারে সর্বজনীনতা বিশেষায়িত হলে তার প্রামাণিকতা হারায় না। আর এ বিষয়টি সকলের নিকট সুস্পষ্ট।

তাছাড়া আপনি জানেন,মুসলমান এবং অমুসলমানদের মধ্যে এ রীতি প্রচলিত যে,তারা শর্তযুক্ত সর্বজনীনতাকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেন। সাহাবী,তাবেয়ীন,পূর্ববর্তী ও পরবর্তীকালের সকলেই এ পদ্ধতিকে গ্রহণ করেছেন। আহলে বাইতের ইমামগণ এবং মুসলমানদের ধর্মীয় নেতারা এ পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। তাই এ বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এগুলো সর্বজনীনতা বিশেষায়িত হবার পরও দলিল হবার সপক্ষে প্রমাণ। যদি এটি দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য না হতো তাহলে চার মাজহাবের ইমামগণ ও মুজতাহিদদের জন্য শরীয়ত ও শরীয়ত বহির্ভূত সকল বিষয়ে ব্যাখ্যার পথ বন্ধ হয়ে যেতো। কারণ ইজতিহাদী বিষয়ে শরীয়তের বিধানসমূহ সর্বজনীন নিয়মকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় এবং এমন কোন সর্বজনীন নিয়ম নেই যা শর্তযুক্ত বা বিশেষায়িত হয় নি। এজন্যই সর্বজনীনতার প্রামাণিকতার পথ রুদ্ধ হলে জ্ঞানের পথই রুদ্ধ হবে। এরূপ অবস্থা হতে আল্লাহর পানাহ্ চাই।

ওয়াসসালাম

একত্রিশতম পত্র

২২ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

অন্যান্য প্রেক্ষাপটে এরূপ হাদীসের অস্তিত্বের নমুনা আহবান

তাবুকের যুদ্ধ ব্যতীত অন্য সময়েও যে এরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে তা আপনি বর্ণনা করেন নি। এরূপ হাদীস শোনার জন্য আমি উদগ্রীব। আমাকে এমন উৎসের সন্ধান দেবেন কি?

ওয়াসসালাম

বত্রিশতম পত্র

২৪ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

১।   উম্মে সালিমের সাক্ষাতে এরূপ বর্ণনার অস্তিত্ব।

২।   হযরত হামযাহর কন্যার উপস্থিতিতে।

৩।   নবী (সা.) যখন আলী (আ.)-এর ওপর ভর করে বসেছিলেন।

৪।   প্রথম ভ্রাতৃবন্ধনের দিন।

৫।   দ্বিতীয় ভ্রাতৃবন্ধনের ঘটনা।

৬।   মসজিদের দিকে অবস্থিত সকল দ্বার বন্ধ করার দিন।

৭।  নবী আলী ও হারুন (আ.)-কে দু টি নক্ষত্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন যারা একসঙ্গে থাকে।

১। একদিন নবী (সা.) উম্মে সালিমের২৫৫ নিকট হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁর পবিত্র মুখ দিয়ে এরূপ একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

উম্মে সালিম ইসলামের অগ্রগামীদের অন্তর্ভুক্ত ও তীক্ষ্ণ জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন ছিলেন। ইসলামের ক্ষেত্রে অগ্রগামিতা,ইখলাস,ধৈর্যশীলতা ও ত্যাগের কারণে রাসূলের নিকট তাঁর বিশেষ মর্যাদা ছিল।

নবী (সা.) তাঁদের ঘরে যেতেন ও তাঁর জন্য হাদীস বর্ণনা করতেন। একদিন তিনি তাঁকে বলেন, হে উম্মে সালিম! আলীর রক্ত ও মাংস আমার রক্ত ও মাংস হতে। সে আমার কাছে মূসার নিকট হারুনের মত। এ হাদীসটি কানযুল উম্মাল গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ১৫৪ পৃষ্ঠায় ২৫৫৪ নং হাদীস হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। মুনতাখাবে কানয গ্রন্থেও হাদীসটি এসেছে। এজন্য মুসনাদে আহমাদ গ্রন্থের ৫ম খণ্ডের ৩১ পৃষ্ঠার পাদটীকায় দেখতে পারেন। আমাদের বর্ণিত সূত্রের হুবহু সেখানে এসেছে।

আপনি নিশ্চয় বুঝতে পারছেন এ হাদীসটি নবী (সা.) কোন বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষিতে বলেন নি,বরং আল্লাহর পক্ষ হতে প্রাপ্ত দায়িত্ব পালন এবং তাঁর বাণীর প্রচার ও উপদেশ দানের লক্ষ্যেই তাঁর স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তির শান ও মর্যাদা এভাবে বর্ণনা করেছেন। এটি তাই তাবুক যুদ্ধের সঙ্গেই শুধু সংশ্লিষ্ট নয়।

২। হযরত হামযাহর কন্যা সম্পর্কে হযরত আলী,জা ফর ও যাইদের মধ্যে যে আলোচনা হচ্ছিল সে সর্ম্পকিত বর্ণনায় অনুরূপ হাদীস এসেছে যেখানে রাসূল (সা.) বলেছেন, হে আলী! তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্ক মূসা ও হারুনের মত। ২৫৬

৩। তদ্রুপ একদিন হযরত আবু বকর,উমর ও আবু উবাইদা জাররাহ্ রাসূলের সামনে বসেছিলেন। হযরত রাসূল (সা.) আলীর ওপর ভর করে বসেছিলেন এমতাবস্থায় নিজের হাত আলী (আ.)-এর কাঁধে রেখে বললেন, হে আলী! তুমি মুমিনদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি যে আমার প্রতি ঈমান এনেছ ও ইসলাম গ্রহণ করেছ,তুমি আমার কাছে মূসার নিকট হারুনের মত। ২৫৭

৪। প্রথম ভ্রাতৃবন্ধন স্থাপনের দিন যা মক্কায় সংঘটিত হয়েছিল সেদিন রাসূল এরূপ কথা বলেছেন। হিজরতের পূর্বে রাসূল (সা.) বিশেষত মক্কার মুহাজিরদের মধ্যে দু জন দু জন করে ভ্রাতৃত্বের যে বন্ধন সৃষ্টি করেন (আকদের মাধ্যমে) সেখানে তিনি এরূপ কথা বলেন।

৫। ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের দ্বিতীয় চুক্তির দিন যা হিজরতের পঞ্চম মাসে মদীনায় অনুষ্ঠিত হয় এবং রাসূল (সা.) মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করে দিয়ে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় ক্ষেত্রে রাসূল (সা.) আলীকে নিজের ভাই হিসেবে মনোনীত করেন ও অন্যদের ওপর তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের কারণে অন্য কাউকে নিজের ভাই হিসেবে ঘোষণা করেন নি২৫৮ এবং আলীর প্রতি নির্দেশ করে বলেন, তুমি আমার কাছে মূসার নিকট হারুনের মত তবে আমার পর কোন নবী নেই।

নবী করিম (সা.)-এর পবিত্র বংশধরদের হতে এ বিষয়ে মুতাওয়াতির সূত্রে হাদীসসমূহ বর্ণিত হয়েছে। আহলে বাইতের বাইরে প্রথম ভ্রাতৃবন্ধন সম্পর্কে যায়েদ ইবনে আবি আওফী যা বলেছেন আপনার জন্য সেটিই যথেষ্ট বলে মনে করছি। এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল তাঁর মানাকিবে আলী ,ইবনে আসাকির তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে,বাগাভী ও তাবরানী তাঁদের মাজমায়,বারুদী তাঁর কিতাবুল মারেফাত গ্রন্থে এবং ইবনে আদী২৫৯ ও অন্যরাও বর্ণনা করেছেন।

এ হাদীসটি বেশ দীর্ঘ। এতে ভ্রাতৃত্বের আকদ পাঠের প্রক্রিয়াও বর্ণিত হয়েছে। হাদীসটির শেষে এভাবে এসেছে- আলী (আ.) রাসূলকে বললেন, হে রাসূল (সা.)! আমার যেন মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গেছে,আত্মা বের হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে,আমাকে ছাড়াই আপনি সাহাবীদের নিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়েছেন। যদি আপনি কোন বিষয়ে আমার ওপর রাগান্বিত হয়ে থাকেন তাহলে আমি আপনার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি। আপনি আপনার দয়া ও অনুগ্রহ দ্বারা তা ক্ষমা করে দিন। রাসূল (সা.) বললেন, সেই মহান সত্তার শপথ,যিনি আমাকে সত্য নবী হিসেবে প্রেরণ করেছেন,আমার প্রয়োজন ব্যতীত অন্য কোন কারণে তোমাকে বাদ দেই নি এবং তুমি আমার কাছে মূসার নিকট হারুনের মত এ পার্থক্য ব্যতীত যে,আমার পর কোন নবী নেই। তুমি আমার ভাই ও আমার উত্তরাধিকারী। আলী বললেন, আপনার নিকট হতে আমি উত্তরাধিকার সূত্রে কি লাভ করব? তিনি বললেন, পূর্ববর্তী নবী ও রাসূলগণ যা ইতোপূর্বে উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে যেতেন আর তা ছিল তাঁদের প্রভুর গ্রন্থ ও তাঁদের নবীর সুন্নাহ্। তুমি আমার কন্যা ফাতিমাসহ বেহেশতে আমার প্রাসাদে থাকবে। তুমি আমার ভাই ও বন্ধু। অতঃপর রাসূল (সা.) নিম্নোক্ত আয়াত তেলাওয়াত করেনاخوانا على سرر متقابلين  সেখানে তারা পরস্পর ভাই হিসেবে মুখোমুখি বসে থাকবে।২৬০ অর্থাৎ তাঁরা আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালবাসার কারণে বেহেশতে অবস্থান করবেন এবং পরস্পরকে লক্ষ্য করবেন।

এছাড়া দ্বিতীয় ভ্রাতৃত্ববন্ধনের দিন সম্পর্কিত হাদীসটি তাবরানী তাঁর কাবীর গ্রন্থে ইবনে আব্বাস হতে এভাবে এনেছেন- নবী (সা.) আলীকে বললেন, যখন তুমি লক্ষ্য করলে আমি মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করে দিলাম কিন্তু তোমাকে কারো ভাই হিসেবে ঘোষণা করলাম না তখন কি তুমি আমার প্রতি অভিমান করেছ? তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও,তোমার অবস্থান আমার কাছে মূসার নিকট হারুনের অবস্থানের ন্যায় হোক এ পার্থক্য ব্যতীত যে,আমার পরে কোন নবী আসবে না? ২৬১

    ৬। যেদিন রাসূল আলী (আ.)-এর দ্বার ব্যতীত মসজিদে নববীর দিকে উন্মুক্ত সকল দ্বারকে বন্ধ করার ঘোষণা দেন সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে জাবের বিন আবদুল্লাহ্ আনসারী২৬২ হতে বর্ণিত হাদীসটি লক্ষণীয়। তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন : হে আলী! মসজিদে আমার জন্য যা কিছু হালাল তোমার জন্যও তদ্রুপ। তুমি আমার কাছে মূসার নিকট হারুনের মত এ পার্থক্য ব্যতীত যে,আমার পর কোন নবী নেই।

হুজাইফা ইবনে উসাইদ গাফফারী২৬৩ বলেন, যেদিন রাসূল মসজিদের দিকে উন্মুক্ত সকল দ্বার বন্ধ করে দেন সেদিন দাঁড়িয়ে সকলের উদ্দেশ্যে খুতবা পাঠ করে বলেন : কোন কোন ব্যক্তির মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আমি আলীকে মসজিদে স্থান দিয়ে অন্য সকলকে বের করে দিয়েছি,না বরং খোদার শপথ,তিনিই আলীকে মসজিদে স্থান দিয়ে অন্যদের মসজিদ হতে বের করে দিয়েছেন। আল্লাহ্ ওহী প্রেরণ করে মূসাকে তাঁর ও তাঁর ভ্রাতার জন্য মিশরে গৃহ নির্বাচন,ঐ গৃহকে কেবলা হিসেবে গ্রহণ এবং সেখানে নামায পড়ার নির্দেশ দিলেন। হাদীসটির শেষে রাসূল (সা.) বললেন, আলীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক মূসা ও হারুনের মত। সে আমার ভ্রাতা। সে ব্যতীত কারো জন্য জায়েয নেই মসজিদে জুনুব (যৌন কারণে অপবিত্র) অবস্থায় প্রবেশ করবে।

এরূপ অসংখ্য নমুনা রয়েছে যা এ সংক্ষিপ্ত সময়ে এখানে উপস্থাপন সম্ভব নয়। অবশ্য হাদীসে মানযিলাত যে শুধু তাবুকের যুদ্ধের সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট নয় তা প্রমাণের জন্য আমরা যতটুকু আলোচনা করেছি ততটুকুই যথেষ্ট মনে করছি। তাই বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে হাদীসটির বর্ণনা এর গুরুত্বের প্রতি ইঙ্গিত করে।

৭। যে কেউ নবী (সা.)-এর জীবনী ও ইতিহাস সম্পর্কে গবেষণা করলে দেখতে পাবেন তিনি আলী ও হারুন (আ.)-কে উত্তর আকাশের (বিশেষ) নক্ষত্রদ্বয়ের মত একই ধাঁচের বলে মনে করতেন এবং কোন বিষয়ে তাঁদের একজনকে অপরের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিতেন না যা হাদীসটির সর্বজনীনতার সপক্ষে দলিল। পরিবেশ ও প্রেক্ষাপট বিবেচনা না করলেও শুধু হাদীসের শাব্দিক অর্থ থেকেও এই সর্বজনীনতা সুস্পষ্ট।

ওয়াসসালাম

তেত্রিশতম পত্র

২৫ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

কখন ও কোথায় আলী (আ.) ও হারুন (আ.) দু টি উজ্জ্বল নক্ষত্র বলে পরিচিত হয়েছেন?

আপনার পত্রের শেষ অংশে আপনি বলেছেন যে,রাসূল (সা.) আলী ও হারুনকে সম আলোকের দু টি উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে পরিচিত করিয়েছেন। কোথায় ও কখন করেছেন তা আমার বোধগম্য নয়।

ওয়াসসালাম

 স

ত্রিশতম পত্র

২২ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

১।   আরব ভাষাভাষীরা এ হাদীস হতে সর্বজনীনতাই বুঝেন।

২।   হাদীসটি বিশেষ সময় ও প্রেক্ষাপটের জন্য প্রযোজ্য কথাটির অসারতা।

৩।   হাদীসটি প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপনের যোগ্য নয় কথাটি অযৌক্তিক।

১। হাদীসটি সর্বজনীন নয় এ কথাটির জবাব দানের দায়িত্ব আমরা আরব ভাষাভাষী ও হাদীসটির সাধারণ ও বাহ্যিক অর্থের ওপর ছেড়ে দিচ্ছি এবং আপনিও আরব হিসেবে এর সাক্ষী। আপনি কি মনে করেন আপনার স্বভাষীরা এ হাদীসের সর্বজনীনতার বিষয়ে সন্দেহ করেন? কখনোই নয়। আমি বিশ্বাস করি না আপনার মত কেউ হাদীসটিতে যে ইসমে জিনস্ মুদ্বাফ (সম্বন্ধবোধক জাতিবাচক বিশেষ্য) রয়েছে তা থেকে এ সংশ্লিষ্ট সকল বাস্তব ক্ষেত্র যে এর অন্তর্ভুক্ত তা বোঝেন না।

উদাহরণস্বরূপ যদি আপনি বলেন,منحتكم انصافي অর্থাৎ আমার ইনসাফকে আপনাদেরকে দিলাম,এ বাক্যে ইনসাফের বিষয়টি কি কিছু কিছু বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে নাকি সকল বিষয়ে? ইনসাফের সকল প্রেক্ষাপট এর অন্তর্ভুক্ত নয় কি? আল্লাহ্ না করুন আপনি এ থেকে বাহ্যিক অর্থে সর্বজনীনতা ও সর্বঅন্তর্ভুক্তি ভিন্ন অন্য কিছু বোঝেন।

প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদের কোন খলীফা যদি তাঁর কোন বন্ধুকে বলেন,

جعلت لك ولايتي على الناس অর্থাৎ আমি জনগণের ওপর নিজ বেলায়েত ও অভিভাবকত্বের বিষয়টি তোমার ওপর অর্পণ করলাম অথবা বলেন তোমাকে আমার সাম্রাজ্যের দায়িত্ব দিয়ে আমার স্থলাভিষিক্ত করলাম কথা দু টি হতে সর্বজনীনতা ভিন্ন অন্য কিছু আপনার চিন্তায় প্রথমেই আসে কি? কেউ যদি এ দাবী করে,বিষয়টি কোন কোন বিষয়ের জন্য প্রযোজ্য তবে তাকে কি বিদ্রোহী বলা হবে না? যদি তিনি তাঁর কোন উপদেষ্টাকে বলেন, তোমার অবস্থান আমার শাসন কার্যে হযরত আবু বকরের খেলাফতে উমরের ন্যায় শুধু পার্থক্য এটি যে,তুমি রাসূল (সা.)-এর সাহাবা নও। তবে তাঁর এ মর্যাদা কি বিশেষ কিছু বিষয়ে হবে নাকি সকল বিষয়ে অর্থাৎ সর্বজনীন বলে পরিগণিত হবে। নিঃসন্দেহে আপনি এটিকে সর্বজনীন বলবেন। আমার বিশ্বাস আপনি রাসূলের এ হাদীস انت مني بمنزلة هارون من موسى   যে সর্বজনীনতার প্রতি ইঙ্গিত করে তাই মনে করেন কারণ বাক্যটির শাব্দিক ও সাধারণ অর্থ এটিই। বিশেষত যখন হাদীসটিতে নবুওয়াতের বিষয়টিকে ব্যতিক্রম ধরেই সর্বজনীনতার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সকল আরবকেই প্রশ্ন করতে পারেন।

২। কিন্তু বিরোধীদের এ দাবী হাদীসটি শুধু ঐ প্রেক্ষাপটের জন্যই প্রযোজ্য তা দু টি কারণে অগ্রহণীয়।

প্রথমত হাদীসটি নিজে থেকেই সর্বজনীন তাই বিশেষ প্রেক্ষাপটে বলা হয়েছে বলে তার সর্বজনীনতা ক্ষুন্ন হয় না কারণ প্রেক্ষাপট বিষয়টিকে বিশেষায়িত করে না আর উসূলশাস্ত্রের ভাষায় বললে প্রেক্ষাপট বিশেষায়ক নয়। যেমন কোন অপবিত্র ব্যক্তি (জুনুব) আয়াতুল কুরসী স্পর্শ করলে আপনি যদি তাকে বলেন অপবিত্র ব্যক্তি বা মুহদেস (যার ওজু বা গোসল নেই) কোরআন স্পর্শ করতে পারবে না কথাটি বিশেষ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়,বরং এরূপ ব্যক্তি কোরআনের যে কোন স্থান স্পর্শ করলেই হারাম কাজ করেছে কেননা মুহদেস ব্যক্তি কোরআন স্পর্শ করতে পারবে না কথাটি আয়াতুল কুরসীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। কেউই এ থেকে ভিন্ন কিছু বুঝবে না।

তদ্রুপ কোন চিকিৎসক যদি তার কোন রোগীকে খেজুর খেতে দেখে বলেন, আপনি মিষ্টি খাবেন না সাধারণভাবে এটি থেকে কি খেজুর না খাওয়া বুঝায় নাকি যত ধরনের মিষ্টি আছে তা বুঝায়? আল্লাহর শপথ করে বলতে পারি আমার মনে হয় না এরূপ বিষয়ে কেউ বিশেষত্ব বুঝবে যদি না সে উসূল,ব্যাকরণশাস্ত্র ও সাধারণ বাক্যজ্ঞান বিবর্জিত হয়। তেমনি যে ব্যক্তি মানযিলাত -এর হাদীসটিকে শুধু তাবুকের যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বলে মনে করেন তিনিও এরূপ ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত।

দ্বিতীয়ত যে প্রেক্ষাপটে এ হাদীসটি মহানবী (সা.)-এর মুখ হতে নিঃসৃত হয়েছে তা আলী (আ.)-এর খেলাফতকে (প্রতিনিধিত্বকে) শুধু তাবুক যুদ্ধের জন্য নির্দিষ্ট করে না কারণ আহলে বাইতের ইমামদের হতে প্রচুর সহীহ হাদীস রয়েছে যা প্রমাণ করে বিভিন্ন সময় রাসূল (সা.) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। আলোচক ও গবেষকরা এ বিষয়ে পর্যালোচনা করে দেখতে পারেন। আহলে সুন্নাহর রেওয়ায়েতগুলোও এ সত্যের সপক্ষে প্রমাণ।

সুতরাং হাদীসটির প্রেক্ষাপট হতে বিষয়টি বিশেষভাবে তাবুকের যুদ্ধের জন্য প্রযোজ্য কথাটি নিঃসন্দেহে অযৌক্তিক।

৩। কিন্তু সর্বজনীনতা বিশেষায়িত বা পৃথককৃত হবার কারণে বাকী অংশ দলিল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয় কথাটি যে ভুল তা সুস্পষ্ট। আমাদের আলোচ্য বিষয়ে কি কেউ এরূপ কথা বলেছেন? যে ব্যক্তি কোন বিষয়ে বল প্রয়োগ ও গায়ের জোরে কিছু প্রতিষ্ঠা করতে চায় ও এক ধরনের মস্তিষ্ক বিকৃতির স্বীকার হয়েছেন তিনিই কেবল এরূপ কথা বলতে পারেন। এমন ব্যক্তির উদাহরণ হলো ঐ ব্যক্তির মত যে অন্ধকার রাত্রিতে কোন অন্ধ প্রাণীর পৃষ্ঠে আরোহণ করে তার লক্ষ্যের দিকে রওয়ানা হয়েছে। মূর্খতা ও অজ্ঞতা হতে আল্লাহর আশ্রয় চাই এবং এগুলো হতে মুক্তি লাভের জন্য তাঁর প্রশংসা করছি। সর্বজনীন বিষয় যে বাক্যের দ্বারা বিশেষায়িত হয় তা যদি অস্পষ্ট না হয় তবে মূল বাক্যটি প্রামাণিকতা হারায় না। বিশেষভাবে যদি বিশেষায়ক অংশটি যুক্ত-বিশেষায়ক২৫৪ হয়। বিষয়টি বোঝার জন্য উদাহরণ পেশ করছি। ধরি,কোন মনিব তার গোলামকে বলল, আজ যাইদ ব্যতীত যে কেউ আমার সঙ্গে দেখা করতে আসবে তাকে সম্মান কর। এখন যদি গোলাম যাইদ ব্যতীত অন্য ব্যক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করে তবে সাধারণভাবে সবাই বলবে সে অন্যায় ও ভুল করেছে কারণ তার মনিবের কথামত কাজ করে নি। তাই এ থেকে বিজ্ঞ ব্যক্তি মত দেবেন গোলাম নির্দেশ অমান্যের কারণে অপরাধী ও নিন্দার যোগ্য এবং তার নির্দেশ অমান্যের মাত্রানুযায়ী শাস্তি হওয়া উচিত। শরীয়ত ও বুদ্ধিবৃত্তি দু টিই তাই নির্দেশ করে। সাধারণভাবে কেউ এ কথা মানবেন না যে,যেহেতু সর্বজনীনতা বিশেষায়িত হয়েছে সেহেতু বাকী অংশ প্রামাণিকতা রাখে না,বরং এরূপ কথা কঠিন অপরাধ বলে পরিগণিত। প্রচলিত নিয়ম অনুসারে সর্বজনীনতা বিশেষায়িত হলে তার প্রামাণিকতা হারায় না। আর এ বিষয়টি সকলের নিকট সুস্পষ্ট।

তাছাড়া আপনি জানেন,মুসলমান এবং অমুসলমানদের মধ্যে এ রীতি প্রচলিত যে,তারা শর্তযুক্ত সর্বজনীনতাকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেন। সাহাবী,তাবেয়ীন,পূর্ববর্তী ও পরবর্তীকালের সকলেই এ পদ্ধতিকে গ্রহণ করেছেন। আহলে বাইতের ইমামগণ এবং মুসলমানদের ধর্মীয় নেতারা এ পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। তাই এ বিষয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। এগুলো সর্বজনীনতা বিশেষায়িত হবার পরও দলিল হবার সপক্ষে প্রমাণ। যদি এটি দলিল হিসেবে গ্রহণযোগ্য না হতো তাহলে চার মাজহাবের ইমামগণ ও মুজতাহিদদের জন্য শরীয়ত ও শরীয়ত বহির্ভূত সকল বিষয়ে ব্যাখ্যার পথ বন্ধ হয়ে যেতো। কারণ ইজতিহাদী বিষয়ে শরীয়তের বিধানসমূহ সর্বজনীন নিয়মকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় এবং এমন কোন সর্বজনীন নিয়ম নেই যা শর্তযুক্ত বা বিশেষায়িত হয় নি। এজন্যই সর্বজনীনতার প্রামাণিকতার পথ রুদ্ধ হলে জ্ঞানের পথই রুদ্ধ হবে। এরূপ অবস্থা হতে আল্লাহর পানাহ্ চাই।

ওয়াসসালাম

একত্রিশতম পত্র

২২ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

অন্যান্য প্রেক্ষাপটে এরূপ হাদীসের অস্তিত্বের নমুনা আহবান

তাবুকের যুদ্ধ ব্যতীত অন্য সময়েও যে এরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে তা আপনি বর্ণনা করেন নি। এরূপ হাদীস শোনার জন্য আমি উদগ্রীব। আমাকে এমন উৎসের সন্ধান দেবেন কি?

ওয়াসসালাম

বত্রিশতম পত্র

২৪ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

১।   উম্মে সালিমের সাক্ষাতে এরূপ বর্ণনার অস্তিত্ব।

২।   হযরত হামযাহর কন্যার উপস্থিতিতে।

৩।   নবী (সা.) যখন আলী (আ.)-এর ওপর ভর করে বসেছিলেন।

৪।   প্রথম ভ্রাতৃবন্ধনের দিন।

৫।   দ্বিতীয় ভ্রাতৃবন্ধনের ঘটনা।

৬।   মসজিদের দিকে অবস্থিত সকল দ্বার বন্ধ করার দিন।

৭।  নবী আলী ও হারুন (আ.)-কে দু টি নক্ষত্রের সঙ্গে তুলনা করেছেন যারা একসঙ্গে থাকে।

১। একদিন নবী (সা.) উম্মে সালিমের২৫৫ নিকট হাদীস বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁর পবিত্র মুখ দিয়ে এরূপ একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

উম্মে সালিম ইসলামের অগ্রগামীদের অন্তর্ভুক্ত ও তীক্ষ্ণ জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন ছিলেন। ইসলামের ক্ষেত্রে অগ্রগামিতা,ইখলাস,ধৈর্যশীলতা ও ত্যাগের কারণে রাসূলের নিকট তাঁর বিশেষ মর্যাদা ছিল।

নবী (সা.) তাঁদের ঘরে যেতেন ও তাঁর জন্য হাদীস বর্ণনা করতেন। একদিন তিনি তাঁকে বলেন, হে উম্মে সালিম! আলীর রক্ত ও মাংস আমার রক্ত ও মাংস হতে। সে আমার কাছে মূসার নিকট হারুনের মত। এ হাদীসটি কানযুল উম্মাল গ্রন্থের ৬ষ্ঠ খণ্ডের ১৫৪ পৃষ্ঠায় ২৫৫৪ নং হাদীস হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। মুনতাখাবে কানয গ্রন্থেও হাদীসটি এসেছে। এজন্য মুসনাদে আহমাদ গ্রন্থের ৫ম খণ্ডের ৩১ পৃষ্ঠার পাদটীকায় দেখতে পারেন। আমাদের বর্ণিত সূত্রের হুবহু সেখানে এসেছে।

আপনি নিশ্চয় বুঝতে পারছেন এ হাদীসটি নবী (সা.) কোন বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষিতে বলেন নি,বরং আল্লাহর পক্ষ হতে প্রাপ্ত দায়িত্ব পালন এবং তাঁর বাণীর প্রচার ও উপদেশ দানের লক্ষ্যেই তাঁর স্থলাভিষিক্ত ব্যক্তির শান ও মর্যাদা এভাবে বর্ণনা করেছেন। এটি তাই তাবুক যুদ্ধের সঙ্গেই শুধু সংশ্লিষ্ট নয়।

২। হযরত হামযাহর কন্যা সম্পর্কে হযরত আলী,জা ফর ও যাইদের মধ্যে যে আলোচনা হচ্ছিল সে সর্ম্পকিত বর্ণনায় অনুরূপ হাদীস এসেছে যেখানে রাসূল (সা.) বলেছেন, হে আলী! তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্ক মূসা ও হারুনের মত। ২৫৬

৩। তদ্রুপ একদিন হযরত আবু বকর,উমর ও আবু উবাইদা জাররাহ্ রাসূলের সামনে বসেছিলেন। হযরত রাসূল (সা.) আলীর ওপর ভর করে বসেছিলেন এমতাবস্থায় নিজের হাত আলী (আ.)-এর কাঁধে রেখে বললেন, হে আলী! তুমি মুমিনদের মধ্যে প্রথম ব্যক্তি যে আমার প্রতি ঈমান এনেছ ও ইসলাম গ্রহণ করেছ,তুমি আমার কাছে মূসার নিকট হারুনের মত। ২৫৭

৪। প্রথম ভ্রাতৃবন্ধন স্থাপনের দিন যা মক্কায় সংঘটিত হয়েছিল সেদিন রাসূল এরূপ কথা বলেছেন। হিজরতের পূর্বে রাসূল (সা.) বিশেষত মক্কার মুহাজিরদের মধ্যে দু জন দু জন করে ভ্রাতৃত্বের যে বন্ধন সৃষ্টি করেন (আকদের মাধ্যমে) সেখানে তিনি এরূপ কথা বলেন।

৫। ভ্রাতৃত্ব স্থাপনের দ্বিতীয় চুক্তির দিন যা হিজরতের পঞ্চম মাসে মদীনায় অনুষ্ঠিত হয় এবং রাসূল (সা.) মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করে দিয়ে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন। প্রথম ও দ্বিতীয় উভয় ক্ষেত্রে রাসূল (সা.) আলীকে নিজের ভাই হিসেবে মনোনীত করেন ও অন্যদের ওপর তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের কারণে অন্য কাউকে নিজের ভাই হিসেবে ঘোষণা করেন নি২৫৮ এবং আলীর প্রতি নির্দেশ করে বলেন, তুমি আমার কাছে মূসার নিকট হারুনের মত তবে আমার পর কোন নবী নেই।

নবী করিম (সা.)-এর পবিত্র বংশধরদের হতে এ বিষয়ে মুতাওয়াতির সূত্রে হাদীসসমূহ বর্ণিত হয়েছে। আহলে বাইতের বাইরে প্রথম ভ্রাতৃবন্ধন সম্পর্কে যায়েদ ইবনে আবি আওফী যা বলেছেন আপনার জন্য সেটিই যথেষ্ট বলে মনে করছি। এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল তাঁর মানাকিবে আলী ,ইবনে আসাকির তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে,বাগাভী ও তাবরানী তাঁদের মাজমায়,বারুদী তাঁর কিতাবুল মারেফাত গ্রন্থে এবং ইবনে আদী২৫৯ ও অন্যরাও বর্ণনা করেছেন।

এ হাদীসটি বেশ দীর্ঘ। এতে ভ্রাতৃত্বের আকদ পাঠের প্রক্রিয়াও বর্ণিত হয়েছে। হাদীসটির শেষে এভাবে এসেছে- আলী (আ.) রাসূলকে বললেন, হে রাসূল (সা.)! আমার যেন মেরুদণ্ড ভেঙ্গে গেছে,আত্মা বের হয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে,আমাকে ছাড়াই আপনি সাহাবীদের নিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়েছেন। যদি আপনি কোন বিষয়ে আমার ওপর রাগান্বিত হয়ে থাকেন তাহলে আমি আপনার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি। আপনি আপনার দয়া ও অনুগ্রহ দ্বারা তা ক্ষমা করে দিন। রাসূল (সা.) বললেন, সেই মহান সত্তার শপথ,যিনি আমাকে সত্য নবী হিসেবে প্রেরণ করেছেন,আমার প্রয়োজন ব্যতীত অন্য কোন কারণে তোমাকে বাদ দেই নি এবং তুমি আমার কাছে মূসার নিকট হারুনের মত এ পার্থক্য ব্যতীত যে,আমার পর কোন নবী নেই। তুমি আমার ভাই ও আমার উত্তরাধিকারী। আলী বললেন, আপনার নিকট হতে আমি উত্তরাধিকার সূত্রে কি লাভ করব? তিনি বললেন, পূর্ববর্তী নবী ও রাসূলগণ যা ইতোপূর্বে উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে যেতেন আর তা ছিল তাঁদের প্রভুর গ্রন্থ ও তাঁদের নবীর সুন্নাহ্। তুমি আমার কন্যা ফাতিমাসহ বেহেশতে আমার প্রাসাদে থাকবে। তুমি আমার ভাই ও বন্ধু। অতঃপর রাসূল (সা.) নিম্নোক্ত আয়াত তেলাওয়াত করেনاخوانا على سرر متقابلين  সেখানে তারা পরস্পর ভাই হিসেবে মুখোমুখি বসে থাকবে।২৬০ অর্থাৎ তাঁরা আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালবাসার কারণে বেহেশতে অবস্থান করবেন এবং পরস্পরকে লক্ষ্য করবেন।

এছাড়া দ্বিতীয় ভ্রাতৃত্ববন্ধনের দিন সম্পর্কিত হাদীসটি তাবরানী তাঁর কাবীর গ্রন্থে ইবনে আব্বাস হতে এভাবে এনেছেন- নবী (সা.) আলীকে বললেন, যখন তুমি লক্ষ্য করলে আমি মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করে দিলাম কিন্তু তোমাকে কারো ভাই হিসেবে ঘোষণা করলাম না তখন কি তুমি আমার প্রতি অভিমান করেছ? তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও,তোমার অবস্থান আমার কাছে মূসার নিকট হারুনের অবস্থানের ন্যায় হোক এ পার্থক্য ব্যতীত যে,আমার পরে কোন নবী আসবে না? ২৬১

    ৬। যেদিন রাসূল আলী (আ.)-এর দ্বার ব্যতীত মসজিদে নববীর দিকে উন্মুক্ত সকল দ্বারকে বন্ধ করার ঘোষণা দেন সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে জাবের বিন আবদুল্লাহ্ আনসারী২৬২ হতে বর্ণিত হাদীসটি লক্ষণীয়। তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন : হে আলী! মসজিদে আমার জন্য যা কিছু হালাল তোমার জন্যও তদ্রুপ। তুমি আমার কাছে মূসার নিকট হারুনের মত এ পার্থক্য ব্যতীত যে,আমার পর কোন নবী নেই।

হুজাইফা ইবনে উসাইদ গাফফারী২৬৩ বলেন, যেদিন রাসূল মসজিদের দিকে উন্মুক্ত সকল দ্বার বন্ধ করে দেন সেদিন দাঁড়িয়ে সকলের উদ্দেশ্যে খুতবা পাঠ করে বলেন : কোন কোন ব্যক্তির মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আমি আলীকে মসজিদে স্থান দিয়ে অন্য সকলকে বের করে দিয়েছি,না বরং খোদার শপথ,তিনিই আলীকে মসজিদে স্থান দিয়ে অন্যদের মসজিদ হতে বের করে দিয়েছেন। আল্লাহ্ ওহী প্রেরণ করে মূসাকে তাঁর ও তাঁর ভ্রাতার জন্য মিশরে গৃহ নির্বাচন,ঐ গৃহকে কেবলা হিসেবে গ্রহণ এবং সেখানে নামায পড়ার নির্দেশ দিলেন। হাদীসটির শেষে রাসূল (সা.) বললেন, আলীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক মূসা ও হারুনের মত। সে আমার ভ্রাতা। সে ব্যতীত কারো জন্য জায়েয নেই মসজিদে জুনুব (যৌন কারণে অপবিত্র) অবস্থায় প্রবেশ করবে।

এরূপ অসংখ্য নমুনা রয়েছে যা এ সংক্ষিপ্ত সময়ে এখানে উপস্থাপন সম্ভব নয়। অবশ্য হাদীসে মানযিলাত যে শুধু তাবুকের যুদ্ধের সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট নয় তা প্রমাণের জন্য আমরা যতটুকু আলোচনা করেছি ততটুকুই যথেষ্ট মনে করছি। তাই বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে হাদীসটির বর্ণনা এর গুরুত্বের প্রতি ইঙ্গিত করে।

৭। যে কেউ নবী (সা.)-এর জীবনী ও ইতিহাস সম্পর্কে গবেষণা করলে দেখতে পাবেন তিনি আলী ও হারুন (আ.)-কে উত্তর আকাশের (বিশেষ) নক্ষত্রদ্বয়ের মত একই ধাঁচের বলে মনে করতেন এবং কোন বিষয়ে তাঁদের একজনকে অপরের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিতেন না যা হাদীসটির সর্বজনীনতার সপক্ষে দলিল। পরিবেশ ও প্রেক্ষাপট বিবেচনা না করলেও শুধু হাদীসের শাব্দিক অর্থ থেকেও এই সর্বজনীনতা সুস্পষ্ট।

ওয়াসসালাম

তেত্রিশতম পত্র

২৫ জিলহজ্ব ১৩২৯ হিঃ

কখন ও কোথায় আলী (আ.) ও হারুন (আ.) দু টি উজ্জ্বল নক্ষত্র বলে পরিচিত হয়েছেন?

আপনার পত্রের শেষ অংশে আপনি বলেছেন যে,রাসূল (সা.) আলী ও হারুনকে সম আলোকের দু টি উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে পরিচিত করিয়েছেন। কোথায় ও কখন করেছেন তা আমার বোধগম্য নয়।

ওয়াসসালাম

 স


21

22

23

24

25

26

27

28

29

30

31

32

33

34

35

36

37

38

39

40

41

42

43

44

45

46

47

48

49